
শুরুতে উইকেট গেলেও রান তাড়ায় শুরুটা হল ইতিবাচক। তানজিদ হাসান তামিমের ফিফটিতে এক উইকেটেই হয়ে গেল শতক। তবে এরপরই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। শক্ত অবস্থানে থাকার পর মাত্র ৫ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলল মেহেদি হাসান মিরাজের দল। নাগালের মধ্যে থাকা টার্গেট তাতে হয়ে গেল পাহাড়সম, যা চলে গেল ধরাছোঁয়ার বাইরে। জাকের আলি অনিক ফিফটি করলেও তাই চারিথ আসালাঙ্কার সেঞ্চুরির ম্যাচে শ্রীলঙ্কা পেল বড় জয়।
কলম্বোতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৭৭ রানে। দলটির ২৪৫ রানের টার্গেটে ভালো একটা শুরুর পর ৩৫.৫ ওভারে মাত্র ১৬৭ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
অথচ মাঝারি টার্গেটের পেছনে ছুটে ওপেনিং জুটি ভালো কিছুরই আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। অভিষিক্ত পারভেজ হোসেন ইমন তিন বাউন্ডারিতে দুই অঙ্কের ঘরে পা রাখেন। তবে পারেননি সেটা কাজে লাগাতে। তবে অন্য ওপেনার তানজিদ ছন্দ ধরে রাখেন। মাহিশ থিকসানাকে টানা দুই চার মেরে করেন শুরু।
এরপর মিলন রত্নায়েককে পরপর দুই বলে হাঁকান চার ও ছক্কা। অন্যপ্রান্তে আসিথা ফার্নান্দোকে টানা দুই চার মারেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৫তম ওভারে মাত্র ৫১ বলে ফিফটি তুলে নেন তানজিদ। তাদের দুজনের জুটি যেভাবে জমে উঠেছিল, তাতে ক্রমেই ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা।
আর তখনই সর্বনাশের শুরু শান্তর রান-আউট দিয়ে। খানিক আগে একটি দুই রানের কলে তানজিদ সাড়া না দেওয়ায় কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। থিকসানার বলে ব্যাকফুটে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে বল ঠেলে তার দুই রানের ডাকে এবার সাড়া দেন তানজিদ, তবে ঝাঁপিয়েও ক্রিজে ফিরতে পারেননি শান্ত।
তার ২৩ রানের ইনিংস যখন থামে, তখন বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ১০০। কে ভেবেছিল, এরপরের কয়েকটি ওভার একটা ঝড় বয়ে যাবে আর রান করতেই খাবি খাবেন ব্যাটাররা? যাওয়া-আসার মিছিলে চোখের পলকেই স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১০৫! দুই প্রান্ত থেকে ত্রাস ছড়ান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও কামিন্দু মেন্দিস। দুর্দান্ত স্পেলে দুজন ভাগ করেন পাঁচ উইকেট।
সেই সময়ে প্রতিটি বলেই মনে হচ্ছিল যেন আউট হয়ে যেতে পারেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একাই লড়ে যাওয়া তানজিদও ঝরে যান সেই ঝড়ে। তার আগে খেলেন ৯ চার ও এক ছক্কায় ৬২ রানের ইনিংস।
উইকেটের এই বৃষ্টির মধ্যে খুব দ্রুতই ম্যাচ জয়ের সমীকরণ থেকে বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর। সেই কাজটা কিছুটা করেন জাকের আলি অনিক। নিশ্চিত হারের মুখে বড় কিছু শট খেলে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার করেন ৬৪ বলে ৫১।
এর আগে বল হাতে অবশ্য বাংলাদেশ দল দেখায় ভালো ধারাবাহিকতা। চোট কাটিয়ে চার মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা তাসকিন আহমেদ প্রথম স্পেলেই জানিয়ে দেন, ছন্দ পেতে বেশি সময় লাগেনি তার। একে একে ফেরান নিশান মাদুশকা ও কামিন্দুকে।
শ্রীলঙ্কার চাপ বাড়িয়ে অন্যপ্রান্তে পাথুম নিশাংকাকে শিকার বানান তানজিম। ২৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কার ইনিংস মেরামতের কাজ এরপর শুরু করেন আসালাঙ্কা ও কুসাল মেন্দিস মিলে। তাদের ৬০ রানের জুটি ভাঙেন অভিষিক্ত তানভীর, শিকার বানান ৪৫ রান করা কুসালকে।
এরপর শ্রীলঙ্কার আরেকটি ফিফটি জুটির ইতি টানতে মিরাজ আক্রমণে আনেন অকেশনাল স্পিনার শান্তকে। প্রথম ওভারেই দেখান চমক। ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ তুলে দেন জানিথ লিয়াঙ্গে।
এরপর ছয়, সাত ও অষ্টম উইকেটে ছোট তবে কার্যকর তিনটি জুটিতে স্বাগতিকদের ম্যাচে ধরে রাখেন আসালাঙ্কা। ইনিংসের শেষ দিকে গিয়ে দেখা পান শতকের। তবে তার বিরুদ্ধে বাড়তি পরিকল্পনা নিয়ে সেই সময়ে বল করে বাংলাদেশ, ফলে খুব বেশি বড় শট খেলতে পারেননি তিনি।
শেষ পর্যন্ত থামেন ১০৬ রানে, যা তার দলকে এনে দেয় লড়াই করার মত একটা পুঁজি। ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন তাসকিন। ৪৬ রানে তিন উইকেট নেন আরেক পেসার তানজিম।
No posts available.
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০২ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:০০ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:৩১ পিএম

ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টি যাত্রাতেও দাপুটে ভারত। আজ কটকে অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে আটকে ১০১ রানের বড় জয় পেয়েছে সূর্যকুমার যাদবের দল। এ জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
এদিন আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত। জবাবে ১২.৩ ওভারে ৭৪ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
টস হেরে এইডেন মার্করামের আমন্ত্রণে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা শুভমান গিল ওপেনিংয়ে নেমে ৪ রানে উইকেট ছাড়েন। পরে ১২ রান করে ফিরে যান অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ১৪ ওভারে ১০৪ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত।
দল গঠনে দায়িত্ব দেন চোট কাটিয়ে ফেরা হার্দিক পান্ডিয়া। ২৮ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন এই পেস অলরাউন্ডার। তাতেই ১৭৬ রানের লড়াকু স্কোর পায় ভারত।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই আর্শদীপ সিং ও জাসপ্রিত বুমরাহের তোপে পড়ে প্রোটিয়ারা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট হন কুইন্টন ডি কক। তৃতীয় ওভারে ফিরে যান ট্রিস্তান স্টাবস। দলীয় ৪০ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। ১৪ রান করে আউট হন এইডেন মার্করাম।
এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ। ২৯ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় তারা। প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস।
এদিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০তম উইকেট পেয়ে যান যশপ্রীত বুমরা। ভারতের হয়ে আর্শদীপ সিং, জাসপ্রিত বুমরাহ, বরুণ চক্রবর্তী ও অক্ষর প্যাটেল নেন ২টি করে উইকেট। বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে দুই দল।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আকবর আলি ও ট্রফি- শব্দগুলো ক্রমে একে অপরের সমার্থক হয়ে উঠছে। পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে পাঁচটি ঘরোয়া শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশকে ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক।
আর এই সাফল্য যে একদমই ফ্লুক নয়, আকবরের দলের ধারাবাহিকতাই সেটির প্রমাণ দেয়। সবশেষ তিনি জিতেছেন জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের শিরোপা। আর এই কৃতিত্ব অর্জনের পেছনে রয়েছে আকবরদের দীর্ঘ সু-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
আট দলের জাতীয় লিগে ছয় রাউন্ড শেষেও কাগজে-কলমে শিরোপা জেতার সম্ভাবনা টিকে ছিল ৬টি দলের। ২ জয় ও ৪ ড্রয়ের সঙ্গে দুটি বোনাস পয়েন্ট পেয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল সিলেট। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পরেই ছিল নবাগত ময়মনসিংহ। তাই ২৩ পয়েন্ট থাকা রংপুরের জন্য শেষ ম্যাচের সমীকরণ ছিল বেশ জটিল।
খুলনার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটি শুধু জিতলেই হতো না, তাদের চেয়ে থাকতে হতো সিলেট ও ময়মনসিংহ ম্যাচের দিকেও। তবে সবার আগে নিজেদের কাজটা সারার দিকেই মনোযোগ ছিল আকবরের।
মঙ্গলবার জাতীয় লিগের শিরোপা উদযাপন সেরে কিছুটা ফ্রি হওয়ার পর তিনি বললেন, শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া দ্বিতীয় ভাবনা ছিল না রংপুরের।
“আমরা তো তিন নাম্বারে ছিলাম তো ভাবনা ছিলো যে আমাদের জিততেই হবে। যদি জিততে পারি সেক্ষেত্রে হয়তোবা সিলেট আর ময়মনসিংহ খেলায় যদি রেজাল্ট আমাদের পজিটিভে আসে... মানে ওদের রেজাল্ট ওরা না করতে পারে সেক্ষেত্রে (ট্রফি) আমাদেরই আরকি।”
“আমাদের কাছে ছিলো যেটা, ম্যাচটা জিততেই হবে। তো যেহেতু বগুড়াতে খেলা, হিস্টোরিক্যালি বগুড়াতে রেজাল্ট হয়। মানে যেই টিমই করুক, কোনো না কোনো রেজাল্ট হবেই। তাই আমাদের একটাই কথা ছিল যে, ওরা যা করবে আমরা শেষ করব। একটা কথাই ছিল যে, সিচুয়েশন যত কঠিনই হোক আমরা জেতার জন্যই খেলব।”
সেই লক্ষ্যে প্রথম ইনিংসে খুলনার ৩০৮ রানের জবাবে মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে যায় রংপুর। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর আগুনঝরা বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে ৯৬ রানে অল আউট করে দেয় আকবরের দল।
পরে উদীয়মান বাঁহাতি ব্যাটার ইকবাল হোসেনের চমৎকার এক সেঞ্চুরিতে ২৩১ রানের লক্ষ্য অনায়াসেই তাড়া করে ফেলে রংপুর। ফল ৩ জয় ও ৩ ড্রয়ে তাদের ঝুলিতে হয় ৩১ পয়েন্ট।
পরদিন রাজশাহীর কাছে ময়মনসিংহের পরাজয় ও বরিশালের সঙ্গে সিলেটের ড্রয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় আকবরের অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ট্রফি।
২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতিয়ে অধিনায়ক হিসেবে আকবরের উত্থান। এরপর ২০২২ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণে রংপুরের শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার অধিনায়কত্বে ২০২৩ সালে বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হয় নর্থ জোন।
ধারাবাহিকতা ধরে রেখে গত বছর এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রথম আসরেই বাজিমাত করে আকবরের রংপুর। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে চলতি বছরের এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও চ্যাম্পিয়ন হন তারা।
এবার চার দিনের সংস্করণেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরোয়া ‘ডাবল’ ট্রফি ঘরে তুলল রংপুর। যা আরও পাকাপোক্ত করল ‘আকবর দ্য গ্রেট’ তকমা।
রংপুরের এই কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে তাদের দীর্ঘ পরিকল্পনা। লিগের সূচি পাওয়ার পরই সাত ম্যাচের ভেন্যু ও প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে টুর্নামেন্টের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেন আকবর, নাসির হোসেন, নাঈম ইসলামরা।
“যখন সূচি পেয়েছি, তখন সিনিয়র কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে কোচিং স্টাফ যারা ছিল... আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা এমনই ছিল যে, আমাদেরকে বগুড়ায় দুইটা ও রাজশাহীর একটা ম্যাচ জিততেই হবে। বাকি খেলাগুলো যদি জিততেও না পারি অন্তত যেন আমরা ড্র করতে পারি।”
যেই কথা সেই কাজ। কুকাবুরা বলে সিলেট ও কক্সবাজারে হওয়া প্রথম দুই রাউন্ডে ঢাকা ও ময়মনসিংহের সঙ্গে ড্র করে দুটি করে পয়েন্ট নিশ্চিত করে রংপুর। পরে ডিউক বলে ফিরলেও কক্সবাজারে তৃতীয় রাউন্ডে সিলেটের সঙ্গেও ড্র হয় তাদের ম্যাচ।
এরপর বগুড়ায় গিয়ে বরিশালকে ৮ উইকেটে হারিয়ে পূর্ণ ৮ পয়েন্ট পায় রংপুর। রাজশাহীর মাঠে খেলতে নেমে পঞ্চম রাউন্ডে তারা হারায় স্বাগতিক রাজশাহীকে।
ষষ্ঠ রাউন্ডের জন্য আবার কক্সবাজারে যায় আকবরের দল। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে হাসান মাহমুদ ও ইফরান হোসেনের তোপে মাত্র ৩৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। পরে ম্যাচটি তারা হেরে যায় ইনিংস ব্যবধানে।
আকবরের মতে, পুরো টুর্নামেন্টে ওই একটি ইনিংসই শুধু তার প্রত্যা্শামতো যায়নি।
“শুধু চট্টগ্রাম ম্যাচটা বাদে আর সব ম্যাচে আমাদের পজিটিভ রেজাল্টই বলবো। কুকাবুরাতে সিলেটের মাঠে খেলা হইছে, কক্সবাজারে খেলা হইছে। ওগুলো ম্যাচে রেজাল্ট বের করা কঠিন।”
“আমরা জানতাম যে আমাদের বগুড়াতে দুইটা খেলা আছে, রাজশাহীতে একটা খেলা আছে। তো এই তিনটা খেলায় রেজাল্ট করতেই হবে আমাদের।”
আর এই ফল পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারিগর মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। রংপুরের জেতা তিন ম্যাচেই ইনিংসে ৫ উইকেট আছে ২৫ বছর বয়সী পেসারের৷ সব মিলিয়ে মাত্র ৭ ইনিংসে তিনি নিয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ উইকেট। যার সৌজন্যে জিতেছেন লিগের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার।
ব্যাটিংয়ে সম্মিলিত পারফরম্যান্স ছিল দলের সবার। সর্বোচ্চ ৩০০ রান করেন নাঈম ইসলাম। মূলত বোলিং দিয়েই এবারের শিরোপাটি জিতেছে রংপুর। আরও একবার নিজেকে আকবর দ্য গ্রেট হিসেবে প্রমাণ করেছেন অধিনায়ক আকবর।

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২০২৫-২৬ মৌসুমের পর্দা নামল আজ। দুই মৌসুম পর আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রংপুর। দুই মাস আগেই এনসিএল টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উত্তরবঙ্গের দলটি। এবার চারদিনের ক্রিকেটেও ট্রফি ঘরে নিল আকবর আলির দল।
এনসিএলে সেরা উইকেটশিকারিদের তালিকায় সবার উপরে বরিশালের বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। সাত ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ৩৪ উইকেট। দুইবার নিয়েছেন ফাইফার, ৬৪ রানে ৭ উইকেট তাঁর সেরা বোলিং ফিগার।
চমক দেখিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন রংপুরের মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। চার ম্যাচে ৮ ইনিংসে নিয়েছেন ২৯ উইকেট। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার, এক ইনিংসে ২২ রানে ৫ উইকেট সেরা ফিগার মুগ্ধ’র। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের স্ট্রাইক ২৩,৯৩ অর্থাৎ প্রতি চার ওভার বল বল করে নিয়েছেন উইকেট। রয়েছেন তালিকায় দ্বিতীয়তে।
তালিকার তিন নম্বরে রয়েছেন বরিশালের রুয়েল মিয়া। ৬ ম্যাচে ১১ ইনিংসে রুয়েল শিকার করেছেন ২৭ উইকেট। ৬৪ রানে ৫ উইকেট এই বাঁ-হাতি পেসারের বোলিং ফিগার। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার।
চার নম্বরে চট্টগ্রামের স্পিনার নাইম হাসানের উইকেট সংখ্যা রুয়েল মিয়ার সমান। তবে এক ম্যাচ ও দুই ইনিংস বেশি খেলেছেন তিনি। ৭ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ২৭ উইকেট।
পাঁচ নম্বর নামটা সিলেটের আবু জায়েদ চৌধুরী রাহীর। পাঁচ ম্যাচে ১০ ইনিংসে ২৫ উইকেট নিয়েছেন এই মিডিয়াম পেসার। ৩৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট সেরা বোলিং ফিগার বাংলাদেশ টেস্ট দলে খেলা এই বোলারের।

চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা পূর্বাচল ক্রিকেট স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স বিসিবি বুঝে পেয়েছে ২০১৭ সালে। তবে ৩৭.৫৯ একর জায়গা এখনো পড়ে আছে অব্যবহৃত। একটি মাঠও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি প্রস্তুত করতে পারেনি বিসিবি। অধিকাংশ জায়গা ছেয়ে আছে বনঘাসে। দূর্বাঘাসের অস্তিত্ব নেই কোথাও। দুটি দেয়ালঘেরা অফিস এখানে ভবিষ্যতে বড় কর্মযজ্ঞের বার্তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতের আধুনিক রাজধানীতে এতো বড় একটি জায়গায় পরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট নগরে পরিনত করতে কে না চাইবে ? গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তাই মাঠ সংকট কাটানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট।
পূর্বাচলে তিনটি মাঠ তৈরির কাছে হাত দেয়ার কথাও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট-
'এক সময়ে এখানে পুরোটাই জঙ্গল ছিল। পূর্বাচলের এই সুন্দর জায়গাটিতে যতো দ্রুত সম্ভব খেলার উপযোগী করে তুলতে চাই।প্রায় ২০-২৫ দিন আগে এখানে আমি একবার এসেছিলাম। এতো সুন্দর জায়গা পাঁচ-সাত বছর পড়ে আছে। এখানে তিনটি মাঠে খেলা শুরু করতে চাই। ঢাকার অনেক ক্রিকেটের জন্য মাঠ ভাড়া করতে হয়। সময়মত লিগ আয়োজন করতে পারি না। ফতুল্লায়ও ২টি মাঠের কাজে হাত দিতে পারি। ফতুল্লায় ইনার এবং আউটারের কাজ ৭০% হয়ে গেছে।ওখানে ৩০% কাজ বাকি আছে। পূর্বাচলে ৩টি এবং ফতুল্লায় ২টি মাঠের কাজ শেষ করতে পারলে ঢাকার লিগগুলো আয়োজন করা যাবে। ভবিষ্যতে যে প্লান আছে, তখন না হয় গ্যালারি করতে পারব। মাঠের কাজ শুরু করেছি। ১০টি পিচ হবে প্রতিটি মাঠে। এভাবে তিনটি মাঠের কাজে হাত দিয়েছি। বেশ কিছু বালি ফেলতে হবে। প্রাথমিকভাবে ঘাস উঠানোর কাজ চলছে।'

এজ গ্রুপ ডেভেলপম্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বিসিবি পরিচালক প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী আসিফ আকবর চষে বেড়িছেন বিভিন্ন জেলায়। ইতোমধ্যে ১১টি জেলা সফর করে সেখানকার মাঠের প্রকৃত চিত্র জেনে বিসিবিকে দিয়েছেন রিপোর্ট। মাঠ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য করনীয় উপায় নির্ধারণ করেছেন তিনি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ক্রিকেট নিয়ে মঙ্গলবার কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সাথে। বিসিবির ক্যালেন্ডারে প্রচুর খেলা যুক্ত করে দেশব্যাপী ক্রিকেট উৎসবের পক্ষে আসিফ আকবর। তার পরিকল্পনায় যুক্ত হচ্ছে বয়সভিত্তিক ২টি টুর্নামেন্ট। মঙ্গলবার পূর্বাচলের ক্রিকেট কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে সেই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি-
'এখানে যদি অন্তত: ২টি মাঠ এবং ফতুল্লায় ২টি মাঠে খেলা হলে মাসে অন্তত ৭০ টা করে ১৪০টা ম্যাচ আয়োজন করতে পারব। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পর ঢাকা লিগের মাঝে একটা ধাপ ফাঁকা থেকে যায়। নতুন করে ভাবছি, ক্রিকেট কনফারেন্সে উঠে এসেছে প্রসঙ্গটি। আমরা অনূর্ধ্ব-২১ এবং অনূর্ধ্ব-২৩ এই লেভেলে ক্রিকেট আয়োজনের কথা ভাবছি। স্কুল পর্যায়ে প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক দুটি ধাপে শুরু করতে চাই। স্বল্প পরিসরে মাদ্রাসা এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্রিকেট প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চাই। আন্ত: কলেজ, আন্ত: বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট একটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়োজন করতে চাই। আগামী ২ থেকে তিন মাসের মধ্যে ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে প্রচুর ক্রিকেট আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে একটা উৎসবের আবহে নিয়ে যেতে চাই।'
প্রতিটি জেলার ক্রিকেট কার্যক্রমকে বিসিবি ইয়ার ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করে তা বাস্তবায়নে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আসিফ আকবর-
'আমরা গ্যালারি তৈরি করা, মাঠ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। আমরা ইয়ার ক্যালেন্ডার সারা দেশ থেকে আনতে চাই। ক্রিকেট চালানোর জন্য যা যা প্রয়োজন, সেই কার্যক্রম শুরু করেছি। এই প্রথম প্রতিটি জেলায় বলসহ কোয়ালিটিফুল প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিসিবি দিয়েছে।'
বিসিবির তহবিল থেকে হাত না দিয়ে স্পন্সরের মাধ্যমে গ্র্যাউন্ডস ইকুইপমেন্টস এর যোগান পাওয়ার কথা ভাবছে বিসিবি। এমনটাই জানিয়েছেন আসিফ আকবর-
'আমি যে ১১টি জেলায় গিয়েছি, অনেক জায়গায় দেখেছি মেয়েদের জন্য পৃথক ড্রেসিং রুম নেই, সাইট স্ক্রিন নেই, পানির সমস্যা, নেই সব জায়গায় ঘাস কাটার মেশিন, রোলার, পিচ কভার। আমরা তাই ৮টি বিভাগে কিছু ডিপো এবং হাব করতে চাই। এইসব হাব থেকে গ্র্যাউন্ডস ইকুইপমেন্টস যাবে বিভিন্ন জেলায়। আবার সেখান থেকে হাব এ ফিরে আসবে।বিসিবির তহবিলে যথাসম্ভব কম হাত দিচ্ছি। বিসিবির তহবিল থেকে হাত না দিয়ে স্পন্সরের মাধ্যমে এসব করতে চাই। এক একটি জায়গায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার গ্র্যাউন্ডস ইকুইপমেন্টস দরকার।'