টুর্নামেন্টের ফরম্যাটের কারণেই মাঠে একটি বল গড়ানোর আগেই ভারত পেয়ে গিয়েছিল ফেবারিট তকমা। সেটা জাসপ্রিত বুমরাহ ছিটকে যাওয়ার পরও। কারণ, একমাত্র দল হিসেবে যে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সবগুলো ম্যাচ এক ভেন্যুতে খেলার সুযোগ পাচ্ছে রোহিত শর্মার দল। অনুমিতভাবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে খেলছে দলটি। আর তাদের সামনে সর্বশক্তির অস্ট্রেলিয়া, যারা টেনেটুনে চলে এসেছে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে। তবে আইসিসি ইভেন্টে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মানেই যে পুরনো অনেক হিসাব-নিকাশের ব্যাপ্তিও।
আর সেখানেই শক্তি-অভিজ্ঞতায় অনেকে পিছিয়ে থেকেও অজিরা এই ম্যাচের আগে পেতে পারে বাড়তি আত্মবিশ্বাস। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ফাইনালের আগে অপরাজিত ছিল ভারত। এরপর তাদের জয়রথ থামিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া। এবার অবশ্য তিনি তো ননই, দলে নেই আরও দুই তারকা পেস বোলার মিচেল স্টার্ক ও জস হ্যাজেলউডও।
ফলে নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম অনভিজ্ঞ এক বোলিং লাইনআপ নিয়েই এই টুর্নামেন্টে খেলছে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জস ইংলিসের বীরত্বে জয় পেলেও, ৩৫১ রান হজম করাটা ফুটিয়ে তোলে দলটির বোলিং দুর্বলতা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচেও ২৭০ রানের বেশি দিয়ে ফেলেন তারা। বৃষ্টি বাগড়া না দিলে হয়ত ওই ম্যাচটা জিতেও জেট অস্ট্রেলিয়া, কারণ সেরা ফর্মে যে হাজির হয়েছিলেন ট্রাভিস হেড।
ঠিক এই নামটির কারণেই দুর্বল এক বোলিং লাইনআপ নিয়েও ভারতের বিপক্ষে আশার আলো আছে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতকে পেলেই যে বিশেষভাবে জ্বলে ওঠেন এই মারকুটে ব্যাটার। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলেন হেডই। আগে-পরে রোহিত-কোহলিদের বিপক্ষে তার রয়েছে অবিশ্বাস্য ভালো ফর্ম।
তবে স্রেফ হেডের ওপর ভরসা করে ভারতকে আটকানোর ছক কষলে ভুলই করবে অস্ট্রেলিয়া। কারণ, স্টিভেন স্মিথ, মার্নাস লাবুশেনরা নেই সেরা ছন্দে। ইংলিস-কেরি-ম্যাক্সওয়েলদের ওপর তাই থাকবে বাড়তি দায়িত্ব। আর সে কাজটা আরও কঠিন হবে দুটি কারণে, যা ভারতের বিপক্ষে তাদের লড়াইকে করে তুলেছে ‘অসম’।
চোটের কারণে তিন তারকা বোলার হারানো অস্ট্রেলিয়াকে যে এই ম্যাচ দিয়ে প্রথমবার খেলতে হবে দুবাইতে, যেখানে ভারত কিনা খেলে ফেলেছে তিনটি ম্যাচ। পাকিস্তানে তিনটি ম্যাচ খেলা অজিদের মানিয়ে নিতে হবে তুলনামূলক স্লো, স্পিন উইকেটে।
পাশাপাশি কন্ডিশনের সাথে দারুণভাবে মানিয়ে নেওয়া ভারতের রয়েছে আসরের সেরা স্পিন শক্তি। রবীন্দ্র জাদেজা, আকসার প্যাটেল, কুলদীপ ইয়াদাভের সাথে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে খেলেন রহস্য স্পিনার ভারুণ চক্রবর্তী। আর প্রথম ম্যাচেই নেন ৫ উইকেট। ফলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে চার স্পিনার খেলার।
আর সেটা হলে, অস্ট্রেলিয়াকে সামলাতে হবে চারজন বিশ্বমানের স্পিনারদের, যাদের সবাই আছেন সেরা ফর্মে। অন্যদিকে ব্যাটারদের মধ্যে শ্রেয়াস আইয়ার আছেন রানের মধ্যে। শুবমান গিল ও বিরাট কোহলি করে ফেলেছেন একটি করে সেঞ্চুরি। বল ও ব্যাট হাতে সেরা ছন্দে আছেন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া, যা ভারতকে সুযোগ করে দিচ্ছে চার স্পিনার খেলানোর।
সব মিলিয়ে তাই ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটি রোহিতের দলের জন্য ২০২৩ বিশ্বকাপের প্রতিশোধের মঞ্চ, আর স্মিথ-হেডদের জন্য অসম লড়াইয়ে সব চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিয়ে আইসিসি ইভেন্টে আরও একবার নিজেদের রাজত্ব বজায় রাখার।
শেষ হাসি তাহলে কার? উত্তর জানতে চোখ রাখুন টি স্পোর্টসের পর্দায়, ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায়।
No posts available.
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৮ এম
টুর্নামেন্টে প্রথমবার একাদশে জায়গা পেয়েই বাজিমাত করলেন নাসুম আহমেদ। কিপটে বোলিংয়ে দলকে জিতিয়ে নিজেও পেলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। একইসঙ্গে গড়লেন বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ সেরা হওয়ার রেকর্ড।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৮ রানের জয়ে বড় অবদান রেখেছেন নাসুম। ৪ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ১১ রানে তিনি নিয়েছে ২ উইকেট।
নতুন বলে ৩ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়েছেন নাসুম। পরে শেষ দিকে চাপের সময় বোলিংয়ে ফিরে দিয়েছেন মাত্র ৪ রান। তার স্পেলেই মূলত বাংলাদেশের দিকে ঘুরে গেছে খেলা।
আরও পড়ুন
আফগানিস্তানকে হারিয়ে টিকে রইল বাংলাদেশ |
![]() |
এমন বোলিংয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাসুম। ৩৯ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি তার পঞ্চম ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
বাংলাদেশের হয়ে নাসুমের চেয়ে বেশি ম্যাচ সেরার রেকর্ড আছে শুধু মাত্র সাকিব আল হাসানের। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১২৯ ম্যাচ খেলে ১২ বার ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার।
আর নাসুমের সমান ৫ বার ম্যান অব দা ম্যাচ হওয়ার রেকর্ড আছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও লিটন কুমার দাসের। তবে মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ১৪১ ম্যাচ আর লিটন ১১৩ ম্যাচ। তাদের চেয়ে অনেক কম ম্যাচ খেলেই ৫ বার হলেন নাসুম।
টস জিতে লিটন কুমার দাস বলেছিলেন, ১৬০ রান করতে পারলে ভালো হবে। শেষ দিকের ব্যাটিং ব্যর্থতায় তা করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে বোলাররা পুষিয়ে দিলেন সেই ঘাটতি। আফগানিস্তানকে বেধে রেখে সুপার ফোরে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।
আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবারের ম্যাচে ৮ রানে জিতল বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ১৫৪ রানের পুঁজি পায় তারা। জবাবে ১৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি আফগানিস্তান।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের দুইশতম ম্যাচ জেতার পাশাপাশি গ্রুপে তিন ম্যাচে দুই জয় ও এক পরাজয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে বাংলাদেশ। এখনও সুপার ফোরের টিকেট নিশ্চিত নয় তাদের।
আরও পড়ুন
দাবি না মানায় সংবাদ সম্মেলন বর্জন পাকিস্তানের |
![]() |
‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে লড়বে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। শ্রীলঙ্কা জিতলে সরাসরি সুপার ফোরে উঠে যাবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। আর আফগানিস্তান জয় পেলে। তিন দলের হবে সমান ৪ পয়েন্ট। তখন নেট রান রেটের বিবেচনায় পরের রাউন্ডে যাবে দুই দল।
বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখা জয়ের বড় কারিগর নাসুম আহমেদ। টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই বাঁহাতি স্পিনের জাদু দেখান তিনি। আফগান ইনিংসের প্রথম ওভারে উইকেট মেডেনসহ ৪ ওভারে মাত্র ১১ রানে ২ উইকেট নেন নাসুম।
এছাড়া ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
রান তাড়ায় নাসুমের প্রথম বলে এলবিডব্লিউ হন সেদিকউল্লাহ অতল। পরের ওভারে ইব্রাহিম জাদরানের ক্যাচ ছাড়েন রিশাদ হোসেন। তবে পঞ্চম ওভারে অভিজ্ঞ ওপেনারকেও এলবিডব্লিউ করে দেন নাসুম আহমেদ।
আরও পড়ুন
রশিদদের ১৫৫ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ |
![]() |
পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৭ রান করতে পারে আফগানিস্তান।
এরপর গুলবদিন নাইবকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তবে রানের গতি তেমন বাড়াতে পারেননি তারা দুজন। দলকে ৫০ পার করিয়ে রিশাদের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১৪ বলে ১৬ রান করা নাইব।
পরে গুরবাজও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রিশাদের পরের ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। ২টি করে চার-ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৩১ বলে ৩৫ রান।
আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টায় সফল হননি মোহাম্মদ নবী। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে যান ১৫ বলে ১৫ রান করা অভিজ্ঞ ব্যাটার।
আরও পড়ুন
টানা দুই জয়ে সিরিজ সিকান্দার রাজাদের |
![]() |
এরপর সাইফ হাসানের বোলিংয়ে ঝড় তুলে সমীকরণ কিছুটা নিজেদের দিকে টানেন ওমরজাই। পরে তাসকিন আহমেদের বলেও ছক্কা মারেন আফগান অলরাউন্ডার। তবে পরের বলেই তাকে ফিরিয়ে দেন তাসকিন।
১৬ বলে ৩০ রান করা ওমরজাইয়ের বিদায়ের পর ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। শেষ ৪ ওভারে ৪৫ রান বাকি থাকে আফগানিস্তানের। মুস্তাফিজের ওভারে ছক্কা-চার মেরে ১৪ রান নেন রশিদ খান। তবে ১৮তম ওভারে নিজের স্পেলের শেষ ওভার করতে এসে মাত্র ৪ রান দেন নাসুম।
এরপর মুস্তাফিজের প্রথম বলেই নো লুক শটে বাউন্ডারি মেরে আবার রোমাঞ্চ ছড়ান রশিদ। তবে পরের বলেই তাকে আউট করে দেন অভিজ্ঞ পেসার। ওভারের তৃতীয় বলে আল্লাহ্ মোহাম্মদ গাজানফারকেও আউট করে ম্যাচ বাংলাদেশের পকেটে নিয়ে আসেন মুস্তাফিজ।
শেষ ওভারে ২২ রানের সমীকরণে দুইটি ছক্কা মেরে দেন নুর আহমেদ। তবে শেষ বলে তাকে আউট করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন আহমেদ।
আরও পড়ুন
পাকিস্তানের পক্ষে ভুয়া মন্তব্য, মুখ খুললেন পন্টিং |
![]() |
এদিন খেলা শুরুর আগে পিচ রিপোর্টে রবী শাস্ত্রি ও রাসেল আর্নল্ড বলেন, পাওয়ার প্লের পূর্ণ ফায়দা নেওয়া জরুরি। সে যাত্রায় সফল হয় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৯ রান করতে পারে তারা।
তবে এরপর হারিয়ে ফেলে ধারাবাহিকতা। ১০ ওভার পর্যন্ত দলের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৮৭ রান। কিন্তু পরের ১০ ওভারে আর মাত্র ৬৭ রান করতে পারে তারা।
পারভেজ হোসেন ইমন না থাকাতে তানজিদ হাসান তামিমের উদ্বোধনী সঙ্গী হন সাইফ হাসান। এশিয়া কাপে নিজেদের পূর্বের দুই ম্যাচে ব্যর্থ ছিল শুরুর জুটি। এদিন যখন উদ্বোধনী জুটিতে ফাটল ধরে, তখন দলীয় স্কোর ৬৩ রান।
সপ্তম ওভারে রশিদ খানের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাইফ হাসান। আফগান অধিনায়কের বল স্লগ করতে চেয়েছিলেন সাইফ। লাইন মিস করে ঘটে তার বিপদ। তাতে ২৮ বলে ৩০ রান করতে পারেন।
সাইফের বিদায়ের পর ওয়ান ডাউনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি লিটন কুমার দাস। নিজের স্পেলের প্রথম বলেই লিটনকে ফেরালেন আফগান বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার নুর আহমেদ। ১১ বলে ৯ রান করে এলবিডব্লিউ হন লিটন।
আরও পড়ুন
'তোমরা আফ্রিদি হতে যেও না’ |
![]() |
নুরের ফুল লেংথ ডেলিভারি সুইপ করার চেষ্টায় ব্যাটে লাগাতে পারেননি লিটন। এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদনেও সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সফল হয় আফগানিস্তান। ১১ বলে ৯ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দুই উইকেট পতনের পরও ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন তানজিদ হাসান। মাত্র ২৮ বলে তিনি করেন ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটি। এরপর আর টিকতে পারেননি। নুরের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন তানজিদ। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ৩১ বলে ৫২ রান।
তানজিদ ফেরার পরই গতি হারায় বাংলাদেশ। ক্রিজে থিতু হয়েও কিছু করতে পারেননি শামীম হোসেন পাটোয়ারী, তাওহিদ হৃদয়রা। শেষ দিকে জাকের আলি অনিকও হতাশ করলে ১৬০ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে বোলারদের কল্যাণে সেটিই জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৪/৫ (সাইফ ৩০, তামিম ৫২, লিটন ৯, হৃদয় ২৬, শামীম ১১, অনিক ১২*, সোহান ১২*; ফারুকি ৪-০-৩৭-০, ওমরজাই ৩-০-১৯-১, গাজানফার ৩-০-৩২-০, রশিদ ৪-০-২৬-২, নবী ২-০-১৭-০, নুর ৪-০-২৩-২)
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৬ (সেদিকউল্লাহ ০, গুরবাজ ৩৫, ইব্রাহিম ৫, নাইব ১৬, নবী ১৫, ওমরজাই ৩০, জানাত ৮, রশিদ ২০, নুর ১৪, গাজানফার ০, ফারুকি ২*; নাসুম ৪-১-১১-২, তাসকিন ৪-০-৩৪-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২৮-৩, রিশাদ ৪-০-১৮-২, শামীম ১-০-১৬-০, সাইফ ৩-০-৩৯-০)
ফল: বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী
এশিয়া কাপের ম্যাচ রেফারি অপসারণের দাবিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। পিসিবির সেই চিঠি নাকচ করে দেয় আইসিসি। যার জেরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরা ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন বর্জন করে দলটি।
কেন বা কি কারণে সংবাদ সম্মেলনে বর্জন করেছে তার সমূহ কারণ জানায়নি পিসিবি। ধারণা করা হচ্ছে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে টসের সময়কার ঘটনায় (করমর্দন কাণ্ড) আইসিসির ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট পিসিবি। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আবদার ছিল, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেক আইসিসি।
আরও পড়ুন
রশিদদের ১৫৫ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ |
![]() |
আইসিসির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে টসের সময় হাত না মেলানো নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের সঙ্গে ম্যাচ রেফারি পাইক্রফটের কোনো ভূমিকা ছিল না। ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, পাইক্রফট কেবল মাঠে উপস্থিত থেকে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) কর্মকর্তাদের বার্তা পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলি আগাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে কিছু না বলে এসিসির নির্দেশই তিনি জানিয়েছেন।
অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। মুদ্র নিক্ষেপণ পরীক্ষায় পাসে তাই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র ভাবেননি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। আবু ধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামের কন্ডিশন বিবেচনায় আগে ব্যাটিং নিতেন, প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক রশিদ খানেরও ছিল সহজ স্বীকারোক্তি। এশিয়া কাপে সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১৫৫ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখার মিশনে চার পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হয় পারভেজ হোসেন ইমন, শেখ মেহেদি হাসান, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব। তাদের জায়গায় একাদশে ডাক পড়ে সাইফ হাসান, নুরুল হাসান সোহান, নাসুম আহমেদ ও তাসকিন আহমেদের।
আরও পড়ুন
পাকিস্তানের পক্ষে ভুয়া মন্তব্য, মুখ খুললেন পন্টিং |
![]() |
এদিন খেলা শুরুর আগে পিচ রিপোর্টে রবী শাস্ত্রি ও রাসেল আর্নল্ড বলেছেন, পিচটি এমন যে কিছু ডেলিভারি খুব গতির সঙ্গে চলে যাবে বাউন্ডারিতে। পাওয়ার প্লের পূর্ণ ফায়দা নেওয়া জরুরি। সে যাত্রায় অবশ্য সফল বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৯ রান করতে পারে তারা। তবে ম্যাচ পুরোনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে ফেলে ধারাবাহিকতা।
১০ ওভারে ডিংকস বিরতির সময় পর্যন্ত দলের রান ছিল ৮৭। অর্থাৎ ওভার প্রতি রান টিম টাইগার্সের রান ছিল ৮.৭০। কিন্তু ইনিংস শেষে তা গিয়ে ঠেকে ওভারপ্রতি ৭.৭০ রানে।
আজ একাদশে ইমন না থাকাতে তানজিদ হাসান সাকিবের সঙ্গী হয়েছেন সাইফ হাসান। এশিয়া কাপে নিজেদের পূর্বের দুই ম্যাচে ব্যর্থ ছিল শুরুর জুটি। আজ যখন উদ্বোধনী জুটিতে ফাটল ধরে, তখন দলীয় স্কোর পার করে ৬৩ রান। সপ্তম ওভারের শেষ বলে রশিদ খানের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাইফ হাসান। আফগান অধিনায়কের বল স্লগ করতে চেয়েছিলেন সাইফ। লাইন মিসে ঘটে বিপদ। তাতে ২৮ বলে ৩০ রান করতে পারেন।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ ফাইনাল খেললে খুব অবাক হবো না |
![]() |
সাইফের বিদায়ের পর যথারীতি ওয়ান ডাউনে নামেন লিটন দাস। হংকং (৫৯) ও শ্রীলঙ্কার (২৮) বিপক্ষে দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক আজ সুবিধা করতে পারেননি। মূলত সেট হওয়ার আগেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। স্পেলের প্রথম বলেই লিটনকে ফেরালেন আফগান বাঁ-হাতি রিস্ট স্পিনার নুর আহমেদ।
নুরের ফুল লেংথ ডেলিভারি সুইপ করার চেষ্টায় ব্যাটে লাগাতে পারেননি লিটন। এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদনেও সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সফল হয় আফগানিস্তান। ১১ বলে ৯ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ক্রিজে নতুন ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়।
দুই উইকেট পতনের পরও ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন তানজিদ হাসান। এরই মাঝে বাংলাদেশকে একটি কীর্তির সাক্ষী করেন তিনি। ২০২৫ সালে এখন সবচেয়ে বেশি ছক্কা বাংলাদেশের। আজ টাইগার ব্যাটাররা মোট ৫ টি ছক্কা হাঁকায়। সবচেয়ে বেশি ছক্কা তানজিদের (৩টি)।
১২তম ওভারে অর্ধশতকের দেখা পাওয়া তানজিদ ক্রিজ ছাড়েন পরের ওভারে। এবারও আফগানদের উৎসব এনে দেন নুর আহমেদ। তরুণ স্পিনারের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন তানজিদ। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৩১ বলে ৫২ রান করে ফিরতে হয় তাকে।
আরও পড়ুন
'তোমরা আফ্রিদি হতে যেও না’ |
![]() |
তানজিদ ফেরার পরই ম্যাচ কিছুটা গতি হারায়। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি শামীম হোসেন। বাইশ গজে থিতু হয়েও ২৬ রানে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ডিপ এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ হয়ে ফেরেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার হয়ে দুটি করে উিইকেট তোলেন রশিদ খান ও নুর আহমেদ। অপর উইকেটটি ছিল আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৪/৫ (সাইফ ৩০, তামিম ৫২, লিটন ৯, হৃদয় ২৬, শামীম ১১, অনিক ১২*, সোহান ১২*; ফারুকি ৪-০-৩৭-০, ওমরজাই ৩-০-১৯-১, গাজানফার ৩-০-৩২-০, রশিদ ৪-০-২৬-২, নবী ২-০-১৭-০, নুর ৪-০-২৩-২)
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৩ রানে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচটাও নিজেদের করে নিল জিম্বাবুয়ে। সফরকারী নামিবিয়াকে চেপে ধরে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সিকান্দার রাজার দল। টানা দুই জয়ের ফলে আগামী বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ রূপ নিয়েছে নিয়মরক্ষার।
আজ জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে টস জিতে অতিথিদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান সিকান্দার রাজা। শুরুতে ব্যাটিং নেমে বেশ ভালোভাবেই এগোতে থাকেন নামিবিয়ার দুই ওপেনার জ্যান ফ্রাইলিঙ্ক ও ম্যালান বিনমেন ক্রুগার। ফ্রাইলিঙ্ক বোল্ড হলে দলীয় ২৭ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে।
ওয়ানডাউনে নামা জান নিকোল লফটি-ইটনকে নিয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন ম্যালান ক্রুগার। দলকে বিপদমুক্তের পাশাপাশি নিজেদের স্কোর লম্বা করার মিশনে নামেন দুজন। এ যাত্রায় দল পায় ৭১ রানের জুটি। ওপেনার ম্যালান ৪৫ রানে সাজঘর মুখো হলে লম্বা এই জুটি ভাঙে। তার দেখানো পথে হাঁটেন লফটি-ইটনও। তিনি ৩০ বলে স্কোরকার্ডে তোলেন ৪৭ রান।
আরও পড়ুন
পাকিস্তানের পক্ষে ভুয়া মন্তব্য, মুখ খুললেন পন্টিং |
![]() |
টপঅর্ডারের তিন ক্রিকেটারের বিদায়ের পর লেজের সারির ব্যাটাররা সুবিধা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৯ রান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় নামিবিয়াকে।
জবাবে শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন স্বাগতিক দলের দুই ওপেনার মারুমানি ও ব্রায়ান বেনেট। ইনিংসের ৫.৫ ওভারের সময় বেনেট যখন কট আউট হয়ে বাইশগজ ছাড়েন ততক্ষণে অনেকটা বিপদমুক্ত দল। ক্রিজ ছাড়ার আগে নিজ আমলনামায় ৪০ রান যোগ করেন বেনেট, তখন দলীয় স্কোর ছিল ৫৯।
পরের হিসাব সহজ করে দেন মারুমানি। ৩৬ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন স্বাগতিক ওপেনার। এরপর ব্রেন্ডন টেইলর ও রায়ান বার্ল মিলে জয়ের হিসাব মিলিয়ে দেন।