২২ নভেম্বর ২০২৫, ৭:০৮ পিএম

জাতীয় ক্রিকেট লিগের পঞ্চম রাউন্ডে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন সৌম্য সরকার। খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়ামে ময়মনসিংহের বিপক্ষে ১৮৬ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। খুলনার হয়ে ২২২ বলের ইনিংসে ২৪ চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা মারেন তিনি।
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এটিই সৌম্যর ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। তার আগের সেরা ছিল ১৫০ রান। সৌম্যর ইনিংসের সৌজন্যে প্রথম দিন শেষে খুলনার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩২৮ রান। তিন নম্বরে নেমে কালাম সিদ্দিকি এলিন করেন ৭৭ রান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে সৌম্য-এলিন যোগ করেন ২৩০ রান।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বরিশালের বিপক্ষে তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মার্শাল আইয়ুব। দিন শেষে তিনি ১১৮ রানে অপরাজিত। এছাড়া ঢাকার হয়ে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেন আশিকুর রহমান শিবলি।
দিন শেষে ঢাকার সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৪৬ রান।
এই সেঞ্চুরি করার পথে ৪২তম রান নিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ১০ হাজার রান পূর্ণ হয়েছে মার্শালের। বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। আগের তিন জন হলেন- তুষার ইমরান, নাঈম ইসলাম ও মুমিনুল হক।
রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে রাজশাহীর বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছেন মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। মাত্র ৪২ রানে এই কৃতিত্ব দেখান তিনি। রাজশাহী অলআউট হয়ে যায় ২৬৮ রানে। মাত্র ৭২ বলে ৮৪ রান করেন সাব্বির হোসেন। এছাড়া রহিম আহমেদের ব্যাট থেকে আসে ৭৭ রান।
রাজশাহীকে অলআউট করে দিন শেষে রংপুরের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ৩৭ রান।
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ২৫৫ রানে অলআউট হয়েছে সিলেট। দলের সর্বোচ্চ ৭৩ রান করেন জাকির হাসান। এছাড়া পেসার রেজাউর রহমান রাজার ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৫৭ রান। বল হাতে ইফরান হোসেন নেন ৬৫ রানে ৫ উইকেট।
পরে ৬.৪ ওভার ব্যাটিং করে ১৯ রানে ১ উইকেট হারিয়েছে চট্টগ্রাম।
No posts available.
২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
২৭ নভেম্বর ২০২৫, ৯:৫৪ পিএম

চট্টগ্রামে আজ সিরিজের প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১৮২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। তাড়ায় নেমে ১৮ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত সবগুলো ওভার খেলেও ১৪২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। হারে ৩৯ রানে।
এদিন তাওহীদ হৃদয় ৫০ বলে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন। দলের বাকি ব্যাটাররা মিলে করেন মাত্র ৪৯ রান। হৃদয়ের মতে, একটি বড় পার্টনারশিপ হলেই ফল অন্যরকম হত।
ম্যাচ শেষে সম্প্রচার চ্যানেলকে তিনি বলেন,
‘যদি আমাদের একটা বড় পার্টনারশিপ হতো, তাহলে খেলাটা অন্যরকম হতো। কারণ আলটিমেটলি দেখেন, আমরা খুব বেশি ব্যবধানে হারিনি। শুধু একটা পার্টনারশিপ...। আমি আর জাকির যখন ব্যাটিং করছিলাম, তখনও যদি ৭০–৮০ রানের জুটি হতো, তাহলে হয়তোবা ভিন্ন একটা সিনারিও তৈরি হতে পারত।’
বিপিএলে ওপেনিং কিংবা ওয়ান-ডাউনে খেললেও জাতীয় দলে নিচের দিকে নামতে হয় হৃদয়কে। তবে আজ তিনে নেমে খেললেন দারুণ এক ইনিংস। এ নিয়ে তিনি বলেন,
‘ক্রিকেট আমার একার খেলা না। এটা টিম গেম—এখন আমার উপরে খেলার মতো জায়গা নেই।’
এসময় আফসোস করতে দেখা যায় হৃদয়কে। তিনি বলেন,
‘আপনারা অনেকে হয়তো ভাবেন, আমি টিমে থাকার মতো না। ভাই, আমি যেখানে আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। যারা আছে, ওরা খুব ভালো টাচে আছে, খুব ভালো শেপে আছে, পারফর্মও করছে—যদি আপনারা ভালোভাবে দেখেন। এটা নিয়ে কোনো আফসোস নেই। শেষ পর্যন্ত জীবন এমনই—এটা পার্ট অফ লাইফ। চেষ্টা করি, যখন যেখানে সুযোগ পাই, যতটুকু পারি টিমকে কন্ট্রিবিউট করতে।’

ফাইনালের টিকিট কাটতে জিততেই হবে—ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগে এমন সমীকরণ নিয়েই আজ মাঠে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা। রাওয়ালপিন্ডিতে সব হিসাব চুকিয়ে দিয়েছে লঙ্কানরা। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ৬ রানে জিতেছে তারা।
এদিন আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৮৪ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০ রান, কিন্তু তারা করতে পারে মাত্র ৩ রান।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাথুম নিসাঙ্কা ৮ রানে ফিরে যান। এরপর কামিল মিশরা ও কুশল মেন্ডিস মিলে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। ২৩ বলে ৪০ রান করে আবরার আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মেন্ডিস।
৬ রান করে কুশল পেরেরা ফিরলেও মিশরা ৩৪ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ১৭তম ওভারে আবরার আহমেদের বলে মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৪৮ বলে ৭৬ রান করেন মিশরা—ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা।
শেষদিকে জানিথ লিয়ানাগের ২৪ বলে ২৪ এবং দাসুন সানাকার ১০ বলে ১৭ রানের ক্যামিওতে ১৮০ পেরোয় শ্রীলঙ্কা।
জবাব দিতে নেমে দলীয় ২৯ রানে সাহিবজাদা ফারহানকে হারায় পাকিস্তান। একই ওভারে ডাক মারতে গিয়ে ফিরে যান বাবর আজম। পরের ওভারে সাজঘরে ফেরেন সাইম আয়ুব—১৮ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফখর জামান আউট হলে চাপে পড়ে পাকিস্তান।
পঞ্চম উইকেটে সালমান আলি আগা ও উসমান খান মিলে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। উসমান ২৩ বলে ৩৩ রান করে ফিরে গেলেও আগা ৩৫ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন।
শেষ ৭ ওভারে ৮২ রান লাগত পাকিস্তানের। আগা ও মোহাম্মদ নওয়াজের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল স্বাগতিকরা। তবে ১৮তম ওভারে ১৬ বলে ২৭ রান করে নওয়াজ ফেরার পর ম্যাচে ফিরে আসে শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত ৬ রানের জয় নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে জায়গা করে নেয় লঙ্কানরা।

