
তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। মুয়াজ্জিনের আজান কিংবা পাখির কিচির মিচির ডাক—সবকিছুই যেন নির্মল সতেজ। রাজধানী তখনো নিরব, ঘুমে বিভোর অনেকে। কাজে যাওয়ার তাড়া নেই, জগিংয়ের শুরুটাও খানিক পরে।
কিন্তু, আলো ফুটে ওঠার আগেই একজন মা ঠিকই জেগে ওঠেন। তিনি জানেন, তাঁকে জাগতেই হবে। মাঠ ডাকছে তাঁর সন্তানকে। তাকে প্রস্তুত করে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই প্রাথমিক নিস্তার মায়ের।
আদতে মায়ের দায়িত্ব এখানেই শেষ মনে হলেও এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বিস্তর। সন্তানের সারাদিনের আহারাদি, স্বাস্থ্য, পড়াশোনা, বিশ্রাম-সবকিছু নিয়েও ভাবতে হয় মাকে। পারিবারিক দায়িত্ব বা সন্তানের ভবিষ্যত নিয়েও মধ্যরাত পর্যন্ত ভাবেন মায়েরা। সন্তান ঘুমিয়ে থাকলেও মাকে থাকতে হয় সজাগ। পরের দিনের কর্মপরিকল্পনা সাজাতে হয় তাঁকে। এই মায়েদের ত্যাগ ও যত্নেই এগিয়ে যাচ্ছে সন্তান, এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী।
এই গুণী মায়েদের জন্যই প্রাণ পেয়েছে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের স্কুল হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা। বৃহস্পতিবার ছিল লিগ ভিত্তিক সুপার সিক্সের ম্যাচ। ছেলেদের বিভাগে ছয়টি এবং মেয়েদের বিভাগে আজ প্রতিটা দল খেলেছে পাঁচটি করে ম্যাচ। পয়েন্টের ভিত্তিতে দুই বিভাগে হয় চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ। দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকার সানিডেইল স্কুল।
মাঠের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়নরা যখন উচ্ছ্বসিত, তখন সাইডলাইনে ছিল আরেক উৎসবমুখর পরিবেশ। তরুণ এই খেলোয়াড়দের অভিভাবকরা যেন নিজেদের বাচ্চাদের চেয়েও বেশি খুশি।
প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই পল্টনের শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী জাতীয় স্টেডিয়ামে এমন চিত্র। বৃহস্পতিবার দেখা গেল এমন কয়েকজন মাকে, যারা নিজেদের বাচ্চাকে সমর্থনে এসেছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের কেউ গৃহিণী, কেউ ডাক্তার, কেউ বা ব্যবসায়ী। তবে হ্যান্ডবল মাঠে সবারই একটি পরিচয়—তরুণ ক্রীড়াবিদদের মা।
এদিন নারিন্দা গভর্মেন্ট হাই স্কুলকে ৩৬-১৭ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জেতে সানিডেইল। ম্যাচ সেরা হন আরিফ ইহতিরাম খান। তিনি টি-স্পোর্টসের প্রতিবেদককে জানান, ‘অনুভূতি বোঝানোর মতো না, অনেক ভালো লেগেছে। মাকে দেখাতে পেরে খুশি।’ ইহতিরাম যখন ট্রফি হাতে উচ্ছ্বসিত, মা তখন আনন্দে আত্মহারা।
ইহতিরামের মা বলেন,
‘অনেক দিন ধরে ওরা টুর্নামেন্ট খেলছে। প্রতিটা ম্যাচ দেখেছি। খুব ভালো লেগেছে। আসলে ঢাকায় বাচ্চাদের খেলার জন্য খুব একটা জায়গা নেই। খেলার মধ্যে থাকলে ভালো হয়। সব স্কুলে এমন সুযোগ থাকলে ভালো হয়।’
নাজিয়া আক্তার পেশায় একজন ডাক্তার। পাবলিক হেলথে কর্মরত। শত ব্যস্ততার মাঝেও ছুটে আসেন ছেলের সঙ্গে। এদিনও দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলেন হ্যান্ডবল মাঠে। ছেলেকে নিয়ে বলেন,
‘সত্যি বলতে ক্লান্তি লাগে না। আমার সব সময় বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে। ওদের আমি যখন স্কুলে আনতে যাই তখন ভালো লাগে, মনে হয় মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। পড়াশোনার পাশাপাশি যদি ভালো কাজ করতে পারে তবে খুশি। আমি মনে করি খেলাধুলা থাকলে হার-জিতের মানসিকতা বিকাশ হয়। খেলাধুলা যে শিক্ষা দেয় সেটা অনেক কাজে লাগে।’
