মেহেদী হাসান শ্রাবণ যেন বনে গেলেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, আর ভ্যালেরিউ তিতা যেন কার্লো আনচেলত্তি। ফেডারেশন কাপের ট্রফিটা জিতে তার আনন্দের নেই সীমা। মৌসুমের দ্বিতীয় ট্রফিটা জেতার উদ্যাপনে সব সমালোচনা হয়ে গেল ম্লান। ফুটবলাররাও তাকে ঘিরে আনন্দে আত্মহারা, চতুর্থবারের মত ফেডারেশন কাপের শিরোপা ঘরে তুলছে বসুন্ধরার ক্লাবটা।
তিরে এসে আরও একবার তরি ডুবলো আবাহনীর। শিরোপার খুব কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দেখা হলো না তাদের। ২০২৩ সালে মোহামেডানের কাছে পেনাল্টি শুটআউটে হারের ক্ষতটা যেন আরও একবার ফিরে এলো। তাতে গেল তিন মৌসুমের মধ্যে দুইবারই আকাশী-নীলদের সন্তুষ্ট থাকতে হলো রানার্স আপ হয়েই।
দুই দিনে শেষ হওয়া ১২০ মিনিটের লড়াই ১-১ সমতার পর টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে আবাহনীকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের শিরোপাটা ধরে রেখেছে বসুন্ধরা কিংস। সেই সঙ্গে তারা হয়ে গেছে আবাহনী ও মোহামেডানের পর সবচেয়ে বেশি ফেডারেশন কাপ জেতা দলও। কোয়ালিফায়ারের প্রথম লেগে আবাহনীর কাছে শুটআউটে হারের তেতো স্বাদটাই যেন মারুফুল হকের দলকে ফিরিয়ে দিয়েছে তিতার কিংস।
গেল মঙ্গলবার যার শুরু, তার সমাপ্তি ঘটেছে এই মঙ্গলবারে এসে। মাঝে ঝড়ের বাগড়া, রেফারি বিতর্ক, আর কার্ডের বন্যা তো ছিলই। সাথে বদলে যায় স্টেডিয়ামের নামও। এত সব নাটকীয়তার পরও আলাদা করা যায়নি দুই দলকে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারেই দেখা মেলে সমাপ্তি। যেখানে কিংসের সুপার হিরো শ্রাবণ, আর মনে করিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানোকে।
টেবিল বদলে এদিন ট্রফি উঠেছে পোডিয়ামে। দর্শকের সংখ্যাটা কমলেও শেষ ১৫ মিনিটে উত্তেজনার ছিল না কমতি। যেখানে দশজনের কিংস চাপ সামলে ম্যাচ নিয়ে যায় টাইব্রেকারে। আর সেখানে এমেকার শট ঠেকিয়ে মৌসুমজুড়ে সমালোচনা সঙ্গী হওয়া শ্রাবণই বনে গেছেন নায়ক।
এর আগে গেল মঙ্গলবার ১-১ এর সমতায় ১০৫ মিনিটে আলোক স্বল্পতায় মাঠ ছাড়ে দুই দল। কিংসের হয়ে গোলটা করেছিলেন লেসকানো, আর আবাহনীর হয়ে সমতা টেনেছিলেন ইব্রাহিম।
ফেডারেশন কাপের সেরা ফুটবলারের পুরষ্কারটা উঠেছে তপু বর্মনের হাতে। গোলের সাথে রক্ষণ দুটি সমান তালে সামলানোর পুরষ্কারই পেলেন কিংস অধিনায়ক। তিন গোল করে ইব্রাহিম আর তপু দু’জন আবার সেরা গোলস্কোরারের পুরস্কারটা জিতেছেন। আর দুর্দান্ত ছন্দে থাকা মিতুল মারমা হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার।
No posts available.
৩১ আগস্ট ২০২৫, ৯:৩৬ পিএম
স্প্যানিশ লা লিগায় রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে লিড নিয়েও জিততে পারল না বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষের মাঠে খেলতে গিয়ে রোববার রাতের ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করল স্পেনের জায়ান্ট ক্লাবটি।
ম্যাচের প্রথমার্ধে পেনাল্টি থেকে বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন লামিন ইয়ামাল। পরে আর গোল করতে পারেনি তারা। ফ্রান পেরেজের গোলে একটি পয়েন্ট পাওয়া নিশ্চিত করে ভায়োকানো।
ম্যাচ জুড়ে বল দখলের লড়াইয়ে বরাবরের মতোই এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। কিন্তু আক্রমণে আধিপত্য দেখায় স্বাগতিক ক্লাব। তাদের ১২ শটের ৬টিই ছিল লক্ষ্য বরাবর। এর মধ্যে বেশিরভাগ ঠেকিয়ে দিয়ে বার্সেলোনাকে হারতে দেননি হোয়ান গার্সি।
লিগের তিন ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চার নম্বরে এখন বার্সেলোনা। পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রিয়াল মাদ্রিদ। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ভায়োকানোর অবস্থান দশম।
ভায়োকানোর মাঠে শুরু থেকেই আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে বার্সেলোনা। কিন্তু ডি-বক্সের মধ্যে ঢুকে সে অর্থে কোনো সুযোগ কাজে লাগাতে পারছিল না তারা।
ম্যাচের ৪০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে দেন ইয়ামাল। ডি-বক্সের মধ্যে তিনি নিজেই ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টিটি পায় বার্সেলোনা।
প্রথমার্ধেই লিড বাড়ানোর সুযোগ পান দানি ওলমো। কিন্তু পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করেন ওলমো।
৬৭ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরায় ভায়েকানো। ইসি পালাসনের কর্নার থেকে আসা বলে শট নেন সেখান অরক্ষিত থাকা পেরেস। পোস্টে লেগে জালে জড়ায় বল।
এরপর আরও কিছু সুযোগ তৈরি করে স্বাগতিক ক্লাব। তবে তাদের হতাশ করেন হোয়ান গার্সিয়া। ৮৬তম মিনিটে গোল করেও অফসাইডের কারণে সেটি পায়নি ভায়োকানো।
শেষ বাঁশি বাজার আগে ম্যাচের শেষ সুযোগ পান ইয়ামাল। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শট করায় গোল পাওয়া হয়নি বার্সেলোনার।
দারুণ ফুটবলে ফাইনাল পর্যন্ত এলেও শেষ বাধা উতরাতে পারল না ইন্টার মায়ামি। সিয়াটল সাউন্ডার্সের কাছে লিগস কাপের শিরোপা জেতা হলো না লিওনেল মেসিদের।
নিজেদের ঘরের মাঠ লুমেন ফিল্ডে বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালের ম্যাচে মায়ামিকে ৩-০ গোলে হারায় সিয়াটল। ম্যাচে সে অর্থে কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি মায়ামি।
যুক্তরাষ্ট্রের লিগস কাপে এটিই সিয়াটলের প্রথম শিরোপা। এর আগে ২০২১ সালে রানার্স-আপ হয়েছিল তারা। আর টুর্নামেন্টে ২০২৩ সালে একমাত্র ট্রফি জেতা মায়ামি এবারই প্রথম পেলো রানার্স-আপ হওয়ার স্বাদ।
মেসি, লুইস সুয়ারেজদের বিবর্ণ দিনে প্রথমার্ধে সিয়াটলকে এগিয়ে দেন ওসাজ ডি রোজারিও। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের শেষ দিকে ছয় মিনিটের মধ্যে বাকি দুই গোল করেন অ্যালেক্স রোলডান ও পল রথ্রোক।
বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থেকে পুরো ম্যাচে গোলের জন্য ১০টি শট করেন মেসি, সুয়ারেজরা। কিন্তু একটিও লক্ষ্য বরাবর ছিল না। এর বিপরীতে ১১ শট করে ৬টিই লক্ষ্যে রাখে সিয়াটল। পেয়ে যায় ৩টি গোল।
ম্যাচের ২৬ মিনিটে সিয়াটলকে এগিয়ে দেন ডি রোজারিও। গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে মায়ামি। কিন্তু কার্যকর কোনো আক্রমণ তারা করতে পারেনি। উল্টো একপর্যায়ে রেফারির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে পড়েন মেসি।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেও চলতে থাকে মায়ামির ব্যর্থ প্রচেষ্টা। উল্টো ৮৪ মিনিটে তাদের হতাশায় ডুবিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন রোলডান। আর পাঁচ মিনিট পরে পেনাল্টি পেয়ে মায়ামির কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন রথ্রোক।
লিগস কাপের ফাইনাল হেরে যাওয়ার প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ আড়াই সপ্তাহের মধ্যেই পাচ্ছে মায়ামি। মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর সিয়াটলের মুখোমুখি হবেন মেসিরা।
অপরাজিত দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ধ্রুপদী ফুটবলের আশা ছিল সকলের। সেই প্রত্যাশার অল্পই মেটাতে পারল লিভারপুল ও আর্সেনাল। ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচের শেষ দিকে ফ্রি কিকে পার্থক্য গড়ে দিলেন লিভারপুলের ডমিনিক সোবোসলাই।
অ্যানফিল্ডে রোববার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আর্সেনালকে ১-০ গোলে হারাল লিভারপুল। এই জয়ে তিন ম্যাচে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে গেল লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। সমান ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আর্সেনাল।
পুরো ম্যাচে তেমন আক্রমণই করতে পারেনি কোনো দল। ম্যাচ জুড়ে গোলের জন্য ১১টি শট করলেও মাত্র একটি লক্ষ্যে রাখতে পারে আর্সেনাল। বিপরীতে ৯টি শট করে লিভারপুলের ফুটবলাররা ৩টি শট রাখেন জাল বরাবর।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর মনে হচ্ছিল, ড্র অবস্থায়ই শেষ হবে ম্যাচ। কিন্তু ম্যাচের ৮১ মিনিটে নিজেদের অর্ধে কার্টিস জোন্সকে ফাউল করে বসেন আর্সেনালের মার্টিন জুবিমেন্ডি। গোলের প্রায় ৩০ গজ দূরে ফ্রি কিক পেয়ে যায় লিভারপুল।
সেই ফ্রি-কিক থেকে চমৎকার এক শটে বল জালে জড়ান সোবোসলাই। যার সুবাদে প্রিমিয়ার লিগে টানা গোলের রেকর্ড ৩৭ ম্যাচে উন্নীত করে লিভারপুল। এছাড়া ২৬ বছরের মধ্যে অ্যানফিল্ডে আর্সেনালের বিপক্ষে ফ্রি-কিক থেকে গোল করা প্রথম ফুটবলার হয়ে যান সোবোসলাই।
এই পরাজয়ে থামল আর্সেনালের ১৫ ম্যাচের অজেয় যাত্রা। প্রিমিয়ার লিগে এর আগে গত বছর নভেম্বরে সবশেষ প্রতিপক্ষের মাঠে হেরেছিল আর্সেনাল। প্রায় দশ মাস ও ১৫ ম্যাচ তাদের একই তেতো স্বাদ উপহার দিলো লিভারপুল।
এএফসি উইমেনস চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে জয় পেয়েছে ভুটানের ক্লাব রয়েল থিম্পু কলেজ এফসি (আরটিসি)। ক্লাবটির জার্সিতে গোল পেয়েছেন বাংলাদেশের মিডফিল্ডার স্বপ্নারানী। এই ম্যাচে শুরুর একাদশে স্বপ্না ছাড়াও ছিলেন শামসুন্নাহার সিনিয়র ও তহুরা খাতুন। তবে বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার ও শাহেদা আক্তার রিপা ছিলেন না প্রথম একাদশে।
রোববার ‘ডি’ গ্রুপের খেলায় লাওসের ক্লাব মাস্টার এফসিকে ৫-০ গোলে হারিয়েছে আরটিসি। লাও ন্যাশনাল স্টেডিয়াম এদিন ভুটানের ক্লাবের জন্য ছিল টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম জয়। আগের দুই ম্যাচে তাইওয়ানের ক্লাব কাওশিউংয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে এবং উত্তর কোরিয়ার ক্লাব নায়েগোহায়াংয়ের বিপক্ষে ৭-০ গোলে পরাজিত হয় আফঈদাদের ক্লাব। তিন পয়েণ্ট নিয়ে এই প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিল আরটিসি।
খেলার প্রথম মিনিটেই আরটিসি প্রায় গোলের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, তবে শামসুন্নাহারের দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন মাস্টারের গোলরক্ষক। চার মিনিট পর সোনাম চোদেনের ২৫ গজ থেকে নেওয়া দূরপাল্লার শট ডান পাসের উচু কর্নার দিয়ে খুজে নেয় জাল। বিরতির পর আরও এক গোল করেন তিনি।
১২ মিনিটে আরটিসি পায় তাদের দ্বিতীয় গোল। দুর্দান্ত স্ট্রাইকে এবার স্বপ্নারানী গোল করেন প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে। এএফসি উইমেনস চ্যাম্পিয়নস লিগে এর আগে বাংলাদেশের হয়ে গোল করার রেকর্ড আছে ঋতুপর্ণা চাকমার। ২৫ মিনিটে গোল পরিশোধের সুযোগ পেয়েও পারেনি মাস্টারের এক ফুটবলার। পাঁচ মিনিট পর জ্যাং বোজেওংয়ের ৩৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট অল্পের জন্য জাল খুজে পায়নি; ডান পোস্টের উপরের দিকে আঘাত করে ফিরে আসে।
২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আরটিসি। পরের অর্ধে আরও তিনবার প্রতিপক্ষের জাল কাঁপায় ভুটানের লিগ চ্যাম্পিয়নরা। একবার করে গোল করেন পেমা চোদেন শেরিং, দেকি লাজম। শেষ পর্যন্ত ৫-০ গোলের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভুটানের ক্লাবটি।