
উসমান খাজাকে বাদ দেওয়া নিয়ে ক’দিন ধরেই চলছে আলোচনা। অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে ওপেনিংয়ে ট্র্যাভিস হেডের দুর্দান্ত ইনিংস আর খাজার ছন্দহীনতা নির্বাচকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। তবে বাঁ বাহি এই ব্যাটারের ওপর আরেকবার আস্থা রাখল অস্ট্রেলিয়া।
ব্রিসবেন টেস্টের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। অজি নির্বাচকরা উসমান খাজাকে বাদ দেওয়া বা অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে তাড়াহুড়ো করে ফিরিয়ে আনার চাপকে দমিয়ে স্কোয়াড দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টের জন্য অপরিবর্তিত দল ঘোষণা করেছে স্বাগতিকরা।
গুঞ্জন ছিল ব্রিসবেন টেস্টেই ফিরবেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক কামিন্স। তবে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে নিয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে নারাজ অস্ট্রেলিয়া। পিঠের চোটে পুনর্বাসন দ্রুত করার বদলে তারা সাবধানী পথ বেছে নিয়েছে।
আরও পড়ুন
| শেষ ওভারের নাটকীয়তায় পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা |
|
অনুশীলনে অবশ্য বেশ ঘাম ঝরাচ্ছেন কামিন্স। গোলাপী বলে এক ঘণ্টার নেট সেশনে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের সঙ্গে বোলিং করেছেন, তবু নির্বাচকরা সাবধানতার পথ বেছে নিয়েছেন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ প্যাট কামিন্স ব্রিসবেনে যাচ্ছেন প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে। রোববার থেকে ব্রিসবেনে স্কোয়াডের সঙ্গে একত্রিত হবেন তিনি।’
অ্যাডিলেড ওভালে ১৭ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলে ফিরতে পারেন কামিন্স। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পার্থে প্রথম টেস্ট থেকে ছিটকে যাওয়া হ্যাজলউডও ব্রিসবেনে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলে ফিরতে পারেননি।
প্রথম টেস্টে পার্থে হেডের ওপেনিংয়ে চমৎকার পারফরম্যান্সের পর অজি সমর্থকরা খাজাকে সরানোর দাবি করছিল। হেড দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন, তাঁর ওই ইনিংসেই ইংলিশরা ম্যাচ থেকে পুরোদস্তর ছিটকে যায়।
ব্রিসবেনে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে আগামী বৃহস্পতিবার।
ব্রিসবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াড :
স্টিভ স্মিথ (অধিনায়ক), স্কট বল্যান্ড, অ্যালেক্স কেয়ারি, ব্রেনডান ডগেট, ক্যামেরন গ্রিন, ট্র্যাভিস হেড, জোশ ইংলিস, উসমান খাওয়াজা, মারনাস লাবুশগনে, নাথান লায়ন, মাইকেল নেসার, মিচেল স্টার্ক, জেক ওয়েদারাল্ড, বেউ ওয়েবস্টার
No posts available.
২৮ নভেম্বর ২০২৫, ২:৪৯ পিএম
২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৭ পিএম

ক্রিকেটের তিন মোড়ল নামে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া-ভারত-ইংল্যান্ড তুলনামূলক ছোট দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে সবসময়ই অপারগতা জানিয়ে আসছে। এই যেমন সবশেষ অস্ট্রেলিয়ার কথাই ধরুন, অজিরা সবশেষ কখন জিম্বাবুয়ে সফর করেছে, সেটা জানতে হলে গুগলের আশ্রয় নিতে হবে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তবু কালেভদ্রে জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া। তবে টেস্টে ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো সংস্করণে তো দুই দলের দেখা হয় না বললেই চলে।
দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে জিম্বাবুয়ে সফর করছে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটেভিত্তিক সাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো ‘নিউজ কপ’ এর বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছে শিগগিরই জিম্বাবুয়ে-অস্ট্রেলিয়া দ্বিপক্ষীয় সিরিজের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে জিম্বাবুয়েতে অল্প সময়ের জন্য থামবে অস্ট্রেলিয়া দল, খেলবে তিনটি ওয়ানডে। সিরিজটি হবে হারারে অথবা বুলাওয়েতে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই ওয়ানডে সিরিজও নিজেদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই আয়োজন করছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া ও জিম্বাবুয়ে। ফলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে অস্ট্রেলিয়া।
আরও পড়ুন
| টিকে গেলেন খাজা, ফেরা হলো না অধিনায়কের |
|
দীর্ঘ আট বছর পর জিম্বাবুয়ে সফর করবে অস্ট্রেলিয়া। সবশেষ ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়েতে খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেবার পাকিস্তানকে নিয়ে একটি টি–টোয়েন্টি ত্রিদেশীয় সিরিজের আয়োজন করে আফ্রিকার দেশটি। আর ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল তারও আগে, ২০১৪ সালে।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট চেয়েছিল এই সফরে অন্তত একটি টেস্ট ম্যাচ রাখা হোক। তবে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৭ অ্যাশেজ পর্যন্ত ব্যস্ত টেস্ট সূচি থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এই সময়ে তারা অন্তত ১৯টি টেস্ট খেলবে।
অনেক দিন ধরেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল জিম্বাবুয়ে। লাল বলের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া-জিম্বাবুয়ের ম্যাচের অপেক্ষ আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। জিম্বাবুয়েতে অজিরা একমাত্র টেস্ট খেলেছিল ১৯৯৯ সালে। ওই টেস্টে স্টিভ ওয়াহ এর নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া ১০ উইকেটে জেতে। উইকেটকিপার ইয়ান হিলির শেষ টেস্ট ছিল সেটি।
অস্ট্রেলিয়া ও জিম্বাবুয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি টেস্ট খেলেছে। এর মধ্যে শেষ দুই ম্যাচ হয়েছিল ২০০৩ সালের অক্টোবর, ছোট একটি সিরিজে। এই সিরিজটি স্বরণীয় হয়ে আছে প্রথম টেস্টে ম্যাথু হেইডেনের ৩৮০ রানের ইনিংসের জন্য, টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন তিনি।

চট্টগ্রামে আজ সিরিজের প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১৮২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। তাড়ায় নেমে ১৮ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত সবগুলো ওভার খেলেও ১৪২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। হারে ৩৯ রানে।
এদিন তাওহীদ হৃদয় ৫০ বলে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন। দলের বাকি ব্যাটাররা মিলে করেন মাত্র ৪৯ রান। হৃদয়ের মতে, একটি বড় পার্টনারশিপ হলেই ফল অন্যরকম হত।
ম্যাচ শেষে সম্প্রচার চ্যানেলকে তিনি বলেন,
‘যদি আমাদের একটা বড় পার্টনারশিপ হতো, তাহলে খেলাটা অন্যরকম হতো। কারণ আলটিমেটলি দেখেন, আমরা খুব বেশি ব্যবধানে হারিনি। শুধু একটা পার্টনারশিপ...। আমি আর জাকির যখন ব্যাটিং করছিলাম, তখনও যদি ৭০–৮০ রানের জুটি হতো, তাহলে হয়তোবা ভিন্ন একটা সিনারিও তৈরি হতে পারত।’
বিপিএলে ওপেনিং কিংবা ওয়ান-ডাউনে খেললেও জাতীয় দলে নিচের দিকে নামতে হয় হৃদয়কে। তবে আজ তিনে নেমে খেললেন দারুণ এক ইনিংস। এ নিয়ে তিনি বলেন,
‘ক্রিকেট আমার একার খেলা না। এটা টিম গেম—এখন আমার উপরে খেলার মতো জায়গা নেই।’
এসময় আফসোস করতে দেখা যায় হৃদয়কে। তিনি বলেন,
