বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে ২০২১ সালে অবসর নেওয়ার পর কয়েকবারই আলোচনায় এসেছে প্রত্যাবর্তনের খবর। তবে এবি ডি ভিলিয়ার্স আর ফেরেননি জাতীয় দল বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। সমর্থকদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মাঠে ফিরতে প্রস্তুত সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লিজেন্ড (ডাব্লুসিএল) দ্বিতীয় আসরে গেম চেঞ্জার্স সাউথ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়নদের হয়ে খেলবেন ডি ভিলিয়ার্স।
জাতীয় দলকে আগেই বিদায় জানানোর পর ডি ভিলিয়ার্স ২০২১ সাল পর্যন্ত চালিয়ে যান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলা। তবে ওই বছর সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই অবসর নিয়ে নেন। বারবার তার ফেরার গুঞ্জন উঠলেও সাড়া দেননি তাতে আর। কয়েকদিন আগে ক্রিকেট মাঠে ফেরার আভাস দেওয়ার পর এবার নাম লেখালেন লিজেন্ড লিগে।
ডাব্লুসিএলের দেওয়া এক বিবৃতিতে ডি ভিলিয়ার্স জানিয়েছেন তার ক্রিকেটে ফেরার আনন্দময় প্রতিক্রিয়া। “চার বছর আগে আমি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলাম, কারণ আমি তখন আর খেলার তাগিদটা অনুভব করিনি। এখন আমার তরুণ ছেলেরা খেলাটি খেলতে শুরু করেছে। আমরা উঠোনে আরও বেশি বেশি খেলছি, আর সেখান থেকেই মনে হচ্ছে যেন আমার ভেতর নতুন বারুদের সঞ্চার হয়েছে। আর তাই আমি জিম এবং নেট সেশনগুলোতে ফিরতে যাচ্ছি। আমি জুলাইয়ে ডাব্লুসিএলের জন্য প্রস্তুত থাকব।”
ডাব্লুসিএলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, হর্ষিত তুমার মনে করেন, ডি ভিলিয়ার্সদের মত সাবেকদের সুযোগ করে দেওয়াটাই তাদের লিগের স্বার্থকতা। “এই কারণেই আমরা ডাব্লুসিএল চালু করেছিলাম, কারণ আমরা এই খেলাটির কিংবদন্তিদের খুব মিস করি। এবি ডি ভিলিয়ার্সের একজন ভক্ত হিসেবে আমি তাকে মাঠে ফিরে আসতে দেখে রোমাঞ্চিত। আমি নিশ্চিত যে ইংল্যান্ড ও এর বিশ্বের অন্যান্ত প্রান্তের ক্রিকেট প্রেমীরাও তার প্রত্যাবর্তন দেখে আনন্দিত হবে।”
ডাব্লুসিএলের উদ্বোধনী আসরে সাবেক ভারত ব্যাটার যুবরাজ সিংহের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়নরা শিরোপা জিতেছিল। সাউথ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন্স তিনটি ম্যাচের দুটিতে জিতে পয়েন্ট টেবিলে পঞ্চম স্থানে থেকে শেষ করেছিল।
৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ এম
২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:৪৩ পিএম
জাতীয় দলের অধিনায়ক তিনি। স্বাভাবিকভাবেই দেশের একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে নাজমুল হোসেন শান্তর নিয়মিতই দলে থাকার কথা। তবে এই বিপিএলে ম্যাচের পর বেঞ্চে বসেই কাটাতে হচ্ছে বাঁহাতি এই ব্যাটারকে। তারকায় ঠাসা ফরচুন বরিশাল একাদশে যেন কোনোভাবেই জায়গা করে নিতে পারছেন না তিনি। দলটির অধিনায়ক তামিম ইকবালের কাছে বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। এটাও বললেন, ফর্মের কারণে বাদ পড়েননি শান্ত।
