৫ জুলাই ২০২৫, ৬:৫১ পিএম

শুরুটা আদর্শ না হলেও পারভেজ হোসেন ইমনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ইনিংসের প্রথম অংশটা ভালোই কাটল বাংলাদেশের। তবে তরুণ এই ব্যাটার পারলেন না ইনিংস বড় করতে। তাওহীদ হৃদয় কিছুটা লড়লেও অন্য ব্যাটারদের কেউই পারলেন সেভাবে অবদান রাখতে। শেষের দিকে দারুণ এক ক্যামিও খেললেন তানজিম হাসান সাকিব। আর এতে ভর করে সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে মোটামুটি একটা টার্গেট দিতে পারল সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ২৪৮ রানে। সর্বোচ্চ ৬৭ রান এসেছেন ইমনের ব্যাট থেকে।
বাংলাদেশের জন্য শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি। তৃতীয় ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন আগের ম্যাচে ফিফটি করা তানজিদ হাসান তামিম। আসিথা ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারি তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন মাত্র ৭ রান।
আরও পড়ুন
| তানভীরের ফাইফার, রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে টিকে রইল বাংলাদেশ |
|
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ইমন মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় উইকেটে একশ’র বেশি স্ট্রাইক রেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন এই দুজন, যেখানে বেশি ইতিবাচক ছিলেন ইমনই। জুটি যখন জমে উঠছিল, তখন অফ স্পিনার চারিথ আসালাঙ্কাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত, তার আগে ১৪ রান করেন ১৯ বলে।
তবে ছন্দময় ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার বোলারদের চাপে রাখেন ইমন৷ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশে পা রাখেন পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির পর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি। ভানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলিতে বোল্ড হয়ে থামে তার ইনিংস। তবে তার আগে তরুণ এই ওপেনার উপহার দেন ৬৯ বলে ৬৭ রানের দারুণ এক ইনিংস।
লিটন দাস একাদশের বাইরে থাকায় প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে পারেননি পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে। ৯ রানে দুশমন্থ চামিরার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ধরা পড়েন ডানহাতি এই ব্যাটার।
তাওহীদ একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করেন খোলসবন্দী হয়েই। অনেকদিজ পর ওয়ানডে দলে ফেরা শামীম হোসেন অবশ্য ছিলেন ইতিবাচক। ব্যাট করেন ১০০ স্ট্রাইট রেটে। তবে শর্ট বলের ট্র্যাপে তাকে ফেলেন আসিথা ফার্নান্দো। ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান করে।
শামীমের আউটে চাপ আরও বাড়ে বাংলাদেশের ওপর। জাকের আলি অনিককে নিয়ে সেটা মোকাবেলা করার পথে তাওহীদ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ২৫তম ব্যাটার হিসেবে ১ হাজার রানের ক্লাবে পা রাখেন। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে তার লেগেছে ৩৩ ইনিংস। তার চেয়ে চেয়ে কম ইনিংসে এই কীর্তি গড়েছেন কেবল দুই ব্যাটার, শাহরিয়ার নাফিস ও এনামুল হক বিজয়। দুজনেরই লেগেছিল ২৯ ইনিংস।
আরও পড়ুন
| এক বছরের জন্য স্থগিত হয়ে গেল ভারতের বাংলাদেশ সফর |
|
রয়েসয়ে খেলা জাকেরকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আসিথা ফের চাপে ফেলেন বাংলাদেশকে। তাওহীদের ওপর তাতে দায়িত্ব বর্তায় দলকে ভালো একটা স্কোর এনে দেওয়ার। তবে তিনিও হন ব্যর্থ, যদিও ভাগ্যকে দুষতেই পারেন তিনি।
আসিথার বলে ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন তাওহীদ। শুরুটা সাড়া দিলেও পরে ফিরে যান তানজিম হাসান সাকিব। মাঝপথে গিয়েই আর ক্রিজে ফেরার সুযোগই পাননি তাওহীদ। রান আউটে শেষ হয় তার ২ বাউন্ডারিতে সাজানো ৫১ রানের ইনিংস।
সেই সময়ে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যাবে ২২০ রানের মধ্যেই। তবে সেটা হতে দেননি তানজিম। চোখজুড়ানো সব চার-ছক্কার বাহারে ভড়কে দেন প্রতিপক্ষকে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার এক ওভারে দুই চারের পর এক লেগ স্পিনারের স্পেলের শেষ ওভারে হাঁকান দুই ছক্কা। তবে ৪৯তম ওভারেই মুস্তাফিজুরকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের ইতি টানেন হাসারাঙ্গা। ২১ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তানজিম।
No posts available.
৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:০৩ পিএম

সিরিজ জিতেছে ভারত। সিরিজে রান পেয়েছেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই তারকা ব্যাটার রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলি। সিরিজ সেরা হয়েছেন কোহলি। ভারতের ক্রিকেটভক্তদের জন্য বেশ আনন্দের মূর্হুতই বটে।
আজ বিশাখাপত্তনমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে ৯ উইকেটে জিতেছে ভারত। রোহিত-কোহলির ফিফটি আর যশস্বী জয়সওয়ালের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়াদের বলে-কয়ে হারাল স্বাগতিকরা।
শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৪৭.৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান করে। জবাবে ৬১ বল ও ৯ উইকেট বাকি রেখেই জয়ে নোঙর করে স্বাগতিকরা। ১২১ বলে ১১৬ করা যশস্বী হন ম্যাচসেরা। আর তিন ম্যাচের সিরিজে মোট দুই সেঞ্চুরি ও এক ফিফটিতে মোট ৩০২ রান করা কোহলি হন সিরিজসেরা।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বর্তমানে সাড়ে তিনশো রানও নিরাপদ নয়। আগের ম্যাচেই সেটি দেখিয়ে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে আজ নিজেরা তিনশো রানের কাছেও যেতে পারেনি। ২৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের উদ্বোধনী জুটিই বেশিরভাগ কাজ করে দিয়ে যায়। ১৫৫ বলে ১৫৫ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন রোহিত-জয়সওয়াল।
৭৩ বলে ৭৫ করা রোহিত থামেন কেশব মহারাজের বলে ম্যাথু ব্রিৎজকের তালুবন্দি হয়ে। ৭ চার ও ৩ ছয়ে ইনিংসটি সাজান ৩৮ বছর বয়সী ডানহাতি এই ওপেনার। এদিন দারুণ এক মাইফলকও স্পর্শ করেন রোহিত। ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে ২০ হাজার রানের ক্লাবে যোগ দিলেন তিনি। এ তালিকায় বাকিরা হলেন শচিন টেন্ডুলকার (৩৪৩৫৭), বিরাট কোহলি (২৭৯১০), রাহুল দ্রাবিড় (২৪২০৮)।
রোহিত ফেরার পর দ্বিতীয় উইকেটে কোহলি-জয়সওয়ালের ১২৬ রানের জুটিতে হেসেখেলে জয় পায় ভারত। চার ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পান জয়সওয়াল। ১২১ বলে ১১৬ রানের ইনিংসটি খেলতে ১২টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটার।
কোহলি ভক্তরা হয়তো খানিকটা আফসোসই করেছেন। ইশ, যদি দক্ষিণ আফ্রিকার রান আরও বেশি হতো, তবে টানা তিন ম্যাচে হয়তো সেঞ্চুরি দেখা যেত ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরার ব্যাটে। টানা দুই চারে ভারতকে জেতানো কোহলি করেছেন ৪৫ বলে ৬৫ রান। মেরেছেন ৬টি চার ও দু’টি ছক্কা।
এর আগে দীর্ঘ সময় পর টস ভাগ্য খুলে ভারতের। দীর্ঘ ২৫ মাস ও ২০ ম্যাচ পর অবশেষে ওয়ানডে টস জিতে ভারত। সবশেষ ২০২৩ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল ম্যাচের পর ওয়ানডেতে টস জিততেই যেন ভুলে গিয়েছিল ভারত। অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ২০ ম্যাচের অপেক্ষা ঘোচালেন রাহুল।
টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান রাহুল। প্রথম ওভারেই রায়ান রিকেল্টনকে ফিরিয়ে ভারতকে দারুণ সূচনা এনে দেন আর্শদ্বিপ সিং। ১ রানে এক উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ও কুইন্টন ডি-কক। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকেই ছুটছিল প্রোটিয়ারা। তবে বাভুমাকে কোহলির ক্যাচ বানিয়ে ১১৩ রানের জুটি ভেঙে ভারতকে ম্যাচে ফেরান রবীন্দ্র জাদেজা।
মিডল অর্ডারে ব্রিটজকে এবং ব্রেভিস ভাল শুরু করেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন দু’জনই। ব্রিটজকেকে(২৪) ফেরান প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা আর ব্রেভিসকে(২৯) কুলদীপ যাদব। এডেন মার্করামও ফেরেন ১ রানে।
রান করতে পারেননি কভিন বসচ এবং মার্কো জানসেনও। দক্ষিণ আফ্রিকার রান যখন ১৯৯, এক প্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরি করা ডি-কক আউট হন কৃষ্ণার বলে বোল্ড হয়ে। ৮৯ বলে ১০৬ রানের ইনিংস খেলার পথে দারুণ কয়েকটি রেকর্ডেও নাম লেখান তিনি। অবসর থেকে ফেরা এই বাঁহাতি ব্যাটার ২৩তম শতকে বিদেশের মাটিতে সর্বাধিক ওয়ানডে সেঞ্চুরির যৌথ রেকর্ড গড়েছেন। দেশের বাইরে তাঁর মোট সেঞ্চুরি এখন সাতটি। ডি ককের আগে চার ব্যাটার এই সংখ্যা ছুঁয়েছেন।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি সনাৎ জয়সুরিয়ার সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে সর্বাধিক ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাগাভাগি করলেন ডি ককের। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ২৩ ইনিংসে ৭টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে সমান সংখ্যাক শতক পাওয়া জয়সুরিয়াকে খেলতে হয়েছে ৮৫ ইনিংস। উইকেটকিপার হিসেবেও সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড স্পর্শ করলেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটার। কুমার সাঙ্গাকারার সমান ২৩টি সেঞ্চুরি তাঁর।
ডি কক ফেরার পর ৭১ রানে পাঁচ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিকে মহারাজের ২৯ বলে ২০ রানের ইনিংসে কোনমতে ২৭০ করে তাঁরা। কুলদীপ এবং প্রসিদ্ধ ৪টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন অর্শদীপ এবং জাদেজা।

আজ গ্যাবায় একটি দৃশ্যকে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের করুণ দশার প্রতীকি বলতে পারেন কেউ। প্রায়ই মাঠে অদ্ভুত কিছু দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন ক্যামেরাপার্সনরা। অ্যাশেজে এমন অনেক চমকপ্রদ ছবি আলোচনায় এসেছে আগেও। এই যেমন ব্রেট লি’কে অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফফের সান্ত্বনা, শেন ওয়ার্নের বেলকনি নাচ সহ এমন অনেক মূহূর্ত স্বরণীয় হয়ে আছে। চলতি অ্যাশেজে এবার আরেকটি মজার দৃশ্য দেখা গেল। আর এই দৃশ্যের সঙ্গে চাইলে অনেকে এবারের অ্যাশেজে বিপর্যস্ত ইংল্যান্ডের মিল খুঁজে পেতে পারেন।
দিবারাত্রির ব্রিসবেন টেস্টে আজ ৬ উইকেটে ৩৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। এরপর বড় লিড নিয়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের ছয়টি উইকেটও তুলে নিয়েছে স্টিভেন স্মিথের দল। তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডের ইনিংস হার এড়াতে এখনো প্রয়োজন ৪৩ রান। এরমধ্যে ইংলিশ পেসার জফরা আর্চার অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়ে আলোচনায় এলেন। গ্যাবায় আজ একটি বালিশ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যায় ইংলিশ গতি তারকাকে।
দিনের শুরুতে ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার আর্চার হয়তো ভেবেছিলেন যে অজিদের লোয়ার অর্ডারের ব্যাটারদের দ্রুতই ফিরিয়ে দলকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে যাবেন। তাতে হয়তো নির্ভার মনে হচ্ছিল ইংলিশ গতি তারকাকে। তবে তাকে ভুল প্রমাণ করে অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডারের ব্যাটারা দলকে এনে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ লিড।
আর্চারের বালিশ নিয়ে হেঁটে যাওয়া এই ছবি নিয়ে ইতিমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন এই ছবি তাঁর উদাসীন মনোভাবেরই পরিচয় দিচ্ছে। বল হাতেও ভালো করতে পারেননি এই গতি তারকা। ২৫ ওভারে ৮৭ রান দিয়েন মাত্র একটি উইকেট নিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন এই বালিশ কাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেন। এ তালিকায় আছে ম্যাথু হেডেনও। তাঁর দৃষ্টিতে একজন খেলোয়াড়কে বালিশ নিয়ে মাঠে আসা দেখাটা চরম আশ্চর্যের বিষয়, এবং ব্যাটারদের উচিত এমন উদাসীন মনোভাবকে কাজে লাগানো।
আর মাইকেল ভন বলছেন, দুঃখিত, এটা সত্যিই অদ্ভুত দেখাচ্ছে। যদি আমি ব্যাটার হতাম, আমি বলছি কী করব—এটার সুযোগ নিয়ে সরাসরি মন দিয়ে খেলা শুরু করব। সারাজীবন ধরে।’
তিনি আরও যোগ করেন,
‘একজন ব্যাটার হিসেবে ঠিক এমন মনোভাবই দরকার। আপনি তখন ভাববেন, “তুমি কখনও ওই বালিশে ঘুমাতে পারবে না”—এটাই হবে ব্যাটারদের জন্য সুযোগ।’
পুরো ইংল্যান্ড দলের মাঠের শরীরি ভাষারও সমালোচনা করেন ভন। তাঁর মতে স্টোকদের ক্লান্ত-বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল,
‘আমি পুরোপুরি ভিন্নভাবে কাজ করতাম। আজ এমন এক দলকে দেখছি, যাদের দেখে ক্লান্ত ও উদাসীন মনে হচ্ছিল। সুযোগ নেওয়ার কৌশল হল মনোযোগ। আপনি যদি নিয়মিত বাইরে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীল না করেন, তবে যখন সুযোগ আসে, আপনাকে পুরো মনোযোগ দিয়ে তা নিতে হবে। তার জন্য একমাত্র উপায় হলো মস্তিষ্কের যথাযথ অনুশীলন।’

গ্যাবায় অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে বল হাতে দাপট দেখানোর পর ব্যাট হাতেও ইতিহাস গড়লেন মিচেল স্টার্ক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে টেস্ট ইতিহাসে ৯ নম্বর পজিশনে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড এখন অস্ট্রেলিয়ান পেসারের দখলে।
ব্রিসবেন টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুতেই ৩৮৩ রানে ৭ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। মাইকেল নেসার আউট হওয়ার পর উইকেটে আসেন স্টার্ক। ইংল্যান্ডের চেয়ে ৪৯ রানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও লিড বাড়ানোর চাপ ছিল অস্ট্রেলিয়ার জন্য।
অ্যালেক্স ক্যারির সঙ্গে ৩৩ রানের জুটি গড়ে ইনিংস গুছিয়ে নেন স্টার্ক। ক্যারি আউট হওয়ার পর মূলত একাই দলের রান বাড়াতে থাকেন তিনি। অন্য প্রান্তে স্কট বোল্যান্ড ধরে রাখেন উইকেট।
চা বিরতির আগে চার রান দূরে ছিলেন ফিফটির। বিরতির পর উইল জ্যাকসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের ১১তম টেস্ট ফিফটি পূর্ণ করেন স্টার্ক।
দিনের শুরুতে বল হাতে ছয় উইকেট নেওয়া কীর্তি গড়েন স্টার্ক। ব্যাটিংয়েও ইংল্যান্ডকে ভোগাতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ৭৭ রানে কার্সের বলে মিড-অফে ক্যাচ তুলে দিয়ে ইনিংস শেষ করেন তিনি। তবে নামার আগে টেস্ট ক্রিকেটে নম্বার-৯ ব্যাটার হিসেবে সর্বোচ্চ রান করার কীর্তি গড়ে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার।
ব্রিসবেনে প্রথম ইনিংস শেষে ৯ নম্বর পজিশনে স্টার্কের রান হলো ১৪০৮। ১৯ রানে পেছনে ফেলেছেন সাবেক ইংলিশ তারকা স্টুয়ার্ট ব্রডকে। শুধু তা-ই নয়, এই পজিশনে সবচেয়ে বেশি ফিফটির মালিকও এখন স্টার্ক (৮), যা পরের তিনজন—গ্রায়েম সোয়ান, ড্যানিয়েল ভেট্টরি ও কিরণ মোরের (৫) চেয়ে অনেক এগিয়ে।
গাবায় অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে করে ৫১১ রান। জবাবে ইংল্যান্ড ৩৩৪ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় দিন শেষে ১৩৪/৬। দ্বিতীয় ইনিংসেও ২ উইকেট এরই মধ্যে নিয়েছেন স্টার্ক।

২০২৫ সালের শেষটা দারুণ করেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ের পর এখন দলটির সামনে বড় লক্ষ্য ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
এর আগে ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। এই বিরতিতে অলস বসে নেই জাতীয় দলের ব্যাটাররা। শনিবার থেকে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি মাঠে শুরু হয়েছে বিশেষ ব্যাটিং ক্যাম্প, যা চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রথম দিন প্রায় চার ঘণ্টার সেশনে অংশ নেন তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, সাইফ হাসান ও নুরুল হাসান সোহান। পুরো সেশন পরিচালনা করেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন ও ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল।
সেশন শেষে গণমাধ্যমে সালাহউদ্দীন জানান, ব্যাটারদের সুনির্দিষ্ট স্কিল উন্নতিই ক্যাম্পের মূল উদ্দেশ্য।
“উন্নতির আসলে শেষ নেই। আপনারা প্রায়ই বলেন আমাদের স্কিলে ঘাটতি আছে- সেটা আমরাও জানি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ব্যস্ততার কারণে কাজ করার সময় পাওয়া যায় না। এই ক্যাম্পটা খেলোয়াড়দের ঘষা-মাজার জন্য। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে ভালো শটও অনেক সময় ফিল্ডারের কাছে চলে যায়- এগুলো সামলানোর দক্ষতা বাড়ানোই লক্ষ্য।”
তিনি জানান, গ্যাপ খুঁজে ব্যাট চালানো, বোলারের গতি ব্যবহার করা, কম ঝুঁকিতে বাউন্ডারি নেওয়ার কৌশল ও সিঙ্গেলের হার বাড়ানোর দিকেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
সেশনে ব্যাটারদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে দেখা গেছে, যা কোচিং স্টাফ ইচ্ছাকৃতভাবেই উৎসাহ দেন।
“টিম মিটিংয়ে কথা বলা, আলোচনায় অংশ নেওয়া, এমনকি নিজেরাই মিটিং লিড করা- এসব করতে বলা হয়। কারণ সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে, খেলেন তো তারাই। খেলোয়াড়রা যত নেতৃত্ব নেবে, তত পরিপক্ব হবে; গেম সেন্সও তত বাড়বে।”
তিনি আরও বলেন, মাঠে তো কোচ সবসময় থাকতে পারেন না। তাই খেলোয়াড়রা যদি নিজেদের ‘নিজস্ব কোচ’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, তা হলে মাঠের পারফরম্যান্স আরও সমৃদ্ধ হবে।
টি-টোয়েন্টিতে ২০২৫ সালটি ছিল বাংলাদেশের সেরা বছর। ৩০ ম্যাচে রেকর্ড ১৫ জয়ের পাশাপাশি দলের ব্যাটাররা করেছে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২৩৯ রান। এসেছে ২৩টি অর্ধশতক, রেকর্ড ২০৬ ছক্কা, বোলাররা তুলে নিয়েছেন ১৮৮টি উইকেট।
বছরজুড়ে দলের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন জানান সালাহউদ্দীন।
“টি-টোয়েন্টিতে আমরা এখন সেই জায়গার কাছাকাছি, যেখানে যেতে চাই। বড় কোনও সাফল্য এখনো পাইনি ঠিকই। কিন্তু নিয়মিত সিরিজ খেলছি, পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছি। ব্যাটাররা তাদের ভূমিকা বুঝতে শুরু করেছে। সামনে দুই মাস যদি এভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে বিশ্বকাপের আগে দল খুব ভালো জায়গায় পৌঁছে যাবে।”

ফের ব্যর্থ ‘বাজবল’ এবার কি তবে নিজেদের দর্শন থেকে বেরিয়ে আসার সময় হলো ইংল্যান্ডের? পার্থ টেস্টের মতো ব্রিসবেন টেস্টেও একই পরিণতি দেখছে ইংলিশরা। আরও একটি বড় হার চোখ রাঙাচ্ছে তাদের। মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের টেস্ট ক্রিকেটের দর্শন।
গ্যাবায় আজ তৃতীয় দিন শেষে জয়ের সুবাস পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডকে বড় লিড ছুড়ে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের অর্ধেকের বেশি উইকেট তুলে নিয়েছে অসিরা। দিবা-রাত্রির এই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৪ রান করতে ৬ উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এখনও বেন স্টোকসের দল পিছিয়ে ৪৩ রানে। ৪ রান করে উইকেটে আছেন স্টোকস। অধিনায়ককে সঙ্গ দিচ্ছেন সমান রান করা উইল জ্যাকস।
অবিশ্বাস্য কিছু না হলে ব্রিসবেন টেস্টে সহজেই জয় পাওয়ার কথা অস্ট্রেলিয়ার। আর তাতে ইংল্যান্ড পিছিয়ে পড়বে ০-২ ব্যবধানে। আর অ্যাশেজের ১৪৩ বছরের ইতিহাসে এর আগে মাত্র একবারই কোনো দল ০-২ থেকে ফিরে এসে সিরিজ জিতেছে।
ব্রিসবেনে দ্বিতীয় দিন ক্যাচ মিসের পসরা সাজানো ইংল্যান্ড স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে সুযোগ করে দেয় লিড বাড়িয়ে নেওয়ার। ৪৪ রানে এগিয়ে থেকে আজ ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া লিড ১৭৭ করে অলআউট হয়। ৬ উইকেটে ৩৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা অজিরা থামে ৫১১ করে।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ‘বাজবলেই’ আস্থা রেখে দ্রুত রান তুলে দুই ইংলিশ ওপেনার। ৭.৪ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৪৮ রান তুলে তাঁরা। পতনের শুরুটা হয় বেন ডাকেটকে দিয়ে। ১৮ বলে ১৫ করা বাঁহাতি এই ব্যাটারের স্ট্যাম্প ছত্রখান করে দেন স্কট বোল্যান্ড।
এরপর জ্যাক ক্রলি-ওলি পোপের জুটিতেই কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে ইংল্যান্ড। দলীয় ৯০ রানে পোপে ফেরার পর শেষ হয় দ্বিতীয় উইকেটে তাদের ৪২ রানের জুটি। তারপর ৩৮ রান তুলতে চার ব্যাটারকে হারিয়েছে সফরকারীরা।
৫৯ বলে ৪৪ করা ক্রলি আউট হয়েছেন মাইকেল নাসেরের বলে। আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান জো রুট শিকার হয়েছেন মিচেল স্টার্কের। ড্রেসিংরুমের পথ ধরার আগে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ রান। ১২১ রানে ৪ উইকেট হারানো দলের বিপদে হাল ধরতে ব্যর্থ হ্যারি ব্রুক (১৫) আর জেমি স্মিথও (৪)।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে ব্রেন্ডন ডগেট ছাড়া বাকি তিন পেসার স্টার্ক, বোল্যান্ড ও নেসের জোড়া উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার সবক’টি উইকেট তুলে নিতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে ইংল্যান্ডের বোলারদের। অজিদের ১১ ব্যাটাররের সবাই দুই অঙ্ক স্পর্শ করেন। নবম উইকেটে স্টার্ক-বোল্যান্ডের ৭৫ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়ার রান পাঁচশোর কাছে নিয়ে যায়। টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থ ফিফটি করেন স্টার্ক। ব্রাইডন কার্সের বলে স্টোকসের ক্যাচ হওয়ার আগে ১৪১ বলে ৭৭ করেন তিনি। ফিফটি করা উইকেট কিপার ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি ওয়ানডে ধাঁচের ব্যাটিংয়ে করেন ৬৩ বলে ৬৯। এছাড়া লেজের দিকের ব্যাটার নেসেরের ১৬, বোল্যান্ডের অপরাজিত ২১ ও ডগেটের ১৩ রানে ভর করে বড় লিড পায় অস্ট্রেলিয়া।