৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০১ পিএম

নভেম্বরের আন্তর্জাতিক বিরতিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুটি ম্যাচের জন্য ২৮ সদস্যের আর্জেন্টিনা দল ঘোষণা করেছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। অক্টোবরের মতো নভেম্বরেও আলবিসেলেস্তেদের জার্সি গায়ে দেখা যাবে লিওনেল মেসিকে। তবে ২৮ দলের এই স্কোয়াড বড় এক তারকাকে ছাড়াই ঘোষণা করতে হয়েছে লিওনেল স্কালোনিকে।
শেষ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুটো ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি এমি মার্তিনেজ, তিনি জাতীয় দলে ফিরবেন সেটা অনুমিতই ছিল। কিন্তু দলের সার্বিক ফর্মের কারণে আলবিসেলেস্তেদের স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে পারেননি রোমা ফরোয়ার্ড পাওলো দিবালা। বাদ পড়েছেন রিভার প্লেটের লেফট ব্যাক মার্কোস আকুনিয়াও।
তবে চোট কাটিয়ে দলে ফিরছেন ইয়্যুভেন্তস উইঙ্গার নিকোলাস গঞ্জালেস। চোটের আশঙ্কা থাকলেও ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো আর জিওভান্নি লো সেলসো জায়গা করে নিয়েছেন দলে। জাতীয় দলে আবারও ডাক পেয়েছেন ভ্যালেন্সিয়ার প্লেমেকার এনজো বারেনেচেয়া ও লাৎ্সিও স্ট্রাইকার তাতি কাসতেয়ানোস।
১৫ নভেম্বর শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫ টায় আসুনসিওনে পারাগুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। আর পাঁচদিন পর ২০ নভেম্বর পেরুর সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ বুয়েনস আইরেসের লা বম্বোনেরাতে। ১০ ম্যাচ শেষে ২২ পয়েন্ট নিয়ে লাতিন অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের টেবিলের শীর্ষে আছে লিওনেল স্কালোনির দল।
২৮ সদস্যের আর্জেন্টিনা দল
গোলকিপার:
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), ওয়াল্টার বেনিতেজ (পিএসভি), হেরোনিমো রুই (অলিম্পিক মার্সেই)
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মলিনা (আতলেতিকো মাদ্রিদ), গনজালো মনতিয়েল (সেভিয়া), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহাম), হেরমান পেৎ্জেল্লা (রিভার প্লেট), লিওনার্দো বালেরদি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্দি (বেনফিকা), লিসান্দ্রো মার্তিনেজ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিঁও)
মিডফিল্ডার:
এনজো ফেরনান্দেজ (চেলসি), লিয়ান্দ্রো পারেদেস (এএস রোমা), ইজিকিয়েল পালাসিওস (বায়ার লেভারকুসেন), রদ্রিগো দি পল (আতলেতিকো মাদ্রিদ), আলেক্সিস ম্যাকঅ্যালাস্টার (লিভারপুল), গিওভান্নি লো সেলসো (রিয়াল বেতিস), এনজো বারেনেচেয়া (ভালেন্সিয়া), থিয়াগো আলমাদা (বোতাফোগো), ফাকুন্দো বুয়োনানতে (লেস্টার সিটি), নিকোলাস পাজ (কোমো ১৯০৭)
ফরোয়ার্ড:
লিওনেল মেসি (ইন্টার মায়ামি), আলেহান্দ্রো গারনাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেস (ইয়্যুভেন্তস), হুলিয়ান আলভারেজ (আতলেতিকো মাদ্রিদ), লাউতারো মার্তিনেজ (ইন্তারনাৎ্সিওনাল), ভালেন্তিন কাসতেয়ানোস (লাৎ্সিও)
No posts available.
২ নভেম্বর ২০২৫, ৮:৪৫ পিএম
২ নভেম্বর ২০২৫, ৫:১৩ পিএম

আর্লিং হলান্ড গোল করেছেন। একটি নয়, দুইটি। নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকারের জোড়া গোলের রাতে ম্যানচেস্টার সিটি পেয়ে গেল দারুণ এক জয়। ২০২৫–২৬ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে গোল্ডের বুটের দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার রাতে এফসি বোর্নমাউথকে ৩-১ গোলে হারাতে বড় ভূমিকা ছিল হলান্ডের।
ইতিহাদ স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে শুরু হওয়া ম্যাচের প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে থাকা সিটি পরের অর্ধে আরও একটি গোল করে। বোর্নমাউথের একমাত্র গোল শোধ করেন জার্মান মিডফিল্ডার টেইলর অ্যাডামস।
এ জয়ে লিগের পয়েন্ট টেবিলে দুইয়ে উঠে এসেছে পেপ গার্দিওলার দল। আসরে ১০ ম্যাচে ৬ জয়ের বিপরীতে ৩ হার এবং ১ ড্র সিটিজেনদের। দলটির পয়েন্ট ১৯। শীর্ষে থাকা আর্সেনাল থেকে ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে তারা। বোর্নমাউথ দুই থেকে নেমে গেছে চারে, ১৮ পয়েন্ট তাদের। তিনে লিভারপুল, যাদের পয়েন্ট সমান ১৮।
ম্যাচের ১৭ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে নিজেদের প্রথম গোল আদায় করে ম্যানসিটি। মিডফিল্ডার রায়ান শেরকির হেড থেকে পাওয়া বল নিয়ন্ত্রণে নেন আর্লিং হলান্ড। তীব্র গতিতে ঢুকে পড়েন ডি বক্সে এবং বাঁ-পায়ের জাদু দেখিয়ে করেন গোল।
১৯ মিনিটে ফের আক্রমণে যায় ম্যানসিটি। জারমে ডোকুর চেষ্টা বৃথা যায়। ততক্ষণে ডিফেন্স লাইন শক্তিশালী করে তোলে বোর্নমাউথের ডিফেন্সাররা।
অতিথিরা ঘুরে দাঁড়াতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ২৫ মিনিটে কর্নার থেকে আসা শট হাত দিয়ে রুখে দেন জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। বল পড়ে টেইলর অ্যাডামসের কাছে, যিনি সহজেই গোল করে বোর্নমাউথকে সমতায় ফেরান।
২৯ মিনিটে বের্নার্দো সিলভার শট হাতে লেগে যায় ডি বক্সে থাকা আলেক্স হিমেনেজের হাতে। রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নেন, যা থেকে প্রিমিয়ার লিগে নিজের ১৩তম গোল আদায় করেন নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার।
৪৯ মিনিটে ডি বক্সের আগে ফাউলের শিকার হন ফিল ফোডেন। স্পটকিক নেন হলান্ড। ডোর্জে পেট্রোভিচ বলটি রুখে দেন। প্রথমার্ধ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে ম্যানসিটি।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫২ মিনিটে বড় অঘটন থেকে বেঁচে যায় ম্যানসিটি। এই যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন দোন্নারুম্মা, যিনি দুর্দান্ত গতির শট রুখে দেন। তবে ৫৯ মিনিটে স্কোর ৩-১ করে ফেলে সিটিজেনরা। বোর্নমাউথের দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে আলতো করে নিকো গঞ্জালেজের দিকে বল বাড়ান ফিল ফোডেন। এরপর ইংলিশ ডিফেন্ডার বক্সে ঢুকে বাঁ-পায়ের জোরালো শটের মাধ্যমে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান।
দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে গোল শোধের চেষ্টা করে অতিথিরা। তা সম্ভব হয়নি। তবে একটি বিষয়ে তারা এগিয়ে ছিল—বল পজিশন ধরে রাখা। প্রায় ৫২ শতাংশ বল বোর্নমাউথের দখলে ছিল।

অ্যানফিল্ডে শনিবার রাতে অভিন্ন লক্ষ্যে নেমেছিল লিভারপুল ও অ্যাস্টন ভিলা। জয় পেতে, বৃত্ত ভাঙতে সব প্রস্তুতি নিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু কোনোভাবেই ভাঙছিল না ডেডলক। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে একপ্রকার লিভারপুলকে গোল ‘উপহার’ দেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টাইন গোলকিপারের ভুলেই গোলমুখ খোলে লিভারপুল। লিগে চতুর্থ গোল পেতে মোহাম্মদ সালাহকে কার্যত সহায়তা করেন মার্তিনেজ।
ডিফেন্সে থাকা সতীর্থের উদ্দেশে বল বাড়াতে গিয়ে একটু জোরে মেরে ফেলেন তিনি। বলটি সরাসরি পৌঁছে যায় ডি বক্সে থাকা সালাহর পায়ে, আর এক টাচে সেখান থেকেই গোল আদায় করেন মিসরীয় ফরোয়ার্ড।
অ্যানফিল্ডে দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটি গোল হজম করে অ্যাস্টন ভিলা। ২–০ গোলে পিছিয়ে থেকে পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকে নেমে যায় দলটি। স্বাভাবিকভাবেই, ভিলার এই হার বা পিছিয়ে পড়ার দায় এসে পড়ে মার্তিনেজের ঘাড়ে।
আর্জেন্টিনার এই বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপার হার মানতে নারাজ। ইনস্টাগ্রামে নিজের দুটি সাদা–কালো ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন,
‘আমি হারি না। আমি হয় জিতি, নয় শিখি।’
এর আগে ম্যাচ শেষে কোচ উনাই এমেরি বলেন,
‘পাউ তখন ঠিক জায়গায় ছিল, পাস নেওয়ার জন্যও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আজ (কাল) ভুল হয়েছে। পরের ম্যাচগুলোতে এই ভুলগুলো থেকে শিখে আরও শক্ত দল হিসেবে ফিরতে হবে।’

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় দলের ক্যাম্প। প্রথম দিন ম্যানজোর আমের খানের কাছে রিপোর্ট করেন ১৪ জন ফুটবলার।
প্রাথমিকভাবে ২৬ ফুটলারকে ডাকবেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। সেখানে বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড় সর্বোচ্চ ১০ জন— গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণ, ডিফেন্ডার তপু বর্মণ, সাদ উদ্দিন, তাজ উদ্দিন, মিডফিল্ডে দুই সোহেল রানা, মোহাম্মদ হৃদয়, ফরোয়ার্ড রাকিব, শাহরিয়ার ইমন ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।
এবারও হাভিয়ের কাবরেরা বিবেচনায় নেননি ইংল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলার কিউবা মিচেলকে। বসুন্ধরা কিংসের জার্সিতে যিনি ইতোমধ্যে খেলেছেন বাংলাদেশ ফুটবল লিগে এবং এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে।
১৩ নভেম্বর নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ এবং ১৮ নভেম্বর এএফসি বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি সামনে রেখে প্রাথমিকভাবে ২৬জন ফুটবলারকে ডাকা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরও হংকং, চায়নার বিপক্ষে খেলা ফাহামিদুল ইসলামকে প্রত্যাশিতভাবেই ডাকা হয়নি। আগের দুটি এএফসি বাছাইয়ের ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন ইতালি প্রবাসী ফাহামিদুল। যে কারণে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে পারতেন না তিনি।
নেপালে বিপক্ষে খেলায় কোনো বাঁধা না থাকলেও এক ম্যাচের জন্য তাকে উড়িয়ে আনেত চায়নি বাফুফে। যদিও তাঁর বদলি হিসেবে নতুন করে কাউকে নেওয়া হয়নি।
সর্বশেষ হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের ২৩ জনের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছিলেন মিডফিল্ডার কাজেম শাহ। তবে আসন্ন দুটি ম্যাচের প্রাথমিক স্কোয়াডে আছেন তিনি। মোটকথা কোনো চমক ছাড়াই ভারত ও নেপালের বিপক্ষে স্কোয়াড সাজানো হয়েছে।

একদিন সকালে জোসেফ কে. নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন দুজন লোক তাঁর বাসায়। কুশলাদি বিনিময়ের আগেই তাঁরা বলে উঠলেন, ‘আপনি গ্রেপ্তার হয়েছেন।’
শীতের ভোর। রুম হিটার আর কম্বলে উষ্ণতা খোঁজার বিপরীতে দুঃসংবাদের অভিঘাতে কেঁপে উঠল জোসেফের আত্মা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবতে থাকলেন অতীত–বর্তমান। আদৌ কোনো অপরাধ করেছিলেন কি না। তবে আগন্তুকেরা এও জানান, গ্রেপ্তার হলেও এই মুহূর্তে থানায় নেওয়া হচ্ছে না তাঁকে। বরং নির্দিষ্ট সময় শেষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে জোসেফের।
জোসেফের রীতিমতো মূর্ছা যাওয়ার দশা। তবু রোজকার কাজ চালিয়ে যান তিনি—ঘুম থেকে ওঠা, অফিসে যাওয়া–ফেরা, বন্ধুদের ডাকে বারবিকিউ পার্টিতে অংশ নেওয়া। যদিও সেখানকার বাতাসে ভেসে থাকা কাঁকড়া কেকের ঘ্রাণ তাঁকে আর মোহিত করে না। মনের ভেতর চলতে থাকে উত্থাল–পাতাল ঝড়। বিকেলের রঙ আর ভালো লাগে না তার। যে বৃষ্টি স্মৃতিতে ভাসাত, সেটাই আজ দুঃখের নীল।
মিশর ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহর অবস্থাও অস্ট্রিয়ান লেখক ফ্রান্ৎস কাফকার দ্য ট্রায়াল-এর জোসেফের মতোই। ঘুরছেন–ফিরছেন, অনুশীলন করছেন, খেলছেনও। তবুও তাঁর মনের ভেতর ঝড়। ‘গোল ড্রায়’, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটুক্তি, বন্ধুদের আড্ডায় এখন তিনি অমনযোগী শ্রোতা।
প্রিমিয়ার লিগের ২০২৪–২৫ মৌসুমে অ্যানফিল্ডের জার্সিতে ২৯ গোল ও ১৮ অ্যাসিস্টের দেখা পেয়েছিলেন সালাহ। অথচ ২০২৫–২৬ মৌসুমে ভুগছেন ‘গোল ড্রাই’-এ। গত মৌসুমে প্রথম ১০ ম্যাচে করেছিলেন ৭ গোল, নতুন মৌসুমে মাত্র ৪টি। অ্যাসিস্ট দুটি। অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ডের কাছে প্রত্যাশা অবশ্য আরও বেশি!
নতুন মৌসুমে এফসি বোর্নমাউথের জালে বল জড়িয়ে যাত্রা শুরু হয় সালাহর। শেষ ম্যাচেও (গতকাল) গোল পেয়েছেন তিনি। তার আগে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষেও গোল করেন মিসর ফরোয়ার্ড। লেখায় বিষয়টি সহজ মনে হলেও বাস্তবতা—নতুন মৌসুমে লিগে ছয় ম্যাচে গোল পাননি সালাহ।
গতকাল অ্যানফিল্ডে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে লিভারপুলকে লিড এনে দেন সালাহ। গোলটি যেন একপ্রকার উপহার—অতিথি গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের অসাবধানতার সুযোগ কাজে লাগান ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা। ডি-বক্সে বল পেয়ে এক টাচে গোল আদায় করেন তিনি। তাতেই লিভারপুলের জার্সিতে ২৫০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন সালাহ।
তবু ম্যাচজুড়ে সেই ব্যাংকার জোসেফের মতো কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে সালাহকে। তাঁর আক্রমণে ওঠা ও ক্লিয়ার পাস ধরে গোল দেওয়ার চেষ্টায় ফুটে উঠেছে কৃত্রিমতা। গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছেন একবার, শট নিয়েছেন তিনবার, সফল হয়েছেন একবার। ফুটবল বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ফুটমবের’ রেটিংয়ে ৮ পেলেও ম্যাচজুড়ে একধরনের হীনমন্যতায় ভুগতে দেখা গেছে সালাহকে।
মোহাম্মদ সালাহ প্রিমিয়ার লিগে টানা দুই ম্যাচে গোল পেয়েছেন, এটা সত্য। তবে আর্জেন্টাইন গোলকিপার মার্তিনেজ যেন তাঁকে কাফকার মেটামরফোসিসের গ্রেগর সামসা হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছেন—এটাও বাস্তব। তাঁকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল প্রবলভাবে; তিনি যেন সামসার মতো কীটপতঙ্গে রূপ নিচ্ছিলেন। সে মাত্রা যদি প্রিয়জনের চেয়ে প্রয়োজন বেশি হয়ে উঠত, নিশ্চিতভাবেই তাঁকে নিয়ে ভাবতে শুরু করত ‘অল রেডস’ কর্তৃপক্ষ।
এই কঠিন যাত্রায় সালাহ পেয়েছেন কোচের সমর্থন। লিগে দলের টানা চার হারকে দুর্ভাগ্য হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন আর্নে স্লট। গতকাল জয়ের পর তিনি বলেন,
‘প্রতি ম্যাচে ব্যবধান খুবই ছোট। আজ (গতকাল) শুরুতেই ভিলার বল গোলবারে লেগেছিল—শেষ কয়েক সপ্তাহে এগুলো গোল হয়ে যেত। এবার হয়নি। আমরা কোনো সেটপিসে গোল খাইনি, সেটি সাহায্য করেছে। কিছুটা ভাগ্যও আমাদের সঙ্গে ছিল, যা সম্প্রতি ছিল না। আমাদের দ্বিতীয় গোলটিও এসেছে ডিফ্লেকশন থেকে।’
এখানে কিছুটা সত্য আড়াল করতে চেয়েছেন লিভারপুল কোচ। অ্যানফিল্ড, যেখানে সালাহদের তীর্থভূমি—সেখানেও চোখে চোখ রেখে লড়েছে ভিলার কোনসা ও ম্যাটি ক্যাশ। প্রায় ৪৭ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল অতিথিরা। গোলমুখে শট কিংবা সুযোগ তৈরিতে পিছিয়ে থাকলেও অ্যাস্টন ভিলা পাসের নির্ভুলতায় ছিল এগিয়ে—প্রায় ৮৪ শতাংশ পাস ছিল অ্যাকুরেট।
তারপরও দলের প্রতি আস্থা রেখেছেন স্লট। আস্থা রেখেছেন সালাহর প্রতিও। অ্যানফিল্ডে নামার আগে তিনি বলেছিলেন,
‘আমি খুব খুশি আমার দল নিয়ে। এখানে সব কোয়ালিটির খেলোয়াড় আছে।’
তাঁর মতে,
‘গ্রীষ্মে দলে কিছু পরিবর্তন এসেছে। ফলে সবাইকে নতুন করে একে-অপরকে বুঝে নিতে হচ্ছে। হয়তো এর সঙ্গেই সালাহর পারফরম্যান্সের সম্পর্ক আছে।’
এর আগেও স্লট বলেছিলেন,
‘সালাহও মানুষ। আমরা অভ্যস্ত নই তাকে এত সুযোগ নষ্ট করতে দেখতে।’
লিভারপুল নিয়ে স্লটের মন্তব্য কিংবা সালাহর প্রতি তাঁর সমর্থন ফিকে হয়ে যাবে যদি না অ্যানফিল্ডের প্রতি আস্থা হারান সমর্থকেরা—অথবা আস্থাহীন হয়ে পড়েন সালাহ নিজেই। তবেই ধীরে ধীরে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠবে প্রিয়জন আর প্রয়োজনের সম্পর্ক। প্রিয় সামসার মতো তিনিও হয়তো একসময় বিরক্তির কারণ হয়ে উঠবেন। আপেলের আঘাতে শেষ হবে তাঁর অধ্যায়।
তবে এটা-ও সত্য—সালাহ হয়তো নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন, হয়তো ফেরার চেষ্টাও করছেন। তিনি জানেন কীভাবে ফিরে আসতে হয়। গিরিখাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও বহুবার তিনি ফিরেছেন। তাঁকে যে ফিরতেই হবে—সেটা মিসর ফরোয়ার্ডের চেয়ে ভালো জানে আর কে!

এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে ১০ নভেম্বর ঢাকায় আসছে ভারত। ১৮ নভেম্বর পল্টনের জাতীয় স্টেডিয়ামে হামজা-জামালদের বিপক্ষে মাঠে নামবে দলটি। তার আগে ভারতেই আলোচনা— লাল-সবুজের বিপক্ষে কোন ভূমিকায় দেখা যাবে ভারতীয় কিংবদন্তী ফুটবলার সূনীল ছেত্রীকে।
এএফসি বাছাইয়ে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই বাংলাদেশের মতো বিদায় নিশ্চিত ভারতের। যদিও এই প্রতিযোগিতা শুরুর আগে অবসর ভেঙে গত মার্চে দলে ফেরেন ছেত্রী। ২৫ মার্চ শিলংয়ে বাংলাদেশকে মোকাবিলার আগে মালদ্বীপের বিপক্ষে ফেরার ম্যাচে গোলও করেন ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গোল করা এই তারকা।
তবে এএফসি বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেননি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৯৫ গোল করা ছেত্রী। বাংলাদেশের প্রবল আক্রমণের সামনে গোলশূন্য ড্র করে তাঁর দল।
এরপর বাছাইপর্বে আরও তিন ম্যাচ খেলে ভারত; সেখানে দুটিতে হার, একটিতে ড্র। ৪ ম্যাচে দুই পয়েন্ট পেয়ে আগেই বিদায় ঘন্টা বাজে তাদের। এই তিন ম্যাচে ভারত ৪ গোল হজমের বিপরীতে স্রেফ দুবার প্রতিপক্ষের জাল কাঁপাতে পেরেছে। সেই দুই গোলের একটিতেও নেই ছেত্রীর নাম।
অথচ গত মার্চে জাতীয় দলে ফেরার আগের মৌসুমে ৩৪ ঘরোয়া ম্যাচে ১৭ গোল এবং চারটি অ্যাসিস্ট করেছিলেন ছেত্রী। কিন্তু দেশের জার্সিতে তাঁর এমন বাজে ফর্ম কেন, এ নিয়ে জাতীয় দলের কোচকেই দুষছেন ভারতের অনেকে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের মধেই গত আগস্টে মানোলো মার্কেজের পরিবর্তে কোচের দায়িত্ব খালিদ জামিলের কাঁধে তুলে দেয় অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু দুই কোচই এ সময় ছেত্রীকে একজন স্ট্রাইকার (নাম্বার নাইন) হিসেবে খেলিয়েছেন। যেটা একদমই পছন্দ হয়নি তাঁর বেঙ্গালুরু এফসির কোচ জেরার্ড জারাগোজার।
ছেত্রীকে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানোয় ভারতীয় জাতীয় দলের কোচ খালিদ জামিলের সমালোচনা করে জারাগোজা সম্প্রতি বলেছেন, 'সে (ছেত্রী) কি গত মৌসুমে বেঙ্গালুরুর হয়ে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছে? সুনীল ছেত্রী কি আদৌ স্ট্রাইকার? আমি জানতে চাই। কারণ জাতীয় দলে যদি তাঁকে একমাত্র ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলানো হয়, তবে সে নিজের কাজটা করতে পারবে না।'
সর্বশেষ আইএসএলে ১৪ গোল করেছেন ছেত্রী। এই প্রসঙ্গ টেনে বেঙ্গালুরুর কোচ বলেন, 'সে এই ১৪ গোলের মধ্যে একটাও কি স্ট্রাইকার হিসেবে।পেয়েছে?'
জারাগোজা হয়ত এটাই বোঝাতে চেয়েছেন ছেত্রী একজন ক্লাসিক সেন্টার-ফরোয়ার্ডের চেয়ে সুযোগসন্ধানী ফরোয়ার্ড হিসেবে বেশি কার্যকরী। এখন দেখার অপেক্ষা বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন ভূমিকায় মাঠে নামেন ৪১ বছর বয়সি তারকা