নিজের সম্পর্কে মায়ের এমন মন্তব্য শুনে ছেলে ইহতিরাম বলেন,
‘এমন মা সবাই পায় না, আমি খুব খুশি।’
হ্যান্ডবল মাঠে দেখা যায় এক তরুণীকে, খুশিমনে এদিক-সেদিক হাঁটছেন। কিছুক্ষণ পরই এক খুদে হ্যান্ডবল খেলোয়াড়কে জড়িয়ে ধরে উৎসাহ দেন। মূলত ভাইয়ের সঙ্গে এসেছিলেন মাসুরা হোসেন আদিতি। গ্রেগরিজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে খেলছেন তাঁর ভাই। তিনি বলেন,
‘আমার ভাইকে নিয়ে আমি অনেক গর্ব করি। ও দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। সে বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, ফুটবল—মোট কথা মাল্টি-ট্যালেন্টেড একটা বাচ্চা। আসলে ওর প্রেরণা আমাদের মা-ই।'
এমনই এক মায়ের অদম্য প্রেরণায় আজ শিরোপা হাতে তুলে নিতে পেরেছেন বলে জানান সানিডেইলের আলিজে চৌধুরী। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া আলিজে বলেন,
‘আমি সত্যি খুব প্রাউড ফিল করছি। ওনারা (মা-বাবা) আমাকে খুব সাপোর্ট করে, এমনটা সবাই করে না। একদিন জাতীয় দলে খেলে মায়ের মুখ আরও উজ্জ্বল করতে চাই।’
মেয়ের সেই দিনের অপেক্ষায় মা মিতি চৌধুরী। ব্যক্তি জীবনে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। মেয়ের সাফল্য নিয়ে বলেন,
‘আমি অনেক খুশি। কারণ ভিকারুননিসা অনেক ভালো খেলে, সেই টিমকে হারিয়েছে আমার মেয়েরা।’ ক্যারিয়ার গড়েছেন ব্যবসায়, তবে ছোটবেলায় নিজেও খেলতেন হ্যান্ডবল। এখন মেয়েকে হ্যান্ডবলে দেখে খুশি এই মা বলেন, ‘যখন দেখি বাচ্চার খেলার প্রতি এত আগ্রহ, ওদের স্বপ্ন, ওরা খেলতে চায়, এটা দেখে আমি যত ব্যস্ত থাকি তবুও সময় বের করি। ছোটবেলা থেকে আমি নিজেও হ্যান্ডবল খেলতাম। আমার মেয়েরও ছোটবেলা থেকে হ্যান্ডবলের প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। বাসা থেকে সবার ওর জন্য অনেক সাপোর্ট আছে।’
মা-বাবাদের প্রতি আলিজের মায়ের বার্তা,
‘আমি চাই সবাই যেন তাদের বাচ্চাদের খেলাধুলায় পাঠায়। এটা মেন্টাল হেলথে অনেক সহায়ক।’
সানিডেইলের শিরোপা জেতা দলের অন্যতম সদস্য আমানা। তাঁর মা কায়েছমা জামান এসেছিলেন মেয়ের খেলা দেখতে। তিনি একটি হোম কিচেন পরিচালনা করেন। একজন নারী সফল উদ্যোক্তা। ব্যস্ততার মাঝেও মেয়েকে সময় দেন তিনি। বলেছেন সেটিই,
‘কোচদের ভূমিকা অনেক। কারণ আমাদের প্র্যাকটিস শুরু হয় স্কুল ক্লাসের আগে। ৬টায় যেতে হয়, তখন প্র্যাকটিস করে। এরপর স্কুল শেষ করে বিকেল পাঁচটায় বাসায় আসে। ওদের জন্য আমাদের আরও সকালে উঠতে হয়। যেহেতু ওদের একটা ভালো টিফিন দিতে হয়।’
আমানা এরই মধ্যে খেলেছেন ইংল্যান্ড ও সুইডেনে। সেখানে ছিলেন তাঁর মা কায়েছমা জামান। বাংলাদেশের সঙ্গে দুই দেশের সুযোগ-সুবিধায় যে বিস্তর ফারাক সেটি উল্লেখ করে বলেন,
‘যতটুকু দেখেছি, বাংলাদেশে হ্যান্ডবলের সুযোগ-সুবিধা কম। আমার মেয়ে ইংল্যান্ডে ইনডোর স্কুল টুর্নামেন্ট খেলেছে। সেখানে সুযোগ-সুবিধা অনেক। বাইরের দেশে গেলে বোঝা যায় তারা কতটা এগিয়ে। সুইডেনে দেখেছি ওদের কি পরিমাণ সুযোগ। ইনডোর ও আউটডোর মাঠ আছে। আমার মেয়ে দুবার বিদেশে খেলেছে।’
হ্যান্ডবলে ঢাকার এই নতুন জাগরণ দেখে বেশ আশাবাদী নারী জাতীয় হ্যান্ডবল দলের কোচ ডালিয়া আক্তার। তবে আক্ষেপও আছে তাঁর,
‘ঢাকায় হ্যান্ডবল নিয়ে আগ্রহ নতুন করে তৈরি হয়েছে, এটা সত্যি দারুণ। তবে আমার চাওয়া ঢাকার বাইরেও যেন এমনটা হয়।’
ঢাকার স্কুল হ্যান্ডবলে বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই উচ্চবিত্ত পরিবারের। অতীত বলে, তাঁদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ক্যারিয়ার হিসেবে হ্যান্ডবলকে বেছে নেন। এদের কেউ খেলাটির প্রতি ভালোবাসা থেকেই রয়ে যান। নির্মম বাস্তবতা হলো—দেশের হ্যান্ডবলে সে অর্থে পাওয়ার কিছু নেই। যে কারণে এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন অনেকেই।
হ্যান্ডবল মাঠে মায়েদের আগমন ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় ডালিয়া,
‘এটা ইতিবাচক দিক। ঢাকার ব্যস্ততার মধ্যেও মায়েরা নিজের সন্তানকে সাপোর্ট দিচ্ছেন, তাদের হ্যান্ডবলে উদ্বুদ্ধ করছেন। তাঁদের দ্বারা এই বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের যেভাবে বাধাবিপত্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেটির ঢাল হতে পারেন এই মায়েরাই।’
No posts available.
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২:০২ পিএম
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:৪৫ পিএম
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৩ এম
২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৩২ পিএম

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন সিরিজ টুর্নামেন্টের পুরুষ দ্বৈতে বাজিমাত স্বাগতিকদের। আগের দিন চার জুটি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস রচনা করে। সেখান থেকে আজ বৃহস্পতিবার তিন জুটি সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়। সন্ধ্যায় শেষ চারের লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশের শাটলাররা।
সকালে মিশ্র দ্বৈতে ঊর্মি আক্তারকে নিয়ে হেরে গেলেও, পুরুষ দ্বৈতে আর ভুল করেননি আল আমিন জুমার। দীর্ঘদিনের সঙ্গী মোয়াজ্জেম হোসেন অহিদুলকে নিয়ে সেমিতে পা রাখেন তিনি। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার জুটিকে ২১-১৪ ও ২৫-২৩ পয়েন্টের ব্যবধানে পরাজিত করেন তারা।
সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশের গৌরব সিংহ-তানভীর ইসলাম জুটি। ভিয়েতনামের থান- ডান এন জুটিকে ২১-১৫ ও ২১-১৫ পয়েন্টের ব্যবধান হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেন। ভারতের প্রদীপ কুমার-অতুল কুমার ভাইদের হারিয়ে শেষ চারে উঠেন বাংলাদেশের রাহাতুন নাঈম ও মিজানুর রহমান জুটি।
জয়ের দিনে হতাশার গল্পও আছে। চারটি কোয়ার্টারের মধ্যে একটিতে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। দিনাজপুরের এলোরা একাডেমির শাটলার রিয়াদুল ইসলাম-তনয় সাহা জুটি ৯-২১, ১৩-২১ পয়েন্টের ব্যবধানে থাইল্যান্ডের লোথং-তাছিন জুটির কাছে পরাজিত হন।

সোমবার থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল সিরিজ। পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ব্যাডমিন্টন সিরিজের প্রথমদিন হতাশায় পার করেছেন স্বাগতিক শাটলাররা। পুরুষ এবং নারী একক- দুই বিভাগে কোর্টে নামলেও জিততে পারেননি বাংলাদেশের কোনো শাটলার।
কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল বাংলাদেশের তারকা শাটলার আইমান ইবনে জামান। প্রতিপক্ষ না আসায় পরবর্তী রাউন্ডে উন্নীত হয়েছেন তিনি।
সোমবার অবশ্য বাংলাদেশের টপ সিডেড কেউ নামেননি। আগামীকাল মঙ্গলবার আল আমিন জুমার, ঊর্মি আক্তার, মোয়াজ্জেম হোসেন অহিদুল, আইমান ইবনে জামানরা কোর্টে নামবেন।
সকালে নারী এককে শুরুতে কোর্টে নামেন জেরিন ইকবাল মোহনা। ভিয়েতনামের প্রতিযোগীর সামনে দাঁড়াতেই পারেননি; হেরেছেন ২১-৩ ও ২১-৯ পয়েন্টের ব্যবধানে।
সদ্য শেষ হওয়া বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জের পুরুষ দ্বৈতে দারুণ পারফর্ম করা আকিব সুলাইমানও আজ হতাশ করেছেন। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতের রিয়ান রঞ্জনের কাছে ২১-৮ ও ২১-১৬ পয়েন্টের ব্যবধানে হেরেছেন।
এদিন জিততে পারেননি মোস্তাকিম হোসেনও। মালয়েশিয়ার প্রতিযোগী কং ঝিংয়ের বিরুদ্ধে প্রথম সেট লড়াই করে হারলেও ২২-২০, পরের সেট ২১-১৫ পয়েন্টে হেরে সিরিজের পুরুষ একক থেকে বিদায় নেন মোস্তাকিম।
নারী এককে বাংলাদেশের স্মৃতি রাজবংশী ভারতের নিশু মালিকের বিরুদ্ধে পরাজয়ের তেতো স্বাদ নেন। প্রথম সেট কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়তে না পারলেও, দ্বিতীয় সেটে দারুণ লড়াই করেন। তবে ভারতের কাছে স্মৃতি ২১-১১ ও ২১-১৯ পয়েন্টের ব্যবধানে পরাজিত হন।
এদিকে নারী এককে লিকা পোদ্দারও হেরেছেন। ভারতের বালা রেড্ডির কাছে ২১-১৯ ও ২১-১৩ পয়েন্টের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি।

দুই দিন বিরতির পর ঢাকায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে আরও একটি আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা। ১৭ দেশ নিয়ে চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর আজ থেকে এক দল বেশি নিয়ে কোর্টে গড়াচ্ছে ব্যাডমিন্টন সিরিজ। প্রথম টুর্নামেন্টে তথা ইউনেক্স-সানরাইজ আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জে মিশ্র দ্বৈতে আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার রুপা জেতেন। এরপর থেকেই নতুন করে আলোচনায় দেশের ব্যাডমিন্টন।
যে কোনো সাফল্যের পর তা ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টে জুমার-ঊর্মিদের এখন চ্যালেঞ্জ সামনে দেশকে আরও কিছু দেওয়ার। আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রতিযোগিতায় দারুণ কিছু করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তাঁরা। একই সঙ্গে চান তাঁদের নিয়ে, দেশের শাটলারদের নিয়ে হোক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তাতে সম্মতি বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের। বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ফেডারেশনের কর্তা-ব্যক্তিরা। লম্বা সময় অনুশীলন যেমন দরকার তেমন উন্নতমানের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের পাশাপাশি বড় মাপের কোচও রাখতে চায় ফেডারেশন।
এর আগে এসএ গেমসকে কেন্দ্র করে ক্যাম্প চালু করে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার এই প্রতিযোগিতা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে গেমসকে সামনে রেখে নেওয়া প্রস্তুতির ফল বাংলাদেশের শাটলাররা পেয়েছেন ঢাকায় হওয়া চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায়।
তবে এসএ গেমসের প্রস্তুতির স্বরূপ খেলোয়াড়দের অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে পাঠানো হলেও তার সুফল কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, খেলোয়াড়দের দেওয়া তথ্য মতে, বিদেশি প্রতিপক্ষরা সারা বছর আধুনিক কোচ ও উন্নত সুবিধায় প্র্যাকটিস করে, যেখানে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা কেবল টুর্নামেন্ট এলেই স্বল্পমেয়াদি ক্যাম্পের সুযোগ পান।
মিশ্র দ্বৈতে ফাইনালে মালয়েশিয়ার জুটির কাছে হারের পর ঊর্মি আক্তার বলেন, ‘ওরা আসলে দীর্ঘ সময় ধরে প্র্যাকটিস করে, ভালো কোচের অধীনে থাকে এবং ওদের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। ওদের স্পন্সর, ট্রেনিং সব কিছুই আমাদের চেয়ে ভালো।’শুধু এসএ গেমস নয় প্রতি বছরই দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প চান জুমার, ‘সামনে অনিশ্চয়তা তো আছেই। যদি আবার এরকম দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্পের সুযোগ পাই, তবে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।’
ব্যাডমিন্টনের মতো টেকনিক্যাল ও ব্যয়বহুল খেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভালো করা প্রায় অসম্ভব মনে করেন জুমার। তাই পৃষ্ঠপোষকদের এগিয়ে আসা উচিত, ‘আমাদের অনুশীলনের অভাব তো আছেই। এক বক্স শাটলের দাম এখন ৬০০০ টাকা, যা দিয়ে বড়জোর ২-৩ দিন অনুশীলন করা যায়। এত ব্যয়বহুল খেলায় একা ট্রেনিং চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল কবির সুমন বলেন, ‘আমাদের এই ক্যাম্পটা স্বল্প সময়ে হয়েছে। বাইরেও খেলছি গত তিন-চার মাসে। এর মধ্যেই কিন্তু আমরা এই অর্জন করতে। এই অভ্যাস যত বাড়াতে পারব তত আমাদের ফল ভালো হবে। দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বাইরে খেলতে হবে।’
দীর্ঘমেয়াদী কোচ নিয়োগেরও চেষ্টা চালাচ্ছে ফেডারেশন। সুমন বলেন, ‘আগে আমরা একটা গণ্ডির মধ্যে ছিলাম, ওর বাইরে যেতাম না। আমার ফেডারেশন সভাপতিকে বলছি, যে দীর্ঘমেয়াদী একটা কোচ দরকার। আপনি এটা এনে দেন, সঙ্গে সঙ্গে এরা বাইরের সব টুর্নামেন্ট খেলবে। রেজাল্টও অটোমেটিক হবে, এই টুর্নামেন্টই তা প্রমাণ।’
আজ থেকে পল্টনের শহীদ তাজউদ্দীন ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে ইউনেক্স-সানরাইজ সিরিজ টুর্নামেন্ট। ৫ হাজার ডলারের প্রাইজমানির এই টুর্নামেন্টে থাকছেন আগের অনেকেই। নতুন করে যোগ হয়েছে কাজাখস্তান। ভারতের কিছু শাটলার ফিরে গেছেন, আসছেন নতুন কয়েকজন।

আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন সিরিজ। পাঁচ দিনব্যাপী এই টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে ২৬ ডিসেম্বর। পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে ১৮ দেশের শাটলাররা তাদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করবেন।
সিরিজ শুরুর আগে ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন। যা ১৬ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২০ ডিসেম্বর শেষ হয়। সেখানে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশ এতে অংশ নিয়েছিল।
এই সিরিজেও খুব একটা পরির্বতন আসছে না। নতুন করে কাজাখস্তান যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ভারতের কয়েকজন শাটলার ফিরে যাচ্ছেন, তাদের জায়গায় আসছেন নতুন কয়েকজন। ৫ হাজার ডলারের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল সিরিজে টপ সিডেড খেলোয়াড়রা অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশের টপ সিডেড হিসেবে আল আমিন জুমার, মোয়াজ্জেম হোসেন অহিদুলরা থাকছেন।
চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে প্রাইজমানি ছিল সাড়ে ১৭ হাজার ডলার; সিরিজে ৫ হাজার ডলার। দুই টুর্নামেন্টের পার্থক্য জানতে চাইলে ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক রাসেল কবির সুমন জানান,
‘এখানে মূল্য পার্থক্য হলো পয়েন্টে। চ্যালেঞ্জে বেশি পয়েন্ট। সিরিজে কম।’

ঢাকায় আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনের ফাইনালে উঠে আগেই ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার জুটি। তবে ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জে স্বর্ণ জিততে পারেননি তাঁরা। আজ শনিবার মিশ্র দ্বৈতের ফাইনালে মালয়েশিয়ান জুটির কাছে হেরে গেছেন তারা।
এদিন প্রথম সেটে লড়াই করলেও, পরের সেটে আর পেরে ওঠেননি জুমার-ঊর্মি। ২৭-২১ ও ২১-১৪ পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে রৌপ্য জিতেছেন তাঁরা। রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের কারণে ফাইনালে কোনো আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি। এদিক কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রত্যেক শাটলার এবং কোচ-কর্তারা মাঠে যে যার কাজ সম্পন্ন করেছেন। তবে আনন্দ-অনুষ্ঠান না থাকলেও, ফাইনালে ওঠার কারণে অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের মিশ্র দ্বৈতের তারকা জুটি জুমার-ঊর্মি।
বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতি হাবিব উল্যা ডন দুজনকে পাঁচশত করে মোট ১ হাজার ডলার অর্থ পুরস্কার দিয়েছেন। একই সঙ্গে শাটলারদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশী কোচসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানেরও আশ্বাস দিয়েছেন হাবিব উল্যা ডন।
ফাইনাল শেষে আল আমিন জুমার বলেন,
‘প্রথমবারের মতো আমরা কোনো আন্তর্জাতিক ইভেন্টের ফাইনালে উঠতে পেরেছি এটা যেমন আনন্দের, তেমনি চ্যাম্পিয়ন হতে না পেরে একটু তো খারাপ লাগছেই। ওরা আমাদের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা ট্রেনিংয়ে অনেক এগিয়ে। সেদিক থেকে আমরা কিছুটা হলেও পিছিয়ে। একক, দ্বৈত এবং মিশ্র দ্বৈত তিন বিভাগেই আমি খেলেছি। আমি কোনো ক্লান্তি অনুভব করেনি, আনন্দ নিয়েই খেলেছি। এবার পারিনি, ভবিষ্যতে অবশ্যই দেশের জন্য স্বর্ণ পদক জিতে আনব।'
ফাইনাল শেষে ঊর্মি আক্তার জানান,
‘এসএ গেমস সামনে রেখে আমরা যে তিন মাসের ট্রেনিংয়ে ছিলাম, সেটা অনেক কাজে দিয়েছে। ওই কারণেই এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে পেরেছি। ওদের সঙ্গে আমাদের অনেক পার্থক্য। ওদের ড্রেস দেখলেই বুঝবেন। ওরা বড় বড় স্পন্সর নিয়ে খেলে। আমাদের সেভাবে কোনো স্পন্সর নেই। দীর্ঘ মেয়াদী ট্রেনিংয়ের সুবিধা নেই। আমরাও যদি ওদের মতো সব ধরনের সুবিধা পেতাম, তাহলে আরও অনেকদূর যেতে পারতাম। কারণ ওরাও মানুষ, আমরাও মানুষ।'
মিশ্র দ্বৈতের পাশাপাশি আজ আরও চারটি ইভেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। পুরুষ এককে দুই ভারতীয়র লড়াইয়ে মেইরাবা মাইসনাম ২১-৭ ও ২১-১২ পয়েন্টে নুমাইর শাইককে পরাজিত করেন। নারী এককে চ্যাম্পিয়ন হন যুক্তরাষ্ট্রের ইসিকা জয়সোয়াল। ভারতের তানভি রেড্ডিকে ২২-২০, ২১-২৩ এবং ২১-১৫ পয়েন্টে পরাজিত করে স্বর্ণ জেতেন ইসিকা।
পুরুষ দ্বৈতের ফাইনালে ভিয়েতনামের ড্যাং খাহ-ট্রান হোং জুটিকে ২১-১৯ ও ২১-১২ পয়েন্টের ব্যবধান হারান ভারতের নিরঞ্জন-রুবান কুমার জুটি। সবশেষ নারী দ্বৈতের ফাইনালে থাইল্যান্ডের পাত্থারিন-সারিসা জানপেং জুটির কাছে মালয়েশিয়ার গ্যান মিন-তান জিং জুটিকে ২১-৭, ২০-২২ ও ২১-১৫ পয়েন্টে পরাজিত করেন।