২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১:১৪ পিএম

ঝাই রিচার্ডসনের লেগ সাইডে করা বল হ্যারি ব্রুকের পায়ে লেগে চলে গেল বাউন্ডারিতে। তাতেই ফুরোলো ইংল্যান্ডের প্রায় ১৫ বছরের অপেক্ষা।
২০১১ সালের জানুয়ারির পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট জিতল ইংল্যান্ড। মাঝে ম্যাচের হিসেবে টানা ১৮ টেস্টে জয়হীন থাকার পর এলো ইংলিশদের জয়।
মেলবোর্নে বিনা উইকেটে ৪ রানে দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে আজ ১৩২ রানেই গুটিয়ে যায়। পরে ১৭৫ রানের লক্ষ্য ৪ উইকেট হাতে রেখে ৩২.২ ওভারে টপকে যায় ইংলিশরা।
এর আগে ম্যাচের প্রথম দিন প্রথম ইনিংসে ১৫২ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ১১০ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।
বলের হিসেবে অ্যাশেজে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া ম্যাচের তালিকায় চতুর্থ স্থানে মেলবোর্ন টেস্ট (৮৫২ বল)। চলতি আশেজে পার্থে ৮৪৭ বলে শেষ হয়েছিল প্রথম ম্যাচ।
এছাড়া ১৮৮৮ সালে ৭৮৮ বলে শেষ হওয়া ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট তালিকার সবার উপরে। সব মিলিয়ে অ্যাশেজে দুই দিনের মধ্যে শেষ হওয়া সপ্তম ম্যাচ এই মেলবোর্ন টেস্ট।
অস্ট্রেলিয়ায় ১৮ টেস্টে জো রুটের প্রথম জয় এটি। বেন স্টোকসের ১৩ টেস্ট খেলে প্রথম জয়।
ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে আজ ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২২ রানে প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। গতকাল নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামা স্কট বোল্যান্ড ৬ রানে ফেরেন। বেন স্টোকসের বলে ৫ রান করে আউট হন জ্যাক ওয়েদারাল্ড। জশ টাংয়ের বলে রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৮ রানে ফেরেন মার্নাস লাবুশেন।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করা ট্রাভিস হেডকে বোল্ড আউট করেন ব্রাইডন কার্স। এরপর উসমান খাজা ও অ্যালেক্স ক্যারি দ্রত ফিরলে ৮৮ রানে ৬ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩১ রানের জুটি আসে অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ও ক্যামেরনের প্রচেষ্টায়। বেন স্টোকসের বলে গ্রিন আউট হলে ১১৯ রানে সপ্তম উইকেটের পতন হয় অস্ট্রেলিয়ার।
বাকি ব্যাটাররা দ্রুত ফিরলে ১৩২ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ইংল্যান্ডের পেসার ব্রাইডন কার্স ৪টি উইকেট শিকার করেছেন। অধিনায়ক বেন স্টোকস নিয়েছেন ৩টি উইকেট, জশ টাং ২টি এবং গাস অ্যাটকিনসন ১টি উইকেট নিয়েছেন।
১৭৫ রানের জবাবে শুরু থেকে বাজবল ভঙ্গিমায় খেলতে থাকে ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। ৬.৫ ওভারে ৫০ রান পূর্ণ করেন বেন ডাকেট-জ্যাক ক্রলি জুটি। চলতি অ্যাশেজে প্রথমবারের মতো ইংলিশদের হাফ সেঞ্চুরি পেরোনো জুটি পরের বলে ভাঙ্গে। স্টার্কের বলে বোল্ড আউট হয়ে ফেরেন বেন ডাকেট (২৬ বলে ৩৪ রান)।
প্রথম উইকেটের পতনের পর কার্সকে তিনে নামায় ইংল্যান্ড। তবে তাদের এই কৌশল সফল হয়নি। চার বছর পর অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে খেলতে নামা ঝাই রিচার্ডসনের বলে ৬ রান করে আউট হন কার্স।
১২ ওভারে ৭৭ রান আর হাতে ৮ উইকেট রেখে লাঞ্চ বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড। এরপর জ্যাকব বেথেল ও ওপেনার ক্রলি মিলে ইংলিশদের রানের চাকা সচল রাখেন। বোল্যান্ডের বলে ক্রলি (৪৮ বলে ৩৭ রান) এলবিডব্লিউয়ের ফাদে পড়লে ভাঙে তৃতীয় উইকেটে ৪৭ রানের জুটি।
এরপর ছোট ছোট জুটিতে ম্যাচ জয়ের দিকে এগোতে থাকে ইংল্যান্ড। চতুর্থ উইকেটে ২৫ রানের জুটি গড়েন বেথেল-জো রুট। আবারো উইকেট নেন বোল্যান্ড, উসমান খাজার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বেথেল (৪৬ বলে ৪০ রান)। পঞ্চম উইকেটে হ্যারি ব্রুকের সঙ্গে ২১ রানের জুটি গড়েন রুট।
তবে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেননি রুট। ঝাই রিচার্ডসনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে আউট হয়ে যান। মিচেল স্টার্কের বলে ২ রানে ফেরেন বেন স্টোকস। বাকি কাজটুকু করেন ব্রুক (১৮*) ও জেমি স্মিথ (৩*)।
সবচেয়ে কম বল খেলে এই ম্যাচে তিন হাজার রান (৩ হাজার ৪৬৮ বল) পূরণ করেন ব্রুক। এর আগে ৩ হাজার ৪৭৪ বলে দ্রততম তিন হাজার রান করা ব্যাটার ছিলেন তারই সতীর্থ বেন ডাকেট।
দুই ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ইংল্যান্ডের পেসার জশ টাং।
সিরিজের প্রথম তিন টেস্টে জিতে এরই মধ্যে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে স্বাগতিকরা। ৪ জানুয়ারি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হবে সিরিজের শেষ টেস্ট।
No posts available.
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৪৭ পিএম

বিপিএলের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। মাঠেই হার্ট অ্যাটাক করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ মাহবুব আলি জাকি।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ মাঠে লুটিয়ে পড়েছিলেন প্রয়াত আলি মাহবুব জাকি। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সিপিআর দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর খবর আসে, মাহবুব আলী আর নেই।
সিপিআর বা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন জীবন রক্ষাকারী এক কৌশল। এটি সাধারণত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাক হলে জীবন রক্ষা করে। হঠাৎ এ রকম অসুস্থ হয়ে পড়ার সময় থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত এই সংকটাপন্ন সময়টায় কারও জীবন বাঁচানোর জন্য সিপিআর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাহবুব আলি জাকিরের হার্ট অ্যাটাকের পর তাকে চিকিৎসকরা সহ সিপিআর দেন ঢাকা ক্যাপিটালস ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের ট্রেনার ইফতেখার ইসলাম ইফতি। অ্যাম্বুলেন্সেও দেওয়া হয় সিপিআর। তবে শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে পাড়ি দেন জাকি।
গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়ের বর্ণনা দেন ইফতেখার ইসলাম ইফতি। সংবাদমাধ্যমকে ঢাকা ক্যাপিটালসের ট্রেনার বলেন,
‘ফিজিও, ট্রেইনার বা ডক্টররা ছাড়া এই জিনিস হ্যান্ডেল করার মতো অন্য কেউ নাই। ওই টিমের ফিজিও ছিলেন। দ্রুত চিকিৎসকও আসে। আমরা ফিজিও ট্রেইনাররা ঐখানে গিয়েছি। তারপর বাকি সবাইকে সরিয়ে দেই। আমরা আমাদের প্রসেস অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করেছি। তখন ওনার সেন্স ছিল। ডাক্তার পরীক্ষা করছিল। আমরা দেখতেছিলাম পাশ থেকে ভিড় সামলানোর চেষ্টা করি।’
একটা সময় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রয়াত জাকির। তবে একের পর এক সিপিআর দেওয়ার পর নাকি আবার পালস আর স্বাভাবিকভাবে শ্বাস ফেলছিলেন তিনি। ইফতি বলেন,
‘একসময় দেখা গেল যে উনার শ্বাস আর ডাক্তার পালস পাচ্ছে না। তখন তিনি ডিসিশন নিয়েছে যে সিপিআর দিতে হবে। তো তাৎক্ষণিকভাবেই ডাক্তার সিপিআর দেওয়া শুরু করে। আমরাও তো প্রস্তুত ছিলাম কারণ এক, একার পক্ষে সিপিআর দেওয়া সম্ভব না। তো ডক্টর দুইটা সিপিআর দেওয়ার পরে, দুইবার সিপিআর দেওয়ার পরে ডক্টর আমাকে ট্রান্সফার করে। তো আমি আবার পাঁচবার সিপিআর দেই। তারপরে একসময় তিনি ফিরেও আসেনল। নড়াচড়া আর শ্বাস ফেলছিলেন।’
তারপর অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও সিপিআর দিয়ে যান ইফতি সহ অন্য ট্রেনার তুষার। হাতপাতালে নেওয়ার পর জানা যায় আর নেই মাহবুব আলি জাকি।
সবার সর্বাত্মক চেষ্টার পরও জাকির মৃত্যু দুর্ভাগ্য বলছেন ইফতি,
‘আমরা ট্রেইনার ফিজিও বা চিকিৎসকরা সবসময় চেষ্টাই করি যে এই ধরনের জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা নিতে। যদি একজনকে প্রাণে বাঁচানো যায় করা যায় তাহলে এটা অনেক গর্বের বিষয় হতো। কিন্তু আসলেই আসলেই খুব দুখের ব্যাপার হচ্ছে যে মৃত্যুটা তার হয়তো লেখা ছিল। আমরা আমাদের মত করে চেষ্টা করেছি মানে যেটা চিকিৎসকের ভাষায় যেটা করা দরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, চিকিৎসকরাও চেষ্টা করেছে, তবে আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল।’

পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) পরবর্তী পর্বের জন্য দুটি নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি যুক্ত করতে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। এই দুই নতুন দলের জন্য রিজার্ভ (ফ্র্যাঞ্চাইজি) মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রত্যেক মৌসুমে ১.৩ বিলিয়ন রুপি। অর্থাৎ ১৩০ কোটি পাকিস্তানি রুপি। পিসিবির ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা পিটিআই।
পিসিবি জানিয়েছে, নতুন দুটি দলের মালিকানা বিক্রির চূড়ান্ত নিলাম অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ জানুয়ারি। এরই মধ্যে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক দরপত্র জমা দিয়েছে। নিলামে কেউ যদি নির্ধারিত অঙ্কের চেয়ে কম দর দেয়, তাহলে সেটি গ্রহণ করা হবে না।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কয়েক সপ্তাহ আগে পিসিবির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে মালিকানা ছেড়ে দেওয়া মালতান সুলতানসের সাবেক মালিকরাও নতুন দুটি দলের জন্য প্রাথমিক বিড ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন।
এদিকে মালতান সুলতানস ফ্র্যাঞ্চাইজিটির ভবিষ্যৎ মালিকানা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। জোর গুঞ্জন রয়েছে, পিসিবি অন্তত পিএসএলের একাদশ সংস্করণ পর্যন্ত দলটি নিজেই পরিচালনা করতে পারে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা পিএসএল।
পিসিবির দাবি, নতুন দুটি দলের জন্য মোট ১২টি পক্ষ প্রাথমিক দরপত্র জমা দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বিদেশি। তবে আর্থিক ও কারিগরি যাচাই-বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে যোগ্য দরদাতাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে এরই মধ্যে পিসিবি লন্ডন ও নিউইয়র্কে পিএসএল রোডশোর আয়োজন করেছে। নতুন দুটি দলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ টানাই ছিল এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে কেন্দ্রীয় রাজস্ব বণ্টনের বিষয়েও বড় ঘোষণা দিয়েছে পিসিবি। বোর্ড জানিয়েছে, আগামী পাঁচ সংস্করণের জন্য ১১তম আসর থেকে শুরু করে—প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কেন্দ্রীয় রাজস্ব তহবিল থেকে ন্যূনতম ৮৫ কোটি পাকিস্তানি রুপি দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। কোনো মৌসুমে যদি কোনো দলের প্রাপ্য অর্থ এই গ্যারান্টিকৃত অঙ্কের নিচে নেমে যায়, সে ঘাটতি পিসিবিই পূরণ করবে।
বর্তমানে পিএসএলের ছয়টি দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ভিন্ন ভিন্ন হলেও লিগ সম্প্রসারণের পর আটটি দলই কেন্দ্রীয় রাজস্ব তহবিল থেকে সমান অংশ পাবে বলে জানিয়েছে পিসিবি।
বর্তমান দলগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী, কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের মূল্য ৩৬ কোটি রুপি, পেশোয়ার জালমির ৪৮ কোটি, ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের ৪৯ কোটি, করাচি কিংসের ৬৫ কোটি, লাহোর কালান্দার্সের ৬৭ কোটি এবং মুলতান সুলতানসের মূল্য সবচেয়ে বেশি—১৮০ কোটি পাকিস্তানি রুপি।
এ ছাড়া পিসিবি জানিয়েছে, প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি পিএসএল ড্রাফটে খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে সর্বোচ্চ ১৪ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে।
মুলতান সুলতানসের সাবেক মালিক আলী তারিন আগেই পিএসএলের আর্থিক কাঠামো নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, রাজস্ব বণ্টনে বৈষম্যের কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো লোকসানের মুখে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটেই পিসিবির নতুন আর্থিক নিশ্চয়তা ও ফ্র্যাঞ্চাইজি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

খেলার মাঠে কোচের মৃত্যু। এমন বিষাদময় ঘটনায় জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে ঢাকা ক্যাপিটালসের বোলিং কোচ মাহবুব আলী জ্যাকির। মাঠই ছিল তার ঠিকানা। মাঠেই তার মৃত্যু। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে বিসিবির চাকরি করেছেন। বাংলাদেশ নারী দলের কোচিংয়েও ছিলেন যুক্ত। জীবদ্দশায় দেখে গেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের গর্বিত সদস্য তিনি। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচের বিষাদময় এ ঘটনা বিপিএলেকে করেছে শোকাচ্ছন্ন।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ ঢাকা ক্যাপিটালস–রাজশাহী ওয়ারিয়র্স ম্যাচ শুরু হতে যখন মাত্র মিনিট বিশেক বাকি। টসের পর ফিল্ডিং সাইড ঢাকা ক্যাপিটালস ক্রিকেটাররা যখন শেষ মুহূর্তের অনুশীলনে ব্যস্ত, তখন কোচিং করাতে করাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ মাহবুব আলী জাকি। তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিপিআর দিয়ে নেওয়া হয় হাসপাতালে। সিলেটে আল হারমাইন হাসপাতালে নেওয়ার পথে জীবনপ্রদীপ নিভে যায় ৫৯ বছর বয়সী এই কোচের। বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলার মাঠে কোচের মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০০১-২ ক্রিকেট মৌসুমে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হেড কোচ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ক্রিকেট দলের পেস বোলার দৌলত জামানও আবাহনীর বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। দুটি শোকাবহ ঘটনার ম্যাচেই শোককে শক্তিতে পরিনত করে জিতেছে শিষ্যরা। দৌলত জামানের মৃত্যুশোকের দিনে আবাহনীকে হারিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশনের শিরোপার পথ মসৃন করেছে পাইলটের নেতৃত্বে ভিক্টোরিয়া। এবং সেবারের লিগের ট্রফি জিতে তা উৎসর্গ করেছেন কোচকে। সহকারী কোচ মাহাবুব আলী জ্যাকীর মৃত্যুশোকও শক্তিতে পরিণত করার সংকল্প এখন ঢাকা ক্যাপিটালসের।
এমন এক বিষাদময় ম্যাচে সিলেটে ঢাকা ক্যাপিটালস-রাজশাহী ওরিয়র্সের লড়াইটা হয়েছে দুই পাকিস্তানী বাঁ হাতি স্পিনারের মধ্যে। ঢাকা ক্যাপিটালসের ইমাদ ওয়াসিম, রাজশাহী ওরিয়র্সের মোহাম্মদ নেয়াজ-দু'জনেই পেয়েছেন তিনটি করে উইকেট। দু'জনেই করেছেন কিপ্টে বোলিং। ১১ ডট দিয়ে ৩ শিকারের বিপরীতে ইমাদ ওয়াসিমের খরচ মাত্র ১৬, সেখানে ১২ ডট দিয়ে ৩ উইকেটের বিপরীতে মোহাম্মদ নেওয়াজের খরচা ২১।
২৪ ঘন্টা আগে যে পিচে বোলাররা খেয়েছে পিটুনি, সিলেট টাইটান্সের ১৯০/৫ এর জবাব দিয়ে রাজশাহী ওরিয়র্স জিতেছে ৮ উইকেটে। সেই পিচে শনিবার রাজশাহী ওরিয়র্স ধুঁকেছে রানের জন্য। পাকিস্তানের বাঁ হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম (৪-০-১৬-১) এবং বাঁ হাতি ফার্স্ট বোলার সালমান মীর্জার (৪-০-১৭-১) বোলিংয়ে রাজশাহী ওরিয়র্স থেমেছে ১৩২/৮-এ। অথচ, ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ৫২/২ স্কোরে বড় পুঁজিরই স্বপ্ন দেখেছে রাজশাহী।
বিপিএলের উদ্বোধনী দিনের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত দ্বিতীয় ম্যাচেও রাজশাহীর সর্বোচ্চ সংগ্রাহক (২৮ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩৭)। প্রথম ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম করেছেন ২৩ বলে ২ বাউন্ডারিতে ২৪।
সহকারী কোচের মৃত্যুসংবাদে যেখানে ভেঙ্গে পড়ার কথা ঢাকা ক্যাপিটালসের, সেখানে শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে ঢাকা ক্যাপিটালস ক্রিকেটাররা। রাজশাহী ওরিয়র্সকে ১৩২/৮-এ আটকে ফেলে হিসেবি ব্যাটিংয়ে ৭ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জিতেছে রাজধানীর প্রতিনিধিত্বকারী দলটি। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ৪৩/২ স্কোরেও ব্যাকফুটে নামেনি ঢাকা ক্যাপিটালস। মোহাম্মদ নেওয়াজের বোলিং সামাল দিয়ে অন্য বোলারদের উপর চড়াও হয়েছে তাঁরা। জাতীয় দলের বাইরে ৩ বছর কাটানো কতোটা যন্ত্রনার, তা ভালই অনুভব করছেন সাব্বির রহমান রুম্মান। এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে শনিবার ফিনিশারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২১০.০০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১০ বলে ১ চার, ২ ছক্বায় হার না মানা ২১ রান। রাজশাহী ওরিয়র্সের শ্রীলংকান পেসার বিনুরু ফার্নান্ডোকে ছক্কার চুমোয় করেছেন ফিফটি। শেষ ৩০ বলে ৪৩ রানের টার্গেটকে কঠিন হতে দেননি সাব্বির-শামীম। অবিচ্ছিন্ন ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে তাদের ১৮ বলে ৩৬ রানের কল্যানে ৭ বল হাতে রেখে ঢাকা ক্যাপিটালস ৫ উইকেটে জিতে শুভ সূচনা করেছে। এই ম্যাচে এক সময়ের ফিনিশার খ্যাত নাসিরও ফিরেছেন স্বরুপে। করেছেণ অলরাউন্ড পারফর্ম (২/৩২ ও ১৯ রান)। আবদুল্লাহ আল মামুন বিপিএলের গত আসরে খেলার সুযোগ পাননি। তার আগের দুই আসর মিলিয়ে খেলেছেন মাত্র ৩ টি ম্যাচ। গড়ে ১৭.০০ রান করা এই ২২ বছর বয়সী ছেলেটি শনিবার ঢাকাকে দিয়েছেন জয়ের আবহ (৩৯ বলে ৪ চার, ১ ছক্বায় ৪৫)।
সহকারী কোচর মৃত্যুশোককে শক্তিতে পরিণত করা জয়ে ঢাকা ক্যাপিটালস বিপিএলে দিয়েছে দারুণ এক বার্তা।
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:৪৭ পিএম

দুই দিনেই শেষ হয়েছে বক্সিং ডে টেস্ট। বোলারদের দু’হাত ভরেই দিয়েছে মেলবোর্নের পিচ। আর ব্যাটারদের জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। ম্যাচ জয়ের পরও পিচ নিয়ে রাগ ঝাড়েন বেন স্টোকস। এবার ইংলিশ অধিনায়কের সুরেই মুখ মেলালেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টের উইকেট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্টিভ স্মিথ।
গতকাল ম্যাচের প্রথম দিনেই পড়ে ২০ উইকেট। আজ দ্বিতীয় দিনে আরও ১৬ উইকেট পড়ে, মোট ৩৬ উইকেট পতনের মধ্য দিয়ে মাত্র দুই দিনে শেষ হয় ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দেশটির মাটিতে প্রায় ১৫ বছরের জয়খরা কাটিয়েছে ইংল্যান্ড।
বলের হিসাবে ৮৫২ বলেই শেষ হয়েছে বক্সিং ডে টেস্ট। চার ইনিংস মিলিয়ে ট্রাভিস হেডের করা ৪৬ রানই সর্বোচ্চ। ম্যাচ শেষে মেলবোর্নের পিচ নিয়ে তাই ক্ষোভ লুকাননি স্বাগতিক দলের অধিনায়ক স্মিথ।
আরও পড়ুন
| সালাহর গোলে শেষ ষোলোতে মিসর, অপেক্ষা বাড়ল মরক্কোর |
|
মেলবোর্নের পিচে বোলারদের কি খুব বেশি সহায়তা দেওয়া হয়েছিল প্রশ্নে স্মিথ বলেন, ’আমার মনে হয় একটু বেশি ছিল। দুই দিনে ৩৬ উইকেট পড়া অনেক বেশি। সম্ভবত তারা (কিউরেটর) যতটা চেয়েছিল, তার চেয়ে পিচ একটু বেশি সহায়তা দিয়েছে। যদি ঘাস ৮ মিলিমিটারে নামানো যেত, তাহলে পরিস্থিতি একটু ভারসাম্যপূর্ণ হতো।’
ম্যাচ দ্রত শেষ হয়েছে জানিয়ে স্মিথ বলেন, ‘ম্যাচটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। আমরা যদি দুই ইনিংসে আরও ৫০ বা ৬০ রান যোগ করতে পারতাম, তাহলে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকতাম। বল কিছুটা নরম হওয়ার পর ইংল্যান্ডের ওপেনাররা যেভাবে খেলেছে, সেটাও বড় ভূমিকা রেখেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পিচ নিয়ে কড়া সমালোচনা করতে দেখা গেছে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসকেও। তিনি বলেন, ‘বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ দুই দিনেরও কম সময়ে শেষ হয়ে যাবে, এটা কাম্য নয়। যদি পৃথিবীর অন্য কোথাও এমনটা হতো, তাহলে আগুন লেগে যেত।’

রাজশাহী ওয়ারিয়র্সকে উড়িয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে পথচলা শুরু করল ঢাকা ক্যাপিটালস। তবে তাদের দলে এখন শোকের ছায়া। কারণ ম্যাচ চলাকালেই মৃত্যুবরণ করেছেন দলের সহকারী কোচ মাহবুব আলি জাকি। তাই তাকেই জয়টি উৎসর্গ করেছে ঢাকা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার ইমাদ ওয়াসিমের বাঁহাতি স্পিনের জাদুর পর আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাব্বির রহমানের চমৎকার ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটের জয় পায় ঢাকা।
টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে রাজশাহীকে ১৩২ রানে আটকে দেয় ঢাকা। পরে ১৮.৫ ওভারে সেটি তাড়া করে ফেলে মোহাম্মদ মিঠুনের নেতৃত্বাধীন দল।
ম্যাচ শুরুর আগে দলকে অনুশীলন করানোর সময়ই অসুস্থ হয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়েন জাকি। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এরপর ম্যাচ চলাকালেই আসে দেশের অভিজ্ঞ এই পেস বোলিং কোচের মৃত্যুর খবর। তাই দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন দুই দলের ক্রিকেটার, ম্যাচ অফিসিয়াল ও মাঠে উপস্থিত বাকিরা।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে জাকির জন্য দোয়া করেন ঢাকার অধিনায়ক মিঠুন।
আরও পড়ুন
| সাব্বির-মামুনদের ব্যাটে শান্তদের হারাল ঢাকা |
|
“ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমাদের জন্য এটি অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ তিনি আমাদেরকে সবসময় বাবার মতো করে দেখতেন। তাই, আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।”
“অবশ্যই প্রতিটি ম্যাচে আমরা যখন পরিকল্পনা সাজাই, আমরা জিততে চাই। বিশেষ করে এই জয়টি আমরা জাকি স্যারকে উৎসর্গ করতে চাই। দোয়া করি, আল্লাহ্ তাকে জান্নাত নসিব করুন।”
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ইমাদ ওয়াসিম। পুরস্কার গ্রহণ করে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় নিজ থেকেই জাকির জন্য দোয়া করেন পাকিস্তানি স্পিনার।
“প্রথমত ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি (জাকি) খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আজকে চলে গেলেন। দোয়া করি, আল্লাহ্ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন ও তার পরিবারকে এই শোক সইবার ধৈর্য দান করুন।”