দল ঘোষণার আগে অধিনায়কের মতামত নেননি প্রধান নির্বাচক। শামীম পাটোয়ারীকে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বিবেচনা না করাকে মোটেও ভালভাবে দেখেননি অধিনায়ক লিটন দাস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ পূর্ব অধিনায়ক-প্রধান নির্বাচকের অবস্থানকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষ মতামত প্রকারান্তরে বাংলাদেশ দলের উপর ফেলেছে বিরূপ প্রভাব। তার প্রতিফলনই পড়েছে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে দুই ধাপ নিচে থাকা আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩৯ রানে হার দিয়ে শুরু করেছে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেট সিরিজ।
টেস্টে ২-০তে যে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে হাওয়ায় ওড়ার কথা বাংলাদেশ দলের, সেই প্রতিপক্ষের কাছে সংক্ষিপ্ত সংস্করনের ফরম্যাটের ম্যাচে কেনো এতোটা অসহায়ত্ব প্রকাশ ? এই প্রশ্নের উত্তর খঁজতে গেলে প্রথমেই নির্নিত হবে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে দুদলের মধ্যে ব্যবধান। চট্টগ্রামে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে যেখানে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে আয়ারল্যান্ডের স্কোর ৪৮/১, সেখানে বাংলাদেশের স্কোর ২০/৪! শুধু এখানেই নয়, ব্যবধান আছে আরও। ১৮১/৪ স্কোরের ইনিংসে আয়ারল্যান্ড ব্যাটাররা যেখানে ১৮টি চার-এর পাশে মেরেছে ৭টি ছক্কা, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাটারদের বাউন্ডারি ও ছক্কার সমষ্টি যথাক্রমে ৯ ও ৫। টি-টোয়েন্টিতে ডট বলও পার্থক্য নির্নায়ক। যেখানে আইরিশদের ৪৩ টি ডটের বিপরীতে বাংলাদেশের ইনিংসে ডট সংখ্যা ৪৯।
আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ যেখানে ৫টি পার্টনারশিপে যথাক্রমে ২৬ বলে ৪০, ২৪ বলে ৩১, ২৫ বলে ৩৪, ২৯ বলে ৪৪ এবং ১৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩২, সেখানে স্কোরশিটে ৭৪ উঠতে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৮ উইকেট। ৯ম উইকেট জুটিতে হৃদয়-শরিফুলের ৩১ বলে ৪৮ এবং অবিচ্ছিন্ন ১০ম জুটিতে ১২ বলে ২০ রানে স্কোর তিন অঙ্কে টেনে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ দল।
সব হারিয়ে শেষ পাওয়ার প্লে-তে অবশ্য হৃদয় ঝড়ে লড়েছে বাংলাদেশ। যে ৩০ বলে আয়ারল্যান্ডের ৫৪/১ স্কোরের বিপরীতে বাংলাদেশের স্কোর ৪৯/১।
এদিন বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজ ( ৪-০-২৩-০) ছাড়া অন্য কারো বোলিং আইরিশ ব্যাটারদের সামনে বাধাঁ হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। শরিফুল (৪-০-৪২-১), তানজিম হাসান সাকিব (৪-০-৪১-২) মার খেয়েছেন যথেষ্ট। শরিফুলের প্রথম স্পেলটি (২-০-২৬-০) ছিল ব্যয়বহুল। আর এক পেসার তানজিম হাসান সাকিবের দ্বিতীয় স্পেল (২-০-২৮-১) ছিল খরুচে।
যার মধ্যে ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যারি টেক্টরের চওড়া ব্যাটে তাকে খরচ করতে হয়েছে ১৭টি রান। বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম (৪-০-৩৭-০), লেগ স্পিনার রিশাদ (৪-০-৩৪-১) মিতব্যয়ী বোলিং করতে পারেননি।
টি-টোয়েন্টিতে চার-এর চেয়ে ছক্কা মারা কতোটা সহজ, তা জানিয়ে দিয়েছেন আইরিশ টপ অর্ডার হ্যারি টেক্টর। ৪৫ বলে ৬৯ রানের হার না মানা ইনিংসে ১টি চার এর পাশে মেরেছেন টেক্টর ৫টি ছক্কা! তার ভাই টিম টেক্টর ১৯ বলে ৩২ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৬টি চার।
১৮২ রান তাড়া করতে যেয়ে শুরুতে একটু বেশিই তাড়াহুড়া করেছে বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার এবং মিডল অর্ডার ব্যাটাররা।
