
চলতি আইপিএলে এরই মধ্যে কিছু ম্যাচে রীতিমতো রানবন্যা বইয়ে গেছে। আর এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। একই আসরে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরের নিজেদের গড়া রেকর্ড সোমবার নিজেরাই ভেঙেছে প্যাট কামিন্সের। তবে এতেও যেন সন্তুষ্ট নন সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিস হেড। তার আক্ষেপ এখন ৩০০ রান করার!
আরও পড়ুন: স্মিথের পর যুক্তরাষ্ট্রের লিগে নাম লেখালেন হেডও
বোলারদের জন্য ভুলে যাওয়ার এক দিনে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করে ৩ উইকেটে ২৮৭ রান করে সানরাইজার্স। পেছনে ফেলে দেয় সম্প্রতি নিজেদের করা ২৭৭ রানের রেকর্ড। তবে ইনিংস বিরতিতে চমকেই দিলেন হেড।
দলের পরবর্তী লক্ষ্য কী, এই প্রশ্নে মারকুটে ওপেনার বলেন, “আমাদের স্কোরের শুরুতে এখন একটা ৩ রান দরকার, তাই না!”

ইনিংসে সানরাইজার্স মোট ২২টি ছক্কা হাঁকিয়েছে, যা আইপিএলের ইতিহাসে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি এবং হেড তার শততকের পথে মেরেছেন ছয়টি ছক্কা। ৪১ বলে ১০২ রান করেন অজি ব্যাটার।
সানরাইজার্সের ৩ উইকেটে ২৮৭ রান এখন ২০২৩ সালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে নেপালের ৩ উইকেটে ৩১৪ রানের পর স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।
No posts available.


৩১ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৪০ পিএম




৩১ অক্টোবর ২০২৫, ৮:০২ পিএম



গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্বাগতিকদের ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ। বছর ঘোরার আগেই এবার অক্টোবরে বাংলাদেশে এসে সেই সিরিজের বদলা নিয়ে নিল ক্যারিবিয়ানরা।
চট্টগ্রামের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিকদের করা ১৫১ রানের জবাবে মাত্র ১৬.৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে যায় রস্টোন চেজের নেতৃত্বে খেলতে নামা দল।
নিয়মিত অধিনায়ক শাই হোপসহ তিন পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবু জয় পেতে কষ্ট হয়নি তাদের। বেশ অনায়াসেই শেষ ম্যাচটি জিতল তারা।
টানা চার সিরিজ জয়ের পর আবার হেরে গেল বাংলাদেশ। আর ঘরের মাঠে তারা হোয়াইটওয়াশ হলো প্রায় ৪ বছর পর। এর আগে ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ দল।
শেষ ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করে বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান তামিম ছাড়া কেউ কিছু করতে পারেননি। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৬২ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি ওপেনার।
এই ইনিংসের পথে ৪২ ইনিংসে তিনি পূর্ণ করেন ১ হাজার রান। যা কিনা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ড।
তামিমের বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ রান করে সাইফ হাসান। এছাড়া বাকি ৯ ব্যাটারের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে হ্যাটট্রিক করে রোমারিও শেফার্ড। ১৬তম ওভারের শেষ বলে নুরুল হাসান সোহান ও শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে তামিম এবং শরিফুল ইসলামকে আউট করেন তিনি।
রান তাড়ায় শুরুটা তেমন ভালো ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মাত্র ৫২ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। পরে ঝড় তোলেন আকিম অগাস্ত ও রস্টোন চেজ। দুজন মিলে মাত্র ৪৬ বলে গড়ে তোলেন ৯৩ রানের বিধ্বংসী জুটি।
১ চার ও ৫ ছক্কায় ২৫ বলে ৫০ রান করেন অগাস্ত। চেজের ব্যাট থেকে আসে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ২৯ বলে ৫০ রান।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৩ উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। ৪ ওভারে খরচ করেন ৪৩ রান। তাসকিন আহমেদ ৩.৫ ওভারে দেন ৫০ রান।
একাদশে ফেরা শেখ মেহেদি হাসান ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচ করে নেন ১ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫১ (তামিম ৮৯, ইমন ৯, লিটন ৬, সাইফ ২৩, রিশাদ ৩, সোহান ১, নাসুম ১, জাকের ৫, মেহেদি ০*, শরিফুল ০, তাসকিন ৯; হোল্ডার ৪-০-৩২-২, আকিল ৪-০-২৬-১, শেফার্ড ৪-০-৩৬-৩, চেজ ৪-০-২৩-১, পিয়ের ৩-০-২৩-২, মোটি ১-০-১১-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬.৫ ওভারে ১৫২/৫ (আথানেজ ১, জাঙ্গু ৩৪, কিং ৮, চেজ ৫০, অগাস্ত ৫০, পাওয়েল ৫, মোতি ৩; মেহেদি ৪-০-১৮-১, শরিফুল ২-০-১২-০, তাসকিন ৩.৫-০-৫০-০, নাসুম ৩-০-২৯-১, রিশাদ ৪-০-৪৩-৩)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী

ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট হারের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের খেলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কোচ জোনাথন ট্রট ও বোর্ডের মধ্যে একপ্রকার স্নায়ুযুদ্ধ লেগে যায়। তবে ফরম্যাট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সুখ-শান্তি ফিরে এসেছে আফগান শিবিরে। প্রথম টি-টোয়েন্টির পর আজ দ্বিতীয় ম্যাচও জিতেছে রশিদ খান ব্রিগেড। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করেছে আফগানিস্তান।
হারারেতে আজ টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ১২৫ রান তোলে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। জবাব দিতে নেমে ১২ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে আফগানিস্তান।
এদিন জিম্বাবুয়ের সাদামাটা টার্গেট মোকাবিলায় নেমে ইব্রাহিম জাদরান শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন। দলীয় ২৪ রানে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ৬১ রানে সেদিকুল্লাহ অতল ফিরলেও আফগানিস্তান কোনও সমস্যা হয়নি।
আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছান জাদরান। ওমরজাই ২৫ রান ও জাদরান ৫৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমেও খুব সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। ৩৪ রানে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারায় তারা। স্বাগতিকদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। রশিদ খানের বলে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে পর্যন্ত দলকে কিছুটা স্বস্তি দেন তিনি। এছাড়াও টনি মুনিয়োনা ১৯ রানের ইনিংস খেলেন।
মূলত স্বাগতিকদের শুরুর দিকে স্পিনের জাদুতে কাবু করেন মুজিব উর রহমান। মাঝ ও শেষদিকে রশিদ খানের আধিপত্য চলে।
আফগানিস্তানের দুই স্পিনার মোট ৫টি উইকেট নেন। সর্বোচ্চ উইকেট অধিনায়ক রশিদ খানের। মাত্র ৯ রান খরচায় তিন উইকেট শিকার করেন তিনি।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি আগামী রবিবার, হারারেতে।

২০২১ সালে ১০০ বলের নতুন ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট ‘দ্য হান্ড্রেড’ চালু করে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। শুরু থেকেই ড্রাফট পদ্ধতিতে খেলোয়াড় বেছে নিত দলগুলো। তবে আগামী মৌসুমে আসছে বড় পরিবর্তন। ২০২৬ সাল থেকে ড্রাফটের বদলে নিলাম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে দ্য হান্ড্রেড।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) আদলে আগামী বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হবে নিলাম। এবার বাড়ানো হয়েছে পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারদের বেতন কাঠামো। পুরুষ দলের মোট বেতন তহবিল ১.২ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ২.০৫ মিলিয়ন করা হয়েছে। নারী দলের বাজেট ৪ লক্ষ ৪০ হাজার থেকে বেড়ে ৮ লক্ষ ৮০ হাজার পাউন্ডে উন্নীত হয়েছে। সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক পাওয়া নারী খেলোয়াড়দের বেতন ১০ হাজার থেকে বেড়ে ১৫ হাজার পাউন্ড করা হয়েছে।
প্রতিটি দলে থাকবে ১৬ থেকে ১৮ জন খেলোয়াড়। বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে চারজন করা হয়েছে। নিলামের আগে সর্বোচ্চ চারজন খেলোয়াড় সরাসরি সাইন করাতে পারবে প্রতিটি দল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দুই জন বিদেশি ও দুই জন ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সরাসরি সাইনিং করাতে পারবে দলগুলো।
ষষ্ঠ মৌসুমে থাকবে না কোনো রাইট টু ম্যাচ সুবিধা। তবে দলগুলো টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট থেকে ওয়াইল্ডকার্ড পদ্ধতিতে আরও দুইজন খেলোয়াড় নিতে পারবে। নিলামের আগে সরাসরি সাইনিং করালে প্রতিটি দলের বেতন তহবিল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে নেওয়া হবে। পুরুষ দলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯৫০ হাজার এবং নারী দলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩৬০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত কাটা যাবে।

ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আবারও ফিফটি করলেন তানজিদ হাসান তামিম। ক্যারিয়ারের দশম পঞ্চাশ করার পথে রেকর্ড গড়ে ১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাঁহাতি ওপেনার। এছাড়া বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেলেন রোমারিও শেফার্ড।
চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৫১ রানে অল আউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। তামিম ছাড়া আর কেউই কিছু করতে পারেননি।
ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৬২ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন তামিম। এছাড়া সাইফের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান। বাকি ৯ ব্যাটারের কেউই দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি।
টানা দ্বিতীয় ফিফটি করার পথে ৩৩তম রান নিয়ে হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করেছেন তামিম। বাংলাদেশের নবম ব্যাটার হিসেবে এই ফরম্যাটে ১ হাজার রান করলেন তিনি। ক্যারিয়ারের দেড় বছরের মাথায় ৪২ ইনিংসে হাজার রান করে তামিমই বাংলাদেশের দ্রুততম।
এত দিন রেকর্ডটি ছিল তাওহিদ হৃদয়ের। তিনি ১ হাজার রান করতে খেলেছিলেন ৪৫ ইনিংস। এছাড়া পঞ্চাশের কম ইনিংসে হাজার রান করতে পেরেছেন শুধু তামিম ইকবাল, ৪৯ ইনিংসে।
দ্রুততম হাজার রানের বিশ্ব রেকর্ড অবশ্য ইংল্যান্ডের দাভিদ মালান ও চেক রিপাবলিকের সাবাউন দাভিজির। দুজনই মাত্র ২৪ ইনিংসে ১ হাজার রান করেছেন।
এছাড়া দলের ১৫১ রানের মধ্যে একা ৮৯ রান করে আরেকটি রেকর্ডও গড়েছেন তামিম। দলীয় সংগ্রহের মোট ৫৮.৯৪ শতাংশ রান একাই করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে ওমানের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস খেলার পথে দলের ৫৭.২২ শতাংশ রান একা করেছিলেন তামিম ইকবাল।
তামিমের মাইলফলক ছোঁয়ার দিন ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন শেফার্ড। ১৬তম ওভারের শেষ বলে নুরুল হাসান সোহান ও শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে তানজিদ হাসান তামিম এবং শরিফুল ইসলামকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন শেফার্ড।
এটিই তার ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম।
বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ১ হাজার রান
তানজিদ হাসান তামিম - ৪২ ইনিংস
তাওহিদ হৃদয় - ৪৫ ইনিংস
তামিম ইকবাল - ৪৯ ইনিংস
লিটন কুমার দাস - ৫১ ইনিংস
সাকিব আল হাসান - ৫১ ইনিংস
সৌম্য সরকার - ৫৪ ইনিংস
আফিফ হোসেন - ৫৫ ইনিংস
মুশফিকুর রহিম - ৫৯ ইনিংস
মাহমুদউল্লাহ - ৬০ ইনিংস

