২৮ অক্টোবর ২০২৪, ২:৫৯ পিএম
আর কয়েক ঘণ্টা বাদেই ঘোষণা হয়ে যাবে ব্যালন ডি’অর জয়ীর নাম। যেই দৌড়ে এবার সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে তিন জনের নাম। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও জুড বেলিংহামের সাথে সেরা হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডার রদ্রি। এছাড়াও আছেন কিলিয়ান এমবাপে, লাওতারো মার্তিনেজরা।
তবে শেষ পর্যন্ত ব্যালন ডি’অরটা উঠবে কার হাতে? সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক ঘণ্টা। তার আগে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সেরা হওয়ার লড়াইয়ে থাকা ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের দিকে।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র
ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে এবার সবচেয়ে বেশ এগিয়ে রাখা হচ্ছে ভিনিসিয়ুসকে। মার্কা সহ বেশ কিছু স্প্যানিশ গণমাধ্যমতো এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে ব্রাজিল তারকার হাতেই উঠতে যাচ্ছে ব্যালন ডি’অর। তাতে ১৭ বছর পর আবারও সোনালী ট্রফিটা ফিরতে যাচ্ছে ব্রাজিলে।
যদিও গেল মৌসুমে ব্রাজিলের জার্সিতে খুব একটা আলো কাড়তে পারেননি ভিনিসিয়ুস। কোপা আমেরিকায়ও খুব একটা জাদু দেখাতে পারেননি। সব মিলিয়ে ব্রাজিলের জার্সিতে ১০ ম্যাচে দুই গোলের পাশাপাশি করেছেন দুই অ্যাসিস্ট।
তবে ক্লাবের জার্সিতে ভিনিসিয়ুস ছিলেন উজ্জ্বল। রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লা লিগা জেতাতে রেখেছিলেন বড় ভূমিকা। সব মিলিয়ে রিয়ালের জার্সিতে করেছিলেন ৩৯ গোল, নামের পাশে আছে ১১ অ্যাসিস্টও।
রদ্রি
ব্যালন ডি’অর জেতার দৌড়ে ভিনিসিয়ুসের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ধরা হচ্ছে সিটি মিডফিল্ডার রদ্রিকে। গেল মৌসুমে ক্লাব ও জাতীয় দল দুই জায়গায়ই বেশ সফল ছিলেন তিনি। সিটির হয়ে ৪৫ ম্যাচে ৯ গোলের পাশাপাশি করেছেন ১২ অ্যাসিস্ট। জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ, ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, এবং ইউয়েফা সুপার কাপের শিরোপা।
স্পেনের জার্সিতেও রদ্রি ছিলেন দারুণ সফল। ১৪ ম্যাচে ৩ গোলের পাশাপাশি করেছেন একটা অ্যাসিস্ট। সেই সাথে জিতেছেন ইউরোর শিরোপা। তাতে বর্ষসেরা ফুটবলার পুরস্কার জেতার দৌড়ে আছেন ভালোভাবেই।
জুড বেলিংহাম
রিয়াল মাদ্রিদে নিজের প্রথম মৌসুমেই চমক দেখিয়েছেন জুড বেলিংহাম। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ব্যালন ডি’অর জেতার দৌড়ে আছেন ইংলিশ তারকা। রিয়ালের জার্সিতে গেল মৌসুমে সব মিলিয়ে খেলেছিলেন ৪২ ম্যাচ। ২৩ গোলের পাশাপাশি করেছিলেন ১৩ অ্যাসিস্ট। জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা, ও স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা।
ইংল্যান্ডের হয়ে বেলিংহাম মাঠে নেমেছিলেন ১২ ম্যাচে। চার গোলের পাশাপাশি করেছেন চার অ্যাসিস্ট। খেলেছেন ইউরোর ফাইনালও।
লাওতারো মার্তিনেজ
মনে রাখার মতো একটা মৌসুমই কাটিয়েছিলেন লাওতারো মার্তিনেজ। ইন্তার মিলান কিংবা আর্জেন্টিনা দুই জায়গায়ই গেল মৌসুমে লাওতারো ছিলেন দারুণ ছন্দে। ইন্তার মিলানের জার্সিতে জিতেছিলেন সিরিআ শিরোপা। সেই সাথে হয়েছিলেন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাও। সব মিলিয়ে ইন্তারের জার্সিতে ৪৪ ম্যাচে করেছিলেন ২৭ গোল।
আর্জেন্টিনার জার্সিতেও লাওতারো ছিলেন সফল। আলবিসেলেস্তেদের কোপা আমেরিকা জেতাতে রেখেছিলেন বড় অবদান। পাঁচ গোল করে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতাও।
১ জুন ২০২৫, ৩:১৯ এম
বার্সেলোনাকে যে দলটি সেমিফাইনালে হারের দুয়ার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হারিয়ে দিতে পারে, ফাইনালে তাদের কাছ থেকে তো প্রত্যাশা বেশিই থাকবে। তবে বিস্ময়করভাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মৌসুমে নিজেদের সবচেয়ে বাজে ফুটবল খেলে পিএসজির কাছে স্রেফ উড়ে গেছে ইন্তার। হতাশ কোচ সিমোনে ইনজাগি বললেন, হারলেও খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্ব হচ্ছে তার।
২০২৩ সালেও ফাইনালে খেলেছিল। সেবার মাত্র ১-০ গোলে হেরেছিল ইন্তার, সাথে উপহার দিয়েছিল দারুণ লড়াই। তবে এবারের ফাইনালে পিএসজির সামনে পাত্তাই পায়নি ইতালিয়ান ক্লাবটি। ২০ মিনিটে ২ গোল হজমের পর শেষ পর্যন্ত হেরেছে ৫-০ গোলে। ভাগ্য খারাপ হলে ব্যবধান আরও বড় হতেও পারত।
ম্যাচের পর ইনজাগির কণ্ঠে ফুটে উঠল সেরা না খেলার আক্ষেপ।
“যোগ্য দল হিসেবেই পিএসজি এই ম্যাচ এবং ট্রফি জিতেছে। আমরা হতাশ, তবে এই পর্যন্ত আসার পথটাও দুর্দান্ত ছিল। আমি আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত। ম্যাচে আমাদের পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। প্যারিস বারবার বলের দখল নিয়েছিল। আমরা কোনো ট্রফি জিতিনি, কিন্তু এই দলের কোচ হতে পেরে আমি গর্বিত।”
ইন্তার এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৮টি ম্যাচ খেলেছে ইন্তার। সেরি আয় শেষ দিন পর্যন্ত লড়তে হয়েছে সেরা চারে থাকার জন্য। অন্যদিকে পিএসজি অনেক আগেই লিগ ওয়ান জিতে যাওয়ায় নিজেদের শেষের দিকে ম্যাচে খেলোয়াড়দের বাড়তি বিশ্রাম দিতে পেরেছিল।
ইনিজাগি মনে করেন, খেলোয়াড়দের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না তার দলের।
“আমরা এখানে আসার জন্য যা যা করার দরকার ছিল, তার সবটাই ঢেলে দিয়েছি। আমরা দুঃখিত, হতাশ। তবে খেলোয়াড়রা মাঠে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। আমাদের এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও শক্তভাবে ফিরে আসতে হবে।”
পিএসজির দায়িত্ব নিয়ে শুনিয়েছিলেন শহর হিসেবে প্যারিসের প্রতি ভালোবাসা আর আবেগের কথা। যেখানে লুইস এনরিক স্মরণ করেন তার প্রয়াত কন্যা এক্সানার কথা, যিনি মাত্র ৯ বছর বয়সে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। মেয়ের জন্য তাই পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে চেয়েছিলেন স্প্যানিশ এই কোচ। শেষ পর্যন্ত প্রথম মৌসুমেই সেটা অর্জন করেছেন এনরিকে, যা তার পাশাপাশি পুরো মিউনিখের অ্যালিয়ান্জ অ্যারেনায় তৈরি করে অন্যরকম আক আবহ।
ঘটনাটির প্রেক্ষাপট জানতে ফিরে যেতে হবে ২০১৫ সালে। সেবার বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় এনরিকে তার মেয়ে এক্সানাকে নিয়ে মাঠে উদযাপন করেছিলেন। সেখানে এক পর্যায়ে এক্সানা মাঠে বার্সেলোনা পতাকা গেঁথে দেন, যা পরে হয়ে ওঠে ফুটবলের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত।
কারণ, এর চার বছর পর ২০১৯ সালে ৯ বছর বয়সে এক্সানা হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কন্যার মৃত্যুর শোকে এনরিকে ছেড়ে দেন স্পেন জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব থেকে সরে আসেন।
বিরতি কাটিয়ে আবার কোচিংয়ে ফেরা এনরিকে এই মৌসুমে নেন পিএসজির দায়িত্ব। ইন্তার মিলানের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগে বলেন,
“আমার কাছে ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বার্লিনে তার (এক্সানা) অসাধারণ একটা ছবি আছে, যেখানে সে বার্সেলোনা পতাকা গেঁথে দিচ্ছে। আমি আশা করি পিএসজির হয়েও আমি সেই কাজটা করতে পারব। শারীরিকভাবে সে মাঠে না থাকলেও মিশে থাকবে আমার আত্মায়।”
কথা রাখেন এনরিকে। ফাইনালে ইন্তারকে ৫-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে পিএসজি। ম্যাচের পর এনরিকে তার প্রয়াত মেয়ের স্মরণে একটি বিশেষ টি-শার্ট পরেন, যেখানে ২০১৫ সালের এক্সানার সেই বার্সেলোনার পতাকা গেঁথে দেওয়ার ছবি ছিল।
পিএসজির সমর্থকরাও ধারণ করেন এক্সানাকে। স্টেডিয়ামের একটা অংশে তারা তুলে ধরে এনরিকে ও এক্সানার ২০১৫ সালের ফাইনালের সে ছবিটির বিশাল এক পোস্টার, যা সামাজিক যোগাযোগধ্যমে প্রশংসা কুড়াচ্ছে বেশ।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে অক্লান্ত প্রচেষ্টা। সেই ডেভিড বেকহ্যাম থেকে শুরু করে লিওনেল মেসি, কে না খেলেছেন পিএসজির জার্সিতে! তারকার হাট বসেছিল কোচদের ক্ষেত্রেও। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর জয় করা হচ্ছিল না দলটির। অবশেষে তারুণ্য নির্ভর একটি দল নিয়ে বাজিমাত করলেন লুইস এনরিকে, প্যারিসের ক্লাবটিকে দিলেন পরম অধরা এক শিরোপা জয়ের স্বাদ।
রোববার রাতের একচেটিয়া ফাইনালে ইন্তার মিলানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে পিএসজি। ম্যাচে দুটি গোল করে একটি গোল করিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ফ্রান্স উইঙ্গার ডেজিরে দুয়ে।
ইতিহাসের অংশ হতে পেরে ম্যাচ শেষে বাধভাঙ্গা উল্লাস ফুটে উঠল তার কণ্ঠে।
“বলে বোঝাতে পারব না কেমন লাগছে। আমাদের কাছে এটাই সব। সমর্থকরাই আমাদের এই শিরোপা জেতার মূল প্রেরণা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করাটা ছিল আমাদের একটা স্বপ্ন। এটা আমারও স্বপ্ন, সত্যি বলতে পুরো দলের সবারই স্বপ্ন ছিল এটা জেতা। এটা এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি। এই ফলাফল কোনো যাদুবল আসেনি। আমাদের দলটা দুর্দান্ত, আর এইভাবে জয় পাওয়াটা দারুণ ব্যাপার।”
