ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং উপহার দিল বাংলাদেশ। অন্য ব্যাটারদের কেউই সেভাবে বড় ইনিংস না গড়তে পারলেও একপ্রান্ত আগলে ঝড় তুললেন পারভেজ হোসেন ইমন। তরুণ এই ওপেনার রেকর্ড গড়া দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে বোর্ডে বড় রানই জমল। তবে তাতে ভড়কে না গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত রান তাড়ায় করল সাহসী ব্যাটিং, যাতে জাগল তাদের জয়ের সম্ভাবনা। এরপর শেষের দিকে ঝড় তুললেন আসিফ খান। তবে সেটা সামলে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ।
শারজাহতে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতেছে ২৭ রানে। ৭ উইকেটে ১৯১ রান করার পর প্রতিপক্ষকে ১৬৪ রানে আটকে দিয়েছে তারা। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ আগামী সোমবার একই ভেন্যুতে।
আরও পড়ুন
পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন লিটন-শান্তরা |
![]() |
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে প্রথম ওভারে এক চার ও এক ছক্কায় ভালো শুরু এনে দেন তানজিদ হাসান তামিম। তবে অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে মাত্র ১০ রানেই থামতে হয় তাকে পরের ওভারে।
ধ্রুভ পারেশকারকে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে অন্যপ্রান্তে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের আভাস দেন ইমন। তবে তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ক লিটন। এক ছক্কায় ৮ বলে ১১ রান করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ম্যাচে চমৎকার বোলিং করা মুহাম্মাদ জায়াদুল্লাহর বলে।
প্রথম ছয় ওভারে ৫৫ রান করা বাংলাদেশের ইনিংসে গতি দেন ইমন, অষ্টম ওভারে। সাঞ্চিত শর্মার ওপর ঝড় বইয়ে দিয়ে তিনটি ছয় ও এক বাউন্ডারিতে আদায় করেন ২২ রান। এরপর চার মেরে মাত্র ২৮ বলে পূর্ণ করেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ফিফটি।
তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটেও ছিল আক্রমণের সুর। ভালো কিছু শটে দ্রুতই চলে যান বিশের ঘরে। তবে পারেননি সেটা লম্বা করতে। এক চার ও এক ছক্কায় ১৫ বলে করতে পারেন ২০ রান।
ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মাহেদি, জাকের আলি অনিক বা শামিম হোসেনরা পারেননি পরিস্থিতির চাহিদা মিটিয়ে ব্যাটিং করতে। ফলে নিজের সেঞ্চুরির পাশাপাশি ইমনের কাঁধেই চাপে দলকে ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার।
আরও পড়ুন
লম্বা হল বাংলাদেশ-আমিরাত সিরিজ |
![]() |
প্রায় প্রতি ওভারেই চার-ছক্কা হাঁকিয়ে সেই কাজটা তিনি সামলান দক্ষতার সাথেই। ১৭ত্ম ওভারে মাতিউল্লাহ খানকে মারেন দুটি চার ও একটি ছক্কা। ১৯তম ওভারে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরির দেখা পান তরুণ এই ব্যাটার। ৫৩ বলে তিন অঙ্কের ঘরে পা রাখেন ইমন।
এর মধ্য দিয়ে মাত্র দ্বিতীয় বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করেছেন ইমন। এরপরই আউট হলেও তার আগে হাঁকান ৯টি ছক্কা, যা এক ইনিংসে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।
চার ওভারে মাত্র ২১ রানে ৪ উইকেট নেন জায়াদুল্লাহ।
১৯১ রান ডিফেন্ড করতে নামা বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ওভারে চমকে দেন আরব আমিরাত ওপেনাররা। শেখ মাহেদি হাসানকে তিন চার ও এক ছক্কা হাঁকিয়ে আদায় করেন ১৯ রান। তানজিম হাসান সাকিবের করা পরের ওভারটিও হয় ব্যয়বহুল, আসে ১৪ রান।
শেষ পর্যন্ত আক্রমণে এসে জুটিতে ভাঙন ধরান হাসান মাহমুদ। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মুহাম্মাদ জোহাইব। অন্যপ্রান্তে মুস্তাফিজুর রহমানও তার করা প্রথম ওভারে দেখা পান উইকেটের।
