১০ নভেম্বর ২০২৫, ৭:১৭ পিএম

আজ ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেকের রজত জয়ন্তী। ক্রিকেটের এলিট এরিনায় বাংলাদেশের একটি মাইলস্টোনের দিন আজ। এমন একটি দিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমিদের মতো আমারও অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে। এমন একটি দিনকে কী আমরা সেভাবে উদযাপন করতে পেরেছি ? এই দিনটিতে বিসিবির আয়োজন বাংলাদেশ ক্রিকেট কনফারেন্স, সিলেটে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড টেস্ট পূর্ব প্রিভিউ নিয়ে গণমাধ্যমের ব্যস্ততা টেস্টে বাংলাদেশের ২৫ বছর উদযাপনে কিছুটা বাধার দেয়াল তৈরি করেছে, সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিতে ইতিহাস সৃষ্টি করা আমিনুল ইসলাম বুলবুল যখন বিসিবির সভাপতি, তখন এই দিনটিকে একটু বেশিই উদযাপনের প্রত্যাশা করেছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা।
তারপরও বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের রজত জয়ন্তীর দিনে চোখের সামনে ভেসে উঠছে অনেক অর্জন, ট্র্র্যাজেডি।
বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট কভার করা সৌভাগ্যবান ক'জন ক্রীড়া সাংবাদিকের মধ্যে আমি একজন। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর থেকেই টেস্ট অভিষেকের দিকে মুখিয়ে ছিলাম।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সিতে লাল বলের মধ্যে বাঘের মুখ, গোলাকৃতির সেই লোগো থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ'র মধ্যে বাঘের প্রতিকৃতিতে এখন বিসিবির যে লোগোটা শোভা পাচ্ছে, টেস্ট অভিষেককে সামনে রেখে সেই লোগোর ডিজাইন আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টিম স্পন্সর কোকা কোলার সঙ্গে বিসিবির দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিটাও হয়েছিল টেস্ট অভিষেককে সামনে রেখে।
টেস্ট অভিষেককে সামনে রেখে প্রতিদিন কোনো না কোনো অনুষ্ঠানের নিউজ সংগ্রহ করাটাও ছিল তখন একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে নিত্যদিনের কাজ। মাত্র ক'দিনের মধ্যে গ্র্যাউন্ডসম্যান মরহুম আবদুল লতিফ এবং বর্তমানে বিসিবির পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিমের অক্লান্ত চেষ্টায় ঢাকা স্টেডিয়ামে অভিষেক টেস্টের উইকেট প্রস্তুত করাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে অচল হয়ে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ এডি বারলোর অনুপস্থিতিতে সারওয়ার ইমরানকে ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব দিয়ে যে ভুল করেনি সে সময়ে বিসিবি, অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ দল সমৃদ্ধ আগামীর জানান দিয়ে প্রকারান্তরে বোর্ডের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন।
বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টকে সামনে রেখে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পরিবর্তে নাইমুর রহমান দুর্জয়ের ক্যাপ্টেনসি তুলে দেয়া নিয়েও কম আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। বিসিবির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের একাংশের চাপে সে সময়ের প্রধান নির্বাচক তানভির হায়দার ১৫ সদস্যের অভিষে টেস্ট স্কোয়াডে রাখেননি হাবিবুল বাশার সুমনকে। পা ঠিকমতো চলে না, এই অভিযোগে বাদ দেয়া হয়েছিল তাকে অভিষেক টেস্ট স্কোয়াড থেকে।
মিডিয়ার বিস্তর লেখালেখিতে সেই হাবিবুল বাশার সুমন স্কোয়াডে ঢুকে খেলেছেন অভিষেক টেস্ট। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার ঝুলিতে যোগ হয়েছে ৫০টি ম্যাচ। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পেয়েছে প্রথম টেস্ট জয় এবং টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ।
