গুঞ্জন বাতাসে ভাসছিল আগে থেকেই। শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চলমান আইপিএলে খেলার জন্য মুস্তাফিজুর রহমানকে অনাপত্তিপত্র প্রদান করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। তবে সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। স্রেফ ছয় দিনের জন্য তাকে আইপিএলে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে শুক্রবার বিসিবি জানিয়েছে, ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুস্তাফিজুর রহমানকে ১৮ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত আইপিএলের জন্য অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছে।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে জাতীয় দলের সাথে থাকা বাঁহাতি এই পেসার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে প্রথম টি-টোয়েন্টির দলে থাকবেন, যা শারজাহতে মাঠে গড়াবে আগামী ১৭ মে।
আরও পড়ুন
মুস্তাফিজদের দলে যোগ দিচ্ছেন না স্টার্ক সহ ৩ বিদেশী |
![]() |
এই ম্যাচতি খেলেই সরাসরি ভারতে গিয়ে দিল্লি ক্যাপিটালস শিবিরে যোগ দেবেন মুস্তাফিজুর। এক সপ্তাহ বিরতির পর শুরু হয়ে যাওয়া আইপিএলে বিদেশী খেলোয়াড়দের অনেকেই আসছেন না। দিল্লির ব্যাটার জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক আর ভারতে না ফিরতে চাওয়ায় তার বদলি হিসেবে মুস্তাফিজুরকে নেয় তারা।
গত বছর মেগা নিলামে অবিক্রীত থেকে যাওয়া মুস্তাফিজুরের ভিত্তি মূল্য ছিল ২ কোটি রুপি। তবে দিল্লি তাকে দলে টানতে গুনেছে ৬ কোটি রুপি।
দিল্লি পরবর্তী ম্যাচআগামী ১৮ মে, দিল্লিতে গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে। সব ঠিক থাকলে এই ম্যাচেই দেখা যেতে পারে মুস্তাফিজুরকে।
সিরিজ হার নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশ শিবিরে আসল দুঃসংবাদ। চোটের কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মিস করবেন পেসার শরিফুল ইসলাম, নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এক বিবৃতিতে বিসিবি আরও জানিয়েছে, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে থাকবেন শরিফুল। পাকিস্তানের সাথে প্রথম দুই ম্যাচেই একাদশে ছিলেন এই বাঁহাতি এই পেসার।
বাংলাদশ জাতীয় দলের ফিজিও দেলোয়ার হোসেন সিভা বিসিবির দেওয়া বলেছেন, দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বোলিং করার সময় চোট পান শরিফুল।
“শরিফুল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি চলাকালীন বোলিংয়ের সময় চোট পেয়েছেন। পরবর্তীতে এমআরআই স্ক্যানে দেখা গেছে, তার ডান পায়ের রেক্টাস ফেমোরিস মাসলে গ্রেড ১ মাত্রার স্ট্রেইন রয়েছে। এই চোটের কারণে শরিফুলকে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ বিশ্রাম ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বিসিবি মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে তার রিহ্যাব চলবে।”
শরিফুলের চোট লিটন দাসের দলের জন্য বড় এক ধাক্কাই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টিতে হারের পর পাকিস্তানের সাথে প্রথম দুই ম্যাচেই পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ম্যাচ গত শুক্রবার নিজের প্রথম ওভারে মাত্র তিন বল করার পর চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন শরিফুল। প্রথম ম্যাচে ৩ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট।
পেশাদার ক্যারিয়ারে আগে নেই এমন ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে কাগিসো রাবাদার ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হওয়াটা তাই বিস্ময়ের জন্মই দিয়েছিল। বড় শাস্তির আশঙ্কা থাকলেও পার পেয়ে যান অল্পেই। পুরো ঘটনাটি যেভাবে হয়েছে, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সতীর্থদের জন্য খারাপই লাগছে অভিজ্ঞ এই পেসারের। তবে এটাও বললেন, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্ষমা চাইবেন না তিনি।
চলমান আইপিএলের মাঝপথে রাবাদা দেশে ফিরে যান আচমকাই। এরপর জানা যায়, মাসখানেক আগে নেওয়া ড্রাগ টেস্টে তিনি পজিটিভ হয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রাগ-নিরাপত্তা সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী এরপর তাকে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড দেয় এক মাসের নিষেধাজ্ঞা। সেটা কাটিয়ে ডানহাতি এই পেসার এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার।
সেই ম্যাচ খেলতে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সাথে সেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রাবাদা।
“আমার সতীর্থদের কাছে আমি দায়বদ্ধ। আমরা সবাই একসঙ্গে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি, আর তাই সবচেয়ে কাছের মানুষদের কাছে আমার একটা ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন।”
নিজের ভুলকে স্বীকার করলেও অতিরিক্ত অনুশোচনায় ডুবতে নারাজ রাবাদা। “জীবন এগিয়ে যায়। আমি কখনোই ‘আমি শুধু ক্ষমা চাই' ধরনের কথা বোলার মানুষ না। তবে আমি আবারও বলছি, আমি এই কাজকে কোনোভাবেই সমর্থন করি না।
তবে সতীর্থরা চাইলে নিজের অবস্থান খুলে বলতেও প্রস্তুত রাবাদা।
“এই পরিস্থিতি মোটেও আদর্শ নয়। বলে রাখি, আমি কিন্তু এখানে বাহবা পাওয়ার জন্য আসিনি। আমি আবারও দলের সাথে যোগ দিচ্ছি। আমি ইতোমধ্যেই তাদের সাথে কথা বলেছি। আর সামনে যখন দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থাকব, তখন এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাবে।”
রাবাদা গত মার্চে আইপিএল থেকে প্রথমে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে হঠাৎ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যান। পরে জানা যায়, গেল জানুয়ারিতে এসএ২০ চলাকালে তার মাদক পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তিনি যেসব নিষিদ্ধ মাদক গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে ছিল ক্যানাবিস, কোকেইন, হেরোইন বা এক্সট্যাসি।
এক মাসের নিষেধাজ্ঞা রাবাদা আবারও আইপিএলে ফিরে গুজরাট টাইটানসের সাথে যোগ দেন। খেলেন মোটে দুটি ম্যাচ। তবে ঠিক কী কারণে তিনি নিষিদ্ধ মাদক গ্রহণ করেছিলেন, সেই বিষয়ে তিনি এখনও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।
ভেন্যু এক, আগে ব্যাটিং করা পাকিস্তানের স্কোরও ঠিক একই। রান তাড়ায় প্রথম ম্যাচের মত তানজিদ হাসান তামিম খেললেন প্রায় একই রকমের ক্যামিও ইনিংস। যথারীতি তিনি আউট হতেই শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের জয়ের আশা। অন্য ব্যাটারদের সীমাহীন ব্যর্থতায় টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ম্যাচ হারার অনেক আগেই হেরে বসল লিটন দাসের দল। একমাত্র প্রাপ্তি তানজিম হাসান সাকিবের ঝড়ো এক ফিফটি। এই বোলিং অলরাউন্ডার লড়াই করে জানান দিলেন, চাইলেই এই উইকেটে রান করা যায়।
লাহোরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান পেয়েছে ৫৭ রানের দুর্দান্ত এক জয়। স্বাগতিকরা স্কোর দাঁড় করিয়েছিল ৬ উইকেটে ২০১। বাংলাদেশ অলআউট হওয়ার টেনেটুনে করতে পারে ১৪৪ রান।
এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল পাকিস্তান। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ আগামী রোববার।
প্রথম ম্যাচেও বাংলাদেশের সামনে একই টার্গেট দিয়েছিল পাকিস্তান। সেদিন তানজিদ শুরুটা উড়ন্ত এনে দিলেও অন্য ব্যাটাররা পারেননি সেই সুর ধরে রাখতে। এদিন রান তাড়ায় সূচনাটা হয় আরও দারুণ। সালমান আঘার করা প্রথম ওভারে টানা তিন বাউন্ডারির সাথে এক্সট্রা কভারে ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে ১৭ রান রান আদায় করেন তানজিদ।
একপ্রান্ত থেকে তার আগ্রাসনে তিন ওভারেই হয়ে যায় ৩৮ রান। তবে পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাট হাসেনি টানা দ্বিতীয় ম্যাচে। হারিস রউফের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে এক চারে করেন মাত্র ৮ রান। পরের ওভারেই ফের উইকেটের পতন।
এর এবার পাকিস্তান শিবিরে উল্লাস বয়ে আনেন ফাহিম আশরাফ, কারণ ডেঞ্জারম্যান তানজিদকে তিনি থামিয়ে দেন ৩৩ রানে। তরুণ এই ওপেনার ১৯ বলের ইনিংস সাজান ৫ চার ও এক ছক্কায়।
বাংলাদেশের ম্যাচ জেতার তাড়না বা সম্ভাবনা, দুটিরই যেন শেষ সেখানেই। লিটন এক ডিজিটে ফেরার পর আবরার আহমেদ মিডল অর্ডারে ধস নামান টানা দুই বলে তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলিকে শিকার বানিয়ে।
তাসের ঘরে মত ভেঙে পড়া ব্যাটিং লাইনআপে দাঁড়াতে পারেননি স্বীকৃত ব্যাটারদের আর কেউই। শামিম হোসেনকে অনুসরণ করে সিঙ্গেল ডিজিতে রিশাদ হোসেনও যখন সাজঘরে পথ ধরেন, ৭৭ রানেই নেই তখন বাংলাদেশের স্কোর ৭৭।
এরপর ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে লড়াই করেন তানজিম হাসান সাকিব। হারিসকে হাঁকান টানা দুই ছক্কা। তাকে কিছুটা সঙ্গ দেওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ আউট হওয়ার আগে করেন ২৩ রান।
ম্যাচ থেকে অনেক আগেই ছিটকে যাওয়া বাংলাদেশের এরপর হারের ব্যবধানটাই কেবল কমান তানজিম। খুশদিল শাহকে মারেন টানা দুই ছক্কা। মাত্র ২৯ বলে পা রাখেন পঞ্চাশে, যা এই ফরম্যাটে তার প্রথম। এরপরই অবশ্য সাইমকে ছক্কা মারতে গিয়ে শেষ হয় তানজিমের প্রতিরোধ। ১৯ রানে ৩ উইকেট আবরারের ঝুলিতে।
এর আগে বল হাতে বাংলাদেশ শুরু করে এই ম্যাচ দিয়ে দলে আসা মিরাজকে দিয়ে, আর অন্যপ্রান্তে পার্টটাইমার শামীম বল হাতে নেন শরিফুল ইসলাম তিন বল করার পর চোট পেলে। দ্বিতীয় ওভারে রান আউটে কাঁটা পড়েন সাইম আইয়ুব। মিরাজের করা দ্বিতীয় ওভারে দুটি ছক্কা মেরে সেই ধাক্কা বুঝতে দেননি সাহিবজাদা ফারহান।
স্পেলে নিজের প্রথম ওভারে দুই চার ও এক ছক্কা হজমে ১৭ রান গুনেন হাসান। তার দ্বিতীয় ওভারে আসে ১৬ রান। তাতে পাওয়ার প্লেতেই শক্ত অবস্থানে চলে যায় পাকিস্তান, রান হয় ৬৭। নিজের প্রথম ওভারটা ভালো করলেও দ্বিতীয় ওভারে খরুচে ছিলেন রিশাদ। তাকে দুই ছক্কায় ওড়ান ফারহান।
তার আগেই পূরণ করেন ফিফটি, মাত্র ২৯ বলে। অন্যপ্রান্তে আগের ম্যাচে দারুণ এক ইনিংস খেলা মোহাম্মদ হারিসও রান করছিলেন দ্রুততার সাথেই। তাতে দশ ওভারেই পূরণ হয় দলীয় শতক। ফিরতি স্পেলে এসে হারিসকে ৪১ রানে স্লোয়ার ডেলিভারিতে ক্যাচ বানান তানজিম।
এক ছক্কা হজমের পরের বলেই ফারহানকে ফেরান রিশাদ, তবে তার আগে তিনি খেলেন মাত্র ৪১ বলে ৭৪ রানের মারমুখী এক ইনিংস। ওই একটি উইকেট পেলেও তরুণ এই লেগ স্পিনার টানা দ্বিতীয় ম্যাচে চার ওভারে দেন পঞ্চাশ বা তার বেশি রান (৫৫ ও ৫০)।
সেই তুলনায় শামীম ভালোই বল করেন। হাতে উইকেট থাকলেও শেষের দিকে পাকিস্তানের ব্যাটাররা সেভাবে রান বের করতে পারেননি। বাংলাদেশের বোলাররা ডেথ ওভারে তুলনামূলক ভালো বল করে স্কোরটা ২০১-এর বেশি যেতে দেননি।
আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পেলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সদ্য বিদায়ী ফারুক আহমেদের। শুক্তবার বিসিবির বোর্ড সভায় পরিচালকদের ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
শুক্রবারই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত কাউন্সিলর হিসেবে অনুমোদন পান আমিনুল। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমিনুলের বিসিবি সভাপতি হওয়ার প্রক্রিয়া। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে এনএসসি বাতিল করে ফারুক আহমেদের কাউন্সিলরশিপ। ফলে তিনি হারান সভাপতির পদ।
ফারুককের অপসারণের আগে থেকেই আলোচনায় ছিল বিসিবির সভাপতির পদে আমিনুলের নাম। তবে তিনি বিসিবির কাউন্সিলর না হওয়ায় পরিচালক হতে ছিল প্রক্রিয়ার কিছু জটিলতা। সেটা সমাধান হয় এনএসসির মাধ্যমেই।
এনএসসি থেকে বিসিবিতে পাঁচজন মনোনীত কাউন্সিলর থাকেন, যার দুজন পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হন। সেই কাউন্সিলরদের একজনকে সরিয়ে তার জায়গায় আমিনুলকে মনোনয়ন দেয় এনএসসি।
এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে সরাসরি ফিরলেন দেশের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে বিসিবিতে অন্য কোনো ভূমিকায় দেখা যায়নি তাকে। এবার যোগ দিলেন বিসিবির ১৬তম সভাপতি হিসেবে।
আমিনুল বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। তার কাজের মধ্যে রয়েছে হাই পারফরম্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা। বিসিবির দায়িত্ব শেষে ভবিষ্যতে আবারও আইসিসিতে ফিরে যাওয়ার কথাও সম্প্রতি বলেছেন আমিনুল।
ফারুক আহমেদকে যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তাতে ঘুরেফিরে আসছে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ। কারণটা খুব যৌক্তিক। ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপে জিরো টলারেন্স নীতি মানা আইসিসি যে এমন ঘটনার দায়ে নিষেধাজ্ঞার নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে এসেছিল এই দুই দেশের ওপর। বিসিবির ক্ষেত্রেও এমন কিছু হতে পারে?
সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একটু ফিরে যাওয়া যাক ফারুকের নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে। আগের সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট নাজমুল হাসান পাপনের স্থলাভিষিক্ত তিনি হয়েছিল পরোক্ষভাবে সরকারি হস্তক্ষেপেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটা থেকে মনোনয়ন পেয়ে কাউন্সিল হয়ে বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হন ফারুক। এরপর পরিচালকরা তাকে বেছে নেন সভাপতি হিসেবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই পুরো প্রক্রিয়াটাই ছিল সরকারের সবুজ সংকেত পেয়েই।
সেই সময়েও অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, আইসিসি বুঝি এই বিষয়টিকে সরকারি হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য করে শাস্তি দেয় বিসিবিকে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়নি। ফলে ফারুকের নিয়োগ নিয়ে আর প্রশ্ন ওঠেনি সেই সময়ে।
তবে এরপর গত ৯ মাস বেশ কঠিন সময়ই পার করতে হয়েছে ফারুককে। বোর্ডের আকার বেশ ছোট হয়ে যাওয়ায় তাকে সহ অন্যদের নিতে হয়েছে বাড়তি দায়িত্ব। জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ক্রমেই নিম্নগামী হওয়ার সাথে যোগ হয় দুইবার দুদকের বিসিবিতে হাজির হওয়ার মত ব্যতিক্রমী ঘটনা।
গত বিপিএল নিয়ে মাঠে ও মাঠের বাইরের নানা কেলেঙ্কারিতে বছরের শুরুতে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন ফারুক। বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম এক পর্যায়ে পদত্যাগের হুমকিও দেন তখন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বোর্ডের পরিচালকদের সাথে মতপার্থক্য এবং একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিযোগও উঠে আসে।
এসব চাপ সামলে ভালোভাবে এই সময়টা পর্যন্ত দায়িত্ব সামাল দিলেও গত কয়েকদিনে বদলে যায় চিত্র। প্রথমে নিজেই জানান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে সরকার চায় না তিনি এই দায়িত্ব আর চালিয়ে যান। তবে ফারুক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দেশের স্বার্থ ও দলের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই তিনি দায়িত্ব পালন করছেন এবং এখনই পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা তার নেই। আরও বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনেই তিনি বিসিবির প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। আর তাই আগের কোনো সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে এই দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগই হতো না তার।
শুধু এখানেই না থেমে থেকে তিনি ক্ষোভ উগরে দেন বিসিবির পরিচালকদের দিকে যে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, যাতে তিনি সভাপতি হিসেবে আর কাজ চালিয়ে যেতে না পারেন। বৃহস্পতিবারই জানা যায়, নাজমুল আবেদিন সহ বিসিবির ৮ পরিচালক ফারুকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছেন। এরপর রাত ১১টার পর প্রজ্ঞাপন দিয়ে এনএসসি জানায়, কাউন্সিলর হিসেবে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
সরাসরি না হলেও এই ঘোষণার মাধ্যমে কার্যত বাতিল হয়ে গেছে সভাপতি হিসেবে ফারুকের নিয়োগ। এর প্রেক্ষিতে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়াটা মেনে নেওয়ার মত নয়। তিনি আইনি লড়াই করবেন এবং যেভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা তিনি এরই মধ্যে আইসিসিকে জানিয়েছেন।
আর এখান থেকেই আসছে বিসিবির ওপর আইসিসির সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আসার বিষয়টি। ক্রিকেট বোর্ডে কোনো ধরণের সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আইসিসি এই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি। তবে তাদের নিয়ম-কানুন ও জিম্বাবুয়ে বা শ্রীলঙ্কা বোর্ডের কথা চিন্তা করলে বিসিবির শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে যথেষ্টই।
শেষ পর্যন্ত আইসিসি কি পদক্ষেপ নেবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একদিক থেকে দেখলে বিসিবির শাস্তি এড়ানোর একটা সুযোগ রয়েছে। আর সেটা হল বোর্ড পরিচালকদের সেই অনাস্থা চিঠি। আকরাম খান বাদে বাকি সবাই সেখানে সাক্ষর করায় এটিকেই ফারুককে সভাপতি হিসেবে সরিয়ে দেওয়ার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করতে পারবে বিসিবি। আর সেটার রেশ ধরে তার কাউন্সিলর মনোনয়ন বাতিল করে দিয়েছে এনএসসি।
আইসিসি যদি ফারুকের অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাহলে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার এটাই আপাতত সেরা পথ খোলা বিসিবির সামনে। কারণ, অনেকটা সরকারি হস্তক্ষেপেই কাজটা হলেও এখানে বিসিবির অভ্যন্তরীণ একটা প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা হয়েছে। ফলে নিজেদের ডিফেন্ড করতে বিসিবি সেটা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে।
খেলোয়াড়ি জীবনে ফারুক ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বও দেন তিনি। বিসিবির প্রধান নির্বাচক হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাও আছে তার।