জিম্বাবুয়ের জয় ঠেকাতে শেষ ওভারে ১১ রানের কম দিলেই চলতো নামিবিয়ার। তবে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের লাগল মাত্র দুটি বল । নামিবিয়ার পেসার রুবেন ট্রুমপেলমান পাঁচটি ডেলিভারির তিনটিই যে ছিল অবৈধ। তাতে বৈধ দুই বলে ১৪ রান তুলে আফ্রিকা অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন হয়েই ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করল জিম্বাবুয়ে।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে আজ মুখোমুখি হয় আফ্রিকা থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট কাটা জিম্বাবুয়ে-নামিবিয়া। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ১৬৭ রান তোলে নামিবিয়া। জবাবে ৪ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে। তাতে অপরাজিত থেকে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শেষ করল সিকান্দার রাজার দল।
রান তাড়ায় ২৯ রানে ব্রায়ান ব্রেনেটকে হারায় জিম্বাবুয়ে। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে তাদিওয়ানাশে মারুমানি-ডিয়ন মায়ার্সের ৮৮ রানের জুটিই জয়ের ভিত গড়ে দেয়। ৩৩ বলে ৪৪ রান করা মায়ার্স আউট হলেও দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন ৬১ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলা মারুমানি।
মায়ার্সের উইকেটের পরের ডেলিভারিতেই গোল্ডেন ডাক মেরে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। এরপর পাঁচে নামা রায়ার্ন বার্ল ১২ বলে ২৬ রানের ঝোড়ো ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে আফ্রিকার চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করেন।
এর আগে টসে জিতে নামিবিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় জিম্বাবুয়ে। লওরেন স্টিনক্যাম্প (২৭ বলে ৪০) ও অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাসের (৩২ বলে ৩৮) ব্যাটে ভর করে লড়াকু সংগ্রহ পায় সফরকারী দল। তবে জিম্বাবুয়ের বোলাররা খুব বেশি হাত খুলে খেলতে দেয়নি তাদের। পেসার রিচার্ড এনগারাভা ছিলেন ম্যাচে স্বাগতিকদের সেরা বোলার। ৪ ওভারে ২৬ রান তিন উইকেট নেন এই পেসার।
No posts available.
৬ অক্টোবর ২০২৫, ২:৪৯ এম
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের পর বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিন ম্যাচের সিরিজে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে পেরেছে শুধু এই তিন দেশ। সবশেষ হোয়াইটওয়াশের পর ফিল্ডিংকে দায় দিয়েছেন অধিনায়ক রশিদ খান।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার সিরিজের শেষ ম্যাচে অন্তত ২টি ক্যাচ ছেড়েছেন আফগানিস্তান ফিল্ডাররা। এর বাইরেও তাদের হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে অনেক রান।
আগের দুই ম্যাচেও ফিল্ডিংয়ের কারণে ডুবতে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অন্তত ৫টি ক্যাচ ছেড়েছে আফগান ফিল্ডাররা। এর মধ্যে বাঁহাতি ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন একাই পেয়েছেন ৪টি জীবন।
সব মিলিয়ে সিরিজের তিন ম্যাচে অনেক ক্যাচ ছাড়ার পাশাপাশি মিস ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশকে অনেক রানও দিয়েছে আফগানিস্তান। তাই সিরিজ শেষে এই জায়গাটি নিয়েই বড় আফসোস রশিদের।
