১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৯ এম

কাতালুনিয়ার বাসিন্দারা ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলে মুঠোফোনে নজর দিলেন। আরে একি, চোখ হয়ে গেল তাদের ছানাবড়া! বিস্ময়ে নিজের চোখকেই হয়তো বিশ্বাস করতে পারছিল না তারা। বার্সেলোনার ইতিহাসের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি ঘুরে গেছেন তাদের অলিতে গলিতেই, অথচ ক্ষুণাক্ষরেও সেটা টের পাননি তারা।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি তখন ফুটবলবিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। ক্যাম্প ন্যু এর সামনে হাস্যজ্বল মুখে দাড়িয়ে আছেন আর্জেন্টিনার মহাতারকা মেসি। সেই ছবি পোস্ট করে আবার এমন এক বার্তা দিলেন যে বার্সার সমর্থকরা আবার আশায় বুক বাধে নিজেদের ইতিহাসের সেরা ফুটবলারকে দেখার।
https://www.instagram.com/p/DQ3zR6-DPGm/?utm_source=ig_web_copy_link
মেসির আবেগেভরা বার্তা ছিল এমন, ‘গতরাতে আমি ফিরে গিয়েছিলাম এমন এক জায়গায়, যাকে আমি হৃদয়ের গভীর থেকে মিস করি। এমন এক জায়গা, যেখানে আমি ছিলাম অসীম সুখী; যেখানে তোমরা আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বানিয়েছিলে হাজারবার। আশা করি, একদিন আমি ফিরে আসব— শুধু বিদায় জানাতে নয়, কারণ খেলোয়াড় হিসেবে আমি কখনও সত্যিকারের বিদায় নিতে পারিনি…।’
এই ক’টি শব্দে ছিল মেসির সমস্ত ‘নস্টালজিয়া’, ভালোবাসা আর অসমাপ্ত গল্পের আখ্যান। তবে ঠিক কিভাবে চুপিসারে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বার্সায় ঘুরে গেলেন মেসি। কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই, নেই কোনো হট্টগোল, একেবারে নিঃশব্দে কি করে ‘চিরচেনা’ ঘাসের ঘ্রাণ নিয়ে আবার ফিরে গেলেন ফুটবল ইতিহাসের তর্কাতিতভাবে সেরা ফুটবলার ?
বার্সেলোনা ক্লাবের কেউই জানত না মেসির ঝটিকা সফরের কথা। ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনাও। একবারে হঠাৎ করেই মেসি উড়ে আসেন সেই শহরে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্তের’ প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক মেসির অন্যরকম বার্সায় ফেরার গল্প।
স্থানীয় সময় গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে মায়ামির ফোর্ট লডারডেল বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেট জেটে বার্সেলোনায় পোঁছান মেসি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ এবং সতীর্থ রদ্রিগো দে পল। দু’জনেই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে সোমবার স্পেনের আলিকান্তেতে অনুশীলনের কথা থাকায় একদিন আগে এসে বার্সেলোনায় কিছু সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন।
বার্সেলোনার উপকণ্ঠে কাস্তেলদেফেলস-এ নিজস্ব বাড়ি আছে মেসির। তবুও ইন্টার মায়ামির এই মহাতারকা থাকার জন্য বেছে নেন হোটেল প্রিন্সেসা সোফিয়া। তাঁর ঘর থেকেই দেখা যাচ্ছিল ক্যাম্প ন্যু। সেদিন মাত্র চার-পাঁচজন ভক্ত তাঁকে চিনতে পারেন। তারা ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো তারকা অতিথিদের জন্য নির্দিষ্ট -২ তলা দিয়ে বের হবেন। কিন্তু মেসি যেন আগের মতোই সহজ— হেঁটে বেরিয়ে আসেন প্রধান দরজা দিয়ে, যেন তিনি কোনো সাধারণ অতিথি।
সেই রাতে তিনি দে পলের সঙ্গে নৈশভোজ করেন শহরের এক পুরনো রেস্তোরাঁয়। খেলোয়াড়দের প্রিয় রেস্তোরাঁয়, যেখানে শান্ত আর ঘনিষ্ঠ পরিবেশের জন্য পরিচিত।
নৈশভোজের পর দি পলকে নিয়ে ক্যাম্প ন্যু এর দিকে যান মেসি। ‘লেস কোর্টস’ এলাকায়, স্টেডিয়ামের পাশের ফিউনারেল হোমের সামনে গাড়ি থামিয়ে মেসি নামেন। মেসির চোখ পড়ে তখন সেই ঠিকানায় যেখানে তিনি দুই দশক ধরে রচনা করেছিলেন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়গুলো।
সেই মুহূর্তে এক সমর্থক, যিনি নিয়মিত বার্সার অনুশীলন মাঠে যান, হঠাৎ করেই তাঁকে চিনে ফেলেন। উত্তেজনায় ওই মেসি ভক্ত চিৎকার করে ওঠে, ‘মেসি!’
