অক্টোবরে দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে ফিরতে পারেন নেইমার, বেশ আগে থেকেই বলা হচ্ছিল এমন কথা। ভক্তদের সব প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবার চূড়ান্ত হয়েছে ব্রাজিল তারকার মাঠে ফেরার দিনক্ষণ। তার ক্লাব আল হিলাল গত শনিবার জানিয়েছে, চোটের কারণে এক বছর বাইরে থাকার পর আগামী সপ্তাহে তাদের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এলিট ম্যাচের জন্য আল হিলালের স্কোয়াডে ফিরবেন নেইমার।
আল হিলাল সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে, যেখানে ফেরার কথা শোনা গেছে নেইমারের স্বয়ং মুখেই। “আমি জানি আপনারা উদ্বিগ্ন। আমিও তাই। ২১ অক্টোবর, আমি ফিরে আসছি।”
আগামী সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্লাব আল-আইনের মুখোমুখি হবে আল হিলাল।
নেইমারের বিপণন সংস্থা এনআর স্পোর্টস শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে যে, ফুটবলের প্রতি ভালবাসা এবং পরের বিশ্বকাপে খেলার আশাই তাকে মাঠে ফিরিয়ে এনেছে।
“যদিও তার প্রত্যাবর্তনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই, তবে দ্য ১০ নম্বর (নেইমার) সোমবার থেকে তার অসাধারণ ট্র্যাজেক্টরি চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে।”
নেইমার ২০২৩ সালের আগস্টে আল হিলালের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। গত বছরের অক্টোবরে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলার তার বাম হাঁটুতে তার মেনিস্কাস এবং অগ্রবর্তী ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ফেটে যায়। এরপর করতে হয় অস্ত্রোপচার। এর আগে সৌদি ক্লাবটির হয়ে মাত্র পাঁচটি খেলেন নেইমার।
শনিবার প্রকাশিত একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ৩২ বছর বয়সী নেইমারকে তার চোট থেকে ফেরার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে কথা বলা এবং ফিরে আসার তার প্রচেষ্টার ফুটেজ দেখানো হয়েছে। অশ্রুসিক্ত নেইমার সেখানে বলেছেন,
“যতবার আমি আহত হই, আমি আবার ফিরে আসি। কিন্তু আমি অর্ধেক পথে ফিরে যাই না।”
গত জুলাইয়ে নেইমার অনুশীলনে ফিরে কিন্তু ফিরেছিলেন। তবে গত সেপ্টেম্বরে আল হিলাল কোচ হোর্হে জেসুস সাবেক বার্সেলোনার ফরোয়ার্ডের তাৎক্ষণিক প্রত্যাবর্তনের আশা কমিয়ে দেন। আগামী সোমবার নেইমার খেলবেন কিনা, ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেননি পর্তুগিজ কোচ।
নেইমারের আল হিলালের সাথে দুই বছরের চুক্তি আগামী আগস্টে শেষ হবে। তিনি ক্লাবটির এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এলিট ম্যাচে খেলতে পারবেন, কারণ মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় বিদেশী খেলোয়াড়ের সংখ্যার ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। সৌদি প্রো লিগে অবশ্য এমনটা হয় না, যেই কারণে কেবল আগামী জানুয়ারির আগে লিগে খেলতে পারবেন না নেইমার।
ফিট থাকলে আগামী মাসে দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুই ম্যাচে নেইমার ব্রাজিলের জাতীয় দলে ফিরতে পারেন।
বার্সেলোনা রীতিমত উড়ছে। বার্সাকে থামাতে গিয়ে কেউ বাধা পড়ছেন অফসাইডের ফাঁদে, আর তা না হলে বিপরীত পোস্টে ইয়ামাল-লেভানডফস্কি-রাফিনিয়ার মুহুর্মুহু আক্রমণে প্রতিপক্ষ ভেসে যাচ্ছে গোলবন্যায়। শেষ পাঁচ ম্যাচে রিয়াল-বায়ার্নসহ বার্সা গোল করেছে ২১ টা, সব প্রতিযোগিতা মিলে সেটা ৫০ ছুঁয়েছিল রেড স্টারের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই। বার্সেলোনার এই ‘গোলমেশিন’ যেন অটো মোডে এভাবেই গোল করে যায়, সেটাই প্রত্যাশা বার্সেলোনার জার্মান কোচ হান্স দিতার ফ্লিকের।
রেড স্টারের বিপক্ষে এক পর্যায়ে ১-১ এ সমতা থাকলেও বার্সেলোনা ম্যাচটা শেষ করেছে ২-৫ স্কোরলাইনে। সে সঙ্গে ৭৪ বছরের পুরোনো একটা রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে ফ্লিকের দল। এই মুহূর্তে সব কম্পিটিশন মিলে ১৬ ম্যাচ খেলেছে বার্সেলোনা, তাতে ম্যাচপ্রতি ৩.৪ গোল হারে তারা গোল করেছে ৫৫ টি। এর আগে স্লোভাক কোচ ফার্দিনান্দ দাউচিকের অধীনে ১৯৫০-৫১ সালে বার্সেলোনা প্রথম ১৬ ম্যাচে করেছিল ৫৪ গোল। এবারের ভয়ঙ্কর বার্সেলোনার কাছে ভেঙে গেল এত বছরের পুরোনো রেকর্ডটাও, যা কি না অক্ষত ছিল লিওনেল মেসি, ইব্রাহিমোভিচ, সুয়ারেজ, নেইমারদের সময় যাবার পরও। ওসাসুসানের কাছে ৪-২ গোলে হারার পর প্রতি ম্যাচেই তিনের অধিক গোল করেছে কাতালান ক্লাবটি। এই ১৬ ম্যাচের মধ্যে তারা তিন বা এর অধিক গোল করেছে ১০ ম্যাচে।
আরও পড়ুন
জিতেও যে কারণে দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন ফ্লিক |
কিন্তু এরকম ভয়াবহ গোলক্ষুধার পেছনে রহস্যটা কী? হান্সি ফ্লিক কী এমন জাদু করলেন যে খেলোয়াড়রা গোলমুখে এত ধারাবাহিক হয়ে উঠেছে? উত্তরটা স্মিত হেসে ফ্লিক নিজেই দিয়েছেন, বলছেন তার ফুটবলারদের মধ্যে ‘প্রতিযোগিতার মানসিকতা’ থাকার কারণেই বার্সায় চলছে সুসময়-
“আমরা প্রতিটা ম্যাচে আলাদা করে নজর দিচ্ছি, সেটা আপনারাও হয়তো দেখছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ম্যাচে খেলোয়াড়রা ওদের সেরাটা দিচ্ছে। মাঠে সেটা ওরা ভালো বোঝে এবং তাদের সফল হতে দেখাটা আনন্দদায়ক।”
বার্সেলোনার এই গোলের ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও জোর দিচ্ছেন ফ্লিক, বলছেন মৌসুমের এখনো অনেক সময় বাকি-
“আশা রাখছি ওরা এমনটা ধরে রাখতে পারবে। আমাদের সেই আত্মবিশ্বাসটা আছে। এটা শুধু একটা ম্যাচে ভালো করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমরা মৌসুমে এখন পর্যন্ত যে কয়টা ম্যাচ খেলেছি– সেটা মাথায় রেখেই আমরা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।”
চ্যাম্পিয়নস লিগে এরকম ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করা অতীত বার্সেলোনার সন্ধান পেতে চাইলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে ২০১১-১২ সালে। সেবার টানা তিন ম্যাচে তিন বা তার অধিক গোল করেছিল বার্সেলোনা, ১২ বছর পর সেটা বার্সেলোনা আবারো করে দেখালো ইয়াং বয়েজ আর রেড স্টারের জালে পাঁচ এবং বায়ার্নের জালে ৪ গোল দিয়ে।
আরও পড়ুন
এল ক্লাসিকোর জয়ে গর্বিত ফ্লিক |
চ্যাম্পিয়নস লিগে ৪ ম্যাচ শেষে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে আছে বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট এবারের চমক ফ্রেঞ্চ ক্লাব ব্রেঁস। তবে তার আগে লা লিগাতে রিয়াল সোসিয়েদাদ ও সেলতা ভিগোর সঙ্গে ম্যাচ খেলবে তারা।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসির পর ৩য় ফুটবলার হিসেবে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে শততম গোলদাতার তালিকায় ঢুকতে যাচ্ছেন রবার্ট লেভানদোভস্কি। এখন পর্যন্ত উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে এই স্ট্রাইকারের গোল সংখ্যা ৯৯।
চ্যাম্পিয়নস লিগে গেল রাতে রেড স্টারের বিপক্ষে জোড়া গোল করে নিজেকে ৯৯’র ঘরে নিয়েছেন বার্সেলোনার এই স্ট্রাইকার। তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ব্রেস্টের বিপক্ষে পরের ম্যাচের জন্য। রেড স্টারের বিপক্ষে মাঠে ছিলেন ৭৮ মিনিট পর্যন্ত, পুরো সময় পেলে হয়তো চ্যাম্পিয়নস লিগে শততম গোলের অপেক্ষাটা ফুরিয়ে ফেলতে পারতেন এই স্ট্রাইকার। ম্যাচ শেষে বার্সেলোনা কোচ হ্যান্সি ফ্লিকও রসিকতা করে সেই আফসোসটাই করেছেন-
“এটা আমি জানতাম না, জানলে হয়তো পুরো ম্যাচ না খেলিয়ে আমি তাকে বদল করতাম না।”
এর আগে বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলেছেন লেভানদোভস্কি। ৯৯ চ্যাম্পিয়নস লিগ গোলের ৬৯টাই করেছেন বাভারিয়ানদের হয়ে। যা একক কোন ক্লাবের হয়ে গোলের হিসেবে রয়েছে ৪র্থ স্থানে। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মেসির গোল ১২০, রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোল ১০৫, কারিম বেনজেমাও রিয়ালের হয়ে করেছেন ৭৮টি গোল।
আরও পড়ুন
ভিনির মন খারাপ, তবে সেটা ভ্যালেন্সিয়ার বন্যার্তদের জন্য : আনচেলত্তি |
২০১৯/২০ চ্যাম্পিয়নস লিগে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন রবার্ট লেভানদোভস্কি। সেবার বায়ার্ন মিউনিখকে ইউরোপ সেরার মুকুট এনে দিয়েছিলেন এই পোলিশ স্ট্রাইকারই। গোল করেছিলেন পুরো আসর জুড়ে ১৫টা।
বার্সেলোনার হয়ে এই মৌসুমে ৪ ম্যাচে গোল করেছেন ৫টি। সব মিলিয়ে বার্সার জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ গোল হলো ১৩টি।