১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এম
ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো উইকেটে বাংলাদেশের মূল ক্ষতিটা হয়ে গিয়েছিল প্রথম ১৫ ওভারেই। সেখান থেকে চাপের মুখে মাহমুদউল্লাহ দারুণ এক ইনিংস খেললেও তাই বোর্ডে রান কিছু কমই জমল বাংলাদেশের। বল হাতে দুই দফায় কিছুটা আশা জাগালেও তাই রহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরিতে ম্লান হয়ে গেল সব প্রচেষ্টা। সাথে আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের অপরাজিত ফিফটি আফগানিস্তানকে এনে দিল জয়।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গেছে ৫ উইকেটে। সফরকারীদের করা ৮ উইকেটে ২৪৪ রান ১০ বল হাতে রেখেই পাড়ি দিয়েছে আফগানরা।
তিন ম্যাচের সিরিজ আফগানিস্তান জিতল ২-১ ব্যবধানে।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাটিং করা দল ২৩৫ ও ২৫২ রান নিয়েই পেয়েছে বিশাল জয়। সেই কারণেই ২৪৪ রান করার পরও জয়ের পাল্লা একটু বেশি হেলে ছিল বাংলাদেশের দিকেই। তবে প্রথম দুই ম্যাচে অল্পে ফেরা ‘ডেঞ্জারম্যান’ রহমানউল্লাহ গুরবাজ এদিক ছন্দ ফিরে পান। প্রথম ওভারেই শরিফুলকে চার মেরে হয় শুরু।
আরও পড়ুন
নাহিদ রানায় মুগ্ধ ইয়ান বিশপ, বললেন বাড়তি যত্ন নিতে |
![]() |
শরিফুলের পরের ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে ছক্কার মার। অন্যপ্রান্তে অভিষিক্ত নাহিদ রানা শুরুটা করেন ভালো, নেন মেডেন ওভারও। তবে শরিফুল গুরবাজের কাছে আরেকটি ছক্কা হজমের পর তাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন মিরাজ। গতির ঝড়ে ব্যাটারদের বারবার বিভ্রান্ত করা নাহিদই শেষ পর্যন্ত এনে দেন উইকেট। ঘন্টায় ১৫১ কি.মি. গতিতে করা এক ডেলিভারিতে ফেরান সেদিকুল্লাহ আটালকে।
মুস্তাফিজুর রহমানকে চাপে ফেলে ছক্কা মেরে আক্রমণে স্বাগত জানান গুরবাজ। তিনি ছন্দে থাকলেও রানের জন্য সংগ্রাম করা রহমত শাহ বেশিদূর যেতে পারেননি। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে তাকে থামান মুস্তাফিজুর। এরপর টানা কয়েকটি ওভারে বোলাররা রানের গতি অনেকটাই কমিয়ে আনেন। এর মাঝেই ফিফটি তুলে নেন গুরবাজ।
শুরু থেকেই অস্বস্তিতে থাকা হাশমতউল্লাহ শহিদি সাজঘরে ফেরেন মুস্তাফিজুরের শিকার হয়ে, তার আগে ২১ বলে করেন মাত্র ৬ রান। তবে এরপর খুব দ্রুতই বদলে যেতে থাকে ম্যাচের চিত্র। প্রায় প্রতি ওভারেই চার বা ছক্কা মেরে বাংলাদেশ বোলারদের চাপে ফেলে দেন গুরবাজ ও ওমারজাই।
আরও পড়ুন
আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, নাহিদ রানার অভিষেক |
![]() |
৮২ রানে থাকা অবস্থায় রান আউট প্রায় হয়েই যাচ্ছিলেন গুরবাজ, তবে সরাসরি থ্রোতে স্ট্যাম্প ভাঙতে পারেননি বদলি ফিল্ডার রিশাদ হোসেন। এরপর আগ্রাসী ব্যাটিং বজায় রেখে পা রাখেন শতকের ঘরে। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি ওয়ানডেতে।
অন্যপ্রান্তে ওমারজাইও সমান তালে ব্যাটিং করায় দ্রুতই জুটিতেও হয়ে যায় সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার আশা যখন প্রায় শেষ, তখনই হাজির মিরাজ। বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় গুরবাজের ৭ ছক্কা ও ৫ চারে সাজানো ১০১ রানের ইনিংস।
এক ওভার বাদে আঘাত হানেন নাহিদ। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল টাইমিং করতে ব্যর্থ হয়ে আকাশে তুলে দেন গুলবাদাইন নাইব। ক্যাচ নিতে ভুল হয়নি জাকেরের। তবে এরপরও পথ হারায়নি আফগানিস্তান।
চমৎকার এক ফিফটি করা ওমারজাইয়ের সাথে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি মিলে গড়ে তোলেন কার্যকরী এক জুটি, যা দ্রুতই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত তারাই মাঠ ছাড়েন দলকে জিতিয়ে। ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করা ওমারজাই অপরাজিত থাকেন ৭০ রানে। আর নবি করেন ২৭ বলে ৩৪।
এর আগে দিনের শুরুতে টস জিতে ব্যাটিং নেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মিরাজ। আগের দুই ম্যাচে তিনে নেমে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত খেলেছিলেন দারুণ দুটি ইনিংস। তার অনুপস্থিতিতে টপ অর্ডার ব্যর্থ হয় দলকে শক্ত ভিত দিতে, যদি শুরুটা দুই ওপেনার এনে দিয়েছিলেন ভালো।
প্রথম দুই ম্যাচে ত্রিশের ঘরে গিয়ে আউট হওয়া সৌম্য সরকার এই ম্যাচেও দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন। ওপেনিং জুটিতে আসে ৫৮। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের প্রথম শিকার হওয়া আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান। খুব দ্রুতই ফেরেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও৷
প্রথম দুই ম্যাচে রানে না থাকা তাওহীদ হৃদয় আরও একবার ব্যর্থ হন। শুরু থেকেই জড়তা ছিল স্পষ্ট। রশিদ খানের বলে আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে করেন মাত্র ৭ রান। এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে রান আউট হন এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে আসা জাকির হাসান।
আরও পড়ুন
মাহমুদউল্লাহ ৯৮, মিরাজ ৬৬, বাংলাদেশ ২৪৪ |
![]() |
৭২ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশের জন্য তখন দুইশ রানও মনে হচ্ছিল দীর্ঘ পথ। উইকেটের যে আচরণ প্রথম দুই ম্যাচে, তাতে জেতার জন্য আড়াইশর আশেপাশে থাকা স্কোর গড়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফর্মে থাজা মিরাজ ক্রিজে থাকলেও মাহমুদউল্লাহ সাম্প্রতিক সময়ে রানের মধ্যে ছিলেন না। তবে চাপের মুখেই তো অভিজ্ঞরা নিজেদের মেলে ধরেন।
আর ঠিক সেটাই করে দেখান মাহমুদউল্লাহ। অন্যপ্রান্তে মিরাজ অনেকটাই টেস্ট মেজাজে খেললেও তিনি শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী। চাপ কাটিয়ে তাতে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। মিরাজ ৫০ থেকে ৬০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করলেও মাহমুদউল্লাহ বজায় রাখেন ৯০ এমনকি ১০০ স্ট্রাইক রেটও।
দুজনেই পেয়ে যান ফিফটির দেখা। জুটিতেও হয়ে যায় শতক। দুই সেট ব্যাটার থাকায় বাংলাদেশের চোখ ছিল ২৬০-২৭০ রানের দিকে। তবে আজমতউল্লাহর বলে মিরাজ ৬৬ রানে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর সেই লক্ষ্যটা ক্রমেই নেমে যায়। এর মূল কারণ পরবর্তী ব্যাটারদের অবদান না রাখতে পারা।
বাংলাদেশের বাকি ইনিংস একাই টেনে নেন মাহমুদউল্লাহ। চার-ছক্কার মারে ধরে রাখেন লড়াকু স্কোরের সম্ভাবনা। সেঞ্চুরির ভালো সুযোগও তৈরি হয়েছিল। তবে ইনিংসের শেষ ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে শেষ হয় ৯৮ রানের মহামূল্যবান ইনিংস। ৯৮ বলের দারুণ এই ইনিংস ডানহাতি ব্যাটার সাজান ৭ চার ও ৩ ছক্কায়।
একদিন আগেই শেষ হওয়া প্রথম টেস্টের ঘন্টাখানেক বাদেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে৷ দলের উল্লেখযোগ্য নাম অভিজ্ঞ ওপেনার এনামুল হক বিজয়, যিনি তিন বছর পর ডাক পেয়েছেন টেস্ট দলে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজের শেষ ম্যাচের বাংলাদেশ স্কোয়াডে আরেকটি পরিবর্তন অবশ্য অনিবার্যই ছিল। পিএসএল খেলতে যাওয়া পেসার নাহিদ রানার জায়গায় এসেছেন স্পিনার তানভীর ইসলাম।