এখন পর্যন্ত এই বিপিএলে মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন শান্ত। মুশফিকুর রহিম যদি চোট না পেতেন, তাহলে হয়ত খেলতে পারতেন আরও কম। কারণ, শেষ কয়েকটি ম্যাচে কিপার-ব্যাটার হিসেবেই খেলেছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। দাভিদ মালানের নিয়মিত খেলা, তাওহীদ হৃদয়ের ওপেন করা - সব মিলিয়ে শান্তকে টপ অর্ডারে জায়গা দিতে পারছে না বরিশাল। ফলে ছয় ম্যাচ ধরে একাদশের বাইরেই আছেন শান্ত।
ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে বরিশালের বুধবারের ম্যাচেও ছিলেন না শান্ত। সংবাদ সম্মেলনে তামিম মেনে নিলেন, অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের আরও সুযোগ পাওনা ছিল। “আসলে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটা আমাকে মানতেই হবে যে, তাকে আমাদের যতোটুকু খেলানো বা সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল, সেটা আমরা দিতে পারিনি। আমার দলটা যদি দেখেন, কম্বিনেশন মেলাতে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। এমনকি প্রথম কয়েকটা ম্যাচেও আমরা কম্বিনেশনটা ঠিকভাবে মেলাতে পারিনি। আমি খেলানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে যে পারফরম্যান্সের কারণে বসে নেই, এটা নিশ্চিত।”
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হলেও এই ফরম্যাটে শান্ত অবশ্য কখনই সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি বিপিএলের একটি আসর ছাড়া। এবারের আসরে যে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন, সেখানেও বলার মত ছাপ ফেলতে পারেননি। চার বার আউট হয়েছেন এক অঙ্কের ঘরে। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৪১ রান করলেও ব্যাট করেছেন ১১০ স্ট্রাইক রেটে।
ফরম্যাট ভিন্ন হলেও যেহেতু আগামী মাসেই ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, তা শান্তর খেলার মধ্যে থাকা দরকার। কারণ, এই ফরম্যাটেও তিনি দলের অধিনায়ক এবং গত বছর অন্যতম ভালো পারফরমাদের একজনও। ফলে ম্যাচের পর পর ম্যাচ তার না খেলাটা চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করে ফেলা বরিশাল দল যে প্লে-অফে তাকে দলে নিয়ে সাজানো কম্বিনেশন ভাঙার দিকে যাবে না, তাও প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
তামিমের কণ্ঠে তাই যেন শান্তর প্রতি কিছুটা খারাপ লাগাই ফুটে উঠল। “আপনি যদি দেখেন, রংপুরের বিপক্ষেও কিন্তু সে ৪০ রানের ভালো একটা ইনিংস খেলেছে। তাকে আমি ঠিক কোন জায়গায় ব্যাটিং করাবো, কম্বিনেশনের কারণে আমি সেটা ঠিক করতে পারিনি। সে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। দেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হয়েও দেশের একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে সে খেলতে পারছে না। তবে দলের সিনিয়র-জুনিয়রদের সবার প্রতি তার আচরণ অসাধারণ। আমার কাছে আসলেই এটা খুব ভালো লেগেছে।”
এই ম্যাচের আগেই শেষ হয়ে যায় ঢাকা ক্যাপিটালসের প্লে-অফে খেলার আশা। তবুও একটা জয় পেলে পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান হত আরও ভালো। তবে সমর্থকদের একরাশ হতাশাই উপহার দিলেন ঢাকার ব্যাটাররা। ভয়াবহ এক ব্যাটিং বিপর্যয়ের শিকার হয়ে চলতি আসরে সর্বনিম্ন স্কোর গড়ল দলটি। একপেশে ম্যাচটি মূলত সেখানেই শেষ। বিশাল জয়ে সবার আগে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ দুইয়ে থাকাটা নিশ্চিত করে ফেলল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ৩8তম ম্যাচে বরিশালের সামনে পাত্তাই পায়নি ঢাকা। স্রেফ ৭৩ রানেই গুটিয়ে যাওয়ার পর তামিম ইকবালের দল সেই রান তাড়া করেছে ১ উইকেট হারিয়ে, ৮১ বল হাতে রেখেই।
এই জয়ে ১১ ম্যাচে বরিশালের পয়েন্ট ১৮। তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই দলটির সেরা দুইয়ে থেকে কোয়ালিফায়ার খেলাটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। সমান ম্যাচে দুইয়ে নেমে যাওয়া রংপুর রাইডার্সের পয়েন্ট ১৬। আর ১০ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে চিটাগং কিংস।
সামান্যতম লড়াই করতে ব্যর্থ ঢাকার শুরুটা অবশ্য আশা জাগানিয়াই ছিল। প্রথম ওভারেই মারেন দুটি চার। তবে তানভীর ইসলামের বলে তার বোল্ড হওয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হয় ঢাকার দুর্দশার। ১৪ বলে ৭ রানে বিদায় নেন আসরে দারুণ খেলা তানজিদ হাসান তামিম।
ঢাকার আশা হয়ে থাকা সাব্বির হোসেন পারেননি সমর্থকদের মুখে হাসি ফোঁটাতে। ১ চারে করেন মাত্র ৭। অল্প সময়ে মধ্যেই ঢাকার স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ৪২। সেখান থেকে দলটির ২০ ওভার খেলাটাই তখন হয়ে দাঁড়ায় মূল চ্যালেঞ্জ।
তবে শেষ পর্যন্ত সেটাও সম্ভব হয়নি। শেষ ব্যাটার হিসেবে অধিনায়ক থিসারা পেরেরা যখন আউট হন ১৫ রানে, তখন ওভার ছিল মোটে ১৫.৩! সমান তিনটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ নবি, তানভীর ও ফাহিম আশরাফ।
ছোট রান তাড়ায় শুর থেকেই আগ্রাসী ছিল বরিশাল। মুস্তাফিজুর রহমানকে ছক্কা মেরে শুরু করেন তাওহীদ হৃদয়। তবে পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। মুস্তাফিজুরের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন মাত্র ১৫ রান।
রন্সফোর্ড বিটনের এক ওভারে দুই ছক্কা ও দুই চার মেরে দ্রুত ম্যাচ শেষের কাজটা এগিয়ে দেন দাভিদ মালান। এরপর তিনি ও অধিনায়ক তামিম ইকবাল মিলে দারুণ কিছু বড় শট খেলে দলকে এনে দেন দারুণ এক জয়। মালান অপরাজিত থাকেন ৩৭ রানে, আর তামিমের স্কোর ছিল ২১।
মাঠের ক্রিকেটে এবারের বিপিএল উপহার দিচ্ছে দারুণ ক্রিকেট। তবে মাঠের বাইরে নানা জটিলতায় বারবার ভুল কারণে শিরোনাম হচ্ছে টুর্নামেন্ট। যেখানে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সাথে দূরত্ব। অনুশীলনের পর খেলোয়াড়দের ম্যাচ বয়কটের মত বিব্রতকর কিছু ঘটনার দেখা মিলেছে। নিজের দলে এমন সমস্যা না থাকলেও অন্য দলে এসব ঘটনায় বিচলিত মেহেদি হাসান মিরাজ। খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক মনে করছেন, খেলোয়াড়দের জন্য এটা হতাশাজনক অভিজ্ঞতা।
খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে দুর্বার রাজশাহী। এখন পর্যন্ত দুই দফায় খেলোয়াড়দের দেওয়া চেক বাউন্স করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির। এক দফায় পুরো দল অনুশীলন বয়কট করেছেন। এরপর প্রতিশ্রুতি মত পেমেন্ট না পাওয়ায় একটি ম্যাচে মাঠেই আসেননি দলটির বিদেশী ক্রিকেটাররা। এর সাথে রয়েছে চিটাগং কিংসের পারভেজ হোসেন ইমনকে পারিশ্রমিক দিতে অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনাও।
অন্যদের মত তাই বুধবার মিরাজের সংবাদ সম্মেলনেও উঠে আসল প্রসঙ্গটি। সেখানেই তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই সমস্যার একটি সুরাহার।
“অবশ্যই এটা খারাপ লাগছে। দিনশেষে আমরা খেলোয়াড়রা ক্রিকেট খেলি তো টাকার জন্য। পারিশ্রমিক যদি না পাই, প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য এটা খারাপ। যেহেতু ক্রিকেট বোর্ড আমাদের অভিভাবক, আশা করি তারা এটা নিয়ে কথা বলবেন এবং আমাদের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলবেন সবার সঙ্গে, যারা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক আছেন। কোনো সমস্যা হলে ক্রিকেট বোর্ড হয়তো সমাধান দেবে।”
নিয়ম অনুযায়ী, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ও পরে মিলিয়ে এরই মধ্যে খেলোয়াড়দের অর্ধেকের বেশি পেমেন্ট পেয়ে যাওয়ার কথা। তবে রাজশাহীর খেলোয়াড়রা এখনও পাননি ৩০ শতাংশও। অন্য কয়েকটি দলেও প্রতিশ্রুতি মত পেমেন্ট হয়েছে, সেই খবর আসেনি এখনও।
খুলনা দলের চিত্র কী? মিরাজ অকপটে জানিয়েছেন ইতিবাচক কথাই।
“আমাদের দলে এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ পেমেন্ট করে দিয়েছে। আর আমার সাথে ইকবাল ভাইর (খুলনা টাইগার্স কর্ণধার) কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন এই সপ্তাহের মধ্যে আরও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেমেন্ট করে দেবে। তো এই সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশের কাছাকাছি পেমেন্ট পেয়ে যাব।”
সবশেষে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের সমাধানের জন্য বিসিবির পদক্ষেপ জানালেন মিরাজ।
“যদি চিন্তা করে দেখেন, এখন যেহেতু দেশ থিতু অবস্থায় নেই, সেজন্য হয়তো এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। এখানে যারা দায়িত্বে আছে, যারা টুর্নামেন্ট চালাচ্ছে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল, আশা করি তারা এটা নিয়ে কাজ করবেন। আশা করি তারা সুন্দর একটি সমাধান দেবেন এবং ক্রিকেটারদের পাশে থাকবেন, আমার মনে হয়।”
এই কিছুদিন আগেও রংপুর রাইডার্সকে মনে হচ্ছিল অজেয় এক দল। একের পর এক ম্যাচ জিততে উড়তে থাকা দলটি ৮ ম্যাচ জিতে সবার আগে নিশ্চিত করে ফেলে প্লে-অফ। তবে এরপরই হয়েছে ছন্দপতন। টানা তিন ম্যাচ হেরে গেছে নুরুল হাসান সোহানের দল। তিন বিভাগেই মনে হচ্ছে এক ভিন্ন দল যেন খেলছে এখন। হতাশ সাইফ হাসানের আশা, বিদেশীদের পাশাপাশি দেশী ক্রিকেটারদের সমান অবদান পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়াবে রংপুর।
এবারের বিপিএলের শুরু থেকেই দুরন্ত গতিতে ছুটছিল রংপুর। দাপুটে জয় যেমন ছিল, আবার ছিল ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে এক ওভারে ২৬ রান নিয়ে জয়ও। অদম্য গতিতে এগিয়ে চলা সেই দলটিকে মাটিতে নামিয়ে আনে দুর্বার রাজশাহী। তাদের কাছে পরপর দুই ম্যাচে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে বুধবার দলটি হেরে গেছে চিটাগং কিংসের কাছেও। এক বিদেশী অ্যালেক্স হেলস আগেই দল ছাড়ার পর এই ম্যাচের আগে দল ছেড়েছেন ফর্মে থাকা অলরাউন্ডার খুশদিল শাহ।
তাহলে কী অতিরিক্ত বিদেশী নির্ভরতাই সমস্যায় ফেলছে রংপুরকে? সাইফ অবশ্য সেটা মানতে নারাজ বলেই জানালেন সংবাদ সম্মেল্লনে। “অ্যালেক্স (হেলস) যাওয়ার পরও কিন্তু আমরা তিনটা ম্যাচ জিতেছি। আমার মনে হয় আমরা কিছুটা মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের এখন সেই মোমেন্টাম ফিরিয়ে আনতে হবে। সামনের ম্যাচটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচটা যদি জিততে পারি, তাহলে আমরা সরাসরি ফাইনালে (কোয়ালিফায়ারে) যাব।”
রংপুর টানা আট ম্যাচ জেতার পর মাঝে ছিল ছয়দিনের লম্বা একটি বিরতি। সেই ফাঁকে দলটি রংপুরে গিয়েছিল একদিনের ট্যুরেও। কোচ মিকি আর্থার সম্প্রতি বলেছেন, ওই বিরতিটা হয়ত তাদের মোমেন্টাম হারানোর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে সাইফ বললেন ভিন্ন কথাই। “হয়ত ভুল-ত্রুটি ছিল। কিছুদিন আমরা বোলিং খারাপ করেছি, কিছুদিন আবার ব্যাটিংটা ভালো হয়নি। সব মিলে দল হিসেবে আমরা একসাথে ভালো করতে পারিনি। আশা করি পরবর্তী ম্যাচে আমরা দলগতভাবে একটা ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারব।”
আপাতত ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে রংপুর। তবে শেষ ম্যাচে যদি দলটি হেরে যায়, আর চিটাগং তাদের শেষ দুই ম্যাচে জিতে যায়, তাহলে নেট রান রেটের মারপ্যাচে সেরা দুইয়ে থেকে নাও শেষ করতে পারে রংপুর। আর সেটা হলে দলটিকে খেলতে হবে নকআউট এলিমিনেটরে। যেখানে প্রথমে একটি ম্যাচে জিতলেও ফাইনালে যেতে জিততে হবে আরেক ম্যাচ। আর সেখানে শীর্ষ দুইয়ে থাকতে পারলে ফাইনালে যাওয়ার জন্য প্লে-অফে প্রথম ম্যাচ হারলেও সুযোগ থাকবে আরেকটি।
তরুণ ব্যাটার সাইফ মনে করছেন, সেরা দুইয়েই থাকবেন তারা। “আমার মনে হয় আপনি যদি দেখেন, আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়রাও পারফর্ম করেছে। বিদেশী ক্রিকেটাররা অবশ্যই ভালো খেলছে, তবে আমার মনে হয় একটা দলকে জিততে হলে সবারই ভালো খেলা দরকার। বিদেশীদেরও ভালো খেলা দরকার, স্থানীয়দের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। আমরা সেই দলগত পারফরম্যান্সের জন্যই অপেক্ষা করছি। আশা করি পরবর্তী ম্যাচেই সেটা দেখাতে পারব।”
রংপুরের পরের ম্যাচ আগামী বৃহস্পতিবার, প্রতিপক্ষ খুলনা টাইগার্স।
টানা আট ম্যাচ জয়ের সময় রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিংটা হচ্ছিল দারুণ। আগের দুই ম্যাচে হারের মত চিটাগং কিংসের বিপক্ষেও ব্যাট হাতে মলিন একটি দিন পার করল দলটি। শেষ পর্যন্ত লড়ে ইফতিখার আহমেদ লড়াকু এক ফিফটি না করলে মিলত না একটা ফাইটিং স্কোরও। তবে রানটা যে কম, সেটা চিটাগংয়ের ইনিংস যত এগিয়েছে, ততই স্পষ্ট হল। তার মাঝেও কিছুটা লড়াইয়ের আশা জাগালেন রংপুরের বোলাররা। তবে হায়দার আলির খুনে ব্যাটিংয়ে স্রেফ উড়ে গেল দলটি। টানা তিন হারের তেতো অভিজ্ঞতা হল নুরুল হাসান সোহানের দলের।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ৩৭তম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে চিটাগং। প্রতিপক্ষের ৫ উইকেটে ১৪৩ রান দলটি পাড়ি দিয়েছে ১৭.৪ ওভারেই।
বল হাতে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি হজম করেন মাহেদি হাসান। থার্ড ম্যান দিয়ে চার আসে লাহিরু মিলান্থার ব্যাট থেকে। তবে সেই শেষ। এরপর রানের জন্য সংগ্রাম করা শ্রীলঙ্কান এই ব্যাটারকে ফেরান আকিফ জাভেদ। দুই চারে ১৫ রান করে ফেলে গ্রাহাম ক্লার্ক দিচ্ছিলেন ছন্দময় ব্যাটিংয়ের আভাস। তবে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে মাপা এক ইয়র্কারের তাকে বোল্ড করেন আকিফ।
এই দুই উইকেটের পর কমে যায় চিটাগংয়ের রান তোলার গতি। সাত ওভারে আসে মাত্র ৩৩ রান। মোহাম্মদ মিঠুনকে টানা দুই ছক্কা মারে পাল্টা আক্রমণের সম্ভাবনা জাগালেও, ওই ওভারেই বোল্ড হয়ে শেষ হয় তার ২০ রানের ইনিংসের।
রংপুরের বোলারদের চাপে রাখেন হায়দার আলি। বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানকে পরপর দুই বলে হাঁকান দুই ছক্কা। পারভেজ হোসেন ইমন ক্রিজে সেট হয়ে গেলেও প্রথম ২৪ বলে করেন মাত্র ২৮ রান।
নাহিদ রানাকে চার ও ছক্কা মেরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তরুণ এই ব্যাটার। তবে পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। সাইফউদ্দিনের বলে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৩ বলে ৪১।
ক্রিজে গিয়েই টানা দুই চারে শামিম হোসেন কমিয়ে রানেন বল ও রানের ব্যবধান। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে কাঁটা পড়ে বিদায় নিতে হয় তাকে।
১৮ বলে ২০ রান প্রয়োজন, এই সমীকরণে বল করতে এসেছিলেন আকিফ। ছন্দে থাকা এই বাঁহাতি এই পেসারের ওভারেই রংপুরের জয়ের সব আশা শেষ হয়ে যায়। টানা চার ছক্কা মেরে ওই ওভারেই ম্যাচ শেষ করে দেন হায়দার আলি। মাত্র ১৮ বলে ৬ ছক্কা ও ১ চারে ৪৮ রানের ইনিংসে ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেওয়া ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
এর আগে দিনের শুরুতে, রংপুরের ব্যাট হাতে শুরুটা ছিল হতাশাময়। প্রথম ওভার মেডেন দেওয়ার পর স্টিভেন টেলর আউট হন শূন্য রানেই। সৌম্য সরকার কয়েকটি বড় শট খেললেও পারেননি সেরা ছন্দে ব্যাট করতে। টপ অর্ডারের অন্য ব্যাটাররাও পারেননি সেভাবে অবদান রাখতে। ৬৭ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলা রংপুরের ইনিংস এরপর একাই টেনে নেন ইফতিখার। অন্যপ্রান্তে ২১ বলের ৯ রানের ইনিংসে তার ওপর কিছুটা চাপ বাড়িয়েই দেন সোহান। তবে সেটা সামাল দিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালান পাকিস্তান ব্যাটার।
২২ রানের ইনিংসে তাকে সঙ্গ দেন মাহেদি। দুজনের ফিফটি জুটিই রংপুর এনে দেয় প্রায় দেড়শর কাছাকাছি স্কোর। ৪৭ বলে ৬৫ রান করেন ইফতিখার। তবে শেষ পর্যন্ত বোলারদের ব্যর্থতায় বিফলে যায় তার লড়িয়ে ইনিংস।