বড় চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে ক্যারিবিয়ান সফরের প্রথম ম্যাচ খেলতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ কয়েকজন খেলোয়াড়কে ছাড়াই টেস্ট সিরিজ খেলা বাংলাদেশ প্রথম টেস্টে টস জিতে নিয়েছে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত।
এই সিরিজে দিয়ে প্রথমবার টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া মেহেদি হাসান মিরাজের জন্য এই সিরিজ হতে যাচ্ছে বড় এক পরীক্ষা। কারণ, চোটের কারণে পুরো সিরিজ থেকে আগেই ছিটকে গেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও ব্যাটার মুশফিকুর রহিম।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের জার্সিতে কবে মাঠে নামছেন সাকিব? |
দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের শূন্যতা পূরণে তাই দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশকে দলে আনতে হয়েছে পরিবর্তন। একাদশে জায়গা পেয়েছেন তরুণ ব্যাটার শাহাদাত হোসেন দিপু। আর চোট কাটিয়ে ফিরেছেন কিপার-ব্যাটার লিটন দাস।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু রাত ৮টায়। সরাসরি দেখা যাবে টি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে।
বাংলাদেশ একাদশ:
মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, শাহাদাত হোসেন দিপু, লিটন দাস, জাকের আলি অনিক, তাইজুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম।
আরও পড়ুন
আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, নাহিদ রানার অভিষেক |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ:
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), মিকাইল লুইস, কেসি কার্টি, অ্যালিক অ্যাথানাজে, কাভেম হজ, জাস্টিন গ্রিভস, জোশুয়া দা সিলভা, আলজারি জোসেফ, জোমেল ওয়ারিকান, জেডেন সিলস, শামার জোসেফ।
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৩:৪৮ এম
২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭:০৪ পিএম
২১ নভেম্বর ২০২৪, ৫:৫৫ পিএম
আগে বোলিং নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম সেশনে সেটা হয়েও ছিল। তবে মিকাইল লুইস ও অ্যালিক অ্যাথানাজের এক জুটি ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। শেষ বেলায় দুজনকেই ফিরিয়ে ম্যাচে শেষ পর্যন্ত সমতা আনলেন বোলাররা। তাতে কিছুটা হলেও তৃপ্তি নিয়েই দিনটা শেষ করতে পারল বাংলাদেশ।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ৫ উইকেটে ২৫০।
টস রিপোর্টে সাবকে ক্যারবিয়ান পেসার কার্টলি অ্যামব্রোস বলেছিলেন, উইকেটে ময়েশ্চার থাকবে, সাথে সিম মুভমেন্টও। আর সেই কারণে টসে জিতে আগে বোলিং নেওয়াটা হবে ভালো সিদ্ধান্ত। এই সিরিজের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজও টস জিতে জানান একই ভাবনার কথা। জানান প্রথম ঘণ্টায় বোলারদের সুযোগ কাজে লাগানোর পরিকল্পনার কথা।
প্রথম কয়েক ওভারে আঁটসাঁট বোলিংয়ে দুই পেসারা হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম সেই কাজটা ভালোই করেন। তবে কাজের কাজ, মানে উইকেটের দেখা মিলছিল না। পঞ্চম ওভারে হাসানের অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারি লুইসের বিরুদ্ধে ছিল কট বিহাইন্ডের জোড়াল আবেদন। তবে আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি।
কয়েক ওভার বাদে হাসানের বলে লেগ বিফোরের আবেদন, ব্যাটার সেই লুইসই। তবে এবারও আম্পায়ারের সাড়া মেলেনি। আক্রমণে এসে প্রথম ওভারে চার হজম করেন তাসকিন। প্রথম ঘণ্টা দেখেশুনে খেলে ভালোভাবেই সামাল দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার।
শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ব্রেকথ্রুটা আসে তাসকিনের হাত ধরে। রানের জন্য সংগ্রাম করা ক্রেইগ ব্রাথওয়েটকে দারুণ একটি ভেতরে প্রবেশ করানো ডেলিভারিতে এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে ফেলেন ডানহাতি এই পেসার। অভিজ্ঞ এই ওপেনার তার আগে করেন মাত্র ৪ রান, বল খেলেন ৩৮টি।
