৬ মে ২০২৪, ৩:৪৩ পিএম

বিশ্ব জুড়ে ভীষণ জনপ্রিয়তা থাকলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেনিস এখনও বেশ পিছিয়ে থাকা এক ইভেন্টের নাম। তবে সম্প্রতি অসাধারণ এক কীর্তিতে টেনিসেই বাংলাদেশের জন্য গর্ব বয়ে এনেছেন মাসফিয়া আফরিন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের (আইটিএফ) ‘হোয়াইট ব্যাজ’ রেফারি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। এর ফলে ভবিষ্যতে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ম্যাচ পরিচালনার প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করেছেন মাসফিয়া।
বাংলাদেশ থেকে সারোয়ার মোস্তফা জয় ২০০০ সালে আইটিএফ হোয়াইট ব্যাজ চেয়ার আম্পায়ারের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। তবে প্রথম ‘হোয়াইট ব্যাজ’ রেফারি হলেন মাসফিয়াই৷ খেলোয়াড়ি জীবনে অনূর্ধ্ব-১০ থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ টেনিসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ১৮ বছর বয়সী মাসফিয়া এখন খেলা ছেড়ে পুরোদস্তুর রেফারি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রেফারি হিসেবে এরই মধ্যে তার নামের পাশে রয়েছে দারুণ কিছু অর্জন।
বাবা মোহাম্মদ মাহমুদ আলম টেনিস ফেডারেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুবাদে টেনিসের সাথে মাসফিয়ার সখ্যতা ছোটবেলা থেকেই। খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার না এগিয়ে গেলেও ভিন্ন ভূমিকার দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছেন মাসফিয়া।
টি-স্পোর্টসের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মাসফিয়া কথা বলেছেন তার খেলোয়াড় থেকে রেফারি হওয়ার পথচলা সহ নানা বিষয় নিয়ে। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল :
প্রশ্ন : শুরুতেই অভিনন্দন আপনাকে। সম্প্রতি আইটিএফ এর হোয়াইট ব্যাজ রেফারির স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। তবে বাংলাদেশের প্রথম কোন রেফারি হিসেবে আপনি এমন বড় স্বীকৃতি পেলেন। যে কোনো প্রথমের অংশ হওয়াটা দারুণ কিছুই। অনুভূতিটা কেমন?
মাসফিয়া : ধন্যবাদ। আসলেই দারুণ লাগছে। এক বছর ধরে এটার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি আমি। সেটার ফল পাওয়ায় ভালো লাগছে। আর প্রথম সবকিছুই তো স্পেশাল।
প্রশ্ন : দশ বছরের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১০, অনূর্ধ্ব-১২, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে। এটাই বলে দেয়, একদম শৈশব থেকেই টেনিসের প্রতি দুর্বলতা ছিল আপনার। শুরুটা কীভাবে হয়েছিল জানতে চাওয়া এই কারণে, ক্রিকেট ফুটবলের জনপ্রিয়তার সবদিক থেকেই টেনিস আছে বেশ পিছিয়ে। সেখানে টেনিসের প্রতি আপনার এই ভালোবাসা কীভাবে হল বা কার মাধ্যমে?
মাসফিয়া : ভালোবাসা ঠিক বলব না। ভালো লাগত টেনিস। ছোটবেলা থেকেই টেনিস খেলি আমি। স্কুলের অনেকে অন্যান্য খেলা খেললেও আমার কাছে টেনিসই বেশি ভালো লাগত। তাছাড়া দেখলাম অন্যান্য খেলার চেয়ে টেনিসে কিছু করার সুযোগটা বেশি আছে। এখান থেকেই আগ্রহের জন্ম। আর আমার বাবা টেনিস ফেডারেশনের কাজ করার সূত্রে টেনিসের সাথে পরিচয় অনেক আগে থেকেই। সেই সমর্থনটা তাই ছিল।
প্রশ্ন : টেনিসে ক্যারিয়ার গড়তে চান, এটা জানার পর পরিবার এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে সমর্থন কেমন ছিল? আর একটা হল, এই পেশায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়েছিল কখনও?