‘আপনারা অনেকে হয়তো ভাবেন, আমি টিমে থাকার মতো না। ভাই, আমি যেখানে আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। যারা আছে, ওরা খুব ভালো টাচে আছে, খুব ভালো শেপে আছে, পারফর্মও করছে—যদি আপনারা ভালোভাবে দেখেন। এটা নিয়ে কোনো আফসোস নেই। শেষ পর্যন্ত জীবন এমনই—এটা পার্ট অফ লাইফ। চেষ্টা করি, যখন যেখানে সুযোগ পাই, যতটুকু পারি টিমকে কন্ট্রিবিউট করতে।’

ফাইনালের টিকিট কাটতে জিততেই হবে—ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগে এমন সমীকরণ নিয়েই আজ মাঠে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা। রাওয়ালপিন্ডিতে সব হিসাব চুকিয়ে দিয়েছে লঙ্কানরা। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ৬ রানে জিতেছে তারা।
এদিন আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৮৪ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০ রান, কিন্তু তারা করতে পারে মাত্র ৩ রান।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাথুম নিসাঙ্কা ৮ রানে ফিরে যান। এরপর কামিল মিশরা ও কুশল মেন্ডিস মিলে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। ২৩ বলে ৪০ রান করে আবরার আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মেন্ডিস।
৬ রান করে কুশল পেরেরা ফিরলেও মিশরা ৩৪ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ১৭তম ওভারে আবরার আহমেদের বলে মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৪৮ বলে ৭৬ রান করেন মিশরা—ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা।
শেষদিকে জানিথ লিয়ানাগের ২৪ বলে ২৪ এবং দাসুন সানাকার ১০ বলে ১৭ রানের ক্যামিওতে ১৮০ পেরোয় শ্রীলঙ্কা।
জবাব দিতে নেমে দলীয় ২৯ রানে সাহিবজাদা ফারহানকে হারায় পাকিস্তান। একই ওভারে ডাক মারতে গিয়ে ফিরে যান বাবর আজম। পরের ওভারে সাজঘরে ফেরেন সাইম আয়ুব—১৮ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফখর জামান আউট হলে চাপে পড়ে পাকিস্তান।
পঞ্চম উইকেটে সালমান আলি আগা ও উসমান খান মিলে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। উসমান ২৩ বলে ৩৩ রান করে ফিরে গেলেও আগা ৩৫ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন।
শেষ ৭ ওভারে ৮২ রান লাগত পাকিস্তানের। আগা ও মোহাম্মদ নওয়াজের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল স্বাগতিকরা। তবে ১৮তম ওভারে ১৬ বলে ২৭ রান করে নওয়াজ ফেরার পর ম্যাচে ফিরে আসে শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত ৬ রানের জয় নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে জায়গা করে নেয় লঙ্কানরা।

দল ঘোষণার আগে অধিনায়কের মতামত নেননি প্রধান নির্বাচক। শামীম পাটোয়ারীকে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বিবেচনা না করাকে মোটেও ভালভাবে দেখেননি অধিনায়ক লিটন দাস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ পূর্ব অধিনায়ক-প্রধান নির্বাচকের অবস্থানকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষ মতামত প্রকারান্তরে বাংলাদেশ দলের উপর ফেলেছে বিরূপ প্রভাব। তার প্রতিফলনই পড়েছে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে দুই ধাপ নিচে থাকা আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩৯ রানে হার দিয়ে শুরু করেছে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেট সিরিজ।
