অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য গতকাল দল ঘোষণা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। সাত মাস পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। দুজনই সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এই বছরের মার্চে- আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে।
কোহলি-রোহিত দলে ফিরলেও ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা ক্রিকেটার ডেভিড গাওয়ার মনে করেন, ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দেখা যাবে না এই দুই ব্যাটারকে।
ভারতীয় টিভি শো ক্রিকেট প্রেডিক্টাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গাওয়ার বলেন, ‘আমি মনে করি না, বিরাট ও রোহিত ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে খেলবেন। ঋশভ পান্ত অবশ্যই খেলবেন, যদিও তিনি আহত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। দল ভবিষ্যতের জন্য গিলের মতো তরুণদের ওপর নির্ভর করবে। এটি তার জন্য ভালো সুযোগ, ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে।'
আরও পড়ুন
আইসিসির নতুন নিয়মের প্রথম বদলি ফন হার্ডিন |
![]() |
রোহিতের বয়স এখন ৩৮, কোহলি এ বছর ৩৭-এ পা দেবেন। ইতিমধ্যে দুজনই অবসর নিয়েছেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে। অষ্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে ফেরার জন্য ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন তাঁরা। তবে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার ক্ষেত্রে বয়স ও ফিটনেসের সঙ্গে বড় বাধা হতে পারে নিয়মিত ম্যাচ না খেলা। এই দুই তাঁরকার ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে তাই সংশয় প্রকাশ করেছেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটার সুনীল গাভাস্কারও।
অল্প সংখ্যক ম্যাচ খেলা বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য বাধা হতে পারে বলে মনে করেন গাভাস্কার। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'এটা অনেকটাই নির্ভর করে আগামী কয়েক বছরে ভারত কত ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে তার ওপর। দেখুন,বছরে মাত্র সাত-আটটি ওয়ানডে খেলে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুত হওয়া সহজ না। বিরাট-রোহিত যদি বিশ্বকাপ স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে চান, তাহলে ঘরোয়া ক্রিকেটই এর সমাধান হতে পারে।'
দলে ফিরলেও টেস্টের পর ওয়ানডে অধিনায়কত্বও হারিয়েছেন রোহিত। ৫০ ওভারের সংস্করণেও দলের অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছে শুভমান গিলকে। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মদন লাল সংবাদ সংস্থা এএনআই (এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল) কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে চমৎকার বলে অভিহিত করেছেন, 'নির্বাচকদের এটি চমৎকার সিদ্ধান্ত। গিলকে অধিনায়ক করা দূরদর্শী পদক্ষেপ। তিনি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হবেন। এখন দেখার বিষয়, রোহিত শর্মা গিলের অধিনায়কত্বে কেমন পারফর্ম করেন।'
No posts available.
প্রথম দুই ম্যাচের ব্যর্থতা ঝেরে শেষটিতে আবার বিধ্বংসী রুপে হাজির সাইফ হাসান। আফগানিস্তানের বোলারদের তুলোধুনো করে ৩৮ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে জিতলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সেই স্বীকৃতি গ্রহণ করে বললেন, গত ১-২ বছর ধরে এভাবেই খেলছেন তিনি।
