৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮:১১ পিএম
দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় ক্লাবহীন ছিলেন সের্হিও রামোস। বেশ কিছু গুঞ্জন চারদিকে ছড়ালেও চমক জাগিয়ে যোগ দিয়েছেন মেক্সিকান ক্লাব মোন্টেরেরিতে। নতুন ক্লাবে যোগ দিয়ে রামোস দেখালেন আরও এক চমক। ক্যারিয়ারের লম্বা সময় খেলেছেন ৪ নম্বর জার্সি গায়ে। তবে মোন্টেরেরিতে যোগ দিয়ে বেছে নিয়েছেন ৯৩ নম্বর জার্সি। তাও সেটা রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে, আর বিশেষ করে বিশেষ একটি ম্যাচের একটি গোলকে স্মরণ করে।
সম্ভাব্য সব কিছু জিতেই রামোস ইতি টেনেছিলেন রিয়াল অধ্যায়। স্প্যানিশ ক্লাবটির সফেদ জার্সিতে তার সেরা মুহূর্ত বিবেচনা করলে নিশ্চিতভাবেই আসবে লিসবনে ২০১৪ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের সেই মুহূর্ত। আতলেতিকো মাদ্রিদের সাথে তখন তারা ১-০ গোলে পিছিয়ে। ঘড়ির কাটায় ৯৩ মিনিট। লুকা মদ্রিচের নেওয়া ভেসে আসা কর্নারে অনেকটা উড়ন্ত গতিতে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে পাঠান রামোস, ঘড়ির কাটায় তখন ৯২:৪৮ মিনিট।
এরপরের গল্প তো সবারই জানা। রিয়াল ম্যাচটা জিতে নেয় ৪-১ গোলে। দীর্ঘ ১২ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে ঘরে তোলে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। এরপর এই মুহূর্তটা যেন রামোসের ক্যারিয়ার ডিফাইনিং মুহূর্ত হয়ে গেছে। রামোস তো এই ৯৩ মিনিটের হিসেবটা ট্যাটু করে নিজের শরীরেও রেখে দিয়েছেন। এবার জার্সি পছন্দের ক্ষেত্রেও সেই স্মৃতিটা ফিরিয়ে এনেছেন।
যা নিয়ে দ্য কোপের সাথে কথাও বলেছেন অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার। “৯৩ মিনিটটা বেশ দারুণ এক মুহূর্ত। এটা মাদ্রিদ ও আমার পুরো ক্যারিয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা। আপনার দেশ ও নিজের সাথে শেয়ার করার জন্য এর চেয়ে ভালো মুহূর্ত হয়তো আর নেই।”
রিয়ালও তার কিংবদন্তীর এমন নিবেদনের অবিভুত হয়েছে। সামাজিক যোগযযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে ধন্যবাদও।
১১ মে ২০২৫, ১০:৩২ পিএম
১১ মে ২০২৫, ৬:২৮ পিএম
গেল মাস থেকেই জোড়াল হচ্ছিল গুঞ্জন। রিয়াল মাদ্রিদ, কার্লো আনচেলত্তি বা ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের (সিবিএফ) পক্ষ থেকে এখনও আসেনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। তবে এসব খবরের নির্ভরযোগ্য সূত্র দা আথলেতিকের দাবি, রিয়ালের চাকরি ছেঁড়ে ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নাকি চুক্তিতে সম্মত হয়ে গেছেন অভিজ্ঞ এই কোচ।
আথলেতিক সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আনচেলত্তিকে এরই মধ্যে ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সিবিএফ। তিনি আগামী ২৬ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন
‘ইয়ামাল বাচ্চা না, এমন পারফরম্যান্সই চায় বার্সা’ |
![]() |
চলতি মৌসুমে রিয়ালের শেষ ম্যাচ লা লিগায় আগামী ২৫ মে। রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে সেই ম্যাচটিই হবে ক্লাবটির ডাগআউটে ৬৫ বছর বয়সী আনচেলত্তির শেষ ম্যাচ।
রিয়ালের সাথে ২০২৬ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ থাকায় আনচেলত্তিকে পেতে ব্রাজিলকে একটা সমঝোতায় যেতে হত স্প্যানিশ ক্লাবটির সাথেও। মাঝে কিছু বিষয় নিয়ে দূরত্ব তৈরির খবর আসলে অনিশ্চয়তা জাগে আনচেলত্তির নেইমারদের কোচ হওয়া নিয়ে।
তবে আথলেতিকদের দাবি, তিন পক্ষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় যাওয়ার পর আনচেলত্তিকে নিয়োগ দিয়েছে সিবিএফ। এর মাধ্যমে আনচেলত্তি হচ্ছেন ব্রাজিলের ছেলেদের দলের ইতিহাসে প্রথম বিদেশি প্রধান কোচ।
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ আনচেলত্তি এর আগে কখনই জাতীয় দলের কোচিং করারননি। এই অধ্যায়ে তার মূল চ্যালেঞ্জ ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ, যার বাছাইপর্ব থেকে এখনও মূল পর্বের টিকিট নিশ্চিত করতে পারেননি সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
আরও পড়ুন
ডিফেন্সের ভুলেই ডুবেছে রিয়ালের তরী, মত আনচেলত্তির |
![]() |
ব্রাজিলের কোচের দায়িত্বে দরিভাল জুনিয়রের স্থলাভিষিক্ত হবেন আনচেলত্তি, যিনি মার্চে ১৪ মাস দায়িত্ব পালন করার পর বরখাস্ত হন। আনচেলত্তির অধীনে ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ হবে আগামী ৬ জুন, ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ। সেটার স্কোয়াড ঘোষণা হবে আগামী ২৬ মে।
আনচেলত্তি ২০২১ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে রিয়ালে ফিরে আসেন। দুই দফায় রিয়ালের কোচ হিসেবে তার অর্জনের মধ্যে রয়েছে ৩টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ২টি লা লিগা শিরোপা সহ আরও অনেক শিরোপা। এই মৌসুমে অবশ্য বাজে সময় কাটছে তার। সব প্রতিযোগিতা থেকে খালি হাতে ফেরা রিয়াল লা লিগায় তিন রাউন্ড হাতে রেখে বার্সেলোনার চেয়ে পিছিয়ে আছে ৭ পয়েন্টে।
চলতি মৌসুমে নিজেকে প্রতি ম্যাচেই নিয়ে যাওয়া লামিন ইয়ামাল আরও একবার জ্বলে ওঠেন এল ক্লাসিকোতে। গোল করে ও করিয়ে বার্সেলোনার জয়ে রাখেন বড় অবদান, যে কাজটা তিনি করে চলেছেন নিয়মিতভাবেই। শীর্ষ একটি ১৭ বছর বয়সী একজন ফুটবলারের জন্য এমন পারফরম্যান্স অবিশ্বাস্য ব্যাপারই বটে। তবে কোচ হান্সি ফ্লিক মনে করেন, ইয়ামালের কাছ থেকে তাদের চাওয়া এখন ঠিক এমনটাই।
জোড়াতালি দেওয়া রিয়ালের রক্ষণকে ৯০ মিনিট জুড়েই গতি, স্কিল ও ড্রিবলিংয়ে বারবার বিপদে ফেলেন ইয়ামাল। ৩২তম মিনিটে ফেররান তরেসের পাস থেকে কাট করে বক্সের ভেতর বাঁদিক থেকে বা পায়ের কোনাকুনি এক শটে জালের দেখা পান স্প্যানিশ উইঙ্গার, যা ম্যাচে নিয়ে আসে ২-২ স্কোরলাইনের সমতা। পরে আরও দুই গোল দিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে জেতে ফ্লিকের দল।
