
২০২৬ সালে ২০তম এশিয়ান গেমসের আসর বসবে জাপানের আইচি ও নাগোয়ায়। সেখানে পুরুষ দলের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো নারী দলকেও খেলার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে)। তবে এশিয়ান গেমসে খেলতে হলে টপকাতে হবে কোয়ালিফাইং রাউন্ড। মেয়েদের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে খেলানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে (বিওএ) জানিয়েছেন হকির কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান বলেন, 'বিওএ'র সভায় আমরা এশিয়ান গেমসে ছেলেদের পাশাপাশি নারী দলকে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছি। বিওএ বলেছে চেষ্টা করবে। আমরা আশাবাদী মেয়েদের এশিয়ান গেমসে খেলার ব্যবস্থা হবে। সেভাবেই দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।' মেয়েদের কোয়ালিফাইং রাউন্ড কবে এবং কোথায় হবে তা অবশ্য এখনো নির্ধারণ হয়নি।
এদিকে ব্র্যাংক ব্যাংক অপরাজেয় আলো নারী হকির জোনাল পর্বের খেলা চলছে। চারটি জোন ও বিকেএসপি- এই ৫ দল নিয়ে ২৪ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পল্টনের মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে হবে চূড়ান্ত পর্ব। এই টুর্নামেন্ট থেকেই জাতীয় দল গঠন করবে ফেডারেশন।
এর আগে বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক হকিতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। জাতীয় দল কখনো আন্তর্জাতিক হকি খেলেনি। এশিয়ান গেমসের বাছাইয়ে খেলা হলে দেশের নারী হকির জন্য সেটা হবে নতুন ইতিহাস।
গত জুলাইয়ে চীনে হয় নারী অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকি। সেখানে প্রথমবার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের জিতেছিল ব্রোঞ্জ পদক। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন শারিকা সাফা রিমন। এবার এশিয়ান গেমসে খেলার হাতছানির কথা জেনে রোমাঞ্চিত তিনি, 'আমরা জুনিয়র এশিয়া কাপে খেলে তৃতীয় হয়েছি। এখন সিনিয়র হকিতে খেলতে চাই। যদি এশিয়ান গেমসের বাছাইয়ে অংশ নিয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে পারি সেটা দারুণ হবে আমাদের জন্য।’
গত বছর ডিসেম্বরে ওমানে হওয়া জুনিয়র এশিয়া কাপে (অনূর্ধ্ব-২১) অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। 'এ' গ্রুপে প্রতিপক্ষ ছিল থাইল্যান্ড, ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া। অর্পিতা-আইরিনরা চারটি ম্যাচই হেরেছিল। চীনের কাছে ১৯-০, ভারতের কাছে ১৩-১, থাইল্যান্ডের কাছে ২-১ ও মালয়েশিয়ার কাছে ৬-১ গোলে হেরেছিল লাল সবুজের মেয়েরা। বাংলাদেশের মেয়েরা জুনিয়র এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল ওই বছর জুনে। সিঙ্গাপুরে হওয়া প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয় দল। ওই আসরে বাংলাদেশেরে মেয়েরা ৬ ম্যাচের ৫টি জিতেছিল। একটি ম্যাচ হেরেছিল চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে।
২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে প্রথমবার জুনিয়র নারী এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম আসরেই শ্রীলংকাকে ২-০ গোলে হারিয়ে একটি জয়ও পেয়েছিল রিতু-তারিনরা। পাঁচ ম্যাচের একটি জিতে চারটি হেরে ৬ দেশের মধ্যে পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হকির মেয়েরা এখন পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-২১ পর্যায়ে তিনটি এবং অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে একটি টুর্নামেন্ট খেলেছে। এবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলার জন্য মুখিয়ে আছেন অর্পিতা-রিমনরা।
No posts available.
৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:২০ পিএম
৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:১৯ পিএম

জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে (অনূর্ধ্ব-২১) প্রথমবার অংশ নিয়েই দারুণ পারফরম্যান্স করেছে বাংলাদেশ। ২৪ দলের মধ্যে ১৭তম হয়ে চ্যালেঞ্জার ট্রফি জিতেছে আমিরুল ইসলামরা। ফলে দেশের হকি দলকে সংবর্ধনা এবং ৬৫ লাখ টাকা বোনাস উপহার দেওয়া হয়েছে।
পুরস্কারের ৬৫ লাখ টাকার মধ্যে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন দিয়েছে ৪০ লাখ টাকা এবং বিমানবাহিনী প্রধান দিয়েছেন ২০ লাখ টাকা বোনাস। এর মধ্যে আমিরুল ইসলাম ছাড়া বাকি সবাইকে দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ টাকা করে। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা আমিরুলকে ৬০ লাখ টাকা থেকে কোনো বোনাস না দিয়ে তাকে আলাদাভাবে প্রদান করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
আজ সোমবার বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন ব্যতিক্রমী সংবর্ধনার আয়োজন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কুর্মিটোলা ঘাঁটির শাহীন দ্বীপে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপ দলকে বরণ করে নেয় হকি ফেডারেশন।
ফেডারেশনের সভাপতি ও বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
এদিন নারী অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে ব্রোঞ্জজয়ী দলকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের এর আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে এক লাখ টাকা করে বোনাস দেওয়া হয়েছিল। আজ তাঁদের আরও ১০ লাখ টাকা বোনাস দেওয়া হয়।
ফেডারেশনের সভাপতি খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে আমি সবাইকে বলেছিলাম মাঠে লড়াকু মানসিকতা দেখতে চাই। বলেছিলাম নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে খেলতে। তোমাদের এজন্য ধন্যবাদ দিতে চাই, কারণ সবাই আমার উপদেশ মেনে লড়াকু মনোভাব নিয়ে দলগত নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছ এবং দেশের জন্য বয়ে এনেছ একটি বিরল সম্মান। তোমরা যা অর্জন করেছ, তা একটি শুরুর বার্তা মাত্র। এখান থেকে আরও অনেক এগিয়ে যেতে হবে। তোমাদের এই অর্জন যেন আগামী দিনের মূল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যোগ্যতা অর্জনের অনুপ্রেরণা জোগায়। এখন থেকেই ২০২৬ এশিয়ান গেমস ও পরবর্তী বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, দেশের হকির উন্নয়নে আমরা আগের চেয়ে আরও বিস্তৃত ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও সমর্থন দিয়ে কাজ করব।’
বাংলাদেশ দলের ডিফেন্ডার আমিরুল ইসলাম বিশ্বকাপে তাক লাগানো পারফরম্যান্স দেখিয়ে ৬ ম্যাচে ৫টি হ্যাটট্রিকসহ মোট ১৮ গোল করেছেন। সর্বাধিক গোলদাতার পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। আমিরুলের এই কৃতিত্ব বিশ্বকাপে একটি রেকর্ড।
অনুষ্ঠানে আমিরুল ইসলাম বলেন,
‘এই সংবর্ধনা পেয়ে আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। অন্যান্য খেলায় সাফল্যের পর সরকার থেকে অনেক পুরস্কার দেওয়া হয়। আমাদের বিষয়গুলোও যদি দেখা হয়, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো হবে।’
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান আমিরুলরা। বিশ্বকাপে ৫টি হ্যাটট্রিক করা এই তারকা খেলোয়াড় বলেন,
‘আমরা যদি ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারি, তাহলে আমাদের সমস্যাগুলোর কথা বলতে পারতাম।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে ৫–৩ গোলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে, ৩–২ গোলে ফ্রান্সের কাছে হারে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ৩–৩ গোলে ড্র করে। স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ ১৩–০ গোলে ওমানকে, ৫–৩ গোলে দক্ষিণ কোরিয়াকে এবং ৫–৪ গোলে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে।

প্রথমবারের মতো জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে খেলে দারুণ সাফল্য বয়ে এনেছে বাংলাদেশ। ভারতে হওয়া এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দল হয়েছে ১৭তম। তাতে মিলেছে চ্যালেঞ্জার্স কাপের শিরোপা। সেই ট্রফি নিয়েই আজ দেশে ফিরেছে কোচ সিগফ্রাইড আইকম্যানের দল। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ দলকে বহনকারী বিমান। এরপর উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের কোচ, খেলোয়াড়েরা।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৮ গোল করে আলো কেড়ে নিয়েছেন আমিরুল ইসলাম। ৬ ম্যাচে করেছেন ৫ হ্যাটট্রিক। এমন পারফরম্যান্সে পর তাঁকে নিয়ে আলোচনা। তবে বাংলাদেশ কোচ কৃতিত্ব দিতে চান পুরো দলকে। ডাচ কোচের মতে দলীয় নৈপুন্যেই এসেছে বড় সাফল্য,
‘আমার মনে হয় ছেলেরা অসাধারণ খেলেছে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো তাঁরা পুরোপুরি দল হিসেবে খেলেছে। সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছে, কেউ নিজের জন্য খেলেনি। তাঁরা শুধু দলের ফলের জন্য খেলেছে। আমরা সবাই মিলে আক্রমণ করেছি, সবাই মিলে রক্ষণ করেছি। যদি কেউ কিছু করতে না পারে, অন্যরা তাঁর কঠিন কাজটা করে দিয়েছে। এখন সবাই আমিরুলকে নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু অনেকে ভুলে যাচ্ছে— রকি কতগুলো পেনাল্টি কর্নার আর স্ট্রোক বের করেছে। অন্যান্য খেলোয়াড়রাও পিসি আদায় করেছে। আমাদের দলে ইনজেক্টর, স্টপার, ফ্লিকার আছে এবং সবাই মিলে ভালো করেছে।’
বাংলাদেশ দলের এমন সাফল্যের পেছনের কারিগর কোচ আইকম্যান। দলকে মাত্র তিন মাস ট্রেনিং করিয়েছেন আর তাতেই একটি দল হয়ে খেলতে পেরেছেন, মেহরান হোসেন সামিন, হুজাইফা, রকি, আমিরুলরা। যে কারণে কৃতিত্ব পুরো কোচিং স্টাফেরও,
‘এই দলের পেছনে কোচিং স্টাফ ও সাপোর্ট স্টাফও ছিল— সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছে। এটা কোনো একজনের কৃতিত্ব নয়, পুরো দলের ফল। আমার মনে হয় এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য তৈরি করেছে। অনেক দিন পর বাংলাদেশ হকি সত্যিকারের এক পরিবার হয়ে খেলেছে। এই ঐক্য আর বন্ধনই এটিকে বিশেষ করেছে। ছেলেদের স্বপ্ন পূরণ হতে দেখে আমি খুব খুশি।’
বাংলাদেশ দলকে সাফল্য এনে দিয়ে নতুন করে চুক্তি বাড়াবেন না আইকম্যান। ফিরে যাবেন নেদারল্যান্ডসে। তবে আরও দুই-একদিন ঢাকাতেই থাকবেন।

প্রথমবারের মতো জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২৪ দলের মধ্যে ১৭তম হয়েছে লাল–সবুজের দল। জিতে নিয়েছে চ্যালেঞ্জার ট্রফি।
ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সেরা পারর্ফমার আমিরুল ইসলাম। ৫টি হ্যাটট্রিকসহ মোট ১৮টি গোল করেছেন বাংলাদেশের এই ফরোয়ার্ড।
চ্যালেঞ্জার ট্রফি জয়ের পর দেশে ফিরেছেন আমিরুল ইসলামরা। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে আজ বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তাঁরা। এ সময় যুব বিশ্বকাপে সাফল্যের জন্য দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান আমিরুল।
আমিরুল বলেন,
“আলহামদুলিল্লাহ, এ জন্যই আমরা টুর্নামেন্টে গিয়েছিলাম। আমাদের যে টার্গেট ছিল, তা পূরণ করে এসেছি। আমরা খুব ভালো খেলেছি। শেষ ম্যাচে দুর্ভাগ্যবশত লাল কার্ড থাকার কারণে জিততে পারিনি। তারপরও ছেলেরা খুবই ভালো পারফর্ম করেছে।”
পাকিস্তান নাম প্রত্যাহার করায় অনূর্ধ্ব–২১ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। আসরে প্রথম দুই ম্যাচে লড়াই করে হেরে যায় দল। এরপর পায় সাফল্যের দেখা। শেষ পর্যন্ত ১৭তম হওয়ার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জার ট্রফিও জিতে বাংলাদেশ।
আমিরুল বলেন,
“আমাদের টার্গেট ছিল যেন আমরা ফাইনালে যেতে পারি। আমাদের লক্ষ্য ছিল খুব ভালো একটি খেলা উপহার দেওয়া।”
এ সময় ঘরোয়া লিগ নিয়েও কথা বলেন আমিরুল। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ স্কোরার বলেন,
“যদি নিয়মিত খেলা থাকে, তাহলে আমাদের পারফরম্যান্স আরও শক্তিশালী হবে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো ফল আনতে পারব।”
“সে ক্ষেত্রে বলব—আমরা লিগকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেব, কারণ লিগের কোনো বিকল্প নেই। এই প্রিমিয়ার লিগ, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো যখন হবে, তখন বিদেশি টপ-লেভেলের খেলোয়াড়রা আসবে, তখন তাদের কাছ থেকে নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারব। আর এতে আমাদের দেশের খেলোয়াড়দের খেলার মান উন্নত হবে।”
— যোগ করেন তিনি।
আমিরুল অনুরোধ করে বলেন,
“আমাদের কিছু চাওয়া আছে—তারা যেন আমাদের লিগটা নিয়মিত করে। যেহেতু আমাদের জুনিয়র ওয়ার্ল্ড কাপ সামনে। সে ক্ষেত্রে আজকের এই অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে যেন আমাদের প্রতি একটু ভালোভাবে নজর দেয়, আমাদের সাপোর্ট করে। তাহলে আমরা খেলায় আরও ভালোভাবে ফোকাস করতে পারব।”

পূর্ব পাকিস্তান আমলে আব্দুস সাদেক, বশির আহমেদ, ইব্রাহিম সাবেরদের হকির স্টিক ওয়ার্ক এতোটাই মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল যে, পাকিস্তান আমলে এই ত্রয়ীকে ঘিরে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীরা দেখেছে অনেক বড় স্বপ্ন। তবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে হকি দেখাতে পারেনি বড় কোনো স্বপ্ন। ১৯৭৮ সালে ব্যাংকক এশিয়ান গেমসের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক হকি-তে পথচলা শুরু বাংলাদেশের। এশিয়ান গেমসে কিংবা এশিয়া কাপ হকিতে এক সময়ে সেরা ৬-এ থাকতে পারাটাই ছিল বড় কিছু। এশিয়ার অনগ্রসর হকি দেশগুলোকে নিয়ে এ এইচ এফ কাপে চারবার (২০০৮, ২০১২, ২০১৬, ২০২২) চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিল প্রত্যাশিত। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে তিনবার (১৯৯৫, ২০১০, ২০১৬)ব্রোঞ্জ পদক জয়ও ছিল প্রত্যাশিত। অনিয়মিত হকি লিগের বিরূপ প্রভাব পড়তে পড়তে র্যাঙ্কিং নামতে নামতে ২০১১, ২০১২-তে ৪০ এ এসে পর্যন্ত দাঁড়িয়েছিল। সেই তলানী থেকে পর্যায়ক্রমে ২৯ নম্বরে উঠে বাংলাদেশের হকি এখন হকি দেখাচ্ছে অবিশ্বাস্য স্বপ্ন।
বাংলাদেশের হকির আগমনী বার্তা দিচ্ছেন একদল তরুণ তুর্কি। এই প্রথম হকির কোনো বৈশ্বিক আসরে খেলার টিকিট পেয়ে অবিশ্বাস্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ জুনিয়র হকি দল। আমিরুল ইসলাম নামের এক তরুণ পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্টের কৃতিত্বে তামিলনাড়ুুর মাধুরিতে জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জার ট্রফি জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
গল্পটা রূপকথার মতো। হকির সেরাদের সঙ্গে লড়াইটা অসম হবে, তা ধরে নিয়েই তামিলনাড়ুর ফ্লাইটে উঠেছে বাংলাদেশ জুনিয়র হকি দল। তবে অসাধ্য সাধনের গল্প লিখেছে দলটি।
প্রিলিমিনারী রাউন্ডে পুল 'এফ'-এ হকির তিন পাওয়ার হাউজ অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কী লড়াই-ই না করেছে বাংলাদেশের তরুণ তুর্কিরা। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে মাত্র ১৭ মিনিটের মধ্যে ৩ গোল খেয়ে যখন বড় ব্যবধানে হারের অশনি সংকেত দেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট, সেই ম্যাচেই কিনা আমিরুলের হ্যাটট্রিকে ৩-৩ গোলে ড্র-করে দেখিয়েছে বীরত্ব বাংলাদেশ জুনিয়র দল। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩-৫ গোলে এবং ফ্রান্সের কাছে ২-৩ গোলে হার-এ ও ছিল লড়াকু খেলার প্রতিফলন। এই তিনটি ম্যাচের মধ্যে একটি জিততে পারলে ৯ থেকে ১৬ নম্বর পজিশনের লড়াইয়ে থাকতে পারতো বাংলাদেশ।
১৭ থেকে ২৪ নম্বর অবস্থানের লড়াইয়ে শুরুতে ওমানকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে (১৩-০) গল্পটা শুরু করে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে এশিয়ান হকির পাওয়ার হাউজ দক্ষিণ কোরিয়াকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে মাথা উঁচু করা জয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়েছে বাড়িয়ে হকি দল। সোমবার সন্ধ্যায় ইউরোপীয় শক্তি অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৫-৪ গোলে জয়ে ১৭তম স্থান নিশ্চিত করে চ্যালেঞ্জার ট্রফি জয়ে তামিলনাড়ুু থেকে উড়িয়েছে বাংলাদেশ জুনিয়র হকি আগমনী বার্তা।
যে রূপকথার প্রধান নায়ক আমিরুল। ৬ ম্যাচে ৫ হ্যাটট্রিক, জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৮ গোলে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ঝাকড়া চুলের বাবরি দোলানো এই পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট। শুধুমাত্র হ্যাটট্রিক মিস করেছেন ফ্রান্সের বিপক্ষে।

শেষ কোয়ার্টারে একের পর এক আক্রমণে বাংলাদেশ শিবিরে ভীতি ছড়ায় অস্ট্রিয়া। ৯টি পেনাল্টি কর্নার আদায় করে নেয় ইউরোপের দলটি। যার মধ্যে গোল পায় তিনটিতে। তারপরও ৫-৩ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ।
অস্ট্রেয়ার বিপক্ষে আবারও হ্যাটট্রিক করেছেন আমিরুল ইসলাম। দারুণ এই জয়ে জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে ১৭তম স্থান লাভ করার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জার্স কাপ নামের শিরোপাও জিতল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
ভারতের মাদুরাই আন্তর্জাতিক হকি স্টেডিয়ামে আজ অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ১৭তম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে টার্ফে নামে বাংলাদেশ। খেলার পাঁচ মিনিটে দুটি পেনাল্টি কর্নার পায় অস্ট্রিয়া। তবে বাংলাদেশের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি তারা। প্রথম কোয়ার্টার শেষের বাংলাদেশও পায় দুটি পেনাল্টি কর্নার। দ্বিতীয় পেনাল্টি কর্নার কাজে লাগান আমিরুল ইসলাম। তাঁর গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
২৭ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হুজাইফা হোসেন। পরে আরও দুটি পেনাল্টি কর্নার পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। তৃতীয় কোয়ার্টারে ফিল্ড গোলে ব্যবধান ৩-০ করেন রাকিবুল হাসান রকি। এই কোয়ার্টারে দুটি পেনাল্টি কর্নার পায় বাংলাদেশ। কিন্তু গোলে রূপ দিতে পারেনি। অস্ট্রিয়া অবশ্য এক গোল শোধ করে। ৪৪ মিনিটে গোলটি করেন আন্দোর লোসোনসি।
শেষ কোয়ার্টারে রোমাঞ্চ ছড়ায়। বাংলাদেশের ওপর একের পর এক চাপ তৈরি করে অস্ট্রিয়া। মরিয়া হয়ে ওঠে ম্যাচে ফিরতে। ৫০ ও ৫২ মিনিটে পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন আমিরুল। বিশ্বকাপে এটি তাঁর পঞ্চম হ্যাটট্রিক, সবমিলিয়ে গোল করেছেন ১৮টি। যা টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ।
আমিরুলের হ্যাটট্রিকের পরও বাংলাদেশকে জয় পেতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়। শেষ কোয়ার্টারে ৯ পেনাল্টি কর্নার পাওয়া অস্ট্রিয়ার হয়ে ৩ গোল করেন কেলনার বেঞ্জামিন, কায়সার জুলিয়ান ও নিকোউইয়াক মাতেউসজ।