“সত্যি বলতে আমরা বাজে ক্রিকেট খেলেছি এবং তারা দুর্দান্ত খেলেছে। সিরিজজুড়ে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে তারা ভালো করেছে। বিশেষ করে ফিল্ডিংয়ে। আমার মনে হয়, এই জায়গায় (ফিল্ডিংয়ে) আমরা তাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলাম।”
“আমরা অনেকগুলো ক্যাচ ছেড়েছি। ক্যাচই আপনাকে ম্যাচ জেতায়। বোলিং ভিন্ন ব্যাপার। তবে ফিল্ডিংয়ে আমরা অনেক বেশি পিছিয়ে ছিলাম। তাই তারা এই ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল।”
সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশ বোলাররা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে তার ব্যতিক্রম হয়নি।
তবে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করার পরও ছিল অতৃপ্তি। প্রথম ম্যাচে মিডল অর্ডার ব্যাটারদের দাঁড়াতে হয়েছে কাঠগড়ায়। দ্বিতীয় ম্যাচে টপ অর্ডারদের ব্যাটিং বাড়িয়েছিল দুশ্চিন্তা। সিরিজের শেষ ম্যাচে এইসব দুর্নাম থেকে বেরিয়ে এসেছে ব্যাটাররা।
দারুণ শুরুর পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়া কিংবা লেজের জোরে ম্যাচ জেতার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি সিরিজের শেষ ম্যাচে। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে আফগানিস্তানকে ৩৯ রানে ৩ উইকেট ফেলে দিয়ে ব্যাকফুটে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ বোলাররা। সারজার স্লো উইকেটে সাইফউদ্দিন (৩/১৫), তানজিম হাসান সাকিব (২/২৪), নাসুমের (২/২৪) বোলিংয়ে আফগানিস্তানকে ১৪৩/৯-এ আটকে ফেলাটা অবশ্যই কৃতিত্বের। তবে এই স্কোরটাও বেশি মনে হতে পারে। এক পর্যায়ে যে দলটির স্কোর ৯৮/৮, সেখান থেকে ৯ম উইকেট জুটি কীভাবে ২২ বলে ৩৪ যোগ করল, কীভাবে শেষ ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ১ উইকেট হারিয়ে ৪১ রান উঠলো আফগানিস্তানের স্কোর বোর্ডে-এ প্রশ্নটা উঠতেই পারে।
১৪৪'র চ্যালেঞ্জ সহজ হয়েছে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ৪৭/১ স্কোরে। টিম প্লানটা ছিল দারুণ। সময়ের সেরা লেগ স্পিনার রশিদ খানকে উইকেট দেয়া যাবে না বলে পন করে কথা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা। রশিদ মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন (৪-০-১৩-০) ঠিকই, তবে অন্য বোলারদের প্রতি আক্রমন করেছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা।
দ্বিতীয় উইকেট জুটির ৩৯ বলে ৫৫, ৫ম উইকেট জুটির ২৪ বলে ৩৫ বড় জয়ের পথ সুগম করেছে। আহমেদজাই-এর শ্লোয়ারে মিস টাইমিংয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে তানজিদ হাসান তামিম ফিফটি হাতছাড়া করেছেন (৩৩ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৩৩)। এই সেট ব্যাটারের বিদায় বিষাদ হয়ে দাঁড়ায়নি।
প্রথম দুই ম্যাচে গেম চেঞ্জারের ভুমিকায় দেখা গেছে নূরুল হাসান সোহানকে। তবে সিরিজের শেষ ম্যাচে টপ অর্ডার সাইফ হাসান ম্যাচ উইনারের ভুমিকায় আবির্ভূত। টি-টোয়েন্টিতে চার এর চেয়ে ছক্কা সহজ, নিখুঁত টাইমিংয়ে ২ চার-এর পাশে ৭ ছক্কায় তা জানিয়ে দিয়েছেন সাইফ।