বাঁ হাতি স্পিনার হামফ্রিস ( ৪-০-১৩-৪) ছড়িয়েছেন আতঙ্ক। ইনিংসের শুরুতে বল হাতে পেয়ে ৫ম ডেলিভারিতে তানজিদ হাসান তামিমকে (৫ বলে ২) মিড অনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন। এর পর এডেইর ২ ওভারের স্পেলে (২-০-৩-২) লিটন (৩ বলে ১), পারভেজ ইমন (৬ বলে ১)-কে শিকার করেছেন। দুজনেই উইকেট উপহার দিয়েছেন। লিটন হাফ হার্টেড স্কোয়ার কাট করতে যেয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দিয়েছেন ক্যাচ। পুল শটে প্রলুব্ধ হয়ে পারভেজ ইমন (৬ বলে ১) দিয়েছেন ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ। টানা ৭ বল ডট করে ৮ম বলে রানের খাতা খোলা সাইফ হাসান ম্যাকার্থিকে ক্রস ব্যাটে খেলতে যেয়ে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ফিরেছেন ( ১৩ বলে ৬)। স্কোরশিটে ১৮ উঠতে ৪ উইকেট হারানোর পর চোখে সরষের ফুল দেখাটাই স্বাভাবিক। সেখান থেকে দলকে সম্মানজনক স্কোরে টেনে নিতে প্রানান্ত চেষ্টা করেছেন তাওহিদ হৃদয়। টি-টোয়েন্টিতে ৪ ম্যাচ পর ফিফটি উদযাপনের ইনিংসে এই ফরম্যাটে সেরা ইনিংস (৫০ বলে ৭ চার, ৩ ছক্কায় ৮৩*) দিয়েছেন উপহার।
তবে তার লড়াইয়ে উদ্বুব্ধ হতে পারেননি জাকের আলী অনিক। ম্যাকার্থির বলে ডিপ থার্ডম্যানে দিয়েছেন ক্যাচ জাকের আলী (১৬ বলে ১ ছক্কায় ২০)। ইনিংসের ১৩ নম্বর ওভারটি ছিল আলোচিত। হামফ্রিসের ৯ বলের ওই ওভারে ৩টি রানই বাংলাদেশ পেয়েছে তিনটি ওয়াইড ডেলিভারি থেকে। বাকি ৬টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৩ ব্যাটার দিয়ে এসেছেন উইকেট। তানজিম সাকিব ( ৬ বলে ৫) দিয়েছেন লং অনে ক্যাচ, রিশাদ (৩ বলে ০) হয়েছেন এলবিডাব্লু, নাসুম (১ বলে ০) স্ট্যাম্পিংয়ে কাটা পড়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া থেকে মাসে ৭ হাজার ডলার বেতনে পিচ বিশেষজ্ঞ টনি হেমিংকে এনেও চট্টগ্রামে দুর্দশা কাটছে না। তার প্রেসক্রিপশনে তৈরি পিচে সর্বশেষ ৪টি টি-টোয়েন্টির সব কটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইট ওয়াশের পর আয়ারল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু বাংলাদেশের। বাউন্ডারি রোপের বাইরে দাঁড়িয়ে টনি হেমিংয়ের হতাশার ছবিটাই টিভি পর্দায় উঠেছে ফুটে।

চট্টগ্রামে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩৯ রানে হেরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকে শুরু করে এ নিয়ে টানা চারটি ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। এমন পরাজয়ের পরও লড়াই করা তাওহিদ হৃদয়ের প্রশংসাই করলেন লিটন কুমার দাস।
ম্যাচে টস জিতে আইরিশদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। হ্যারি টেক্টরের ক্যারিয়ার সেরা ৬৯ রানের সৌজন্যে ৪ উইকেটে ১৮১ রান করে আয়ারল্যান্ড। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ও শিশিরের আনাগোনা থাকায় মনে হচ্ছিল, এই রান তাড়া তেমন কঠিন হবে না।
কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে পাওয়ার প্লের মধ্যে মাত্র ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। একপ্রান্ত আগলে রেখে ৫০ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন হৃদয়। তবে সেটি শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমায়।
পরে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে লিটন বলেন, বোলাররা যদি আরও ২০-২৫ রান কম দিত তাহলে ভালো হতো দলের জন্য।
“আমাদের বোলাররা দারুণ কাজ করেছে। বিশেষ করে ফিজ। সে যেমন করে। তবু আমরা যদি আরেকটু ভালো বল করতে পারতাম, তাদের যদি আরও ২০-২৫ কম রানে আটকাতে পারতাম। কারণ উইকেটে বোলারদের জন্য সাহায্য ছিল।”
এমনিতে ব্যাটিং সহায়ক হলেও চট্টগ্রামের মাঠে ১৬০ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড শুধু একটি। আর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ কখনও ১৬৬ রানের বেশি তাড়া করে জেতেনি। তাই জিততে হলে গড়তে হতো রেকর্ড।
সেই চ্যালেঞ্জে মুখ থুবড়ে পড়েন লিটন, সাইফ হাসান, তানজিদ হাসান তামিমরা। পরে হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে দলকে বিব্রতকর অবস্থা থেকে উদ্ধার করা ইনিংস। এই ম্যাচ দিয়েই একাদশে ফিরে ৮৩ রান করে অধিনায়কেরও মন জয় করেছেন হৃদয়।
“আমি জানি চট্টগ্রামের উইকেট মাঝেমধ্যে ব্যাটিং সহায়ক থাকে বিশেষ করে যখন শিশির পড়ে। কিন্তু পাওয়ার প্লেতে এত উইকেট উইকেট হারিয়ে ফেলার পর পরের ব্যাটারদের জন্য কাজটা কঠিন। তবে দলে ফিরে হৃদয় যেভাবে খেলেছে, আমি খুব খুশি। তার পারফর্ম করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
একই মাঠে সিরিজের পরের ম্যাচ শনিবার। লিটনের বিশ্বাস, হৃদয় ধারাবাহিকতা ধরে রাখবেন ও আর ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ দল।
“আমি এখনও নিজ দলের ওপর বিশ্বাস রাখি। আমরা যদি নিজেদের সেরা খেলাটা খেলি, তাদের হারাতে পারব। তবে আমাদের সেরাটা খেলতে হবে। আবারও হৃদয়ের কথা বলতে হয়। সে দারুণ ব্যাটিং করেছে। তার কাছ থেকে সিরিজজুড়ে এমন চাই। আমরা ঘুরে দাঁড়াব আশা করি।”

বিশাল লক্ষ্যে পাওয়ার প্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গেল বাংলাদেশ। পাঁচ নম্বরে নেমে এক প্রান্ত ধরে রাখলেন তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু সঙ্গী হিসেবে কাউকে পেলেন না। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পারলেন হৃদয়।
চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩৯ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ১৮১ রান করেছিল আয়ারল্যান্ড। জবাবে মাত্র ১৮ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সেখান থেকে হৃদয়ের ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রানের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৪২ রান করে তারা।
এ নিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের সিরিজে চট্টগ্রামের মাঠেই সিরিজের শেষ ম্যাচ হেরেছিল তারা।
পাঁচ নম্বরে নেমে মাত্র ৫০ বলে ৮৩ রান করার পথে ৫ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন হৃদয়। এছাড়া জাকের আলির ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১২ রান করেন দশ নম্বরে নামা শরিফুল ইসলাম। হৃদয়ের ৮৩ ছাড়া বাকি সবাই মিলে করেন মাত্র ৪৯ রান।
আরও পড়ুন
| প্রথম ম্যাচ জিততে রেকর্ড গড়তে হবে বাংলাদেশের |
|
একপর্যায়ে ৭৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। এরপর বাকি দুই ব্যাটারকে নিয়ে ৬৮ রান যোগ করেন হৃদয়। এর মধ্যে শরিফুলের সঙ্গে নবম উইকেটেই আসে ৪৮ রান। যা নবম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি।
তানজিদ হাসান তামিম ২, পারভেজ হোসেন ১, লিটন কুমার দাস ১ ও সাইফ হাসান ৬- বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটার মিলে করেছেন মাত্র ১০ রান। কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এটিই বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটারের সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
এর আগে ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম চার ব্যাটার নাঈম ইসলাম (৩), ইমরুল কায়েস (২), অলক কাপালি (০) ও সাকিব আল হাসান (৭) মিলে করেছিলেন ১২ রান।
শুরুর চার ব্যাটারের ব্যর্থতায় পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ২০ রান। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১১ সালের ওই ম্যাচে প্রথম ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬ রান করেছিল বাংলাদেশ।
আয়ারল্যান্ডের পক্ষে মাত্র ১৩ রানে ৪ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার ম্যাথু হামফ্রিজ। এছাড়া ব্যারি ম্যাকার্থি ২৩ রানে নেন ৩ উইকেট। মার্ক অ্যাডায়ারের শিকার ২ উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা উড়ন্ত করেন আয়ারল্যান্ডের দুই ওপেনার পল স্টারলিং ও টিম টেক্টর। তৃতীয় ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে ৪টি চার মেরে ১৮ রান নেন টিম। প্রথম তিন ওভারে আসে ৩৩ রান।
পাওয়ার প্লের পরের তিন ওভারে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে এসেই দ্বিতীয় বলে পল স্টারলিংকে আউট করেন তানজিম হাসান সাকিব। ৬ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪৮ রান।
পরে নবম ওভারে ঝড় তোলা টিমকে থামিয়ে দেন রিশাদ হোসেন। লং অনে চমৎকার ক্যাচ নিয়ে ৩১ রান করা টিমের বিদায়ঘণ্টা বাজান তানজিদ হাসান তামিম। তখন কিছুটা কমে আয়ারল্যান্ডের রান রেট।
আরও পড়ুন
| আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মারুফা-রাবেয়া |
|
তবে তৃতীয় উইকেটে লরকান টাকারকে নিয়ে আবার ঝড় তোলেন টিমের বড় ভাই হ্যারি টেক্টর। পানি বিরতির পর দুই ওভারে ২৭ রান করে আইরিশরা। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি টাকার। শরিফুলের স্লোয়ারে ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
এরপর চতুর্থ উইকেটে ঝড়ো জুটি গড়েন টেক্টর ও কার্টিস ক্যাম্ফার। দুজন মিলে মাত্র ২৯ বলে ৪৪ রান যোগ করেন। ১৮তম ওভারে সাকিবের বলে পারভেজ হোসেন ইমনের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরে যান ২৪ রান করা ক্যাম্ফার।
শেষ দিকে দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন টেক্টর। ৩৭ বলে ক্যারিয়ারের সপ্তম পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর আরও ৮ বল খেলেন ১৯ রান নেন তিন নম্বরে নামা ব্যাটার। এর মধ্যে শেষ ওভারেই মারেন ২টি ছক্কা।
বাংলাদেশের পক্ষে ২ উইকেট নিতে ৪১ রান খরচ করেন সাকিব। শরিফুল ও রিশাদ নেন ১টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আয়ারল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৮১/৪ (স্টারলিং ২১, টিম টেক্টর ৩১, হ্যারি টেক্টর ৬৯*, টাকার ১৮, ক্যাম্ফার ২৪, ডকরেল ১২*; শরিফুল ৪-০-৪২-১, নাসুম ৪-০-৩৭-০, সাকিব ৪-০-৪১-২, মোস্তাফিজ ৪-০-২৩-০, রিশাদ ৪-০-৩৪-১)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪২/৩ (তামিম ২, ইমন ১, লিটন ১, সাইফ ৬, হৃদয় ৮৩*, জাকের ২০, সাকিব ৫, রিশাদ ০, নাসুম ০, শরিফুল ১২, মোস্তাফিজ ২*; হামফ্রিজ ৪-০-১৩-৪, অ্যাডায়ার ৪-১-২০-২, লিটন ৪-০-৪০-০, ম্যাকার্থি ৪-০-২৩-৩, ডেলানি ২-০-২৪-০, ক্যাম্ফার ২-০-২২-০)
ফল: আয়ারল্যান্ড ৩৯ রানে জয়ী