আরও পড়ুন
ডিফেন্সের ভুলেই ডুবেছে রিয়ালের তরী, মত আনচেলত্তির |
![]() |
ইয়ামাল এত অল্প বয়সে বিশাল দায়িত্ব কীভাবে সামলাচ্ছেন, সেই প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে ফ্লিক প্রশংসায় ভাসান তরুণ এই ফরোয়ার্ডকে।
“ইয়ামাল বাচ্চা ছেলে না। সে কী করতে পারে তা প্রতিনিয়ত দেখাচ্ছে। তার নিজের সামর্থ্যে অগাধ বিশ্বাস আছে। সে খুব স্মার্টও। সে আজ গোল করে আমাদের আমাদের ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল, যা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি গোল। ১৭ বছর বয়সী একজনের জন্য এটা আসলেই খুব উঁচুমাপের পারফরম্যান্স। আমরা তার কাছ থেকে ঠিক এটাই চাই।”
এই জয়ে তিন ম্যাচ হাতে রেখে লা লিগা জয় নিশ্চিত করতে বার্সেলোনার এখন মাত্র দুটি পয়েন্ট দরকার। দুইয়ে থাকা রিয়াল পিছিয়ে ৭ পয়েন্টে। ফলে আগামী বৃহস্পতিবার নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এস্পানিয়ল বা আগামী বুধবার রিয়াল মায়োর্কার সাথে ড্রপ করলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে দলটি।
আরও পড়ুন
৭ গোলের থ্রিলারে শেষ হাসি বার্সার, বিফলে এমবাপের হ্যাটট্রিক |
![]() |
ফ্লিক অবশ্য এখনই রোমাঞ্চিত হচ্ছেন না।
“এটাই তো ফুটবল। আপনি জানেন না সামনে কী হতে পারে। তবে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের আরও দুটি পয়েন্ট দরকার। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা অর্জন করে ফেলতে চাই।”
শুরুতেই দুই গোল হজম করে প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করে দেওয়ার পর ৩০ মিনিটের মধ্যে চার গোল হজম করে বসা – নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন ডিফেন্ডাররা। বার্সেলোনার সাথে মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদের হারে প্রকটভাবে ফুটে ওঠে দলটির রক্ষণভাগের অদক্ষতা। কোচ কার্লো আনচেলত্তি মনে করেন, এমন কিছু ভুল ছিল তাদের, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মত নয়।
রোববারের ক্লাসিকোতে অবশ্য খর্বশক্তির রক্ষণভাগ সাজায় রিয়াল। এদের মিলিতাও, আন্টোনিও রুডিগার, দানি কারভাহাল, ফেরল্যান্ড মেন্ডি এবং ডেভিড আলাবাদের সবাই ছিলেন চোটের কারণে অনুপস্থিত। ফলে সেরা সময় পেছনে ফেলে আসা লুকাস ভাজকেস, দুই অনভিজ্ঞ রাউল আসেন্সিও, ফ্রাংক গার্সিয়া ও মিডফিল্ডার অহেলিয়া চুয়ামেনিকে দিয়ে সাজানো রিয়ালের ডিফেন্স তাল সামলাতে পারেনি ইয়ামাল-রাফিনিয়াদের, হারতে হয়েছে ৪-৩ গোলে।
আরও পড়ুন
৭ গোলের থ্রিলারে শেষ হাসি বার্সার, বিফলে এমবাপের হ্যাটট্রিক |
![]() |
রক্ষণভাগের ভুল নিয়ে হতাশা আনচেলত্তি শোনালেন উন্নতির কথা।