২০২১-এ টি-টোয়েন্টি অভিষেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ বলে ১ রান, পরের ম্যাচে গোল্ডেন ডাক। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে এমন শুরুর পর এই ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে অপেক্ষা করতে হয়েছে সাইফ হাসানকে ২৩ মাস। হানজুং এশিয়া কাপে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ফিফটি। পরের দুই ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে ১, পাকিস্তানের বিপক্ষে ০! এমন উন্থান পতনে বড় একটা ধাক্কা খেতে হয়েছে সাইফ হাসানকে। টেস্ট ব্যাটারের স্টিকার লেগে গিয়েছিল তার গায়ে। ২২ মাস পর সিলেটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০ বলে হার না মানা ৩৬ রানের ইনিংসে নির্বাচকদের নজরে এসেছেন সাইফ। এর পর আর সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাইফ হাসানকে।
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে দুবাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৫ বলে ৬১, ভারতের বিপক্ষে ৫৫ বলে ৬৯ রানে নিজেকে আদর্শ টি-টোয়েন্টি ব্যাটার হিসেবে করেছেন উপস্থাপন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৩৮ বলে ২ চার, ৬ ছক্কায় ৬৪ রানের হার না মানা ইনিংসে বাংলাদেশকে দিয়েছেন সহজ জয় উপহার।
সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে ১৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৫ বাউন্ডারির পাশে ২৭ ছক্কা মেরেছেন সাইফ হাসান। যার মধ্যে এ বছর ১০ ম্যাচে ১৪ চার এর পাশে ছক্কা ২৪টি! যেনো ছক্কার ফুলঝুরি ফোটাতেই এসেছেন তিনি।
তার ব্যাটিং ঝড়ে ১২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জিতে হোয়াইট ওয়াশের উৎসব করেছে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ২০১৮ সালে দেরাদুনে আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইট ওয়াশের জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ ৫ বছর পর।
এক সিরিজে অনেক কিছু পেলো বাংলাদেশ। উপর্যুপরি ৪টি দ্বি-পাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজের সব ক'টিতে জিতে অন্য উচ্চতায় এখন বাংলাদেশ।
প্রথম দুই ম্যাচের ব্যর্থতা ঝেরে শেষটিতে আবার বিধ্বংসী রুপে হাজির সাইফ হাসান। আফগানিস্তানের বোলারদের তুলোধুনো করে ৩৮ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে জিতলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সেই স্বীকৃতি গ্রহণ করে বললেন, গত ১-২ বছর ধরে এভাবেই খেলছেন তিনি।
ঘরের মাঠে সবশেষ নেদারল্যান্ডস সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলে কামব্যাক হয়েছে সাইফের। এরপর থেকে রীতিমতো উড়ছেন তিনি।
ফেরার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ ইনিংসে ৩ ফিফটিসহ ৪৪ গড় ও ১৩৯.৩৬ স্ট্রাইক রেটে তার সংগ্রহ ৩০৮ রান। প্রতিপক্ষ বোলারদের কচুকাটা করে ১৪ চারের সঙ্গে ২৪টি ছক্কা মেরেছেন ২৬ বছর বয়সী ব্যাটার।
সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষেই ২ চারের বিপরীতে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭টি ছক্কা। ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই সাইফের কাছে জানতে চাওয়া হয় ছক্কা মারার ব্যাপারে।
উত্তরে নিজের ব্যাটিং উপভোগ করার কথা বলেন সাইফ।
“গত ১-২ বছর ধরে আমি এভাবেই খেলছি। এরকমই খেলার চেষ্টা করছি। নিজের ব্যাটিং উপভোগ করছি। এই তো।”
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৫ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৩৬০ রান, গড় ৩২.৭২! বাংলাদেশের হয়ে অন্তত ১৫ ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সাইফের গড়ই সবার ওপরে। স্ট্রাইক রেটেও (১২৬.৩১) খুব একটা পেছনে নন। অন্তত ৩০০ রান করা ব্যাটারদের মধ্যে ৬ নম্বরে তিনি।
সাইফ জানালেন, আফগান সিরিজ শুরুর আগে ফিল সিমন্সের কাছ থেকে স্পষ্ট বার্তা পেয়েছেন।
“সবশেষ টুর্নামেন্টে আমি ওপেনিংয়ে খেলেছি। এই সিরিজের আগে তিনি (ফিল সিমন্স) আমাকে পরিষ্কার বার্তা দিয়ে বলেছেন, তিন নম্বরে খেলব। তাই আমার মধ্যে স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল এবং আমি সেভাবেই খেলেছি।”
এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে সফলতা এনে দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদ। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ১১ রান খরচায় ২ উইকেট তুলে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। আট জাতির টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্মের সুবাদে আফগানদের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সুযোগ মেলে নাসুমের।
রশিদ খানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ধারাবাহিক পারফর্ম করেছেন নাসুম আহমেদ। প্রথম ম্যাচে এক উইকেট নেওয়া এই বাঁহাতি স্পিনার পরের দুই ম্যাচে তুলেছেন আরও দুটি করে। সিরিজে ৫ উইকেটে সুবাধে হয়েছেন সিরিজসেরা।
বাংলাদেশিদের মধ্যে সিরিজসেরার কাতারে তৃতীয়তে নাসুম। প্রথম স্থানটি সাকিব আল হাসানের। দেশসেরা অলরাউন্ডার লাল সবুজ জার্সিতে ৫ বার সিরিজ সেরা হয়েছেন। বর্তমান টি টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন কুমার দাস এই সম্মাননা জিতেছেন তিনবার। নাসুম আহমেদ জিতেছেন দুই বার।
নাসুম তার প্রথম সিরিজসেরার পুরস্কার জেতেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০২১ সালে। দেশের মাটিতে ৫ ম্যাচের সে সিরিজে ৮ উইকেট তুলেছিলেন। এবার তিন ম্যাচের সিরিজে তার সংগ্রহ ৫ উইকেট।
সিরিজসেরা নির্বাচিত হওয়ার পর নাসুম বলেছেন,
‘এটাই প্রথমবার নয় যে আমি এমনভাবে বোলিং করেছি। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও আমি প্রায় একই রকম বরং তার চেয়েও ভালো পারফরম্যান্স করেছি।’
শারজার উইকেট নিয়ে তিনি বলেন,
‘উইকেট কিছুটা ধীর ছিল। সেটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম এবং বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনতে চেষ্টা করেছি। সেটাই আমার লক্ষ্য ছিল এবং আমি তাতে সফল হয়েছি।’
সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়েছে আগেই। সেই অর্থে আজ আবু ধাবির শারজার ম্যাচটি ছিল আফগানিস্তানের জন্য সম্মান বাঁচানোর, বাংলাদেশের প্রতিশোধের। ২০১৮ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লাল সবুজ দলকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল আফগানরা। আজ রশিদ খানদের হোয়াইটওয়াশ করে তা কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ১৬টি তিন বা তার বেশি ম্যাচের সিরিজ খেলেছে আফগানরা। যেখানে তৃতীয় বার হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তারা।
তানজিদ হাসানের ভয় কাটিয়ে দেওয়ার পর সাইফ হাসানের অকুতোভয় অর্ধশতকে (৬৪*) ৩ ম্যাচ সিরিজের সবকটি টি টোয়েন্টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে চার উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে দুই উইকেটে জয়ের পর আজ আফগানদের বিপক্ষে লাল সবুজ দলের জয় ১২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে।
এদিন আফগানদের ১৪৪ রানের লক্ষ্যে নেমে প্রথম ওভারে বেশ সাবধানি ছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারে মুজিব উর রহমানের মেডেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ। যদিও দ্বিতীয় ওভার থেকেই মারমুখী ব্যাটিং শুরু করেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন ইমন।
পঞ্চম ওভারে উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। অভিষিক্ত বশির আহমেদ আফগানদের প্রথম আনন্দ এনে দিতে পারতেন তানজিদকে ফিরিয়ে। মিডঅনে ক্যাচ তুলেছিলেন তানজিদ। রশিদ খান ডাইভ দিয়ে এক হাতে ক্যাচটা প্রায় নিয়েছিলেন। কিন্তু মুঠোবন্দি করতে পারেননি। যদিও পরের ওভারেই সাজঘরে ফেরেন পারভেজ।
প্রথম উইকেটের পতনের পর সাইফের সঙ্গে জুটি গড়েন তানজিদ হাসান। বাংলাদেশ ওপেনার ৩৩ রানে ফিরলে জাকের আলিকে সঙ্গী করেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২ রান করা উইকেটরক্ষক ব্যাটার আজ করতে পারেন কেবল ১০। এরপর ডাক মেরে ফেরেন শামীম পাটোয়ারি।
শামীম যখন ফেরেন তখন বাংলাদেশের রান ১০৯। তখনো বন্দরে পৌঁছাতে কিছু পথ বাকি। তবে সবকিছু ঠান্ডা মাথায় সামাল দেন সাইফ হাসান। ৩৮ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যাতে ছিল ২টি চার ৭টি ছক্কা। শেষদিকে তাকে সঙ্গ দেন আগের দুই ম্যাচের ফিনিশার নুরুল হাসান।
এর আগে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারে উইকেট হারায় আফগানিস্তান। নতুন বলে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন এই বাঁহাতি পেসার। ইব্রাহিম জাদরানকে ৭ রানে ফিরিয়ে ২০ রানেই উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শরিফুল। আরেক ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে থামান নাসুম আহমেদ। ক্যাচ আউট হয়ে ফেরার আগে তিনি করতে পারেন কেবল ১২ রান।
তিনে নেমে ভালো শুরু পেয়েছিলেন সেদিকুল্লাহ অটল। উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ২৩ বলে ২৮ রান করা এই টপ অর্ডার ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
এরপর ওয়াফিউল্লাহ তারাখিল, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও মোহাম্মদ নবিরা দ্রুতই ফিরেছেন। তাতে ৮২ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসে শেষ বলে উইকেট পেলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। এরপর দুই স্পেলে করা আরও দুই ওভারে একটি করে উইকেট নিলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। তার নৈপুণ্যে মনে হচ্ছিল, আফগানিস্তানকে গুটিয়ে দেবে বাংলাদেশ।
শেষের হতাশায় সেটি সম্ভব হয়নি। তবু আফগানিস্তানের সংগ্রহ অবশ্য বেশি বড় হয়নি। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান করতে পারল তারা।
দুর্দান্ত বোলিং করলেও অবশ্য পুরো ৪ ওভার পাননি সাইফ উদ্দিন। ৩ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন ২৯ ছুঁইছুঁই এই পেস অলরাউন্ডার। তার শেষ ওভারে জাকের আলি অনিকের গ্লাভসের সামনে পড়ায় অল্পের জন্য আরেকটি উইকেট পাননি সাইফ। সাইফ উদ্দিনের ৩ উইকেট ছাড়াও নাসুম আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব নেন ২টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৩/৯ (গুরবাজ ১২, ইব্রাহিম ৭, অতল ২৮, তারাখিল ১১, রসুলি ৩২, ওমরজাই ৩, নবী ১, রশিদ ১২, আহমেদজাই ০, মুজিব ২৩*, বশির ২*; শরিফুল ৪-০-৩৩-১, নাসুম ৪-০-২৪-২, সাকিব ৪-০-২৪-২, সাইফ উদ্দিন ৩-০-১৫-৩, সাইফ ১-০-৬-০, রিশাদ ৪-০-৩৯-১)
বাংলাদেশ: ১৮ ওভারে ১৪৪/৪ (ইমন ১৪, তামিম ৩৩, সাইফ ৬৪*, জাকের ১০, শামীম ০, সোহান ১০*; মুজিব ৪-১-২৬-২, ওমরজাই ৩-০-১২-১, বশির ৩-০-৩৮-০, রশিদ ৪-১-১৩-০, আহমেদজাই ৪-০-৫০-১)
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী