২২ জুলাই ২০২৫, ৫:২৪ পিএম
২০২১ সালে আইসিসিতে বিড করে ২০২৪ থেকে ২০৩১, এই ৮ বছরের চক্রে আইসিসির দুটি মেগা আসরের স্বাগতিক মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের অক্টোবরে আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একক স্বাগতিক বাংলাদেশের ভাগে পড়েছে ২০৩১ সালে ভারতের সাথে আইসিসির সবচেয়ে বড় ইভেন্ট ওয়ানডে বিশ্বকাপের যৌথ স্বাগতিক মর্যাদা।
২০২৪ সালের অক্টোবরে ১০ দেশের আইসিসি উইমেন্স টি-টোয়েন্টিকে ঘিরে বড় অঙ্ক আয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ঘরের মাঠে আইসিসির এই মেগা আসরে টিকিট বিক্রির একক সত্ব থেকে মোটা অঙ্ক আয়ের টার্গেট ছিল বিসিবির। তবে সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন পরবর্তী দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আইসিসির দৃষ্টিতে সন্তোষজনক না থাকায় আইসিসি নারী বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির ভেন্যু স্থানান্তরিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩ থেকে ২০ অক্টোবরে এই আসরের ম্যাচসমূহ অনুষ্ঠিত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি ভেন্যু দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম এবং সারজা ক্রিকেট গ্র্যাউন্ডে। তবে শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম থেকে ম্যাচসমূহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২টি স্টেডিয়ামে স্থানান্তরিত হলেও স্বাগতিক মর্যাদা হারায়নি বাংলাদেশ। ইভেন্ট হোস্ট ফি'র পুরোটা পেয়েছে বিসিবি। তবে দুবাই এবং সারজায় অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলোর টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের পুরোটা পায়নি বিসিবি। ফলে টিকিট বিক্রি থেকে প্রত্যাশিত আয় করতে পারেনি বিসিবি।
ভেন্যু স্থানান্তর হলেও স্বাগতিক মর্যাদার সুবাদে টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের বড় একটা অংশ পেয়েছে বিসিবি। ইমিরেটস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এক্ষেত্রে বড় ছাড় দিয়েছে। তাদের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করে আইসিসির এই মেগা ইভেন্টের টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের ৫৫% বুঝে পেয়েছে বিসিবি। আইসিসির দেয়া হিসাব অনুযায়ী এই ইভেন্টে মোট টিকিট বিক্রি হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুদ্রায় ৬ লাখ ৫৯৫.১৮ দিরহাম। যার মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী বিসিবির ভাগে পড়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৩২৭.৩৫ দিরহাম। অর্থাৎ ৭৩ হাজার ৬৪২ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ কোটি ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা)। গত ৩০ জুন বিসিবির পরিচালনা পরিষদের সভার তা অবহিত করা হয়েছে।
ভিন দেশে আইসিসির মেগা ইভেন্ট আয়োজনের পরও টিকিট বিক্রির সিংহভাগ টাকা বিসিবির কোষাগারে জমা পড়ার কৃতিত্বটা অবশ্য বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের। আইসিসির এই মেগা ইভেন্টের ভেন্যু স্থানান্তরিত হলেও এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডকে টিকিট বিক্রির শেয়ারিং ফর্মুলায় রাজি করিয়েছিলেন তিনি। এই প্রতিবেদকতে তা বলেছেন ফারুক আহমেদ-' আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মর্যাদা যখন আইসিসি কেড়ে নেয়নি, তখন টিকিট বিক্রির সত্বও আমাদের দেয়া উচিৎ, এই দাবিতে দেন-দরবার করে বাংলাদেশের জন্য টিকিট বিক্রির বড় অংশ দিতে ইমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডকে রাজি করিয়েছি।'
