৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৫ পিএম

সব খেলোয়াড়েরই ক্যারিয়ারে একটা প্রিয় মুহূর্ত থাকে—যখন তার ব্যাট-বল বেজে ওঠে নিখুঁত তালে-লয়ে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে তার অবস্থান তৈরি করতে হয়, জানান দিতে হয় নিজের সক্ষমতা। ক্রান্তিলগ্নে কখনো সে ফেরেন খালি হাতে, কখনো হতাশ করেন নিজেকেই। অভিষেক, প্রথম স্মৃতি কিংবা বৃত্তে বন্দির আর্তনাদ—সবই হজম করতে হয় একাকী।
জীবনের মতো ক্রীড়াও এক বন্ধুর ময়দান। এখানে সবাই বন্ধু, প্রতিযোগীও। পা ফসকালেই সাইড বেঞ্চে অপেক্ষমান তারই প্রিয় কোন সতীর্থ। মারো-মরো নীতির এই ট্র্যাজিক পথচলায় অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে আলো খুব কমই থাকে। তবে ধৈর্য আর প্যাশনকে যারা ইচ্ছার উর্ধ্বে রেখেছে, জয়টা তাদেরই হয়েছে।
ইতিহাস বলে, ধৈর্যশীল ও ‘গ্রেট’ খেলোয়াড়রা কখনো ব্যর্থতার জ্বালায় পুড়ে ছাই হয়ে যান না। বরং সেই জ্বালা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেন। নতুন সাফল্যের তৃপ্তি প্রলেপ বুলিয়ে দেন পুরোনো জ্বালার ক্ষতে। যে মাঠে দুয়ো ধ্বনি শুনেছেন, সে মাঠেই তার জন্য বিছিয়ে রাখা হয় ফুল। স্বাগত জানাতে গলা ফাটান হাজারো সমর্থক-নিন্দুকরাও। বাংলাদেশের তরুণ অলরাউন্ডার সাইফ হাসানের বেলায় এসব ঘটেনি?
নিশ্চয়ই ঘটেছে। সাইফ এখনই ‘গ্রেট’-এর পর্যায়ে চলে যাননি। তাকে নিয়ে কাব্য-গল্প লেখা এখনো অনেক দূর। তবে ডুবতে বসা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি তরী যে তিনিই বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন—সেটা কম কিসে?
এশিয়া কাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তো বটেই, আফগানিস্তানের বিপক্ষে কুড়ি কুড়ির সিরিজের শেষ ম্যাচ একাই জিতিয়েছেন অলরাউন্ডার সাইফ। শারজায় তার অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস শুধুই ‘গ্রেট’ না হলেও, চোখের শান্তি তো দিয়েছে বটে। আড়াই পাউন্ড ওজনের উইলো খণ্ডটি দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। দৌড়ে রান প্রায় নেনইনি, বাউন্ডারি-বাউন্ডারিতে সাজিয়েছেন ইনিংস। একের পর এক বল ছুটে গেছে সীমানা ছাড়িয়ে।
আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের দিনে মাত্র দুটি বাউন্ডারির বিপরীতে ৭টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন সাইফ। ১৬৮ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট চালিয়েছেন। ৩৮ বলে খেলেছেন ৬৪ রানের ইনিংস। স্ট্রেইটে ছক্কা ছাড়াও মিড-অফ, অনের সঙ্গে ফাইন-লেগে বল পাঠিয়েছেন। স্টেডিয়াম ছাড়া করেছেন, হারিয়েও দিয়েছেন বল। নিজের চোখে দেখা দৃশ্য সম্পর্কে দর্শকের মনে জাগিয়ে তুলেছেন অবিশ্বাস।
সাইফ যেন শিল্পীর তুলিতে এঁকেছেন এসবই। ক্যানভাসে হয়তো একটু বেশি দ্রুতগতিতে, একটু বেশি জোরেই ব্রাশ চালিয়েছেন ২৬ বর্ষী ব্যাটার। তাতেও চিনতে অসুবিধা হয়নি সাইফকে। শারজায় যতক্ষণ চলেছে সেই ছবি আঁকার পর্ব, ততক্ষণ সবাই মুগ্ধ দর্শক। ছবি আঁকা শেষ হয়ে গেলেও আসলে তা শেষ হয়নি-মাঠ থেকে তা চলে গেছে দর্শকদের মনের ক্যানভাসে। সত্যিকার অর্থে কি ছিল না সাইফের সে ইনিংসে?
অথচ একূল-ওকূল হারিয়ে নিঃশ্ব হতে বসেছিলেন সাইফ হাসান। ২৫-এই ফুরিয়ে গেছেন—এমন কথাও শুনতে হয়েছে তাকে। ধীরে-ধীরে খেলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলার সুবাদে ২০২০ সালে সাদা শুভ্র পোশাকে অভিষেক হয় সাইফের। আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি অভিষেক ম্যাচে। রাওয়ালপিন্ডিতে সেদিন মাত্র ১৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট, সেখানেও ব্রাত্য সাইফ। শ্রীলঙ্কা টেস্টে তো একদমই হতাশ করেছেন। ক্যারিয়ারের নিজেদের সবশেষ টেস্ট খেলেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০২১ সালে। সে ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে রান এসেছে কেবল ৩২।
লাল বলের ক্রিকেটে সেখানেই দাঁড়ি পড়ে সাইফের। ২০২০ সালের শুরুতে অভিষেকের পর ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোটে ছয়টি টেস্ট খেলেছেন । রান করেছেন ১৫৯। হাত ঘুরিয়ে তুলেছেন এক উইকেট। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার জন্য এর চেয়ে বড় কারণ কি হতে পারে?
টেস্টে না হয় থিতু হতে পারেননি, টি-টোয়েন্টিতে কেমন ছিল সাইফের যাত্রা? ২০২৫ এশিয়া কাপের আগ পর্যন্ত ৫ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ৭টি কুড়ি কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। যেখানে একটি ফিফটি ছিল। ডাক মেরে আউট হয়েছেন দুইবার। এক রান করে রান করেছে দুই ইনিংসে।
এমন মন্থর ব্যাটিংয়ে একপ্রকার নির্বাচকেরা সাইফ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম এবং নিজেকে বদলে জাতীয় দলে ফিরেই আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন বেশ ভালোভাবে। ঘরের মাঠে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে প্রত্যাবর্তন তার। এরপর এশিয়া কাপ ও আফগানিস্তান সিরিজ মিলিয়ে খেলেছেন ৭টি টি-টোয়েন্টি। এ সময় ২১টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন সাইফ।
সাইফ এ নিয়ে বলেছেন,
‘গত এক-দুই বছর ধরে আমি এভাবেই খেলছি। আমি শুধু ব্যাটিংটা উপভোগ করছি, ব্যস এতটুকুই।’
ব্যস এতটুকুই-২৮ বর্ষী ব্যাটারের উচ্চারিত শব্দ ছোট হলেও এর মাহাত্ম্য কিন্তু বিশাল। কারণ, ডাল-ভাতে রূপ নেওয়া চার-ছক্কার পেছনে রয়েছে তার দিনের পর দিন নেটে অনুশীলন আর ঘাম ঝরানোর কষ্ট।
তরুণ অলরাউন্ডার নিজেকে ভেঙে-চুরে, আবার ভেঙে গড়েছেন খুবই তীক্ষ্ণভাবে। তার স্পেশালিটি স্ট্রেইট শট-যার জন্য সাধনা আর অধ্যবসায় করতে হয়েছে তাকে। দ্বারস্থ হতে হয়েছে দেশি-বিদেশি কোচদের কাছে। সাইফ নিজেই জানিয়েছেন,
‘সাধারণত আমি সোজা ব্যাটে (সোজা উইকেটের দিকে) খেলার চেষ্টা করি এবং স্পিনের সঙ্গে একই দিকে বল পাঠাই—এটাই আমার শক্তির জায়গা।’
টেস্টের ব্যাকরণ শিখেই হাতেখড়ি তাঁর। হয়তো হতে চেয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটার। ধীরে ও ধরে চলো নীতিতেই চলছিলেন। তবে সেই ‘লং ফরম্যাট ব্যাটার’ তকমা ঝেড়ে এশিয়া কাপে নিজেকে নতুন করে চেনালেন এই স্পিন অলরাউন্ডার। টেস্ট খেলুড়ে ব্যাটারের মতো সাইফও বরাবরই ডাউন দ্য ভি (মিড-অফ থেকে মিড-অন অঞ্চলের মাঝ দিয়ে খেলা) খেলতে বেশ পারদর্শী।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই গুণই সাইফকে সাদা বলের ক্রিকেটেও সফলতা এনে দিয়েছে। স্পিনারদের ঘূর্ণির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বল খেলতে পারাটা এখন সাইফের বড় একটি অস্ত্র হয়ে উঠেছে-সেটা তিনি দারুণভাবে প্রমাণ করেছেন।
