তৃতীয় দিনের খেলা শেষে মুমিনুল হক আশা করছিলেন ২৭০ থেকে ৩০০ রানের লিড নেওয়ার। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তার এমন প্রত্যাশা ভুল ছিল না। তবে ব্যাটারদের সেই দায়িত্বটা তো বুঝতে হবে এবং মাঠে করে দেখাতে হবে। এর কিছুই হলো না চতুর্থ দিনে। ভালো অবস্থানে থেকেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দুইশর কম টার্গেট দিতে পারল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। পুরো ম্যাচে হতাশ করা বোলাররাও পারলেন না বিশেষ কিছু করে দেখাতে। রান তাড়ায় কিছুটা নাটকীয়তা জন্ম দেওয়ার পর রেকর্ড গড়ে স্মরণীয় এক জয় তুলে নিল জিম্বাবুয়ে।
সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ১৭৪ রানের টার্গেটে জিম্বাবুয়ে জয় তুলে নিয়েছে ৩ উইকেটের। দুই ম্যাচের সিরিজে সফরকারীরা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার শান্ত ও জাকের আলি অনিকের কাছে দলের আশা ছিল বড় একটা জুটির, যা দলকে নিয়ে যেতে পারত সুবিধাজনক অবস্থায়। তবে একরাশ হতাশারই জন্ম দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দিনের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই তাকে আউট করেন ব্লেসিং মুজারাবানি। বাউন্সারে টাইমিং না করতে পেরে লং লেগে ক্যাচ তুলে ৬০ রানে থামে শান্তর ইনিংস।
বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ভীতি সঞ্চার করার মুজারাবনি এরপর দেখা পেয়ে যান ফাইফারের। স্রেফ ১১ রানেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় মেহেদি হাসান মিরাজকে। তাইজুল ইসলামও অল্পে ফিরলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে লড়াই চালান জাকের ও হাসান মাহমুদ মিলে।
ওভারের পর হাসান কাটিয়ে দেন ব্লক করে। আর অন্যপ্রান্তে সুযোগ বুঝে রান বের করা জাকের আলি তুলে নেন ফিফটি। তবে হাসানের ওপর অতিরিক্ত বিশ্বাস রাখার কারণেই কিনা, একটা পর্যায়ে গিয়ে তাকে ওভারের পাঁচটা ডেলিভারিই খেলার ভার দিয়ে দেন জাকের। শেষ পর্যন্ত সেটাই কাল হয় দলের জন্য।
ওয়েলিংটন মাসাকাদজার পরপর দুই বলে দুই উইকেট পতনের পর দ্রুত রান বের করার চেষ্টায় ৫৮ রানে থামতে হয় দারুণ এক ইনিংস খেলা জাকেরকে। ৭২ রানে ৬ উইকেট নেন মুজারাবানি।
চতুর্থ ইনিংসে ১৭৪ বা তার বেশি রান তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে নেই। সেই কারণেই হয়ত ব্যাটিং সহায়ক এই উইকেটেও কিছুটা জয়ের আশা ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে সেটা মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি খুব একটা। প্রথম দশ ওভারে পেসার ও স্পিনাররা কেউই পারেননি ব্যাটারদের চাপে রাখতে।
উল্টো জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার রান করতে থাকেব ইতিবাচক ব্যাটিংয়েই। উইকেটের জন্য মরিয়া হওয়ার কারণেই কিনা, প্রতি ওভারেই দেখা মেলে বাজে ডেলিভারির। ফলে চার-ছক্কায় সহজেই রানের চাকা সচল রাখেন ব্যাটাররা। আর এতে দ্রুতই ম্যাচের লাগাম একেবারেই চলে যায় জিম্বাবুয়ের হাতে।
অবশেষে দলীয় শতক থেকে পাঁচ রান দূরে থাকতে আসে ব্রেকথ্রু। মিরাজের বলে মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বেন কারান। তবে তার আগে উপহার দেন ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। স্পেলে শুরু থেকেই এলোমেলো বোলিং করা আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম অন্যপ্রান্তে ছন্দ খুঁজে পান নিক ওয়েলচকে ফিরিয়ে। ২ উইকেটে ১১৭ রান নিয়ে চার বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে।
সেখান থেকে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে দরকার ছিল দ্রুত কয়েকটি উইকেট। আর মিরাজের হাত ধরে সেটা চলেও আসে। প্রথমে সিন উইলিয়ামসকে শিকারের পর ইনিংসের ৩৩তম ওভারে এনে দেন বড় উইকেট। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫৮ রান করা ব্রায়ান বেন্নেট। ১২৮ রানে প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট তুলে কিছুটা হলেও ম্যাচে ফেরার আভাস জাগে বাংলাদেশ দলে।
সেই পালে আরও হাওয়া দেন তাইজুল। লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন অভিজ্ঞ ক্রেইগ এরভিন। পরের ওভারে ফের উইকেট। দারুণ এক টার্নিং ডেলিভারিতে নায়াশা মায়াভোকে ক্লিন বোল্ড করে ইনিংসে চতুর্থ উইকেটের দেখা পান মিরাজ।
ক্রমেই জমা ওঠে ম্যাচে এরপর বাংলাদেশকে কিছুটা চাপে ফেলে ওইয়েলিংটন মাসাকাদজা। তাইজুলের পরপর দুই ওভারে ছক্কা ও চার মেরে অনেকটাই চাপ সরান। জিম্বাবুয়ের দরকার যখন আর মাত্র ১৩ রান, ঠিক তখন ফের বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে হাজির হন মিরাজ। মাসাকাদজাকে বোল্ড করে প্রাণ ফেরার স্বাগতিক শিবিরে।
তবে ওই ওভারেই চার মেরে জিম্বাবুয়েকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান রিচার্ড এনগারভা। তাইজুলের করা পরের ওভারের প্রথম বলেই আসে আরেকটি চার। খানিক বাদে ওয়েসলি মাধেভেরের আরেকটি বাউন্ডারিতে ঐতিহাসিক এক জয় নিশ্চিত হয় জিম্বাবুয়ের। বিফলে যায় মিরাজের ৫৪ রানে ৫ উইকেটের দারুণ এক স্পেল।
সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত আসায় পাকিস্তান সফর নিয়ে কেটে গিয়েছিল সংশয়। শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। তবে কমেছে ম্যাচের সংখ্যা। নতুন সূচীতে সিরিজ হবে তিন ম্যাচের।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদের সাথে বৈঠকের পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) নিশ্চিত করেছে বিষয়টি। নতুন সুচী অনুযায়ী সবগুলো ম্যাচই হবে এক শহরে, এক ভেন্যুতে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে।
আরও পড়ুন
ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিল আমিরাত |
![]() |
ভেন্যূ চূড়ান্ত হলেও কবে থেকে সিরিজ শুরু, তা জানা যায়নি। তবে সামনে কুরবানির ঈদ থাকায় সিরিজটি এর আগেই শেষ হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত।
এর ফলে তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশের পাকিস্তান সফরের সূচিতে পরিবর্তন আসল। প্রথমে ওয়ানডে সিরিজ থাকলেও গেল মাসে তা বাতিল করে টি-টোয়েন্টি সিরিজ পাঁচ ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশের বোর্ড। তবে ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সীমান্তে উত্তেজনার পর অনিশ্চয়তা তৈরি হয় সিরিজ নিয়েই।
চলতি মাসের শুরুতে তো সিরিজটি স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছিল। তবে সফরের ব্যাপারে সরকারের সম্মতি আর ক্রিকেটারদের ছোট আকারে সিরিজ খেলার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে গড়াতে যাচ্ছে সিরিজটি।
পাকিস্তান সফরে ম্যাচের সংখ্যা কমে গেলেও চলমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সিরিজে একটি ম্যাচ বাড়িয়েছে বিসিবি। দুই ম্যাচের পরিবর্তে তিন ম্যাচ করা হয়েছে সিরিজটি।
আরও পড়ুন
পিএসএল দিয়ে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরার আশায় মিরাজ |
![]() |
একাদশে আসল বেশ কয়েকটি পরিবর্তন। তবে বড় স্কোর গড়ায় তাতে পড়ল না প্রভাব। তানজিদ হাসান তামিমের দুর্দান্ত এক ফিফটির সাথে অন্য ব্যাটারদের সম্মিলিত অবদানে দুইশ প্লাস স্কোর পেয়ে জয়ের সুবাসই পাচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে বিশ্বাসকে সঙ্গী করে সাহসী ক্রিকেট খেলল সংযুক্ত আরব আমিরাত। অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। শেষের দিকে কিছুটা পথ হারালেও নিজের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েই মাঠ ছাড়ল স্বাগতিকরা।
শারজাহতে দুই ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হেরেছে ২ উইকেটে। ৫ উইকেটে ২০৫ রান তুলেছিল সফরকারীরা। ১ বল হাতে রেখেই সেই রান তাড়া করেছে আমিরাত। তাতে সিরিজে সমতা এখন ১-১ ব্যবধানে।
আরও পড়ুন
লম্বা হল বাংলাদেশ-আমিরাত সিরিজ |
![]() |
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ আগামী বুধবার একই ভেন্যুতে।
বিশাল রান তাড়ায় ঠিক আগের ম্যাচের মতোই ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই চড়াও হন আমিরাতের ওপেনাররা। শরিফুল ইসলামের করা ইনিংসের প্রথম বলেই আসে চারের মার। দ্বিতীয় ওভারে তানভীর ইসলাম হজম করেন চার ও ছক্কা।
তানজিম হাসান সাকিবের প্রথম ওভারেও আসে ১১ রান। তবে ঝড় বয়ে যায় অভিষিক্ত নাহিদ রানার ওপর দিয়ে। গতিময় এই পেসারের এই ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ডেলিভারিটিই হয় নো বল। ফ্রি-হিটে খান ছক্কা, যেটা হয় আরেকটি নো বল। আরও দুই চার হজমে শেষ পর্যন্ত ওভারে গুনেন ১৮ রান।
ছয় ওভারে ৬৮ রান তুলে আমিরাত শিবিরে জয়ের আশা বাড়িয়ে দেন ওয়াসিম ও মুহাম্মদ জোহাইব। সিরিজে টানা দ্বিতীয় ফিফটি করার পথে ফিরতি স্পেলেও নাহিদকে বেদম মার দেন আমিরাত অধিনায়ক। তিনটি চার সহ এই দফায় নাহিদ দেন ১৪ রান।
শেষ পর্যন্ত ১০৭ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন তানভীর ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনার ৩৮ রানে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান জোহাইবকে। এরপর রাহুল চোপড়াকে ফিরিরে দেন রিশাদ হোসেন।
আরও পড়ুন
পিএসএল দিয়ে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরার আশায় মিরাজ |
![]() |
তবে সেই চাপ সরিয়ে বড় শটের পসরা সাজিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের দিশেহারা করে ফেলেন ওয়াসিম। সাথে যোগ দেন আগের ম্যাচে ঝড়ো এক ইনিংস খেলা আসিফ খান, তানজিমকে হাঁকান টানা দুই ছক্কা।
বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ যখন ক্রমেই ফসকে যাওয়ার পথে, সেই সময়ে ত্রাতা হিসেবে হাজির হন শরিফুল। টাইমিংয়ে গড়বর করে বিপজ্জনক ওয়াসিম ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে, যা গ্লাভসবন্দী করতে ভুল হয়নি জাকেরের। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় ওয়াসিমের মাত্র ৪২ বলে ৮২ রানের টর্নেডো ইনিংস।
নিজের তৃতীয় ওভারেই খরুচে নাহিদ দুটি চার হজম করলেও ফেরান আফিফ খানকে। দুর্দান্ত এক স্পেল করা রিশাদ তার শেষ ওভারে দেখা পান উইকেটের। নাহিদকে একটি ছক্কা মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলার আভাস দেওউয়া আরিয়ানশ শর্মা ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন একই বোলারের হাতে।
নাহিদ তার স্পেল শেষ করেন চার ওভারে ৫২ রানে ২ উইকেট নিয়ে। ২০ ওভারে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে অভিষেকে ৫০ বা তার বেশি রান দিয়েছেন ইবাদত হোসেন ও শরিফুল।
১৯তম ওভারে প্রথম বলে শরিফুল উইকেট পেলেও নার্ভ ধরে রাখতে ব্যর্থ হন এরপর। চার ও ছক্কা তো হয়ই, সাথে তার করা ওভারথ্রো থেকে বাড়তি চারটি রানও পেয়ে আমিরাত। শেষ ওভারে তাতে সমীকরণ দাঁড়ায় জয়ের জন্য মাত্র ১২ রানের।
তানজিমের করা দ্বিতীয় ডেলিভারি ছিল লো ফুলটস, মিড অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন ধ্রুব পারেশ্বর। তবে পরের বলে ঘুরে দাঁড়ান বোলার। স্লোয়ারে করে দেন বোল্ড। তবে শেষ পর্যন্ত আর তাল সামলাতে পারেননি তানজিম। প্রথমবারের মত বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয় আমিরাত।
চার পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজানো বাংলাদেশ ম্যাচটি খেলতে নামে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান পারভেজ হোসেন ইমনকে ছাড়াই। চোটের কারণে তাকে দেওয়া হয় বিশ্রাম। অধিনায়ক লিটন ওপেন করতে নেমে শুরু থেকেই ছিলেন না সাবলীল।
তবে অন্যপ্রান্তে তানজিদ ছিলেন ঠিক বিপরীত ছন্দে। প্রথম ওভারেই একটি ছক্কার পাশাপাশি তার ব্যাট থেকে আসে দুটি চার। তার সাথে তাল মিলিয়ে কিছুটা আগ্রাসন দেখিয়ে টানা দুটি বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। ১০ রানে ধ্রুভ পারেশ্বরের বলে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
আরও পড়ুন
ইমনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে জয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের |
![]() |
এরপর তাকে দর্শক বানিয়ে ঝড় তোলেন তানজিদ। চার-ছক্কার মহড়ায় মাত্র ২৫ বলে করে ফেলেন ফিফটি, যা তাকে জায়গা করে দেয় দারুণ এক রেকর্ডবুকে।
তানজিদ ফিফটি অর্ধশতক পূরণ করেন পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে তার আগে এই কীর্তি গড়েছেন কেবল দুজন। প্রথম জন ছিলেন নাজিমুদ্দিন, ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। আর অন্যটি লিটনের করা, ভারতের বিপক্ষে ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপে।
এই ম্যাচে অবশ্য লিটন অধিকাংশ সময় জুড়েই খোলসবন্দী ছিলেন, রান করেছেন তবে ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন কয়েকবার। ৯০ রানের জুটিতে মূল অবদান রাখা তানজিদ অবশ্য প্রতিপক্ষের বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন করেই আউট হন ৫৯ রানে। মাত্র ৩৩ বলের ইনিংসটি সাজান ৮টি চার ও ৩ ছক্কায়।
এই সিরিজ দিয়েই টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর শুরুটা হয় উড়ন্ত। ক্রিজে গিয়েই কয়েকটি বড় শটে প্রথম ৯ বলে করে ফেলেন ২০ রান। তবে এরপর কিছুটা ধীরলয়ে এগিয়ে যায় তার ইনিংস।
প্রায় একই চিত্র ছিল লিটনের ব্যাটেও। ক্রিজেব ভালোভাবেই সেট হলেও পারেননি রানের গতি বাড়াতে। ৪০ রান করতে বল খেলে ফেলেন ৩২টি। তবে পাল্টা আক্রমণে আমিরাতের বোলারদের চাপে ফেলে দেন তাওহীদ হৃদয়। হায়দার আলিকে ছক্কার মারার পরের ওভারে চার ও ছক্কায় ওড়ান মুহাম্মদ ওয়াসিমকে।
২৭ রানে শান্তর বিদায়ের পরও তাই পথ হারায়নি বাংলাদেশের ইনিংস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যামিও উপহার দেন জাকের আলি অনিক। মুহাম্মদ জাওয়াদুল্লাহর শিকার হওয়ার আগে তারই ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে আদায় করেন ১৬ রান। জাকের খেলেন ৬ বলে ১৮ রানের ইনিংস।
ফিফটির দিকে এগিয়ে যাওয়া তাওহীদকে থামতে হয় পাঁচ রান দূরে থাকতে। সাঘির খানের বলে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৪ বলে ৪৫ রান করে। তবে তার এই ইনিংসে কারণেই শেষ ওভারে মাত্র চার রান বোর্ডে জমা হওয়ার পরও বাংলাদেশ পায় ২০০ পার করা স্কোর। তবে তাতেই শেষ রক্ষা আর হয়নি।
আগেই ম্যাচে করেছেন সেঞ্চুরি। অথচ চমক জাগিয়েই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে একাদশে জায়গা হয়নি পারভেজ হোসেন ইমনের। ম্যাচ শুরু হতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানিয়েছে তরুণ এই ওপেনারের না খেলার কারণ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং করার সময় বাম কুঁচকিতে অস্বস্তি অনুভব করেন ইমন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাই ফিল্ডিং করতে মাঠে নামেননি তিনি।
আরও পড়ুন
পিএসএল দিয়ে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরার আশায় মিরাজ |
![]() |
বিসিবি আরও জানিয়েছে, ইমন দ্বিতীয় ম্যাচের আগে ফিটনেস টেস্টে অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে তাকে খেলার জন্য ফিট ঘোষণা করা হয়। তবে সতর্কতার অংশ হিসেবে তাকে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠার জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে এই ম্যাচটা তাকে বেঞ্চেই কাটাতে হচ্ছে।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাত্র দ্বিতীয় বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করেন ইমন। হাঁকান ৯টি ছক্কা, যা এক ইনিংসে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।
দ্বিতীয় ম্যাচে তার জায়গায় একাদশে জায়গা মিলেছে সাবেক টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর।
সবশেষ বিপিএলে টুর্নামেন্ট সেরা হলেও নানা বাস্তবতায় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলে মেহেদি হাসান মিরাজ এখনও অনিয়মিত। সেই ধারায় নেই চলমান সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরেও। আর সেটাই তাকে আচমকাই সুযোগ করে দিয়েছে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলার। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার মনে করেন, পিএসএল তার জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে দিতে পারে।
সোমবার মিরাজ চলমান পিএসএলের প্লে-অফ পর্বে খেলার জন্য লাহোর কালান্দার্সে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে এরই মধ্যে অনাপত্তিপত্র দিয়েছে ২২ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত।
আরও পড়ুন
৬ দিনের এনওসি পেলেন মুস্তাফিজুর |
![]() |
ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে লাহোরে পৌঁছে যাবেন। পিএসএলের প্লে-অফ পর্ব শুরু হবে বুধবার থেকে। আর কালান্দার্স তাদের ম্যাচটি খেলবে বৃহস্পতিবারের এলিমিনেটর পর্বে।
এলিমিনেটর ম্যাচ হওয়ায় স্রেফ এক ম্যাচেই শেষ হতে পারে মিরাজের পিএসএল অধ্যায়। তবে ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার বলেছেন, এই সুযোগ নিয়ে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত।
“লাহোর কালান্দার্সে যোগ দেওয়া অবশ্যই আমার জন্য একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার। ওভাবে বললে এটা আমার দ্বিতীয়বার কোনো বিদেশী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ডাক পাওয়ার ঘটনা। তবে আমার জন্য এটা শীর্ষ পর্যায়ে খেলার দারুণ একটি সুযোগ। পিএসএল এই সময়ের শীর্ষ টুর্নামেন্টগুলোর একটি। আমি বিপিএলে ভালো করেছি। তাই একটা আত্মবিশ্বাস আছে যে, আমি এখানে নিজের সেরা পারফরম্যান্সটা দিতে পারব।”
মিরাজ এর আগে একবার দল পেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা সিপিএলে। তবে মাঠে নামার আর সুযোহ হয়নি। তবে এবার লাহোর দলের যে বাস্তবতা, তাতে এলিমিনেটর ম্যাচে তার খেলাটা প্রায় নিশ্চিতই বলা যায়। কারণ, জিম্বাবুয়ের স্পিনিং অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজার জায়গায় তাকে নিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
আরও পড়ুন
লম্বা হল বাংলাদেশ-আমিরাত সিরিজ |
![]() |
ফলে এক ম্যাচ খেলার সুযোগ হোক আর তিন ম্যাচ, পিএসএলে ভালো করাটা মিরাজের জন্য হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাংলাদেশের চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজের পাশাপাশি সামনে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের স্কোয়াডেও রাখা হয়নি তাকে।
পূর্ব ঘোষিত সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর সূচী অনুযায়ী সিরিজ হওয়ার কথা ছিল দুই ম্যাচের। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। ফলে এক ম্যাচ বেড়েছে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজে।
সোমবার এক বিবৃতিতে বিসিবি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি হবে আগামী ২১ মে (বুধবার)।
প্রথম দুই ম্যাচের পর এই ম্যাচটিও হবে বিখ্যাত শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শুরু যথারীতি বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়।
বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও ধারণা করা হচ্ছে, মূলত পাকিস্তান সফরের আগে ভ্রমণ ক্লান্তি কমাতেই একটি ম্যাচ বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল তাদের। চলতি মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা রয়েছে লিটন-ইমনদের।
চলতি মাসের শুরুতে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার কারণে অনিশ্চিয়তার মুখে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের সফর। তবে বদলে যাওয়া পরিবেশে সিরিজটি এই মাসেই আয়োজনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। বিসিবিও রাজি রয়েছে তারিখ ও ভেন্যু বদলে সিরিজটি খেলার।
তবে সেটা চূড়ান্ত না হওয়ায় বাংলাদেশ দলকে আরব আমিরাতে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলেই দেশে ফিরতে হত। এরপর আবার পাকিস্তান যেতে হত। সেটা এড়াতেই বাড়তি একটি ম্যাচ এখানে খেলে সরাসরি পাকিস্তানে যাওয়ার দিকেই হয়ত এগিয়ে যাচ্ছে বিসিবি।