১৫ জুন ২০২৫, ৩:২৮ পিএম
নীল আকাশের নীচে আমি, রাস্তা চলেছি একা… বাংলার কিংবদন্তি এই গান এইডেন মার্করামের শোনার কোনো কারণ নেই। যদি শুনে থাকতেন, তাহলে লর্ডসের ব্যালকনিতে ফেরার পথে গুনগুন করে নিশ্চয় এই গানটিই গাইতে চাইতেন তিনি। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস গড়া জয়ে যে তিনি একাই ছুটেছেন অমরত্বের পথে, যেখানে তার পেছনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল গোটা একটা জাতির দীর্ঘদিনের হাহাকার আর না পাওয়ার বেদনা।
রান তাড়ায় মার্করাম ১৩৬ রানে থাকা অবস্থায় জশ হ্যাজেলউডের ওভারেই হয়ত চেয়েছিলেন ম্যাচটা শেষ করে দিতে। তবে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়লেন ট্রাভিস হেডের হাতে। করতালির মাধ্যমে পুরো লর্ডস দাঁড়িয়ে গেল সম্মান জানাতে। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা একে একে এগিয়ে আসলেন মার্করামের কাছে, যিনি ১৫ বছর পর তাদের স্বাদ দিয়েছেন ফাইনালে হারের ভুলে যাওয়া এক অভিজ্ঞতার। তবে আশেপাশের সবকিছু যেন তখন ধারন করতে পারছিলেন না দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্টাইলিশ ব্যাটার। তিনি ব্যাটটাকে এমনভাবে কাঁধে নিয়ে নিলেন, যেন একজন কাঠুরে সদ্যই কেটে আসলেন এক শতবর্ষী বটগাছ। ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত এক চাহনিতে ফুটে উঠল অনেক না পাওয়া কষ্টের পূর্ণতা দেওয়ার অভিব্যক্তি।
আপনি যদি পুরো ম্যাচটা না দেখে কেবল মার্করামের আউট হওয়ার পরের চিত্রগুলো দেখেন লর্ডসের বিখ্যাত ড্রেসিংরুমে যাওয়া পর্যন্ত, মনে হতেই বাধ্য যে হয়ত দলকে বিপদে ফেলে বাজে এক শট খেলে তিনি উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। নির্লিপ্ত, ধীরগতিতে এমনভাবে নিজেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন, যেন নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেননি। আসলেই কি তাই?
মার্করাম তো তার আগে খেলে ফেলেছেন সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এক ইনিংস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন অমিত সম্ভাবনা নিয়ে। অ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আভাস দিয়েছিলেন ভবিষ্যতে জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ারও। তবে লর্ডসের ফাইনালের আগ পর্যন্ত ক্রিকেটার ও অধিনায়ক হিসেবে নিজের নামের প্রতি সেভাবে সুবিচর করতে পারেননি। দুই বার টেস্ট দল বাদ পড়েছিলেন ফর্মের কারণে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগেও প্রশ্ন ছিল, মার্করাম কীভাবে দলে থাকে!
আরও পড়ুন
মার্করাম বীরত্বে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা দক্ষিণ আফ্রিকার |
![]() |
সেই মার্করামই যখন চতুর্থ দিনের ঝকঝকে সকালে আউট হলেন, তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিহাস গড়া থেকে কয়েক কদম দূরে। মূল কাজটা করার পর তিনি চেয়েছিলেন দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়তে, সেটা না হওয়াতেই হয়ত সাজঘরের ফেরার পথে দেখা মেলেনি তার হাসি মুখের। নাকি এর সাথে মিশে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের যুগ যুগের চাপা কান্নাও?
১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত এখনকার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে, তখন কে ভেবেছিলে যে পরের আইসিসি ইভেন্টে শিরোপা জিততে তাদের অপেক্ষা করতে হবে ২৭ বছরের? কে ভেবেছিল বৃষ্টি, ভাগ্য, ক্রিকেটের আইন সব দাঁড়িয়ে যাবে তাদের সাফল্য রুখে দিতে? কে ভেবেছিল দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বয়ে বেড়াতে হবে ‘চোকার্স’ নামের এক অনাকাঙ্ক্ষিত খেতাব? কেউই হয়ত নয়।
আর এই কারণেই বারবার শিরোপার খুব কাছে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই বিখ্যাত টাই হওয়া সেমিফাইনাল থেকে শুরু করে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের হার… মার্করাম শৈশব থেকে ক্রিকেটার হওয়ার পথচলায় সবই দেখেছেন মাঠের বাইরে ও মাঠে থেকে। তিনিও তাই ধারণ করেন কষ্টের সেই বোঝা, যা এতদিন চেপে ছিল গোটা দক্ষিণ আফ্রিকার কাঁধে। হয়ত এই কারণেই ফাইনালে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করে ব্যাটটা কাঁধে নিয়েছিলেন মার্করাম, পুরো জাতির বোঝা যে এই ইনিংসের প্রতিটি বলেই বয়ে বেরিয়েছেন তিনি।
অবশ্য বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই মার্করামের মাঝে এমন কিছুর সম্ভাবনা দেখা হচ্ছিল। একজন ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাটার হওয়ার সব স্কিলই আছে তার। নতুন বল খেলার দক্ষতা, ইনিংস মেরামত করা, পাল্টা আক্রমণ করা বা বড় ইনিংস খেলা, সবই আছে তার মাঝে। তবে ক্রিকেটে আপনি কি করতে পারেন, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন আপনি কি করে দেখাতে পারছেন। আর এখানেই বারবার তিনি আটকে যাচ্ছিলেন একটি সীমার মাঝে। হয়ত এজন্যই যে, তিনি ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটা বরাদ্দ রেখেছেন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাইনালের জন্য।
আরও পড়ুন
অবশেষে দ.আফ্রিকার ‘চোকার্স’ ট্যাগ মুক্তির আনন্দ |
![]() |
অথচ প্রবল চাপ নিয়ে নামা সেই ফাইনালে প্রথম ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ব্যাট করতে নামেন, ২৮২ রানের টার্গেটের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার আবার চোক করার সম্ভাবনা নিয়েই তখন আলোচনা ছিল বেশি। তবে ইনিংসের প্রথম ডেলিভারি থেকেই মার্করাম এমনভাবে ব্যাট চালানেন, যেন এই ইনিংসে তিনি যতক্ষন চাইবেন, ঠিক ততক্ষণই ব্যাট করে যেতে পারবেন।
আর শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। নির্ভুল এক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে সুযোগই দেননি কোনো। তৃতীয় উইকেটে পুরো ইনিংসে চোট নিয়ে খেলা টেম্বা বাভুমাকে সঙ্গ দেন ঢাল হয়ে। অধিনায়ককে সাহস যুগিয়েছেন চালিয়ে যেতে। হয়ত মার্করাম জানতেন, এই ফাইনালটা তাকে জেতার জন্যই খেলতে হবে। আর শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে তিনিই হবেন কাণ্ডারি। হয়ত রি কারণেই এক বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে অল্পের জন্য শিরোপার স্বাদ পাননি অধিনায়ক হিসেবে।
মাঠে থেকে শেষটা না করতে পারলেও মার্করাম কাজের কাজটা করে তবেই আউট হয়েছেন। এরপরও কেন মার্করামের আউট হয়ে ফেরার পথে অমন মিশ্র অনুভূতি? তৃপ্তির আনন্দ বোধহয় এমনই হয়। সময়টা তাই মার্করামের, সময়টা তাই দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের জয়গান গাওয়ার, যা তাদের হাতে ধরা দিয়েছে সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত উৎস থেকে। যা পারেননি গ্রায়েম স্মিথ, হার্শেল গিবস, শন পোলক, এবি ডি ভিলিয়ার্স বা ডেল স্টেইন, তা কিনা ধরা দিল মার্করামের হাত ধরে! ক্রিকেট বা জীবন এভাবেই তো বারবার মিলিয়ে দেয় সব হিসাব-নিকাশ।
No posts available.
