
লর্ডস থেকে মিরপুর। ২০০৫ সালের ২৬ মে থেকে ২০২৫ সালের ১৯ নভেম্বর। সময়ের হিসেবে ৭৪৭৯ দিন। এই লম্বা সময় পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ম্যাচের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মুশফিকুর রহিম।
বাংলাদেশের ৩৭তম টেস্টে ৪০তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অভিষিক্ত মুশফিকুর রহিম পাড়ি দিয়েছেন অনেক চড়াই উতরাই। মুশফিকুর রহিমের টেস্ট অভিষেক থেকে শুরু করে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত খেলেছে ১২০টি টেস্ট, তার মধ্যে মুশফিকুর রহিমের টেস্ট সংখ্যা ১০০! ফিটনেসে কতোটা সজাগ মুশফিকুর রহিম, তার আদর্শ দৃষ্টান্ত এটাই।
শিশুসুলভ চেহারা নিয়ে ১৮ বছর ১৭ দিন বয়সে ক্রিকেটের হোম লর্ডসে মুশফিকুর রহিমের টেস্ট অভিষেকের দিন অভিষেক হয়েছিল পেস বোলার শাহাদত হোসেন রাজীবেরও। ১০ বছর আগে ৩৮ টেস্টে থেমেছে তার টেস্ট ক্যারিয়ার।
আড়াই বছর পর টেস্ট অভিষিক্ত হওয়া তামিমের টেস্ট ক্যারিয়ার থেমেছে আড়াই বছর আগে, ৭০ এ থামতে হয়েছে তাকে। মুশফিকুর রহিমের ২ বছর পর টেস্ট শুরু করে সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার আগে টেস্ট ম্যাচের সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ৭১ টেস্টে এসে আটকা পড়েছেন। বছরে যে দেশ গড়ে ৬.২৪ টি টেস্ট খেলাকে নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে, সেই দেশের কোনো ক্রিকেটার একদিন টেস্টের সেঞ্চুরি পূর্ণ করবেন-এটা এক সময়ে স্বয়ং মুশফিকুর রহিমও কল্পনা করতে পারেননি।
লর্ডসে টেস্ট অভিষেকের আগে তিনদিনের ওয়ার্ম আপ ম্যাচে সেঞ্চুরি করে বৃটিশ মিডিয়ার আলোচনায় উঠে এসেছিলেন মুশফিকুর রহিম। অথচ, সেই মুশফিকুর রহিমের অভিষেক ইনিংস থেমেছে হোগার্ডের বলে বোল্ড আউটে, ১৯ রানে। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ২৬ মাসে ২ টেস্টের পারফরমেন্স ছিল হতাশাজনক। লর্ডসে ১৯ এবং ৩ রানে থেমে যাওয়ার পর হোম গ্র্যাউন্ড বগুড়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে২ ও ০! এমন পারফরমেন্সে টেস্টে টিকে থাকা নিয়ে ছিল অশনি সংকেত। কামব্যাক টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পি সারা ওভালে ২৩৫ মিনিটের সংযমী ব্যাটিংয়ে ৮০ রানের ইনিংসে নির্বাচকদের নজরে এসেও প্রতিদ্বন্দ্বী ধীমান ঘোষের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল মুশফিককে। ভারতের বিদ্রোহী ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসর আইসিএল টি-টোয়েন্টিতে খেলার অপরাধে ধীমান ঘোষের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় টেস্টে টিকে যান মুশফিকুর রহিম। ৩৩তম ইনিংসে এসে দেখেছেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। মিরপুরে ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে সেই ইনিংসের পর ২৬ টেস্ট বিরতি দিয়ে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। গল-এ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই সেঞ্চুরিটি আবার বাংলাদেশের প্রথম কোনো ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি উদযাপন করেছেন (২০০)। বাংলাদেশের পক্ষে শুধু প্রথম ডাবলই নয়, টেস্টে সর্বোচ্চ ২১৯ রানের হার না মানা ইনিংসটিও তার। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির ভেন্যু মিরপুরে, তিনটি ডাবলের ২টি তার প্রিয় এই ভেন্যুতে। সেই ভেন্যুতেই পূর্ণ করেছেন টেস্ট ম্যাচের সেঞ্চুরি।
ইংল্যান্ডের কলিন কাউড্রে, ভারতের সুনীল গাভাস্কার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড, অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান বোর্ডার, পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াদাদ,দক্ষিণ আফ্রিকার গ্যারি কারস্টেন, শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া, নিউ জিল্যান্ডের স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের পর সেঞ্চুরি টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ইতিহাসের রচয়িতা মুশফিকুর রহিম।
তার এই বিশেষ ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নিজের ৯৯ নম্বর টেস্ট পর্যন্ত রং চটা টেস্ট ক্যাপটি ছিল মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী। শততম টেস্ট উপলক্ষে মুশফিককে বিশেষ ক্যাপ উপহার দিয়েছেন হাবিবুল বাশার।
সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানও দিয়েছেন বিশেষ উপহার। মুশফিকের হাতে স্মারক ক্রেস্ট তুলে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। মুশফিকের প্রথম ও শততম টেস্টের জার্সিতে স্বাক্ষর করা টিমমেটদের জার্সি ফ্রেমে বাধাঁই করে উপহার দিয়েছেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম এবং হাবিবুল বাশার সুমন।
মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট-এর বার্তা সারা বিশ্বে পৌছে দিতে পূর্ব গ্যালারিতে বিশাল এক ব্যানার ঝুলিয়েছে বিসিবি। দেশের পক্ষে মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট বিশেষ মর্যাদায় উদযাপন করেছে প্রেস বক্সে টেস্ট কভার করা গণমাধ্যম কর্মীরা। টি ব্রেকের সময়ে বিশাল এক কেক কেটে প্রেস বক্সে উদযাপন করা হয়েছে মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টের উদযাপন। মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টে প্রেস বক্সে উপস্থিত সাংবাদিকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টকে সামনে রেখে এই লিজেন্ডারির সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের ছবি প্রেসবক্সে সংরক্ষনের উদ্যোগ নিয়েছেন একদল সিনিয়র সাংবাদিক।
মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট উদযাপন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বাবা-মা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা। টসের পর সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে এমন মাইলফলক স্পর্শ করার অনুভূতি জানাতে গিয়ে মুশফিকুর রহিম বলেছেন-
‘আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই। আমিও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক শ ভাগ দেব, যেমনটা সব সময় চেষ্টা করি।’
শতভাগ দিয়েছেন অতীতে, শততম টেস্টেও তার ব্যতিক্রম কিছু দেখছে না সমর্থকরা। শততম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৯৯ রান নিয়ে আছেন ব্যাটিংয়ে। আর মাত্র ১ রান হলেই ১১ তম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি দিয়ে সেঞ্চুরি টেস্ট উদযাপন করবেন মুশফিকুর রহিম। ইংল্যান্ডের কলিন কাউড্রে, পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াদাদ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের গর্ডন গ্রীনিজ, ইংল্যান্ডের অ্যালেক স্টুয়ার্ট, পাকিস্তানের ইনজামাম উল হক, অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং, দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ, হাশিম আমলা, ইংল্যান্ডের জো রুট এবং অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে এলিট তালিকায় নাম লেখানোর সামনে এখন দাঁড়িয়ে মুশফিকুর রহিম।
No posts available.
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০২ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:০০ পিএম

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২০২৫-২৬ মৌসুম শেষ হল মঙ্গলবার। ২৭তম আসরের চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিভাগ। দুই মাস আগেই এনসিএল টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আকবর আলি নেতৃত্বাধীন রংপুর। লিগের চারদিনের ফরম্যাটও নিজেদের ঘরে তুলল উত্তরবঙ্গের দলটি।
টুর্নামেন্ট সেরা হলেও ব্যাটিং তালিকার শীর্ষ বিশে নেই রংপুরের কোন ব্যাটার। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাকদের তালিকায় রয়েছেন সৌম্য সরকার, জাকির হাসান ও মার্শাল আইয়ুব।
২০২৫-২৬ মৌসুমে ব্যাট হাতে ছন্দে ছিলেন সৌম্য সরকার। ৭ ম্যাচে (১৪ ইনিংস) ৬৩৩ রান করেছেন খুলনার হয়ে খেলা এই ব্যাটার। আসরে তাঁর সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৮৬ রান। চারটি ফিফটি আর একটি সেঞ্চুরিতে গড় ৪৫.২১।
সৌম্যের চেয়ে ৫ রান কম জাকির হাসানের। ৭ ম্যাচে (১৩ ইনিংস) ৫৭.০৯ গড়ে ৬২৮ রান করেছেন সিলেটের হয়ে খেলা এই উইকেটকিপার ব্যাটারের। পাঁচটি ফিফটি আর একটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
তৃতীয় স্থানে মার্শাল আইয়ুব। ৭ ম্যাচে (১২ ইনিংস) ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলা এই ব্যাটারের সংগ্রহ ৬২৫ রান। মৌসুমে তিনটি সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটার আইয়ুব। তাঁর ব্যাটিং গড় ৬২.৫০ ও স্ট্রাইক রেট ৫৮.৪১।
চতুর্থ স্থানে প্রীতম কুমার। ৭ ম্যাচে ৫৭৪ রান, দুই ফিফটি আর দুই সেঞ্চুরি রাজশাহীর হয়ে খেলা এই ব্যাটারের। প্রীতমের সর্বোচ্চ ইনিংস ১৪৩। পাঁচে মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ১২ ইনিংসে ৫৪৭ রান ময়মনসিংহের হয়ে খেলা জাতীয় দলের ওপেনারের। তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৯.৭৩ ও স্ট্রাইক রেট ৬৮.৩৮। সর্বোচ্চ ১১১ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন নাঈম।

ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টি যাত্রাতেও দাপুটে ভারত। আজ কটকে অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে আটকে ১০১ রানের বড় জয় পেয়েছে সূর্যকুমার যাদবের দল। এ জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
এদিন আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত। জবাবে ১২.৩ ওভারে ৭৪ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
টস হেরে এইডেন মার্করামের আমন্ত্রণে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা শুভমান গিল ওপেনিংয়ে নেমে ৪ রানে উইকেট ছাড়েন। পরে ১২ রান করে ফিরে যান অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ১৪ ওভারে ১০৪ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত।
দল গঠনে দায়িত্ব দেন চোট কাটিয়ে ফেরা হার্দিক পান্ডিয়া। ২৮ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন এই পেস অলরাউন্ডার। তাতেই ১৭৬ রানের লড়াকু স্কোর পায় ভারত।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই আর্শদীপ সিং ও জাসপ্রিত বুমরাহের তোপে পড়ে প্রোটিয়ারা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট হন কুইন্টন ডি কক। তৃতীয় ওভারে ফিরে যান ট্রিস্তান স্টাবস। দলীয় ৪০ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। ১৪ রান করে আউট হন এইডেন মার্করাম।
এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ। ২৯ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় তারা। প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস।
এদিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০তম উইকেট পেয়ে যান যশপ্রীত বুমরা। ভারতের হয়ে আর্শদীপ সিং, জাসপ্রিত বুমরাহ, বরুণ চক্রবর্তী ও অক্ষর প্যাটেল নেন ২টি করে উইকেট। বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে দুই দল।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আকবর আলি ও ট্রফি- শব্দগুলো ক্রমে একে অপরের সমার্থক হয়ে উঠছে। পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে পাঁচটি ঘরোয়া শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশকে ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক।
আর এই সাফল্য যে একদমই ফ্লুক নয়, আকবরের দলের ধারাবাহিকতাই সেটির প্রমাণ দেয়। সবশেষ তিনি জিতেছেন জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের শিরোপা। আর এই কৃতিত্ব অর্জনের পেছনে রয়েছে আকবরদের দীর্ঘ সু-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
আট দলের জাতীয় লিগে ছয় রাউন্ড শেষেও কাগজে-কলমে শিরোপা জেতার সম্ভাবনা টিকে ছিল ৬টি দলের। ২ জয় ও ৪ ড্রয়ের সঙ্গে দুটি বোনাস পয়েন্ট পেয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল সিলেট। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পরেই ছিল নবাগত ময়মনসিংহ। তাই ২৩ পয়েন্ট থাকা রংপুরের জন্য শেষ ম্যাচের সমীকরণ ছিল বেশ জটিল।
খুলনার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটি শুধু জিতলেই হতো না, তাদের চেয়ে থাকতে হতো সিলেট ও ময়মনসিংহ ম্যাচের দিকেও। তবে সবার আগে নিজেদের কাজটা সারার দিকেই মনোযোগ ছিল আকবরের।
মঙ্গলবার জাতীয় লিগের শিরোপা উদযাপন সেরে কিছুটা ফ্রি হওয়ার পর তিনি বললেন, শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া দ্বিতীয় ভাবনা ছিল না রংপুরের।
“আমরা তো তিন নাম্বারে ছিলাম তো ভাবনা ছিলো যে আমাদের জিততেই হবে। যদি জিততে পারি সেক্ষেত্রে হয়তোবা সিলেট আর ময়মনসিংহ খেলায় যদি রেজাল্ট আমাদের পজিটিভে আসে... মানে ওদের রেজাল্ট ওরা না করতে পারে সেক্ষেত্রে (ট্রফি) আমাদেরই আরকি।”
“আমাদের কাছে ছিলো যেটা, ম্যাচটা জিততেই হবে। তো যেহেতু বগুড়াতে খেলা, হিস্টোরিক্যালি বগুড়াতে রেজাল্ট হয়। মানে যেই টিমই করুক, কোনো না কোনো রেজাল্ট হবেই। তাই আমাদের একটাই কথা ছিল যে, ওরা যা করবে আমরা শেষ করব। একটা কথাই ছিল যে, সিচুয়েশন যত কঠিনই হোক আমরা জেতার জন্যই খেলব।”
সেই লক্ষ্যে প্রথম ইনিংসে খুলনার ৩০৮ রানের জবাবে মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে যায় রংপুর। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর আগুনঝরা বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে ৯৬ রানে অল আউট করে দেয় আকবরের দল।
পরে উদীয়মান বাঁহাতি ব্যাটার ইকবাল হোসেনের চমৎকার এক সেঞ্চুরিতে ২৩১ রানের লক্ষ্য অনায়াসেই তাড়া করে ফেলে রংপুর। ফল ৩ জয় ও ৩ ড্রয়ে তাদের ঝুলিতে হয় ৩১ পয়েন্ট।
পরদিন রাজশাহীর কাছে ময়মনসিংহের পরাজয় ও বরিশালের সঙ্গে সিলেটের ড্রয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় আকবরের অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ট্রফি।
২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতিয়ে অধিনায়ক হিসেবে আকবরের উত্থান। এরপর ২০২২ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণে রংপুরের শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার অধিনায়কত্বে ২০২৩ সালে বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হয় নর্থ জোন।
ধারাবাহিকতা ধরে রেখে গত বছর এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রথম আসরেই বাজিমাত করে আকবরের রংপুর। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে চলতি বছরের এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও চ্যাম্পিয়ন হন তারা।
এবার চার দিনের সংস্করণেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরোয়া ‘ডাবল’ ট্রফি ঘরে তুলল রংপুর। যা আরও পাকাপোক্ত করল ‘আকবর দ্য গ্রেট’ তকমা।
রংপুরের এই কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে তাদের দীর্ঘ পরিকল্পনা। লিগের সূচি পাওয়ার পরই সাত ম্যাচের ভেন্যু ও প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে টুর্নামেন্টের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেন আকবর, নাসির হোসেন, নাঈম ইসলামরা।
“যখন সূচি পেয়েছি, তখন সিনিয়র কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে কোচিং স্টাফ যারা ছিল... আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা এমনই ছিল যে, আমাদেরকে বগুড়ায় দুইটা ও রাজশাহীর একটা ম্যাচ জিততেই হবে। বাকি খেলাগুলো যদি জিততেও না পারি অন্তত যেন আমরা ড্র করতে পারি।”
যেই কথা সেই কাজ। কুকাবুরা বলে সিলেট ও কক্সবাজারে হওয়া প্রথম দুই রাউন্ডে ঢাকা ও ময়মনসিংহের সঙ্গে ড্র করে দুটি করে পয়েন্ট নিশ্চিত করে রংপুর। পরে ডিউক বলে ফিরলেও কক্সবাজারে তৃতীয় রাউন্ডে সিলেটের সঙ্গেও ড্র হয় তাদের ম্যাচ।
এরপর বগুড়ায় গিয়ে বরিশালকে ৮ উইকেটে হারিয়ে পূর্ণ ৮ পয়েন্ট পায় রংপুর। রাজশাহীর মাঠে খেলতে নেমে পঞ্চম রাউন্ডে তারা হারায় স্বাগতিক রাজশাহীকে।
ষষ্ঠ রাউন্ডের জন্য আবার কক্সবাজারে যায় আকবরের দল। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে হাসান মাহমুদ ও ইফরান হোসেনের তোপে মাত্র ৩৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। পরে ম্যাচটি তারা হেরে যায় ইনিংস ব্যবধানে।
আকবরের মতে, পুরো টুর্নামেন্টে ওই একটি ইনিংসই শুধু তার প্রত্যা্শামতো যায়নি।
“শুধু চট্টগ্রাম ম্যাচটা বাদে আর সব ম্যাচে আমাদের পজিটিভ রেজাল্টই বলবো। কুকাবুরাতে সিলেটের মাঠে খেলা হইছে, কক্সবাজারে খেলা হইছে। ওগুলো ম্যাচে রেজাল্ট বের করা কঠিন।”
“আমরা জানতাম যে আমাদের বগুড়াতে দুইটা খেলা আছে, রাজশাহীতে একটা খেলা আছে। তো এই তিনটা খেলায় রেজাল্ট করতেই হবে আমাদের।”
আর এই ফল পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারিগর মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। রংপুরের জেতা তিন ম্যাচেই ইনিংসে ৫ উইকেট আছে ২৫ বছর বয়সী পেসারের৷ সব মিলিয়ে মাত্র ৭ ইনিংসে তিনি নিয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ উইকেট। যার সৌজন্যে জিতেছেন লিগের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার।
ব্যাটিংয়ে সম্মিলিত পারফরম্যান্স ছিল দলের সবার। সর্বোচ্চ ৩০০ রান করেন নাঈম ইসলাম। মূলত বোলিং দিয়েই এবারের শিরোপাটি জিতেছে রংপুর। আরও একবার নিজেকে আকবর দ্য গ্রেট হিসেবে প্রমাণ করেছেন অধিনায়ক আকবর।

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২০২৫-২৬ মৌসুমের পর্দা নামল আজ। দুই মৌসুম পর আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রংপুর। দুই মাস আগেই এনসিএল টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উত্তরবঙ্গের দলটি। এবার চারদিনের ক্রিকেটেও ট্রফি ঘরে নিল আকবর আলির দল।
এনসিএলে সেরা উইকেটশিকারিদের তালিকায় সবার উপরে বরিশালের বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। সাত ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ৩৪ উইকেট। দুইবার নিয়েছেন ফাইফার, ৬৪ রানে ৭ উইকেট তাঁর সেরা বোলিং ফিগার।
চমক দেখিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন রংপুরের মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। চার ম্যাচে ৮ ইনিংসে নিয়েছেন ২৯ উইকেট। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার, এক ইনিংসে ২২ রানে ৫ উইকেট সেরা ফিগার মুগ্ধ’র। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের স্ট্রাইক ২৩,৯৩ অর্থাৎ প্রতি চার ওভার বল বল করে নিয়েছেন উইকেট। রয়েছেন তালিকায় দ্বিতীয়তে।
তালিকার তিন নম্বরে রয়েছেন বরিশালের রুয়েল মিয়া। ৬ ম্যাচে ১১ ইনিংসে রুয়েল শিকার করেছেন ২৭ উইকেট। ৬৪ রানে ৫ উইকেট এই বাঁ-হাতি পেসারের বোলিং ফিগার। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার।
চার নম্বরে চট্টগ্রামের স্পিনার নাইম হাসানের উইকেট সংখ্যা রুয়েল মিয়ার সমান। তবে এক ম্যাচ ও দুই ইনিংস বেশি খেলেছেন তিনি। ৭ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ২৭ উইকেট।
পাঁচ নম্বর নামটা সিলেটের আবু জায়েদ চৌধুরী রাহীর। পাঁচ ম্যাচে ১০ ইনিংসে ২৫ উইকেট নিয়েছেন এই মিডিয়াম পেসার। ৩৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট সেরা বোলিং ফিগার বাংলাদেশ টেস্ট দলে খেলা এই বোলারের।

চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা পূর্বাচল ক্রিকেট স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স বিসিবি বুঝে পেয়েছে ২০১৭ সালে। তবে ৩৭.৫৯ একর জায়গা এখনো পড়ে আছে অব্যবহৃত। একটি মাঠও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি প্রস্তুত করতে পারেনি বিসিবি। অধিকাংশ জায়গা ছেয়ে আছে বনঘাসে। দূর্বাঘাসের অস্তিত্ব নেই কোথাও। দুটি দেয়ালঘেরা অফিস এখানে ভবিষ্যতে বড় কর্মযজ্ঞের বার্তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতের আধুনিক রাজধানীতে এতো বড় একটি জায়গায় পরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট নগরে পরিনত করতে কে না চাইবে ? গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তাই মাঠ সংকট কাটানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট।
পূর্বাচলে তিনটি মাঠ তৈরির কাছে হাত দেয়ার কথাও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট-
'এক সময়ে এখানে পুরোটাই জঙ্গল ছিল। পূর্বাচলের এই সুন্দর জায়গাটিতে যতো দ্রুত সম্ভব খেলার উপযোগী করে তুলতে চাই।প্রায় ২০-২৫ দিন আগে এখানে আমি একবার এসেছিলাম। এতো সুন্দর জায়গা পাঁচ-সাত বছর পড়ে আছে। এখানে তিনটি মাঠে খেলা শুরু করতে চাই। ঢাকার অনেক ক্রিকেটের জন্য মাঠ ভাড়া করতে হয়। সময়মত লিগ আয়োজন করতে পারি না। ফতুল্লায়ও ২টি মাঠের কাজে হাত দিতে পারি। ফতুল্লায় ইনার এবং আউটারের কাজ ৭০% হয়ে গেছে।ওখানে ৩০% কাজ বাকি আছে। পূর্বাচলে ৩টি এবং ফতুল্লায় ২টি মাঠের কাজ শেষ করতে পারলে ঢাকার লিগগুলো আয়োজন করা যাবে। ভবিষ্যতে যে প্লান আছে, তখন না হয় গ্যালারি করতে পারব। মাঠের কাজ শুরু করেছি। ১০টি পিচ হবে প্রতিটি মাঠে। এভাবে তিনটি মাঠের কাজে হাত দিয়েছি। বেশ কিছু বালি ফেলতে হবে। প্রাথমিকভাবে ঘাস উঠানোর কাজ চলছে।'