বীরদর্পে পর্দাপনের পর সাইফ সুযোগ পেয়েছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও। সবকিছু ঠিক থাকলে হাসমতউল্লাহ শাহিদীদের বিপক্ষে ৮ তারিখ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হবে তার। কুড়ি কুড়ির মতো এই ফরম্যাটেও যে তিনি রাজ করবেন, সেটা হলফ করে বলা যায়।
মেধাবীরা ব্যর্থ হলেও, পরিশ্রমীরা কখনও ব্যর্থ হয় না—সেটা সাইফ হাসানের চেয়ে বেশি আর কে জানে? প্রজ্ঞা আর ধৈর্যের গুণে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তোলা সাইফ যেন এক-দুই তলা কোনো সাধারণ ভবন নন, বরং নিজেকে রূপ দিচ্ছেন একটি স্কাইস্ক্র্যাপারে। আর সেটাই এখন দেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর গভীর বাসনা।
No posts available.
১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৭:০০ পিএম

সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে
জয় এসেছিল কষ্টার্জিত পরিশ্রমে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান পেয়েছে অনায়াস জয়।
ফাখার জামানের দারুণ সূচনা এবং বাবর আজমের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির ওপর ভর করে শ্রীলঙ্কাকে
৮ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল পাকিস্তান।
রাওয়ালপিন্ডিতে আজ পাকিস্তানের আমন্ত্রণে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ২৮৮ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাব দিতে নেমে মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। স্বাগতিকদের হয়ে সর্বোচ্চ ১০২* রান করেন বাবর আজম। এটি তাঁর ক্যারিয়ারের ২০ত শতক।
বাবর আজম সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০২৩ সালের আগস্টে। প্রতিপক্ষ ছিল নেপাল। এরপর তিনি খেলেছেন ৩৫ ওয়ানডে। বেশ কয়েকটি অর্ধশতক এলেও তিন অঙ্ক ছিল অধরা। অবশেষে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই অপেক্ষার অবসান হলো। ক্যারিয়ারের ২০তম সেঞ্চুরি পেলেন । একই সঙ্গে সাঈদ আনোয়ারের সঙ্গে যৌথভাবে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক বনে গেলেন।
এদিন পাকিস্তানের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন ফাখার জামান ও সায়েম আইয়ুব। দলীয় ৭৭ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। সায়েম উইকেটে থিতু হলেও ৩৩ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে আফসোস ফাখারের জন্য—৩৫ বছর বয়সী বাঁ-হাতি ব্যাটার ফিরেছেন ৭৮ রানে।
টপ অর্ডারের দুই ব্যাটার ফিরলেও পিছনে তাকাতে হয়নি পাকিস্তানকে। রিজওয়ানকে সঙ্গী করে সহজেই গন্তব্যে পৌঁছান বাবর। চলতি পথে রিজওয়ানও অর্ধশতক পূরণ করেন। ৫৪ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। আর বাবর ১১৯ বলে ১০২ রানে শেষ করেন ইনিংস, মারেন ৮টি বাউন্ডারি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে লঙ্কানদের ৮ ব্যাটারই দুই অঙ্কের দেখা পান। দলের সর্বোচ্চ রান করেন জানিথ লিয়ানাগে—৬৩ বলে ৫৪। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান কামিন্দু মেন্ডিসের, তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৪৪ রান।
মূলত পাকিস্তানের পেসার হারিস রউফ ও স্পিনার আবরার আহমেদের শৃঙ্খলিত বোলিং বড় ইনিংস গড়তে দেয়নি লঙ্কানদের। দুজনই নেন তিনটি করে উইকেট। ফলে রান পাহাড়ে ওঠার আগেই থেমে যায় তাদের ইনিংস।

ইডেন গার্ডেনে আজ চার স্পিনার নিয়ে নেমেছিল ভারত। তবে প্রথম দিনের সব আলো কেড়ে নিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। বল হাতে দারুণ বোলিংয়ে ভারতীয় এই পেসার তুলে নেন পাঁচ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১৬ বারের মতো এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন বুমরাহ।
ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা দিনে বিচ্ছিরি এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন বুমরাহ। তাঁর একটি মন্তব্য স্ট্যাম্প মাইকে ধরা পড়ে, যা ‘টক অব দ্য ক্রিকেটে’ পরিণত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে কথা হচ্ছে বেশ। সে মন্তব্যের জেরে ম্যাচ ফি কিংবা নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারেন বুমরাহ।
এদিন দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ১৩তম ওভারে ঘটনাটি ঘটে। বাভুমার পিছনের পায়ের প্যাডে লাগতেই এলবিডব্লিউয়ের জোরাল আবেদন করেন বুমরাহ। তবে আম্পায়ার সেই আবেদন খারিজ করে দেন। বেঁচে যান বাভুমা।
যদিও বুমরা-পন্থরা আলোচনা শুরু করেন, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ডিআরএস নেওয়া হবে কি না তা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত রিভিউ নেয়নি ভারত। বুমরাহকে পন্থ বলেন যে, বলটি স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেত। পরে টিভি রিপ্লেতেও দেখা যায় যে, বলটি লেগস্টাম্পের ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
তাঁর ২ ওভার পরেই কুলদীপ যাদবের বলে ফিরে যান বাভুমা। মাত্র ৩ রান করে। কিন্তু বিতর্ক শুরু হয় বুমরাহর সেই ওভারের ঘটনাকে ঘিরেই। কারণ, স্টাম্প মাইক্রোফোনে বুমরাহ ও পন্থের কথোপকথনটি শোনা যায়। এমনিতে কোনো ব্যাটারের থাইয়ে বল লাগা মানে সেটি স্টাম্পের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাবে, সেটাই প্রত্যাশিত।
কিন্তু বাভুমার উচ্চতা কম হওয়ায় বলটি স্টাম্পে লাগতেও পারত, মত বুমরাহর। পন্থের উদ্দেশে বুমরাহকে বলতে শোনা যায়,
'বওনা ভি তো হ্যায় ইয়ে।' যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, 'এ তো বেঁটেও।' পন্থ বলেন, 'বেঁটে, কিন্তু বলটা লেগেছে পায়ের অনেক ওপরে।'
বুমরাহর আইসিসির আচরণবিধি ভঙ্গের ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘটনাটি আচরণবিধির অনুচ্ছেদ ২.১৩–এর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে বলা আছে—
“কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলাকালে কোনো খেলোয়াড় বা সহায়ক কর্মীর প্রতি ব্যক্তিগত, অপমানজনক, অশালীন, অথবা আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করা।”
দোষী প্রমাণিত হলে বুমরাহর শাস্তি লেভেল ২ ভঙ্গ থেকে শুরু করে লেভেল ৩ ভঙ্গ পর্যন্ত হতে পারে।
লেভেল ২ ভঙ্গ: ম্যাচ ফি–র ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ জরিমানা অথবা সর্বোচ্চ দুই সাসপেনশন পয়েন্ট।
লেভেল ৩ ভঙ্গ: চার থেকে বারো সাসপেনশন পয়েন্ট পর্যন্ত শাস্তি।

ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের সঙ্গে আছেন সেই ২০০৪ সাল থেকে। বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসেরও সঙ্গেও ছিলেন বেশ ক'বছর। তবে ক্রীড়া সংগঠক পরিচয়কে ছাড়িয়ে বিশ্ব পরিব্রাজক পরিচয়টা বড় হয়ে উঠেছে খেলাপাগল তানভির আহমেদের। বিদেশ সফর শুরু করেছেন সেই ১৯৯৭ সালে। ভারত সফর দিয়ে শুরু, এ বছর মঙ্গোলিয়া সফরের মধ্য দিয়ে পূর্ণ করেছেন তানভির ১০০টি দেশ ভ্রমন। বিশ্ব পরিব্রাজক ইবনে বতুতার নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। বাংলাদেশের তানভির আহমেদকে এই পরিচয়েই কাছের মানুষজন বেশি চেনেন।
খেলার টানে নিজের গাঁটের টাকায় সারা বিশ্ব ঘুরেছেন। ১৯৯৮ সালে ভারতের হায়দারাবাদে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাক্ষী তানভির দেশের বাইরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিকাংশ জয়ের স্বাক্ষী। এখন দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যাচ দেখতে আসা দর্শকদের কারো কারো মাথায়, কোলে বাঘ দেখা যায়। এমন ছবিটাও কিন্তু সবার আগে বিশ্ব দেখেছে তানভীরের মাথায়।
২০০৩ সাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব কটি বিশ্বকাপ কভার করেছেন। বিদেশে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ম্যাচও দেখেছেন গ্যালারিতে বসে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্য সব আসর দেখেছেন। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রতিটি আসরে দর্শকের কাতারে নিয়মিত তানভির।
২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক থেকে শুরু করে বেশ ক'টি অলিম্পিক গেমস দর্শন করেছেন তানভির। বিদেশ সফরের নেশাটা তার এতোটাই যে উগান্ডা, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, সান মারিনো, সেসেলস-এর মতো দেশেও পা পড়েছে তার। যে ১০০টি দেশ সফর করেছেন, সে সব দেশের মুদ্রা সংরক্ষণ করেছেন। খেলার জন্য যে সব দেশে গেছেন, সে সব আসরের কোট পিনও আছে তার সংগ্রহে। ফিফা, আওইসি, আইসিসির প্রতিটি আসরে বাংলাদেশের ব্রান্ডিং করেছেন। প্রতিটি ক্রিকেট দলের অটোগ্রাফ সম্বলিত ক্যাপও আছে তার সংগ্রহে।
২০১১ সালে ভারত, শ্রীলঙ্কার সাথে যৌথভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের স্বাগতিক মর্যাদা পেয়েছে ২০০৬ সালে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সারা বিশ্বকে আমন্ত্রন জানাতে শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে মেলবোর্নে প্লাকার্ড তুলে ধরেছেন।
বিদেশ সফরের সেঞ্চুরি পূর্তি উপলক্ষ্যে শুক্রবার বিকেলে ডেইলি স্টার ভবনে মাহমুদ সেমিনার হলে করেছেন একটি অনুষ্ঠান। বিদেশ সফরে সুখস্মৃতি এবং তিক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করেছেন।
অনুষ্ঠানস্থলে সালওয়ারী বিদেশ সফরের দেশগুলো পর্যায়ক্রমে সাজিয়েছেন তানভির। কৌতুহলী অতিথিদের জন্য ওইসব দেশের কোট পিন, মুদ্রাও সাজিয়ের তানভির। কাছ থেকে এই খেলাপাগল বিশ্বপরিব্রাজককে দেখেছেন এবং তার বিদেশ সফরের সঙ্গী ছিলেন যারা, তাদের বক্তব্য নিয়েছেন। অতিথিদের ক'জনকে দিয়েছেন স্মারক ক্রেস্ট। কুইজ প্রতিযোগিতা করে দিয়েছেন বিশেষ পুরস্কার।

আট দলের অংশগ্রহণে কাতারে চলছে এশিয়া কাপ রাইজিং স্টার টুর্নামেন্ট। ১৪ নভেম্বর শুরু হওয়া টুর্নামেন্টে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুখোমুখি হয় ভারত ‘এ’ দল। যেখানে রীতিমতো ব্যাটিং ঝড় তুলেছেন বৈভব সূর্যবংশী।
দোহার ওয়েস্ট এন্ড পার্ক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ টস জিতে ব্যাটিং নেমে মাত্র ৪২ বলে ১৪৪ রান করেন সূর্যবংশী। তাঁর ঝোড়ো ইনিংসের সুবাধে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ভারত পায় ২৯৭ রান।
এদিন প্রিয়ানেশ আরিয়ার সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন সূর্যবংশী। মাত্র ১৬ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর প্রতিপক্ষের ওপর ঝড় তোলেন সূর্যবংশী। যদিও শূন্য রানে একবার জীবন পান ১৪ বছর বয়সি এ বাঁ-হাতি ব্যাটার। বিপদ কাটিয়ে রুদ্ধরূপ ধারণ করেন তিনি।
১৭ বলে অর্ধশত আদায় করেন সূর্যবংশী। সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৩২ বলে। যখন আহমেদ তারিকের হাতে ক্যাচ আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন, তখন তার নামের পাশে ৪২ বলে ১৪৪ রান।
ইনিংসে ৩৪২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট চালিয়ে মোট ১১টি চার ও ১৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন সূর্যবংশী। টি-টোয়েন্টিতে এটিই তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে ১০১ রান করেছিলেন ভারতীয় ব্যাটার।
সূর্যবংশী ছাড়াও প্রতিপক্ষ বোলারদের ব্যাপক শাসান জিতেশ শর্মা। ভারত দলের অধিনায়ক অপরাজিত ছিলেন ৮৩ রানে। ৩২ বলে খেলে ৮টি বাউন্ডারি ও ৬টি ছক্কা হাঁকান তিনি।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) চলছে ট্রেডিং উইন্ডো। দলগুলো অন্য দল থেকে ট্রেডে খেলোয়াড়দের দলে টানছে। ভারতের অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ শামিকে লখনউ সুপার জায়ান্টসের (এলএসজি) কাছে ছাড়তে রাজি হয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো।
২০২৫ আইপিএলের মেগা নিলামে শামিকে ১০ কোটি রুপিতে দলে ভিড়ায় হায়দরাবাদ। একই দামে এই পেসারকে নিতে আগ্রহী লখনউ। সম্ভাব্য এই চুক্তি সম্পূর্ণ নগদ অর্থে হবে বলে জানিয়েছে ক্রিকইনফো।
দুই দলই সম্মত হলেও সবকিছু নির্ভর করছে শামির ওপর। আগামীকাল ভারতীয় সময় দুপুর ৩টার মধ্যে প্রতিটি দলকে তাদের 'রিটেইনড' (ধরে রাখা) ও 'রিলিজড' (ছেড়ে দেওয়া) ক্রিকেটারদের তালিকা জমা দিতে হবে। এরপর তাদের নিলামে নিবন্ধনকৃত ক্রিকেটারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেওয়া হবে।
মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলার পর আর ভারত দলে ফিরতে পারেননি শামি। রঞ্জি ট্রফিতে খেললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও জায়গা হয়নি তাঁর।
আইপিএলে গত মৌসুমে ভালো করতে পারেননি শামি। সানরাইজার্সের হয়ে ১৪ ম্যাচের মধ্যে খেলেছেন ৯ ম্যাচ, পেয়েছেন ৬ উইকেট। বোলিং গড় ৫৬.১৬, ইকোনমি ১১.২৩। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ৭৫ রান দিয়ে উইকেটহীন ছিলেন, যা ছিল আইপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল স্পেল।