প্রথম ওভারটা ভীষণ হিসেবী করা হাসান ফিরতি স্পেলে এসে হজম করেন বেদম মার। তার ওপর চড়াও হয়ে রাহুল চোপড়া তিন বাউন্ডারির সাথে মারেন একটি ছক্কায়, ওভারে আসে ১৯ রান।
বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামও পারছিলেন না সুবিধা করতে। ওই সময়ে তাই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। মাত্র ৩২ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন ওপেনার মুহাম্মদ ওয়াসিম। ১০ ওভার শেষে আরব আমিরাতের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৯৮।
আরও পড়ুন
পিএসএল দিয়ে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরার আশায় মিরাজ |
![]() |
চাপ সামলে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রুটা এনে দেন তানজিম। শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ৩৯ বলে ৫৪ রান করা ওয়াসিম। তবে ক্রিজে গিয়েই পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে চিন্তার ভাজ বাড়ান আসিফ খান। মাহেদির ওভারে হ্যাটট্রিক ছক্কার মারে ২৭ রান।
অন্যপ্রান্তে বিপজ্জনক রাহুলকে (৩৫) ফিরিয়ে ফের বাংলাদেশকে ম্যাচে ধরে রাখেন তানজিম। অন্যপ্রান্তে এরপর আসা-যাওয়ার মিছিল অব্যাহত থাকলেও একাই লড়ে যান আসিফ। ১৯তম ওভারে তার বিদায়েই মূলত শেষ হয় আরব আমিরাতের জয়ের আশা।
তবে তার আগে বাংলাদেশকে ভয় পাইয়েই দিয়েছিলেন ৪টি ছক্কা ও তিন বাউন্ডারিতে মাত্র ২১ বলে ৪২ রানের ইনিংসে, যার ইতি ঘটে হাসানের বলে। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েই তিনিই বাংলাদেশের সেরা বোলার।
৫ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম
৫ জুলাই ২০২৫, ৬:৫১ পিএম
কেশভ মহারাজের চোটে শেষ সময়ে এসে ভাগ্য খুলে গেল সাকিব আল হাসানের। আসছদ গ্লোবাল সুপার লিগে (জিএসএল) দক্ষিণ আফ্রিকা স্পিনারের বদলি হিসেবে বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডারকে দলে নিয়েছে দুবাই ক্যাপিটালস। ফলে প্রথমবারের মত এই টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছেন সাকিব।
রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সাকিবকে দলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুবাই।
“কেশভ মহারাজের জায়গায় একজন কিংবদন্তি অলরাউন্ডার আমাদের জিএসএলটি২০ অভিযানে যোগ দিয়েছেন। দলে স্বাগতম, সাকিব।”
দুবাইয়ের প্রাথমিক স্কোয়াডে থাকা মহারাজ সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজের প্রথম টেস্টে চোট পান। এরপর ছিটকে যান পুরো সিরিজ থেকেই। এরপর সরে যেতে হয়েছে ১০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া জিএসএল থেকেও। আর তার জায়গায় সাকিবকে নিয়ে একই সাথে বাঁহাতি স্পিন ও ব্যাটিংয়ের শক্তিও বাড়িয়ে নিয়েছে দুবাই।
আরও পড়ুন
তানভীরের ফাইফার, রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে টিকে রইল বাংলাদেশ |
![]() |
সাকিবের অবশ্য আগে থেকেই জিএসএলে খেলার একটা সম্ভাবনা ছিল। প্রায় এক বছর ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকায় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে তার নেই কোনো সমস্যা। গতবারের জিএসএল চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স তাকে দলে নিতে আগ্রহী ছিল বলেই জানিয়েছে। তবে নানা বাস্তবতায় তারা শেষ পর্যন্ত সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে নেয়নি তাদের দলে। এবার প্রতিপক্ষ শিবিরে থেকেই রংপুরের বিপক্ষে খেলবেন সাকিব।
সাকিব জাতীয় দলের হয়ে শেষবার খেলেন গত বছর, পাকিস্তানের সাথে টেস্ট সিরিজে। অবসর না নিলেও টেস্ট ও ওয়ানডেতে তিনি আপাতত নেই দলের বিবেচনায়। মাঝে বোলিং অ্যাকশনের ত্রুটির জন্য ছিলেন মাঠেরে বাইরে। এরপর ফেরেন গত মে মাসে, পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) দিয়ে।
এবার জিএসএলে খেলবেন দুবাইয়ের হয়ে, যাদের প্রথম ম্যাচ আগামী ১০ জুলাই। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে সাকিবদের প্রতিপক্ষ সেন্ট্রাল ডিসট্রিক্টস। আর রংপুরেরস সাথে ম্যাচ আগামী ১৬ জুলাই।
প্রথম ম্যাচে প্রায় একই স্কোর নিয়ে বিশাল জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ হৃদয়ের সাথে তানজিম হাসান সাকিবের ক্যামিওতে আড়াইশ ছুঁইছুঁই স্কোর যখন পেল বাংলাদেশ, জয়ের আশা কিছুটা হলেও বেড়ে গেল। তবে কুসাল মেন্ডিসের ঝড়ো ফিফটিতে সফরকারীদের চাপে ফেলে দিল লঙ্কানরা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলা তানভীর ইসলাম এলেন ত্রাতা হয়ে, পাঁচ উইকেট নিয়ে ধস নামালেন ব্যাটিং অর্ডারে। সেই চাপ সামলে একাই লড়লেন জানিথ লিয়ানাগে। তার দারুণ এক ফিফটিতে জয়ের খুব কাছাকাছিও গেলেও শেষ রক্ষা আর হলো না শ্রীলঙ্কার। সিরিজে সমতা টানল বাংলাদেশ।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে ১৬ রানে। টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ২৪৮ রানে। রান তাড়ায় ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ রানে থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে ওয়ানডেতে জয় খরা কাটল বাংলাদেশের। আর অধিনায়ক হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই জয়ের দেখা পেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আগামী ৮ জুলাই তার দল মাঠে নামবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে, সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে।
আরও পড়ুন
এক বছরের জন্য স্থগিত হয়ে গেল ভারতের বাংলাদেশ সফর |
![]() |
ব্যাট হাতে শেষের দিকে নেমে দারুণ এক ক্যামিও খেলা তানজিম দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশের এনে দেন সাফল্য। এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ফেরেন ওপেনার পথুম নিশাঙ্কা। ব্যাটার রিভিউ নিলেও ‘আম্পায়ার্স কল’-এ বজায় থাকে আউটের সিদ্ধান্ত।
এরপর ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে শ্রীলঙ্কা। নিশান মাদুশকাকে নিয়ে কুসল শুরু করেন আগ্রাসী ব্যাটিং, যা পাল্টা চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশকে। অষ্টম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামকে দুই চার ও এক ছক্কায় ওড়ান। এরপরের ওভারে ঝড় বয়ে যায় মুস্তাফিজুরের ওপর দিয়ে। বাঁহাতি এই পেসারকে টানা চারটি চার মেরে কুসল স্রেফ ২০ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। মাত্র ৩৫ বলে দ্বিতীয় উইকেটে হয় ৫০ রানের জুটি।
কুসল ও মাদুশকার ব্যাটে চড়ে এক পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৭৫। প্রথম ওভারে ১৭ রান দেওয়ার পরও তানভীরের ওপর আস্থা রাখেন মিরাজ, যার প্রতিদান তিনি দেন দুহাতে। আক্রমণে এসেই ফিরিয়ে দেন মাদুশকাকে (২৫ বলে ১৭), ভাঙেন ৬৯ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
এরপর বড় উইকেটটাও আসে বাঁহাতি এই স্পিনারের হাত ধরেই। বিপজ্জনক কুসলকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মাত্র ৩১ বলে ৫৬ রান করার পর। এই উইকেটে স্পিন ধরায় এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে আসা শামীম হোসেনকে আক্রমণে আনেন মিরাজ। আর পার্ট টাইম স্পিনে চমকে দেখান তিনি। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা যখন তিনি শিকার বানান, তখন লঙ্কানদের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে মাত্র ৯৯।
পরের ওভারেই ফের উইকেট পেতে পারতেন শামীম। তবে কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাট ছুয়ে ক্যাচ উঠলেও তা গ্লাভসে জমাতে পারেননি জাকের আলী অনিক। বেশিক্ষণ অবশ্য টিকতে পারেননি। অন্যপ্রান্তে দারুণ বোলিং করা তানভীর খানিক বাদেই ৩৩ রান করা কামিন্দুকে ফিরিয়ে দেখা পান নিজের তৃতীয় শিকারের।
আরও পড়ুন
ইমন-তাওহীদের ফিফটির পর তানজিমের ক্যামিওতে লড়াকু পুঁজি বাংলাদেশের |
![]() |
এরপর আবারও আঘাত হানেন তানভীর। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাড হয়ে ক্যাচ তুলে দেন দুনিথ ভেলালাগে। এবার সহজ ক্যাচ নেন জাকের আলী। ১৩২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
সপ্তম উইকেটে ২৪ রান যোগ করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন জানিথ লিয়ানাগে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, যার ইতি টানেন মিরাজ। ওয়ানডেতে পাঁচ ম্যাচ পর উইকেটের দেখা পান ১৩ রান করা হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে।
চাপ বজায় রেখে সুযোগ তৈরি করেছিলেন মুস্তাফিজুর। তবে ব্যাটে লেগে লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া লিয়ানাগের ক্যাচ ফেলে দেন জাকের আলি। সেই সময়ে তার রান ছিল ২৮।
নিজের স্পেলের শেষ ওভারে বাংলাদেশকে আরও একবার উল্লাসে ভাসান তানভীর। মাহেশ থিকসানাকে আউট করে পূর্ণ করেন ফাইফার। দুর্দান্ত বোলিং ফিগারে ইনিংস শেষ করেন তিনি ১০ ওভারে ২ মেডেন সহ ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে।
তবে বাংলাদেশ শিবিরে ভীতি ছড়িয়ে শুরুতে জীবন পাওয়া লিয়ানাগে ম্যাচ হেলে দেন শ্রীলঙ্কার দিকে। তার একের পর এক বড় শটের সাথে যোগ হয় মিরাজদের ক্যাচ আর ফিল্ডিং মিসের মিছিল। তাতে বাড়তে থাকে রান, আর কমতে থাকে বাংলাদেশের জয়ের আশা।
ফিফটি পেরিয়ে লিয়ানাগে যখন ম্যাচ বাংলাদেশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়েই মহাআকাঙ্ক্ষিত উইকেটটা এনে দেন মুস্তাফিজুর। আগের বলে ছক্কা হজমের পর রিটার্ন ক্যাচে লিয়ানাগেকে থামান ৭৮ রানে।
৪৯তম ওভারে আসিথার ক্যাচ নিজের বলে নিতে ব্যর্থ হন তানজিম। তবে পরের বলেই বোল্ড করেন দুসমান্থ চামিরাকে। বাংলাদেশ পায় রোমাঞ্চকর এক জয়।
এর আগে দিনের শুরুতে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। একাদশে শামীম ছাড়াও আসেন হাসান মাহমুদ। বাদ পড়েন লিটন দাস ও তাসকিন আহমেদ। শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। আগের ম্যাচে ফিফটি করা তানজিদ হাসান তামিম সাজঘরের পথ ধরেন এক ডিজিটেই।
তিনে নামা শান্ত সেট হয়েও পারেননি ইনিংস বড় করতে। তবে দারুণ গতিতে এগিয়ে যাওয়া ইমন এগিয়ে নেন বাংলাদেশের ইনিংস। তুলনায় তাওহীদ ছিলেন বেশ ধীরগতির। চল্লিশ থেকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে ফিফটিতে পা রাখেন ইমন, যা তার ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক।
আরও পড়ুন
১ বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে ফিরলেন সাইফউদ্দিন |
![]() |
তবে এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি। থামেন ৬৭ রানে। প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামা মিরাজ দলকে হতাশ করেন আউট হন অল্পেও। ২৩ বলে ২২ রানের ইনিংসে সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন শামীম, তবে বড় শট হাঁকাতে গিয়ে ইতি ঘটে তার পথচলার।
জাকের আলী ও তাওহীদ মিলে এরপর কিছুটা ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। দলকে দুইশ পার করে তাওহীদ দেখা পান ফিফটির। তবে তিনিও বেশিক্ষণ আর টিকতে পারেননি। ৯ উইকেটে ২১৮ থেকে ২৪৮ রান পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর টেনে নেওয়ার একক কৃতিত্ব কেবল তানজিমের। অপরাজিত থাকেন মাত্র ২১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রানে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বলেছিলেন অনিশ্চয়তার কথা। শেষ পর্যন্ত এক বছরের জন্য স্থগিতই হয়ে গেল ভারতের সাথে বাংলাদেশের সাদা বলের সিরিজ। আগামী আগস্টে তাই বাংলাদেশে আসছেন না কোহলি-রোহিতরা।
শনিবার বিসিবি ও ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বাংলাদেশ-ভারতের সাদা বলের দুটি সিরিজ নতুন সূচি অনুযায়ী হবে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
আরও পড়ুন
তানভীরের ফাইফার, রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে টিকে রইল বাংলাদেশ |
![]() |
আইসিসির ফিউচার ট্যুরস প্রোগ্রামে (এফটিপি) থাকা ভারতের এই সাদা বলের সিরিজের সফরে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা দুই দেশের। ঠিক কী কারণে এই বছর সিরিজটি হচ্ছে না, সেই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি দুই দেশের বোর্ড।
বিসিসিআই এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, দুই বোর্ডের মধ্যে আলোচনার পর এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময়সূচির সুবিধাজনক দিকগুলো বিবেচনা করে সিরিজটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আর বিসিবি বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“প্রতীক্ষিত এই সিরিজের জন্য ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় থাকবে বিসিবি। এই সফরের সংশোধিত সূচি যথাসময়ে জানানো হবে।”
শুরুটা আদর্শ না হলেও পারভেজ হোসেন ইমনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ইনিংসের প্রথম অংশটা ভালোই কাটল বাংলাদেশের। তবে তরুণ এই ব্যাটার পারলেন না ইনিংস বড় করতে। তাওহীদ হৃদয় কিছুটা লড়লেও অন্য ব্যাটারদের কেউই পারলেন সেভাবে অবদান রাখতে। শেষের দিকে দারুণ এক ক্যামিও খেললেন তানজিম হাসান সাকিব। আর এতে ভর করে সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে মোটামুটি একটা টার্গেট দিতে পারল সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ২৪৮ রানে। সর্বোচ্চ ৬৭ রান এসেছেন ইমনের ব্যাট থেকে।
বাংলাদেশের জন্য শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি। তৃতীয় ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন আগের ম্যাচে ফিফটি করা তানজিদ হাসান তামিম। আসিথা ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারি তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন মাত্র ৭ রান।
আরও পড়ুন
তানভীরের ফাইফার, রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে টিকে রইল বাংলাদেশ |
![]() |
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ইমন মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় উইকেটে একশ’র বেশি স্ট্রাইক রেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন এই দুজন, যেখানে বেশি ইতিবাচক ছিলেন ইমনই। জুটি যখন জমে উঠছিল, তখন অফ স্পিনার চারিথ আসালাঙ্কাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত, তার আগে ১৪ রান করেন ১৯ বলে।
তবে ছন্দময় ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার বোলারদের চাপে রাখেন ইমন৷ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশে পা রাখেন পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির পর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি। ভানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলিতে বোল্ড হয়ে থামে তার ইনিংস। তবে তার আগে তরুণ এই ওপেনার উপহার দেন ৬৯ বলে ৬৭ রানের দারুণ এক ইনিংস।
লিটন দাস একাদশের বাইরে থাকায় প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে পারেননি পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে। ৯ রানে দুশমন্থ চামিরার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ধরা পড়েন ডানহাতি এই ব্যাটার।
তাওহীদ একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করেন খোলসবন্দী হয়েই। অনেকদিজ পর ওয়ানডে দলে ফেরা শামীম হোসেন অবশ্য ছিলেন ইতিবাচক। ব্যাট করেন ১০০ স্ট্রাইট রেটে। তবে শর্ট বলের ট্র্যাপে তাকে ফেলেন আসিথা ফার্নান্দো। ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান করে।
শামীমের আউটে চাপ আরও বাড়ে বাংলাদেশের ওপর। জাকের আলি অনিককে নিয়ে সেটা মোকাবেলা করার পথে তাওহীদ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ২৫তম ব্যাটার হিসেবে ১ হাজার রানের ক্লাবে পা রাখেন। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে তার লেগেছে ৩৩ ইনিংস। তার চেয়ে চেয়ে কম ইনিংসে এই কীর্তি গড়েছেন কেবল দুই ব্যাটার, শাহরিয়ার নাফিস ও এনামুল হক বিজয়। দুজনেরই লেগেছিল ২৯ ইনিংস।
আরও পড়ুন
এক বছরের জন্য স্থগিত হয়ে গেল ভারতের বাংলাদেশ সফর |
![]() |
রয়েসয়ে খেলা জাকেরকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আসিথা ফের চাপে ফেলেন বাংলাদেশকে। তাওহীদের ওপর তাতে দায়িত্ব বর্তায় দলকে ভালো একটা স্কোর এনে দেওয়ার। তবে তিনিও হন ব্যর্থ, যদিও ভাগ্যকে দুষতেই পারেন তিনি।
আসিথার বলে ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন তাওহীদ। শুরুটা সাড়া দিলেও পরে ফিরে যান তানজিম হাসান সাকিব। মাঝপথে গিয়েই আর ক্রিজে ফেরার সুযোগই পাননি তাওহীদ। রান আউটে শেষ হয় তার ২ বাউন্ডারিতে সাজানো ৫১ রানের ইনিংস।
সেই সময়ে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যাবে ২২০ রানের মধ্যেই। তবে সেটা হতে দেননি তানজিম। চোখজুড়ানো সব চার-ছক্কার বাহারে ভড়কে দেন প্রতিপক্ষকে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার এক ওভারে দুই চারের পর এক লেগ স্পিনারের স্পেলের শেষ ওভারে হাঁকান দুই ছক্কা। তবে ৪৯তম ওভারেই মুস্তাফিজুরকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের ইতি টানেন হাসারাঙ্গা। ২১ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তানজিম।
ফর্মে না থেকেই জায়গা মিলেছিল প্রথম ওয়ানডের দলে। তবে সেটা কাজে লাগাতে পারেননি লিটন দাস। ফলে দ্বিতীয় ওয়ানডের দল থেকে বাদ পড়েছেন কিপার-ব্যাটার লিটন দাস। তার জায়গায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচের দলে এসেছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার শামীম হোসেন। টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছে বাংলাদেশ।
এছাড়া একাদশে এসেছে আরেকটি পরিবর্তন। চার মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ৪৭ রানে চার উইকেট পাওয়া তাসকিন আহমেদ নেই এই ম্যাচে। দলে ফিরেছেন ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ।
ম্যাচটি শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায়, সরাসরি দেখতে চোখ রাখুন টি স্পোর্টসের পর্দায়।
বাংলাদেশের একাদশ :
পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), জাকের আলী অনিক, তানজিম হাসান সাকিব, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ।
২১ ঘণ্টা আগে
১ দিন আগে
১২ দিন আগে
১২ দিন আগে
১২ দিন আগে
১৫ দিন আগে
১৫ দিন আগে
২১ দিন আগে
২২ দিন আগে
২৫ দিন আগে