টেস্ট দলে ডাক পাওয়া বিজয় পুরষ্কার পেলেন চলমান বসুন্ধরা ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট লিগে অসাধারণ ফর্ম দেখিয়ে। সম্প্রতি স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে ৫০টি সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
টেস্টে অবশ্য বিজয়ের পরিসংখ্যান খুব আশা জাগানিয়া নয়। ৫ টেস্টে ১০ গড়ে রান মাত্র ১০০, নেই কোনো ফিফটি। শেষবার লাল বলের ক্রিকেটে তাকে দেখা গিয়েছিল ২০২২ সালের জুনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
আর তানভীর এখনও আছেন টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের।
আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতেছে জিম্বাবুয়ে।
দ্বিতীয় টেস্টের বাংলাদেশ স্কোয়াড :
নাজমুল হোসাইন শান্ত (অধিনায়ক), মাহমুদুল হাসান জয়, শাদমান ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, মমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহিদুল ইসলাম, জাকের আলি আনিক, মেহেদি হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে মুমিনুল হক আশা করছিলেন ২৭০ থেকে ৩০০ রানের লিড নেওয়ার। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তার এমন প্রত্যাশা ভুল ছিল না। তবে ব্যাটারদের সেই দায়িত্বটা তো বুঝতে হবে এবং মাঠে করে দেখাতে হবে। এর কিছুই হলো না চতুর্থ দিনে। ভালো অবস্থানে থেকেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দুইশর কম টার্গেট দিতে পারল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। পুরো ম্যাচে হতাশ করা বোলাররাও পারলেন না বিশেষ কিছু করে দেখাতে। রান তাড়ায় কিছুটা নাটকীয়তা জন্ম দেওয়ার পর রেকর্ড গড়ে স্মরণীয় এক জয় তুলে নিল জিম্বাবুয়ে।
সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ১৭৪ রানের টার্গেটে জিম্বাবুয়ে জয় তুলে নিয়েছে ৩ উইকেটের। দুই ম্যাচের সিরিজে সফরকারীরা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার শান্ত ও জাকের আলি অনিকের কাছে দলের আশা ছিল বড় একটা জুটির, যা দলকে নিয়ে যেতে পারত সুবিধাজনক অবস্থায়। তবে একরাশ হতাশারই জন্ম দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দিনের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই তাকে আউট করেন ব্লেসিং মুজারাবানি। বাউন্সারে টাইমিং না করতে পেরে লং লেগে ক্যাচ তুলে ৬০ রানে থামে শান্তর ইনিংস।
বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ভীতি সঞ্চার করার মুজারাবনি এরপর দেখা পেয়ে যান ফাইফারের। স্রেফ ১১ রানেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় মেহেদি হাসান মিরাজকে। তাইজুল ইসলামও অল্পে ফিরলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে লড়াই চালান জাকের ও হাসান মাহমুদ মিলে।
ওভারের পর হাসান কাটিয়ে দেন ব্লক করে। আর অন্যপ্রান্তে সুযোগ বুঝে রান বের করা জাকের আলি তুলে নেন ফিফটি। তবে হাসানের ওপর অতিরিক্ত বিশ্বাস রাখার কারণেই কিনা, একটা পর্যায়ে গিয়ে তাকে ওভারের পাঁচটা ডেলিভারিই খেলার ভার দিয়ে দেন জাকের। শেষ পর্যন্ত সেটাই কাল হয় দলের জন্য।
ওয়েলিংটন মাসাকাদজার পরপর দুই বলে দুই উইকেট পতনের পর দ্রুত রান বের করার চেষ্টায় ৫৮ রানে থামতে হয় দারুণ এক ইনিংস খেলা জাকেরকে। ৭২ রানে ৬ উইকেট নেন মুজারাবানি।
চতুর্থ ইনিংসে ১৭৪ বা তার বেশি রান তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে নেই। সেই কারণেই হয়ত ব্যাটিং সহায়ক এই উইকেটেও কিছুটা জয়ের আশা ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে সেটা মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি খুব একটা। প্রথম দশ ওভারে পেসার ও স্পিনাররা কেউই পারেননি ব্যাটারদের চাপে রাখতে।
উল্টো জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার রান করতে থাকেব ইতিবাচক ব্যাটিংয়েই। উইকেটের জন্য মরিয়া হওয়ার কারণেই কিনা, প্রতি ওভারেই দেখা মেলে বাজে ডেলিভারির। ফলে চার-ছক্কায় সহজেই রানের চাকা সচল রাখেন ব্যাটাররা। আর এতে দ্রুতই ম্যাচের লাগাম একেবারেই চলে যায় জিম্বাবুয়ের হাতে।
অবশেষে দলীয় শতক থেকে পাঁচ রান দূরে থাকতে আসে ব্রেকথ্রু। মিরাজের বলে মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বেন কারান। তবে তার আগে উপহার দেন ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। স্পেলে শুরু থেকেই এলোমেলো বোলিং করা আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম অন্যপ্রান্তে ছন্দ খুঁজে পান নিক ওয়েলচকে ফিরিয়ে। ২ উইকেটে ১১৭ রান নিয়ে চার বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে।
সেখান থেকে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে দরকার ছিল দ্রুত কয়েকটি উইকেট। আর মিরাজের হাত ধরে সেটা চলেও আসে। প্রথমে সিন উইলিয়ামসকে শিকারের পর ইনিংসের ৩৩তম ওভারে এনে দেন বড় উইকেট। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫৮ রান করা ব্রায়ান বেন্নেট। ১২৮ রানে প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট তুলে কিছুটা হলেও ম্যাচে ফেরার আভাস জাগে বাংলাদেশ দলে।
সেই পালে আরও হাওয়া দেন তাইজুল। লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন অভিজ্ঞ ক্রেইগ এরভিন। পরের ওভারে ফের উইকেট। দারুণ এক টার্নিং ডেলিভারিতে নায়াশা মায়াভোকে ক্লিন বোল্ড করে ইনিংসে চতুর্থ উইকেটের দেখা পান মিরাজ।
ক্রমেই জমা ওঠে ম্যাচে এরপর বাংলাদেশকে কিছুটা চাপে ফেলে ওইয়েলিংটন মাসাকাদজা। তাইজুলের পরপর দুই ওভারে ছক্কা ও চার মেরে অনেকটাই চাপ সরান। জিম্বাবুয়ের দরকার যখন আর মাত্র ১৩ রান, ঠিক তখন ফের বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে হাজির হন মিরাজ। মাসাকাদজাকে বোল্ড করে প্রাণ ফেরার স্বাগতিক শিবিরে।
তবে ওই ওভারেই চার মেরে জিম্বাবুয়েকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান রিচার্ড এনগারভা। তাইজুলের করা পরের ওভারের প্রথম বলেই আসে আরেকটি চার। খানিক বাদে ওয়েসলি মাধেভেরের আরেকটি বাউন্ডারিতে ঐতিহাসিক এক জয় নিশ্চিত হয় জিম্বাবুয়ের। বিফলে যায় মিরাজের ৫৪ রানে ৫ উইকেটের দারুণ এক স্পেল।
ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের ঘটনায় অনেকটা সময় ধরেই আইন-আদালতের মধ্য দিয়ে যাওয়া মাইকেল স্লেটার পেলেন বড় শাস্তিই। সহিংসতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় চার বছরের স্থগিত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ওপেনার।
তবে ৫৫ বছর বয়সী স্লেটারকে এযাত্রায় আর জেলে যেতে হচ্ছে না। কারণ, তিনি এরই মধ্যে জামিন না পাওয়ায় ২০২৪ সাল থেকে এক বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।
১৯৯৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৭৪টি টেস্ট খেলা স্লেটার দুটি সাধারণ আক্রমণ, একজনকে অবৈধভাবে আঘাত করা, একজনকে শারীরিক ক্ষতির জন্য আক্রমণ করা, একটি চুরির ঘটনা এবং দুটি শ্বাসরোধের অভিযোগে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন।
রায়ের বিচারক গ্লেন ক্যাশ মঙ্গলবার স্লেটারকে বলেন, “আপনি যে একজন মাদকসেবী, তা স্পষ্ট। মদ্যপান করাটা আপনার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে, আপনার পুনর্বাসন সহজ হবে না।”
২০২৪ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের একটি আদালতে জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর সেখানেই স্লেটার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর থেকেই তিনি পুলিশি হেফাজতে ছিলেন এবং এক বছরেরও বেশি সময় কাটান কারাগারেই।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আট বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে স্লেটার ৫ হাজার ৩১২ রান রান করেন। ২০০৪ সালে অবসর নেওয়ার পর তিনি ধারাভাষ্যকার হিসেবে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। প্রথমে যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ৪-এ এবং পরে অস্ট্রেলিয়ার সেভেন নেটওয়ার্কে দেখা যায় তাকে, যেখান থেকে তাকে ২০২১ সালে বাদ দেওয়া হয়।
২০২২ সালে সিডনির একটি আদালত স্লেটারকে দুটি সাধারণ আক্রমণ এবং একজন নারীকে ইভটিজিংয়ের চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। শাস্তি হিসেবে তাকে দুই বছরের কমিউনিটি কারেকশনস আদেশে দণ্ডিত করা হয়।
লিড বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটা প্রথম সেশনে কঠিন হয়ে গেল বৈরী আবহাওয়ায়। কিছুটা সহায়ক কন্ডিশনে এরপর দ্রুত কয়েকটি উইকেটে চাপ তৈরি করল জিম্বাবুয়ে। যখনই একটা জুটি জমে যাওয়ার পথে, তখনই আসল আঘাত। মুমিনুল হক ফিফটি মিস করলেও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দলকে পথ দেখালেন দারুণ এক ইনিংসে। বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে তাই কিছুটা এগিয়েই থাকল স্বাগতিকরা।
সিলেটে আগেভাগেই শেষ হয়ে যাওয়া তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের লিড ১১২ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোর দাঁড়িয়েছে ৫৭ ওভারে ৪ উইকেটে ১৯৪। ক্রিজে আছেন শান্ত (৬০*) ও জাকের আলি অনিক (২১*)।
বৃষ্টি ও ভেজা আউটফিল্ডের কারণে ভেসে যায় সকালের সেশন। ১ উইকেটে ৫৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশনে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। আগের দিন সংগ্রাম করে ব্যাট করা মাহমুদুল হাসান জয় পারেননি বেশিক্ষণ টিকতে। ব্লেসিং মুজারাবানির বাউন্সার তার গ্লাভলে লেগে জমা হয় প্রথম স্লিপে থাকা ফিল্ডারের হাতে।
৬৫ রানের জুটিতে এরপর বাংলাদেশকে আশা দেখান শান্ত ও মুমিনুল। দুজনেই সমান গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। লিডও পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ৬৫ রানের জুটি যখন ক্রমেই জমে যাচ্ছিল, তখনই আঘাত হানেন ভিক্টর নিয়াউচি। ৬ বাউন্ডারিতে ৪৭ রানে থামান মুমিনুলকে।
চা বিরতির ঠিক আগে ফের বাংলাদেশের চাপ বাড়ান মুজারাবানি। প্রথম ইনিংসের মত এই দফায়ও মাত্র চার রান করে ক্যাচ আউটে শেষ হয় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ইনিংস।
তবে একপ্রান্ত আগলে ২৬ রানে জীবন পাওয়া শান্ত তুলে নেন ফিফটি। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে সাবধানী ব্যাটিং করে জাকের আলি। বৃষ্টির কারণে আগেভাগে খেলা শেষ হওয়ার আগে তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৯ রান।
চলতি বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ব্যস্ততা খুব একটা নেই। তারপরও বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বেড়ে যাওয়ায় ২০২৫ সালে বেতন এবং ম্যাচ ফি থেকে খেলোয়াড়দের আয়ের অঙ্ক দুই কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এই বছরে আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (এফটিপি) থাকা দ্বি-পাক্ষিক সফরসূচিতে ৬ টেস্ট, ১০ ওডিআই এবং ১২ টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা বাংলাদেশের। পাশাপাপাশি সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে গ্রুপ পর্বের বাধা বেরুতে না পারলেও ৩টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।
নির্ধারিত ম্যাচগুলোর সব ক'টি খেলতে পারলে একজন ক্রিকেটার শুধু এই খাত থেকে আয় করবেন ১ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা! এই বছরটিতে বেতন এবং ম্যাচ ফি থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয়ের হাতছানি ছিল অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদের সামনে। তবে 'এ' প্লাস গ্রেডে মাসে ১০ লাখ টাকা বেতনের ক্যাটাগরিতে থাকা একমাত্র এই ক্রিকেটার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ মিস করায় তার আয়ের অঙ্ক এবার হচ্ছে না প্রত্যাশিত।
আর শুধুমাত্র লাল বলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থেকেও বেতন-ম্যাচ ফি খাত থেকে সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হকের আয় ছাড়িয়ে যাবে কোটি টাকা।
আগামী বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততা বাড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ফলে বেতন-ম্যাচ ফি খাত থেকে চুক্তিবদ্ধ এক একজন ক্রিকেটারের আয়ের হতে পারে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। আইসিসির এফটিপিতে ২০২৬ সালে ৮ টেস্ট, ২০ ওডিআই, ১২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বরাদ্দ আছে বাংলাদেশ দলের। এর সঙ্গে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারত-শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ৪ ম্যাচ এবং পরবর্তী ধাপে উত্তীর্ন হলে ক্রিকেটারদের আয়ের সীমা ছুঁয়ে ছাড়িয়ে যাবে অতীতের সব রেকর্ডকে।
বর্ধিত ম্যাচ ফি'র হিসাবে কোনো ক্রিকেটার ২০২৬ সালে সবকটি ম্যাচ খেলতে পারলে বছর শেষে ম্যাচ ফি'র অঙ্কটা দুই কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই করবে। এর সাথে বেতন থেকে বছরে কারো কারো কোটি টাকা আয়ের সুযোগ তো আছেই। এর বাইরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) এবং বিদেশে ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট থেকে মোটা অঙ্ক আয়ের সুযোগ তো থাকছে।
এক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে বছরে আয়ের হিসেবে পাঁচ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এবার পালা সাকিবের উত্তরসূরিদের। নিজেকে ফিট রেখে আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে মগ্ন থাকলে তাসকিন, নাজমুল হোসেন শান্তদের আয়ের অঙ্ক পাঁচ কোটি টাকা ছুঁয়ে যাওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।
তবে বিসিবির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের বেতন এবং ম্যাচ ফি জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক বলছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট।
“ক্রিকেটারদের বেতন এবং ম্যাচ ফি বাড়িয়ে প্রশংসা পাচ্ছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক ভাই। তবে আমি এটাকে স্বাভাবিকই বলবো। কারণ, বাংলাদেশের ক্রিকেটের ব্রান্ড ভেল্যুটা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য বেড়েছে। আইসিসি,এসিসি বিভিন্ন খাত থেকে বিসিবির আয়ের মাধ্যম ক্রিকেটাররাই।”
৩ দিন আগে
৩ দিন আগে
৩ দিন আগে
৪ দিন আগে
৪ দিন আগে
৪ দিন আগে
৬ দিন আগে
৬ দিন আগে
১৬ দিন আগে
১৬ দিন আগে
১৭ দিন আগে
২০ দিন আগে
২১ দিন আগে
২১ দিন আগে