শুধু টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের অংশটাই এই আসর থেকে বিসিবির একমাত্র আয়ের উৎস নয়। স্বাগতিক মর্যাদা পাওয়ার সুবাদে ইভেন্ট হোস্ট ফি খাতে আইসিসি থেকে বিসিবিকে দেয়া হয়েছে ৮ কোটি ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা। বিসিবির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েও বাংলাদেশ নারী দল প্রাইজমানি হিসেবে পেয়েছে ৬৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র জয়ে যোগ হয়েছে আরও ৩১ হাজার ১৫৪ মার্কিন ডলার। সব মিলে আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে বিসিবির কোষাগারে জমা পড়েছে ১০ কোটি ৩৭ লাখ ১২ হাজার ১৪২ টাকা। টিকিট বিক্রির ৫৫% না পেলে একটু হতাশই হতে হতো বিসিবিকে।
২৫ জুলাই ২০২৫, ২:৩৫ পিএম
২৪ জুলাই ২০২৫, ৬:১৩ পিএম
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আগে ওভাল টেস্ট শেষে অ্যালিস্টার কুক যখন আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়েছেন, তখন কী কেউ ভেবেছে তার ছাঁয়ায় বেড়ে ওঠা আর এক কুককে ছাড়িয়ে যাবেন, এই ইংলিশ ক্রিকেটার একদিন শচিনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়বেন। ৭ বছর পর সেই অসাধ্য সাধনের গল্পটাই লিখেছেন জো রুট।
টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের রেকর্ডটা গড়েছেন জো রুট ৯ মাস আগে। গত বছরের অক্টোবরে টেস্টে অ্যালিস্টার কুকের ১২৪৭২ রান টপকে গেছেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ১৩ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদও পেয়েছেন জো রুট। ভারতের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজটি তার এক একটি মাইলস্টোনের। একটার পর একটা হার্ডল পেরিয়েছেন এই সিরিজে। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরিতে (১০৪) ভারত লিজেন্ডারি রাহুল দ্রাবিড়ের টেস্ট সংগ্রহের (১৬৪ টেস্টে ১৩২৮৮ রান) কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। ম্যানচেষ্টার টেস্টে ৩০ রান করতে পারলে রাহুল দ্রাবিড়কে, ৩১ রান করতে পারলে প্রোটিয়া লিজেন্ডারি জ্যাক ক্যালিসকে ছাড়িয়ে যাবেন-এই দুই লিজেন্ডারিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হিসেবটা ছিল রুটের মাথায়। অজি লিজেন্ডারি রিকি পন্টিংকে ছাড়িয়ে যেতে তার দরকার ছিল ১২০ রান।
ভারতের বিপক্ষে অতীত রেকর্ডটা তার দারুণ। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ইনিংস প্রতি ৫৭.৩৮ গড়, ৩৩ টেস্টে ১১ সেঞ্চুরির অতীত থেকে টনিক নিয়ে এবার ম্যানচেষ্টার টেস্টে অবতীর্ন হয়েছেন। তাতেই ম্যানচেষ্টার টেস্টের দর্শকদের অভিবাদন পেয়েছেন।
ভারতের বিপক্ষে ৩৪তম টেস্টটিকে মাইলস্টোন টেস্ট হিসেবে নিয়েছিলেন। ম্যানচেষ্টার টেস্টের তৃতীয় দিন একটা একটা করে হার্ডল পেরিয়ে রাহুল দ্রাবিড়, জ্যাক ক্যালিস, এমনকি পন্টিংয়ের সংগ্রহকে গেছেন ছাড়িয়ে।
দ্বিতীয় দিন শেষে ১১ রানে ব্যাটিংয়ে থাকা রুট তৃতীয় দিনের সকালে ডিপ থার্ডম্যানে সিঙ্গল নিয়ে রাহুল দ্রাবিড়কে, পরের বলে কাভারে সিঙ্গল নিয়ে ক্যালিসকে গেছেন টপকে। ভারতের বিপক্ষে ৩৪তম টেস্টে ১২তম সেঞ্চুরি উদযাপনের পর আনসুল কামবুজকে ডিপ পয়েন্টে সিঙ্গল নিয়ে পন্টিংয়ের রান সংখ্যাকে গেছেন ছাড়িয়ে। জাদেজার বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে যেয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে থেমেছেন জো রুট। তবে ২৪৮ বলের ইনিংসে ১৫০ রানে মেরেছেন ১৪টি বাউন্ডারি।
১৫০ রানের ক্লাসিক ইনিংস উপহার দিয়ে এখন টেস্ট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ব্যাটার শচিন টেন্ডুলকারের (২০০ টেস্টে ১৫৯২১ রান) পেছনে এখন জো রুট (১৫৭ টেস্টে ১৩৪০৯ রান)।টেস্টে রানের এভারেস্টে থাকা শচীনকে ছাড়িয়ে যেতে এখন তার দরকার ২৫১২ রান। ৩৪ বছর বয়সী এই ইংলিশ মিডল অর্ডার এখন ফর্মের তুঙ্গে। লর্ডস এবং ম্যানচেষ্টারে সেঞ্চুরি করে সেঞ্চুরির সংখ্যা উন্নীত করেছেন ৩৮-এ। এমন ফর্ম অব্যাহত রাখতে পারলে শচীনের রেকর্ডটা হয়তবা অক্ষত থাকবে না।
এমন উচ্চতায় ওঠার দিনে ম্যানচেষ্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে প্রথম কোনো ব্যাটার হিসেবে টেস্টে হাজার রানের মাইলস্টোনও ছুয়েঁছেন (১২ টেস্টে ১১২৮ রান) জো রুট।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রুটময় দিনে ইংল্যান্ড নিয়েছে ১৮৭ রানের লিড। তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ৫৪৪/৭। বেন ডাকেট ৬ রানের জন্য (৯৪ ১০০ বলে ১৩ বাউন্ডারিতে ৯৪) সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন। ৬৬ রানের মাথায় চোট পেয়ে পুনরায় ব্যাটিংয়ে ফিরে বেন স্টোকস ৭৭ রানে অপরাজিত আছেন। ৫ম উইকেট জুটিতে রুট-স্টোকস ১৪২ রান যোগ করেছেন। ওলে পোপকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪৪ রানেও নেতৃত্ব দিয়েছেন রুট।
নিজেকে টপকে যাওয়ায় জো রুটকে অভিনন্দিত করেছেন রিকি পন্টিং-
'অভিনন্দন, জো রুট। অসাধারণ।১৫৭টি টেস্ট ম্যাচে রুট নিজেকে অসাধারণ একজন খেলোয়াড় হিসেবে মেলে ধরেছে। সে সত্যিই ধারাবাহিক খেলোয়াড়। গত চার-পাঁচ বছর ধরে মনে হচ্ছে যখনই সে শুরু করে তখন ফিফটিতে পৌঁছায়, এরপর মনে হয় সে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সেঞ্চুরি করছে।এবং কেবল সেঞ্চুরি নয়, বড় সেঞ্চুরি করছে, যা একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়ের লক্ষণও।'
প্রাথমিকভাবে টেস্ট সিরিজ থেকে মিলেছিল ছুটি। তবে গ্লেন ফিলিপস ছিটকে যাওয়ায় জিম্বাবুয়ের সফরে মাইকেল ব্রেসওয়েলকে দেখা যেতে পারে সাদা পোশাকেও। অভিজ্ঞ এই বোলিং অলরাউন্ডারকে ছুটি বাতিল করে টেস্ট সিরিজের স্কোয়াডে যোগ করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজিসি)।
‘দ্য হান্ড্রেড’-এর ব্যস্ততা থাকায় শুরুতে ব্রেসওয়েল জিম্বাবুয়ে সফরের টেস্ট স্কোয়াডে ছিলেন না। তাকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলের অংশ হিসেবে জিম্বাবুয়েতেই অবস্থান করছেন ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে। ফলে সময়সূচি সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় তাকে প্রথম টেস্টের দলে যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিউইরা।
গত ১৩ জুলাই মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি)-এর ফাইনালে ওয়াশিংটন ফ্রিডমের হয়ে খেলতে গিয়ে গ্রোয়েন চোটের শিকার হন ফিলিপস। ফলে তাকে পুরো টেস্ট সিরিজ থেকেই বাদ দিতে বাধ্য হয় নিউজিল্যান্ড। দলটির প্রধান কোচ রব ওয়াল্টার বলেছেন, ফিলিপসের কোয়ালিটির সবচেয়ে কাছাকাছি বিকল্প হওয়ায় তারা ব্রেসওয়েলকে দলে নিয়েছেন।