“আমরা কিছু অবিশ্বাস্য ভুল করেছি, যা আমাদের বারবার বিপদে ফেলেছি। শীর্ষ একটি দলের বিপক্ষে এমন একটা উঁচু মানের ম্যাচে আপনাকে আপনার খেলার সেরা স্তরে থাকতে হবে। আমরা আক্রমণে ভালো খেলেছি, তবে এটা স্পষ্ট যে আমাদের রক্ষণে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে।”
লা লিগায় এই মৌসুমে রিয়ালই একমাত্র দল, যারা এই ম্যাচ সহ মোট চারবার নিজেরা ভুল করার পরপরই হজম করেছে গোল। নিজেদের বক্সে রাইট ব্যাক ভাজকেস বল হারিয়ে একটি গোল হজমের পর আরেকটি গোলে তিনি দাঁড়িয়ে যান বল নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকা কিলিয়ান এমবাপের সামনে, যিনি এই ম্যাচে করেন হ্যাটট্রিক।
আরও পড়ুন
ক্লাবের বাজে পারফরম্যান্স, ক্ষুব্ধ ভক্তদের হামলা ট্রেনিং গ্রাউন্ডে |
![]() |
তবে সমালোচনা না করে আনচেলত্তি ঢাল হয়েছেন শিষ্যদের।
“আমরা দৃষ্টিকটু কিছু ভুল করেছি, বার্সা আমাদের প্রাপ্য শাস্তিও দিয়েছে সেটার। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, আমরা এই ম্যাচটা খেলেছি পাঁচ ডিফেন্ডারকে ছাড়াই।”
এই জয়ে বার্সেলোনার লিগ জয় প্রায় নিশ্চিত হওয়ার পথে। তিন ম্যাচ হাতে রেখে ৮২ পয়েন্ট কাতালান ক্লাবটির। আর দুইয়ে থাকা রিয়ালের অর্জন ৭৫ পয়েন্ট। শেষ তিন রাউন্ডে বড় মিরাকেল না ঘটলে তাই আনচেলত্তির দলের শিরোপা ধরে রাখার আশা শেষই।
ম্যাচের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে ভিন্ন ছন্দেই হাজির রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথম দিকে এলেমেলো ফুটবল খেলা বার্সেলোনা খুব দ্রুতই নিজেদের গুছিয়ে নিল। বিরতির আগেই চার গোল খেয়ে বসা রিয়ালের হয়ে একাই লড়ে গেলেন কিলিয়ান এমবাপে, করলেন দারুণ এক হ্যাটট্রিক। তবে কার্লো আনচেলত্তির দলের রক্ষণভাগের ভুলে যাওয়ার মত এক ম্যাচে শেষ হাসি হাসল ইয়ামাল-রাফিনিয়ারাই। আর তাতে চলে গেল লা লিগা জয়ের আরও কাছে।
লা লিগায় রোববারের এল ক্লাসিকোর মহারণে আরও একবার বার্সেলোনার কাছে হেরেছে রিয়াল। ৪-৩ গোলে দুর্দান্ত জয়ে মৌসুমে রিয়ালকে টানা চার ম্যাচে হারের তেতো স্বাদ উপহার দিল ফ্লিকের দল।
আরও পড়ুন
‘ইয়ামাল বাচ্চা না, এমন পারফরম্যান্সই চায় বার্সা’ |
![]() |
এই জয়ে বার্সেলোনার লিগ জয়ও প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। তিন ম্যাচ হাতে রেখে ৮২ পয়েন্ট কাতালান ক্লাবটির। আর দুইয়ে থাকা রিয়ালের অর্জন ৭৫ পয়েন্ট।
লা লিগায় বড় ধরণের নাটকীয়তা না দেখা দিলে এই হারে নিশ্চিত হয়ে গেছে রিয়ালের শিরোপাহীন মৌসুম। দুই দফায় রিয়ালকে অসাধারণ সব সাফল্য এনে দেওয়া আনচেলত্তির জন্য শেষটা হতে যাচ্ছে ভুলে যাওয়ার মতোই।
ম্যাচে রিয়ালের শুরুটা অবশ্য হয় স্বপ্নময়। পাউ কুবার্সির দুর্বল ব্যাকপাস থেকে বল পেয়ে গতিতে বক্সের ভেতর প্রবেশ করেন এমবাপে। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তাকে ফাউল করে বসেন গোলকিপার ওয়েজেচ সেজনি। পেনাল্টির বাঁশি সাথে সাথেই বাজিয়ে দেন রেফারি। ফরাসি তারকার বাঁদিকে নেওয়া নিচু শটে হাত লাগালেও আটকাতে পারেননি সেজনি।
এটি ছিল চলতি মৌসুমে লিগে এমবাপের ২৫তম গোল। লিড নিয়ে রিয়াল অব্যাহত রাখে ইতিবাচক ফুটবল। একের পর পর আক্রমণ শানায় দলটি। বিপরীতে ফ্লিকের দল গুছিয়ে নিতেই নষ্ট করে কিছুটা সময়।
নবম মিনিটে বলার মত প্রথম আক্রমণে বক্সের ভেতর কঠিন এঙ্গেল থেকে শট নিয়েছিলেন এরিক গার্সিয়া, তবে রিয়ালের জন্য তা বিপদের কারণ হয়নি।
১৪তম মিনিটে ফের বার্সেলোনার জালে বল, আর এবারও স্কোরার সেই এমবাপেই। তবে বল বানিয়ে দেওয়ার একটা বড় কৃতিত্ব পাবেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। প্রায় মাঝমাঠ থেকে দারুণ এক ডিফেন্সচেড়া পাসে খুঁজে নেন ফ্রানের বিশ্বকাপ জয়ী তারকাকে। বল রিসিভ করে জায়গা বানিয়ে সেজনিকে পরাস্ত করে রিয়ালের লিড বড় করেন এমবাপে।
গোলের লক্ষ্যে প্রথম দুই শট থেকেই জালের দেখা পাওয়া রিয়ালের আক্রমণের সামনে সেই সময়ে বেকায়দায় ছিল বার্সেলোনা। ১৮তম মিনিটে বক্সের একটু বাইরে থেকে লামিন ইয়ামালের কার্লিং শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ব্লক করেন থিবো কোর্তোয়া।
পরের মিনিটে আরেকটি ভালো সেভ দিলেও শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় কোর্তোয়াকে। ফেররান তরেসের কর্নার কিক থেকে হেডারে জাল খুঁজে নেন এরিক গার্সিয়া, যিনি কোপা দেল রের ফাইনালেও রিয়ালের বিপক্ষে গোল করেছিলেন।
আরও পড়ুন
আবেগে ভেসে, চোখের জলে বায়ার্নকে বিদায় জানালেন কিংবদন্তি মুলার |
![]() |
এক গোল শোধ দিয়ে ক্রমেই রিয়ালকে চেপে ধরে বার্সেলোনা। খেই হারিয়ে ফেলা রিয়ালের খর্বশক্তির রক্ষণের জন্য গতিময় ইয়ামালকে সামলানো শুরু থেকেই ছিল কঠিন। ৩২তম মিনিটে তরেসের পাস থেকে কাট করে বক্সের ভেতর বাঁদিক থেকে বা পায়ের কোনাকুনি এক শটে গোল করেন স্প্যানিশ এই উইঙ্গার, লা লিগায় এটি এই মৌসুমে ইয়ামালের সপ্তম গোল।
পরপর দুই গোলের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে ফের গোল হজম করে বসে রিয়াল, যেখানে ফুটে ওঠে তাদের ছন্দপতন। বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এমবাপে, তবে ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে যান সতীর্থ লুকাস ভাজকেস। দুজনের ভুল বোঝাবুঝি থেকে পাল্টা আক্রমণে বল পেয়ে যান রাফিনিয়া। নিখুঁত ফিনিশিংয়ে প্রথমবারের মত বার্সেলোনাকে লিড এনে দেন ব্রাজিল ফরোয়ার্ড।
শুরুতে ঝলক দেখানো রিয়াল এরপর আশা জাগিয়েছিল সমতা টানার। পেনাল্টি আদায় করেছিলেন এমবাপে। তবে তিনি নিজেই অফসাইড থাকায় সেটা আর মেলেনি।
উল্টো ৪৫তম মিনিটে আরেক গোল খেয়ে বসে রিয়াল। এবারও কেন্দ্রবিন্দু সেই ভাজকেসই। রিয়াল অধিনায়কের কাছ থেকে বক্সের বাইরে বল কেড়ে রাফিনিয়াকে পাস বাড়ান তরেস, ফাঁকায় থাকা দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই উইঙ্গারের সমস্যা হয়নি জালের দেখা পেতে। লা লিগায় এটি মৌসুমে রাফিনিয়ার ১৮তম গোল ছিল।
অবিশ্বাস্য এক প্রথমার্ধে রিয়াল শুরুর দুই গোলের পর লক্ষ্যেই আর শটই রাখতে পারেনি। বিপরীতে ১১টি শট নিয়ে ৭টি লক্ষ্যে রাখে বার্সেলোনা।
বিরতির পরও একই ছন্দ ধরে রাখে বার্সেলোনা। রিয়ালের জোড়াতালি দেওয়া রক্ষণভাগকে আরও একবার বিপদে ফেলেই দিচ্ছিলেন রাফিনিয়া। ৫৩তম মিনিটে বাঁদিক থেকে তার পাস থেকে ফাঁকায় দাঁড়ানো ইয়ামাল টোকা দিয়ে বল জালে পাঠালেও অফসাইডের কারণে আর মেলেনি গোল।
ম্যাচের ধারার বিপরীতে এর তিন মিনিট পর একটা সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে, তবে শট উঁচিয়ে মেরে হতাশ করেন রিয়ালকে। পাল্টা আক্রমণ থেকে এরপর দুরন্ত গতিতে এগিয়ে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ানোর চেষ্টা করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, তবে সেটা বাধাপ্রাপ্ত হয় আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেনের ক্লিয়ারিংয়ে।
শেষ পর্যন্ত এই জুটির হাত ধরেই গোল পায় রিয়াল। আরও একটি কাউন্টার এটাক থেকে বল পেয়ে দুজন এগিয়ে যান বার্সেলোনার বক্সে। নিজের সামনে সুযোগ থাকলেও গোলের সামনে এমবাপেকে দিয়ে হ্যাটট্রিক করান ভিনিসিয়ুস। ২৭তম গোলের মাধ্যমে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের তালিকায় রবার্ট লেভানদভস্কির চেয়ে দুই গোলে এগিয়ে যান ফরাসি ফরোয়ার্ড।
৭৪তম মিনিটে স্কোরলাইন ৫-৩ করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন রাফিনিয়া। তার সামনেও ছিল হ্যাটট্রিকের আশা। ইয়ামালের ক্রসে ছিলেনও ভালো পজিশনে, তবে ছয় গজের ভেতর থেকে বল পোস্টের ওপর দিয়ে মেরে টিকিয়ে রাখেন রিয়ালের ম্যাচে ফেরার আশা।
আরও পড়ুন
ড্র করে সুযোগ মিসের হতাশায় গার্দিওলা |
![]() |
জমে ওঠা ম্যাচের ৮২তম মিনিটে বার্সেলোনা শিবিরে জোর দাবি ওঠে পেনাল্টির। বক্সের ভেতর অহেলিয়া চুয়ামেনির সম্ভাব্য হ্যান্ডবল সময় নিয়ে স্ক্রিনে দেখে রেফারি নাকচ করেন পেনাল্টির আবেদন। হাফ ছেঁড়ে বাচে রিয়াল।
৮৮তম মিনিটে ভিনিসিয়ুসের বদলি হিসেবে নামা তরুণ ফরোয়ার্ড ভিক্টর মুনজ প্রথম টাচেই পেয়েছিলেন হিরো হওয়ার সুযোগ। তবে লক্ষ্যে শট রাখলেই গোল, এমন পজিশন থেকে তিনি বল মেরে দেন পোস্টের বাইরে।
গোলের জন্য মরিয়া রিয়ালকে আরও একবার পাল্টা আক্রমণে চমকে দেয় বার্সেলোনা। ৯৫তম মিনিটে কাট করে বক্সে ঢুকে কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠান ফেরমিন লোপেজ। তবে হ্যান্ডবল হওয়ায় বাতিল হয় সেই গোল। বাকি সময়ে কোনো দলই পারেনি বলার মত আর সুযোগ তৈরি করতে।
বায়ার্ন মিউনিখের শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গেছে আরও আগেই। বরুশিয়ার মনচেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে ম্যাচে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা হল কানায় কানায় পূর্ণ। হাতে পোস্টার, গলায় স্কার্ফ – সবকিছুই ছিল টমাস মুলারময়। ‘ডানকে টমাস’ লেখা বিশাল ব্যানারও দৃশ্যমান হল। ৭৫ হাজার দর্শক যে এদিন হাজির হয়েছিলেন ক্লাবের এক মহীরুহকে বিদায় জানাতে, যিনি বায়ার্নের প্রতিশব্দ হয়ে গিয়েছিলেন৷ খেলোয়াড় হিসেবে তাকে বিদায় জানাতে তাই আবেগ ধরে রাখাটা কঠিনই ছিল সমর্থকদের জন্য।
ম্যাচ শুরু হতেই গ্যালারি থেকে ভেসে আসে ধ্বনি – চলো মুলার, একটা গোল দাও! ৫৬তম মিনিটে গোলের একটি বড় সুযোগ মিস করেন মুলার। সবাই চেয়েছিল একটা স্বপ্নময় বিদায়ী গোল, তবে এদিনের গল্পটা যেন অন্যভাবেই হওয়ার ছিল। যেখানে ওই গোল, অ্যাসিস্ট, শিরোপা এসব ছাপিয়ে একজন খেলোয়াড়কে কেবল দর্শকরা উদযাপন করেছেন। স্মরণ করেছেন ক্লাবের জন্য ‘রেইউমডেটর’ মুলারের ঘামে-নিবেদনের দীর্ঘ এক অধ্যায়।
আরও পড়ুন
ড্র করে সুযোগ মিসের হতাশায় গার্দিওলা |
![]() |
৮৩তম মিনিটে বদলি হিসেবে তুলে নেওয়ার জন্য বোর্ডে জ্বলে ওঠে ২৫ নম্বর, যা মানে মুলারের বিদায়ের ক্ষণ হয়ে গেছে। মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান সাবেক জার্মানি ফরোয়ার্ডকে৷ সমবেত কণ্ঠে তারা গান গেয়ে ওঠেন, ‘সারা জীবন আমাদের হৃদয়ে থাকবে মুলার।’
এর মধ্য দিয়ে বায়ার্নের সঙ্গে মুলারের ২৫ বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটে যায়। মনচেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল ক্লাবটির জার্সিতে তার ৭৫০তম।
মাঠ ছাড়ার পর মুলার দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে স্টেডিয়ামের চারদিকে তাকাচ্ছিলেন, ঠিক যেভাবে প্রিয় ঠিকানা ছেড়ে যাওয়ার সময় সবাই স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়। ম্যাচটি দেখতে মুলারের স্ত্রী লিসা ও বাবা-মা একসাথে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন।
মুলার তার বিদায়ী বক্তব্যে সতীর্থদের, বিশেষ করে আরিয়েন রোবেন, ফ্রাঙ্ক রিবেরি, রবার্ট লেভানদভস্কি, হ্যারি কেইনের সঙ্গে তার দারুণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। তিনি ক্লাবের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন
মদ্রিচের সান্নিধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করছেন গুলের |
![]() |
“আপনাদের জন্য গোল করার অনুভূতিটা আমার জন্য অমূল্য ছিল। এই ক্লাবে অনেকের সঙ্গেই আমার অসাধারণ সব মুহূর্ত কেটেছে। আমি এই ক্লাবের ভবিষ্যতের দিকে যখন তাকাই, তখন আমি দেখি একদল তরুণ, ক্ষুধার্ত খেলোয়াড়দের, যারা হৃদয় দিয়ে বায়ার্নের জন্য খেলছে। আমরা ভালো অবস্থানে আছি।”
কথাগুলো বলার সময় যদিও মুলারের চোখে জল ছিল না, তবুও ভেতরের হাহাকারটা ছিল স্পষ্ট। সেটা সামলেই বললেন মনের কথা। “আমার জন্য যদি কারও চোখে পানি আসে, তা যেন শুধুই আনন্দের হয়। আমি আপনাদের সবাইকে ভালোবাসি।”
১১ দিন আগে
১৪ দিন আগে
২২ দিন আগে
২২ দিন আগে
২২ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৫ দিন আগে