পরের ওভারে ফের তাসকিনের আঘাত। মিডল লেগ স্ট্যাম্প লাইনে লেন্থ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন কেসি কার্টি, তবে ব্যাটে-বলে হয়নি। মিড-অনে সহজ ক্যাচ নেন তাইজুল ইসলাম। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হলেও লুইস প্রায় প্রতি ওভারেই বাইন্ডারি হাঁকিয়ে সেটা কমিয়ে আনেন। লাঞ্চ বিরতিতে তাতে স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৫০।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই রান-আউট হতে পারতেন লুইস, তবে ফিল্ডার সরাসরি থ্রো লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। সেই সময়ে তার রান ছিল ৪১। বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে সলিড ডিফেন্স দেখানো লুইস এরপর তুলে নেন ফিফটি। রান আসতে থাকে কাভেম হজের ব্যাট থেকেও।
এর আগে এক দফায় লুইস রান-আউট থেকে রক্ষা হলেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি হজের। মিরাজের বলে রান-আউটের শিকার হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান। বাংলাদেশের হাসি মিলিয়ে যেতে থাকে এরপরই। অ্যাথানাজেকে নিয়ে লুইস গড়ে তোলেন বিশাল এক জুটি।
দুই ব্যাটারই রয়েসয়ে ব্যাট করে এগিয়ে নেন রানের চাকা। পেস বা স্পিন, বাংলাদেশের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায় এই জুটির সামনে। চা বিরতির আগে তাই আর মেলেনি উইকেটের দেখা। জমে ওঠা এই জুটি তৃতীয় সেশনেও বাংলাদেশকে বেশ ভোগান। হাসানের এক ওভারে দুই চার মারেন অ্যাথানাজে।
ক্রমেই বোলারদের ওপর চেপে বসেন দুই ব্যাটার। সেই ধারায় ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে মিরাজকে ছক্কায় ওড়ান লুইস। তবে ৯০ রানে তাকে প্রায় ফিরিয়েই দিচ্ছিলেন তাইজুল। কাট করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন, সহজ ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন অধিনায়ক মিরাজ। খানিক বাদে জুটিতে হয়ে যায় একশ।
ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের ধারায় তাসকিনকে টানা দুই চার মেরে অ্যাথানাজে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন আরও। এরপর তাইজুলকে মেরে দেন ছক্কা। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে বেশ খানিকটা সময় ধরেই আটকে যাওয়া লুইস ম্যাচের ধারার বিপরীতে। বাজে শট খেলতে গিয়ে স্লিপে মিরাজের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৯৭ রানে।
দিনের শেষ বেলায় এসে বাংলাদেশকে ম্যাচে আরেকটু ফেরান তাইজুল। সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া ডেঞ্জারম্যান অ্যাথানাজে। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৯০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে।
নতুন বল নেওয়ার পর কয়েকটি আগ্রাসী শট খেলেন জোশুয়া দা সিলভা। আলো স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা আগেভাগে শেষ হওয়ার আগে তিনি অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে। আরেক অপরাজিত ব্যাটার জাস্টিন গ্রিভসের রান ১১।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) এত বছরেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সেভাবে দল না পাওয়ার অন্যতম কারণ তাদের পুরো আসরে না পাওয়ার নিশ্চয়তা। আর এই কারণেই ফ্র্যাঞ্চাইজির আগ্রহ থাকলেও কয়েকজন হারিয়েছেন বিশ্বসেরা এই ক্লাব টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ। তবে এবার অন্তত তা হচ্ছে না। আইপিএলের আগামী তিন সালের জন্য মেগা নিলামের আগে মোট ১৩ জন ক্রিকেটারের নাম ভারত ক্রিকেট বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, যারা দল পেলে খেলতে পারবেন পুরো আসর জুড়েই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ আইপিএলের দলগুলোর কাছে থেকে তাদের প্রতি আগ্রহের কথা জেনেছেন। তবে বিসিবির অনাপত্তিপত্র পাওয়া যাবে না, এটা জানার পর তাদের আর দলে টানার দিকে যায়নি ফ্র্যাঞ্চাইজি। মুস্তাফিজুর রহমান গত আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেলার পর টুর্নামেন্ট ছাড়েন মাঝপথে, জাতীয় দলের ম্যাচের জন্য। চলতি সপ্তাহের নিলামের আগে বিসিবি বাংলাদেশের ১৩ জন খেলোয়াড়ের তালিকা চূড়ান্ত করেছে, দল পেলে যাদের পুরো আসরের জন্যই আইপিএলে খেলতে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন
সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলাতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি বিসিবি, বললেন ফারুক |
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিসিবির পাঠানো মেইলে জায়গা করে নেওয়া সেই ১৩ জন ক্রিকেটার হলেন : সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, তাওহীদ হৃদয়, লিটন দাস, শেখ মেহেদি হাসান, রিশাদ হোসেন, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানজিম হাসান সাকিব ও শহিদুল ইসলাম।
স্রেফ বিসিবিই নয়, নিলামকে সামনে রেখে আগামী তিন আইপিএলের পুরো সময়ে বিদেশী ক্রিকেটারদের খেলার নিশ্চয়তা জানতে চেয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ইএসপিএনক্রিকইনফোর দাবি, প্রায় সবগুলো পূর্ণ সদস্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে তালিকা সহ সেই নিশ্চয়তা পেয়েছেন তারা।
এছাড়া আগামী তিন আইপিএলের সূচিও চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। আর সেটা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে সেই তারিখও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর অনুযায়ী, আগামী বছর আইপিএল শুরু ১৪ মার্চ, আর ফাইনাল ২৫ মে।
আরও পড়ুন
সালাউদ্দিনের পথ ধরে আরও দেশী কোচ আসবেন বাংলাদেশের দায়িত্বে, বিশ্বাস বিসিবি সভাপতির |
২০২৬ আইপিএল শুরু ১৫ মার্চ, ফাইনাল ৩১ মে। আর ২০২৭ আইপিএল ১৪ মার্চ শুরু হয়ে শেষ হবে ৩০ মে।
তবে ম্যাচ সংখ্যায় আসছে পরিবর্তন। আগামী আসরে ৭৪ ম্যাচ হলেও ২০২৬ সালে হবে ৮৪টি। আর ২০২৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৪।
সিরিজের প্রথম বলেই মিচেল স্টার্ক তুললেন গতির ঝড়, পার্থের গতিময় বাউনিস উইকেটে সেটা শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল বাই থেকে বাউন্ডারি। গতি ও বাউন্সের সাথে পুরো দিনে বোলারদের সাথে ব্যাটারদের যুদ্ধের ইঙ্গিত ছিল যেন সেই ডেলিভারিতেই। অজি বোলারদের তোপের মুখে তাই টেনেটুনে দেড়শ করে ব্যাকফুটেই চলে গিয়েছিল ভারত। তবে জাসপ্রিত বুমরাহ সহ সফরকারী পেসাররাও জ্বলে উঠলেন সমান তালে। তাতে মামুলি স্কোর নিয়েই প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ার স্বপ্ন বুনছে ভারত।
পার্থে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে রাজত্ব করেছেন দুই দলে বোলাররা, আরও বিশেষ করে বললে পেসাররা। ভারতকে ১৫০ রানে গুটিয়ে দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়িয়েছে ৭ উইকেটে মাত্র ৬৭, পিছিয়ে এখনও ৮৩ রানে।
প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলা ভারতের তরুণ সেনসেশন ইয়াশাশভি জয়সওয়ালকে প্রথম ওভারেই সমস্যায় ফেলে দেন স্টার্ক। নিজের করার দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই তাকে শিকার বানান অভিজ্ঞ এই পেসার। প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৮ বল খেলে রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হন ভারত ওপেনার।
খুব দ্রুতই স্পষ্ট হয়ে যায়, গতিময় বাউন্সি এই উইকেটে টিকে থাকাটা ব্যাটারদের জন্য হতে যাচ্ছে কঠিন এক কাজ। আর প্রতিপক্ষ শিবিরে যখন আছেন সময়ের অন্যতম সেরা তিন পেসার, তখন তা হয়ে যাবে আরও কঠিন। সেটা বেশ টের পেয়েছেন অভিষিক্ত দেভদূট পাড্ডিকাল। বলের পর বল খেলেও পারেননি একটি রানও যোগ করতে নামের পাশে। কয়েকবারই হয়েছেন পরাস্ত। শেষ পর্যন্ত ডাক মেরে বিদায় নেন ২৩ বল খেলে।
সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে রান খরার মধ্যে থাকা বিরাট কোহলির ওপর এই টেস্টে ভারতের আশা ছিল একটু বেশি। তবে দলকে হতাশ করেন তিনিও। জশ হ্যাজলউডের বলে আউট হন এক ডিজিটেই। একপ্রান্ত আগলে এই ম্যাচে ওপেনিং করা লোকেশ রাহুল রান বের করছিলেন সংগ্রামের সাথে। তবে তার শেষটা হয় বিতর্ক ছড়ানো এক সিদ্ধান্তে।
স্টার্কের বলে কিপার ক্যাচ নিতেই আবেদন করে অস্ট্রেলিয়ার। তবে আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি। দীর্ঘ এক রিভিউয়ে থার্ড আম্পায়ার বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন এঙ্গেল থেকে দেখার চেষ্টা করেন ব্যাট ও বলের সংযোগ হয়েছে কিনা স্পষ্ট। শেষ পর্যন্ত আসে আউটের সিদ্ধান্ত, যা নিয়ে কিছুটা বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ২৬ রানে থামে রাহুলের ইনিংস।
কিপার-ব্যাটার ধ্রুব জুরেল কয়েকটি বাউন্ডারিতে শুরুটা ভালোই পেয়েছিলেন। তবে ছোট একটি স্পেলের শুরুতে তাকে ফিরিয়ে ভারতের বিপদ বাড়ান মিচেল মার্শ। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দরকেও শিকার বানান অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। ৬ উইকেটে ভারতের রান তখন মাত্র ৭৩।
তবে এমন দুরূহ পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি দারুণ ইনিংস খেলে ফেলা রিশাভ পান্ত ক্রিজে থাকায় ভারতের বড় স্কোরের আশাটাও টিকে ছিল বেশ। তবে পরিস্থিতির চাহিদা বুঝে অতি আগ্রাসী না হয়ে ইনিংস এগিয়ে নেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। এরই মাঝে প্যাট কামিন্সকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পড়তে অদ্ভুদ এক শটে হাঁকিয়ে বসেন ছক্কা!
সপ্তম উইকেটে পান্ত ও নিতিশ রেড্ডি যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ৪৮ রান। সেট হয়ে যাওয়া পান্তকে ফিরিয়ে জুটির ভাঙন ধরান কামিন্স। এরপর ভারতের স্কোর ১৫০ পর্যন্ত যাওয়ার একক কৃতিত্ব নিতিশের। ৫৯ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় খেলেন ৪১ রানের ইনিংস।
২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার হ্যাজলউডে। বাকি ছয় উইকেট ভাগাভাগি করেন নেন স্টার্ক, কামিন্স ও মার্শ।
অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের দুর্দান্ত প্রদর্শনী যেন ভারতের বোলারদেরও উজ্জীবিত করে তোলে। অজি ওপেনারদের তাই শুরু থেকে অস্বস্তিতে ফেলে দেন তারা। ফলাফলও মিলে যায় দ্রুত। ভীতি ছড়ানো এক স্পেলের শুরুতেই সাজঘরের পথ দেখান বুমরাহ। দুটি চার মেরে অভিষেকে ইতিবাচক কিছুর আভাস দিলেও বেশিদূর যেতে পারেননি নাথান ম্যাকসুইনি। ১০ রানেই তার পথচলা থামান সেই ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
দ্বিতীয় শিকার বানান অভিজ্ঞ উসমান খাজাকে। এরপরই অস্ট্রেলিয়াকে দেন সবচেয়ে বড় ধাক্কা। গোল্ডেন ডাক মারেন তারকা ব্যাটার স্টিভ স্মিথ। সুবিধা করতে পারেননি ট্রাভিস হেডও। মোহাম্মদ সিরাজের প্রথম শিকারে পরিণত হওয়ার আগে মার্শ করতে পারেন মাত্র ৬ রান।
একপ্রান্তে আসা-যাওয়ার মিছিলে মাটি কামড়ে ছিলেন মার্নাশ লাবুশেন। রান নয়, ওভার পার করাটাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তবে রানের খাতা খোলার আগে জীবন পাওয়ার পর কয়েক দফায় অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়ার পরও রক্ষা হয়নি তার। ৫২ বলে মাত্র ২ রান করার পর লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন সিরাজের বলে।
দিনের শেষ ভাগে ফিরতি স্পেলে এসে কামিন্সের উইকেট নিয়ে ভারতকে চালকের আসনে নিয়ে যান বুমরাহ। দিন শেষে ক্রিজে আছে ১৯ রান করা অ্যালেক্স ক্যারি ও স্টার্ক (৬ রান)। ১০ ওভারে তিন মেডেন সহ মাত্র ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ।
পার্থে রোহিত শর্মা নয়, ভারতের হয়ে টস করতে নামবেন জাসপ্রীত বুমরাহ। আর টান টান উত্তেজনার সিরিজের শুরুতে মজা করেছেন তিনি, সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে হাস্যরস তৈরি করেছেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে।