মাসফিয়া : না, আমার সাথে এমন কিছু হয়নি কখনও। পরিবার থেকে সমর্থন পেয়েছি সবসময়।
প্রশ্ন : কাঁধের চোটের কারণে খেলা ছেড়েছিলেন বলে শোনা যায় প্রায়ই। আর এরপরই নাকি রেফারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেন। আসলেই কী এমন কিছু হয়েছিল? সেটা হলে চোটের পর যখন জানলেন খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ, সেই সময়ে বিষয়টা মেনে নেওয়াটা কতোটা কঠিন ছিল?
মাসফিয়া : প্রথমেই একটা বিষয় ক্লিয়ার করতে চাই। আমি জানিনা এটা কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে চোটে পড়ার পর আমি খেলে ছেড়ে দিয়েছি। এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। তাছাড়া এটা একটা নেগেটিভ বার্তাও দেয় যে চোটে পড়ার পর রেফারি হতে চেয়েছি। আসলে এমন কিছুই হয়নি। চোটে পড়েছিলাম। এরপর কিছুদিন খেলার বাইরে ছিলাম। ফিরে এসে খেলার সুযোগ ছিল, কিন্তু সেই ইচ্ছাটা আর জাগেনি, তাই খেলোয়াড় হিসেবে সেখানেই ক্যারিয়ারের ইতি।
প্রশ্ন : রেফারি হওয়ার শুরুটা তাহলে কীভাবে হল?
মাসফিয়া : দেখলাম টেনিসের ম্যাচ অফিসিয়েটিং নিয়ে কাজ করার ভালো সুযোগ আছে, তাই এখানে নাম লেখালাম। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে ন্যাশনাল স্কুল সার্টিফিকেশন প্রথমবার হয়েছিল। অভিজ্ঞতার জন্যই সেখানে অংশ নিয়েছিলাম। একটি পরীক্ষা দিতে হয় এবং এই পরীক্ষায় আমি প্রথম হই। সেখানে রেফারি হিসেবে ছিলেন ভারতের অভিষেক ব্যানার্জি। উনিই আমাকে অনেক উৎসাহ দেন। দুই দিনের কোর্সে ভালো করার পর আমার কাছে মনে হয়েছিল, এটা আমার জন্য ভালো একটা সুযোগ। এরপর হোয়াইট ব্যাজের জন্য কাজ শুরু করি। হোয়াইট ব্যাজের জন্য আইটিএফের কাছে আমার নাম সুপারিশ করেছিলেন অভিষেক ব্যানার্জিই।
প্রশ্ন : গ্র্যান্ড স্ল্যামের ম্যাচ পরিচালনার স্বপ্নের কথা বলেছেন আগে। টেনিসে আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কে এবং নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়ের ম্যাচ পরিচালনা করার স্বপ্ন কি লালন করেন?
মাসফিয়া : আমার মনে হয় একজন রেফারি হিসেবে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা আমার জন্য হয়ত ঠিক হবে না।
প্রশ্ন : সম্প্রতি ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ে সাথিরা জাকির জেসি দারুণ কাজ করছেন। মেয়েদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার পর ছেলেদের ম্যাচে (ডিপিএলে) আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন তিনি। কাছাকাছি সময়ে টেনিসে আপনার এই অর্জন। আম্পায়ার বা রেফারিং পেশায় মেয়েদের এভাবে বেশি বেশি এগিয়ে আসাটা কীভাবে দেখছেন?
মাসফিয়া : খুব ভালো লাগছে। মেয়েরা সব সেক্টরেই এগিয়ে আসছে। আম্পায়ার বা রেফারি হিসেবে মেয়েরা যত এগিয়ে আসবে, ততই ভালো। আমার নিজের জায়গা থেকে সুযোগ হলে অন্যদেরও সাহায্য করার চেষ্টা করব। আমি মনে করি আমাকে দেখে অনেকেই এই পেশায় আসতে আগ্রহী হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের পক্ষ থেকে পুরো মিশনে কেমন সমর্থন পেয়েছেন?
মাসফিয়া : আমি আগেও টেনিস ফেডারেশনের সমর্থন পেয়েছি এবং এবারও তারা আমাকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন এটা পেতে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে টেনিসের প্রসারের জন্য কী কী করনীয় বলে মনে করেন এবং সম্ভাবনা দেখছেন কতটুকু আগামীতে?
মাসফিয়া : এটা তো জানেনই যে টেনিস খেলাটা একেবারেই ব্যক্তিগত। অন্যান্য খেলার মত এখানে দলগত প্রয়াসটা নেই। তাই এখানে ভালো করার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ, পৃষ্ঠপোষকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসবের সমন্বয় হলে ভালো কিছু হতেও পারে।
No posts available.
৬ নভেম্বর ২০২৫, ৩:৩৮ পিএম
৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০০ পিএম
৫ নভেম্বর ২০২৫, ৪:২০ পিএম

সাউথ এশিয়ান গেমসের (এসএ) আয়োজন নিয়ে শঙ্কাটা আগে থেকেই ছিল। শেষ পর্যন্ত যা রূপ নিতে যাচ্ছে বাস্তবে। প্রায় দুই বছরের (২২ মাস) জন্য পিছিয়ে যাচ্ছে এসএ গেমস।
আগামী বছরের ২৩ থেকে ৩১ জানুয়ারি পাকিস্তানের তিনটি শহরে হওয়ার কথা ছিল ১৪তম এসএ গেমস। সেটি এখন পিছিয়ে ২০২৭ সালের নভেম্বরে পুনঃনির্ধারিত হতে যাচ্ছে।
বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ) ফেডারেশনগুলোকে এসএ গেমস সংক্রান্ত মেইল করে। সেখানে উল্লেখ করেছে, বাহরাইনে সাউথ এশিয়ান অলিম্পিক কাউন্সিলের সভায় দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমত, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে এসএ গেমস আয়োজন সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে আরেক দফা জানাবে ২০২৭ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান গেমস আয়োজন করতে পারবে কি না।
তাই আগামী বছর এসএ গেমস হচ্ছে না এটা অনেকটাই নিশ্চিত। আর এক বছর পর পাকিস্তান আদৌ গেমস আয়োজন করতে পারবে কিনা সেটাও সংশয় রয়েছে।
ডিসেম্বরে যদি কোনো কারণে গেমস আয়োজনে পাকিস্তান অপারগতা প্রকাশ করে তখন সাউথ এশিয়ান অলিম্পিক কাউন্সিলের আবার নতুন করে স্বাগতিক খুজতে হবে।

পল্টনের আউটার মাঠের বৃহস্পতিবার সকালের আবহটা ছিল একটু ভিন্ন। চারিদিকে সামিয়ানা মোড়ানো। গেটের সামনে কড়া নিরাপত্তা। মাঠের বাইরটাও পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন। পশ্চিম দিকের গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখা গেল অন্যরকম দৃশ্য। স্থানীয়দের খেলার মাঠে বসানো আর্চারির টার্গেট বোর্ড। কয়েকজন আর্চার তির-ধনুক নিয়ে টার্গেট নিশানায় ব্যস্ত, যাঁরা শনিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এশিয়ান আর্চার চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিচ্ছেন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে ৩০টিরও বেশি দেশ। ৮-১২ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে, পরের দুই দিনের প্রতিযোগিতা গড়াবে আর্মি স্টেডিয়ামে। সে লক্ষ্যে আউটার মাঠে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারছেন আর্চাররা।
প্রতিযোগিদের বেশিরভাগই কম্পাউন্ড আর্চারির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। একজনের মাঝে ভিন্নতা দেখা গেল। গভীর মনোযোগে রিকার্ভে নিশানাভেদে ব্যস্ত তিনি। প্রাকটিস কিটে প্যালেস্টাইনের পতাকা। তাতেই স্পষ্ট তাঁর আগমন বার্তা।
আলাপচারিতায় জানা গেল, রাশা ইয়াহিয়া আহমেদ প্যালেস্টাইনের নাগরিক। প্রথমবারের মতো এসেছেন বাংলাদেশে। তাঁর মুখে শোনা গেল বাংলাদেশ নিয়ে উচ্ছ্বাস,
‘বিমানবন্দর থেকেই সবাই অত্যন্ত আন্তরিক ও অতিথিপরায়ণ ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে যাওয়ার পুরো পথে সবাই খুবই ভদ্র ও বন্ধুসুলভ। আমি খুবই খুশি। সবাই আমাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে এবং সমর্থন দেখিয়েছে।’
দীর্ঘসময় প্যালেস্টাইনে নির্মমতা চালাচ্ছে ইসরায়েল। দখলদারদের হামলা থেকে রেহায় পাচ্ছে না ছোট-বড় কেউই। সাময়িক যুদ্ধবিরতির কথা বলা হলেও প্যালেস্টাইনের শহর ও গ্রামে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ সেটলারদের হামলা বেড়েই চলেছে।
প্যালেস্টেইনে বর্বর হামলার প্রতিবাদে প্রায়ই মিছিল হয় বাংলাদেশে। বিষয়টি রাশার অজানা নয়। তিনি কৃতজ্ঞ, এবং জানিয়েছেন একদিন বাংলাদেশের জনগণকে নিজ দেশ প্যালেস্টিনে আমন্ত্রণ জানাবেন,
‘আমরা জানি এবং অনুভব করি, বাংলাদেশ আমাদের পাশে আছে। আমি এখানে এসেই সেই ভালোবাসা ও সমর্থন অনুভব করেছি। অনেক মানুষ এগিয়ে এসে সমর্থন দিয়েছেন। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই—আপনাদের এই সমর্থন আমাদের কাছে পৌঁছায়, আমরা তা গভীরভাবে কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করি। ইনশাআল্লাহ, একদিন আমরা আপনাদের প্যালেস্টিনে স্বাগত জানাব।’
রাশার জন্ম প্যালেস্টাইনের গাজা শহরে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে এই আর্চার এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করছেন। সেখানে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে স্ট্র্যাটেজিক অফিস ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কাজের ফাঁকে চালিয়ে যান আর্চারির প্রাকটিস। এতে পূর্ণ সমর্থন পান ফিলিস্তিন আর্চারি ফেডারেশন থেকে।
বছর চারেক আগে আর্চারিতে যাত্রা শুরু রাশার। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। এখানে পদক জয়ের পাশাপাশি প্যালেস্টাইনের পতাকা বাংলাদেশে ওড়াতে চান তিনি,
‘আমরা পতাকা উড়াই ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এবং এটা আমাদের লড়াই করার মনোবল আরও বাড়ায়।’
রাশার সেই লড়াই ও অনুপ্রেরণার গল্পে জড়িয়ে কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল। তিনি বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে এশিয়ান আর্চারি ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাশার সঙ্গে আলাপচারিতার শেষ দিকে মাঠে ঢোকেন বাংলাদেশ আর্চারির এই রূপকার। তাঁকে দেখে এগিয়ে কুশলাদি বিনিময় করেন রাশাসহ প্যালেস্টাইন থেকে আসা আরও তিন আর্চার ও কোচ।
রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল বলেন,
‘এই ছেলেমেয়েরা আমার সন্তানের মতো। তাঁরা কিন্তু আমাকে বাবা বলেও ডাকে। আপনারা জানেন, আরবিতে বাবাকে বাবা-ই বলে। রাশার সঙ্গে আমার দেখা ৫-৬ বছর আগে। তখনই সে আমাকে বলেছিল আর্চারি খেলতে চায়, বাংলাদেশে আসতে চায়। এরপর বছর তিনেক আগে জর্ডানে একটি আর্চারির টুর্নামেন্টে দেখি সে খেলছে। তাকে বলেছিলাম, তোমাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাব। এবার চ্যাম্পিয়নশিপে চারজন এসেছে। শুধু তাঁরা নয়, ১০ দেশের অন্তত একশ জনকে সবধরনের সহায়তা করছি আমরা।’
এবারই প্রথমবার আর্চারির কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে এলেন প্যালেস্টাইনের আর্চাররা। এখানকার আয়োজন ও অভ্যর্থনায় বেশ সন্তুষ্ট রাশা। বাংলাদেশে এসে মিষ্টি খাওয়া হয়েছে তাঁর। সামনে আরও কিছু স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে চান তিনি।
রাশার সবচেয়ে বড় ইচ্ছে আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভে পদক জেতা,
‘যখন আমি প্যালেস্টাইনের জার্সি পরি, এটা আমার জন্য অনেক অর্থবহ। আমি সবসময় সঙ্গে প্যালেস্টাইনের পতাকা রাখি। এটা অনন্য অনুভূতি, যা কথায় প্রকাশ করা যায় না।’
সবিশেষ ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বাংলা ভাষায় রাশা বলেন,—
“প্যালেস্টাইন, বাংলাদেশ ভালোবাসি।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রথমবারের মতো শহীদ সাজিদ স্মৃতি স্পোর্টস কার্নিভাল আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি। গতকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ ভবনের নিচতলায় এই কার্নিভালের উদ্বোধন করা হয়। এটি চলবে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত।
ক্লেমনের স্পন্সরশিপে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন শহীদ সাজিদের বোন ফারজানা হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালক রিফাত হাসান।
প্রথম দিনের শুরুতে জনপ্রিয় ইনডোর ইভেন্ট সাপ-লুডো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশ নেন প্রায় ২৪০ জন নারী শিক্ষার্থী। প্রথম স্থান অধিকার করেন সামিরা আক্তার।