মনে আছে, বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট উপলক্ষ্যে দৈনিক ইনকিলাব ট্যাবলয়েড সাইজের ১৬ পৃষ্ঠার একটি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছিল। সেই ক্রোড়পত্রটির দায়িত্বভার আমার উপর অর্পিত হয়েছিল। ওই ক্রোড়পত্রের প্রচ্ছদের জন্য একটি ছবি তুলতে ইনকিলাবের ফটো সাংবাদিক ইকবাল হোসেন নান্টু-ভাই-কে নিয়ে গিয়েছিলাম বিকেএসপি-তে। বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের এক ফাঁকে ভারপ্রাপ্ত কোচ সারোয়ার ইমরানকে অনুরোধ করে নান্টু ভাই-কে দিয়ে যে ছবিটি তুলেছি, ওই ছবিটিও ইতিহাসের স্বক্ষী।
অভিষেক টেস্ট কভারে প্রেস বক্সে পছন্দের আসন নিশ্চিত করতে টসে'র অনেক আগে স্টেডিয়ামে এসেছি। দেখেছি অভিষেক টেস্ট উপলক্ষ্যে ছোট্ট একটি আনুষ্ঠানিকতা। বিশেষ কয়েনে টস। বাংলাদেশ-ভারত, দুই দেশের দুই অধিনায়ক ( নাইমুর রহমান দুর্জয়, সৌরভ গাঙ্গুুলি) বাঙালী, টসেও তারা ইতিহাস।
ঢাকা স্টেডিয়ামে ৪ দিনে শেষ হওয়া বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের প্রতিটি দিনের ম্যাচ রিপোর্ট লিখেছি সে সময়ে প্রচার সংখ্যার অন্যতম শীর্ষে থাকা দৈনিক ইনকিলাব-এ। লিখেছি টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিয়ান হাবিবুল বাশার সুমন এবং টেস্টের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কৃতিত্বগাঁথা। প্রতিটি বলের নোট নোটবুকে লিখেছি।
তখন ম্যাচ চলাকালে কিংবা ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনের জন্য ঢাকা স্টেডিয়ামে নির্ধারিত কোনো রুম বরাদ্দ ছিল না। প্রতিদিনের খেলা শেষে ঢাকা স্টেডিয়ামের প্লেয়ার্স ড্রেসিং রুমের সামনে ক্রিকেটারদের অনুভূতি নিয়েছি। অটোগ্রাফ শিকারিদের মতো দু'দলের ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করেছি।
টেস্টের দ্বিতীয় দিন ছিল পবিত্র সবে-ই-বরাতের ছুটি। ফলে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কৃতিগাঁথা সেঞ্চুরি নিয়ে বাংলাদেশের কোনো জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়নি রিপোর্ট। পাক্ষিক ক্রীড়া জগতের সম্পাদক মাহমুদ হোসেন খান দুলাল প্রেস বক্সে কর্মরত সাংবাদিকদের লেখা সমগ্র নিয়ে সেদিন ছাপিয়েছিলেন 'প্রেস বক্স' নামের একটি বুলেটিন।
ওই বুলেটিনে ছাপা হয়েছিল আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কৃতি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে স্পোর্টস আর্কাইভ স্থাপন করা হলে, প্রেস বক্স বুলেটিনটা হতে পারে অন্যরকম এক সংগ্রহ।
৪র্থ দিনের পড়ন্ত বেলায় খেলার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে ফ্লাড লাইটের আলো জ্বালিয়ে টেস্ট শেষ করে ওই রাতেই ভারত ক্রিকেট দলকে ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
১৯৯৭-এ আইসিসি ট্রফি জয়ে আমাদের স্বপ্নের পরিধি গেছে বেড়ে। আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, নাইমুর রহমান দুর্জয়রা টেস্ট খেলার স্বপ্ন লালন করেছেন। আর আমরা যারা ওই সময়ে ক্রিকেট বিট সাংবাদিকের তকমা গায়ে লাগিয়েছি, তারা দেখতাম টেস্ট ম্যাচের রিপোর্ট লেখার স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখতাম বাংলাদেশের অন্তত ৫০টি টেস্ট কভারের। ভাগ্যক্রমে আমার ক্ষেত্রে সংখ্যাটি হয়েছে ওই প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুন।
বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট, ৫০তম টেস্ট, ১০০তম টেস্ট ম্যাচের ম্যাচ ভেন্যু থেকে সরাসরি কভার করেছি। ২০০৮ স সালের জানুয়ারীতে নিউ জিল্যান্ডের ডানেডিনে বাংলাদেশের ৫০তম টেস্ট ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম স্মারক ক্রেস্ট, কোট পিন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম ফ্যান ক্লাব বেঙ্গল টাইগার্স এসব স্মারক আমার হাতে বুঝিয়ে দিয়েছিল। ওই টেস্টের প্রথম দিন লাঞ্চ ব্রেকের সময়ে বিশেষ দুটি স্মারক দুই অধিনায়ক আশরাফুল এবং ড্যানিয়েল ভেট্টরির হাতে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। আমি ছিলাম পাশে। এই ছবি এবং নিউজ ছাপা হয়েছে বাংলাদেশের বেশ ক'টি দৈনিকে।
ওই সফরে ৫ সাংবাদিক ( উৎপল শুভ্র, অঘোর মন্ডল, রানা হাসান, আজাদ মজুমদারের সঙ্গে আমি) কভার করেছি সেই টেস্ট। টেস্ট ভেন্যু হিসেবে ডানেডিনের অভিষেক, আবার সেই মাঠে তামিম ইকবাল-জুনায়েদ সিদ্দিকীর স্মরণীয় টেস্ট অভিষেকের স্বাক্ষী হতে পেরেছি।
২০১৭ সালে কলোম্বোর পি সারা ওভালেও বাংলাদেশের শততম টেস্টের স্বাক্ষী আমি। জয় দিয়ে শততম টেস্ট উদযাপনের আনন্দ উপভোগ করেছি। তার চেয়েও বড় কথা, বাংলাদেশের শততম টেস্টেও বেঙ্গল টাইগার্সের বিশেষ স্মারক দুই অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবং রঙ্গনা হেরাথের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন, বেঙ্গল টাইগার্সের গোলাম ফারুক ফটিক-সাব্বির আহমেদ রুবেল, সেখানেও ছিলাম আমি। ছবিসহ এই নিউজটিও ছাপা হয়েছে বেশ ক'টি দৈনিকে।
২০১৯ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ডে-নাইট টেস্ট শেষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট স্কোয়াডের অটোগ্রাফ সম্বলিত ব্যাটটি উপহার হিসেবে দিয়েছি বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে প্রতিপক্ষ দল ভারতের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির হাতে। তবে অভিষেক টেস্ট কভারের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড, বিসিবির বিশেষ উপহার ক্রেস্ট এর সঙ্গে টেস্ট অভিষেক ক্যাপ এবং বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার রজত জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ স্মারকটি একটু বেশি যত্ন করে রেখেছি। সংগ্রহে আছে হোটেল শেরাটনের প্যাডে তৎকালীন প্রধান নির্বাচকের হাতে লেখা টেস্ট স্কোয়াডটিও রেখে দিয়েছি সযত্নে।
টেস্টের ২৫ বছরে বাংলাদেশ খেলেছে ১৫৪টি টেস্ট। টেস্ট ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও প্রায় ৮ বছর। সে পর্যন্ত ক্যারিয়ার টেনে নেয়াটা ছেড়ে দিয়েছি ভাগ্যের উপর।
এই ২৫ বছরে ১৫৪টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, যেখানে ২৩ টি জয়, ১৯টি ড্র, ১১২টি হার, সরল অঙ্কে এই হিসাবটাই আসবে সামনে। আইসিসির পূর্ণ সদস্য সব দেশের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের বৃত্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ, এটাও আক্ষেপ। বছরে গড়ে ৬.১৬টি টেস্ট খেলার সুযোগটাও ক্রিকেট মোড়লদের সঙ্গে ব্যবধান নির্নিত করবে। এই লম্বা সময়ে বাংলাদেশ পায়নি ৭ হাজার ক্লাবের কোনো সদস্যকে, তিনশ' উইকেটের দেখাও পায়নি কোনো বোলার। আড়াইশ উইকেট থেকে মাত্র ৪টি উইকেট দূরে থাকা সাকিবের অপেক্ষা বাড়ছে।
তবে টেস্টের রজত জয়ন্তীর দিনে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। হোম অব ক্রিকেটে আগামী ১৯ নভেম্বর প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টেস্ট ম্যাচের সেঞ্চুরি পূর্ণ হবে তার। টেস্টে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৭ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদের দাবিদারও মুশফিকুর রহিম। আর ৬৭২ রান হলেই এই মাইলস্টোনে পা দিবেন তিনি।
No posts available.