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির শুরুর দিনে ভারতের জার্সিতে ২০০তম ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন বুমরাহ। আর সেই ম্যাচেই তিনি দলকে নেতৃত্ব দেবেন। ম্যাচের আগেরদিন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের পর সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন বুমরাহ।
আরও পড়ুন
বুমরাহ কি বিশ্রামে, কেমন হবে টাইগারদের একাদশ? |
এক সাংবাদিক বুমরাহকে মিডিয়াম পেস বোলার সম্বোধন করে প্রশ্ন করেন। এ সময় বুমরাহ রসিকতা করে বলেন, ‘আমাকে মিডিয়াম পেসার ডাকলেন? আরে, আমি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারি। অন্তত ফাস্ট বোলার অধিনায়ক ডাকুন (হাসি...)!’ এসময় সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হাসির রোল ওঠে। তবে পরক্ষণেই বদলে যান বুমরাহ! বলেছেন, ‘আমি ফাস্ট বোলার অধিনায়কদের একজন। তবে আমিই প্রথম না, এমন অনেক উদাহরণ আছে। ফাস্ট বোলাররা চটপটে হয়। প্যাট কামিন্সও সাফল্য পেয়েছে। এর আগে কপিল দেব সফল হয়েছেন।’
বুমরাহ আগেও তিনবার ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রতিবারই রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করেছেন। ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে ও গত বছর আয়ারল্যান্ডে ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে। রোহিত এবার পিতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। তবে অধিনায়ক হিসেবে তিনি রোহিত বা কোহলি কাউকেই অনুসরণ করবেন না বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন
বুমরাহ-ই বিশ্বের সেরা ফার্স্ট বোলার: স্টিভ স্মিথ |
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে তাঁর উইকেট সংখ্যা ৩১১! তিন সংস্করণেই তাঁর বোলিং ইকোনমি, গড়, স্ট্রাইক রেট দুর্দান্ত। এখন পর্যন্ত ৪০টি টেস্ট খেললেও, ৩০ বছর বয়সী পেসারের ম্যাচে কোন ১০ উইকেট নেই। পার্থের বাউন্সি উইকেটে তিনি কি পারবেন দশ উইকেট নিতে?
ঘরের মাঠে টেস্ট খেলে সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত সেই চাওয়া পূরণ হয়নি। এরপর আর বাংলাদেশের জার্সিতে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও কিছু জানাননি সাকিব। আবার কবে বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামবেন এই অলরাউন্ডার সেটাও অনিশ্চিত এখন। তিনি নিজেও কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ দল এই মুহূর্তে অবস্থান করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেখানে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটের সিরিজই খেলবে টাইগাররা। অন্যদিকে সাকিব ব্যস্ত আবুধাবি টি-টেন লিগে। সেখানে আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলা টাইগার্স।
আরও পড়ুন
সাকিবে ট্রফি জিতবে বাংলা টাইগার্স? |
তাঁর আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাকিব। কবে আবার বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামবে সেই প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাকে। সাকিব অবশ্য এখনই তা নিয়ে ভাবতে রাজি না। আপাতত টি-টেনেই রাখছেন পুরো মনোযোগ। জানিয়েছেন,’ এই টুর্নামেন্টের পরে দেখা যাবে।'
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে নিজেকে একরকম সরিয়েই ফেলেছেন সাকিব। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটটা খেলে যাবার কথা সাকিবের। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিলেন। তবে সেই আশা পূরণ হবে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলেও তা এড়িয়ে যান সাকিব,
'এখন এই টুর্নামেন্ট (আবুধাবি টি-টেন) নিয়ে পুরো ফোকাস করছি আমি।'
এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও খেলেননি সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাকিব মাঠে নামবেন কিনা তাও নিশ্চিত নয়। ফলে আবার কবে সাকিবে বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা যাবে সেই ধোঁয়াশা কাটছেই না।