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:০৮ এম
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১৪ এম
আফগানিস্তানকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কার দারুণ জয়ের আনন্দ হয়তো বেশিক্ষণ করতে পারলেন না দুনিথ ভেল্লালাগে। কারণ ম্যাচ শেষ না হতেই তিনি পেয়েছেন বাবার মৃত্যুর খবর। কলম্বোতে সম্ভাব্য হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বাঁহাতি স্পিনারের বাবা সুরঙ্গা ভেল্লালাগে।
শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম নিউজওয়্যার এক প্রতিবেদনে ও শ্রীলঙ্কার প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক রেক্স ক্লেমেন্ত এক টুইটার জানিয়েছেন এই খবর। জানা গেছে, ম্যাচ শেষ হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজার ভেল্লালাগেকে তার বাবার মৃত্যুর করুণ সংবাদটি দিয়েছেন।
প্রয়াত সুরঙ্গা নিজেও একজন ক্রিকেটার ছিলেন। কখনও স্বীকৃত ক্রিকেটে না খেললেও, স্থানীয় পর্যায়ের ক্রিকেট খেলেছেন দুনিথ ভেল্লালাগের বাবা।
আরও পড়ুন
দেখে নিন সুপার ফোরে বাংলাদেশের সূচি |
![]() |
ব্যক্তিগতভাবে দিনটি সব দিকেই খুব খারাপ কাটালেন দুনিথ ভেল্লালাগে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ১৭ রান দেন তিনি। কিন্তু শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে মোহাম্মদ নবির কাছে ৫টি ছক্কা হজম করেন ২২ বছর বয়সী স্পিনার।
এর আগে দুশমন্থ চামিরার বলে নবির ক্যাচও ছাড়েন দুনিথ ভেল্লালাগে। তখন মাত্র ৫ রানে ছিলেন নবি। ওই সময় জীবন পেয়েই শুরু হয় তাণ্ডব। শেষ পর্যন্ত মাত্র ২২ বলে খেলেন ৬০ রানের রেকর্ড গড়া এক বিধ্বংসী ইনিংস।
বল হাতে বাজে পারফরম্যান্সের পর কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিসের সৌজন্যে ম্যাচ জেতার আনন্দ পান দুনিথ ভেল্লালাগে। কিন্তু এরপরই যেন জীবনের সবচেয়ে খারাপ সংবাদটি পৌঁছায় তার কানে।
পয়সা উসুল ম্যাচ যাকে বলে- আজ আবু ধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচ ছিল তার চেয়েও বিশেষ। এই ম্যাচে দুই দেশের দর্শকদের সঙ্গে ধুকপুকানি ছিল বাংলাদেশেরও। কারণ, দুই দলের জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভর করেছিল লিটন দাসদের সুপার ফোরে ওঠার ভাগ্য। শেষ পর্যন্ত আফগানদের ৬ উইকেটের পরাজয়ে আখের লাভ বাংলাদেশের।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে নিয়ে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা |
![]() |
সুপার ফোরের ম্যাচ গুলো শুরু হবে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে। শেষ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। আর ফাইনাল ২৮ সেপ্টেম্বর।
জেনে নেওয়া যাক। কবে কখন বাংলাদেশের ম্যাচগুলো।
দেশ | প্রতিপক্ষ | তারিখ | সময় | ভেন্যু |
বাংলাদেশ | শ্রীলঙ্কা | ২০ সেপ্টেম্বর | রাত ৮.৩০ | শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়াম, আবু ধাবি |
বাংলাদেশ | ভারত | ২৪ সেপ্টেম্বর রাত | ৮.৩০ মিনিট | দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম |
বাংলাদেশ | পাকিস্তান | ২৫ সেপ্টেম্বর রাত | ৮.৩০ মিনিট | দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম |
অনেক সমীকরণ। যদি-কিন্তু আর হিসাব নিকেশ। অথচ ক্রিকেট বোদ্ধাদের চায়ের টেবিলের সব আড্ডা আর নোটবুকের আঁকিবুকি উবে গেল এক শ্রীলঙ্কার কারণে। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চারিথ আসালাঙ্কাদের ৭ উইকেটের জয়ে সুপার ফোরের টিকিট নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
আজ আবু ধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করা আফগানিস্তানকে ১৬৯ রানের পুঁজি এনে দিতে সাহায্য করেন মোহাম্মদ নবি। পরে ৮ বল হাতে রেখে তা টপকে যায় শ্রীলঙ্কা।
আরও পড়ুন
এডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর প্রেরণে ক্রীড়া সচিবকে বিসিবি সভাপতির নির্দেশ |
![]() |
বাংলাদেশকে সুপার ফোরে তুলতে ১৭০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পাড়ি দিতে হতো শ্রীলঙ্কাকে। হেরে গিয়েও লিটন দাসদের শেষ চারে উঠিয়ে দিতে পারত লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কা ১০০ বা এর কম রানে আটকে গেলেই আসালাঙ্কার দলকে নেট রান রেটে পেছনে ফেলত বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে নিয়ে উঠে যেত সুপার ফোরে। তবে রশিদ খানদের ব্যর্থতায় লঙ্কানদের সঙ্গে সুপার ফোরে পৌঁছালো বাংলাদেশ।
এদিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ২০ বলে অর্ধশতক তুলেছেন নবি। তা না হলে ১৫ রানের বেশি তোলাই হতো না আফগানদের। ইনিংসের শেষ দুই ভারে মূলত বানের পানির মতো রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে। ওভারে দুনিথ ভেল্লালাগকে ৫ ছক্কা মারেন নবি। শেষ ওভারে দলের স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয় ৩২ রান। এর আগের ওভারে দুশমন্থ চামিরাকে টানা তিন চার মারেন নবি। অথচ ইনিংসের ১৮ ওভার কালীন মনে হচ্ছিল সাদামাটা পুঁজি গড়তে যাচ্ছে আফগানরা। এক নবিই সব হিসেব বদলে দিলেন। ১৭তম ওভারের সময় আফগানদের রানরেট ছিল ৬.৬৬। পূর্ণাঙ্গ ইনিংস শেষে সেটি দাঁড়ায় ওভারপ্রতি ৮.৪৫ রান।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে সুপার ফোরে ওঠাতে শ্রীলঙ্কার সমীকরণ |
![]() |
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কার উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। দলের ২২ রানের মাথাতে ৫ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এক প্রান্ত আগলে ধরে খেলেছেন কুশল মেন্ডিস। তিনে নেমে কামিল মিশারা ফেরেন ১০ বলে ৪ রান করে।
চারে নামা কুশল পেরেরা ভালোই শুরু পান। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৫৩ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। পাওয়ারপ্লের শেষেও ছুটেছে লঙ্কানরা। দুই কুশলের উইলোবাজিতে কক্ষপথেই ছিল লঙ্কানরা। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে ইতি টেনে দেন কুশন ও কামিন্দু।
বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে আগামী ৪ বছরের জন্য বিসিবির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দেখতে চান বলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহামুদ সজীব ভূঁইয়ার ইচ্ছের কথা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কীভাবে বুলবুল সভাপতি পদে নির্বাচিত হবেন, তার ছকঁও একেঁছে ক্রীড়া প্রশাসন। ক্যাটাগরি-২ তে ক্লাব কোটার ১২ পরিচালকের সব কটিতে তামিম সমর্থিত প্যানেলের জয়ের আভাস পেয়ে বিকল্প উপায় হিসেবে ক্যাটাগরি-১ এ জেলাও বিভাগীয় কোটার ১০, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ২ পরিচালক, ক্যাটাগরি-৩ এ সাবেক ৫ অধিনায়ক, ১০ সাবেক জাতীয় ক্রিকেটারও প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটার, বিভিন্ন সার্ভিসেস, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ডসমূহ, এনএসসি এবং সংশ্লিস্টদের ভোটে নির্বাচিত ১ পরিচালক কোটার পূর্ণ সমর্থন পেতে চাইছে বুলবুল। সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে হলে দরকার ২৫ পরিচালকের মধ্যে ১৩টি ভোট। সে কা্রণেই ছঁক এঁকে বুলবুলের সমর্থনে ১৩টি পরিচালক পদ নিশ্চিত করতে এখন মাঠ প্রশাসনকে কাজে লাগাচ্ছে ক্রীড়া প্রশাসন এবং বিসিবি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে সুপার ফোরে ওঠাতে শ্রীলঙ্কার সমীকরণ |
![]() |
গত ৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট মোহাম্মদ হোসেনকে প্রধান নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিসিবি। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিসিবির সভায় আগামী ৪ অক্টোবর নির্বাচনের দিনক্ষণ ধার্য করে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্ব স্ব ক্লাব, সংস্থা এবং জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাছে মনোনীত কাউন্সিলর নাম প্রেরনের নির্দেশ দিয়েছিল বিসিবি। বিসিবির নির্দেশনা মেনে কাউন্সিলরের নাম প্রেরন করেছে সংশ্লিষ্ট ক্লাব, সংস্থা, শিক্ষা বোর্ড, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সার্ভিসেস সংস্থা এবং জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহ।
তবে এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি বিসিবি। কাউন্সিলর মনোনয়নের তারিখ দু'দফায় পরিবর্তন করা হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৭ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাউন্সিলর প্রেরণের সময়সীমা বর্ধিত করে সমালোচনার পর দ্বিতীয় দফায় কাউন্সিলর মনোনয়নের সর্বশেষ সময়সীমা ৩ দিন পিছিয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিসিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাউন্সিলরের নাম প্রেরণের সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করেছে।
আরও পড়ুন
শেষ ওভারে হিসাব নিকাশ বদলে দিলেন নবি |
![]() |
বিসিবির নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপে ক্যাটাগরি-১ এ থাকা জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা কোটার ১০ পরিচালক পদে নির্বাচনে শতভাগ পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে গত ১১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ পরিপত্র জারি করে দেশের সব ক'টি জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের যে নির্দেশনা দিয়েছিল। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন অধিশাখার উপসচিব মাহমুদউল্লাহ মারুফ স্বাক্ষরিত সেই নির্দেশনা অধিকাংশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা অনুসরণ করেনি। ইতোমধ্যে ডাকযোগে বিসিবি প্রেরিত কাউন্সিলর ফরম পূরণ করে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারদের স্বাক্ষর নিয়ে যে সব কাউন্সিলরের নাম জমা পড়েছে, তা মনোপুত হয়নি ক্রীড়া প্রশাসনের। আশ্চর্য হলেও সত্য, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্যাটাগরি-১ থেকে ৫৩জন কাউন্সিলরের নাম জমা পড়েছে বিসিবিতে, তাদের অধিকাংশই বিএনপি ঘরানার ক্রীড়া সংগঠক। ক্যাটাগরি- ১ থেকে জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সুপারিশকৃতদের নাম জমা না পড়ায় বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার সমর্থকদের নির্বাচনের সমীকরণ জটিল হয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতির মুখে ঢাকা বিভাগের কোটা থেকে বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি নাজমুল আবেদিন ফাহিমের নির্বাচনে ভরাডুবির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সে কারণেই এখন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং বিসিবি। অন্তবর্তীকালীন আমলে দেশের সব ক'টি জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে গঠিত হয়েছে এডহক কমিটি। সেই সব এডহক কমিটি থেকে নতুন করে কাউন্সিলর প্রেরণের নির্দেশনা দিয়ে ক্রীড়া প্রশাসন জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহকে চিঠি ইস্যু করেছে বিসিবি! আশ্চর্য হলেও সত্য।
বিসিবি পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের অনুমোদন না নিয়েই কাউন্সিলর প্রেরণের সর্বশেষ সময়সীমা ৩ দিন বর্ধিত করেছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। রাখ-ঢাক না রেখে তা জানিয়েছেন বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু-
' আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টার আগে কাউন্সিলর ফরম জমা দেয়ার তারিখ পিছিয়ে দেয়ার ব্যাপারে পরিচালকদের কাছে মতামত চেয়েছেন সভাপতি। পরবর্তীতে তার একক সিদ্ধান্তে, কাউন্সিলর মনোনয়ন তিনদিন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।'
এদিকে জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহ থেকে কাউন্সিলর মনোনয়ন যথাযথ হয়নি, এই অভিযোগ এনে প্রেরিত কাউন্সিলরদের মনোনয়ন বাতিল করে জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহের বিদ্যমান এডহক কমিটিসমূহ থেকে কাউন্সিলর মনোনয়নের জন্য যুবও ক্রীড়া সচিবকে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিসিবি সভাপতির এমন চিঠি দিয়ে বিসিবির আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন বলে মনে করছেন তৃণমূল পর্যায়ের ক্রীড়া সংগঠকরা।
আরও পড়ুন
ফ্রাইলিংকের রেকর্ডময় দিনে জয় নামিবিয়ার |
![]() |
বিসিবির প্রেরিত কাউন্সিলর ফরমে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশার একবার স্বাক্ষর করলে সেই কাউন্সিলর শুধু নির্বাচনে ভোটাধিকারই পাবেন না, আগামী ৪ বছরের জন্য বিসিবির স্থায়ী কমিটির সদস্য তিনি। তাহলে কেনো জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশারের স্বাক্ষরের পরও ওইসব জেলা এবং বিভাগ থেকে নতুন করে কাউন্সিলরের নাম চাওয়া হচ্ছে ? বিসিবির ২০০৮ এবং ২০১২ সালের গঠণতন্ত্র সংশোধন কমিটির সদস্য ও বিসিবির সাবেক পরিচালক আবদুল্লাহ আল ফূয়াদ রেদোয়ান এ প্রশ্নই তুলেছেন-
' ২০১৩ সালে জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা রেজুলেশন করে আমাকে এই জেলা থেকে কাউন্সিলর মনোনীত করে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর নিয়ে অন্য একজন কাউন্সিলরশিপ পায়। বিসিবির গঠণতন্ত্রে এ ব্যাপারে পরিষ্কার ব্যাখ্যা আছে। জেলা প্রশাসক কাউন্সিলর ফরমে একবার স্বাক্ষর করলে তা পরিবর্তনের কোনো বিধান নেই। বিসিবি এখন যা করতে চাইছে, এটা নোংরামি। এখন যদি বিসিবি সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী পুনরায় কাউন্সিলর চেয়ে জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারবৃন্দকে চিঠি দেয়া হয়, তাহলে তা হবে গঠণতন্ত্র পরিপন্থি। এমন নির্দেশনা দেয়ার এখতিয়ার তার নেই। প্রয়োজনে এই চিঠির বিরুদ্ধে মামলা হবে।'
আবু ধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে লড়ছে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচে ঘুরে ফিরে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। এর যথেষ্ট কারণও আছে বৈকি। ‘বি’ গ্রুপ থেকে সুপার ফোরে ওঠবে দুটি দল। আজ যে দল জিতবে তারা সরাসরি পা রাখবে সুপার ফোরে। হারলে যদি-কিন্তু আর সমীকরণের মারপ্যাঁচ।
আজ আবু ধাবিতে শেষ দুই ওভারে মোহাম্মদ নবির ভেলকিতে শ্রীলঙ্কাকে ১৭০ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশকে সুপার ফোরে তুলতে এই চ্যালেঞ্জিং রান টপকাতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। হেরে গিয়েও অবশ্য লিটনদের শেষ চারে উঠিয়ে দিতে পারে লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কা ১০০ বা এর কম রানে আটকে গেলেই আসালাঙ্কার দলকে নেট রান রেটে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে নিয়ে উঠে যাবে সুপার ফোরে।
আরও পড়ুন
শেষ ওভারে হিসাব নিকাশ বদলে দিলেন নবি |
![]() |
এদিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ২০ বলে অর্ধশতক তুলেছেন নবি। তা না হলে ১৫ রানের বেশি তোলাই হতো না আফগানদের। ইনিংসের শেষ দুই ভারে মূলত বানের পানির মতো রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে। ওভারে দুনিথ ভেল্লালাগকে ৫ ছক্কা মারেন নবি। শেষ ওভারে দলের স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয় ৩২ রান। এর আগের ওভারে দুশমন্থ চামিরাকে টানা তিন চার মারেন নবি। অথচ ইনিংসের ১৮ ওভারকালীন মনে হচ্ছিল সাদামাটা পুঁজি গড়তে যাচ্ছে আফগানরা। এক নবিই সব হিসেব বদলে দিলেন। ১৭তম ওভারের সময় আফগানদের রানরেট ছিল ৬.৬৬। পূর্ণাঙ্গ ইনিংস শেষে সেটি দাঁড়ায় ওভারপ্রতি ৮.৪৫ রান।