১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৬:৩২ পিএম

ওয়ানডে বিশ্বকাপের টিকিট পেতে অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশ নারী দলের। টানা তিন জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে গেছে টাইগ্রেসরা। তবে সুযোগ থাকছে এখনো। নিজেদের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই মিলে যাবে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে লাহোরে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুতেই হারাতে হয় সোবহানা মোস্তারিকে। দলীয় ১৬ রানে ৬ রান করে ফেরেন সোবহানা। তবে দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ফারজানা হক ও শারমিন আক্তার। গড়েন ১১৮ রানের জুটি।
দারুণ এই জুটি অবশেষে ভাঙে ফারজানা বিদায় নিলে। দলীয় ১৩৪ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতনের আগে ৭৮ বলে ৪২ রান করেন তিনি। শারমিন তুলে নেন অর্ধশতক। ৭৯ বলে ৬৭ রান করে তিনি বিদায় নেন ফারজানা সাজঘরে ফেরার ঠিক দু বল পর। আর তাতেই খেই হারায় বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
| এক ইনিংসে যত রেকর্ড গড়লেন নিগার |
|
এরপরের কারো ইনিংস পার হতে পারেনি ত্রিশের ওপর। নাহিদা আক্তারের ৩৯ বলে ২৫ ও রাবেয়া খানের ২০ বলে ২৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৭ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। শেষদিকে মাত্র ১ উইকেট হাতে রেখেই পাঁচটি চার হাঁকান রাবেয়া। ৪ উইকেট শিকার করা উইন্ডিজ পেসার আলিয়াহ অ্যালেইনের করা শেষ ওভার থেকে আসে ১৭ রান। এছাড়া দুটি করে উইকেট পান হেলি ম্যাথিউস ও অ্যাফি ফ্লেচার।
২২৮ রানের টার্গেটে নেমে দলীয় ৭৪ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তাদের চাপে রেখেছিল বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট। তবে এরপর চাপ সামলে খেলতে থাকে ক্যারিবীয়রা। অধিনায়ক হেলি ম্যাথিউস ৩৩ ও স্টেফানি টেইলর করেন ৩৬ রান। শেষমেশ চিনেলে হেনরির ব্যাটে জয়ের দেখা পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ বলে অপরাজিত ৫১ রান করেন হেনরি।
৩ উইকেটে ম্যাচ জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের পক্ষে মারুফা আক্তার নেন জোড়া উইকেট। সুমনা, নাহিদা, রাবেয়া, ফাহিমা ও রিতু মনির শিকার ১ টি করে।
এই হারে টানা ৩ ম্যাচ জেতা বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপে জায়গা করার পথটা কঠিন হলো কিছুটা। শেষ ম্যাচে শনিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে নামবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে হারলেও নেট রানরেটে উতরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে জ্যোতিদের। তবে চেয়ে থাকতে হবে অন্যদের দিকে।
আরও পড়ুন
| টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে জিম্বাবুয়ে দল |
|
আসরের অন্যতম ফেভারিট দল হোস্ট পাকিস্তান। তাই ওদের সাথে জিততে ঘাম ঝড়াতে হতে পারে বাংলাদেশকে। তবে সমীকরণের মারপ্যাচে না পড়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পাকিস্তানকে হারাতেই হবে টাইগ্রেসদের।
No posts available.