দিনের অন্য দুই খেলা—আর্ম রেসলিংয়ে প্রথম হন ইমতিয়াজ, আর ট্রেজার হান্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ছাত্রশক্তি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ, সমাজসেবা সম্পাদক পদপ্রার্থী ও প্রধান সংগঠক ফেরদৌস শেখ, এবং ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী ও কার্নিভালের কো-অর্ডিনেটর মো: ফেরদৌস হোসেন সোহান।

এশিয়া কাপের ট্রফি কাণ্ডের রেশ এখনো তরতাজা। বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে আইসিসির ত্রৈমাসিক বোর্ড সভাও। ভারত-পাকস্তান দুই দলই অভিযোগ-পাল্ট অভিযোগ নিয়ে হাজির হতে পারে সেই সভায়।
ক্রিকেটে দুই দলের এই রেষারেষির মধ্যে স্রোতের বিপরীতে হাঁটল ভারত হকি দল। ভারতের নিশ্চিত করেছে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সঙ্গে করমর্দনে কোনো খেলোয়াড়কে বাধা দিবে না তারা।
ভারতীয় হকি সংস্থা স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাকিস্তান দলের সঙ্গে হাত মেলানোয় কোনো নিষেধাজ্ঞা রাখবে না তারা।
গত মাসে মালয়েশিয়ায় সুলতান অফ জহর কাপে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে রীতি মেনে হাত মেলায় ভারতের হকি দলের খেলোয়াড়রা। তাতে ভারতের ক্রীড়াপ্রেমীদের একাংশ বিষয়টি ক্ষোভ প্রকাশ করে।
বিতর্কের মধ্যে ভারতের হকি দলের সেক্রেটারি জেনারেল ভোলানাথ সিংহ দেশটির একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন,
‘আমরা ক্রিকেটকে অনুসরণ করতে পারি না। ক্রিকেটারেরা যা করেছেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। আমরা অলিম্পিক চার্টার মেনে চলি। আন্তর্জাতিক হকি সংস্থার নির্দেশমতো আমাদের চলতে হয়। কোনো দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দন বা হাই-ফাইভ করা যাবে না, এমন কোনো নির্দেশ আমাদের খেলোয়াড়দের আমরা দেইনি।’
ভোলানাথ আরও যোগ করেন,
‘আমরা খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা নিয়ে চলি। খেলোয়াড়দেরও কোনো নির্দেশ দিই না। আগামী দিনেও পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা হলে খেলোয়াড়দের কোনো নির্দেশ দেওয়া হবে না। আমাদের লক্ষ্য শুধু খেলে জয় ছিনিয়ে আনা।’
সবশেষ এশিয়া কাপে ‘হ্যান্ডশেক’ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয় ভারতীয় ক্রিকেট দল। অধিনায়ক সুর্যকুমার যাদব পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগার সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকার করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান দল পুরষ্কার অনুষ্ঠান বর্জন করে।
এরপর তো জল গড়ায় অনেক দূর। পিসিবি চেয়ারম্যান ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি মহসিন নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানায় ভারত। শেষ পর্যন্ত ট্রফি ছাড়াই ভারতীয় দল উদ্যাপন করে। এখনো তারা ট্রফিটি হাতে পায়নি।
একই পথে হাঁটে ভারতের নারী ক্রিকেট দলও। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানায় হারমানপ্রীত কৌরের দল।

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ নভেম্বর। একই দিনে হবে সংস্থাটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। নির্বাচন ও এজিএম দুটোই কক্সবাজারে করতে যাচ্ছে বিওএ।
আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সোমবার কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে হওয়া বিওএর কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই কমিশন অনুমোদন পায়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিওএর সহসভাপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। সংস্থাটির সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশে থাকায় তিনি সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি।
কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সালেহীন মনোয়ার, যিনি বিকেএসপির সাবেক মহাপরিচালক। তাঁর সঙ্গে সদস্য হিসেবে থাকছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য তাহমিনা রহমান।