ইন্তারকে ফাইনালে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ট্রেবল জয়ের স্বাদ পেয়েছে পিএসজি। ক্লাবের এই ঐতিহাসিক অর্জনে পথ ধরে ইতিহাস গড়েছেন কোচ এনরিকেও। পেপ গার্দিওলার পর ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জেতার কীর্তি এখন তার।
দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মৌসুমেই এই সাফল্যে এনরিকে দেখছেন নতুন সম্ভাবনা।
“এই শিরোপা আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার একটা ফল। এটা তো কেবল শুরু। তরুণদের নিয়ে গড়া এই দলটি ক্লাবে একটা নতুন যুগের সূচনা করেছে। আসি আশাবাদী, পিএসজির সামনে অপেক্ষা করছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।”
ফাইনালের আগে লুইস এনরিকে বলেছিলেন, ইতিহাস গড়তে চায় তার দল। তবে বারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে খালি হাতে ফেরা পিএসজির সেজন্য দরকার ছিল এমন পারফরম্যান্স, যে হয়ত ফাইনালের মঞ্চে আগে দেখাই যায়নি। প্রথম মিনিট থেকে ইন্তার মিলানকে দ্বিতীয় সেরা দল বানিয়ে বিরতির আগেই তাই ম্যাচের লাগাম নিয়ে নিল ফরাসি ক্লাবটি। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের দুর্দমনীয় ফুটবলের সামনে খড়কুটোর মত উড়ে গেল ইতালিয়ান ক্লাবটি। ইতিহাস গড়ে অধরা চ্যাম্পিয়িন্স লিগ জয়ের স্বাদ পেল পিএসজি।
মিউনিখের অ্যালিয়ান্জ অ্যারেনায় রোববারের ফাইনালে পিএসজি পেয়েছে ৫-০ গোলের জয়। এর মধ্য দিয়ে এই প্রতিযোগিতায় নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয় ফাইনালে গিয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা উঁচিয়ে ধরল লিগ ওয়ানের ক্লাবটি।
এর সাথে ক্লাবটি গড়ল নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ট্রেবল জয়ের স্বাদ। এর আগে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লিগ ওয়ান ও লিগ কাপে।
পিএসজির সাথে সাথে ইতিহাস গড়েছেন এনরিকেও। পেপ গার্দিওলার পর মাত্র দ্বিতীয় কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জিতলেন তিনি। এর আগে এই কীর্তি তিনি গড়েছিলেন ২০১৫ সালে, বার্সেলনার হয়ে। আর গার্দিওলা দুইবার ট্রেবল জেতেন ২০০৯ সালে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে, আর দ্বিতীয়বার ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ২০২২ সালে।
এই ম্যাচটি ছিল ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় পিএসজি ও ইন্তারের মুখোমুখি লড়াই। ফাইনালের আগে ইন্তার তিনবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী হলেও এই মৌসুমের ফর্ম বিবেচনায় ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামে এনরিকের দল। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই প্রাধান্য বিস্তার করে পিএসজি বুঝিয়ে দেয়, উপভোগ্য ফুটবলে তারা দাপট দেখাতে চায়।
ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় বলার মত প্রথম আক্রমণেই ইন্তারকে চমকে দেয় পিএসজি। গোল হজমে মিলানের ক্লাবটির বাজে ডিফেন্ডিং রাখে বড় ভূমিকা। মাঝমাথে ভিতিনিয়া বলের দখল নিয়ে বক্সের ভেতর ডানদিকে পাস বাড়ান ডেজিয়ের দুয়েকে। নিজে গোলে শট না নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ঘুরে বক্সের তাকিয়ে খুঁজে নেন ডান উইং দিয়ে উঠে আসা আশরাফ হাকিমিকে। মরক্কান ডিফেন্ডার নিখুঁত এক নিচু শটে বল জালে পাঠাতে আর ভুল করেননি।
এই গোলটি পিএসজির জন্য বিশেষ কিছুই ছিল, কারণ, ২০১৯ সাল থেকে ফাইনালে প্রথমে গোল করা দলগুলোই জিতে আসছে শিরোপা। তবে যিনি এই গোলটি করেছেন, সেই হাকিমি উদযাপন করা থেকে বিরতই থাকেন। পিএসজির আগে যে ইন্তারের জার্সিতেই খেলেছিলেন তিনি।
গোল হজমের পর ইন্তার যেন আরও চাপে পড়ে যায়। আর টানা আক্রমণে পিএসজি বজায় রাখে আধিপত্য। সেই ধারায় ২০তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে বাঁদিক দিয়ে উঠে এসে বক্সের বাইরে পাস দেন দুয়েকে। ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া তার শট ইন্তার ডিফেন্ডার ফেদেরিকো ডিমারকোর গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে ইয়ান সোমারকে ফাঁকি দিয়ে জড়ায় জালে।
এই গোলের মধ্য দিয়ে অনন্য রেকর্ড গড়েন দুয়ে। ১৯ বছর ৩৬২ দিন বয়সে ফাইনালে জালের দেখা পেয়ে তিনি হয়ে যান চ্যাম্পিয়ন্স লিগেরর শিরোপার লড়াইয়ের ম্যাচের চতুর্থ কনিষ্ঠ গোলস্কোরার। তার আগে এই কীর্তি ছিল কেবল প্যাট্রিক ক্লুভার্ট (১৯৯৫) এবং কার্লোস আলবার্তো (২০০৪)।
শুধু তাই নয়, এই গোল ফরাসি উইঙ্গারকে জায়গা করে দেয় রেকর্ডের এমন পাতায়, যেখানে নেই ফুটবল ইতিহাসের গ্রেটরাও। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে ফাইনালে গোল ও অ্যাসিস্ট উভয়ই করা সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় তিনিই।
মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে খেই হারিয়ে ফেলে ইন্তার। দলটি বলের দখল রাখে এবং আক্রমণাত্মক ফুটবলে সিমোনে ইনজাগির দলকে বারবার ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। সেটা কাটিয়ে ইন্তার গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পিএসজির অদম্য প্রেসিংয়ের সামনে আটকে যায় তাদের সব প্রচেষ্টা।
উল্টো বিরতির আগে পুরোপুরি আধিপত্য দেখানো পিএসজির বিরতিহীন আক্রমণে ছন্দহীন ফুটবল খেলে ইন্তার। তার মাঝেও ৩৪তম মিনিটে হেনরিখ মিখিতারিয়ানের চমৎকার পাস থেকে সুযোগ এসেছিল মারকুস থুরামের সামনে, যা তিনি কাজে লাগাতে পারেননি।
৩৮তম মিনিটে ফের সুযোগ এসেছিল থুরামের। জটলার মধ্যে কর্নার থেকে দুর্দান্তভাবে লাফিয়ে উঠে দূরের পোস্টে হেড নেন, তবে সেটা পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
৪৪তম মিনিটে বাম দিক থেকে দুয়ে মাপা ক্রস দেন দেম্বেলেকে, ফরাসি উইঙ্গার যে শট নেন, তা শেষ মুহূর্তে গোললাইন অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়।
একচেটিয়া প্রাধান্য দেখানো পিএসজি ৬৫ শতাংশ বল দখলে রেখে প্রথমার্ধে গোলের জন্য শট নেয় ৮টি, যার ৩টি থাকে লক্ষ্যে।
৫৮তম মিনিটে পিএসজি মিডফিল্ডার জায়র-এমেরি দূরপাল্লার শট নেন, যা গোলরক্ষক সোমার ব্লক করে দেন দৃঢ়তার সাথেই। এর খানিক বাদে তৃতীয় গোলের দেখা পায় পিএসজি। বক্সের ভিতরে ওয়ান-টু পাসের মাধ্যমে বল পেয়ে ডান পায়ের জোড়াল এক শটে ইন্তার গোলরক্ষককে পরাস্ত করে দুয়ে মেতে ওঠেন বাধভাঙ্গা উল্লাসে।
এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সরাসরি তিন গোলে অবদান রাখার রেকর্ড করেছেন তিনি।
৮৯তম মিনিটে পিএসজিকে শিবিরকে উল্লাসে ভাসান একটু আগেই বদলি হিসেবে নামা ১৮ বছর বয়সী সেনি মায়ুলু। ব্র্যাডলি বারকোলার কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁদিক থেকে বক্সে প্রবেশ করে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে খুঁজে নেন ঠিকানা।
এই গোলের আগে ও পরে আরও কিছু সহজ সুযোগ এসেছিল পিএসজির সামনে, যা কাজে লাগাতে পারলে অনায়াসেই ৬-৭ গোলে জেতা সম্ভব হত তাদের জন্য।
তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে মেসি-নেইমার-এমবাপেদের মত তারকাদের নিয়েও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চূড়ান্ত সাফল্য মেলেনি পিএসজির। সেখানে অনেকটা আনকোরা একটা দল নিয়ে লুইস এনরিকে এই মৌসুমে নিয়ে গেছেন ফাইনালে। শিরোপার মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্প্যানিশ এই কোচ বললেন, সময় এখন তাদের ইতিহাস গড়ার।
এনরিকে যা বলেছেন, সেটা অবশ্য ক্লাব হিসেবে পিএসজির জন্য যথার্থই। বছরের পর বছর ধরে কাড়ি কাড়ি অর্থ গুনে তারকার হাট বসিয়েও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ আর পায়নি দলটি। সেরা অর্জন ২০২০ সালে রানার্সআপ হওয়া। শনিবার রাতে মিউনিখে ইন্তার মিলানের বিপক্ষে ফাইনাল তাই নতুন উচ্চতায় যাওয়ার সুযোগ লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়নদের জন্য।
ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এনরিকে তার দলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চে ইতিহাস গড়ার।
“আপনি তখনই ইতিহাস গড়েন, যখন আপনি এমন কিছু করবেন যা ক্লাবের কেউই আগে করতে পারেনি। এই খেলোয়াড়দের অসাধারণ মানসিকতা আছে। আমরা যেখানে থাকতে চেয়েছিলাম, সেখানেই পৌঁছেছি। এখন শুধু মূল কাজটা শেষ করা বাকি।”
২০১৫ সালে এনরিকের হাত ধরে বার্সেলোনা শেষবারের মত জিতেছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। সেবারও ট্রেবল জিতেছিল দলটি। এবার পিএসজিকে নিয়ে সেই দুর্দান্ত অর্জন থেকে মাত্র একধাপ দূরে আছেন অভিজ্ঞ এই কোচ। এই মৌসুমে হেসেখেলেই লিগ জেতা পিএসজি ইন্তারের সাথে ফাইনালে ফেভারিট হিসেবে মাঠে নামবে।
তিনবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ইন্তারের চ্যালেঞ্জ সাম্লানোর জন্য নিজের দলকে প্রস্তুত দেখছেন এনরিকে।
“এবারই সময় কিছু করে দেখানোর। এই প্রতিযোগিতার আমাদের শুরুটা কঠিন ছিল। এই পর্যন্ত আসতে প্রতিটি ধাপেই আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। এসবই আমাদের দল হিসেবে আরও দৃঢ় করেছে। আমরা কখনো ভয় পাইনি, আর আগামীকালও (শনিবার) পাব না।”
৫ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
১১ দিন আগে
১২ দিন আগে
১২ দিন আগে
১২ দিন আগে
১২ দিন আগে
১২ দিন আগে
১২ দিন আগে
১৩ দিন আগে
১৩ দিন আগে