
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টেস্ট রেকর্ড বাংলাদেশের ভাল নয়। ২ বছর আগে নিউ জিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারিয়ে দিয়ে এই ভেন্যুতে একমাত্র টেস্ট জয় উদযাপন করেছে বাংলাদেশ। এই ভেন্যুতে বাকি তিনটি টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরে থাকা জিম্বাবুয়ের কাছে উপর্যুপরি ২ বার হারের তিক্ত স্বাদ আছে বাংলাদেশ দলের। সে কারণে নয়নাভিরাম এই স্টেডিয়ামে টেস্ট নবীশ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অবতীর্ন হওয়ার আগে ছিল দুর্ভাবনা। তবে বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং কোচ হিসেবে আশরাফুল দায়িত্ব নিয়ে বদলে দিয়েছেন ব্যাটারদের মানসিকতা। তার যাদুর স্পর্শে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাটিংয়ে একগাদা রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ দল।
টেস্টে বাংলাদেশের ২টি সর্বোচ্চ স্কোর ৬৩৮ এবং ৫৯৫/৮ডি. দেশের বাইরে। প্রথমটি ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কার গল-এ। দ্বিতীয়টি ২০১৭ সালে নিউ জিল্যান্ডের হ্যামিল্টনে। দেশের মাটিতে গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫৬০/৬ ডি. ছিল এতোদিন সর্বোচ্চ। সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ স্কোর (৫৮৭/৮ডি.) করেছে বাংলাদেশ।
এক ইনিংসে প্রথম ৪ ব্যাটারের সবার ফিফটি ( সাদমান-জয়-মুমিনুল-শান্ত), এমন রেকর্ডও এই প্রথম বাংলাদেশ করেছে চলমান টেস্টে। এই চার ব্যাটারের সবাই ৮০ করেছেন ( জয় ১৭১, সাদমান ৮০, মুমিনুল ৮২, শান্ত ১০০)। টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে ১২টি। তবে এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের প্রথম। ২০০৭ সালে মিরপুরে ভারতের প্রথম চার ব্যাটারের সবার সেঞ্চুরির রেকর্ডটা অবশ্য মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে।
এক দশক পর টেস্টে প্রথম ইনিংসে প্রথম দুই পার্টনারশিপে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহ ( ১৬৮ও ১৭৩ ) দেখেছে সিলেট। এমন একটি রেকর্ডবহুল তৃতীয় দিন শেষে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ইনিংস ব্যবধানে জয় থেকে ৫ উইকেট দূরে বাংলাদেশ। যেখানে ইনিংস হার এড়াতে ২১৬ রান দরকার আয়ারল্যান্ডের। চতুর্থ দিনেই জয়ের আনুষ্ঠানিকতার দিকে তাকিয়ে এখন শান্ত'র দল।
এই তিনটি দিনের আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাটারদের মনোবল ফিরে পাওয়া ব্যাটিংকে রাখতে হবে সামনের কাতারে। টেস্টে ওভারপ্রতি ৪.১৬ হারে রানে ইংল্যান্ডের বাজবল ক্রিকেট উত্তেজনা ফিরিয়ে এনেছে শান্ত'র দল।
তবে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিংয়েও আক্ষেপ বাড়িয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। দ্বিতীয় দিন শেষে ১৬৯ রানে ব্যাটিংয়ে থাকা জয়-কে ঘিরে ডাবলের স্বপ্ন দেখেছে অনেকে। অথচ, ২ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি জয়। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে নতুন বল হাতে নিয়ে জয়ের সে স্বপ্নভঙ্গ করেছে আইরিশরা। দিনের নবম এবং আইরিশ পেসার ম্যাকার্থির তৃতীয় ডেলিভারিটি ছিল শর্ট অব লেন্থ। সেই বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন জয় ( ২৮৬ বলে ১৪ চার, ৪ ছক্কায় ১৭১)। ১৪তম সেঞ্চুরির পথে থাকা মুমিনুল হাতছাড়া করেছেন সেঞ্চুরি। দিনের চতুর্থ এবং ম্যাকার্থির দ্বিতীয় ওভারে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন মুমিনুল ( ১৩২ বলে ৫ চার, ২ ছক্কায় ৮২)।
দিনের প্রথম ঘন্টায় স্কোরশিটে ৪৬ রান উঠতে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টের সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে শিহরিত মুশফিকুর রহিম ৯৯তম টেস্টে স্বস্তিতে ব্যাট করতে পারেননি। বাঁ হাতি স্পিনার হ্যামফ্রিস বলে দিয়েছেন গালিতে ক্যাচ (৫২ বলে ২৩)। দিনের প্রথম সেশনে ১০৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ এই ৩ উইকেট।
ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিংয়ে সুইপ শটে পারদর্শিতা দেখিয়ে লিটন থেমেছেন ৬০ রানে। ৯০.৯০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিংয়ে ৬৬ বলে ৬০ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৮ চার, ১ ছক্কা। হ্যামফ্রিসের বলে লং অনে দারুণ এক ডাইভিং ক্যাচে থেমেছেন লিটন। অধিনায়ক শান্ত ঝটটপ সেঞ্চুরি করে থেমেছেন। ক্যারিয়ারে ৮ম এবং সিলেটে ২য় সেঞ্চুরির ইনিংসটা থেমেছে তার ম্যাকব্রিনকে ফ্লিক শট নিতে যেয়ে এলবিডাব্লুউতে ( ১১৪ বলে ১৪ বাউন্ডারিতে ১০০)।
আইরিশ বাঁ হাতি স্পিনার হ্যামফ্রিস প্রথম ২ টেস্টে নিজেকে চেনাতে পারেননি। পেয়েছেন ওই দুই টেস্টে মাত্র ১টি উইকেট। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বুলাওয়ে টেস্টে ২য় ইনিংসে ৬ উইকেট (৬/৫৭) নিয়ে ফিরে পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস। বাংলাদেশ সফরের শুরুতেও দেখেছেন ৫ উইকেটের মুখ (৪৩-১-১৭০-৫)। সাদমান, মুশফিক, লিটন, মিরাজ, মুরাদকে শিকারে পূর্ণ হয়েছে তার টানা ২য় ইনিংসে ৫ উইকেট।
সিলেট টেস্টে আলোচনায় দু'দলের তিন বাঁ হাতি স্পিনার। বাংলাদেশের তাইজুল-হাসান মুরাদ জুটির সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের হ্যামফ্রিস। হয়ে যাওয়া তিন দিনে মোট পড়েছে ২৩ উইকেট। তার মধ্যে ১২টি পকেটে পুরেছেন এই তিনজন। প্রথম ইনিংসে ৩০১ রানের লিড নিয়ে ইনিংস জয়ের পথও মসৃন করেছেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার হাসান মুরাদ-তাইজুল। হাসান মুরাদ ৩ ওভারের ছোট্ট স্পেলে (৩-০-৮-২) ক্যাম্ফার (৫), টাকার (৯) কে ফিরিয়েছেন। তাইজুল ১১ ওভারের স্পেলে ( ১১-২-২৯-১) ফিরিয়েছেন টেক্টরকে (১৮)। হ্যারি টেক্টরকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েছেন তাইজুল।
আয়ারল্যান্ডের ইনিংসে প্রথম আঘাত হেনেছেন পেসার নাহিদ রানা। কারমাইকেলকে (৫) ১৪২.৬ কিলোমিটার ঘন্টার বলে প্লেড অনে ফিরিয়েছেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটির ৪৭ রানে প্রতিরোধের আভাস দিয়েছিলেন স্টার্লিং-টেক্টর। তবে তাইজুলের বলে স্লিপের ফিল্ডার শান্ত'র থ্রো-তে পপিন ক্রিজে ফিরতে পারেননি স্টার্লিং। অন দ্য লাইনে ব্যাট দেখে টিভি আম্পায়ার তাকে দিয়েছেন ফিরিয়ে (৫৯ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪৩)।এই আউটটাই টার্নিং পয়েন্ট। মাত্র ২৪ রানে ৪ উইকেট পতনে তৃতীয় দিন শেষে আয়ারল্যান্ডের স্কোর ৮৫/৫। দিনের শেষ ঘন্টা বাংলাদেশ বোলাররা ঘুরিয়েছে ছড়ি। এই ঘন্টায় ৩১ রান যোগ করে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড ৪ উইকেট।
প্রথম দিনে ২৭০ রানে ৮ উইকেটের পতন ঘটেছে। দ্বিতীয় দিনে সেখানে দু'দল মিলে ৩ উইকেট হারিয়েছে, যার বিপরীতে রানের যোগফল ৩৮৬। তৃতীয় দিন সেখানে দুদলের ৩৩৫ রানের বিপরীতে উইকেটের সংখ্যা ১২। তবে এই চিত্র দেখে উইকেট বোলারদের একটু বেশি ফেভার করেছে, তা কিন্তু বলার উপায় নেই।
No posts available.
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০২ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:০০ পিএম

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২০২৫-২৬ মৌসুম শেষ হল মঙ্গলবার। ২৭তম আসরের চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিভাগ। দুই মাস আগেই এনসিএল টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আকবর আলি নেতৃত্বাধীন রংপুর। লিগের চারদিনের ফরম্যাটও নিজেদের ঘরে তুলল উত্তরবঙ্গের দলটি।
টুর্নামেন্ট সেরা হলেও ব্যাটিং তালিকার শীর্ষ বিশে নেই রংপুরের কোন ব্যাটার। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাকদের তালিকায় রয়েছেন সৌম্য সরকার, জাকির হাসান ও মার্শাল আইয়ুব।
২০২৫-২৬ মৌসুমে ব্যাট হাতে ছন্দে ছিলেন সৌম্য সরকার। ৭ ম্যাচে (১৪ ইনিংস) ৬৩৩ রান করেছেন খুলনার হয়ে খেলা এই ব্যাটার। আসরে তাঁর সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৮৬ রান। চারটি ফিফটি আর একটি সেঞ্চুরিতে গড় ৪৫.২১।
সৌম্যের চেয়ে ৫ রান কম জাকির হাসানের। ৭ ম্যাচে (১৩ ইনিংস) ৫৭.০৯ গড়ে ৬২৮ রান করেছেন সিলেটের হয়ে খেলা এই উইকেটকিপার ব্যাটারের। পাঁচটি ফিফটি আর একটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
তৃতীয় স্থানে মার্শাল আইয়ুব। ৭ ম্যাচে (১২ ইনিংস) ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলা এই ব্যাটারের সংগ্রহ ৬২৫ রান। মৌসুমে তিনটি সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটার আইয়ুব। তাঁর ব্যাটিং গড় ৬২.৫০ ও স্ট্রাইক রেট ৫৮.৪১।
চতুর্থ স্থানে প্রীতম কুমার। ৭ ম্যাচে ৫৭৪ রান, দুই ফিফটি আর দুই সেঞ্চুরি রাজশাহীর হয়ে খেলা এই ব্যাটারের। প্রীতমের সর্বোচ্চ ইনিংস ১৪৩। পাঁচে মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ১২ ইনিংসে ৫৪৭ রান ময়মনসিংহের হয়ে খেলা জাতীয় দলের ওপেনারের। তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৯.৭৩ ও স্ট্রাইক রেট ৬৮.৩৮। সর্বোচ্চ ১১১ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন নাঈম।

ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টি যাত্রাতেও দাপুটে ভারত। আজ কটকে অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে আটকে ১০১ রানের বড় জয় পেয়েছে সূর্যকুমার যাদবের দল। এ জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
এদিন আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত। জবাবে ১২.৩ ওভারে ৭৪ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
টস হেরে এইডেন মার্করামের আমন্ত্রণে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা শুভমান গিল ওপেনিংয়ে নেমে ৪ রানে উইকেট ছাড়েন। পরে ১২ রান করে ফিরে যান অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ১৪ ওভারে ১০৪ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত।
দল গঠনে দায়িত্ব দেন চোট কাটিয়ে ফেরা হার্দিক পান্ডিয়া। ২৮ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন এই পেস অলরাউন্ডার। তাতেই ১৭৬ রানের লড়াকু স্কোর পায় ভারত।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই আর্শদীপ সিং ও জাসপ্রিত বুমরাহের তোপে পড়ে প্রোটিয়ারা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট হন কুইন্টন ডি কক। তৃতীয় ওভারে ফিরে যান ট্রিস্তান স্টাবস। দলীয় ৪০ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। ১৪ রান করে আউট হন এইডেন মার্করাম।
এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ। ২৯ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় তারা। প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস।
এদিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০তম উইকেট পেয়ে যান যশপ্রীত বুমরা। ভারতের হয়ে আর্শদীপ সিং, জাসপ্রিত বুমরাহ, বরুণ চক্রবর্তী ও অক্ষর প্যাটেল নেন ২টি করে উইকেট। বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে দুই দল।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আকবর আলি ও ট্রফি- শব্দগুলো ক্রমে একে অপরের সমার্থক হয়ে উঠছে। পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে পাঁচটি ঘরোয়া শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশকে ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক।
আর এই সাফল্য যে একদমই ফ্লুক নয়, আকবরের দলের ধারাবাহিকতাই সেটির প্রমাণ দেয়। সবশেষ তিনি জিতেছেন জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের শিরোপা। আর এই কৃতিত্ব অর্জনের পেছনে রয়েছে আকবরদের দীর্ঘ সু-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
আট দলের জাতীয় লিগে ছয় রাউন্ড শেষেও কাগজে-কলমে শিরোপা জেতার সম্ভাবনা টিকে ছিল ৬টি দলের। ২ জয় ও ৪ ড্রয়ের সঙ্গে দুটি বোনাস পয়েন্ট পেয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল সিলেট। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পরেই ছিল নবাগত ময়মনসিংহ। তাই ২৩ পয়েন্ট থাকা রংপুরের জন্য শেষ ম্যাচের সমীকরণ ছিল বেশ জটিল।
খুলনার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটি শুধু জিতলেই হতো না, তাদের চেয়ে থাকতে হতো সিলেট ও ময়মনসিংহ ম্যাচের দিকেও। তবে সবার আগে নিজেদের কাজটা সারার দিকেই মনোযোগ ছিল আকবরের।
মঙ্গলবার জাতীয় লিগের শিরোপা উদযাপন সেরে কিছুটা ফ্রি হওয়ার পর তিনি বললেন, শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া দ্বিতীয় ভাবনা ছিল না রংপুরের।
“আমরা তো তিন নাম্বারে ছিলাম তো ভাবনা ছিলো যে আমাদের জিততেই হবে। যদি জিততে পারি সেক্ষেত্রে হয়তোবা সিলেট আর ময়মনসিংহ খেলায় যদি রেজাল্ট আমাদের পজিটিভে আসে... মানে ওদের রেজাল্ট ওরা না করতে পারে সেক্ষেত্রে (ট্রফি) আমাদেরই আরকি।”
“আমাদের কাছে ছিলো যেটা, ম্যাচটা জিততেই হবে। তো যেহেতু বগুড়াতে খেলা, হিস্টোরিক্যালি বগুড়াতে রেজাল্ট হয়। মানে যেই টিমই করুক, কোনো না কোনো রেজাল্ট হবেই। তাই আমাদের একটাই কথা ছিল যে, ওরা যা করবে আমরা শেষ করব। একটা কথাই ছিল যে, সিচুয়েশন যত কঠিনই হোক আমরা জেতার জন্যই খেলব।”
সেই লক্ষ্যে প্রথম ইনিংসে খুলনার ৩০৮ রানের জবাবে মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে যায় রংপুর। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর আগুনঝরা বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে ৯৬ রানে অল আউট করে দেয় আকবরের দল।
পরে উদীয়মান বাঁহাতি ব্যাটার ইকবাল হোসেনের চমৎকার এক সেঞ্চুরিতে ২৩১ রানের লক্ষ্য অনায়াসেই তাড়া করে ফেলে রংপুর। ফল ৩ জয় ও ৩ ড্রয়ে তাদের ঝুলিতে হয় ৩১ পয়েন্ট।
পরদিন রাজশাহীর কাছে ময়মনসিংহের পরাজয় ও বরিশালের সঙ্গে সিলেটের ড্রয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় আকবরের অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ট্রফি।
২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতিয়ে অধিনায়ক হিসেবে আকবরের উত্থান। এরপর ২০২২ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণে রংপুরের শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার অধিনায়কত্বে ২০২৩ সালে বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হয় নর্থ জোন।
ধারাবাহিকতা ধরে রেখে গত বছর এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রথম আসরেই বাজিমাত করে আকবরের রংপুর। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে চলতি বছরের এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও চ্যাম্পিয়ন হন তারা।
এবার চার দিনের সংস্করণেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরোয়া ‘ডাবল’ ট্রফি ঘরে তুলল রংপুর। যা আরও পাকাপোক্ত করল ‘আকবর দ্য গ্রেট’ তকমা।
রংপুরের এই কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে তাদের দীর্ঘ পরিকল্পনা। লিগের সূচি পাওয়ার পরই সাত ম্যাচের ভেন্যু ও প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে টুর্নামেন্টের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেন আকবর, নাসির হোসেন, নাঈম ইসলামরা।
“যখন সূচি পেয়েছি, তখন সিনিয়র কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে কোচিং স্টাফ যারা ছিল... আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা এমনই ছিল যে, আমাদেরকে বগুড়ায় দুইটা ও রাজশাহীর একটা ম্যাচ জিততেই হবে। বাকি খেলাগুলো যদি জিততেও না পারি অন্তত যেন আমরা ড্র করতে পারি।”
যেই কথা সেই কাজ। কুকাবুরা বলে সিলেট ও কক্সবাজারে হওয়া প্রথম দুই রাউন্ডে ঢাকা ও ময়মনসিংহের সঙ্গে ড্র করে দুটি করে পয়েন্ট নিশ্চিত করে রংপুর। পরে ডিউক বলে ফিরলেও কক্সবাজারে তৃতীয় রাউন্ডে সিলেটের সঙ্গেও ড্র হয় তাদের ম্যাচ।
এরপর বগুড়ায় গিয়ে বরিশালকে ৮ উইকেটে হারিয়ে পূর্ণ ৮ পয়েন্ট পায় রংপুর। রাজশাহীর মাঠে খেলতে নেমে পঞ্চম রাউন্ডে তারা হারায় স্বাগতিক রাজশাহীকে।
ষষ্ঠ রাউন্ডের জন্য আবার কক্সবাজারে যায় আকবরের দল। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে হাসান মাহমুদ ও ইফরান হোসেনের তোপে মাত্র ৩৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। পরে ম্যাচটি তারা হেরে যায় ইনিংস ব্যবধানে।
আকবরের মতে, পুরো টুর্নামেন্টে ওই একটি ইনিংসই শুধু তার প্রত্যা্শামতো যায়নি।
“শুধু চট্টগ্রাম ম্যাচটা বাদে আর সব ম্যাচে আমাদের পজিটিভ রেজাল্টই বলবো। কুকাবুরাতে সিলেটের মাঠে খেলা হইছে, কক্সবাজারে খেলা হইছে। ওগুলো ম্যাচে রেজাল্ট বের করা কঠিন।”
“আমরা জানতাম যে আমাদের বগুড়াতে দুইটা খেলা আছে, রাজশাহীতে একটা খেলা আছে। তো এই তিনটা খেলায় রেজাল্ট করতেই হবে আমাদের।”
আর এই ফল পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারিগর মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। রংপুরের জেতা তিন ম্যাচেই ইনিংসে ৫ উইকেট আছে ২৫ বছর বয়সী পেসারের৷ সব মিলিয়ে মাত্র ৭ ইনিংসে তিনি নিয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ উইকেট। যার সৌজন্যে জিতেছেন লিগের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার।
ব্যাটিংয়ে সম্মিলিত পারফরম্যান্স ছিল দলের সবার। সর্বোচ্চ ৩০০ রান করেন নাঈম ইসলাম। মূলত বোলিং দিয়েই এবারের শিরোপাটি জিতেছে রংপুর। আরও একবার নিজেকে আকবর দ্য গ্রেট হিসেবে প্রমাণ করেছেন অধিনায়ক আকবর।

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২০২৫-২৬ মৌসুমের পর্দা নামল আজ। দুই মৌসুম পর আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রংপুর। দুই মাস আগেই এনসিএল টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উত্তরবঙ্গের দলটি। এবার চারদিনের ক্রিকেটেও ট্রফি ঘরে নিল আকবর আলির দল।
এনসিএলে সেরা উইকেটশিকারিদের তালিকায় সবার উপরে বরিশালের বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। সাত ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ৩৪ উইকেট। দুইবার নিয়েছেন ফাইফার, ৬৪ রানে ৭ উইকেট তাঁর সেরা বোলিং ফিগার।
চমক দেখিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন রংপুরের মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। চার ম্যাচে ৮ ইনিংসে নিয়েছেন ২৯ উইকেট। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার, এক ইনিংসে ২২ রানে ৫ উইকেট সেরা ফিগার মুগ্ধ’র। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের স্ট্রাইক ২৩,৯৩ অর্থাৎ প্রতি চার ওভার বল বল করে নিয়েছেন উইকেট। রয়েছেন তালিকায় দ্বিতীয়তে।
তালিকার তিন নম্বরে রয়েছেন বরিশালের রুয়েল মিয়া। ৬ ম্যাচে ১১ ইনিংসে রুয়েল শিকার করেছেন ২৭ উইকেট। ৬৪ রানে ৫ উইকেট এই বাঁ-হাতি পেসারের বোলিং ফিগার। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার।
চার নম্বরে চট্টগ্রামের স্পিনার নাইম হাসানের উইকেট সংখ্যা রুয়েল মিয়ার সমান। তবে এক ম্যাচ ও দুই ইনিংস বেশি খেলেছেন তিনি। ৭ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ২৭ উইকেট।
পাঁচ নম্বর নামটা সিলেটের আবু জায়েদ চৌধুরী রাহীর। পাঁচ ম্যাচে ১০ ইনিংসে ২৫ উইকেট নিয়েছেন এই মিডিয়াম পেসার। ৩৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট সেরা বোলিং ফিগার বাংলাদেশ টেস্ট দলে খেলা এই বোলারের।

চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা পূর্বাচল ক্রিকেট স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স বিসিবি বুঝে পেয়েছে ২০১৭ সালে। তবে ৩৭.৫৯ একর জায়গা এখনো পড়ে আছে অব্যবহৃত। একটি মাঠও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি প্রস্তুত করতে পারেনি বিসিবি। অধিকাংশ জায়গা ছেয়ে আছে বনঘাসে। দূর্বাঘাসের অস্তিত্ব নেই কোথাও। দুটি দেয়ালঘেরা অফিস এখানে ভবিষ্যতে বড় কর্মযজ্ঞের বার্তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতের আধুনিক রাজধানীতে এতো বড় একটি জায়গায় পরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট নগরে পরিনত করতে কে না চাইবে ? গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তাই মাঠ সংকট কাটানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট।
পূর্বাচলে তিনটি মাঠ তৈরির কাছে হাত দেয়ার কথাও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট-
'এক সময়ে এখানে পুরোটাই জঙ্গল ছিল। পূর্বাচলের এই সুন্দর জায়গাটিতে যতো দ্রুত সম্ভব খেলার উপযোগী করে তুলতে চাই।প্রায় ২০-২৫ দিন আগে এখানে আমি একবার এসেছিলাম। এতো সুন্দর জায়গা পাঁচ-সাত বছর পড়ে আছে। এখানে তিনটি মাঠে খেলা শুরু করতে চাই। ঢাকার অনেক ক্রিকেটের জন্য মাঠ ভাড়া করতে হয়। সময়মত লিগ আয়োজন করতে পারি না। ফতুল্লায়ও ২টি মাঠের কাজে হাত দিতে পারি। ফতুল্লায় ইনার এবং আউটারের কাজ ৭০% হয়ে গেছে।ওখানে ৩০% কাজ বাকি আছে। পূর্বাচলে ৩টি এবং ফতুল্লায় ২টি মাঠের কাজ শেষ করতে পারলে ঢাকার লিগগুলো আয়োজন করা যাবে। ভবিষ্যতে যে প্লান আছে, তখন না হয় গ্যালারি করতে পারব। মাঠের কাজ শুরু করেছি। ১০টি পিচ হবে প্রতিটি মাঠে। এভাবে তিনটি মাঠের কাজে হাত দিয়েছি। বেশ কিছু বালি ফেলতে হবে। প্রাথমিকভাবে ঘাস উঠানোর কাজ চলছে।'