ঘরের মাঠে সবশেষ নেদারল্যান্ডস সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলে কামব্যাক হয়েছে সাইফের। এরপর থেকে রীতিমতো উড়ছেন তিনি।
ফেরার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ ইনিংসে ৩ ফিফটিসহ ৪৪ গড় ও ১৩৯.৩৬ স্ট্রাইক রেটে তার সংগ্রহ ৩০৮ রান। প্রতিপক্ষ বোলারদের কচুকাটা করে ১৪ চারের সঙ্গে ২৪টি ছক্কা মেরেছেন ২৬ বছর বয়সী ব্যাটার।
সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষেই ২ চারের বিপরীতে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭টি ছক্কা। ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই সাইফের কাছে জানতে চাওয়া হয় ছক্কা মারার ব্যাপারে।
উত্তরে নিজের ব্যাটিং উপভোগ করার কথা বলেন সাইফ।
“গত ১-২ বছর ধরে আমি এভাবেই খেলছি। এরকমই খেলার চেষ্টা করছি। নিজের ব্যাটিং উপভোগ করছি। এই তো।”
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৫ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৩৬০ রান, গড় ৩২.৭২! বাংলাদেশের হয়ে অন্তত ১৫ ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সাইফের গড়ই সবার ওপরে। স্ট্রাইক রেটেও (১২৬.৩১) খুব একটা পেছনে নন। অন্তত ৩০০ রান করা ব্যাটারদের মধ্যে ৬ নম্বরে তিনি।
সাইফ জানালেন, আফগান সিরিজ শুরুর আগে ফিল সিমন্সের কাছ থেকে স্পষ্ট বার্তা পেয়েছেন।
“সবশেষ টুর্নামেন্টে আমি ওপেনিংয়ে খেলেছি। এই সিরিজের আগে তিনি (ফিল সিমন্স) আমাকে পরিষ্কার বার্তা দিয়ে বলেছেন, তিন নম্বরে খেলব। তাই আমার মধ্যে স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল এবং আমি সেভাবেই খেলেছি।”
এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে সফলতা এনে দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদ। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ১১ রান খরচায় ২ উইকেট তুলে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। আট জাতির টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্মের সুবাদে আফগানদের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সুযোগ মেলে নাসুমের।
রশিদ খানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ধারাবাহিক পারফর্ম করেছেন নাসুম আহমেদ। প্রথম ম্যাচে এক উইকেট নেওয়া এই বাঁহাতি স্পিনার পরের দুই ম্যাচে তুলেছেন আরও দুটি করে। সিরিজে ৫ উইকেটে সুবাধে হয়েছেন সিরিজসেরা।
বাংলাদেশিদের মধ্যে সিরিজসেরার কাতারে তৃতীয়তে নাসুম। প্রথম স্থানটি সাকিব আল হাসানের। দেশসেরা অলরাউন্ডার লাল সবুজ জার্সিতে ৫ বার সিরিজ সেরা হয়েছেন। বর্তমান টি টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন কুমার দাস এই সম্মাননা জিতেছেন তিনবার। নাসুম আহমেদ জিতেছেন দুই বার।
নাসুম তার প্রথম সিরিজসেরার পুরস্কার জেতেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০২১ সালে। দেশের মাটিতে ৫ ম্যাচের সে সিরিজে ৮ উইকেট তুলেছিলেন। এবার তিন ম্যাচের সিরিজে তার সংগ্রহ ৫ উইকেট।
সিরিজসেরা নির্বাচিত হওয়ার পর নাসুম বলেছেন,
‘এটাই প্রথমবার নয় যে আমি এমনভাবে বোলিং করেছি। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও আমি প্রায় একই রকম বরং তার চেয়েও ভালো পারফরম্যান্স করেছি।’
শারজার উইকেট নিয়ে তিনি বলেন,
‘উইকেট কিছুটা ধীর ছিল। সেটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম এবং বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনতে চেষ্টা করেছি। সেটাই আমার লক্ষ্য ছিল এবং আমি তাতে সফল হয়েছি।’
সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়েছে আগেই। সেই অর্থে আজ আবু ধাবির শারজার ম্যাচটি ছিল আফগানিস্তানের জন্য সম্মান বাঁচানোর, বাংলাদেশের প্রতিশোধের। ২০১৮ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লাল সবুজ দলকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল আফগানরা। আজ রশিদ খানদের হোয়াইটওয়াশ করে তা কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ১৬টি তিন বা তার বেশি ম্যাচের সিরিজ খেলেছে আফগানরা। যেখানে তৃতীয় বার হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তারা।
তানজিদ হাসানের ভয় কাটিয়ে দেওয়ার পর সাইফ হাসানের অকুতোভয় অর্ধশতকে (৬৪*) ৩ ম্যাচ সিরিজের সবকটি টি টোয়েন্টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে চার উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে দুই উইকেটে জয়ের পর আজ আফগানদের বিপক্ষে লাল সবুজ দলের জয় ১২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে।
এদিন আফগানদের ১৪৪ রানের লক্ষ্যে নেমে প্রথম ওভারে বেশ সাবধানি ছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারে মুজিব উর রহমানের মেডেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ। যদিও দ্বিতীয় ওভার থেকেই মারমুখী ব্যাটিং শুরু করেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন ইমন।
পঞ্চম ওভারে উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। অভিষিক্ত বশির আহমেদ আফগানদের প্রথম আনন্দ এনে দিতে পারতেন তানজিদকে ফিরিয়ে। মিডঅনে ক্যাচ তুলেছিলেন তানজিদ। রশিদ খান ডাইভ দিয়ে এক হাতে ক্যাচটা প্রায় নিয়েছিলেন। কিন্তু মুঠোবন্দি করতে পারেননি। যদিও পরের ওভারেই সাজঘরে ফেরেন পারভেজ।
প্রথম উইকেটের পতনের পর সাইফের সঙ্গে জুটি গড়েন তানজিদ হাসান। বাংলাদেশ ওপেনার ৩৩ রানে ফিরলে জাকের আলিকে সঙ্গী করেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২ রান করা উইকেটরক্ষক ব্যাটার আজ করতে পারেন কেবল ১০। এরপর ডাক মেরে ফেরেন শামীম পাটোয়ারি।
শামীম যখন ফেরেন তখন বাংলাদেশের রান ১০৯। তখনো বন্দরে পৌঁছাতে কিছু পথ বাকি। তবে সবকিছু ঠান্ডা মাথায় সামাল দেন সাইফ হাসান। ৩৮ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যাতে ছিল ২টি চার ৭টি ছক্কা। শেষদিকে তাকে সঙ্গ দেন আগের দুই ম্যাচের ফিনিশার নুরুল হাসান।
এর আগে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারে উইকেট হারায় আফগানিস্তান। নতুন বলে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন এই বাঁহাতি পেসার। ইব্রাহিম জাদরানকে ৭ রানে ফিরিয়ে ২০ রানেই উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শরিফুল। আরেক ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে থামান নাসুম আহমেদ। ক্যাচ আউট হয়ে ফেরার আগে তিনি করতে পারেন কেবল ১২ রান।
তিনে নেমে ভালো শুরু পেয়েছিলেন সেদিকুল্লাহ অটল। উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ২৩ বলে ২৮ রান করা এই টপ অর্ডার ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
এরপর ওয়াফিউল্লাহ তারাখিল, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও মোহাম্মদ নবিরা দ্রুতই ফিরেছেন। তাতে ৮২ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসে শেষ বলে উইকেট পেলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। এরপর দুই স্পেলে করা আরও দুই ওভারে একটি করে উইকেট নিলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। তার নৈপুণ্যে মনে হচ্ছিল, আফগানিস্তানকে গুটিয়ে দেবে বাংলাদেশ।
শেষের হতাশায় সেটি সম্ভব হয়নি। তবু আফগানিস্তানের সংগ্রহ অবশ্য বেশি বড় হয়নি। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান করতে পারল তারা।
দুর্দান্ত বোলিং করলেও অবশ্য পুরো ৪ ওভার পাননি সাইফ উদ্দিন। ৩ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন ২৯ ছুঁইছুঁই এই পেস অলরাউন্ডার। তার শেষ ওভারে জাকের আলি অনিকের গ্লাভসের সামনে পড়ায় অল্পের জন্য আরেকটি উইকেট পাননি সাইফ। সাইফ উদ্দিনের ৩ উইকেট ছাড়াও নাসুম আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব নেন ২টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৩/৯ (গুরবাজ ১২, ইব্রাহিম ৭, অতল ২৮, তারাখিল ১১, রসুলি ৩২, ওমরজাই ৩, নবী ১, রশিদ ১২, আহমেদজাই ০, মুজিব ২৩*, বশির ২*; শরিফুল ৪-০-৩৩-১, নাসুম ৪-০-২৪-২, সাকিব ৪-০-২৪-২, সাইফ উদ্দিন ৩-০-১৫-৩, সাইফ ১-০-৬-০, রিশাদ ৪-০-৩৯-১)
বাংলাদেশ: ১৮ ওভারে ১৪৪/৪ (ইমন ১৪, তামিম ৩৩, সাইফ ৬৪*, জাকের ১০, শামীম ০, সোহান ১০*; মুজিব ৪-১-২৬-২, ওমরজাই ৩-০-১২-১, বশির ৩-০-৩৮-০, রশিদ ৪-১-১৩-০, আহমেদজাই ৪-০-৫০-১)
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
টস বিতর্ক, দুই অধিনায়কের হাত না মেলানো, আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত ও মশার হানা- এমন অনেক ঘটনার ম্যাচে আসল কাজটাই করে দেখিয়েছে ভারত নারী দল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৮ রানে জয় তুলে নিয়েছে হারমানপ্রীত কৌরের দল। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচের সবকটিতে হেরেছে পাকিস্তানি নন্দিনীরা।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজ নিজেদের প্রথম মুখোমুখিতে আগে ব্যাটিং করে ২৪৭ রান করে ভারত। জবাব দিতে নেমে ১৫৯ রানে থেমে যায় ফাতিমা সানার দল।
প্রথমে ব্যাটিং করে টপ-মিডল অর্ডারের দায়িত্ব সুলভ ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জ পুঁজি দাঁড় করায় ভারত। প্রতিকা রাওয়াল ও স্মৃতি মান্দানা শুরুটা এনে দেন। দুজনের উদ্বোধনী পার্টনারশিপ থেকে আসে ৪৮ রান।
স্মৃতি ফিরলেও কালক্ষেপণ করেননি তারই ওপেনিং পার্টনার প্রতিকা। দলীয় ৬৭ রানে ফেরেন তিনিও। তবে হারলান দেওল ও হারমানপ্রীত মিলে আরেকটি সুন্দর জুটি উপহার দেন। তাদের জুটি ভাঙে, ভারত অধিনায়ক ক্যাচ আউট হলে। যদিও ততক্ষণে দলের শতরান পার হয়।
উপরের সারির চার ব্যাটারের বিদায়ের পর দীপ্তি শর্মাকে নিয়ে স্কোর বড় করার পণ করেন হারলান। ব্যক্তিগত সংগ্রহের পাশাপাশি দলেরও শক্ত পুঁজির দিকে ছুটেন তিনি। তার সে যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ান রাহিম শামীম। অর্ধশতক থেকে ৪ রান আগে ফিরতে হয় হারলানকে।
ভারতের দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান ডান হাতি অলরাউন্ডার হারলানের। ৪ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় তিনি ৬৫ বলে স্কোরবোর্ডে জমা করেন ৪৬ রান।
একটা সময় মনে হচ্ছিল ভারত ২০০-২০ এর মধ্যে আটকে যাবে। সেখান থেকে দলের সংগ্রহ বড় করেন রিছা ঘোষ। ক্যামিও ইনিংস খেলে ২০ বলে ৩৫ রান করেন রিছা। ৩টি চার ও দুটি ছক্কা ছিল তার ইনিংসে। রিছা অপরাজিত ছিলেন শেষ পর্যন্ত।
পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে দিয়ানা বেগ সর্বোচ্চ চারটি উইকেট তোলেন। কোটার ১০ ওভারে ৬৯ রান খরচ করেন তিনি। সাদিয়া ইকবাল ও ফাতিমা সানার দখলে দুটি করে উইকেট।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই পাকিস্তানকে বিপদে ফেলেন মুনিবা আলি। রান আউটে কাটা পড়েন এই পাকিস্তানি ওপেনার।
তবে এই আউট নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক।
চতুর্থ ওভারের শেষ বলের ঘটনা। ক্রান্তি গৌদের ডেলিভারি মুনিবার প্যাডে লাগে। এলবিডব্লুউর জোর আবেদন জানায় ভারত। তাতে সাড়ায় দেয়নি আম্পায়ার। বল লেগ সাইডের বাইরে পিচ করেছিল বলেই মনে হচ্ছিল।
এরই মধ্যে নাটকীয় এক ঘটনার সাক্ষী হন মুনিবা। ভারতের এলবির আবেদনের মধ্যেই ক্রিজ থেকে বেরিয়ে আসেন পাকিস্তানি ওপেনার। সেই সুযোগে থ্রো করে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন দীপ্তি শর্মা। মুনিবা প্রথমে তাঁর ব্যাট মাটিতে রাখলেও বল স্ট্যাম্প লাগার সময় ব্যাট আবার উপরে উঠে যায়। টিভি স্ক্রিনের সিদ্ধান্ত ‘আউট’।
এমন ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন মুনিবা। আর পাকিস্তানি ওপেনারকে ফিরিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে ভারত। বিতর্কিত এই আউটে সীমানার বাইরে চতুর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় পাকিস্তান নারী দলের অধিনায়ক ফাতিমা সানাকে।
এরপর আরেক ওপেনার সাদাফও বাইশ গজ ছাড়েন। দলীয় ২০ রানের দলের নির্ভরযোগ্য দুই ওপেনারকে হারানোর যন্ত্রণা বুঝতে দেননি সিদরা আমিন। অপ্রতিরোধ ইনিংস উপহার দেন ডানহাতি এই ব্যাটার। টিকে ছিলেন ৩৯.৫ ওভার পর্যন্ত। ক্যাচ আউটে সাজঘরে ফেরার আগ পর্যন্ত ব্যক্তিগত সংগ্রহে জমা করেন ৮১ রান।
ক্যারিয়ারের ১২তম অর্ধশতক তোলাকালীন কখনো আলিয়া রিয়াজ, কখনোবা সিদরা নাওয়াজ-নাতালিয়া পারভিজের সঙ্গে জুটি গড়েন তিনি। কিন্তু লোয়ার এন্ডের ব্যর্থতায় ভারতের বিপক্ষে আরেকটি পরাজয় দেখতে হলো পাকিস্তানের মেয়েদের।
ভাতের বোলারদের মধ্যে দীপ্তি শর্মা ও ক্রান্তি গৌড় তিনটি করে উইকেট শিকার করেন। দুটি উইকেট ছিল স্নেহা রানার।
চিরায়ত স্পিন নির্ভরতা থেকে বের হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে পেস বিভাগে দারুণ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ দল। পেসাররা এখন এতোটাই ভালো করছেন যে, বিশ্ব ক্রিকেটেই তাদের চেয়ে ভালো নেই আর কোনো দলের পেসাররা।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত খেলা ২৪ ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের শিকার ৯১ উইকেট। ওভারপ্রতি তারা খরচ করেছেন মাত্র ৭.৮৩ রান। আইসিসির পূর্ণ সদস্য অর্থাৎ টেস্ট খেলুড়ে ১২ দেশের মধ্যে এটিই সেরা ইকোনমি রেটের রেকর্ড।
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচ খেলে নিউ জিল্যান্ডের পেসাররা ওভারপ্রতি খরচ করেছেন ৭.৯১ রান। তাদের টপকেই এক নম্বরে আছে এখন বাংলাদেশ।
এছাড়া ওভারপ্রতি ৮ রানের কম খরচ করেছে জিম্বাবুয়ের পেসাররা। ১৮ ম্যাচে তাদের পেসারদের গড়ে প্রতি ওভারে খরচ ৭.৯৬ রান।
উইকেট শিকারের হিসেবে অবশ্য এক নম্বরে পাকিস্তানের পেসাররা। চলতি বছর ২৬ ম্যাচে তাদের ১২ পেসার মিলে নিয়েছেন ৯৩ উইকেট। দুই নম্বরে থাকা বাংলাদেশের ৮ পেসার মিলে ২০২৫ সালে নিয়েছেন ৯১টি উইকেট।
চলতি বছর বাংলাদেশের স্পিনাররা ২৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৬২ উইকেট। ওভারপ্রতি তাদের খরচ ৭.৮৬ রান। অর্থাৎ উইকেট শিকার কিংবা ইকোনমি রেট- দুই দিকেই ২০২৫ সালে বাংলাদেশের স্পিনারদের চেয়ে এগিয়ে পেসাররা।
এই বছর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে উইকেট শিকারে সবার ওপরে তাসকিন আহমেদ। ১০ ইনিংসে ২১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ওভারপ্রতি খরচ ৮.৫৭ রান।
২০২৫ সালে মোস্তাফিজুর রহমান এখন পর্যন্ত ১৫ ইনিংসে ওভারপ্রতি মাত্র ৬.০৫ রান খরচায় নিয়েছেন ২০ উইকেট। তানজিম হাসান সাকিব ১৭ ইনিংসে নিয়েছেন ২০ উইকেট। ওভারপ্রতি তার খরচ ৭.৯৮ রান।