
কী ফিল্ডিং, কী ব্যাটিং-দুই ডিপার্টমেন্টে-ই তানজিদ হাসান তামিম ম্যাচ উইনার। ১৫তম ওভারে রিশাদের তৃতীয় বলে সুইপ করেছিলেন আইরিশ ব্যাটার ডিলানি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ নিয়ে মুখে ফুটে উঠেছে তানজিদ হাসান তামিম। সেই থেকে আয়ারল্যান্ডের ইনিংসে শেষ ৫ টি উইকেটের সব ক'টিতে রেখেছেন অবদান। ফিরিয়েছেন ওই ৫ ব্যাটারকে ক্যাচে!
এমন কৃতিত্বে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ইনিংসে ক্যাচের বিশ্ব রেকর্ড হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে মালদ্বীপের জানাকা মালিন্দা ২০২৩ সালে কাতারের দোহায় ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে কাতারের বিপক্ষে ৫টি ক্যাচ নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। এ বছরের সেপ্টেম্বরে সুইডেনের সাদিক সাহাক আইল অব ম্যান সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৫টি ক্যাচ নিয়ে মালিন্দার রেকর্ডে বসিয়েছিলেন ভাগ। তবে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশসমূহের প্রথম ফিল্ডার হিসেবে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ইনিংসে ৫ ক্যাচের রেকর্ডটা করেছেন শুধু তানজিদ হাসান তামিম।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে এতোটা ফুরফুরে তানজিদ হাসান তামিম ব্যাটিংয়েও ছিলেন চনমনে। মোস্তাফিজ (৩/১১), রিশাদের (৩/২১) বোলিংয়ে ১১৭ রানে সফরকারী দলকে অল আউট করার পার্শ্ব চরিত্র তানজিদ হাসান তামিম বছরের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটে ঝড় তুলেছেন। ক্রেইগ ইয়ংকে ১৪তম ওভারের প্রথম বলে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কার চুমোয় টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১তম ফিফটি উদযাপনে লেগেছে তার ৩৪টি বল। ৩৬ বলে ৪ বাউন্ডারি, ৩ ছক্কায় শোভিত ৫৫ রানের হার না মানা ইনিংসে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের আন্তর্জাকিতক ক্রিকেটে বছরটি করে রেখেছেন স্মরণীয়। এ বছর ২৭ ম্যাচে ৩২.৯৫ গড় এবং ১৩৫.২৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিংয়ে করেছেন ৭৭৫ রান। ২০২৫ সালে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর ব্যাটারদের মধ্যে তানজিদ হাসান তামিমের উপরে এখন পর্যন্ত আছেন শুধু জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান বেনেট (২৫ ম্যাচে ৯৩৬ রান)।
বছরে ২৭ ম্যাচে ৮ ফিফটির মধ্যে সর্বশেষ ৩টি চট্টগ্রামে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬১ এবং ৮৯ রানের ইনিংসের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে করেছিলেন হতাশ (২ এবং ৭)। সিরিজের শেষ ম্যাচে তানজিদ হাসান তামিম চিনিয়েছেন নিজের জাত।
বছরের শেষ ম্যাচে সপ্রতিভ প্রত্যাবর্তনে লেগ স্পিনার রিশাদ নিজেকে তুলেছেন বেশ উচ্চতায়। বছরে বাংলাদেশ দলের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৩ উইকেটে (৩/২১) ২০২৫ সালে ২৫ ম্যাচে রিশাদের উইকেট সংখ্যা ৩৩। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের বোলারদের মধ্যে রিশাদের উপরে আছেন শুধু ২ জন, পাকিস্তানের মোহাম্মদ নেওয়াজ (২৬ ম্যাচে ৩৬ উইকেট) এবং নিউ জিল্যান্ডের জ্যাকব ডাফি ( ২১ ম্যাচে ৩৫ উইকেট)।
বছরের শেষ টি-টোয়েন্টি জিতে ২০২৫ সালে ৩০ ম্যাচে ১৫ জয়ে থামলো বাংলাদেশ। ৯টি দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের ৫টির ট্রফি জয়েও হাততালি পেলো ক্রিকেট দল।
অতীতে সিরিজের ফল নির্ধারণী শেষ ম্যাচটিতে জয়ের চেয়ে হারের সংখ্যা ভারী বলে এই ম্যাচেও ছিল দুর্ভাবনা। চট্টগ্রামে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জাটাও র্যাঙ্কিংয়ে ৩ ধাপ নিচে থাকা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে ফেলে দিয়েছিল দুশ্চিন্তায়। তবে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ দলের জন্য সহায়ক হয়েছেন কিউরেটর টনি হেমিং, জাহিদ রেজা বাবু। প্রথম দুই ম্যাচের চেয়ে শ্লো উইকেট প্রস্তুত করে দিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের কাজটা সহজ করে দিয়েছেন এই জুটি।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথম ৫ ওভারে শেখ মেহেদী, শরিফুল, সাইফউদ্দিনের উপর ভালই চড়াও হয়েছিলেন আইরিশ টপ অর্ডাররা। তবে চতুর্থ ওভারে ক্রস খেলতে যেয়ে আইরিশ ওপেনার টিম টেক্টর বোল্ড (১০ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ১৭) এবং ৬ষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে মোস্তাফিজকে ডিফেন্স করার পরও বল গড়িয়ে গড়িয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত হানার দৃশ্য থেকে হ্যারি টেক্টর (৬ বলে ৫) হতভম্ব হলে আইরিশদের জারিজুরি থেমে যায়।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে'র ৬ ওভারে ৫১/২ স্কোরের পরও ১১৭ রানে আয়ারল্যান্ডকে থামিয়েছে বাংলাদেশ বোলাররা। তা সম্ভব হয়েছে ইনিংসের দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে-এর ৯ ওভারে (৭ম থেকে ১৫) কিপ্টে বোলিংয়ে। যে ৯ ওভারে স্কোরকার্ডে উঠেছে মাত্র ২৯ রান, হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড ৩ উইকেট। ইনিংসের ১২তম ওভারে রিশাদের গুগলি না বুঝে সুইপ করতে যেয়ে স্কোয়ার লেগে পল স্টার্লিং ক্যাচ দিলে (২৭ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ২৮) বড় পুঁজির আশা ছেড়ে দেয় আয়ারল্যান্ড।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ উইকেটহীন কাটানোর যন্ত্রনা সিরিজের শেষ ম্যাচে লাঘব করেছেন মোস্তাফিজ (৩-০-১১-৩)। ১ ওভারের প্রথম স্পেলে ১ উইকেট (১-০-১-১)-এ শেষ পাওয়ার প্লে-তেও ভয়ংকর রূপ ছড়িয়েছেন মোস্তাফিজ। শেষ পাওয়ার প্লে'র ৫ ওভারে মোস্তাফিজের একটা স্পেল (১-০-২-২) এর পাশে শরিফুলের ১ ওভারের স্পেল (১-০-৪-১) এবং সাইফউদ্দিনের ৫ বলের স্পেল (০.৫-০-৩-১) আইরিশ ব্যাটারদের অস্বস্তি বাড়িয়েছে।
আইরিশদের ১১৮ রানের চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ জিতেছে ৮ উইকেটে, ৩৮ বল হাতে রেখে। ওপেনিং পার্টনারশিপের ২৪ বলে ৩৮ এবং অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটির ৫০ বলে ৭৩ রানে সহজ জয়ে ২-১ এ সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তবে ১৯ রানে সাইফ এবং ৭ রানে লিটনের থেমে যাওয়ার জন্য ওই দুই টপ অর্ডারই দায়ী। ইনিংসের ৪র্থ ওভারের ৩য় বলে ফাইন লেগের উপর দিয়ে মেরেছেন সাইফ হাসান ছক্কা, পরের বলকে এক্সট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারি। ওই ওভারের শেষ বলে ছক্কার শটে প্রলুব্ধ হয়ে দিয়েছেন ক্যাচ মিড অনে (১৪ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ১৯)। অধিনায়ক লিটন সেট হওয়ার আগে তাড়াহুড়া করেছেন। হ্যারি টেক্টরকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে ডিপ মিড উইকেটে দিয়েছেন ক্যাচ (৬ বলে ৭)।
তবে তানজিদকে দেখে ফিনিশারের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন ( ২৬ বলে ১ চার, ৩ ছক্কায় ৩৩*)। ইয়ংকে স্কোয়ার লেগে বাউন্ডারি দিয়ে উইনিং রানটি এসেছে তার ব্যাট থেকে।
No posts available.
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০২ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:০০ পিএম

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২০২৫-২৬ মৌসুম শেষ হল মঙ্গলবার। ২৭তম আসরের চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিভাগ। দুই মাস আগেই এনসিএল টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আকবর আলি নেতৃত্বাধীন রংপুর। লিগের চারদিনের ফরম্যাটও নিজেদের ঘরে তুলল উত্তরবঙ্গের দলটি।
টুর্নামেন্ট সেরা হলেও ব্যাটিং তালিকার শীর্ষ বিশে নেই রংপুরের কোন ব্যাটার। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাকদের তালিকায় রয়েছেন সৌম্য সরকার, জাকির হাসান ও মার্শাল আইয়ুব।
২০২৫-২৬ মৌসুমে ব্যাট হাতে ছন্দে ছিলেন সৌম্য সরকার। ৭ ম্যাচে (১৪ ইনিংস) ৬৩৩ রান করেছেন খুলনার হয়ে খেলা এই ব্যাটার। আসরে তাঁর সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৮৬ রান। চারটি ফিফটি আর একটি সেঞ্চুরিতে গড় ৪৫.২১।
সৌম্যের চেয়ে ৫ রান কম জাকির হাসানের। ৭ ম্যাচে (১৩ ইনিংস) ৫৭.০৯ গড়ে ৬২৮ রান করেছেন সিলেটের হয়ে খেলা এই উইকেটকিপার ব্যাটারের। পাঁচটি ফিফটি আর একটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
তৃতীয় স্থানে মার্শাল আইয়ুব। ৭ ম্যাচে (১২ ইনিংস) ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলা এই ব্যাটারের সংগ্রহ ৬২৫ রান। মৌসুমে তিনটি সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটার আইয়ুব। তাঁর ব্যাটিং গড় ৬২.৫০ ও স্ট্রাইক রেট ৫৮.৪১।
চতুর্থ স্থানে প্রীতম কুমার। ৭ ম্যাচে ৫৭৪ রান, দুই ফিফটি আর দুই সেঞ্চুরি রাজশাহীর হয়ে খেলা এই ব্যাটারের। প্রীতমের সর্বোচ্চ ইনিংস ১৪৩। পাঁচে মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ১২ ইনিংসে ৫৪৭ রান ময়মনসিংহের হয়ে খেলা জাতীয় দলের ওপেনারের। তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৯.৭৩ ও স্ট্রাইক রেট ৬৮.৩৮। সর্বোচ্চ ১১১ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন নাঈম।

ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টি যাত্রাতেও দাপুটে ভারত। আজ কটকে অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে আটকে ১০১ রানের বড় জয় পেয়েছে সূর্যকুমার যাদবের দল। এ জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
এদিন আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত। জবাবে ১২.৩ ওভারে ৭৪ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
টস হেরে এইডেন মার্করামের আমন্ত্রণে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা শুভমান গিল ওপেনিংয়ে নেমে ৪ রানে উইকেট ছাড়েন। পরে ১২ রান করে ফিরে যান অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ১৪ ওভারে ১০৪ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত।
দল গঠনে দায়িত্ব দেন চোট কাটিয়ে ফেরা হার্দিক পান্ডিয়া। ২৮ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন এই পেস অলরাউন্ডার। তাতেই ১৭৬ রানের লড়াকু স্কোর পায় ভারত।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই আর্শদীপ সিং ও জাসপ্রিত বুমরাহের তোপে পড়ে প্রোটিয়ারা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট হন কুইন্টন ডি কক। তৃতীয় ওভারে ফিরে যান ট্রিস্তান স্টাবস। দলীয় ৪০ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। ১৪ রান করে আউট হন এইডেন মার্করাম।
এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ। ২৯ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় তারা। প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস।
এদিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০তম উইকেট পেয়ে যান যশপ্রীত বুমরা। ভারতের হয়ে আর্শদীপ সিং, জাসপ্রিত বুমরাহ, বরুণ চক্রবর্তী ও অক্ষর প্যাটেল নেন ২টি করে উইকেট। বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে দুই দল।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আকবর আলি ও ট্রফি- শব্দগুলো ক্রমে একে অপরের সমার্থক হয়ে উঠছে। পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে পাঁচটি ঘরোয়া শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশকে ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক।
আর এই সাফল্য যে একদমই ফ্লুক নয়, আকবরের দলের ধারাবাহিকতাই সেটির প্রমাণ দেয়। সবশেষ তিনি জিতেছেন জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের শিরোপা। আর এই কৃতিত্ব অর্জনের পেছনে রয়েছে আকবরদের দীর্ঘ সু-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
আট দলের জাতীয় লিগে ছয় রাউন্ড শেষেও কাগজে-কলমে শিরোপা জেতার সম্ভাবনা টিকে ছিল ৬টি দলের। ২ জয় ও ৪ ড্রয়ের সঙ্গে দুটি বোনাস পয়েন্ট পেয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল সিলেট। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পরেই ছিল নবাগত ময়মনসিংহ। তাই ২৩ পয়েন্ট থাকা রংপুরের জন্য শেষ ম্যাচের সমীকরণ ছিল বেশ জটিল।
খুলনার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটি শুধু জিতলেই হতো না, তাদের চেয়ে থাকতে হতো সিলেট ও ময়মনসিংহ ম্যাচের দিকেও। তবে সবার আগে নিজেদের কাজটা সারার দিকেই মনোযোগ ছিল আকবরের।
মঙ্গলবার জাতীয় লিগের শিরোপা উদযাপন সেরে কিছুটা ফ্রি হওয়ার পর তিনি বললেন, শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া দ্বিতীয় ভাবনা ছিল না রংপুরের।
“আমরা তো তিন নাম্বারে ছিলাম তো ভাবনা ছিলো যে আমাদের জিততেই হবে। যদি জিততে পারি সেক্ষেত্রে হয়তোবা সিলেট আর ময়মনসিংহ খেলায় যদি রেজাল্ট আমাদের পজিটিভে আসে... মানে ওদের রেজাল্ট ওরা না করতে পারে সেক্ষেত্রে (ট্রফি) আমাদেরই আরকি।”
“আমাদের কাছে ছিলো যেটা, ম্যাচটা জিততেই হবে। তো যেহেতু বগুড়াতে খেলা, হিস্টোরিক্যালি বগুড়াতে রেজাল্ট হয়। মানে যেই টিমই করুক, কোনো না কোনো রেজাল্ট হবেই। তাই আমাদের একটাই কথা ছিল যে, ওরা যা করবে আমরা শেষ করব। একটা কথাই ছিল যে, সিচুয়েশন যত কঠিনই হোক আমরা জেতার জন্যই খেলব।”
সেই লক্ষ্যে প্রথম ইনিংসে খুলনার ৩০৮ রানের জবাবে মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে যায় রংপুর। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর আগুনঝরা বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে ৯৬ রানে অল আউট করে দেয় আকবরের দল।
পরে উদীয়মান বাঁহাতি ব্যাটার ইকবাল হোসেনের চমৎকার এক সেঞ্চুরিতে ২৩১ রানের লক্ষ্য অনায়াসেই তাড়া করে ফেলে রংপুর। ফল ৩ জয় ও ৩ ড্রয়ে তাদের ঝুলিতে হয় ৩১ পয়েন্ট।
পরদিন রাজশাহীর কাছে ময়মনসিংহের পরাজয় ও বরিশালের সঙ্গে সিলেটের ড্রয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় আকবরের অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ট্রফি।
২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতিয়ে অধিনায়ক হিসেবে আকবরের উত্থান। এরপর ২০২২ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণে রংপুরের শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার অধিনায়কত্বে ২০২৩ সালে বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হয় নর্থ জোন।
ধারাবাহিকতা ধরে রেখে গত বছর এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রথম আসরেই বাজিমাত করে আকবরের রংপুর। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে চলতি বছরের এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও চ্যাম্পিয়ন হন তারা।
এবার চার দিনের সংস্করণেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরোয়া ‘ডাবল’ ট্রফি ঘরে তুলল রংপুর। যা আরও পাকাপোক্ত করল ‘আকবর দ্য গ্রেট’ তকমা।
রংপুরের এই কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে তাদের দীর্ঘ পরিকল্পনা। লিগের সূচি পাওয়ার পরই সাত ম্যাচের ভেন্যু ও প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে টুর্নামেন্টের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেন আকবর, নাসির হোসেন, নাঈম ইসলামরা।
“যখন সূচি পেয়েছি, তখন সিনিয়র কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে কোচিং স্টাফ যারা ছিল... আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা এমনই ছিল যে, আমাদেরকে বগুড়ায় দুইটা ও রাজশাহীর একটা ম্যাচ জিততেই হবে। বাকি খেলাগুলো যদি জিততেও না পারি অন্তত যেন আমরা ড্র করতে পারি।”
যেই কথা সেই কাজ। কুকাবুরা বলে সিলেট ও কক্সবাজারে হওয়া প্রথম দুই রাউন্ডে ঢাকা ও ময়মনসিংহের সঙ্গে ড্র করে দুটি করে পয়েন্ট নিশ্চিত করে রংপুর। পরে ডিউক বলে ফিরলেও কক্সবাজারে তৃতীয় রাউন্ডে সিলেটের সঙ্গেও ড্র হয় তাদের ম্যাচ।
এরপর বগুড়ায় গিয়ে বরিশালকে ৮ উইকেটে হারিয়ে পূর্ণ ৮ পয়েন্ট পায় রংপুর। রাজশাহীর মাঠে খেলতে নেমে পঞ্চম রাউন্ডে তারা হারায় স্বাগতিক রাজশাহীকে।
ষষ্ঠ রাউন্ডের জন্য আবার কক্সবাজারে যায় আকবরের দল। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে হাসান মাহমুদ ও ইফরান হোসেনের তোপে মাত্র ৩৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। পরে ম্যাচটি তারা হেরে যায় ইনিংস ব্যবধানে।
আকবরের মতে, পুরো টুর্নামেন্টে ওই একটি ইনিংসই শুধু তার প্রত্যা্শামতো যায়নি।
“শুধু চট্টগ্রাম ম্যাচটা বাদে আর সব ম্যাচে আমাদের পজিটিভ রেজাল্টই বলবো। কুকাবুরাতে সিলেটের মাঠে খেলা হইছে, কক্সবাজারে খেলা হইছে। ওগুলো ম্যাচে রেজাল্ট বের করা কঠিন।”
“আমরা জানতাম যে আমাদের বগুড়াতে দুইটা খেলা আছে, রাজশাহীতে একটা খেলা আছে। তো এই তিনটা খেলায় রেজাল্ট করতেই হবে আমাদের।”
আর এই ফল পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারিগর মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। রংপুরের জেতা তিন ম্যাচেই ইনিংসে ৫ উইকেট আছে ২৫ বছর বয়সী পেসারের৷ সব মিলিয়ে মাত্র ৭ ইনিংসে তিনি নিয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ উইকেট। যার সৌজন্যে জিতেছেন লিগের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার।
ব্যাটিংয়ে সম্মিলিত পারফরম্যান্স ছিল দলের সবার। সর্বোচ্চ ৩০০ রান করেন নাঈম ইসলাম। মূলত বোলিং দিয়েই এবারের শিরোপাটি জিতেছে রংপুর। আরও একবার নিজেকে আকবর দ্য গ্রেট হিসেবে প্রমাণ করেছেন অধিনায়ক আকবর।

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২০২৫-২৬ মৌসুমের পর্দা নামল আজ। দুই মৌসুম পর আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রংপুর। দুই মাস আগেই এনসিএল টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উত্তরবঙ্গের দলটি। এবার চারদিনের ক্রিকেটেও ট্রফি ঘরে নিল আকবর আলির দল।
এনসিএলে সেরা উইকেটশিকারিদের তালিকায় সবার উপরে বরিশালের বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। সাত ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ৩৪ উইকেট। দুইবার নিয়েছেন ফাইফার, ৬৪ রানে ৭ উইকেট তাঁর সেরা বোলিং ফিগার।
চমক দেখিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন রংপুরের মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। চার ম্যাচে ৮ ইনিংসে নিয়েছেন ২৯ উইকেট। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার, এক ইনিংসে ২২ রানে ৫ উইকেট সেরা ফিগার মুগ্ধ’র। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের স্ট্রাইক ২৩,৯৩ অর্থাৎ প্রতি চার ওভার বল বল করে নিয়েছেন উইকেট। রয়েছেন তালিকায় দ্বিতীয়তে।
তালিকার তিন নম্বরে রয়েছেন বরিশালের রুয়েল মিয়া। ৬ ম্যাচে ১১ ইনিংসে রুয়েল শিকার করেছেন ২৭ উইকেট। ৬৪ রানে ৫ উইকেট এই বাঁ-হাতি পেসারের বোলিং ফিগার। ফাইফার নিয়েছেন তিনবার।
চার নম্বরে চট্টগ্রামের স্পিনার নাইম হাসানের উইকেট সংখ্যা রুয়েল মিয়ার সমান। তবে এক ম্যাচ ও দুই ইনিংস বেশি খেলেছেন তিনি। ৭ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে শিকার করেছেন ২৭ উইকেট।
পাঁচ নম্বর নামটা সিলেটের আবু জায়েদ চৌধুরী রাহীর। পাঁচ ম্যাচে ১০ ইনিংসে ২৫ উইকেট নিয়েছেন এই মিডিয়াম পেসার। ৩৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট সেরা বোলিং ফিগার বাংলাদেশ টেস্ট দলে খেলা এই বোলারের।

চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা পূর্বাচল ক্রিকেট স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স বিসিবি বুঝে পেয়েছে ২০১৭ সালে। তবে ৩৭.৫৯ একর জায়গা এখনো পড়ে আছে অব্যবহৃত। একটি মাঠও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি প্রস্তুত করতে পারেনি বিসিবি। অধিকাংশ জায়গা ছেয়ে আছে বনঘাসে। দূর্বাঘাসের অস্তিত্ব নেই কোথাও। দুটি দেয়ালঘেরা অফিস এখানে ভবিষ্যতে বড় কর্মযজ্ঞের বার্তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতের আধুনিক রাজধানীতে এতো বড় একটি জায়গায় পরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট নগরে পরিনত করতে কে না চাইবে ? গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তাই মাঠ সংকট কাটানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট।
পূর্বাচলে তিনটি মাঠ তৈরির কাছে হাত দেয়ার কথাও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন গ্র্যাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট-
'এক সময়ে এখানে পুরোটাই জঙ্গল ছিল। পূর্বাচলের এই সুন্দর জায়গাটিতে যতো দ্রুত সম্ভব খেলার উপযোগী করে তুলতে চাই।প্রায় ২০-২৫ দিন আগে এখানে আমি একবার এসেছিলাম। এতো সুন্দর জায়গা পাঁচ-সাত বছর পড়ে আছে। এখানে তিনটি মাঠে খেলা শুরু করতে চাই। ঢাকার অনেক ক্রিকেটের জন্য মাঠ ভাড়া করতে হয়। সময়মত লিগ আয়োজন করতে পারি না। ফতুল্লায়ও ২টি মাঠের কাজে হাত দিতে পারি। ফতুল্লায় ইনার এবং আউটারের কাজ ৭০% হয়ে গেছে।ওখানে ৩০% কাজ বাকি আছে। পূর্বাচলে ৩টি এবং ফতুল্লায় ২টি মাঠের কাজ শেষ করতে পারলে ঢাকার লিগগুলো আয়োজন করা যাবে। ভবিষ্যতে যে প্লান আছে, তখন না হয় গ্যালারি করতে পারব। মাঠের কাজ শুরু করেছি। ১০টি পিচ হবে প্রতিটি মাঠে। এভাবে তিনটি মাঠের কাজে হাত দিয়েছি। বেশ কিছু বালি ফেলতে হবে। প্রাথমিকভাবে ঘাস উঠানোর কাজ চলছে।'