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩১ পিএম
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৪৭ পিএম

স্কোরটা যখন ১১৭/৩, তখন সিলেটে স্বাগতিক দলের সমর্থকদের সে কি বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। সেখান থেকে স্কোরটা যখন হয়ে গেল ১২৫/৮, তখন নোয়াখালি এক্সপ্রেস সমর্থকদের আনন্দে স্তম্ভিত সিলেট টাইটান্স সমর্থকরা! কীভাবে এমন হলো, সেই ঘটনা বর্ণনার শুরুটা ১৬তম ওভারে জহির খানের চতুর্থ ডেলিভারীতে পারভেজ ইমনের (৪১ বলে ৬ চার, ২ ছক্কায় ৬০) আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে পারভেজ ইমন-মেহেদী হাসান মিরাজের ৬৬ বলে ৮৩ রানে স্বপ্ন দেখানো পথটা স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার উপক্রম ওই একটি আউটে। ১৮তম ওভারের শেষ তিন বলে মেহেদী হাসান রানা মিরাজ (৩৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ৩৩), নাসুম (০) এবং খালেদকে (০) শিকার করে হ্যাটট্রিক উৎসবে ফেটে পড়েন। তখন কে জানতো নোয়াখালি পেসার মেহেদী রানার হ্যাটট্রিকটা ম্লান হয়ে যাবে ? শেষ ৬ বলে ১৩ রানের টার্গেটে সিলেট টাইটান্সকে ফেলে দিয়ে জয়ের আবহ তৈরি করেছিল নোয়াখালি এক্সপ্রেস। শেষ ওভারে পেসার সাব্বির হাসান প্রথম দুই বল ইয়র্কার ডেলিভারি দিয়ে ডট পেলে জয়ের পাল্লাটা ভারীই ছিল নোয়াখালির দিকে। তবে পরের ডেলিভারিটি বিমার হলে ফ্রি হিটটাই হয়ে যায় ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ফ্রি হিটে ব্রুকস মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা মারলে প্রাণ ফিরে পায় সিলেট সমর্থকরা। পরের বলকে ব্রুকস বাউন্ডারিতে পরিণত করলে শেষ ২ বলে ২ রানের টার্গেটের মুখে দাঁড়ায়। তখনও রোমাঞ্চ পিছু ছাড়েনি। শেষ ওভারের ৫ম বলে ব্রুকস (১৩ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ১৬) রান আউটে কাঁটা পড়লে শেষ বলে ২ রানের টার্গেট দাঁড়ায়। শেষ ডেলিভারিটি সাব্বির হোসেন ওয়াইড করলে আর একবার প্রাণ ফিরে পায় সিলেট। ১ বলে ১ রানের লক্ষ্যে বোনাস ডেলিভারিতে একটি লেগ বাই রান নিয়ে সালমান ইরশাদ-আমির খান ভোঁ দৌঁড় দিয়েও থাকতে হয়েছে রিভিউ আপীলের রায় দেখা পর্যন্ত। আপীলের রায়ে নোয়াখালি এক্সপ্রেস হেরে গেলে শেষ বল রোমাঞ্চে ২ উইকেটে জিতে উৎসব করেছে সিলেট টইটান্স।
নোয়াখালি এক্সপ্রেসের ১৪৩/৭-এর জবাবে শেষ বল রোমাঞ্চে জিতেছে সিলেট টাইটান্স। দু'দলের পেসাররাই এদিন ঘুরিয়েছে ছড়ি। সিলেটের লোকাল হিরো পেসার খালেদের (৪-১-২৩-৪) জবাব দিয়েছেন নোয়াখালি এক্সপ্রেসের পেসার মেহেদী হাসান রানা (৪-০-৩৪-৪)। দু'জনেই শেষ স্পেলে ছড়িয়েছেন ভয়ংকর রূপ। খালেদের শেষ স্পেলটি ছিল ১-০-৮-২, মেহেদী হাসান রানার ১ ওভারের হ্যটট্রিকময় শেষ স্পেলটি সেখানে ১-০-৫-৩! পার্থক্যটা অবশ্য তাদের প্রথম স্পেলে। যেখানে খালেদের ২ ওভারের প্রথম স্পেলটি ২-০-৫-২, সেখানে মেহেদী হাসান রানার ২-০-২১-১।
দু'দলই ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে হারিয়েছে ৩টি করে উইকেট। এই পর্বে নোয়াখালির স্কোর ২৮/৩, সিলেটের সেখানে ৩৯/৩। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে জাকের আলী অনিক-মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ৩৯ বলে ৬৬ রানে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়েছে নোয়াখালি। সেখানে চতুর্থ উইকেট জুটিতে পারভেজ হোসেন ইমন-মেহেদী হাসান মিরাজের অবদান ৬৬ বলে ৮৩। ৫১ বলে ১ চার ৩ ছক্কায় অঙ্কনের ৬১ রানের হার না মানা ইনিংসটি ম্লান করে দিয়েছেন সিলেট টাইটান্সের পারভেজ হোসেন ইমন (৪১বলে ৬ চার ২ ছক্কায় ৬০)।
অনুশীলনে পর্যাপ্ত প্র্যাকটিস বল না পেয়ে নোয়াখালি ফ্রাঞ্চাইজিদের উপর দোষ চাপিয়ে অনুশীলন বাদ দিয়ে সিনএনজি ভাড়া করে দলকে গুডবাই জানিয়ে পরবর্তীতে রাগ অভিমান ভেঙ্গেছেন হেড কোচ সুজন, বোলিং কোচ তালহা। এই দুই কোচের ভুল ভাঙাতে শনিবার সড়কপথে ২৮৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৩২টি বাস রিজার্ভ করে নোয়াখালি থেকে সিলেটে এসেছেন একদল দর্শক। তবে দলকে সারাক্ষণ সমর্থন দিয়েও লাভ হয়নি। দেখেছেন তারা নোয়াখালি এক্সপ্রেসের টানা দ্বিতীয় হার। প্রথম ম্যাচে ফ্রাঞ্চাইজিহীন চট্টগ্রাম রয়্যালসের কাছে ৬৫ রানে হারের পর শনিবার শেষ ওভার রোমাঞ্চে সিলেট টাইটান্সের কাছে এক উইকেটে হার। সমর্থকদের সমর্থনে কিছুটা তো চাঙ্গা হয়েছে নোয়াখালি এক্সপ্রেস।

সিলেট টাইটান্সের জয়ের জন্য তিন ওভারে বাকি ২৪ রান। বোলিংয়ে এলেন মেহেদি হাসান রানা। প্রথম বলই 'নো' করে বসলেন বাঁহাতি পেসার। তবে ঘুরে দাঁড়ালেন দারুণভাবে। ওভারের শেষ তিন বলে তিনি নিলেন টানা ৩ উইকেট, করলেন হ্যাটট্রিক। একইসঙ্গে ম্যাচে ফিরল নোয়াখালী এক্সপ্রেস।
রানার হ্যাটট্রিকে পর হাসান মাহমুদও করলেন চমৎকার ওভার। শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়াল ৬ বলে ১৩ রানে। প্রথম দুই বল ডট করলেও পরেরটি 'বিমার' করে বসলেন সাব্বির হোসেন। ফ্রি হিট পেয়ে ছক্কা মেরে দিলেন ইথান ব্রুকস।
সমীকরণ নামল ৩ বলে ৬ রানে। পরের বল চার মেরে দিলেন ব্রুকস। কিন্তু পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে গেলেন তিনি। সিলেটের তখন বাকি ১ উইকেট। আর শেষ বলে করতে হবে ২ রান। ওয়াইড করলেন সাব্বির। পরের বল লেগ বাই থেকে ১ রান নিয়ে সিলেটকে জয় এনে দিলেন সালমান ইরশাদ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক নোয়াখালী এক্সপ্রেসকে ১ উইকেটে হারাল নোয়াখালী। আগে ব্যাট করে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ফিফটিতে পায় ১৪৩ রানের পুঁজি। পরে নাটকীয় ব্যাটিং ধসের পরও শেষ বলে জিতে যায় স্বাগতিক সিলেট।
বিপিএলের ইতিহাসে ১ উইকেটে ফল আসা মাত্র তৃতীয় ম্যাচ এটি। এর আগে ২০১৩ সালে সিলেট রয়্যালস ও ২০২৪ সালে রংপুর রাইডার্স জিতেছিল ১ উইকেট।
নিজেদের শহরের মাঠে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে হারলেও দ্বিতীয়টিতেই জয়ের স্বাদ পেল সিলেট। আর এই প্রথম বিপিএল খেলতে এসে পরপর দুই ম্যাচ হেরে গেল নোয়াখালী।
চরম নাটকীয় ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসের ১৮তম ওভারে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন রানা। সব মিলিয়ে বিপিএলে এটি নবম হ্যাটট্রিক। এছাড়া টি-টোয়েন্টি সংস্করণে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে হ্যাটট্রিক করা অষ্টম বোলার তিনি।
রান তাড়ায় সিলেটের শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে সাইম আইয়ুব, রনি তালুকদার ও জাকির হাসান অল্প রানে আউট হয়ে গেলে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিক দলটি।
সেখান থেকে চতুর্থ উইকেটে ৬৫ বলে ৮৩ রানের জুটি গড়েন পারভেজ হোসেন ইমন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ম্যাচে ৬৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা ইমন এবার করেন ৪১ বলে ৬০ রান। ১৬তম ওভারে জহির খানের গুগলিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি।
ইমনের ফেরা দিয়েই নামে সিলেটের ধস। রানার হ্যাটট্রিকে মাত্র ৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। সেখান থেকে সাব্বিরের এলোমেলো শেষ ওভারের সৌজন্যে ম্যাচ জিততে পারে স্বাগতিক সিলেট।
মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৩৭ বলে ৩৩ রান। শেষ ওভারের নায়ক ব্রুকস করেন ১৩ বলে ১৬ রান।
৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন রানা।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা নোয়াখালীর শুরুটাও ছিল একদম যাচ্ছেতাই। দুই ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মাজ সাদাকাত (১ বলে ০), হাবিবুর রহমান সোহান (২ বলে ০) ও হায়দার আলি (৩ বলে ০)।
সৈকত আলি ও সাব্বির চেষ্টা করেন হাল ধরতে। কিন্তু সফল হননি। ১৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৭০ রান করতে পারে নোয়াখালী। পরে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও জাকের আলি অনিক।
দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ৩৯ বলে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। অপরাজিত ইনিংসে ৫১ বলে ৬৬ রান করেন অঙ্কন। জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ২৯ রান।
আগুনঝরা বোলিংয়ে ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নোয়াখালী এক্সপ্রেস: ২০ ওভারে ১৪৩/৭ (সাদাকাত ০, সোহান ০, সৈকত ২৪, হায়দার ০, অঙ্কন ৬১, সাব্বির ১৫, জাকের ২৯, রাজা ০, হাসান ১*; আমির ৪-০-২৫-১, খালেদ ৪-১-২৩-৪, সালমান ৪-০-৩৬-০, নাসুম ৪-০-২৮-০, সাইম ৪-০-২৫-২)
সিলেট টাইটান্স: ২০ ওভারে ১৪৪/৯ (সাইম ০, রনি ৯, জাকির ১৩, ইমন ৬০, মিরাজ ৩৩, আফিফ ৩, ব্রুকস ১৬ ,নাসুম ০, খালেদ ০, আমির ১*, সালমান ১*; হাসান ৪-০-১৯-২, রানা ৪-০-৩৪-৪, রাজা ৪-০-২৪-১, সাব্বির ৩-০-২৯-০, জহির ৪-০-২৩-১, সাদাকাত ১-০-১৩-০)
ফল: সিলেট টাইটান্স ১ উইকেটে জয়ী

আগের ম্যাচে পুরো চার ওভারের কোটা শেষ করতে পারেননি। দুই ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ১০ রান। আইএল টি-টোয়েন্টিতে আজ দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে পুরো চার ওভারই করলেন সাকিব আল হাসান। আর সাকিবের এই চার ওভারে রীতিমতো হাঁসফাঁস করেছে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটররা।
৪-০-১১-১। সাকিবের বোলিং ফিগার দেখলে সহজেই বোধগম্য, তাকে খেলতে কতটা ধুঁকেছে ব্যাটাররা। চার ওভারে মাত্র ১১ রান খরচ করে ৩৮ বছর বয়সী অলরাউন্ডারের একমাত্র শিকার শায়ান জাহাঙ্গির। তাঁর করা ২৪ বলের মধ্যে ১৪ বলেই কোনো রান তুলতে পারেনি দুবাই ক্যাপিটালসের ব্যাটাররা, ইকোনমি ২.৭৫। হজম করেননি একটি বাউন্ডারিও।
এই ম্যাচে চার স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টার্ন পেয়েছেন সাকিব। বাঁ হাতি এই স্পিনারের বল ঘুরেছে ২.১ ডিগ্রির বেশি।
দলীয় পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে এসে এক স্পেলেই সব ওভার শেষ করেন সাকিব। নিজের করা প্রথম ডেলিভারিতেই উইকেট নেন তিনি। শায়ানকে ডেন মুসলির ক্যাচ বানান সাকিব। ওই ওভার থেকে মাত্র দুই রান তোলে দুবাই।
পরের ওভারে সাকিব দেন চার রান। নিজের তৃতীয় ওভারে আরও কিপটে সাকিব, তাঁর এই ওভার থেকে আসে মাত্র এক রান। তারপর চতুর্থ ওভারে চার রান দিয়ে দুর্দান্ত স্পেল শেষ করেন সাকিব আল হাসান। আএল টি-টোয়েন্টিতে এ নিয়ে পাঁচ ম্যাচে খুব একটা উইকেট শিকার করতে না পারলেও আঁটসাঁট বোলিং করেছেন সাকিব। পাঁচ ম্যাচে তাঁর বোলিং ইকোনমি ৫.৮৫।
সাকিবের দারুণ দিনে এমআই এমিরেটসের বাকি বোলাররা হাত খুলতে দেননি প্রতিপক্ষকে। আফগানিস্তানের গজানফর চার ওভারে ২৮ রান দিয়ে নিয়েছেন তিন উইকেট।

বিপিএলের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। মাঠেই হার্ট অ্যাটাক করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ মাহবুব আলি জাকি।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ মাঠে লুটিয়ে পড়েছিলেন প্রয়াত আলি মাহবুব জাকি। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সিপিআর দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর খবর আসে, মাহবুব আলী আর নেই।
সিপিআর বা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন জীবন রক্ষাকারী এক কৌশল। এটি সাধারণত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাক হলে জীবন রক্ষা করে। হঠাৎ এ রকম অসুস্থ হয়ে পড়ার সময় থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত এই সংকটাপন্ন সময়টায় কারও জীবন বাঁচানোর জন্য সিপিআর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাহবুব আলি জাকিরের হার্ট অ্যাটাকের পর তাকে চিকিৎসকরা সহ সিপিআর দেন ঢাকা ক্যাপিটালস ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের ট্রেনার ইফতেখার ইসলাম ইফতি। অ্যাম্বুলেন্সেও দেওয়া হয় সিপিআর। তবে শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে পাড়ি দেন জাকি।
গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়ের বর্ণনা দেন ইফতেখার ইসলাম ইফতি। সংবাদমাধ্যমকে ঢাকা ক্যাপিটালসের ট্রেনার বলেন,
‘ফিজিও, ট্রেইনার বা ডক্টররা ছাড়া এই জিনিস হ্যান্ডেল করার মতো অন্য কেউ নাই। ওই টিমের ফিজিও ছিলেন। দ্রুত চিকিৎসকও আসে। আমরা ফিজিও ট্রেইনাররা ঐখানে গিয়েছি। তারপর বাকি সবাইকে সরিয়ে দেই। আমরা আমাদের প্রসেস অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করেছি। তখন ওনার সেন্স ছিল। ডাক্তার পরীক্ষা করছিল। আমরা দেখতেছিলাম পাশ থেকে ভিড় সামলানোর চেষ্টা করি।’
একটা সময় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রয়াত জাকির। তবে একের পর এক সিপিআর দেওয়ার পর নাকি আবার পালস আর স্বাভাবিকভাবে শ্বাস ফেলছিলেন তিনি। ইফতি বলেন,
‘একসময় দেখা গেল যে উনার শ্বাস আর ডাক্তার পালস পাচ্ছে না। তখন তিনি ডিসিশন নিয়েছে যে সিপিআর দিতে হবে। তো তাৎক্ষণিকভাবেই ডাক্তার সিপিআর দেওয়া শুরু করে। আমরাও তো প্রস্তুত ছিলাম কারণ এক, একার পক্ষে সিপিআর দেওয়া সম্ভব না। তো ডক্টর দুইটা সিপিআর দেওয়ার পরে, দুইবার সিপিআর দেওয়ার পরে ডক্টর আমাকে ট্রান্সফার করে। তো আমি আবার পাঁচবার সিপিআর দেই। তারপরে একসময় তিনি ফিরেও আসেনল। নড়াচড়া আর শ্বাস ফেলছিলেন।’
তারপর অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও সিপিআর দিয়ে যান ইফতি সহ অন্য ট্রেনার তুষার। হাতপাতালে নেওয়ার পর জানা যায় আর নেই মাহবুব আলি জাকি।
সবার সর্বাত্মক চেষ্টার পরও জাকির মৃত্যু দুর্ভাগ্য বলছেন ইফতি,
‘আমরা ট্রেইনার ফিজিও বা চিকিৎসকরা সবসময় চেষ্টাই করি যে এই ধরনের জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা নিতে। যদি একজনকে প্রাণে বাঁচানো যায় করা যায় তাহলে এটা অনেক গর্বের বিষয় হতো। কিন্তু আসলেই আসলেই খুব দুখের ব্যাপার হচ্ছে যে মৃত্যুটা তার হয়তো লেখা ছিল। আমরা আমাদের মত করে চেষ্টা করেছি মানে যেটা চিকিৎসকের ভাষায় যেটা করা দরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, চিকিৎসকরাও চেষ্টা করেছে, তবে আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল।’

পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) পরবর্তী পর্বের জন্য দুটি নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি যুক্ত করতে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। এই দুই নতুন দলের জন্য রিজার্ভ (ফ্র্যাঞ্চাইজি) মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রত্যেক মৌসুমে ১.৩ বিলিয়ন রুপি। অর্থাৎ ১৩০ কোটি পাকিস্তানি রুপি। পিসিবির ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা পিটিআই।
পিসিবি জানিয়েছে, নতুন দুটি দলের মালিকানা বিক্রির চূড়ান্ত নিলাম অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ জানুয়ারি। এরই মধ্যে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক দরপত্র জমা দিয়েছে। নিলামে কেউ যদি নির্ধারিত অঙ্কের চেয়ে কম দর দেয়, তাহলে সেটি গ্রহণ করা হবে না।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কয়েক সপ্তাহ আগে পিসিবির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে মালিকানা ছেড়ে দেওয়া মালতান সুলতানসের সাবেক মালিকরাও নতুন দুটি দলের জন্য প্রাথমিক বিড ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন।
এদিকে মালতান সুলতানস ফ্র্যাঞ্চাইজিটির ভবিষ্যৎ মালিকানা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। জোর গুঞ্জন রয়েছে, পিসিবি অন্তত পিএসএলের একাদশ সংস্করণ পর্যন্ত দলটি নিজেই পরিচালনা করতে পারে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা পিএসএল।
পিসিবির দাবি, নতুন দুটি দলের জন্য মোট ১২টি পক্ষ প্রাথমিক দরপত্র জমা দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বিদেশি। তবে আর্থিক ও কারিগরি যাচাই-বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে যোগ্য দরদাতাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে এরই মধ্যে পিসিবি লন্ডন ও নিউইয়র্কে পিএসএল রোডশোর আয়োজন করেছে। নতুন দুটি দলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ টানাই ছিল এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে কেন্দ্রীয় রাজস্ব বণ্টনের বিষয়েও বড় ঘোষণা দিয়েছে পিসিবি। বোর্ড জানিয়েছে, আগামী পাঁচ সংস্করণের জন্য ১১তম আসর থেকে শুরু করে—প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কেন্দ্রীয় রাজস্ব তহবিল থেকে ন্যূনতম ৮৫ কোটি পাকিস্তানি রুপি দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। কোনো মৌসুমে যদি কোনো দলের প্রাপ্য অর্থ এই গ্যারান্টিকৃত অঙ্কের নিচে নেমে যায়, সে ঘাটতি পিসিবিই পূরণ করবে।
বর্তমানে পিএসএলের ছয়টি দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ভিন্ন ভিন্ন হলেও লিগ সম্প্রসারণের পর আটটি দলই কেন্দ্রীয় রাজস্ব তহবিল থেকে সমান অংশ পাবে বলে জানিয়েছে পিসিবি।
বর্তমান দলগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী, কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের মূল্য ৩৬ কোটি রুপি, পেশোয়ার জালমির ৪৮ কোটি, ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের ৪৯ কোটি, করাচি কিংসের ৬৫ কোটি, লাহোর কালান্দার্সের ৬৭ কোটি এবং মুলতান সুলতানসের মূল্য সবচেয়ে বেশি—১৮০ কোটি পাকিস্তানি রুপি।
এ ছাড়া পিসিবি জানিয়েছে, প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি পিএসএল ড্রাফটে খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে সর্বোচ্চ ১৪ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে।
মুলতান সুলতানসের সাবেক মালিক আলী তারিন আগেই পিএসএলের আর্থিক কাঠামো নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, রাজস্ব বণ্টনে বৈষম্যের কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো লোকসানের মুখে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটেই পিসিবির নতুন আর্থিক নিশ্চয়তা ও ফ্র্যাঞ্চাইজি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।