টেস্টে ২-০তে যে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে হাওয়ায় ওড়ার কথা বাংলাদেশ দলের, সেই প্রতিপক্ষের কাছে সংক্ষিপ্ত সংস্করনের ফরম্যাটের ম্যাচে কেনো এতোটা অসহায়ত্ব প্রকাশ ? এই প্রশ্নের উত্তর খঁজতে গেলে প্রথমেই নির্নিত হবে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে দুদলের মধ্যে ব্যবধান। চট্টগ্রামে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে যেখানে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে আয়ারল্যান্ডের স্কোর ৪৮/১, সেখানে বাংলাদেশের স্কোর ২০/৪! শুধু এখানেই নয়, ব্যবধান আছে আরও। ১৮১/৪ স্কোরের ইনিংসে আয়ারল্যান্ড ব্যাটাররা যেখানে ১৮টি চার-এর পাশে মেরেছে ৭টি ছক্কা, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাটারদের বাউন্ডারি ও ছক্কার সমষ্টি যথাক্রমে ৯ ও ৫। টি-টোয়েন্টিতে ডট বলও পার্থক্য নির্নায়ক। যেখানে আইরিশদের ৪৩ টি ডটের বিপরীতে বাংলাদেশের ইনিংসে ডট সংখ্যা ৪৯।
আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ যেখানে ৫টি পার্টনারশিপে যথাক্রমে ২৬ বলে ৪০, ২৪ বলে ৩১, ২৫ বলে ৩৪, ২৯ বলে ৪৪ এবং ১৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩২, সেখানে স্কোরশিটে ৭৪ উঠতে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৮ উইকেট। ৯ম উইকেট জুটিতে হৃদয়-শরিফুলের ৩১ বলে ৪৮ এবং অবিচ্ছিন্ন ১০ম জুটিতে ১২ বলে ২০ রানে স্কোর তিন অঙ্কে টেনে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ দল।
সব হারিয়ে শেষ পাওয়ার প্লে-তে অবশ্য হৃদয় ঝড়ে লড়েছে বাংলাদেশ। যে ৩০ বলে আয়ারল্যান্ডের ৫৪/১ স্কোরের বিপরীতে বাংলাদেশের স্কোর ৪৯/১।
এদিন বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজ ( ৪-০-২৩-০) ছাড়া অন্য কারো বোলিং আইরিশ ব্যাটারদের সামনে বাধাঁ হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। শরিফুল (৪-০-৪২-১), তানজিম হাসান সাকিব (৪-০-৪১-২) মার খেয়েছেন যথেষ্ট। শরিফুলের প্রথম স্পেলটি (২-০-২৬-০) ছিল ব্যয়বহুল। আর এক পেসার তানজিম হাসান সাকিবের দ্বিতীয় স্পেল (২-০-২৮-১) ছিল খরুচে।
যার মধ্যে ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যারি টেক্টরের চওড়া ব্যাটে তাকে খরচ করতে হয়েছে ১৭টি রান। বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম (৪-০-৩৭-০), লেগ স্পিনার রিশাদ (৪-০-৩৪-১) মিতব্যয়ী বোলিং করতে পারেননি।
টি-টোয়েন্টিতে চার-এর চেয়ে ছক্কা মারা কতোটা সহজ, তা জানিয়ে দিয়েছেন আইরিশ টপ অর্ডার হ্যারি টেক্টর। ৪৫ বলে ৬৯ রানের হার না মানা ইনিংসে ১টি চার এর পাশে মেরেছেন টেক্টর ৫টি ছক্কা! তার ভাই টিম টেক্টর ১৯ বলে ৩২ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৬টি চার।
১৮২ রান তাড়া করতে যেয়ে শুরুতে একটু বেশিই তাড়াহুড়া করেছে বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার এবং মিডল অর্ডার ব্যাটাররা।
বাঁ হাতি স্পিনার হামফ্রিস ( ৪-০-১৩-৪) ছড়িয়েছেন আতঙ্ক। ইনিংসের শুরুতে বল হাতে পেয়ে ৫ম ডেলিভারিতে তানজিদ হাসান তামিমকে (৫ বলে ২) মিড অনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন। এর পর এডেইর ২ ওভারের স্পেলে (২-০-৩-২) লিটন (৩ বলে ১), পারভেজ ইমন (৬ বলে ১)-কে শিকার করেছেন। দুজনেই উইকেট উপহার দিয়েছেন। লিটন হাফ হার্টেড স্কোয়ার কাট করতে যেয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দিয়েছেন ক্যাচ। পুল শটে প্রলুব্ধ হয়ে পারভেজ ইমন (৬ বলে ১) দিয়েছেন ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ। টানা ৭ বল ডট করে ৮ম বলে রানের খাতা খোলা সাইফ হাসান ম্যাকার্থিকে ক্রস ব্যাটে খেলতে যেয়ে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ফিরেছেন ( ১৩ বলে ৬)। স্কোরশিটে ১৮ উঠতে ৪ উইকেট হারানোর পর চোখে সরষের ফুল দেখাটাই স্বাভাবিক। সেখান থেকে দলকে সম্মানজনক স্কোরে টেনে নিতে প্রানান্ত চেষ্টা করেছেন তাওহিদ হৃদয়। টি-টোয়েন্টিতে ৪ ম্যাচ পর ফিফটি উদযাপনের ইনিংসে এই ফরম্যাটে সেরা ইনিংস (৫০ বলে ৭ চার, ৩ ছক্কায় ৮৩*) দিয়েছেন উপহার।
