তিনদিন আগে আবুধাবিতে ১০৯/১০ স্কোর ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বনিম্ন। ৭২ ঘন্টা পর একই মাঠে ৯৩ রানে অল আউট হয়ে লজ্জাটা ভারী হয়েছে। আফগানিস্তানের কাছে দ্বি-পাক্ষিক ওডিআই সিরিজে হ্যাটট্রিক হার। এই প্রথম হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা (০-৩) পেতে হয়েছে।
হারের ব্যবধান ২০০ রান। বাংলাদেশের ওডিআই ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ। আফগানিস্তানের কাছে এটাই রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। আফগানিস্তানের ওডিআই ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় বড় ব্যবধানে জয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই রানের ব্যবধানে তাদের সবচেয়ে বড় জয়।
তিন ম্যাচের সিরিজের কোনোটিতেই ৫০ ওভার পার করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। প্রথম ম্যাচে ৭ বল বাকি থাকতে ২১০ রানে এ অল আউট। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৫ বল বাকি থাকতে ১০৯ রানে অল আউট বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ম্যাচে সেখানে ১৩৭ বল আগেই শেষ বাংলাদেশ ৯৩ রানে!
তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজে হাফ সেঞ্চুরি মাত্র ২টি, হৃদয় এবং মিরাজের।
আবুধাবিতে লজ্জার এই সিরিজ ২০২৭ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সরাসরি কোয়ালিফাই করার সমীকরণটা কঠিন করে দিয়েছে।
ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০। রেটিং পয়েন্ট ৭৪। বাংলাদেশের এক ধাপ উপরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেটিং পয়েন্ট সেখানে ৮০। আসন্ন ওডিআই সিরিজ জিতলে রেটিং পয়েন্ট বেড়ে যাবে, সম্ভাবনা থাকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উপরে উঠে যাওয়ারও। তারপরও কিন্তু ৭ কিংবা ৮ এ র্যাঙ্কিং উঠিয়ে নেয়ার কাজটা দুরূহ।
অন্যদিকে বাংলাদেশকে ওডিআই সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করে আফগানিস্তান র্যাঙ্কিংয়ে ৭ সুসংহত করে এখন ৬ এ চোখ রেখেছে। ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করার দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেছে আফগানিস্তান। বর্তমানে ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে ৬-এ থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে চোখ রাঙাচ্ছে আফগানিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার রেটিং পয়েন্ট যেখানে ৯৯, সেখানে আফগানিস্তানের ৯৫।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ এই পরিণতি ? এটাই জনমনে প্রশ্ন। যদি ৩ টি ম্যাচের স্কোরকার্ডের দিকে তাকান, তাহলে বিষয়টা স্পষ্ঠ হবে। প্রতিটি ম্যাচে মিডল অর্ডার, লোয়ার অর্ডার এবং টেল এন্ডাররা পড়েছে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দল শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে ৪৬ রানে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সেখানে শেষ ৫ উইকেটের পতন ঘটেছে ১০ রানে। সিরিজের শেষ ম্যাচে ৭ উইকেট পড়েছে ২৩ রানে!
সিরিজের তিনটি ম্যাচে রশিদ খানের গুগলি ধাঁধায় ফেলেছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। ৩ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে ১১ উইকেট শিকারে নিজের এবং আফগান বোলারদের মধ্যে সেরা কৃতিত্ব এই বিশ্বসেরা লেগ স্পিনারের। প্রথম দুই ম্যাচে পেসার আজমতউল্লাহ ওমরজাই দিয়েছিলেন তাকে দারুণ সঙ্গ। সিরিজের শেষ ম্যাচে ২১ বছর বয়সী তরুণ বিলাল সামি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে দিয়েছেন ধসিয়ে (৭.১-০-৩৩-৫)।
সিরিজের শেষ ম্যাচে টিম ম্যানেজমেন্টকে পড়তে হবে প্রশ্নের মুখে। নিয়মিত পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে সাইড লাইনের দুই পেসার নাহিদ রানা-হাসান মাহমুদকে একাদশে বিবেচনা করে তারা বড় ভুলই করেছে। ২ উইকেট পেলেও ওভারপ্রতি ৯.৫০ রান খরচা করেছেন হাসান মাহমুদ। উইকেটহীন নাহিদ রানার খরচা সেখানে ওভারপ্রতি ৬.৭২।
প্রতি ম্যাচে বাজে ফিল্ডিং বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। সিরিজের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তান কীভাবে স্কোর টেনে নিয়েছে ২৯৩/৯ পর্যন্ত ? তার কারণ, খুঁজতে গেলে কেউ কেউ কৃতিত্ব দিবেন উপযুপরি দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৫ রানে থেমে যাওয়া ইব্রাহিম জাদরানকে। ওপেনিং পার্টনারশিপের ৯৯ রানকেও দিতে হবে কৃতিত্ব। তবে এই পার্টনারশিপ থামিয়ে দেয়া যেতো ১৩ রানে, ৯ রানে ফিরিয়ে দেয়া যেতো ইব্রাহিম জাদরানকে। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নাহিদ রানার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে নাঈম শেখের হাত থেকে বেঁচে গেছেন ইব্রাহিম জাদরান।
শেষ পাওয়ার প্লে'র অনিয়ন্ত্রিত বোলিংও ভুগিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। এই ৬০ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান করেছে আফগানিস্তান। যার মধ্যে শেষ দুই ওভারে ৪১ রান খরচা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে মিরাজ-হাসান মাহমুদকে। বলে কয়ে ফিফটি করেছেন মোহাম্মদ নবী। ৩৫ বলে ফিফটি করে ছিলেন ৩৭ বলে ৪ বাউন্ডারি, ৫ ছক্কায় ৬২ রানে নট আউট নবী।
লজ্জার এই ম্যাচে অলরাউন্ড পারফর্ম করেছেন সাইফ হাসান। অকেশনাল এই অফ স্পিনারের বোলিং (৪-১-৬-৩) ছড়িয়েছে বিস্ময়। ব্যাটিংয়েও ছিলেন বাংলাদেশের অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম (৫৪ বলে ২ চার, ৩ ছক্কায় ৪৩)।
নাঈম শুধু স্লিপে ক্যাচই ছাড়েননি, ওডিআই ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ইনিংসটিও ছিল যাচ্ছেতাই। ২৪ বল খেলে ৭ রান, ওমরজাইয়ের শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে নিজের অফ ফর্মের কথাই প্রকারান্তরে দিয়েছেন জানিয়ে নাঈম। ওডিআই ক্যাপ্টেন্সি হারিয়ে শান্তও এলোমেলো হয়ে গেছেন। বিলাল সামিকে অফ ষ্ট্যাম্পের উপরের বলে কাট করতে যেয়ে প্লেড অন হয়েছেন তিনি (১৬ বলে ৩)। রশিদ খানের গুগলি অনুমান করতে পারেননি হৃদয়, হয়েছেন বোল্ড (১২ বলে ৭)। বিলাল সামির বলে মিরাজ কট বিহাইন্ড (৯ বলে ৬)। পরের বলে শামীমের ক্যাজুয়াল সিঙ্গলের দৌড় ছিল অপেশাদারী ব্যাটারের আদর্শ উদাহরন। ভাগ্যটা খারাপ সোহানের। রশিদ খানের বলে আম্পায়ার্স কলে রান আউট (৬ বলে ২) তিনি। তানভির রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে, রিশাদ মিড উইকেটে ধরা পড়ে এবং হাসান মাহমুদ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিলালকে প্রথম ৫ উইকেটের ইনিংস দিয়েছেন উপহার।
প্রচলিত ফরম্যাট ভেঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ এশিয়া কাপ। সে সময়ে এশিয়া মহাদেশে থাকা আইসিসির পূর্ণ ৪ সদস্য দেশকে নিয়ে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলে সেই নিয়ম ভেঙ্গেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। নিরাপত্তা শঙ্কায় বাংলাদেশে পূর্ব নির্ধারিত এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে না বলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) অবস্থান জেনে যাওয়ায় চতুর্থ দল হিসেবে আফগানিস্তানকে নেয়া হয়েছিল সেই আসরে। যদিও পরবর্তীতে অবস্থান পরিবর্তন করে পাকিস্তান খেলেছে এশিয়া কাপে।
ভাগ্যক্রমে সুযোগ পাওয়া সেই আসরটিই আফগানিস্তানের টার্নিং পয়েন্ট। ফতুল্লায় বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারিয়ে আইসিসির প্রথম কোনো পূর্ণ শক্তির দেশের বিপক্ষে জয় উদযাপন করেছে আফগানিস্তান। সেই জয়ে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে উৎসব হয়েছে হাজার হাজার গুলির শব্দে।
এখন সেই আফগানিস্তান বাংলাদেশের সামনে আতঙ্কের নাম। উপর্যুপরি ৩টি ওডিআই সিরিজ হেরে, প্রথমবারের মতো ১০০'র নীচে স্কোর করে, হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা পেয়ে এখন প্রিয় ফরম্যাটে অস্তিত্ব বিপন্নের মুখে বাংলাদেশ।
No posts available.
১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম
পাকিস্তানের বিমান হামলায় পাকতিকা প্রদেশে তিন তরুণ ক্রিকেটারের মৃত্যুর পর ক্ষোভে ফুঁসছে আফগানিস্তানের ক্রিকেট অঙ্গন। প্রথমে পাকিস্তান সফরে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ায় তারা।
এবার জাতীয় দলের অধিনায়ক রশিদ খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন—আর তাঁর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ যেন ইঙ্গিত দিচ্ছে, তিনি এবার পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলতে চান না!
রশিদ নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) প্রোফাইল থেকে পিএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লাহোর কালান্দার্সের নাম মুছে ফেলেছেন। তিন আফগান ক্রিকেটার- কবির, সিবঘাতুল্লাহ ও হারুনের মৃত্যুতে নীরব প্রতিবাদ জানালেন এই লেগ স্পিনার।
রশিদ লিখেছেন,
‘সাম্প্রতিক পাকিস্তানি বিমান হামলায় আফগানিস্তানে নারী, শিশু ও তরুণ ক্রিকেটারসহ বহু মানুষের প্রাণহানি গভীরভাবে দুঃখজনক। যারা একদিন দেশের হয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখত, তাদের জীবন এভাবে শেষ হয়ে গেল— এ এক অপূরণীয় ক্ষতি।’
এর আগে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) ঘোষণা দিয়েছে, পাকিস্তানে হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে তারা সরিয়ে নিচ্ছে নিজেদের নাম। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানকে নিয়ে এই সিরিজ হওয়ার কথা ছিল, আফগানিস্তানের জায়গায় এখন অংশ নেবে জিম্বাবুয়ে।
সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ও অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইবও রশিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। নাইব লিখেছেন,
‘পাকিস্তানি সেনাদের এই বর্বরতা আমাদের জাতির মর্যাদা ও স্বাধীনতার ওপর আঘাত, কিন্তু এটি আমাদের ভাঙতে পারবে না।’
নবীর ভাষায়,
‘উরগুনে তরুণ ক্রিকেটারদের শাহাদত হৃদয়বিদারক। এই নৃশংস হামলা আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ করবে।’
রশিদ খান এখন পর্যন্ত লাহোর কালান্দার্সের হয়ে তিন মৌসুমে খেলেছেন। ৪৪ উইকেট নিয়েছেন ১৫.৪৭ গড় ও ৬.১৩ ইকোনমি রেটে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার পর তাঁর সামনের পিএসএলে অংশগ্রহণ এখন বড় প্রশ্নের মুখে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজে দলে ফিরলেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
৩০ বছর বয়সী নাসুম শেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এখন পর্যন্ত ১৮ ম্যাচে ৪.৪৮ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। মিরপুর শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
একই ভেন্যুতে আগামী ২১ ও ২৩ অক্টোবর হবে সিরিজের বাকি দুটি ওয়ানডে। তবে প্রথম ওয়ানডেতে দেখে গেছে উইকেটে ঘূর্ণির নাচন। উইন্ডিজের ৮টি উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। ৬ উইকেট নিয়েছেন রিশাদ হোসেন। একটি করে উইকেটে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানভীর ইসলাম।
তবে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ছিলেন কিছুটা খরচে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩৩ রানে গুটিয়ে গেছে প্রথম ওয়ানডেতে। ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়েছেন তানভীর। পরের ওয়ানডেতে আরেকজন বাঁহাতি হিসেবে নাসুমকে যুক্ত করল বিসিবি।
সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ ও এনসিএলে ছন্দে ছিলেন নাসুম। সরাসরি ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করতে এই সিরিজ গুরুত্বপূর্ণ মিরাজদের জন্য।
বাংলাদেশ ওয়ানডে দল:
মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, জাকার আলী অনিক, শামিম হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান সাকিব, হাসান মাহমুদ ও নাসুম আহমেদ।
টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা হারানোর পর এবার প্রশ্নের মুখে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের জন্য এখনও অধিনায়ক চূড়ান্ত করেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি রিজওয়ানকে আর নেতৃত্বে রাখা হবে না? নতুন অধিনায়ক ঘোষণার জন্যই দল ঘোষণায় দেরি? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে সোমবার।
সাদা বলের কোচ মাইক হেসনকে নিয়ে আলোচনায় বসবে পিসিবি। সেখানেই নির্ধারণ হবে রিজওয়ানের ভাগ্য।
অনিশ্চয়তার জন্মটা দিয়েছে পিসিবিই। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের অধিনায়ক এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অথচ ওয়ানডেতে গত কয়েক সিরিজ ধরে রিজওয়ানই দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এমনকি অধিনায়ক হিসেবে খুব একটা খারাপও করছেন না অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটার। গত বছরে দায়িত্ব পাওয়ার পর তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান।
তবে চলতি বছর নিম্নমুখী। ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরেছে তারা। পরে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও মেলেনি সাফল্য। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েও মিলেছে হতাশা।
রিজওয়ানের পারফরম্যান্স নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলার সুযোগ কম। চলতি বছর ৩৬-র বেশি গড়ে ৩৬১ রান করে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ রান সংগ্রাহক তিনি। এছাড়া প্রোটিয়াদের বিপক্ষে চলতি টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ৭৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন।
তবু ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে রিজওয়ানকে সরিয়ে দেওয়া হবে কিনা, সেটি জানা যাবে খুব শিগগিরই। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। এরপর ৪ নভেম্বর শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ।
এর আগে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শাহিন শাহ আফ্রিদিরও একই ভাগ্যবরণ করতে হয়। পিসিবি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আফ্রিদিকে রহস্যজনকভাবে সরিয়ে দেন মহসিন নাকভি। তখন মাত্র এক সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছিলেন আফ্রিদি।
পার্থের গরম সকালে যেন আগুন ছুড়লেন মিচেল স্টার্ক। ভারতের টপ অর্ডারের সামনে ছুড়ে দিলেন গতি, আগ্রাসন আর নিখুঁত সুইংয়ের মিশেলে তৈরি এক জাদু মন্ত্র। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে তাঁর উইকেট নয়, বরং একটি ডেলিভারি—যার গতি দেখিয়ে স্পিড গান যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারেনি!
ইনিংসের প্রথম বল। রোহিত শর্মার উদ্দেশে ছোড়া বলটি স্পিড গান দেখায় ১৭৬.৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতি। ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম বলই হয়ে যেত! সেই ডেলিভারি নিয়ে রীতিমতো নেটিজেনরা হইচই শুরু করেছেন।
তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন, মেশিনের ভুলে বলের স্পিড এত বেশি দেখিয়েছে। বাস্তবে স্টার্কের বলটির গতি ছিল ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটার। আর তাঁর সবচেয়ে দ্রুত বৈধ ডেলিভারিটিও রোহিতের বিপক্ষেই আসে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে।
প্রথম স্পেলে স্টার্ক ছিলেন বেশ ভয়ংকর। প্রথম পাঁচ ওভারেই ১ মেডেনসহ মাত্র ২০ রান দিয়ে তুলে নেন ১ উইকেট। তাঁর আগুনঝরা স্পেলের শিকার হন বিরাট কোহলি। ৮ বলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।
এর আগেই রোহিত শর্মাকে ভুগিয়েছেন স্টার্ক। পার্থের বাউন্সি উইকেটে বলের গতি আর উচ্চতা মিলিয়ে একের পর এক ব্যাটারকে নাচিয়ে ছাড়েন তিনি। রোহিত শুরুতেই চাপে পড়ে যান, ১৪ বলে করেন মাত্র ৮ রান। শেষ পর্যন্ত জশ হ্যাজলউডের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে ফিরে যান ভারতের সাবেক অধিনায়ক।
ভারতের ইনিংসের চিত্রটা বলছিল সবকিছু—পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৭ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। ২০২৩ সালের পর ওয়ানডেতে ভারতের সবচেয়ে বাজে শুরুর একটি এটি।
যদিও ১৭৬.৫ কিমি/ঘণ্টা গতির সেই বল বাস্তবে মানবসম্ভব নয়। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এর চেয়েও স্টার্কের স্পেলটি ছিল বেশি রোমাঞ্চকর।
আফগানিস্তানের আরগুন জেলায় হামলায় তিন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হওয়ায় আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান। রশিদ খানের দল সিরিজ বয়কট করায় তাদের জায়গা নিচ্ছে জিম্বাবুয়ে। পাকিস্তানে হতে যাওয়া তিন জাতির সিরিজে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তৃতীয় দল হিসেবে যোগ দিবে জিম্বাবুয়ে।
আজ আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) এক সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে। কারণ হিসেবে তারা দাবি করে, দেশটির উরগুন জেলায় একটি সীমান্ত-পারাপারের হামলায় তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন।
এক্স ( টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে এসিবি জানায়, ‘এই হামলায় একাধিক প্রাণহানি হয়েছে, যাদের মধ্যে ছিলেন তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার, যারা পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শারানায় একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাড়ি ফিরছিলেন।’
এসিবি আরও জানায়, ‘এই ঘটনা আফগান ক্রীড়া সমাজ, ক্রীড়াবিদ এবং ক্রিকেট পরিবারের জন্য এক বড় ক্ষতি।’
আফগানিস্তানের বিবৃতির পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে জানিয়েছে, সিরিজটি নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে, এবং আফগানিস্তানের পরিবর্তে অন্য একটি দল অংশ নেবে। জিম্বাবুয়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দেওয়া বিবৃতিতে পিসিবি জানিয়েছে, তারা আগেই আফগানিস্তানের ‘অংশগ্রহণে অক্ষমতা’ সম্পর্কে অবহিত ছিল।
আগামী ১৭ নভেম্বর শুরু হয়ে ২৯ নভেম্বর শেষ হবে ত্রিদেশীয় সিরিজ। পাকিস্তানের লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতে হবে সিরিজটি। রাওয়ালপিন্ডিতে স্বাগতিক পাকিস্তান মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ের। দুই দিন পর একই মাঠে জিম্বাবুয়ে খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সিরিজের বাকি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে।