তৃতীয় দিনের খেলা শেষে মুমিনুল হক আশা করছিলেন ২৭০ থেকে ৩০০ রানের লিড নেওয়ার। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তার এমন প্রত্যাশা ভুল ছিল না। তবে ব্যাটারদের সেই দায়িত্বটা তো বুঝতে হবে এবং মাঠে করে দেখাতে হবে। এর কিছুই হলো না চতুর্থ দিনে। ভালো অবস্থানে থেকেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দুইশর কম টার্গেট দিতে পারল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। পুরো ম্যাচে হতাশ করা বোলাররাও পারলেন না বিশেষ কিছু করে দেখাতে। রান তাড়ায় কিছুটা নাটকীয়তা জন্ম দেওয়ার পর রেকর্ড গড়ে স্মরণীয় এক জয় তুলে নিল জিম্বাবুয়ে।
সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ১৭৪ রানের টার্গেটে জিম্বাবুয়ে জয় তুলে নিয়েছে ৩ উইকেটের। দুই ম্যাচের সিরিজে সফরকারীরা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার শান্ত ও জাকের আলি অনিকের কাছে দলের আশা ছিল বড় একটা জুটির, যা দলকে নিয়ে যেতে পারত সুবিধাজনক অবস্থায়। তবে একরাশ হতাশারই জন্ম দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দিনের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই তাকে আউট করেন ব্লেসিং মুজারাবানি। বাউন্সারে টাইমিং না করতে পেরে লং লেগে ক্যাচ তুলে ৬০ রানে থামে শান্তর ইনিংস।
বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ভীতি সঞ্চার করার মুজারাবনি এরপর দেখা পেয়ে যান ফাইফারের। স্রেফ ১১ রানেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় মেহেদি হাসান মিরাজকে। তাইজুল ইসলামও অল্পে ফিরলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে লড়াই চালান জাকের ও হাসান মাহমুদ মিলে।
ওভারের পর হাসান কাটিয়ে দেন ব্লক করে। আর অন্যপ্রান্তে সুযোগ বুঝে রান বের করা জাকের আলি তুলে নেন ফিফটি। তবে হাসানের ওপর অতিরিক্ত বিশ্বাস রাখার কারণেই কিনা, একটা পর্যায়ে গিয়ে তাকে ওভারের পাঁচটা ডেলিভারিই খেলার ভার দিয়ে দেন জাকের। শেষ পর্যন্ত সেটাই কাল হয় দলের জন্য।
ওয়েলিংটন মাসাকাদজার পরপর দুই বলে দুই উইকেট পতনের পর দ্রুত রান বের করার চেষ্টায় ৫৮ রানে থামতে হয় দারুণ এক ইনিংস খেলা জাকেরকে। ৭২ রানে ৬ উইকেট নেন মুজারাবানি।
চতুর্থ ইনিংসে ১৭৪ বা তার বেশি রান তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে নেই। সেই কারণেই হয়ত ব্যাটিং সহায়ক এই উইকেটেও কিছুটা জয়ের আশা ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে সেটা মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি খুব একটা। প্রথম দশ ওভারে পেসার ও স্পিনাররা কেউই পারেননি ব্যাটারদের চাপে রাখতে।
উল্টো জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার রান করতে থাকেব ইতিবাচক ব্যাটিংয়েই। উইকেটের জন্য মরিয়া হওয়ার কারণেই কিনা, প্রতি ওভারেই দেখা মেলে বাজে ডেলিভারির। ফলে চার-ছক্কায় সহজেই রানের চাকা সচল রাখেন ব্যাটাররা। আর এতে দ্রুতই ম্যাচের লাগাম একেবারেই চলে যায় জিম্বাবুয়ের হাতে।
অবশেষে দলীয় শতক থেকে পাঁচ রান দূরে থাকতে আসে ব্রেকথ্রু। মিরাজের বলে মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বেন কারান। তবে তার আগে উপহার দেন ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। স্পেলে শুরু থেকেই এলোমেলো বোলিং করা আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম অন্যপ্রান্তে ছন্দ খুঁজে পান নিক ওয়েলচকে ফিরিয়ে। ২ উইকেটে ১১৭ রান নিয়ে চার বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে।
সেখান থেকে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে দরকার ছিল দ্রুত কয়েকটি উইকেট। আর মিরাজের হাত ধরে সেটা চলেও আসে। প্রথমে সিন উইলিয়ামসকে শিকারের পর ইনিংসের ৩৩তম ওভারে এনে দেন বড় উইকেট। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫৮ রান করা ব্রায়ান বেন্নেট। ১২৮ রানে প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট তুলে কিছুটা হলেও ম্যাচে ফেরার আভাস জাগে বাংলাদেশ দলে।
সেই পালে আরও হাওয়া দেন তাইজুল। লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন অভিজ্ঞ ক্রেইগ এরভিন। পরের ওভারে ফের উইকেট। দারুণ এক টার্নিং ডেলিভারিতে নায়াশা মায়াভোকে ক্লিন বোল্ড করে ইনিংসে চতুর্থ উইকেটের দেখা পান মিরাজ।
ক্রমেই জমা ওঠে ম্যাচে এরপর বাংলাদেশকে কিছুটা চাপে ফেলে ওইয়েলিংটন মাসাকাদজা। তাইজুলের পরপর দুই ওভারে ছক্কা ও চার মেরে অনেকটাই চাপ সরান। জিম্বাবুয়ের দরকার যখন আর মাত্র ১৩ রান, ঠিক তখন ফের বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে হাজির হন মিরাজ। মাসাকাদজাকে বোল্ড করে প্রাণ ফেরার স্বাগতিক শিবিরে।
তবে ওই ওভারেই চার মেরে জিম্বাবুয়েকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান রিচার্ড এনগারভা। তাইজুলের করা পরের ওভারের প্রথম বলেই আসে আরেকটি চার। খানিক বাদে ওয়েসলি মাধেভেরের আরেকটি বাউন্ডারিতে ঐতিহাসিক এক জয় নিশ্চিত হয় জিম্বাবুয়ের। বিফলে যায় মিরাজের ৫৪ রানে ৫ উইকেটের দারুণ এক স্পেল।
No posts available.
২২ অক্টোবর ২০২৫, ৮:১৩ পিএম
জোনাথন ট্রট যেন ভাগ্যটাই বদলে দিয়েছেন আফগানিস্তান ক্রিকেটের। যুদ্ধবিধ্বস্ত মরুতে আশার ফুল ফুটিয়েছেন এই ইংলিশ ক্রিকেট গুরু। তার অধীনে বিশ্বকাপসহ আইসিসির বৈশ্বিক ইভেন্টগুলো নিয়মিত চমক দেখাচ্ছেন রশিদ খানরা। সে হিসেবে ট্রট আফগান ক্রিকেটে বেশ সমাদৃত।
সম্প্রতি গুঞ্জন ওঠেছে, শিগগিরই আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন ট্রট। গুঞ্জন উড়িয়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) প্রধান নির্বাহী নাসিব খান এক সাক্ষাৎকারে ক্রিকবাজকে বলেন,
“আমরা এখনো আশাবাদী যে ট্রট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরেও আমাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবেন।”
তিনি আরও বলেন,
“কোচদের চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা বর্তমানে আমাদের জাতীয় কোচিং স্টাফদের সঙ্গে আগামী বছরের জন্য তাদের ধরে রাখার বিষয়ে আলোচনা করছি।”
নাসিব খান আরও যোগ করেন,
“প্রতিবছরের শেষ দিকে আমরা আমাদের কোচদের সঙ্গে এই ধরনের আলোচনা করি। এটা আমাদের বোর্ডের নিয়মিত রুটিন। এ নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। যখন বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে, তখন আমরা মিডিয়াকে জানাবো।”
২০২২ সালে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন ট্রট। তার অধীনে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠে আফগানিস্তান। ওই আসরে তারা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে দেয়। এরপর থেকেই ট্রটের নাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
দুই দলের আগে থেকেই নিশ্চিত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকিট। ইন্দোরে আজ ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি ছিল মূলত ড্রেস রিহার্সাল। নিয়মরক্ষার ম্যাচ হলেও দিনটা স্মরণীয় করে রাখলেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিন অলরাউন্ডার অ্যাশ গার্ডনার। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটের বড় জয় উপহার দিলেন তিনি।
চলমান বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে অপরাজেয় রাখার দিনে ৬৯ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান গার্ডনার। দলকে জয় বন্দরে পৌঁছানো পর্যন্ত টিকে ছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে তার স্কোর ৭৩ বলে ১০৪ রান। এসময় ১৬টি বাউন্ডারি মারেন গার্ডনার। যা ওয়ানডে বিশ্বকাপে দ্রুততম। এর আগে লেস্টারে ৭১ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন দিয়েন্দ্রা ডটিন।
শুধুই দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডই নয়, এদিন আরও একটি কীর্তি গড়েছেন গার্ডনার। ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সর্বোচ্চ তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকানো নারী ক্রিকেটার তিনি। ডানহাতি এই স্পিন অলরাউন্ডারের ধারেকাছে নেই কেউ। ৬ নম্বরে ব্যাটিং করা ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিও তাঁরই।
এদিন ২৪৫ রানের টার্গেটে নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। মাত্র ২৪ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে দলটি। এরপর সাদারল্যান্ড ও বেথ মুনি মিলে চেষ্টা করেন পরিস্থিতি সামাল দিতে। তবে মুনি ২০ রান করে ফিরলে ভাঙে ৪৪ রানের জুটি।
এরপর ক্রিজে আসেন গার্ডনার। অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ১৮০ রানের জুটি। গার্ডনার অপরাজিত থাকেন ১০৪ রানে, তার ইনিংসে ছিল ১৬টি চারের মার। অপর প্রান্তে সাদারল্যান্ড ১১২ বলে ৯৮ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলেন। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট ও ৫৭ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় অজিরা।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। চোটের কারণে এই ম্যাচে ছিলেন না অস্ট্রেলিয়ার নিয়মিত অধিনায়ক এলিসা হিলি। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৪ রান তোলে ইংল্যান্ড। ওপেনার ট্যামি বিউমন্ট করেন ৭৮ রান। শুরুটা ভালো হলেও পরের ব্যাটাররা বড় ইনিংস গড়তে ব্যর্থ হন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সাদারল্যান্ড বল হাতে নেন ৩ উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাদারল্যান্ড।
ক্রিকেট শুধু খেলা নয়—এ এক অনন্ত দৃশ্যকাব্য। যেখানে বল-বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকে পাহাড়, সমুদ্র, আকাশ, ইতিহাসের গন্ধ আর সবুজ ঘাসের শান্ত ছোঁয়া। পৃথিবীর নানা প্রান্তে এমন কিছু মাঠ আছে, যেগুলো ক্রিকেটের সঙ্গে প্রকৃতির মেলবন্ধনের অনন্য উদাহরণ।
যুক্তরাজ্যের ক্রিকেট বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ‘ক্রিকেট থ্রি সিক্সটি ফাইভ’ বিশ্বের সবচেয়ে মনোরম সাতটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের তালিকা করেছে। সেখানে বাংলাদেশেরও একটি স্টেডিয়াম জায়গা পেয়েছে। দেখে নেই সাতটি স্বপ্নের ক্রিকেট মঞ্চ,।
নিউল্যান্ডস, কেপ টাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা
টেবিল মাউন্টেনের বিশাল ছায়ার নিচে ঘুমিয়ে থাকা এই মাঠ যেন এক স্বর্গীয় চিত্রপট। পাহাড়ের নিচে সবুজ কার্পেটের মতো আউটফিল্ড, পাশে ঐতিহাসিক প্যাভিলিয়ন—সব মিলিয়ে নিউল্যান্ডস যেন ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এক শিল্পকর্ম।
সূর্যাস্তের সোনালি আলো যখন মাঠে পড়ে, আর পাহাড়ের কোলঘেঁষা ব্রিউয়ারির গন্ধ মিশে যায় বাতাসে, তখন বোঝা যায় কেন নিউল্যান্ডসকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ক্রিকেটভূমিগুলোর একটি।
অ্যাডিলেড ওভাল, অস্ট্রেলিয়া
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিলনে গড়া অ্যাডিলেড ওভাল যেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট আত্মা। শতবর্ষ পুরোনো স্ট্যান্ড, ক্লাসিক স্কোরবোর্ড, আর চারপাশে ইউক্যালিপটাস গাছের ছায়া—সব মিলে এক অপার্থিব আবহ। রিভার টরেন্সের তীরে বসে শহরের স্কাইলাইন পেছনে রেখে ক্রিকেট দেখা—এ এক অন্যরকম আনন্দ, এক উৎসবমুখর স্মৃতি।
ধর্মশালা এইচপিসিএ স্টেডিয়াম, ভারত
হিমালয়ের কোলে, ১৪৫০ মিটার উঁচুতে গড়া এই মাঠটিকে এক কথায় বলা যায়—স্বপ্নের মঞ্চ। ধৌলাধর পর্বতমালার তুষারাবৃত শিখর মাঠের পেছনে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, যেন প্রকৃতি নিজেই দর্শক হয়ে এসেছে।
শীতল পাহাড়ি হাওয়া, নীল আকাশ আর সবুজ ঘাসের মিশেলে ধর্মশালা স্টেডিয়াম এমন এক সৌন্দর্য উপহার দেয়, যা ক্রিকেটের গণ্ডি ছাড়িয়ে যায় শিল্পে।
গওয়াদর ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পাকিস্তান
আরব সাগরের নীল জলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই স্টেডিয়াম প্রকৃতির বিস্ময়। চারপাশে খাড়া পাথুরে পাহাড়, নিচে ফিরোজা রঙের সমুদ্র, আর মাঝখানে সবুজ মাঠ—এই দৃশ্য যেন পৃথিবীর প্রান্তে খেলা কোনো স্বপ্নের ম্যাচ।
এখনও আন্তর্জাতিক খেলা হয়নি এখানে, কিন্তু গওয়াদর ইতিমধ্যেই পৃথিবীর সবচেয়ে ফটোজেনিক ক্রিকেট মাঠের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বাংলাদেশ
চা-বাগানের ঢালু পাহাড় আর সবুজ বনভূমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এই মাঠটি বাংলাদেশের গর্ব। সকালে কুয়াশা ভেজা আলোয় বা সন্ধ্যার ম্লান সূর্যকিরণে সিলেটের এই স্টেডিয়াম যেন সবুজের রাজ্যে এক পরীদেশ। এখানে খেলা মানে শুধু ক্রিকেট নয়—এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক সুরেলা মিলন।
ড্যারেন স্যামি ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সেন্ট লুসিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কারিবীয় নীল সাগর, পাম গাছ আর বালুকাবেলার মাঝখানে গড়া এই মাঠ একেবারেই আলাদা। সেন্ট লুসিয়ার উষ্ণ আবহ, সমুদ্রের গর্জন আর দর্শকদের নাচে ভরা গ্যালারি—সব মিলিয়ে এখানে প্রতিটি ম্যাচ এক উৎসব। এ যেন ক্রিকেটের নয়, জীবনেরই এক প্রাণোচ্ছ্বল রঙিন অধ্যায়।
লর্ডস, লন্ডন, ইংল্যান্ড
‘হোম অব ক্রিকেট' —এই নামই বলে দেয় সব কিছু। সেন্ট জনস উডের নরম আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা লর্ডস ইতিহাস আর মর্যাদার প্রতীক।
প্যাভিলিয়নের বারান্দা থেকে দেখা মাঠের দৃশ্য, পরিপাটি সবুজ আউটফিল্ড আর আধুনিক মিডিয়া সেন্টারের সৌন্দর্য মিলে লর্ডসকে বানিয়েছে চিরন্তন এক কবিতা। এখানে প্রতিটি বল, প্রতিটি শব্দ যেন ইতিহাসের অংশ।
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাল জিম্বাবুয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে ঘরের মাঠে ১২ বছর পর জয় পেলেন ক্রেইগ আরভিনরা। শুধু তাই নয়, ২০০১ সালের পর এই প্রথম ইনিংস ব্যবধানে জিতল দলটি। আফগানিস্তানকে ইনিংস ও ৭৩ রানে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় তুলে নিল জিম্বাবুয়ে।
হারারাতে আজ ইব্রাহিম জাদরান ২৫ ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৭ রানে অপরাজিত থেকে দিনের খেলা শুরু করেন। শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন গুরবাজ (৯ রান)। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে সফরকারীরা।
আফগানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন ইব্রাহিম জাদরান। বাহির শাহ করেন ৩২ রান। শেষ পর্যন্ত ১৫৯ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট তুলে নেন রিচার্ড এনগারাভা। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন ব্লেসিং মুজারাবানি ও তানাকা চিভাঙ্গা। এই তিন পেসারের তোপেই ভেঙে পড়ে আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। মুজারাবানি তিনটি ও চিভাঙ্গা নেন দুটি উইকেট। ফলে ইনিংস ব্যবধানে জয় পায় স্বাগতিকরা।
প্রথম ইনিংসে আফগানিস্তান ১২৭ রানে গুটিয়ে যায়। জবাব দিতে নেমে প্রথম ইনিংসে বেন কারানের (১২১) সেঞ্চুরিতে ৩৫৯ রান করে জিম্বাবুয়ে। ২০১৭ সালের পর এই প্রথম জিম্বাবুইয়ান ওপেনার হিসেবে ঘরের মাঠে লাল বলের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
২৩২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে আফগানিস্তান, তবে এবারও ব্যাটিংধসের শিকার হয় তারা। সবকটি উইকেট হারিয়ে দলটি স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে মাত্র ১৫৯ রান। অর্থাৎ আবারও তারা ৭৩ রানে পিছিয়ে থেকে গুটিয়ে যায়। তাতেই ইনিংস ও রান ব্যবধানে আফগানদের হারানোর কীর্তি গড়লো জিম্বাবুয়ে।
হারারেতে দুই দলের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবে আগামী ২৯ অক্টোবর।
চলতি বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল)। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখেই ষষ্ঠ মৌসুম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। আজ এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কাতে শুরু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দশম সংস্করণ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, বিশ্বকাপের সব ভেন্যুকে বড় টুর্নামেন্টের মান বজায় রাখার মতো অবস্থায় রাখতে হবে। সে জন্যই এলপিএল পেছানো হয়েছে।
এই সময়ে স্টেডিয়ামগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, খেলোয়াড়দের সুবিধা আধুনিকীকরণ, সম্প্রচার সুবিধা বৃদ্ধি এবং মিডিয়া সেন্টারের মান উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড। বর্তমানে দেশটির তিনটি আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে সংস্কার কাজ চলমান। কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম নারী বিশ্বকাপের ১১টি ম্যাচ আয়োজনের পর পুনরায় পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কাজ শুরু হবে।
এসএলসি জানিয়েছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বিশ্বমানের সুবিধা নিশ্চিত করতেই কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে উপযুক্ত সূচি অনুযায়ী এলপিএলের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।