২৬ অক্টোবর ২০২৪, ৫:২২ পিএম
একেই বলে নিজেদের পাতা ফাঁদে নিজেই আটকে যাওয়া - স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করতে গিয়ে নিজেরাই ধরাশয়ী হয়ে গেল ভারত। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটের পর টার্নিং উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতের ঘাতক হলেই সেই মিচেল স্যান্টনারই। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা লড়াই করলেও ম্যাচ বাঁচাতে পারল না রোহিত শর্মার। তাতে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মত ভারতের মাটিতে দলটির বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল নিউজিল্যান্ড।
পুনেতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মাত্র তিন দিনেই ভারতকে ১১৩ রানে হারিয়ে দিয়েছে সফরকারীরা। তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। এর আগে ভারতের মাটিতে মাত্র দুটি টেস্ট জেতা দলটি এবার পেল টানা দুই ম্যাচে দুই জয়।
এর মধ্যে দিয়ে দেশের মাটিতে সিরিজ হারের প্রায় ভুলতে বসা স্বাদ আবার পেল ভারত। শেষবার ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল তারা। আর সব মিলিয়ে নিজেদের ইতিহাসে মাত্র চতুর্থবার ভারত নিজেদের দেশে টেস্ট সিরিজে হারল।
প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ২৫৯ রানের জবাবে ভারত গুটিয়ে যায় মাত্র ১৫৬ রানে। প্রথম দিন থেকেই দুই দলের স্পিনাররা যেভাবে ছড়ি ঘুরিয়েছেন, তাতে ১০৩ রানের এই ব্যবধান কাটানো ভারতের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইরা ২৫৫ রানে অলআউট হলে ভারতের সামনে কঠিন এই উইকেটে টার্গেট দাঁড়ায় ৩৫৯ রানের টার্গেট।
এই রান তাড়া করে জিততে হলে ভারতকে গড়তে হত রেকর্ড, কারণ এই মাঠে এটি হত সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি। টিম সাউদিকে প্রথম ওভারেই চার ও ছক্কা মেরে ইয়াশাশভি জয়সওয়াল বার্তা দেন চেনা ভঙ্গিতে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের। তিনি একপ্রান্তে ভালো ছন্দে থাকলেও অন্য প্রান্তে রোহিত ব্যর্থ হন আরও একবার। স্যান্টনারের প্রথম শিকার হওয়ার আগে করতে পারেন মোটে ৮ রান।
প্রথম সেশনে জয়সওয়াল ও শুবমান গিলের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে এরপর ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। ১২ ওভারেই বোর্ডে জমা হয় ৮১ রান। তবে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই স্যান্টনারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে গিলের বিদায়ের পর থেকে ভেঙে যায় ভারতের প্রতিরোধ। মাত্র ৪১ বলে ফিফটি করা জয়সওয়াল ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। তবে আরও একবার নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচ ফেরান স্যান্টনারই।
আগের দুটি ডেলিভারি টার্ন করে বেরিয়ে গেলেও যে বলটি টার্ন করেনি, সেটিতেই বিভ্রান্ত হয়ে ফরওয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় জয়সওয়ালের ইনিংস। ৬৫ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৭৭ রান। ভারতের চাপ বেড়ে যায় বিরাট কোহলির সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রিশাভ পন্তের রানআউটে।
প্রথম ইনিংসে কোহলিকে বোল্ড করা স্যান্টনার আরও একবার হন্তারক হন ভারত তারকার। এবার লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ১৭ রানে। ভারতের জয়ের আশাও অনেকটাই মিলিয়ে যায় তখন। দ্রুত আরও কয়েকটি উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রানে ৭ উইকেট চলে যায় ভারতের। সেখান থেকে শেষ ভরসা ছিলেন দুই অভিজ্ঞ রবিচন্দন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা।
তবে স্যান্টনারময় এক ম্যাচে তারা কেউই পারেননি ভারতকে জয়ের আশা যোগাতে। জাসপ্রিত বুমরাহ কয়েকটি বড় শট মারার পর শেষ ব্যাটার হিসেবে ৪২ রানে আউট হন জাদেজা। উল্লাসে মেতে ওঠে নিউজিল্যান্ড। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের দেখা যে বিশ্বের সব দলের জন্য স্বপ্নের ব্যাপার।
৬ আগস্ট ২০২৫, ৯:২৬ পিএম
৫ আগস্ট ২০২৫, ৮:৫৪ পিএম
গত এক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে ‘এ’ দলে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। তবুও নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাইরেই থাকতে হচ্ছে নুরুল হাসান সোহানকে। অস্ট্রেলিয়ায় টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ তার জন্য হতে পারে নিজেকে প্রমাণের আরেকটি মঞ্চ। অভিজ্ঞ এই কিপার-ব্যাটার মনে করেন, জাতীয় দলে ফেরার জন্য তিনি কেবল নিজের কাজটাই ঠিকটাক করতে পারেন।
বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের নিয়মিত অধিনায়ক সোহান টানা দুই আসরে দলটিকে নিয়ে গেছেন গ্লোবাল সুপার লিগের ফাইনালে। একবার হয়েছেন চ্যাম্পিয়নও। এছাড়া বিপিএল, ডিপিএল, এনসিএল বা ‘এ’ দল, সব জায়গাতেই ব্যাট হাতে ও নেতা হিসেবেও নিজের মুন্সিয়ানা দেখাচ্ছেন সোহান। সেই ধারায় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাকে অধিনায়ক করা হয়েছে। তবে জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার অপেক্ষা লম্বাই হচ্ছে তার।
বুধবার মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক সুরেই কথা বললেন সোহান।
“জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া আসলে আমার হাতে নেই। এটা নিয়ে মন্তব্য করাটাও তাই ঠিক হবে না। তবে যেখানেই খেলি না কেন, ভালো করার চেষ্টা করি। নিজের জায়গা থেকে উন্নতির চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলা ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল, এখনও সেই স্বপ্নই দেখি। সুযোগ পেলে অবশ্যই নিজের সর্বোচ্চটা দিতে চাই।”
সোহানের জন্য সেই সুযোগটা আসতে পারে এই সিরিজটি দিয়েই। জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা ক্রিকেটারদের বাজিয়ে দেখতেই সাজানো হয়েছে ‘এ’ দলের স্কোয়াড। আর বলার অপেক্ষা রাখে না, এখানে ভালো করলে সোহান বা অন্যদের জন্য খুলে যেতে পারে নেদারল্যান্ডস সিরিজের দুয়ার। সেটা না হলেও সুযোগ মিলতে পারে এশিয়া কাপেও।
“আমরা একটা ভালো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছি। এখানে অনেক ভালো ভালো দল রয়েছে। আমাদের জন্য তাই দারুণ একটা সুযোগ। অবশ্যই চাইব ফাইনাল খেলতে। তবে শেখার প্রক্রিয়ায় আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, শেখার ব্যাপারটা কিন্তু চলতেই থাকবে, এটা জীবনেরই অংশ। কিন্তু যেহেতু একটি প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি, তাই সেখানে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ফাইনালে খেলা এবং শিরোপা জেতা। দলের প্রতিটি ক্রিকেটার, টিম ম্যানেজমেন্ট এখানে সবাই চোখ রাখছে কেবল শিরোপার দিকেই।”
দুই ম্যাচ হাতে রেখে ত্রিদেশীয় অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের যুবারা। ফাইনালে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে আগামী ১০ আগষ্ট ট্রফি নির্ধারণী ম্যাচে অবতীর্ণ হওয়ার আগে বুধবার ফাইনালের ড্রেস রিহার্সল ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে পর্যুদস্ত করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
এক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৫ উইকেটে হারের বদলা এদিন নিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। জিম্বাবুয়ের হারারেতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে সামিউন বশিরের অলরাউন্ড পারফরমেন্স (২/২৩ও ৫২*) এবং বাঁ হাতি স্পিনার সানজিদ মজুমদারের ছোবলে ( ৪/৩৯) ১২৩ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জিতে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশ যুবারা।
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে পেসার আল ফাহাদ (২/২০) এবং দুই বাঁ হাতি স্পিনার সানজিদ মজুমদার (৪/৩৯)ও সামিউন বশিরের (২/২৩) বোলিংয়ে ১২.৪ ওভার হাতে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে মাত্র ১৪৭ রানে অল আউট করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বোলারদের তোপে এক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের স্কোর ছিল ৪৫/৫। সেখান থেকে ৬ষ্ঠ উইকেট জুটির ৩৭ রানে বড় বিপর্যয় এড়িয়ে ১৪৭ পর্যন্ত ইনিংস টেনে নিতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার যুবারা। বান্ডিল মাবিথা করেছেন সর্বোচ্চ ৩৯ রান। পল জেমস করেছেন ৩৩ রান।
১৪৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের টপ এবং মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় এক পর্যায়ে স্কোর ছিল ৬৮/৫। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করে ৫ উইকেটের বিশাল জয় উপহার দিয়েছেন ৬ষ্ঠ জুটির দুই ব্যাটার আব্দুল্লাহ এবং সামিউন বশির। অবিচ্ছিন্ন এই জুটি যোগ করেছে ৮০ রান। আবদুল্লাহ ৪৭ বলে ২০ এবং সামিউন বশির ৩৬ বলে ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন। সামিউন বশির এই ইনিংসে মেরেছেন ৬টি চার, ৩টি ছক্কা। ওপেনার রিফাত বেগ করেছেন ৪৭ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৪৩ রান।
সদ্য সমাপ্ত রোমাঞ্চকর ওভাল টেস্টে ভারতের নাটকীয় জয়ে বল হাতে জ্বলে উঠেছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। ভারত পেসারের সেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের প্রতিফলন পড়েছে আইসিসির টেস্ট বোলারদের র্যাঙ্কিংয়েও। ১২ ধাপ উন্নতি করে উঠে এসেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৫তম অবস্থানে।
বুধবার আইসিসি প্রকাশ করেছে র্যাঙ্কিংয়ের সাপ্তাহিক হালনাগাদ, যেখানে বাজিমাত করেছেন সিরাজ। এর আগে একবার শীর্ষ বিশের মধ্যে এসেছিলেন এই ডানহাতি পেসার। সেটা ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে।
ওভালে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেওয়া সিরাজ পুরো সিরিজেই ছিলেন অন্যতম সেরা বোলার। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের দেওয়া ৩৭৪ রানের লক্ষ্যে দারুণভাবে এগিয়ে চলা ইংলিশদের তিনি আটকে দেন ফাইফার নিয়ে, আর দলকে মাত্র ৬ রানে। ম্যাচ সেরার খেতাবও জেতেন সিরাজই।