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০২ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:০০ পিএম

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২০২৫-২৬ মৌসুম শেষ হল মঙ্গলবার। ২৭তম আসরের চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিভাগ। দুই মাস আগেই এনসিএল টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আকবর আলি নেতৃত্বাধীন রংপুর। লিগের চারদিনের ফরম্যাটও নিজেদের ঘরে তুলল উত্তরবঙ্গের দলটি।
টুর্নামেন্ট সেরা হলেও ব্যাটিং তালিকার শীর্ষ বিশে নেই রংপুরের কোন ব্যাটার। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাকদের তালিকায় রয়েছেন সৌম্য সরকার, জাকির হাসান ও মার্শাল আইয়ুব।
২০২৫-২৬ মৌসুমে ব্যাট হাতে ছন্দে ছিলেন সৌম্য সরকার। ৭ ম্যাচে (১৪ ইনিংস) ৬৩৩ রান করেছেন খুলনার হয়ে খেলা এই ব্যাটার। আসরে তাঁর সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৮৬ রান। চারটি ফিফটি আর একটি সেঞ্চুরিতে গড় ৪৫.২১।
সৌম্যের চেয়ে ৫ রান কম জাকির হাসানের। ৭ ম্যাচে (১৩ ইনিংস) ৫৭.০৯ গড়ে ৬২৮ রান করেছেন সিলেটের হয়ে খেলা এই উইকেটকিপার ব্যাটারের। পাঁচটি ফিফটি আর একটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
তৃতীয় স্থানে মার্শাল আইয়ুব। ৭ ম্যাচে (১২ ইনিংস) ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলা এই ব্যাটারের সংগ্রহ ৬২৫ রান। মৌসুমে তিনটি সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটার আইয়ুব। তাঁর ব্যাটিং গড় ৬২.৫০ ও স্ট্রাইক রেট ৫৮.৪১।
চতুর্থ স্থানে প্রীতম কুমার। ৭ ম্যাচে ৫৭৪ রান, দুই ফিফটি আর দুই সেঞ্চুরি রাজশাহীর হয়ে খেলা এই ব্যাটারের। প্রীতমের সর্বোচ্চ ইনিংস ১৪৩। পাঁচে মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ১২ ইনিংসে ৫৪৭ রান ময়মনসিংহের হয়ে খেলা জাতীয় দলের ওপেনারের। তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৯.৭৩ ও স্ট্রাইক রেট ৬৮.৩৮। সর্বোচ্চ ১১১ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন নাঈম।

ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টি যাত্রাতেও দাপুটে ভারত। আজ কটকে অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে আটকে ১০১ রানের বড় জয় পেয়েছে সূর্যকুমার যাদবের দল। এ জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
এদিন আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত। জবাবে ১২.৩ ওভারে ৭৪ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
টস হেরে এইডেন মার্করামের আমন্ত্রণে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা শুভমান গিল ওপেনিংয়ে নেমে ৪ রানে উইকেট ছাড়েন। পরে ১২ রান করে ফিরে যান অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ১৪ ওভারে ১০৪ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত।
দল গঠনে দায়িত্ব দেন চোট কাটিয়ে ফেরা হার্দিক পান্ডিয়া। ২৮ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন এই পেস অলরাউন্ডার। তাতেই ১৭৬ রানের লড়াকু স্কোর পায় ভারত।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই আর্শদীপ সিং ও জাসপ্রিত বুমরাহের তোপে পড়ে প্রোটিয়ারা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট হন কুইন্টন ডি কক। তৃতীয় ওভারে ফিরে যান ট্রিস্তান স্টাবস। দলীয় ৪০ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। ১৪ রান করে আউট হন এইডেন মার্করাম।
এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ। ২৯ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় তারা। প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস।
এদিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০তম উইকেট পেয়ে যান যশপ্রীত বুমরা। ভারতের হয়ে আর্শদীপ সিং, জাসপ্রিত বুমরাহ, বরুণ চক্রবর্তী ও অক্ষর প্যাটেল নেন ২টি করে উইকেট। বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে দুই দল।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আকবর আলি ও ট্রফি- শব্দগুলো ক্রমে একে অপরের সমার্থক হয়ে উঠছে। পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে পাঁচটি ঘরোয়া শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশকে ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক।
আর এই সাফল্য যে একদমই ফ্লুক নয়, আকবরের দলের ধারাবাহিকতাই সেটির প্রমাণ দেয়। সবশেষ তিনি জিতেছেন জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের শিরোপা। আর এই কৃতিত্ব অর্জনের পেছনে রয়েছে আকবরদের দীর্ঘ সু-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
আট দলের জাতীয় লিগে ছয় রাউন্ড শেষেও কাগজে-কলমে শিরোপা জেতার সম্ভাবনা টিকে ছিল ৬টি দলের। ২ জয় ও ৪ ড্রয়ের সঙ্গে দুটি বোনাস পয়েন্ট পেয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল সিলেট। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পরেই ছিল নবাগত ময়মনসিংহ। তাই ২৩ পয়েন্ট থাকা রংপুরের জন্য শেষ ম্যাচের সমীকরণ ছিল বেশ জটিল।
খুলনার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটি শুধু জিতলেই হতো না, তাদের চেয়ে থাকতে হতো সিলেট ও ময়মনসিংহ ম্যাচের দিকেও। তবে সবার আগে নিজেদের কাজটা সারার দিকেই মনোযোগ ছিল আকবরের।
মঙ্গলবার জাতীয় লিগের শিরোপা উদযাপন সেরে কিছুটা ফ্রি হওয়ার পর তিনি বললেন, শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া দ্বিতীয় ভাবনা ছিল না রংপুরের।
“আমরা তো তিন নাম্বারে ছিলাম তো ভাবনা ছিলো যে আমাদের জিততেই হবে। যদি জিততে পারি সেক্ষেত্রে হয়তোবা সিলেট আর ময়মনসিংহ খেলায় যদি রেজাল্ট আমাদের পজিটিভে আসে... মানে ওদের রেজাল্ট ওরা না করতে পারে সেক্ষেত্রে (ট্রফি) আমাদেরই আরকি।”
“আমাদের কাছে ছিলো যেটা, ম্যাচটা জিততেই হবে। তো যেহেতু বগুড়াতে খেলা, হিস্টোরিক্যালি বগুড়াতে রেজাল্ট হয়। মানে যেই টিমই করুক, কোনো না কোনো রেজাল্ট হবেই। তাই আমাদের একটাই কথা ছিল যে, ওরা যা করবে আমরা শেষ করব। একটা কথাই ছিল যে, সিচুয়েশন যত কঠিনই হোক আমরা জেতার জন্যই খেলব।”
সেই লক্ষ্যে প্রথম ইনিংসে খুলনার ৩০৮ রানের জবাবে মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে যায় রংপুর। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর আগুনঝরা বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে ৯৬ রানে অল আউট করে দেয় আকবরের দল।
পরে উদীয়মান বাঁহাতি ব্যাটার ইকবাল হোসেনের চমৎকার এক সেঞ্চুরিতে ২৩১ রানের লক্ষ্য অনায়াসেই তাড়া করে ফেলে রংপুর। ফল ৩ জয় ও ৩ ড্রয়ে তাদের ঝুলিতে হয় ৩১ পয়েন্ট।
পরদিন রাজশাহীর কাছে ময়মনসিংহের পরাজয় ও বরিশালের সঙ্গে সিলেটের ড্রয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় আকবরের অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ট্রফি।
২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতিয়ে অধিনায়ক হিসেবে আকবরের উত্থান। এরপর ২০২২ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণে রংপুরের শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার অধিনায়কত্বে ২০২৩ সালে বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হয় নর্থ জোন।
ধারাবাহিকতা ধরে রেখে গত বছর এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রথম আসরেই বাজিমাত করে আকবরের রংপুর। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে চলতি বছরের এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও চ্যাম্পিয়ন হন তারা।
এবার চার দিনের সংস্করণেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরোয়া ‘ডাবল’ ট্রফি ঘরে তুলল রংপুর। যা আরও পাকাপোক্ত করল ‘আকবর দ্য গ্রেট’ তকমা।
রংপুরের এই কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে তাদের দীর্ঘ পরিকল্পনা। লিগের সূচি পাওয়ার পরই সাত ম্যাচের ভেন্যু ও প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে টুর্নামেন্টের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেন আকবর, নাসির হোসেন, নাঈম ইসলামরা।
“যখন সূচি পেয়েছি, তখন সিনিয়র কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে কোচিং স্টাফ যারা ছিল... আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা এমনই ছিল যে, আমাদেরকে বগুড়ায় দুইটা ও রাজশাহীর একটা ম্যাচ জিততেই হবে। বাকি খেলাগুলো যদি জিততেও না পারি অন্তত যেন আমরা ড্র করতে পারি।”
যেই কথা সেই কাজ। কুকাবুরা বলে সিলেট ও কক্সবাজারে হওয়া প্রথম দুই রাউন্ডে ঢাকা ও ময়মনসিংহের সঙ্গে ড্র করে দুটি করে পয়েন্ট নিশ্চিত করে রংপুর। পরে ডিউক বলে ফিরলেও কক্সবাজারে তৃতীয় রাউন্ডে সিলেটের সঙ্গেও ড্র হয় তাদের ম্যাচ।
এরপর বগুড়ায় গিয়ে বরিশালকে ৮ উইকেটে হারিয়ে পূর্ণ ৮ পয়েন্ট পায় রংপুর। রাজশাহীর মাঠে খেলতে নেমে পঞ্চম রাউন্ডে তারা হারায় স্বাগতিক রাজশাহীকে।
ষষ্ঠ রাউন্ডের জন্য আবার কক্সবাজারে যায় আকবরের দল। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে হাসান মাহমুদ ও ইফরান হোসেনের তোপে মাত্র ৩৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। পরে ম্যাচটি তারা হেরে যায় ইনিংস ব্যবধানে।
আকবরের মতে, পুরো টুর্নামেন্টে ওই একটি ইনিংসই শুধু তার প্রত্যা্শামতো যায়নি।
“শুধু চট্টগ্রাম ম্যাচটা বাদে আর সব ম্যাচে আমাদের পজিটিভ রেজাল্টই বলবো। কুকাবুরাতে সিলেটের মাঠে খেলা হইছে, কক্সবাজারে খেলা হইছে। ওগুলো ম্যাচে রেজাল্ট বের করা কঠিন।”
“আমরা জানতাম যে আমাদের বগুড়াতে দুইটা খেলা আছে, রাজশাহীতে একটা খেলা আছে। তো এই তিনটা খেলায় রেজাল্ট করতেই হবে আমাদের।”
আর এই ফল পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারিগর মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। রংপুরের জেতা তিন ম্যাচেই ইনিংসে ৫ উইকেট আছে ২৫ বছর বয়সী পেসারের৷ সব মিলিয়ে মাত্র ৭ ইনিংসে তিনি নিয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ উইকেট। যার সৌজন্যে জিতেছেন লিগের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার।
ব্যাটিংয়ে সম্মিলিত পারফরম্যান্স ছিল দলের সবার। সর্বোচ্চ ৩০০ রান করেন নাঈম ইসলাম। মূলত বোলিং দিয়েই এবারের শিরোপাটি জিতেছে রংপুর। আরও একবার নিজেকে আকবর দ্য গ্রেট হিসেবে প্রমাণ করেছেন অধিনায়ক আকবর।

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২০২৫-২৬ মৌসুমের পর্দা নামল আজ। দুই মৌসুম পর আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রংপুর। দুই মাস আগেই এনসিএল টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উত্তরবঙ্গের দলটি। এবার চারদিনের ক্রিকেটেও ট্রফি ঘরে নিল আকবর আলির দল।
এনসিএলে সেরা উইকেটশিকারিদের তালিকায় সবার উপরে বরিশালের বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। সাত ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ৩৪ উইকেট। দুইবার নিয়েছেন ফাইফার, ৬৪ রানে ৭ উইকেট তাঁর সেরা বোলিং ফিগার।
চমক দেখিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন রংপুরের মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। চার ম্যাচে ৮ ইনিংসে নিয়েছেন ২৯ উইকেট। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার, এক ইনিংসে ২২ রানে ৫ উইকেট সেরা ফিগার মুগ্ধ’র। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের স্ট্রাইক ২৩,৯৩ অর্থাৎ প্রতি চার ওভার বল বল করে নিয়েছেন উইকেট। রয়েছেন তালিকায় দ্বিতীয়তে।
তালিকার তিন নম্বরে রয়েছেন বরিশালের রুয়েল মিয়া। ৬ ম্যাচে ১১ ইনিংসে রুয়েল শিকার করেছেন ২৭ উইকেট। ৬৪ রানে ৫ উইকেট এই বাঁ-হাতি পেসারের বোলিং ফিগার। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার।
চার নম্বরে চট্টগ্রামের স্পিনার নাইম হাসানের উইকেট সংখ্যা রুয়েল মিয়ার সমান। তবে এক ম্যাচ ও দুই ইনিংস বেশি খেলেছেন তিনি। ৭ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ২৭ উইকেট।
পাঁচ নম্বর নামটা সিলেটের আবু জায়েদ চৌধুরী রাহীর। পাঁচ ম্যাচে ১০ ইনিংসে ২৫ উইকেট নিয়েছেন এই মিডিয়াম পেসার। ৩৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট সেরা বোলিং ফিগার বাংলাদেশ টেস্ট দলে খেলা এই বোলারের।

চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা পূর্বাচল ক্রিকেট স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স বিসিবি বুঝে পেয়েছে ২০১৭ সালে। তবে ৩৭.৫৯ একর জায়গা এখনো পড়ে আছে অব্যবহৃত। একটি মাঠও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি প্রস্তুত করতে পারেনি বিসিবি। অধিকাংশ জায়গা ছেয়ে আছে বনঘাসে। দূর্বাঘাসের অস্তিত্ব নেই কোথাও। দুটি দেয়ালঘেরা অফিস এখানে ভবিষ্যতে বড় কর্মযজ্ঞের বার্তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতের আধুনিক রাজধানীতে এতো বড় একটি জায়গায় পরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট নগরে পরিনত করতে কে না চাইবে ? গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তাই মাঠ সংকট কাটানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট।
পূর্বাচলে তিনটি মাঠ তৈরির কাছে হাত দেয়ার কথাও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট-
'এক সময়ে এখানে পুরোটাই জঙ্গল ছিল। পূর্বাচলের এই সুন্দর জায়গাটিতে যতো দ্রুত সম্ভব খেলার উপযোগী করে তুলতে চাই।প্রায় ২০-২৫ দিন আগে এখানে আমি একবার এসেছিলাম। এতো সুন্দর জায়গা পাঁচ-সাত বছর পড়ে আছে। এখানে তিনটি মাঠে খেলা শুরু করতে চাই। ঢাকার অনেক ক্রিকেটের জন্য মাঠ ভাড়া করতে হয়। সময়মত লিগ আয়োজন করতে পারি না। ফতুল্লায়ও ২টি মাঠের কাজে হাত দিতে পারি। ফতুল্লায় ইনার এবং আউটারের কাজ ৭০% হয়ে গেছে।ওখানে ৩০% কাজ বাকি আছে। পূর্বাচলে ৩টি এবং ফতুল্লায় ২টি মাঠের কাজ শেষ করতে পারলে ঢাকার লিগগুলো আয়োজন করা যাবে। ভবিষ্যতে যে প্লান আছে, তখন না হয় গ্যালারি করতে পারব। মাঠের কাজ শুরু করেছি। ১০টি পিচ হবে প্রতিটি মাঠে। এভাবে তিনটি মাঠের কাজে হাত দিয়েছি। বেশ কিছু বালি ফেলতে হবে। প্রাথমিকভাবে ঘাস উঠানোর কাজ চলছে।'