
অপরাজিত থেকে সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। বুধবার লাল-সবুজ জার্সিধারীদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এই ম্যাচের আগে গতকাল বিশ্রামে ছিল গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। আজ স্থানীয় সময় ২টা ৪৫ মিনিট থেকে ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কলোম্বোর ক্যালানিয়া ফুটবল একাডেমীতে অনুশীলন করেন নাজমুল হুদা ফয়সালরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে রক্ষণে বেশি মনোযোগ বাংলাদেশের; প্রতিপক্ষের উইঙ্গারদের নিয়ে সতকর্তার কথা জানিয়েছেন দলের সহকারী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।
আরও পড়ুন
| বোয়েটেংয়ের হ্যাটট্রিকে জয় দিয়ে ফেডারেশন কাপ শুরু মোহামেডানের |
|
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে ২-৩ গোলে হেরেছে পাকিস্তান। ৬ পয়েন্ট নিয়ে 'বি' গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে তারা উঠে আসে সাফের শেষ চারে। এবার বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হবে পাকিস্তানকে। এই ম্যাচের আগে আজ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পাঠানো ভিডিও বার্তায় সহকারি কোচ বলেছেন, 'আমরা পাকিস্তানের শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু পাকিস্তান অনেক ভালো দল; বিশেষকরে তাদের উইঙ্গাররা দারুণ, তাদের নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের রক্ষণ নিয়ে কাজ করেছি।'
এই প্রতিযোগিতায় 'এ' গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ খেলেছে দুটি ম্যাচ। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ও নেপালের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই ছোটনের দল জয় পেয়েছে সমান ৪-০ গোলে। রক্ষণ সামলানোয় এখন পর্যন্ত সফল বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
| পয়েন্ট ভাগাভাগিতে ফেডারেশন কাপ শুরু বসুন্ধরা কিংসের |
|
পাকিস্তানের বিপক্ষেও সেভাবেই সফল হতে চায় বাংলাদেশ। এবার লক্ষ্যটা ফাইনালে ওঠা। অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ফুটবলার আহসান হাবিব রেদওয়ান বলেছেন, 'আমরা গতকাল অনুশীলন করিনি। আজ কোচের কথা মতো অনুশীলন করেছি। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠেও সেটাই করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য আগে ফাইনালিস্ট হওয়া।'
কলোম্বোর রেসকোর্স স্টেডিয়ামে বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেমিফাইনাল রাত ৮টায়। যেখানে ভারতকে মোকাবিলা করবে নেপাল।
No posts available.
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৫০ পিএম
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম

বাংলাদেশ ফুটবলের প্রাণ হামজা চৌধুরীর ক্লাব ইংল্যান্ডের লেস্টার সিটি। সোমিত সোম খেলেন কানাডা প্রিমিয়ার লিগে ক্যাভালরি এফসিতে। ইতালির ফোর্থ টায়ারের ক্লাব অলিবিয়াতে ফাহমিদুল ইসলাম। সেখানে তাঁরা কোন পরিবেশে খেলেন সেটি আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু লাল-সবুজের জার্সিতে তাঁদেরই সতীর্থ রাকিব হোসেন, শেখ মোরসালিন, জামাল ভূঁইয়াদের লিগের মাঠের পরিবেশই বা কেমন? বাংলাদেশ ফুটবল লিগের (বিএফএল) ভেন্যু নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ শেষ পর্বে থাকছে গাজীপুরের শহীদ বরকত স্টেডিয়াম।
একটা দিক থেকে গাজীপুরের শহীদ বরকত স্টেডিয়াম দেখতে বেশ লাগে। দ্বিতীয় তলায় দুই দলের ড্রেসিংরুমের সামনে একটা করে ছোট্ট গ্যালারি। উপরে যার সামিয়ানা। গ্যালারি ঠিক নয়, তুলনা টানা যেতে পারে বড় ধরনের কোনো ব্যালকনির সঙ্গে! ড্রেসিংরুমের সামনে এই জায়গাটাতেই বসেন মাঠে আসা ভিআইপিরা। এছাড়াও বসেন দলের কর্মকর্তা, স্টাফরা।
২৭ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশ ফুটবল লিগের (বিএফএল) অষ্টম রাউন্ডের খেলা। শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্স ক্লাব ও পিডব্লিউডি স্পোর্টস ক্লাব। ম্যাচের দিন নিজেদের ড্রেসিংরুমের সামনে ওই ব্যালকনিতেই দলের অন্যান্যদের সঙ্গে বসেন ফকিরেরপুলের সাধারণ সম্পাদক আহমদ আলী। পুরো ম্যাচেই তাঁরা এই জায়গাটা উৎসবমুখর করে রাখেন।
বিপরীত চিত্র পিডব্লিউডির গ্যালারিতে। সেখানে দেখা মেলেনি ক্লাবটির কোনো কর্মকর্তার। কোচ ম্যানেজাররা ছিলেন মাঠের পাশে। নিজেদের দলকে উজ্জীবিত করার মতো গ্যালারিতে ছিল না তেমন কেউ। অথচ এই মাঠটি তাদের হোম ভেন্যু। কিন্তু নিজেদের মাঠে তাদের দলই সেভাবে পায়নি সমর্থন। ক্লাবটির ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন ইফতেখারুল ইসলাম। এদিন মাঠে তিনি উপস্থিত ছিলেন। বলেন,