অক্টোবর সদ্য বিদায় নিয়েছে। নভেম্বরের শুরু—শীতের নিঃশ্বাসে জমে গেছে শহর। মাসের প্রথম সপ্তাহ। ছেলেটার ঠিক মনে নেই দিন-তারিখ, এমনকি বারও। শুধু এটুকু জানে—সেদিনের রাতটা ছিল হিমশীতল, নিঃশব্দ, জমে যাওয়া এক শহরের বুকের মতো নিস্তব্ধ।
পায়রা, সীগাল, রবিন—সবাই ঘুমিয়ে গভীর শীতনিদ্রায়। কাতালানদের এই নগর এখন বরফে মোড়া স্বপ্নপুরী।
হঠাৎ একটুখানি শব্দ—একটা ছোট্ট ইঁদুরের পায়চারি। ছেলেটার ঘুম ভাঙে তাতে। অন্ধকার ঘরের কোণে তাকিয়ে ভাবতে থাকে—ও ইঁদুরটাও কি তার মতোই বাঁচার লড়াইয়ে, খাবারের খোঁজে, টিকে থাকার সংগ্রামে? ভাবতে ভাবতে কেমন যেন ভারী হয়ে ওঠে বুকটা।
রাতের এই নিস্তব্ধতায় জেগে ওঠা মানেই এক অনিবার্য বিপদ—চিন্তা। চিন্তার দল মিছিল নামায় ধ্যানের রাজপথে। কৈফিয়ত চায়—আজ কোথায় দাঁড়িয়ে তুমি? কেন এসেছে এত দূরে? কোথায় হারিয়েছে পুরোনো পরিচিত মুখগুলো? অতীত আর বর্তমানের হিসাব মিলাতে মিলাতে হারিয়ে যায় সে এক অদ্ভুত মোহে।
জীবনের এ ধারা-ওধারা ভাবতে ছেলেটার চোখ পড়ে দূরের পাইন গাছে। পাতায় জমেছে বরফ, ভারে নুয়ে পড়েছে শাখা। একসময় যে পাতাগুলো ছিল চিরসবুজ, আজ তারা হারিয়েছে প্রাকৃতিক রূপ। ছেলেটা ভাবে—তার জীবনও কি এমনই হয়ে গেছে? বরফে ঢেকে যাওয়া, রঙহীন, পরিচয়হীন এক অস্তিত্ব?
 
                        নতুন দেশ। অচেনা ভাষা। অপরিচিত মানুষ। দিনের শেষে একাকীত্ব তাকে চেপে ধরে। সুযোগ পেলেই সে আড়াল খোঁজে—ওয়াশরুমে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কাঁদে। চোখের জল যেন ভাষাহীন যন্ত্রণা। রাতের ঘুমও আজকাল বড় অপরিচিত।
আর আজ—যে ইঁদুরটা হঠাৎ ঘুম ভাঙিয়ে দিল, যে পাইন পাতায় বরফ জমেছে—তারা যেন টাইম ট্রাভেলের দরজা খুলে দিল তার সামনে।
শান্ত ছবির মতো রোজারিও শহরটা কেমন আছে? মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিটিনি এখনও তার জন্য প্রিয় ‘এমপানাদা’ নিয়ে অপেক্ষা করেন। কেমন আছে আন্তোনেলা রোকুজ্জো। ড্রিভলিং কিংবা গোলের পর উচ্ছ্বাসে হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে যে তার ভীষণ মনে পড়ে।
চিন্তার জগত অস্তমিত হতেই চোখের পাতাজোড়া এক হয়। শুরু হয় নতুন ভোর, নতুন জীবন। তিনি জানেন, যে কাতালুনিয়া শহরে তার আগমন, সেখানে ফুটবল শুধু খেলা নয়, জীবনযাপন। বার্সেলোনার লা মাসিয়া নামের এক জাদুঘরে ঠাঁই হয়েছে তার, যেখানে স্বপ্নকে বাস্তবে গড়া হয়।
সেই স্বপ্নের পথে পা বাড়িয়ে, লিওনেল মেসি হয়ে ওঠেন বিশ্ব সমাধৃত। লা মাসিয়া থেকে মূল দলে, লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ—আরও কতশত শিরোপা ট্রফি ধরা দিয়েছে তার হাতে। আর্জেন্টিনার জার্সিতেও হয়েছে দুঃখ মোচন। ২০০৬ থেকে ২০১৮-এ সময়ে চারটি বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু আঁকেন মেসি। ৮ বার ব্যালন ডি’অর, ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৮৭২ গোল—সবকিছু মিলিয়ে লিওনেল মেসি যেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি, ফুটবলের দূত।
মেসির মতো যাপিত জীবন বয়ে বেড়ানো একজন আছেন ক্রিকেটে। যার গল্পটা একই রকম না হলেও একপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছেন দু’জন। তিনি ভারত নারী দলের ব্যাটসম্যান জেমিমাহ রদ্রিগেজ। পরিশ্রমের বিপরীতে হতাশা-গ্লানি হয়ে ওঠেছিল সম্ভল। কান্নায় ভিজে যেত তার বালিশ। একেকটি রাত হয়ে ওঠেছিল হাজার রজনীর সমান। সেই জেমিমাহ সফল হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা যেভাবে মেসিকে ভাঙ্গা-গড়া থেকে উঠিয়ে সম্মান দিয়েছেন, ভারতীয় ব্যাটারও তাঁরই দেখানো পথে।
 
                        বৃহস্পতিবার নাভি মুম্বাইয়ে অনিন্দ্য সুন্দর ইনিংস উপহার দিয়েছেন জেমিমাহ। অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। পুরো বিশ্বকাপে জোয়ার-ভাটার মধ্য দিয়ে থাকা জেমিমাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিবেদন, সততা থাকলে সৃষ্টিকর্তা একদিন মুখ তুলে তাকাবেন, বিজয় মালা পরাবেন।
সেটি হয়েছে গতকাল। ২২ গজে সুনিপুণ দক্ষতায় তুলির আঁচড় চালিয়েছেন। একটু দ্রুতই চলেছে তাঁর তুলিটি। তবে জেমিমাহকে চিনতে মোটেও ভুল করেননি দর্শকরা। তিনি মাঠে নামলেন, খেললেন, হাসলেন, ভুল করলেন। আবার জেগে উঠলেন। চক্রের মতো ঘুরতে থাকলেন। শেষপর্যন্ত শিরদাঁড়া উচু করে মাঠ ছাড়লেন।
জেমিমাহর এই গল্পের আদোপ্রান্তে রয়েছে নিরবতা, রয়েছে দুঃখ, গ্লানি, হতাশা ও বাদ পড়ার বিচ্ছিরি কাহিনি। তবে তিনি দমে যাননি। নিরবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন মেসির মতো।
মেসির যেখানে শেষ, জেমিমাহর সেখানে শুরু:
আর্জেন্টাইন মহাতারকা ক্যারিয়ারের অন্তিমলগ্নে। বয়স ৩৮। হয়তো ২০২৬ বিশ্বকাপের পর বুট জোড়া তুলে রাখবেন। সেখানে ভারতের নারী দলের ব্যাটসম্যান জেমিমাহর কেবল শুরু। বয়স সবে ২৫। ক্যারিয়ারের দাপুটে সকাল। ভারতকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছেন মিডল-অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। বৃহস্পতিবার তাঁর ইনিংসে ফাইনালে ভারত।
এদিন রদ্রিগেজ তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। বার দুয়েক বিপদে পড়লেও শান্ত-ক্ষুরদার মেধায় সবই সামাল দেন। দলকে নিয়ে যান জয় বন্দরে। তার ব্যাটে ভর করে ছেলে-মেয়েদের ওয়ানডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে ভারত। ওয়ানডেতে ৩৩৮ রান তাড়া করে জয় তোলার কথা বিশ্বের কেউ যেখানে কল্পনা করতে পারতো না, সেটা করে দেখান জেমিমাহ।
 
                        নীরব প্রার্থনা:
পুরো পৃথিবী একদিকে রেখে স্পেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন মেসি। শারীরিক অসুস্থতা—গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি—যা আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছিল। সেখান থেকে উৎরাতে প্রতিরাতে ঈশ্বরের শরনাপন্ন হতেন মেসি। কান্নাভেজা কন্ঠে ফরিয়াদ করতেন—“ঈশ্বর, সব সহজ করে দাও।” চুপ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। একা থাকা, সবার চেয়ে আলাদা থাকা ছেলেটা একদিন মন জয় করলেন বিশ্বের।
জেমিমাহর জীবনে যেমনটা হয়েছে, তার কণ্ঠে—
‘আমি প্রতিদিন কেঁদেছি, উদ্বেগে ভুগেছি। প্রতিদিন নিজেকে সামলাতে হয়েছে, ঈশ্বরই আমাকে এগিয়ে নিয়েছেন। গত বছর আমাকে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তখনো আমি ফর্মে ছিলাম, কিন্তু নানা কিছু ঘটছিল। আমার চারপাশে অসাধারণ মানুষ ছিল, যারা আমাকে সহায়তা করেছে।’
স্থির থাকো, ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন:
লিওনেল মেসি যেমন বলেছিলেন, ‘সফলতা সহজে আসে না। প্রতিদিন ছোট ছোট কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই বড় লক্ষ্য অর্জন করা যায়।’ যে আর্জেন্টাইন জাদুকর হেঁটেছিলেন, তা ছিল কন্টকময়। পা ফসকালেই ছিল হারিয়ে যাওয়ার ভয়। জীবনের প্রতিটি সিঁড়ি তিনি ডিঙিয়েছেন সতর্কতার সঙ্গে। ঈশ্বরও তার সঙ্গে ছিলেন।
গতকাল নিজের ইনিংসের সময় বাইবেলের একটি বাণী মনে করে সাহস পেয়েছেন জেমিমাহ।
‘শেষের দিকে আমি শুধু একটি বাণী বলছিলাম—“স্থির থাকো, ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন।” আমি শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলাম।’
জেমিমাহ স্থির থেকেছেন। আঙুলের কড়ায় গুণে খারাপ সময় পার করেছেন। কখনও বাসে-ট্রামে-ট্রেনে, গভীর রাতে ধ্যানে বসেছেন। একাগ্রতা তাঁকে সাফল্য দিয়েছে।
পরিবার, প্রিয়জন, আস্থাভাজন:
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পর নভি মুম্বাইয়ের ভিআইপি স্ট্যান্ডে বসে থাকা পরিবারের দিকে একটি উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে বাবা এবং কোচ ইভানকে ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায় জেমিমাহকে। যারা তাঁর পথপ্রদর্শক ও শক্তি। জেমিমাহ বলেছিলেন,
‘আমি আমার মা, বাবা, কোচ এবং আমার উপর বিশ্বাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। গত মাসে এটি সত্যিই কঠিন ছিল, এটি একটি স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’
 
                        লিওনেল মেসির জীবন বদলে দেওয়ার পেছনে পরিবারের ভূমিকা ছিল অনন্য। তড়িৎ এক সিদ্ধান্তে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি। বাবা জর্জ মেসি, মা কুচ্চিটিনি থেকে শুরু করে স্ত্রী রোকুজ্জো—সবাই তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ। তিনি প্রায়শঃ বলেন, পরিবার ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব হতো না।
পারিবারিক পাশে থাকায় মেসি ফুটবল বিশ্বের আইডল, জেমিমাহ হারিয়ে যাওয়ার পর নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।
মেসির স্বপ্ন পূরণ, জেমিমাহর অপেক্ষা:
চারবার স্বপ্নভঙ্গ। অপেক্ষা যে কত দীর্ঘ তা লিওনেল মেসির চেয়ে বেশি কে জানে। একটি সময় মনে হচ্ছিল, চাঁদের নিখুঁত দাগ হারিয়েছিল মেসির জীবনে—বিশ্বকাপ না পাওয়া।
সেটি পূরণ হয়েছে ২০২২ সালে। ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ ট্রফি উপহার দেন মেসি। স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়েছে। এক জীবনে নিশ্চয়ই তার আর কিছু পাওয়ার থাকার কথা নয়।
জেমিমাহও এমন একটি স্বপ্ন উপাখ্যানের অপেক্ষায়। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে ভারত। আগের দু’বার কূলে গিয়ে ডুবে গিয়েছিল। এবার দারুণ ছন্দে থাকা দলটির প্রতিপক্ষ চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা। দেখার বিষয়, স্বপ্নের পথে নিজেকে কতটা জলাঞ্জলি দিতে পারেন জেমিমাহ। তবেই দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো যাবে, সার্থক হবে মেসির পথ ধরে হাঁটা।