অমায়িক মেসি তখনও হাসছেন, তিনি তাঁর সঙ্গে ছবি তোলেন, তারপর ধীরে ধীরে প্রবেশ করেন স্টেডিয়ামের ভেতরে— আবার পা রাখেন সেই মাঠে, যেখানে তিনি ফুটবলের ইতিহাসকে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। ২০২১ সালের সেই হঠাৎ, বেদনাময় বিদায়ের পর প্রথমবার তিনি ক্যাম্প ন্যুতে ফেরা। স্বয়ং মেসি ছাড়া বিশ্বের কেউ সেই অনুভূতি বুঝতে পারার কথা নয়। কি চলছিল তখন মেসির মনে ?
ক্যাম্প ন্যু থেকে ফিরে মেসি ও ডি পল চুপিচুপি আবার হোটেলে যান। কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে সকালে প্রাইভেট জেটে রওনা দেন আলিকান্তের উদ্দেশে, যেখানে এখন তাঁরা আর্জেন্টিনা দলের অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন। একটা ফেরার গল্প, ছোট্ট এই গল্পই যে নাড়া দিয়েছে কোটি বার্সা সমর্থকের হৃদয়ে। রোসারিও জাদুকর মেসি সবসময়ই থাকবে ক্যাম্প ন্যুর অংশ হয়ে, আর ক্যাম্প ন্যু থাকবে চিরকাল মেসির হৃদয়ের এক কোণে।
No posts available.
১১ নভেম্বর ২০২৫, ৩:০৮ পিএম

গত কয়েক বছরই অতিরিক্ত খেলার চাপ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে ফুটবলাররা। ক্লাব ফুটবলের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে জাতীয় দলের ম্যাচে ফুটবলারদের অবস্থা হয়েছে, ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’। ঠাসা সূচির কারণে ফুটবলারদের চোটের আঘাতেও জর্জরিত ইউরোপের ক্লাবগুলো। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয় নিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা।
গত রোববার ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ্বকাপের ফাইনালের দিন মরক্কোর রাবাটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছে ফিফার শীর্ষ কর্মকর্তারা। ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, ফিফা সেক্রেটারি জেনারেল ম্যাটিয়াস গ্রাফস্ট্রোম এবং অন্যান্য ফিফা কর্মকর্তারা ছিলেন সভায়।
সভায় ৩০টি খেলোয়াড় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত জুলাইয়ে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের প্রেক্ষাপটে ফিফা ও খেলোয়াড় ইউনিয়নের মধ্যে হওয়া ইতিবাচক আলোচনার ধারাবাহিক এটি।
সভায় অনেক সিদ্ধান্তের মধ্যে ফুটবলারদের চোট থেকে সুরক্ষায় গত জুলাইয়ের ঘোষণা অনুযায়ী নতুন নীতিমালা বাস্তবায়নে পুনঃসমর্থন জানানো হয়। চারটি প্রধান নীতিমালার মধ্যে প্রথমত দুটি ফুটবল ম্যাচের মধ্যে ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টার বিরতি নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত দুই মৌসুমের মাঝে তিন সপ্তাহের ছুটি পাবেন ফুটবলাররা। প্রতি সপ্তাহে একটি বিশ্রাম দিন এবং দীর্ঘ দূরত্বের আন্তঃমহাদেশীয় ভ্রমণ ও আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনা করা।
ফিফা প্রেসিডেন্ট সভায় বলেন, ‘ফিফায় আমরা বিশ্বজুড়ে খেলোয়াড়দের কল্যাণ ও কর্মপরিস্থিতি আরও উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বাস্তব ও অর্থবহ পদক্ষেপ গ্রহণ করে ফুটবলকে ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো করার লক্ষ্যে কাজ করছি।’
অবশ্য এখনই এসব প্রস্তাব কার্যকর হচ্ছে না। বিষয়গুলো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে আরও পরামর্শের আওতায় আসবে, বিশেষত আন্তর্জাতিক ম্যাচ ক্যালেন্ডার নিয়ে চলমান আলোচনার প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বার্সেলোনা যেন একের পর এক সংকটের কেন্দ্রবিন্দু। দীর্ঘদিনের আর্থিক সঙ্কট সামলাতে না সামলাতেই এবার তিন সাবেক খেলোয়াড়ের আইনি দাবি ঘিরে নতুন ঝড় বইছে। উসমান দেম্বেলে, সার্জিও আগুয়েরো ও থমাস হেউর্টেল— এই তিনজন ক্লাবের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের দাবি, বার্সেলোনার কাছে মোট ১৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি পাওনা তাঁরা।
দেম্বেলে ২০২৩ সালে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে যোগ দেন। তাঁর দাবি, বার্সেলোনা এখনও ১১ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করেনি। খেলোয়াড়ের এজেন্টের অভিযোগ, ২০২২ সালে নতুন চুক্তির সময় আর্থিক ফেয়ার প্লের নিয়ম সামাল দিতে ক্লাব জটিল আর্থিক কাঠামো তৈরি করে, যার ফলে দেম্বেলে প্রাপ্য অর্থ পাননি। মামলাটি ২০২৪ সালে দায়ের হয়েছে, শুনানি হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর।
আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো ২০২১ সালে হৃদরোগজনিত কারণে অবসরে যেতে বাধ্য হন। আগুয়েরোর দাবি, অবসর নেওয়ার পর ক্লাব তার প্রথম বছরের বেতন বাবদ ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধ করেনি। বার্সেলোনা জানায়, এটি বীমা কাভারের মধ্যে পড়ে। তবে আগুয়েরোর দাবি, বীমা থেকে কোনো অর্থই পাননি তিনি। এই মামলার শুনানি নির্ধারিত হয়েছে ২০২৭ সালের এপ্রিলে।
এদিকে বার্সেলোনা বাস্কেট দলের সাবেক খেলোয়াড় থমাস হেউর্টেল ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করছেন ১.৮ মিলিয়ন ডলার। তাঁর অভিযোগ, ক্লাব মৌখিকভাবে তাঁকে দলে ভেড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে চুক্তি বাতিল করে। এখনও তাঁর মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
এই তিন মামলাই বর্তমান সভাপতি জোয়ান লাপোর্তার প্রশাসনের ওপর বড় চাপ তৈরি করেছে। খেলোয়াড়দের দাবি এবং ক্লাবের আর্থিক অনিশ্চয়তা—দুই মিলিয়ে বার্সেলোনা আবারও অস্থিরতার মধ্যে।
বার্সেলোনার বর্তমান দেনা এখনও ১.১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। খরচ কমানো, বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস এবং মাঠে প্রতিযোগিতামূলক থাকা—সব মিলিয়ে লাপোর্তা প্রশাসন এমনিতেই চাপে ছিল। তার ওপর নতুন মামলাগুলো ক্লাবের সুনাম ও স্থিতিশীলতাকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
লাপোর্তা দাবি করেছেন, বড় ক্লাব পরিচালনার ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লাব যদি মামলাগুলিতে হেরে যায়, তা হলে তাৎক্ষণিক বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বার্সাকে—যা ইতিমধ্যেই নড়বড়ে আর্থিক অবস্থাকে আরও বিপদে ফেলবে।
আইনি লড়াই, আর্থিক সংকট ও প্রশাসনিক চাপ—বার্সেলোনার সামনে কঠিন সময় কাটছে। আর দেম্বেলে–আগুয়েরো–হেউর্টেলের মামলাগুলো সামনে আরও বড় ঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চোটের কারণে অনেক ফুটবলারের ক্যারিয়ার শুরু না হতেই অকাল মৃত্যু ঘটে। অনেক তরুণ প্রতিভাই চোট নামক অভিশাপের শিকার হয়ে হতাশা বাড়িয়েছেন। এই তালিকায় হয়তো যোগ হতে পারত বার্সেলোনার তারকা উইঙ্গার লামিনে ইয়ামালের নামও। তবে যথাসময়ে কাতালান ক্লাবটির চিকিৎসকের পদক্ষেপই নাকি বড় ঝুঁকি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ইয়ামালকে।
সবশেষ কয়েকটি ম্যাচেই ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন ইয়ামাল। ‘পিউবালজিয়া’ চোট থেকে ধীরে ধীরে সেরে উঠে মাঠে আলো ছড়াতে শুরু করেছেন ১৮ বছর বয়সি স্প্যানিশ ফুটবলার। চলতি মৌসুমের শুরু থেকে এই চোট তাঁর পারফরম্যান্সকে বেশ প্রভাবিত করেছে।
‘স্পোর্টস হার্নিয়া’ জনিত সমস্যার কারণে ইয়ামাল এখন পর্যন্ত পাঁচটি ম্যাচ মিস করেছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি খেলায় তাকে আগের মতো স্বচ্ছন্দ দেখায়নি। ক্রীড়াজগতে এই চোট খেলোয়াড়দের মুভমেন্ট, দ্রুত দৌড়ানো কিংবা গোল করতে শট নেওয়ার সময় তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে। চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো এবং অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের উইলিয়ামসও একই সমস্যায় ভুগছেন।
আরও পড়ুন
| ক্রিস্তিয়ানো সর্বকালের সেরা নয়, বললেন ব্রাজিলের রোনালদো |
|
গত মাসে খবর বেরিয়েছিল যে ইয়ামাল ক্লাবের বাইরে গিয়ে অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়েছিলেন। এবার স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মুন্ডো দিপোর্তিভোও জানিয়েছে, বার্সার পক্ষ থেকেও একই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বার্সেলোনার চিকিৎসক রিকার্ড প্রুনা সম্প্রতি বেলজিয়ান বিশেষজ্ঞ আর্নেস্ট শিল্ডার্সের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত ইয়ামালের চোটের ধরনের মতো ৩ হাজারেরও বেশি ভুক্তভুগিদের নিয়ে কাজ করেছেন।
বেলিজিয়ান চিকিৎসকদের কথায় স্বত্বি পাওয়ার কথা বার্সেলোনার সমর্থকদের। ইয়ামালের বর্তমান পুর্নবাসন প্রক্রিয়া—ফিজিওথেরাপি, সংশ্লিষ্ট স্থানের পেশি শক্তিশালী করার নির্দিষ্ট অনুশীলন এবং শারীরিক চাপ সীমিত রাখা—সব মিলিয়ে সঠিক পথেই চলছে।
ইয়ামালের চোট থেকে সেরা ওঠায় বড় অবদান বার্সেলোনার চিকিৎসকদেরই। শুরুতেই স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবটির চিকিৎসকরা ১০ নম্বর জার্সিধারীর সমস্যাটি শনাক্ত করতে পেরেছিল বলেই এটি দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক আকার ধারণের ঝুঁকি অনেকটা কমে গেছে।
অবশ্য বার্সার কোচিং ও মেডিক্যাল টিমকে এখনো সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে ইয়ামালকে চিকিৎসকের দেওয়া নির্দিষ্ট কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে, যাতে এই আপদ একেবারে সম্পূর্ণভাবে সমাধান হয়।
ইয়ামাল এখন আছেন স্পেন জাতীয় দলের সঙ্গে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আগামী ১৫ নভেম্বর জর্জিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর ১৯ নভেম্বর তুরস্কের মুখোমুখি হবে ইয়ামালরা।

ফুটবল ইতিহাসের সেরা কে— এই বিতর্ক যত পুরোনো, ততটাই জটিল। অনেকের মতে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোই সর্বকালের সেরা দুজন। তবে ব্রাজিলের কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও বিষয়টি দেখছেন ভিন্নভাবে।
ইএসপিএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দুবারের বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো স্পষ্ট জানিয়েছেন— ক্রিস্তিয়ানো তাঁর চোখে সর্বকালের সেরা নন। তবে রোনালদো নাজারিওর মতে, পর্তুগিজ অধিনায়ক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ১০ জন ফুটবলারের একজন।
নাজারিও বলেন, ‘ক্রিস্তিয়ানো অবিশ্বাস্য। সব পজিশন থেকে, সবভাবে গোল করেছেন। এটা সহজ নয়। তিনি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ। কিন্তু সর্বকালের সেরা? আমি একমত নই। আমি তাকে টপ ১০-এর মধ্যে রাখব।’
আরও পড়ুন
| হলান্ডের সামনে মেসির ঐতিহাসিক রেকর্ড ভাঙার হাতছানি |
|
নিজেকে নিয়ে বাড়তি মন্তব্য করা পছন্দ করেন না নাজারিও। নিজের অর্জন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমি এসব আলোচনায় অংশ নিতে পছন্দ করি না। কিছু মানুষ নিজেদের নিয়ে খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী। আমি চাই, মানুষ আমার পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলুক—আমি নিজে না।’
নাজারিওর মন্তব্যের আগে পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো নিজের ক্যারিয়ার ও উত্তরাধিকার নিয়ে কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে, নিজের সাফল্য বিশ্বকাপ জয়ের ওপর নির্ভর করে না।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্তিয়ানো বলেন, ‘বিশ্বকাপ না জিতলেও আমার অর্জন কম নয়। মানুষ বলে, ক্রিস্তিয়ানোকে বিশ্বকাপ জিততেই হবে। না। আমি দেশকে তিনটি ট্রফি এনে দিয়েছি। আগে পর্তুগালের কোনো শিরোপা ছিল না। আমি খুশি— এটাই যথেষ্ট।’
২০২৬ বিশ্বকাপ হতে পারে ক্রিস্তিয়ানোর শেষ বড় টুর্নামেন্ট—যেখানে তিনি ইতিহাস পুনর্লিখনের সুযোগ পাবেন।

লিওনেল মেসির এমন কিছু রেকর্ড রয়েছে, যেগুলো কখনো ভাঙবে কি না- সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। নামটা তাই ফুটবল ইতিহাসে আলাদা জায়গায় থাকবে মহাতারকার। তবে এবার তাঁর ঐতিহাসিক এক রেকর্ড ভাঙার হাতছানি দিচ্ছে আর্লিং ব্রড হলান্ডকে।
২০১১–১২ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে একাই ৭৩ গোল এবং আর্জেন্টিনার হয়ে আরও ৯ গোল করেছিলেন মেসি। মোট ৮২ গোল করে এক মৌসুমে সর্বাধিক গোলের অনন্য রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। সেই রেকর্ড ১৪ বছর ধরে অক্ষুন্ণ। এবার সেটি ভাঙার পথে এগোচ্ছেন হালন্ড।
ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার এই মৌসুমে গোল করে চলেছেন অবিশ্বাস্য ধারায়। পুরোনো সেই দিনে মেসিকে যিনি পথ দেখিয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা- এবার তাঁর কোচিংয়েই হলান্ড এগোচ্ছেন আরেকটি ইতিহাস গড়ার দিকে।
আরও পড়ুন
| গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইতালি দল থেকে সরে দাঁড়ালেন লিভারপুল তারকা |
|
২০২৫–২৬ মৌসুম শুরুর পর এখন পর্যন্ত ২৮ গোল করেছেন হলান্ড। এর মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটি হয়ে ১৯ গোল, নরওয়ের হয়ে ৯ গোল। সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ১৪, চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫ গোল। নরওয়ের জার্সিতে বিশ্বকাপ বাছাইযে ৮ ও প্রীতি ম্যাচে ১ গোল করেছেন হলান্ড।
হলান্ডের ১৮ ম্যাচে ২৮ গোল— গড়ে প্রতি ম্যাচে ১.৫৫ গোল। অর্থাৎ মেসির ঐতিহাসিক মৌসুমের গড়ে প্রতি ম্যাচে ১.১৯ গোলের চেয়েও এগিয়ে আছেন হলান্ড। এই গতি বজায় থাকলে মৌসুম শেষে হলান্ডের গোলসংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে ১০৬-এ পৌঁছাতে পারে, যা আধুনিক ফুটবলে অকল্পনীয়।
লিগে মেসির রেকর্ড ভাঙা কি সম্ভব? তিনি লা লিগায় করেছিলেন ৫০ গোল, যা এখনও ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। হলান্ড প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত গড়ে ১.২৭ গোল প্রতি ম্যাচে খেলছেন, এই ধারায় গেলে লিগে তাঁর হতে পারে ৪৮ গোল— মেসির রেকর্ড থেকে মাত্র দুই গোল কম।
তবে সিটির সামনে আরও ম্যাচ রয়েছে—এফএ কাপ, লিগ কাপ, আর নতুন ফরম্যাটের চ্যাম্পিয়নস লিগে সম্ভাব্য ১৭টি ম্যাচ। ফিট থাকলে হলান্ডের সামনে ম্যাচের সংখ্যা হতে পারে ৬৫ থেকে ৭৪— মেসির রেকর্ড মৌসুমের (৬৯) চেয়েও বেশি।
বাকি রইল সবচেয়ে বড় শর্ত—ফিট থাকা। দীর্ঘ মৌসুমে শারীরিক ও মানসিক চাপ সামলে এই গতি ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু মাঠে হলান্ড এখন যেন থামানোই যায় না—আত্মবিশ্বাসী, শক্তিশালী, নিষ্ঠুর নিখুঁত ফিনিশার।
মেসির রেকর্ড ভাঙা কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। হলান্ডের সামনে এখন ইতিহাসের দরজা—শুধু ফিট থেকে গতি বজায় রাখতে হবে।