ভারতের এই জয়ে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন আরেক পেসার প্রাসিধ কৃষ্ণও। দুই ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে তিনি দিয়েছেন বড় লাফ। ২৫ ধাপ উন্নতিতে উঠে এসেছেন ৫৯তম স্থানে, যা তারও ক্যারিয়ার অবস্থান।
দল হারলেও ইংল্যান্ডের পেসারদের জন্যও রয়েছে ভালো পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি। ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সেরা দশে (১০ নম্বর) জায়গা করে নিয়েছেন গাস আটকিনসন, যেখানে যৌথভাবে তার সাথে দশে আছেন অজি পেসার মিচেল স্টার্ক। আরেক ডানহাতি পেসার জস টাং উঠে এসেছেন ৪৬তম স্থানে, তার উন্নতি ১৪ ধাপ।
টেস্ট বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ তিনে আগের মতোই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছেন জাসপ্রিত বুমরাহ, কাগিসো রাবাদা ও প্যাট কামিন্স। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে শীর্ষ ২৫-এর মধ্যে আছেন কেবল মেহেদি হাসান মিরাজ। এক ধাপ উন্নতি করে তিনি আছেন ২৫তম স্থানে।
ভারত-ইংল্যান্ডের ২-২ সমতায় শেষ হওয়া এই সিরিজের দারুণ কিছু ইনিংস খেলা ইয়াশাশভি জয়সওয়াল ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে করেন শতক। তিন ধাপ উন্নতিতে ভারত ওপেনার এখন আছেন পঞ্চম স্থানে। একই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা জো রুট ধরে রেখেছেন শীর্ষস্থান।
আরেক ইংলিশ ব্যাটার হ্যারি ব্রুক দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে উঠে এসেছেন দুইয়ে। ফলে তিনি নেমে যেতে হয়েছে কেন উইলিয়ামসনকে। ব্যাটারদের মধ্যে বাংলাদেশের সেরা অবস্থান মুশফিকুর রহিমের, তিনি আছেন ৩২ নম্বরে।
আর অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে যথারীতি প্রথম স্থান ধরে রেখেছেন ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এক সিরিজ কাটানো ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা (৪০৫ রেটিং পয়েন্ট)। দুইয়ে আছেন মিরাজ (৩০৫ রেটিং পয়েন্ট)।
ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যকার এক অসাধারণ টেস্ট সিরিজের শেষ দিনের শুরুতেও ক্রিকেট প্রেমীরা জানতেন না, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ইতিহাসের অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের। তারা জানতেন কেবল নিজ নিজ দলের জয়ের সম্ভাবনাটাই কেবল। তবে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে ওভাল টেস্টের পঞ্চম দিক সকালে টানটান উত্তেজনার মঞ্চে সবচেয়ে হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্তটি নিয়ে ক্রিস ওকস, যিনি কিনা তিন দিন আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন ম্যাচ থেকেই। সেই ক্রিকেটার স্রেফ এক হাত নিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটার হিসেবে যখন নেমে যান, তখন আক্ষরিক অর্থে সেটাই ছিল তার জয়, টেস্ট ক্রিকেটেরই জয় বৈকি।
প্রথম দিনের খেলার শেষের দিকে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ওকসের বাঁ কাঁধের হাড় সরে গিয়েছিল। এরপর থেকে আঘাত প্রাপ্ত হাতটিকে স্লিংয়ে বেঁধে রাখতে হচ্ছে তাকে। দ্বিতীয় দিনই জানিয়ে দেওয়া, এই ম্যাচ শেষ ওকসের জন্য। অথচ সেই তিনিই পঞ্চম দিন তুমুল করতালির মধ্যে এক হাতে ব্যাট করতে যখন নেমে যান, তখন এক উইকেট হাতে রেখে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ১৭ রান।
ওকস ডানহাতি ব্যাটার হওয়ায় অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন, চাইলেও এই ম্যাচে তার ব্যাটিং করা অসম্ভব। তবে বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া এই সৈনিক যে শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও লড়তে প্রস্তুত। আর তাই সেই আহত কাঁধ থেকে পুরো হাত স্লিংয়ে বেঁধে জার্সির নিচে লুকিয়ে রেখেই হাজির হন দলকে জেতাতে। তার সংক্ষিপ্ত কিন্তু সাহসী এই ইনিংসে নেই কোনো চার-ছক্কা বা রান, তবে যা আছে তা হল না মানা চোয়ালবদ্ধ এক যোদ্ধার শেষটা নিংড়ে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছাশক্তি।
আর এটাই ওকসকে সাহস যুগিয়েছে স্রেফ এক হাতে ব্যাটিং করার, যা আবার কিনা বাঁহাতি হিসেবে। ক্যারিয়ারে এমনটা আগে কখনও না করায় স্বাভাবিকভাবেই এটা তার জন্য মোটেও সহজ কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। আর যুদ্ধটা তো কেবল মাঠে নামাতেই নয়, তার আগেও ছিল বেশ। ফিজিওর সাহায্যে প্যাড পরেছেন, বাঁ হাতে যাতে চাপ না পড়ে এমনভাবে গার্ড নিয়েছেন। এমনকি ডান হাতে দুইটি ছোট আর্ম গার্ড পরে ব্যাট ধরেছেন। এরপরও মাঠে যাওয়ার প্রতিটি মুহূর্তেই ব্যথা আর যন্ত্রণা তার মুখের অভিব্যক্তিতেই ফুটে উঠছিল বারবার।
যদিও ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো বল খেলতে হয়নি ওকসকে, কারণ পরপর দুই ওভারের শেষ বলে অন্য ব্যাটার প্রান্ত বদল করতে সমর্থ হন। তবুও নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে দাঁড়িয়ে বারবার ছুটে গিয়ে রান নিতে হয়েছে ওকসকে। আর প্রতিটি দৌড়ে চোখেমুখে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ ছিল স্পষ্ট। স্লিং বেঁধে রাখা হাতে যে দৌড় দিলেই ব্যথা অনুভব করছিলেন। একবার তো আম্পায়ার আহসান রাজার সাহায্যও চেয়েছিলেন গ্লাভস পরিয়ে দিতে।
শেষ পর্যন্ত গাস আটকিনসন বোল্ড হয়ে গেলে ওকসের বীরত্ব স্বত্বেও ছয় রানে হার্টে হয় ইংল্যান্ডকে। সিরিজ ড্রয়ের আনন্দ থাকলেও ভারতের খেলোয়াড়রাও ম্যাচ শেষে প্রথমেই এগিয়ে যান ওকসের দিকেই। একে একে তারা শ্রদ্ধা জানান তার এই সাহসিকতাকে।
ওকসের এই এক হাতে ব্যাট করতে নেমে যাওয়া, ব্যথা নিয়ে দৌড় দেওয়ার দৃশ্যগুলো আরও একটি কারণেই তার জন্য ইতিহাস হয়ে থাকতে পারে। কারণ, এটাই যে হতে পারে তার শেষ আন্তর্জাতিক ইনিংস। ৩৬ বছর বয়সী এই পেসার এখন আর ইংল্যান্ডের সাদা বলের দলে নেই। মূলত খেলেন টেস্টেই। কাঁধের এই চোট সারিয়ে বছরের শেষের আগে তার ফেরার আর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ইংলিশদের পেসারদের এখন যে দাপট, তাতে একবার দলে জায়গা হারিয়ে ফেললে সেটা এই বয়সে ওকসের জন্য বেশ কঠিনই হতে পারে।
তবে আপাতত সেসব ছাপিয়ে ওকসের এই ক্ষণিকের উপস্থিতি শুধু একটা ম্যাচ নয়, পুরো সিরিজের আবেগ ও নিবেদনের উঁচু মানদণ্ডই যেন তুলে ধরে। যেখানে পাঁচ টেস্টের ২৫ দিনের লড়াইয়ে ৩২ জন খেলোয়াড় শারীরিক ও মানসিক ধাক্কা সামলেছেন, সেখানে ওকস দেখিয়ে দিয়েছেন, আসল লড়াইটা নিজের প্রতি মুহূর্তে নিজের সামর্থ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ারও।
নিজের সম্ভাব্য শেষ আন্তর্জাতিক ইনিংসে তাই বোলার ওকস স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ব্যাট হাতে তার কীর্তির। রেকর্ডের পাতায় না থাকলেও যুগ যুগ ধরে খেলাটির প্রতি তার এই নিবেদন হৃদয়ে গেঁথে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।