‘ফকিরেরপুল আসলে পুরাতন ক্লাব। এখন আমাদের অফিশিয়ালরা সবাই বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাই হয়তো ওরকম সময় করে উঠতে পারেন না।’
দায়িত্বের জায়গায় কোনো ঘাটতি নেই। তবে তিন দশক পর এবারই প্রথম তারা উঠে এসেছে বাংলাদেশ ফুটবল লিগের সর্বোচ্চ স্তরে। পেশাদার ফুটবল লিগ নিয়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতির কথাই বলেছেন ইফতেখারুল,
‘গুরুত্ব বলতে আসলে আগে আমরা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ বা ফার্স্ট ডিভিশন খেলে আসছি। স্বাভাবিকভাবে প্রিমিয়ার লিগ খেলতে এসে বাজেটের একটা ধাক্কা খাই। সেই কারণেই হয়তো খুব ভালো দল গড়তে পারিনি। এছাড়া গুরুত্বের অভাব নেই কোনো, আসলে আমরা প্রিমিয়ার লিগেই নতুন। বলতে পারেন অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে আমাদের।’
দর্শকশূন্য গ্যালারি
গাজীপুর শহরের জয়দেবপুর এলাকার রথখোলা রোডে অবস্থিত শহীদ বরকত স্টেডিয়াম। পূর্বে এটি জেলা স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ভাষা শহীদ আবুল বরকতের নামানুসারে এর নাম হয় গাজীপুর শহীদ বরকত স্টেডিয়াম। গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই এলাকা রাজবাড়ী হিসেবেও পরিচিত। স্টেডিয়ামে যেতেই আগে একটি মাঠ চোখে পড়বে যেটাকে রাজবাড়ী মাঠ বলেই চেনেন সবাই। বরকত স্টেডিয়ামের চেয়ে এখানে রাজবাড়ী মাঠ বেশি জনপ্রিয়।
গাজীপুরে খেলা দেখার জন্য টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে ৩০ টাকা করে। এদিন মাঠে এসে খেলা দেখেছেন ২০০-২৫০ জনের মতো দর্শক। ম্যাচের দিন এখানেও মাইকিং করা হয়। প্রচারণার এই কাজটি করে থাকে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন বা জেলা প্রশাসন। মাঠে বসে খেলা দেখার জন্য সাধারণ গ্যালারি আছে দুটি। পশ্চিম দিকে একটি এবং উত্তর পাশে আরেকটি। বাকি পুরো মাঠে কোনো গ্যালারি নেই। আনুমানিক ১০০০-১৫০০ দর্শকধারণ ক্ষমতা এই স্টেডিয়ামের।
স্টেডিয়াম তো নয়, যেন বিরানভূমি
শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে হওয়া কোনো ম্যাচ টিভি পর্দায় দেখার অভিজ্ঞতা যাদের হয়েছে নিশ্চিতভাবেই তাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এটা কোনো স্টেডিয়াম নাকি ধু-ধু প্রান্তর। পূর্ব এবং দক্ষিণ দিকে কোনো গ্যালারি নেই। উত্তর-দিকে একটা ছোট্ট গ্যালারি আছে বটে, উত্তর-পূর্ব দিকটা আবার ফাঁকা। টিভি পর্দায় ওই দিক থেকে ক্যামেরা বসানোর কোনো জায়গা নেই। মূলত পশ্চিম দিকে তিন তলা ভবনের উপরের তলায় বসে দেখানো হয় ম্যাচ। সামনে থেকে এই মাঠ দেখতে গিয়েও সেই অভিজ্ঞতাই হয়েছে। এখানে মূল মাঠ আর সাইড লাইনের পাশের জায়গা মিলেমিশে একাকার। মাঠের বাউন্ডারি লাইনের মধ্যে দোতলা গ্যালারি করার মতো বড় জায়গা পরে আছে। সেখানে গ্যালারি না থাকায় কোনো খোলা মাঠের মতোই মনে হয়।
গোসল করতে খেলোয়াড়দের সিরিয়াল
ড্রেসিংরুম বলতে যা বোঝায় সেটির আশা বরকত স্টেডিয়ামে না করাই ভালো। এখানে দুই দলের ড্রেসিংরুমে নেই কোনো ইলেকট্রনিক পাখা। খেলোয়াড়দের বিশ্রামের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। গোসল করা নিয়ে ধরতে হয় সিরিয়াল। কেননা এখানে দুই দলের ড্রেসিংরুমের পাশে আরেকটি রুম, সেখানেই একটি করে মাত্র দুটি ওয়াশরুম। যেখানে আবার নিয়মিত থাকে না পানি।
এই মাঠে ১৯ অক্টোবর পুলিশের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছে মোহামেডান। ১-১ গোলে হতাশার ড্রয়ের সঙ্গে সাদা-কালো শিবিরে যোগ হয়েছিল বিশ্রি অভিজ্ঞতা। ড্রেসিংরুম নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মোহামেডান অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিঠু,
‘গাজীপুরের ড্রেসিংরুমকে তো ড্রেসিংরুম বলা যায় না ভাই। ওটা একদম বাজে। আসলে পেশাদার লিগের সঙ্গে যায় না। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা নেই, ওয়াশরুম ঠিক নেই, গোসলখানা ঠিক নেই— মানে একদম বিশ্রী একটা অবস্থা। আমরা যখন গেছি তখন তো পানিও ছিল না! একটা ওয়াশরুমে আমরা দুই দল মিলে গোসল করেছি। জিনিসটা কেমন না? ওদের ড্রেসিংরুমে গিয়ে আমাদের গোসল করতে হয়েছে।’
শক্ত মাঠ, শঙ্কায় টেপিং করে নামে খেলোয়াড়েরা
গত মৌসুম থেকে নতুন করে গাজীপুরে হচ্ছে পেশাদার ফুটবল লিগের খেলা। মৌসুমের শুরুতে পিচ নিয়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও সময় যত গড়িয়েছে মূল মাঠের অবস্থা কিছুটা ভালো হয়েছে। মোহামেডান অধিনায়ক মাঠ নিয়ে বলেন,
‘মাঠের কথা যদি বলেন... মাঠ আগের চেয়ে মোটামুটি ভালো।’
পিডব্লউডির ফরোয়ার্ড স্বাধীনের ভাষ্য,
‘শুরুতে যেভাবে পেয়েছিলাম তার চেয়ে এখন কিছুটা ভালো। তবে মাঠ অনেক শক্ত। ইনজুরি এড়াতে হাটুতে টেপিং করে খেলতে হয় আমাদের। আসলে কি, বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা আর কুমিল্লার মাঠ বাদে সবগুলো মাঠই অনেক শক্ত। তবে একটু বেশি।’
জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হান্নান মিয়া বলেন,
‘এই মাঠটা এখন জেলা প্রশাসকের অধীনে। তবে দুই দলের সহায়তায় আমরা মাঠে নিয়মিত পানি দেওয়া এবং অনেকবার রোলার করেছি। যা যা করা লাগে সবই করছি।’
মাঠে রোলার করা এবং ঘাস কাটার কাজটা নিয়মিত হয়েছে সেটা সামনে থেকে দেখলেও বোঝা যায়। কেননা মাঠে অসমতল বা উঁচু-নিচু খুব একটা নেই।
নিয়মিত পানি দেওয়ার পর মাঠে এখনও সবুজাভ আসেনি। সেটি না আসার কারণ থাকতে পারে মাটির গুনাগুণ এবং বিচিত্র প্রজাতির ঘাস। এসব মাঠে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম নেয়। তার জন্য আলাদা করে পরিচর্যা দরকার, কিংবা বিশেষজ্ঞ কিউরেটর দরকার। সেটি অবশ্য দেশের কোনো জেলা স্টেডিয়ামেই হয় না।
অপরিসর অবকাঠামো
স্টেডিয়ামের বড় সমস্যা প্রশাসনিক ভবন। স্বল্প পরিসরের এই ভবনে কোনোমতে দুটি ড্রেসিং রুম করা গেলেও নেই বাদ বাকি সুযোগ সুবিধা। এমনকি প্রেসবক্সও নেই এখানে। খেলা সরাসরি সম্প্রচারের জন্য আরও বিপাকে পড়তে হয়। পিসিআর রুম নিচে, আর স্টেডিয়ামের মূল ভবনের তিন তলার এক ব্যালকনিতে কোনো মতে ক্যামেরা বসিয়ে দেখানো হয় খেলা। এই এলাকায় বিদ্যুতবিভ্রাট চরম আকারে। তখন নিজেদের ব্যবস্থা করে নেয় ব্রডকাস্টার চ্যানেল। তবে সমস্যায় পড়েন খেলোয়াড়েরা। ড্রেসিংরুমে থাকাকালীন বিদ্যুৎ গেলে গরমে হাপিত্যেশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
এনায়েত-রজনিকান্তদের গাজীপুর কোথায় হারাল?
গাজীপুরের অনেক ফুটবলার ঢাকার মাঠে সুনাম কুড়িয়েছেন। দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার এনায়েতুর রহমান খান, স্টপার আজমত, উইংব্যাক রউফ বাবু, ইকবাল, রজনী কান্ত বর্মণরা গাজীপুর থেকে উঠে আসেন। জাতীয় ফুটবল দলে না খেলেও আলো ছড়িয়েছেন আরও অনেকেই। দুর্ভাগ্য হচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাজীপুর ফুটবল সঠিক পথে হাঁটতে পারেনি। বলা যেতে পারে পরিচর্যা পায়নি। ঢাকার খুব কাছের জেলা হয়েও ফুটবলে উন্নতির ছোঁয়া পায়নি গাজীপুর।

দূরের পাইন গাছটার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মোহাম্মদ সালাহ। হাতে কফির মগ, তাতে কোনো মনোযোগ নেই। মিশরীয় ফরোয়ার্ডের চোখ আটকে আছে ঢাল বেয়ে লাফিয়ে বেড়ানো একটি কাঠবিড়ালিতে।
মুহূর্তটুকু নিঃশব্দ, মুক্ত—ঠিক যেমনটা তিনি নিজে হতে চান।
হঠাৎ খেয়াল হয়, কফি ঠান্ডা। খাওয়ার অনুপযোগী। তার জন্য থেমে থাকেনি, যেমনটা ২০২৫ সালও থামেনি।
সালাহর মতোই অনেক ফুটবলারের জন্য ২০২৫ বছরটি ছিল অস্থিরতার, অনিশ্চয়তার। আবার কারও জন্য সাফল্যের ঝলকানিতে ভরা। কেউ হেঁটেছেন সুখের সুড়ঙ্গে, কেউ আটকে গেছেন হতাশার অন্ধকারে। কেউ দেখেছেন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্ত, কেউ বা নতুন ভোরের আলো।
ইংলিশ ও ইউরোপিয়ান ফুটবলে আলোচিত ফুটবলার ও কোচদের জন্য ২০২৫ কেমন ছিল—অম্ল-মধুর সেই গল্পগুলোই ফিরে দেখা যাক।
হ্যারি কেইন, ভাঙল হতাশার ডেডলক: টটেনহ্যাম হটস্প্যার ও লেস্টার সিটি ঘুরে বুন্দেসলিগা জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখ— দীর্ঘ যাত্রাতেও ট্রফিতে চুমু আঁকার স্বাদ পাননি ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। সমালোচকরা তো বলেই দিয়েছিলেন—কেইনকে দিয়ে গোল-অ্যাসিস্ট যাই হোক, অন্তত ট্রফি জেতা হবে না।
২০২৫ সালে সেই আফসোস সুখে রুপ নেয়। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে বুন্দেসলিগা জেতা হয় কেইনের। অথচ তার আগে দেশ ও ক্লাবের জার্সিতে মোট ৬৯৪টি ম্যাচ খেলা হয়েছিল ৩২ বর্ষী স্ট্রাইকারের।
আফসোসের বিষয় হচ্ছে শিরোপার নির্ধারণের দিন স্টেডিয়ামে বসে খেলাটি উপভোগ করতে হয়েছিল কেইনকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে লিপজিগের বিপক্ষে সেদিন মাঠে নামা হয়নি তাঁর। অবশ্য মৌসুম জুড়ে দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। ৩১ ম্যাচে গোল করেন ২৬টি। সবমিলিয়ে দুর্দান্ত বছর পার করেন। খুলেন গেরো।
উসমান দেম্বেলে, পরিশ্রমেরই বেসেছেন ভালো: নিজেকে গড়ে-ভেঙে আবার ভেঙে-গড়ে এমন একটা রূপ দিয়েছেন উসমান দেম্বেলে- যা কেবল দেখতেই সুন্দর। পরিশ্রমেরই তিনি বেসেছেন ভালো। সফলতাও পেয়েছেন। ২০২৫ সালের ব্যালন ডিঅর, ফিফা দ্য বেষ্ট ও গ্লোব সকার পুরস্কার জিতেছেন ফরাসী এই ফরোয়ার্ড।
২০১৭ সালে পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর এক বর্ষপঞ্জিকায় সবগুলো একক সম্মাননার পুরস্কার জিতেছেন প্যারিস সেন্ট জার্মেইন তারকা।
২০২৪-২৫ মৌসুমে পিএসজিকে ট্রেবল জেতাতে বড় ভূমিকা রাখেন দেম্বেলে। একই সঙ্গে ফরাসি জায়ান্টরার প্রথমবারের মতো জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, গোল মেশিন: ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নেতৃত্বে পর্তুগাল ২০২৫ সালের ইউরোপিয়ান নেশনস লিগের শিরোপা জিতে। ইউরো ২০২৪-এ গোল করতে ব্যর্থ হয়ে আবেগতাড়িত হওয়ার এক বছর পর এই জয় তাঁর জন্য বিশেষ অর্থ বহন করে।
রোনালদো বলেছিলেন,
“পর্তুগালের হয়ে জেতা সবসময় বিশেষ। ক্লাবের অনেক শিরোপা আছে, কিন্তু দেশের হয়ে জেতার আনন্দ আলাদা। এই প্রজন্মের অধিনায়ক হওয়া গর্বের। জাতীয় দলে শিরোপা জেতা সর্বদা শীর্ষ মুহূর্ত।”
এবার তাঁর লক্ষ্য ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে বড় ছাপ ফেলা, যা তিনি আল-নাসর এবং জাতীয় দলের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা দিয়ে পূরণ করতে চাইবেন।
রোনালদো নিজেও বেশ দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। ১ হাজার গোলের মাইলফলক স্পর্শের জন্য হন্যি হয়ে দৌড়াচ্ছেন। সৌদি প্রো লিগে প্রায় প্রতি ম্যাচে গোল পাচ্ছেন। ২০২৫-২৬ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচে ১৩ গোল করেছেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, শূন্যতা আর বিতর্ক: ২০২৪ ব্যালন ডিঅরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ব্রাজিলের রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। দুর্ভাগ্য ভর করেছিল তাঁকে। ম্যানচেস্টার সিটির রদ্রি জিতে নেন সেরার পুরস্কার। অথচ তার আগের বছরই রিয়ালকে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতাতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ভিনি।
ব্যালন ডিঅরের হাত ছোঁয়া দুরত্ব থেকে ফিরে আসার ব্যাপারটি মনে দাগ কাটে ভিনির মনে। পরবর্তীতে ঘোষণা দেন আরও দশগুণ শক্তিতে ফিরবেন তিনি।
দশগুণ শক্তিতে ফিরে আসা হয়েছে কিনা, সেটা স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে এটা স্পষ্ট বেশ ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন ২০২৫-২৬ মৌসুমে। তবে ২০২৪-২৫ মৌসুম বেশ খারাপ সময় যায় তাঁর। ফলে ২০২৫ সালের ব্যালন ডিঅর, ফিফা দ্য বেষ্ট কিংবা গ্লোব সকারের বর্ষসেরা পুরস্কারের তালিকার লিস্ট থেকে বাদ পড়েন ব্রাজিলের লেফট উইঙ্গার।
২০২৫ সালে ৩৪ ম্যাচে ভিনির পা থেকে এসেছে ৮ গোল। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাত্র একবার শুরুর একাদশে নেমেছেন। ১৪ ম্যাচ ধরে ঘরের মাঠে গোলশূন্য থেকেছেন। সবমিলিয়ে কোচ জাবি আলোনসোর সঙ্গে বোঝাপড়া তিক্ততায় রূপ নেয়।
আলেকাজান্ডার ইসাক, উঁচু হাইপ নিচু পারফরম্যান্স: ২০২৫-২৬ মৌসুমে রেকর্ড ট্রান্সফার ফি ছিল আলেকজান্ডার ইসাকের। নিউক্যাসেল ইউনাইটেড থেকে ১২৫ মিলিয়ন ইউরোতে লিভারপুলে যোগ দেন সুইডিশ স্ট্রাইকার। অথচ বছরজুড়ে হাপিত্যেশেই কাটাতে হয়েছে তাঁকে।
সুইডেনের এই স্ট্রাইকার বর্তমানে দলের বাইরে। চোট সমস্যার কারণে খুব একটা মাঠেও দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। প্রিমিয়ার লিগে নতুন মৌসুমে ম্যাচ খেলেছেন ১০টি। গোল করেছেন দুইটি, অ্যাসিস্ট একটি।
নিকোলাস জোবের, আর্সেনালের সেটপিস মাস্টার: ২০২৫-২৬ মৌসুমে সেটপিস থেকে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে আর্সেনাল। গার্নাররা প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে শীর্ষে। এর কারণ অবশ্য মিকেল আরতেতার সহকারী কোচ নিকোলাস জোবের।
ইংল্যান্ডের এই সহকারী কোচ এতই দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন, যা ফুটবল বিশ্বের নামি ক্লাবগুলোকে বেশ ভাবাচ্ছে।
আর্সেনালের সেট-পিস এখন প্রতিপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। ডিক্লান রাইস ও বুকায়ো সাকার ঝুঁকিপূর্ণ ডেলিভারির সঙ্গে গ্যাব্রিয়েল মাগালহেসের এয়ারিয়াল থ্রেট মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি, যা আর্সেনালকে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে রেখেছে।
আরতেতার পরিকল্পনাও আগে থেকেই কার্যকর দেখাচ্ছে। অনেক ইংলিশ ক্লাব এখন ডেড-বল পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যেখানে লিভারপুলের মতো দল এই দিক পরিচালনায় সমস্যায় পড়ছে।
রুবেন আমোরিম, ফাঁকা বুলি: নিজের কথায় অটল তিনি। কৌশল কিংবা ফরমেশন পরিবর্তন করবেন না বলে একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এমনকী স্বয়ং ঈশ্বর এলেও নাকি তাঁকে তাঁর অবস্থান থেকে সরাতে পারবেন না বলেও জানিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত রুবেন আমোরিমের ভাগ্যে কি জুটেছিল, তা সবার জানা। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম ১২ মাস ৩-৪-৩ ফরমেশনে খেলা পরিচালনা করেন আমোরিম। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ১৫তম স্থানে থেকে যাত্রা শেষ হয় তাঁদের।
২০২৫–২৬ মৌসুমে ভঙ্গুরদশা কাটিয়ে সফলতার পথে ম্যান ইউনাইটেড। বর্তমানে তারা প্রিমিয়ার লিগে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট পেলে শীর্ষ চারে উঠে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
লিগে আসন্ন ম্যাচে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে পাচ্ছে না ইউনাইটেড। ব্রায়ান এমবেউমো ও আমাদ দিয়ালো আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে ব্যস্ত সময় পার করছে। অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেসও চোটে ছিটকে পড়েছেন।
লিওনেল মেসি, হাত দিয়ে যা ছুঁয়েছেন, তা হয়েছে স্বর্ণ: জাতীয় দল কিংবা বার্সেলোনা- লিওনেল মেসি কি করেছেন দলের জন্য না বলে বরং বলা যেতে পারে, কী করেননি তিনি।
আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো কিংবা বার্সেলোনাকে একাধিকবার ট্রেবল জেতাতে বড় ভূমিকা ছিল এলএমটেনের। তার মধ্যে ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যালন ডিঅর তাঁর দখলে।
আর্জেন্টিনা কিংবা কাতালান ক্লাবেই মেসির জয় যাত্রা থেমে থাকেনি। মেজর সকার লিগে ইন্টার মিয়ামিকে স্বপ্নযুগ এনে দিয়েছেন তিনি। প্রথমবারের মতো মিয়ামিকে শিরোপা জিতিয়েছেন মেসি। আর ব্যক্তিগত অর্জনে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন তিনি। এটি তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারের রেকর্ড ৪৮তম শিরোপা।
আর্নে স্লট, অম্ল-মধুর যাত্রা: গত এক বছরে আর্নে স্লট যে পরিমাণ আবেগের ভেতর দিয়ে গেছেন, তা অনেক ম্যানেজার পুরো ক্যারিয়ারেও অনুভব করেননি। শুরুটা ছিল আনন্দ ও গর্ব দিয়ে—লিভারপুলকে ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা এনে দেওয়ার সাফল্য। তাও আবার চার ম্যাচ হাতে রেখেই, যা প্রমাণ করে কতটা দক্ষতার সঙ্গে তিনি কিংবদন্তি ইয়ুর্গেন ক্লপের উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্বের চাপ সামলেছেন।
সম্প্রতি অবশ্য আর্নে স্লটকে আরেকটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। চলতি মৌসুমে লিভারপুলের দুর্বল পারফরম্যান্সের দায় নিজের কাঁধে চাপানো হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে সালাহ প্রকাশ্যে বলেছেন, স্লট তাঁকে একপ্রকার বাসের নিচে ফেলে দিয়েছেন। গত মৌসুমে শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সালাহকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচে সালাহকে দলে ফিরিয়ে এনে বিষয়টির ইতি টানার চেষ্টা করেন স্লট। যদিও দুজনের সম্পর্ক এখনো কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে, তবু আফ্রিকা কাপ অব নেশনস শেষ করে সালাহ লিভারপুলে ফিরে আসবেন—এমনটাই এখন অন্তত স্পষ্ট।
দিয়োগো জোতা, রিমেম্বার দ্য নেম: ২০২৫ সালে ওয়াটার স্ট্রিটে বিজয় উৎসব চলাকালে পল ডয়েলের গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ১৩০ জন আহত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অ্যানফিল্ডে নেমে আসে আরেকটি গভীর শোক। দিয়োগো জোতার মৃত্যুতে পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে গভীর বেদনা।
পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ড ৩ জুলাই স্পেনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ভাই আন্দ্রে সিলভার সঙ্গে প্রাণ হারান। দুর্ঘটনার সময় তিনি সদ্য বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং প্রাক-মৌসুম অনুশীলনে ফেরার পথে ছিলেন। তার মৃত্যু গোটা ফুটবল বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়।
লিভারপুলের প্রকাশ্য মুখ হিসেবে আর্নে স্লট এই হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি অত্যন্ত সংযম ও মর্যাদার সঙ্গে সামাল দেন। জোতার প্রয়াণ নিয়ে তার বক্তব্য ছিল শান্ত, সংবেদনশীল এবং গভীর শ্রদ্ধায় ভরা।
লুইস এনরিকে, দ্য মাস্টার মাইন্ড: ফুটবলের পরিসংখ্যান, রেকর্ড ও ইতিহাস সংরক্ষণে কাজ করা জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইএফএফএইচএস ২০২৫ সালের বর্ষসেরা ব্যক্তিদের র্যাঙ্কিং তৈরি করে। যেখানে গত বছর ক্লাব ফুটবলের সেরা কোচ নির্বাচিত হয়েছেন লুইস এনরিকে। ফরাসি ক্লাব পিএসজির এই স্প্যানিশ কোচ এত বেশি ভোট পেয়েছেন যে, দ্বিতীয় স্থানে থাকা কোচ তাঁর অনেক পেছনে।
২০২৫ সালে এনরিকের পিএসজি মোট ৬টি ট্রফি জিতেছে—উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, লিগ আঁ, কাপ দ্য ফ্রান্স, ট্রফি দ্য চ্যাম্পিয়নস, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ।
আইএফএফএইচএসের বর্ষসেরা পুরস্কার ছাড়াও এনরিকে জিতেছে ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার, গ্লোব বর্ষসেরার পুরস্কার। ২০২৫-২৬ ফুটবল মৌসুমেও তাঁর দল দারুণ ছন্দে।
মোহাম্মদ সালাহ, আশায় গুড়ে বালি: যেখান থেকে শেষ করেছিলেন তিনি, শুরুটা সেখান থেকে হলে মোহাম্মদ সালাহর সঙ্গে নতুন দিনের স্বপ্ন বাধতে পারত লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা যেমন রেসে রয়েছেন পিছিয়ে, তেমনই হতাশায় ভুগছেন সালাহ নিজেও।
বর্তমানে আফ্রিকান নেশনস কাপে অংশ নিতে ছুটিতে সালাহ। জাতীয় দলে অংশ নেওয়ার আগে বেশ ভুগেছেন তিনি। থেকেছেন সাইট বেঞ্চে। তবে ফেরার আগে অ্যাসিস্ট ও গোল করেছেন তিনি।
সবমিলিয়ে সালাহর এই বছরটা একদমই মন্দ গেছে। প্রিমিয়ার লিগে ২০২৫-২৬ মৌসুমে মাত্র ৪ গোল করেছেন তিনি। এর জন্য তাকে ১৪ বার মাঠে নামতে হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও পারফরম্যান্স বেশ ম্যাড়মেড়ে। গোল দেখা পেয়েছেন একটি। তবে আফ্রিকা নেশনস লিগে তিন ম্যাচে গোল পেয়েছেন দুটি। অথচ গেল আসরে প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল ছিল সালাহর। জিতেছিলেন গোল্ডেন বুট।
সালাহর এই করুণ দশার কারণে কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে তার একটা ভাঙন শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, মানোমালিন্যের জেরে অ্যানফিল্ড ছাড়তে পারেন তিনি। যদিও ব্যাপাারটা দিল্লি বহুদূরের মতোই ঝুলে আছে।
কার্লো আনচেলত্তি, রিয়াল টু ব্রাজিল: অনেক নাটকের পর ব্রাজিলের ইতিহাসের প্রথম বিদেশি কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন কার্লো আনচেলত্তি। আনচেলত্তির অধীনে এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে ব্রাজিল জিতেছে ৪টিতে, ২টি করে ড্র ও হার।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পুরোটা সময়জুড়েই ধুঁকেছে ব্রাজিল। সরাসরি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলতে পারবে কিনা, সে নিয়েই ছিল শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত লাতিন অঞ্চলে পঞ্চম হয়ে আগামী বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে ৫ বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা।
গত মে মাসে ইউরোপের অন্যতম সফল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ব্রাজিল দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন আনচেলত্তি। বর্তমানে তার চুক্তি রয়েছে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত।
স্পেনের ক্রীড়া দৈনিক এএস জানিয়েছে, খুব শিগগিরই আনচেলত্তির সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে যাচ্ছে সিবিএফ, যার মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া হবে ২০৩০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত।
ব্রাজিলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৬৬ বছর বয়সী এই কোচ। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্ত হলো নেইমারকে জাতীয় দলে না ফেরানো। সাবেক পিএসজি তারকা ব্রাজিলের ফুটবলে বড় প্রভাবশালী হলেও, পুরোপুরি ফিট না হলে তাকে দলে রাখা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আনচেলত্তি।
রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান, জুভেন্টাস, পিএসজি ও বায়ার্ন মিউনিখের মতো ক্লাবকে কোচিং করানো আনচেলত্তির বিশাল অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার অধীনে এখনও ব্রাজিল তাদের সেরা রূপে না ফিরলেও, মাঠের খেলায় ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলছে।
জাবি আলোনসো, নতুন স্বপ্নের কারিগর: ২০২৪-২৫ মৌসুম কেমন গেছে রিয়াল মাদ্রিদের তা সবারই জানা। শূন্য হাতে নতুন বছরে পা দিতে হয়েছিল লস ব্লাঙ্কোসদের। কার্লো আনচেলত্তির প্রস্থানের পর ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড় জাবি আলোনসোকে দায়িত্ব দেয় রিয়াল।
রিয়ালের দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ ভালোভাবেই এগুচ্ছিলেন জাবি। চলতি পথে নানা প্রতিবন্ধকার মধ্য দিয়ে পার হতে হয় তাঁকে। আন্তকোন্দল, কৌশল এবং সিনিয়র খেলোয়াড়দের রোষানলে পড়তে হয় জাবিকে। যা প্রভাব ফেলে খেলাতেও।
লা লিগায় শুরুর দিকে শীর্ষে ছিল রিয়াল। একটা পর্যায়ে তা দখলে নেয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়নস লিগেও লড়াই অব্যহত রয়েছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দলের।
আইতানা বোনমাতি, ব্যালন ডি'অর রাজকন্যা : মাত্র ২৭ বছর বয়সে প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে টানা তিনবার ব্যালন ডি'অর জিতেন স্প্যানিশ তারকা আইতানা বোনমাতি। এই অসাধারণ কীর্তির মাধ্যমে তিনি ফুটবল ইতিহাসের সেরাদের কাতারে জায়গা করে নিয়েছেন, যেখানে আছেন লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো কিংবদন্তিরা।
১৯৯৮ সালের ১৮ জানুয়ারি স্পেনের কাতালনিয়ার ভিলানোভা ই লা গেলত্রু শহরে জন্ম নেওয়া বোনমাতি সবশেষ ফিফা দ্য বেষ্ট ও গ্লোব সকার বেষ্ট জিতে নেন। এককথায় দারুণ সময় পার করেছেন এই স্পেনিয়ার্ড।

বছরটা মোটেও ভালো যায়নি রিয়াল মাদ্রিদের। ২০২৫ সালে কোনো শিরোপার ছোঁয়াই পায়নি স্প্যানিশ জায়ান্টরা। গোল করা কিংবা গোল ঠেকানো—কোথাও সুবিধা করতে পারেনি রিয়াল। পুরো বছর আক্রমণভাগের বেহাল দশার সঙ্গে ক্লাবটির রক্ষণভাগও ছিল ভঙ্গুর। বর্নাঢ্য ইতিহাসে এমন ব্যর্থতায় ভরা একটি হতাশার বছরই দেখতে হয়েছে লস ব্লাঙ্কোসদের।
কার্লো আনচেলোত্তির বিদায়ের পর ঘরের ছেলে জাবি আলোনসোকে নিয়ে শুরুটা দারুণ করেছিল রিয়াল। তবে আশার বেলুন চুপসে যেতে খুব একটা সময় লাগেনি। ‘গ্যালাক্টিকো’ দল নিয়েও মাঠে ছন্নছাড়া পারফরম্যান্সে সমর্থকদের হতাশ করেছে ইউরোপের সবচেয়ে সফল ক্লাবটি। দলের আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা কিলিয়ান এমবাপে নিয়মিত গোল পেলেও বাকিরা ছিলেন যেন কেবল দর্শক। ফরাসি ফরোয়ার্ডের ওপর চরম নির্ভরশীলতা রিয়ালের সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
চোটের কারণে রক্ষণ ছিল খাপছাড়া। ২০২৫ সালে রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্স নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই করেছে প্রতিপক্ষ দলগুলো। গোল খাওয়ায় এই বছর ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে রিয়ালের অবস্থান দুইয়ে। ৬৭ ম্যাচে ৮০ গোল হজম করেছে জাবির দল। কিলিয়ান এমবাপে-ভিনিসিয়ুস জুনিয়রদের চেয়ে বেশি গোল হজম করেছে শুধু টটেনহ্যাম হটেম্পার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটির জালে ৮৪ বার বল পাঠিয়েছে প্রতিপক্ষরা। রিয়ালের গোলমুখ লক্ষ্য করে ৭৯৩টি শট নিয়েছে বিপক্ষ দলের ফুটবলাররা।
রিয়ালের অবস্থা আরও বাজে হতে পারতো। তবে ক্লাবটির গোলপোস্টে দেয়াল হয়ে সেটা হতে দেননি থিবো কোর্তোয়া। ২০২৫ সালে ১৭৪টি সেভ করেছেন বেলজিয়ান গোলকিপার। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে যা সর্বোচ্চ।
অন্যান্য ক্লাবগুলো থেকে গোল করাতেও অনেক পিছিয়ে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। লা লিগায় ১৮ ম্যাচে রিয়াল গোল করেছে ৩৬ টি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার চেয়ে যা ১৫ গোল কম। ৩৬ গোল করতে এমবাপে-ভিনিসিয়ুসরা শট নিয়েছে ১২৮ টি। গোল করার হার মাত্র ২৮.১২ শতাংশ। যেখানে বার্সার ১৩৬ শট নিয়ে গোল পাওয়ার হার ৩৫.৫ শতাংশ।
এ বছর গোল করার এই হারে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের ৬৬টি দল রিয়ালের চেয়ে এগিয়ে। মজার বিষয় হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা টটেনহ্যামই এ তালিকায় সবার ওপরে (৪৬.৫ শতাংশ)। শুধু লক্ষ্যে শট নেওয়ার হিসেবে রিয়ালের ওপরে আছে শুধু বার্সেলোনা (১৩৬) ও বায়ার্ন মিউনিখ (১২৯)।
কোচের ওপর আস্থাহীনতা ক্রমশই প্রকট হচ্ছে। পাশাপাশি দলের ভেতরে অন্তঃকোন্দলের গুঞ্জন তো আছেই। সব মিলিয়ে পুরোনো বছরের হতাশা ঝেড়ে এখন নতুন বছরে সবকিছু নতুন করে শুরু করাটাই এখন রিয়ালের বড় চ্যালেঞ্জ।

ফুটবলের প্রাণ সমর্থকরা। গ্যালারি থেকে তাঁরা শুধু খেলাই দেখেন না, রং-বেরঙের জার্সি পরে, স্লোগান আর হর্ষধ্বনিতে উৎসাহ দিয়ে দলের জয়ের আনন্দকে দ্বিগুণ করেন। খেলোয়াড়রাও সমর্থকদের সমর্থনে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পান। প্রিয় দলকে সাহস যোগাতে অনেক সময় পাগলামোও করে বসেন অনেকে।
আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে (আফকন) ডি আর কঙ্গোর এক সমর্থকের অভিনব সমর্থন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভক্ত দলের পুরো ম্যাচে ঠাঁয় দাড়িয়ে ছিলেন। তাঁর দাড়িয়ে থাকার কায়দা দেখে মনে হচ্ছিল, অবিকল কোনো মূর্তি!
আফকনে গত শনিবার সেনেগালের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করা ম্যাচে কঙ্গোর ওই সমর্থক ১১৫ মিনিট ‘লুমুম্বা পোজ’ নিয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছেন। মূলত দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এবং দেশের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বার ভাষ্কার্য্যের ভঙ্গিতে দাড়িয়ে ছিলেন কঙ্গোর সমর্থক। লুমুম্বা ১৯৬০ সালে কঙ্গো স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক কারণে নিহত হন। তাঁর ভাবমূর্তি, কথা ও প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত ৬৫ বছর পর আজও কঙ্গো ও আফ্রিকায় একটি ঐতিহাসিক প্রতীক বা চেতনার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
কঙ্গোর অনেক কবি সাহিত্যিকের মতে, ‘লুমুম্বা পোজ’ শুধু একটি শারীরিক ভঙ্গিই নয় — এটি ধৈর্য, প্রতিরোধ, জাতীয় গর্ব ও ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের প্রতীক। ফুটবল স্টেডিয়ামে এমন ভঙ্গি নেওয়া মানে কেবল খেলা দেখা নয়, বরং লুমুম্বার আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও ঐতিহাসিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো বলে মনে করে কঙ্গোর সমর্থকরা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী লুমুম্বার চেহারা কিংবা মুখোভঙ্গির সঙ্গেও দারুণ মিল আছে ওই সমর্থকের। সেনেগালের বিপক্ষে ম্যাচের পর গতকাল রাতে বতসোয়ানার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জেতা কঙ্গোর ম্যাচেও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভঙ্গিতে মূর্তির মতো দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
চলতি আফকনে দারুণ খেলছে ডি আর কঙ্গো। গ্রুপ ‘ডি’ থেকে দুই জয় ও এক ড্রয়ে সাত পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থেকে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে দলটি। ৫২ বছর পর বিশ্বকাপে খেলারও দ্বারপ্রান্তে আছে আফ্রিকার দেশটি। আফ্রিকান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে-অফ ফাইনালে টাইব্রেকারে নাইজেরিয়াকে ৪-৩ গোলে আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফ নিশ্চিত করে তারা।

বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারে কতভাবে যে গোল করেছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো সে হিসেব করতে গেলে দিন পার হবে। বাঁ পায়ে, ডান পায়ে, হেডে, উরুঁ দিয়ে বুকের সাহায্যে জালে বল জড়িয়েছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। কালেভদ্রে দু’একটি অদ্ভুত গোলও করেছেন রোনালদো। সবশেষ গতকাল রাতে দেখা গেল ‘সিআর সেভেনের’ আরেকটি অন্যরকম এক গোল।
সৌদি প্রো লিগে গতকাল আল ইত্তিফাকের বিপক্ষে ম্যাচের ৬৭ মিনিটের ঘটনা। ১-১ গোলে সমতায় ম্যাচ। আক্রমণে উঠেছে আল নাসর। ডি-বক্সে হেডে বল জালে জড়ানোর চেষ্টা করেন রোনালদো। তবে ব্যর্থ হয়ে পড়ে যান আল নাসরের ৪০ বছর বয়সী ফুটবলার।
তারপর আরেক দফা লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করে আল নাসরের আরেক ফুটবলার। সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হওয়ার পর বল পেয়ে যান আল নাসরের প্রথম গোলদাতা ফেলিক্স। আল ইত্তিফাকের গোলকিপারের বাঁ পাশ লক্ষ্য করে শট নেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। তবে তাঁর ওই শট লাগে রোনালদোর পিঠে, দিক পরিবর্তন করে বল জড়িয়ে যায় জালে, গোল! রোনালদোর গোল।
এমন অপ্রত্যাশিত গোল পেয়ে অবাক হওয়ার সঙ্গে জাতীয় দলের সতীর্থ ফেলিক্সের সঙ্গে উদযাপনেও মেতে ওঠেন রোনালদো। সৌদির এই লিগে দু’জনই সমান ১৩ গোল করে শীর্ষে আছেন। হাজার গোলের পথে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা রোনালদোর ক্যারিয়ার গোল হলো ৯৫৭টি।
আল ইত্তিফাকের বিপক্ষে ভাগ্যক্রমে পাওয়া এই গোলের পরও অবশ্য জয় নিশ্চিত করতে পারেনি আল নাসর। রোনালদোর পিঠ দিয়ে করা গোলের পর ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পরশেষ দিকে গোল খেয়ে এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় আল নাসররে।
এ মৌসুমে আল নাসরের জয়রথ থামাতে পারছিল না কেউ। লিগে প্রথম ১০ ম্যাচের সবক’টিতে জেতে জর্জে জেসুসের দল। অবশেষে আল নাসরকে রুখে দিল আল ইত্তিফাক। জোড়া গোল করে এই ম্যাচে ইত্তিফাকের নায়ক ডাচ ফরোয়ার্ড জর্জিনিও ওয়াইনালডাম। ১৬ মিনিটে প্রথম গোলের পর ৮০ মিনিটে জোড়া গোল পূর্ণ করে দলকে এক পয়েন্ট এনে দেন তিনি।
এই ড্রয়ের পর ১১ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষেই আছে আল নাসর। সমান ম্যাচে তিন পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে আল তাউন।