তবে ব্রেসওয়েলকে নিউজিল্যান্ড দল পাবে কেবল প্রথম টেস্টের জন্যই। বুলাওয়েতে প্রথম ম্যাচের পর তিনি ফিরে যাবেন ইংল্যান্ডে, সাউদার্ন ব্রেভ দলে যোগ হতে। আর দ্বিতীয় টেস্টের জন্য এনজিসি পরে আরেকজন বিকল্প খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে।
১০ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের উৎসবকে হোয়াইট ওয়াশের উৎসবে রূপ দেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশ সমর্থকরা। ভেন্যুটা মিরপুর বলেই এমন স্বপ্ন দেখেছে দর্শক। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচকে সামনে রেখে ১০ বছর আগে এই ভেন্যুতে পাকিস্তানকে ওডিআই সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের ছবিটাও ভেসে উঠেছে বাংলাদেশ সমর্থকদের চোখে। তবে সিরিজ জয়ের উৎসব শেষ ম্যাচে ম্লান করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সভাপতির উপস্থিতিতে ৭৪ রানের সান্ত্বনা নিয়ে দেশে ফেরার উপলক্ষ্য পেয়েছে পাকিস্তান।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ছিল না টি-টোয়েন্টির উত্তাপ। প্রথম ম্যাচে ইনিংস টেনেটুনে ১১০ পর্যন্ত নিতে পেরেছে সফরকারী দলটি। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৪ রানের চ্যালেঞ্জে থেমেছে পাকিস্তান ১২৫-এ। উইকেট নিয়ে পাকিস্তান কোচ মাইক হেসনের অসন্তুষ্টি প্রকাশের কোনো সুযোগ শেষ ম্যাচে দেননি কিউরেটর গামিনি সিলভা। ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচ উপহার পেয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) সভাপতি স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকায় তাকে সন্তুষ্ট করতে প্রানান্ত চেষ্টা করেছে পাকিস্তান টপ অর্ডাররা। টি-টোয়েন্টির উত্তাপ দিয়ে স্কোর টেনে নিয়েছে ১৭৮/৭ পর্যন্ত।
টানা দুই জয়ে সিরিজের ট্রফি নিশ্চিত করেই যেনো মহাখুশি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। সাইড বেঞ্চের শক্তি এদিন পরখ করতে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৫ পরিবর্তনে প্রকারান্তরে তা জানিয়ে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরাজকে ফিরিয়ে আনার সুফল এদিন বোলিংয়ে পাওয়া যায়নি। শ্রীলঙ্কা সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মিতব্যয়ী বোলিং থেকে এদিন টনিক নিতে পারেননি। এক ওভারে (১-০-১৪-০) থেমেছে তার বোলিং। আর এক অফ স্পিনার শেখ মেহেদীও এদিন ছিলেন অকার্যকর (৩-০-৩৬-০)। সাইফউদ্দিনের প্রত্যবর্তনটা এদিন ছিল চোখে পড়ার মতো। ১ ওভারের শেষ স্পেলটি ছিল খরুচে (১-০-১৯-০)। তবে তার প্রথম তিন স্পেল (১-০-৬-০, ১-০-২-০ ও ১-০-১-১) ছিল দারুণ মিতব্যয়ী। দুই বছর পর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছেন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম (৪-০-২২-২)। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেট পাওয়ার পর (৩/২২) এক ম্যাচ বিশ্রামে ছিলেন তাসকিন। ফিরেই নামতা গুনে তিন উইকেট শিকার করেছেন (৩/৩৮)। তার দ্বিতীয় স্পেলটি ছিল খরুচে (১-০-১৫-০)। এই ম্যাচে মার খেয়েছেন বাঁ হাতি পেসার শরিফুল (৪-০-৩৯-১)।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে'র প্রথম ৬ ওভারে এদিন একটু বেশিই অমিতব্যয়ী বোলিং করেছে বাংলাদেশ বোলাররা। শেখ মেহেদী-শরিফুল-তাসকিনের অমিতব্যয়ী প্রথম স্পেলে ওই ৬ ওভারে উইকেটহীন ৫৭ করেছে পাকিস্তান। শাহিবজাদা ফারহান-সাইম আইয়ুব ওপেনিং পার্টনারশিপে ৪৭ বলে ৮২ রান যোগ করে বাংলাদেশ দলকে রান পাহাড়ে চাপা দেয়ার আভাস দিয়েছিলেন। ৮২ রানে এই পার্টনারশিপ থামিয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম। ২ বছর পর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে প্রথম ওভারেই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। ডিপ স্কোয়ার লেগে সাইম আইয়ুব (১৫ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ২১) দিয়েছেন ক্যাচ। মিরাজকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কার চুমোয় ২৮ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফিফটিতে ভয়ংকর রূপ ছড়িয়েছেন শাহিবজাদা ফারহান। তার উইকেটটিও পেয়েছেন নাসুম। নাসুমের লেগ স্ট্যাম্পে পিচিং ডেলিভারিতে সুইপ করতে যেয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন শাহিবজাদা ফারহান (৪১ বলে ৬ চার ৫ ছক্কায় ৬৩)।
দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে'র ৯ ওভারে ৬৫'র বেশি রান নিতে দেয়নি বাংলাদেশ বোলাররা। শেষ পাওয়ার প্লে'র ৩০ বলে ৪৬ রানে ফেলে দিয়েছে ৩ উইকেট। মাঝে ২৬টি বলের একটিতেও পাকিস্তান ব্যাটারদের বাউন্ডারি মারতে দেয়নি বোলাররা। পুরো ইনিংসে ১২০টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৫৩টি ডট। তারপরও বাউন্ডারি এবং ছক্কার সংখ্যা কম নয়। ১২টি বাউন্ডারির পাশে সমসংখ্যক ছক্কা! তাতেই বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জটা কঠিন করে দিতে পেরেছে পাকিস্তান।
১৭৯ রানের চ্যালেঞ্জ নিতে এসে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ব্যাকফুটে নেমে গেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে সালমান মীর্জাকে তানজিদ হাসান তামিম কাট করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে (২ বলে ০) হতাশ করেছেন। ফাহিম আশরাফের ৪র্থ ডেলিভারিতে অধিনায়ক লিটন ফ্লিক করতে যেয়ে বোল্ড হয়েছেন (৮ বলে ৮)। ফাহিম আশরাফ নিজের দ্বিতীয় ওভারের ৪র্থ বলে মিরাজ মিড অফে দিয়েছেন ক্যাচ (৮ বলে ৯)। সালমান মীর্জার ৩য় ওভারে লো বাউন্সি ডেলিভারিতে জাকের আলী অনিক বোল্ড (২ বলে ১) এবং শেখ মেহেদী সুইংয়ে বোল্ড হলে বড় হারের শঙ্কা দেখা দেয়।
সালমান মীর্জা (৩-০-১৫-৩) এবং ফাহিম আশরাফের (২-০-১৩-২) প্রথম স্পেলে স্কোরশিটে ২৯ উঠতে ৫ উইকেট হারালে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোরের শঙ্কা পর্যন্ত দেখেছে সমর্থকরা। তবে ২০১৬ সালে ইডেন গার্ডেনসে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানে অল আউট হওয়ার সে লজ্জা পেতে হয়নি। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সাইফউদ্দিনের ব্যাটিংয়ে ( ৩৪ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩৫* ) বড় লজ্জা থেকে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ।
অবশ্য সংক্ষিপ্ত সংস্করনের ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোরের অপবাদ নিয়ে শেষ হয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ২০১১ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৫/৯ ছিল এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোর। সেই স্কোর টপকে গেছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে করাচিতে ২০৪ রান তাড়া করতে যেয়ে ১০২ রানে হার ছিল এতোদিন এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় হার। ১৭ বছর আগের সেই হারকেও উপরে রেখেছে বাংলাদেশ।
এদিন বিরক্তিকর ব্যাটিং করেছেন নাঈম শেখ। ১৭ বলে করেছেন মাত্র ১০ রান এই ওপেনার। আহমেদ দানিয়েলকে সিলি মিড অফে ক্যাচ দিয়ে তার আউটটিও দৃষ্টিকটু লেগেছে।
বাংলাদেশের ইনিংসের স্থায়ীত্ব ১০০ বল। এই ১০০ বলের ইনিংসে ৫০ টি ডট। ৮টি বাউন্ডারির পাশে ৩টি ছক্কা। তিনটি ছক্কার তিনটিতে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশের ২ টেল এন্ডার সাইফউদ্দিন-শরিফুল। সাইফউদ্দিন পর পর দুটি ছক্কা মেরেছেন এক্সট্রা কভার এবং লং অনের উপর দিয়ে। শরিফুল মেরেছেন লং অনের উপর দিয়ে।
গত ২১ জুলাই উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে একটি বিমান বিদ্ধস্ত হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একটি মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের টিকিট বিক্রির পুরো অর্থ বিসিবি দান করবে মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় এবং ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের শহিদ ও আহতদের পরিবারকে।
বিসিবি এক বিবৃতিতে লিখেছে, “বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ঘোষণা করেছে যে আজ শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের টিকিট বিক্রির পুরো আয় সাম্প্রতিক জাতীয় ট্র্যাজেডিগুলোর প্রেক্ষিতে মানবিক সহায়তায় দান করা হবে।”
অন্যদিকে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবেই দেখছেন, “বাংলাদেশে ক্রিকেট শুধুই একটি খেলা নয়—এটি আমাদের জাতীয় আত্মার অংশ। শোকের এই সময়ে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। যারা তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁদের আর্তনাদে আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ। বিসিবি এ ক্ষত সামাল দিতে সামান্য ভূমিকা রাখতে পেরে কৃতজ্ঞ। আমাদের প্রার্থনা ও সহানুভূতি সব সময় তাঁদের সঙ্গে থাকবে।”
এই দুর্ঘটনার পর বিসিবি সিরিজ জয়ের উৎসর্গ করে নিহত ও আহতদের স্মরণে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে এক মিনিটের নিরবতা পালন করে এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে লিটন কুমার দাসের দল। শেষ ম্যাচটা জিতলে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করাবে টাইগাররা। অন্যদিকে শেষ ম্যাচ জিতে নিজেদের মান বাঁচাতে মাঠে নামছে পাকিস্তান।
গত ম্যাচের একাদশ থেকে আজ পাঁচটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে পারভেজ ইমন, তাওহিদ হৃদয়, তানজিম সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেনকে। তাদের জায়গায় একাদশে ফিরেছেন নাঈম শেখ, তানজিদ তামিম, মেহেদী মিরাজ, সাইফউদ্দিন ও নাসুম আহমেদ।
বাংলাদেশ একাদশ:
লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, নাইম শেখ, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, মো. সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদ।
পাকিস্তান একাদশ:
সালমান আলি আগা (অধিনায়ক), সাহেবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব, মোহাম্মদ হ্যারিস, হাসান নওয়াজ, হুসেইন তালাত, মুহাম্মদ নওয়াজ, ফাহিম আশরাফ, আব্বাস আফ্রিদি, আহমেদ দানিয়াল ও সালমান মির্জা।
২ দিন আগে
৯ দিন আগে
১০ দিন আগে
১৯ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে