২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩১ পিএম

সিলেট টাইটান্সের জয়ের জন্য তিন ওভারে বাকি ২৪ রান। বোলিংয়ে এলেন মেহেদি হাসান রানা। প্রথম বলই 'নো' করে বসলেন বাঁহাতি পেসার। তবে ঘুরে দাঁড়ালেন দারুণভাবে। ওভারের শেষ তিন বলে তিনি নিলেন টানা ৩ উইকেট, করলেন হ্যাটট্রিক। একইসঙ্গে ম্যাচে ফিরল নোয়াখালী এক্সপ্রেস।
রানার হ্যাটট্রিকে পর হাসান মাহমুদও করলেন চমৎকার ওভার। শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়াল ৬ বলে ১৩ রানে। প্রথম দুই বল ডট করলেও পরেরটি 'বিমার' করে বসলেন সাব্বির হোসেন। ফ্রি হিট পেয়ে ছক্কা মেরে দিলেন ইথান ব্রুকস।
সমীকরণ নামল ৩ বলে ৬ রানে। পরের বল চার মেরে দিলেন ব্রুকস। কিন্তু পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে গেলেন তিনি। সিলেটের তখন বাকি ১ উইকেট। আর শেষ বলে করতে হবে ২ রান। ওয়াইড করলেন সাব্বির। পরের বল লেগ বাই থেকে ১ রান নিয়ে সিলেটকে জয় এনে দিলেন সালমান ইরশাদ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক নোয়াখালী এক্সপ্রেসকে ১ উইকেটে হারাল নোয়াখালী। আগে ব্যাট করে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ফিফটিতে পায় ১৪৩ রানের পুঁজি। পরে নাটকীয় ব্যাটিং ধসের পরও শেষ বলে জিতে যায় স্বাগতিক সিলেট।
বিপিএলের ইতিহাসে ১ উইকেটে ফল আসা মাত্র তৃতীয় ম্যাচ এটি। এর আগে ২০১৩ সালে সিলেট রয়্যালস ও ২০২৪ সালে রংপুর রাইডার্স জিতেছিল ১ উইকেট।
নিজেদের শহরের মাঠে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে হারলেও দ্বিতীয়টিতেই জয়ের স্বাদ পেল সিলেট। আর এই প্রথম বিপিএল খেলতে এসে পরপর দুই ম্যাচ হেরে গেল নোয়াখালী।
চরম নাটকীয় ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসের ১৮তম ওভারে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন রানা। সব মিলিয়ে বিপিএলে এটি নবম হ্যাটট্রিক। এছাড়া টি-টোয়েন্টি সংস্করণে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে হ্যাটট্রিক করা অষ্টম বোলার তিনি।
রান তাড়ায় সিলেটের শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে সাইম আইয়ুব, রনি তালুকদার ও জাকির হাসান অল্প রানে আউট হয়ে গেলে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিক দলটি।
সেখান থেকে চতুর্থ উইকেটে ৬৫ বলে ৮৩ রানের জুটি গড়েন পারভেজ হোসেন ইমন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ম্যাচে ৬৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা ইমন এবার করেন ৪১ বলে ৬০ রান। ১৬তম ওভারে জহির খানের গুগলিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি।
ইমনের ফেরা দিয়েই নামে সিলেটের ধস। রানার হ্যাটট্রিকে মাত্র ৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। সেখান থেকে সাব্বিরের এলোমেলো শেষ ওভারের সৌজন্যে ম্যাচ জিততে পারে স্বাগতিক সিলেট।
মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৩৭ বলে ৩৩ রান। শেষ ওভারের নায়ক ব্রুকস করেন ১৩ বলে ১৬ রান।
৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন রানা।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা নোয়াখালীর শুরুটাও ছিল একদম যাচ্ছেতাই। দুই ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মাজ সাদাকাত (১ বলে ০), হাবিবুর রহমান সোহান (২ বলে ০) ও হায়দার আলি (৩ বলে ০)।
সৈকত আলি ও সাব্বির চেষ্টা করেন হাল ধরতে। কিন্তু সফল হননি। ১৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৭০ রান করতে পারে নোয়াখালী। পরে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও জাকের আলি অনিক।
দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ৩৯ বলে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। অপরাজিত ইনিংসে ৫১ বলে ৬৬ রান করেন অঙ্কন। জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ২৯ রান।
আগুনঝরা বোলিংয়ে ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নোয়াখালী এক্সপ্রেস: ২০ ওভারে ১৪৩/৭ (সাদাকাত ০, সোহান ০, সৈকত ২৪, হায়দার ০, অঙ্কন ৬১, সাব্বির ১৫, জাকের ২৯, রাজা ০, হাসান ১*; আমির ৪-০-২৫-১, খালেদ ৪-১-২৩-৪, সালমান ৪-০-৩৬-০, নাসুম ৪-০-২৮-০, সাইম ৪-০-২৫-২)
সিলেট টাইটান্স: ২০ ওভারে ১৪৪/৯ (সাইম ০, রনি ৯, জাকির ১৩, ইমন ৬০, মিরাজ ৩৩, আফিফ ৩, ব্রুকস ১৬ ,নাসুম ০, খালেদ ০, আমির ১*, সালমান ১*; হাসান ৪-০-১৯-২, রানা ৪-০-৩৪-৪, রাজা ৪-০-২৪-১, সাব্বির ৩-০-২৯-০, জহির ৪-০-২৩-১, সাদাকাত ১-০-১৩-০)
ফল: সিলেট টাইটান্স ১ উইকেটে জয়ী
No posts available.
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৪৭ পিএম
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:৪৭ পিএম

বিপিএলের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। মাঠেই হার্ট অ্যাটাক করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ মাহবুব আলি জাকি।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ মাঠে লুটিয়ে পড়েছিলেন প্রয়াত আলি মাহবুব জাকি। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সিপিআর দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর খবর আসে, মাহবুব আলী আর নেই।
সিপিআর বা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন জীবন রক্ষাকারী এক কৌশল। এটি সাধারণত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাক হলে জীবন রক্ষা করে। হঠাৎ এ রকম অসুস্থ হয়ে পড়ার সময় থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত এই সংকটাপন্ন সময়টায় কারও জীবন বাঁচানোর জন্য সিপিআর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাহবুব আলি জাকিরের হার্ট অ্যাটাকের পর তাকে চিকিৎসকরা সহ সিপিআর দেন ঢাকা ক্যাপিটালস ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের ট্রেনার ইফতেখার ইসলাম ইফতি। অ্যাম্বুলেন্সেও দেওয়া হয় সিপিআর। তবে শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে পাড়ি দেন জাকি।
গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়ের বর্ণনা দেন ইফতেখার ইসলাম ইফতি। সংবাদমাধ্যমকে ঢাকা ক্যাপিটালসের ট্রেনার বলেন,
‘ফিজিও, ট্রেইনার বা ডক্টররা ছাড়া এই জিনিস হ্যান্ডেল করার মতো অন্য কেউ নাই। ওই টিমের ফিজিও ছিলেন। দ্রুত চিকিৎসকও আসে। আমরা ফিজিও ট্রেইনাররা ঐখানে গিয়েছি। তারপর বাকি সবাইকে সরিয়ে দেই। আমরা আমাদের প্রসেস অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করেছি। তখন ওনার সেন্স ছিল। ডাক্তার পরীক্ষা করছিল। আমরা দেখতেছিলাম পাশ থেকে ভিড় সামলানোর চেষ্টা করি।’
একটা সময় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রয়াত জাকির। তবে একের পর এক সিপিআর দেওয়ার পর নাকি আবার পালস আর স্বাভাবিকভাবে শ্বাস ফেলছিলেন তিনি। ইফতি বলেন,
‘একসময় দেখা গেল যে উনার শ্বাস আর ডাক্তার পালস পাচ্ছে না। তখন তিনি ডিসিশন নিয়েছে যে সিপিআর দিতে হবে। তো তাৎক্ষণিকভাবেই ডাক্তার সিপিআর দেওয়া শুরু করে। আমরাও তো প্রস্তুত ছিলাম কারণ এক, একার পক্ষে সিপিআর দেওয়া সম্ভব না। তো ডক্টর দুইটা সিপিআর দেওয়ার পরে, দুইবার সিপিআর দেওয়ার পরে ডক্টর আমাকে ট্রান্সফার করে। তো আমি আবার পাঁচবার সিপিআর দেই। তারপরে একসময় তিনি ফিরেও আসেনল। নড়াচড়া আর শ্বাস ফেলছিলেন।’
তারপর অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও সিপিআর দিয়ে যান ইফতি সহ অন্য ট্রেনার তুষার। হাতপাতালে নেওয়ার পর জানা যায় আর নেই মাহবুব আলি জাকি।
সবার সর্বাত্মক চেষ্টার পরও জাকির মৃত্যু দুর্ভাগ্য বলছেন ইফতি,
‘আমরা ট্রেইনার ফিজিও বা চিকিৎসকরা সবসময় চেষ্টাই করি যে এই ধরনের জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা নিতে। যদি একজনকে প্রাণে বাঁচানো যায় করা যায় তাহলে এটা অনেক গর্বের বিষয় হতো। কিন্তু আসলেই আসলেই খুব দুখের ব্যাপার হচ্ছে যে মৃত্যুটা তার হয়তো লেখা ছিল। আমরা আমাদের মত করে চেষ্টা করেছি মানে যেটা চিকিৎসকের ভাষায় যেটা করা দরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, চিকিৎসকরাও চেষ্টা করেছে, তবে আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল।’

পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) পরবর্তী পর্বের জন্য দুটি নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি যুক্ত করতে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। এই দুই নতুন দলের জন্য রিজার্ভ (ফ্র্যাঞ্চাইজি) মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রত্যেক মৌসুমে ১.৩ বিলিয়ন রুপি। অর্থাৎ ১৩০ কোটি পাকিস্তানি রুপি। পিসিবির ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা পিটিআই।
পিসিবি জানিয়েছে, নতুন দুটি দলের মালিকানা বিক্রির চূড়ান্ত নিলাম অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ জানুয়ারি। এরই মধ্যে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক দরপত্র জমা দিয়েছে। নিলামে কেউ যদি নির্ধারিত অঙ্কের চেয়ে কম দর দেয়, তাহলে সেটি গ্রহণ করা হবে না।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কয়েক সপ্তাহ আগে পিসিবির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে মালিকানা ছেড়ে দেওয়া মালতান সুলতানসের সাবেক মালিকরাও নতুন দুটি দলের জন্য প্রাথমিক বিড ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন।
এদিকে মালতান সুলতানস ফ্র্যাঞ্চাইজিটির ভবিষ্যৎ মালিকানা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। জোর গুঞ্জন রয়েছে, পিসিবি অন্তত পিএসএলের একাদশ সংস্করণ পর্যন্ত দলটি নিজেই পরিচালনা করতে পারে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা পিএসএল।
পিসিবির দাবি, নতুন দুটি দলের জন্য মোট ১২টি পক্ষ প্রাথমিক দরপত্র জমা দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বিদেশি। তবে আর্থিক ও কারিগরি যাচাই-বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে যোগ্য দরদাতাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে এরই মধ্যে পিসিবি লন্ডন ও নিউইয়র্কে পিএসএল রোডশোর আয়োজন করেছে। নতুন দুটি দলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ টানাই ছিল এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে কেন্দ্রীয় রাজস্ব বণ্টনের বিষয়েও বড় ঘোষণা দিয়েছে পিসিবি। বোর্ড জানিয়েছে, আগামী পাঁচ সংস্করণের জন্য ১১তম আসর থেকে শুরু করে—প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কেন্দ্রীয় রাজস্ব তহবিল থেকে ন্যূনতম ৮৫ কোটি পাকিস্তানি রুপি দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। কোনো মৌসুমে যদি কোনো দলের প্রাপ্য অর্থ এই গ্যারান্টিকৃত অঙ্কের নিচে নেমে যায়, সে ঘাটতি পিসিবিই পূরণ করবে।
বর্তমানে পিএসএলের ছয়টি দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ভিন্ন ভিন্ন হলেও লিগ সম্প্রসারণের পর আটটি দলই কেন্দ্রীয় রাজস্ব তহবিল থেকে সমান অংশ পাবে বলে জানিয়েছে পিসিবি।
বর্তমান দলগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী, কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের মূল্য ৩৬ কোটি রুপি, পেশোয়ার জালমির ৪৮ কোটি, ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের ৪৯ কোটি, করাচি কিংসের ৬৫ কোটি, লাহোর কালান্দার্সের ৬৭ কোটি এবং মুলতান সুলতানসের মূল্য সবচেয়ে বেশি—১৮০ কোটি পাকিস্তানি রুপি।
এ ছাড়া পিসিবি জানিয়েছে, প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি পিএসএল ড্রাফটে খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে সর্বোচ্চ ১৪ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে।
মুলতান সুলতানসের সাবেক মালিক আলী তারিন আগেই পিএসএলের আর্থিক কাঠামো নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, রাজস্ব বণ্টনে বৈষম্যের কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো লোকসানের মুখে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটেই পিসিবির নতুন আর্থিক নিশ্চয়তা ও ফ্র্যাঞ্চাইজি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

খেলার মাঠে কোচের মৃত্যু। এমন বিষাদময় ঘটনায় জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে ঢাকা ক্যাপিটালসের বোলিং কোচ মাহবুব আলী জ্যাকির। মাঠই ছিল তার ঠিকানা। মাঠেই তার মৃত্যু। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে বিসিবির চাকরি করেছেন। বাংলাদেশ নারী দলের কোচিংয়েও ছিলেন যুক্ত। জীবদ্দশায় দেখে গেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের গর্বিত সদস্য তিনি। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচের বিষাদময় এ ঘটনা বিপিএলেকে করেছে শোকাচ্ছন্ন।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ ঢাকা ক্যাপিটালস–রাজশাহী ওয়ারিয়র্স ম্যাচ শুরু হতে যখন মাত্র মিনিট বিশেক বাকি। টসের পর ফিল্ডিং সাইড ঢাকা ক্যাপিটালস ক্রিকেটাররা যখন শেষ মুহূর্তের অনুশীলনে ব্যস্ত, তখন কোচিং করাতে করাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ মাহবুব আলী জাকি। তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিপিআর দিয়ে নেওয়া হয় হাসপাতালে। সিলেটে আল হারমাইন হাসপাতালে নেওয়ার পথে জীবনপ্রদীপ নিভে যায় ৫৯ বছর বয়সী এই কোচের। বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলার মাঠে কোচের মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০০১-২ ক্রিকেট মৌসুমে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হেড কোচ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ক্রিকেট দলের পেস বোলার দৌলত জামানও আবাহনীর বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। দুটি শোকাবহ ঘটনার ম্যাচেই শোককে শক্তিতে পরিনত করে জিতেছে শিষ্যরা। দৌলত জামানের মৃত্যুশোকের দিনে আবাহনীকে হারিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশনের শিরোপার পথ মসৃন করেছে পাইলটের নেতৃত্বে ভিক্টোরিয়া। এবং সেবারের লিগের ট্রফি জিতে তা উৎসর্গ করেছেন কোচকে। সহকারী কোচ মাহাবুব আলী জ্যাকীর মৃত্যুশোকও শক্তিতে পরিণত করার সংকল্প এখন ঢাকা ক্যাপিটালসের।
এমন এক বিষাদময় ম্যাচে সিলেটে ঢাকা ক্যাপিটালস-রাজশাহী ওরিয়র্সের লড়াইটা হয়েছে দুই পাকিস্তানী বাঁ হাতি স্পিনারের মধ্যে। ঢাকা ক্যাপিটালসের ইমাদ ওয়াসিম, রাজশাহী ওরিয়র্সের মোহাম্মদ নেয়াজ-দু'জনেই পেয়েছেন তিনটি করে উইকেট। দু'জনেই করেছেন কিপ্টে বোলিং। ১১ ডট দিয়ে ৩ শিকারের বিপরীতে ইমাদ ওয়াসিমের খরচ মাত্র ১৬, সেখানে ১২ ডট দিয়ে ৩ উইকেটের বিপরীতে মোহাম্মদ নেওয়াজের খরচা ২১।
২৪ ঘন্টা আগে যে পিচে বোলাররা খেয়েছে পিটুনি, সিলেট টাইটান্সের ১৯০/৫ এর জবাব দিয়ে রাজশাহী ওরিয়র্স জিতেছে ৮ উইকেটে। সেই পিচে শনিবার রাজশাহী ওরিয়র্স ধুঁকেছে রানের জন্য। পাকিস্তানের বাঁ হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম (৪-০-১৬-১) এবং বাঁ হাতি ফার্স্ট বোলার সালমান মীর্জার (৪-০-১৭-১) বোলিংয়ে রাজশাহী ওরিয়র্স থেমেছে ১৩২/৮-এ। অথচ, ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ৫২/২ স্কোরে বড় পুঁজিরই স্বপ্ন দেখেছে রাজশাহী।
বিপিএলের উদ্বোধনী দিনের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত দ্বিতীয় ম্যাচেও রাজশাহীর সর্বোচ্চ সংগ্রাহক (২৮ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩৭)। প্রথম ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম করেছেন ২৩ বলে ২ বাউন্ডারিতে ২৪।
সহকারী কোচের মৃত্যুসংবাদে যেখানে ভেঙ্গে পড়ার কথা ঢাকা ক্যাপিটালসের, সেখানে শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে ঢাকা ক্যাপিটালস ক্রিকেটাররা। রাজশাহী ওরিয়র্সকে ১৩২/৮-এ আটকে ফেলে হিসেবি ব্যাটিংয়ে ৭ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জিতেছে রাজধানীর প্রতিনিধিত্বকারী দলটি। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ৪৩/২ স্কোরেও ব্যাকফুটে নামেনি ঢাকা ক্যাপিটালস। মোহাম্মদ নেওয়াজের বোলিং সামাল দিয়ে অন্য বোলারদের উপর চড়াও হয়েছে তাঁরা। জাতীয় দলের বাইরে ৩ বছর কাটানো কতোটা যন্ত্রনার, তা ভালই অনুভব করছেন সাব্বির রহমান রুম্মান। এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে শনিবার ফিনিশারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২১০.০০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১০ বলে ১ চার, ২ ছক্বায় হার না মানা ২১ রান। রাজশাহী ওরিয়র্সের শ্রীলংকান পেসার বিনুরু ফার্নান্ডোকে ছক্কার চুমোয় করেছেন ফিফটি। শেষ ৩০ বলে ৪৩ রানের টার্গেটকে কঠিন হতে দেননি সাব্বির-শামীম। অবিচ্ছিন্ন ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে তাদের ১৮ বলে ৩৬ রানের কল্যানে ৭ বল হাতে রেখে ঢাকা ক্যাপিটালস ৫ উইকেটে জিতে শুভ সূচনা করেছে। এই ম্যাচে এক সময়ের ফিনিশার খ্যাত নাসিরও ফিরেছেন স্বরুপে। করেছেণ অলরাউন্ড পারফর্ম (২/৩২ ও ১৯ রান)। আবদুল্লাহ আল মামুন বিপিএলের গত আসরে খেলার সুযোগ পাননি। তার আগের দুই আসর মিলিয়ে খেলেছেন মাত্র ৩ টি ম্যাচ। গড়ে ১৭.০০ রান করা এই ২২ বছর বয়সী ছেলেটি শনিবার ঢাকাকে দিয়েছেন জয়ের আবহ (৩৯ বলে ৪ চার, ১ ছক্বায় ৪৫)।
সহকারী কোচর মৃত্যুশোককে শক্তিতে পরিণত করা জয়ে ঢাকা ক্যাপিটালস বিপিএলে দিয়েছে দারুণ এক বার্তা।

দুই দিনেই শেষ হয়েছে বক্সিং ডে টেস্ট। বোলারদের দু’হাত ভরেই দিয়েছে মেলবোর্নের পিচ। আর ব্যাটারদের জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। ম্যাচ জয়ের পরও পিচ নিয়ে রাগ ঝাড়েন বেন স্টোকস। এবার ইংলিশ অধিনায়কের সুরেই মুখ মেলালেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টের উইকেট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্টিভ স্মিথ।
গতকাল ম্যাচের প্রথম দিনেই পড়ে ২০ উইকেট। আজ দ্বিতীয় দিনে আরও ১৬ উইকেট পড়ে, মোট ৩৬ উইকেট পতনের মধ্য দিয়ে মাত্র দুই দিনে শেষ হয় ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দেশটির মাটিতে প্রায় ১৫ বছরের জয়খরা কাটিয়েছে ইংল্যান্ড।
বলের হিসাবে ৮৫২ বলেই শেষ হয়েছে বক্সিং ডে টেস্ট। চার ইনিংস মিলিয়ে ট্রাভিস হেডের করা ৪৬ রানই সর্বোচ্চ। ম্যাচ শেষে মেলবোর্নের পিচ নিয়ে তাই ক্ষোভ লুকাননি স্বাগতিক দলের অধিনায়ক স্মিথ।
আরও পড়ুন
| সালাহর গোলে শেষ ষোলোতে মিসর, অপেক্ষা বাড়ল মরক্কোর |
|
মেলবোর্নের পিচে বোলারদের কি খুব বেশি সহায়তা দেওয়া হয়েছিল প্রশ্নে স্মিথ বলেন, ’আমার মনে হয় একটু বেশি ছিল। দুই দিনে ৩৬ উইকেট পড়া অনেক বেশি। সম্ভবত তারা (কিউরেটর) যতটা চেয়েছিল, তার চেয়ে পিচ একটু বেশি সহায়তা দিয়েছে। যদি ঘাস ৮ মিলিমিটারে নামানো যেত, তাহলে পরিস্থিতি একটু ভারসাম্যপূর্ণ হতো।’
ম্যাচ দ্রত শেষ হয়েছে জানিয়ে স্মিথ বলেন, ‘ম্যাচটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। আমরা যদি দুই ইনিংসে আরও ৫০ বা ৬০ রান যোগ করতে পারতাম, তাহলে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকতাম। বল কিছুটা নরম হওয়ার পর ইংল্যান্ডের ওপেনাররা যেভাবে খেলেছে, সেটাও বড় ভূমিকা রেখেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পিচ নিয়ে কড়া সমালোচনা করতে দেখা গেছে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসকেও। তিনি বলেন, ‘বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ দুই দিনেরও কম সময়ে শেষ হয়ে যাবে, এটা কাম্য নয়। যদি পৃথিবীর অন্য কোথাও এমনটা হতো, তাহলে আগুন লেগে যেত।’

রাজশাহী ওয়ারিয়র্সকে উড়িয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে পথচলা শুরু করল ঢাকা ক্যাপিটালস। তবে তাদের দলে এখন শোকের ছায়া। কারণ ম্যাচ চলাকালেই মৃত্যুবরণ করেছেন দলের সহকারী কোচ মাহবুব আলি জাকি। তাই তাকেই জয়টি উৎসর্গ করেছে ঢাকা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার ইমাদ ওয়াসিমের বাঁহাতি স্পিনের জাদুর পর আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাব্বির রহমানের চমৎকার ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটের জয় পায় ঢাকা।
টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে রাজশাহীকে ১৩২ রানে আটকে দেয় ঢাকা। পরে ১৮.৫ ওভারে সেটি তাড়া করে ফেলে মোহাম্মদ মিঠুনের নেতৃত্বাধীন দল।
ম্যাচ শুরুর আগে দলকে অনুশীলন করানোর সময়ই অসুস্থ হয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়েন জাকি। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এরপর ম্যাচ চলাকালেই আসে দেশের অভিজ্ঞ এই পেস বোলিং কোচের মৃত্যুর খবর। তাই দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন দুই দলের ক্রিকেটার, ম্যাচ অফিসিয়াল ও মাঠে উপস্থিত বাকিরা।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে জাকির জন্য দোয়া করেন ঢাকার অধিনায়ক মিঠুন।
আরও পড়ুন
| সাব্বির-মামুনদের ব্যাটে শান্তদের হারাল ঢাকা |
|
“ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমাদের জন্য এটি অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ তিনি আমাদেরকে সবসময় বাবার মতো করে দেখতেন। তাই, আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।”
“অবশ্যই প্রতিটি ম্যাচে আমরা যখন পরিকল্পনা সাজাই, আমরা জিততে চাই। বিশেষ করে এই জয়টি আমরা জাকি স্যারকে উৎসর্গ করতে চাই। দোয়া করি, আল্লাহ্ তাকে জান্নাত নসিব করুন।”
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ইমাদ ওয়াসিম। পুরস্কার গ্রহণ করে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় নিজ থেকেই জাকির জন্য দোয়া করেন পাকিস্তানি স্পিনার।
“প্রথমত ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি (জাকি) খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আজকে চলে গেলেন। দোয়া করি, আল্লাহ্ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন ও তার পরিবারকে এই শোক সইবার ধৈর্য দান করুন।”