তবে তার লড়াইয়ে উদ্বুব্ধ হতে পারেননি জাকের আলী অনিক। ম্যাকার্থির বলে ডিপ থার্ডম্যানে দিয়েছেন ক্যাচ জাকের আলী (১৬ বলে ১ ছক্কায় ২০)। ইনিংসের ১৩ নম্বর ওভারটি ছিল আলোচিত। হামফ্রিসের ৯ বলের ওই ওভারে ৩টি রানই বাংলাদেশ পেয়েছে তিনটি ওয়াইড ডেলিভারি থেকে। বাকি ৬টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৩ ব্যাটার দিয়ে এসেছেন উইকেট। তানজিম সাকিব ( ৬ বলে ৫) দিয়েছেন লং অনে ক্যাচ, রিশাদ (৩ বলে ০) হয়েছেন এলবিডাব্লু, নাসুম (১ বলে ০) স্ট্যাম্পিংয়ে কাটা পড়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া থেকে মাসে ৭ হাজার ডলার বেতনে পিচ বিশেষজ্ঞ টনি হেমিংকে এনেও চট্টগ্রামে দুর্দশা কাটছে না। তার প্রেসক্রিপশনে তৈরি পিচে সর্বশেষ ৪টি টি-টোয়েন্টির সব কটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইট ওয়াশের পর আয়ারল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু বাংলাদেশের। বাউন্ডারি রোপের বাইরে দাঁড়িয়ে টনি হেমিংয়ের হতাশার ছবিটাই টিভি পর্দায় উঠেছে ফুটে।

চট্টগ্রামে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩৯ রানে হেরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকে শুরু করে এ নিয়ে টানা চারটি ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। এমন পরাজয়ের পরও লড়াই করা তাওহিদ হৃদয়ের প্রশংসাই করলেন লিটন কুমার দাস।
ম্যাচে টস জিতে আইরিশদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। হ্যারি টেক্টরের ক্যারিয়ার সেরা ৬৯ রানের সৌজন্যে ৪ উইকেটে ১৮১ রান করে আয়ারল্যান্ড। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ও শিশিরের আনাগোনা থাকায় মনে হচ্ছিল, এই রান তাড়া তেমন কঠিন হবে না।
কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে পাওয়ার প্লের মধ্যে মাত্র ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। একপ্রান্ত আগলে রেখে ৫০ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন হৃদয়। তবে সেটি শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমায়।
পরে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে লিটন বলেন, বোলাররা যদি আরও ২০-২৫ রান কম দিত তাহলে ভালো হতো দলের জন্য।
“আমাদের বোলাররা দারুণ কাজ করেছে। বিশেষ করে ফিজ। সে যেমন করে। তবু আমরা যদি আরেকটু ভালো বল করতে পারতাম, তাদের যদি আরও ২০-২৫ কম রানে আটকাতে পারতাম। কারণ উইকেটে বোলারদের জন্য সাহায্য ছিল।”
এমনিতে ব্যাটিং সহায়ক হলেও চট্টগ্রামের মাঠে ১৬০ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড শুধু একটি। আর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ কখনও ১৬৬ রানের বেশি তাড়া করে জেতেনি। তাই জিততে হলে গড়তে হতো রেকর্ড।
সেই চ্যালেঞ্জে মুখ থুবড়ে পড়েন লিটন, সাইফ হাসান, তানজিদ হাসান তামিমরা। পরে হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে দলকে বিব্রতকর অবস্থা থেকে উদ্ধার করা ইনিংস। এই ম্যাচ দিয়েই একাদশে ফিরে ৮৩ রান করে অধিনায়কেরও মন জয় করেছেন হৃদয়।
“আমি জানি চট্টগ্রামের উইকেট মাঝেমধ্যে ব্যাটিং সহায়ক থাকে বিশেষ করে যখন শিশির পড়ে। কিন্তু পাওয়ার প্লেতে এত উইকেট উইকেট হারিয়ে ফেলার পর পরের ব্যাটারদের জন্য কাজটা কঠিন। তবে দলে ফিরে হৃদয় যেভাবে খেলেছে, আমি খুব খুশি। তার পারফর্ম করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
একই মাঠে সিরিজের পরের ম্যাচ শনিবার। লিটনের বিশ্বাস, হৃদয় ধারাবাহিকতা ধরে রাখবেন ও আর ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ দল।
“আমি এখনও নিজ দলের ওপর বিশ্বাস রাখি। আমরা যদি নিজেদের সেরা খেলাটা খেলি, তাদের হারাতে পারব। তবে আমাদের সেরাটা খেলতে হবে। আবারও হৃদয়ের কথা বলতে হয়। সে দারুণ ব্যাটিং করেছে। তার কাছ থেকে সিরিজজুড়ে এমন চাই। আমরা ঘুরে দাঁড়াব আশা করি।”