২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬:৪৮ পিএম
দিনের শুরুটা দেখেই নাকি বলে যায় দিনের বাকিটা কেমন যাবে! তবে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম দশ ওভার দেখে কেউ যদি এমন ভবিষ্যতবাণী করে থাকেন, তাহলে ইনিংস শেষে চোখ কপালে তোলার দশাই হবে আপনার। মাত্র ৩৫ রানের হারিয়ে বাংলাদেশের সামনে যখন একশর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, তখনই ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হলেন তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলি অনিক। রেকর্ড গড়া এক জুটিতে খাদের কিনারা থেকে দলকে শুধু উদ্ধারই করলেন না তারা, বোলারদের এনে দিলেন লড়াকু একটা স্কোরও।
দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদশ পেয়েছে ২২৮ রানের পুঁজি। জাকের ফিফটি করে আউট হয়ে গেলেও ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে তাওহীদ দেখা পেয়েছেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের।
আরও পড়ুন
জুটির রেকর্ডে সবার ওপরে তাওহীদ-জাকের |
![]() |
দুবাইয়ে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি, সব ফরম্যাটেই পরে ব্যাটিং করা দলের জয়ের পাল্লাই বেশি ভারি। তবে কিছুটা চমকের জন্ম দিয়েই টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। চোটের কারণে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ না থাকায় দলে জায়গা হয় তরুণ ব্যাটার জাকের আলি অনিকের, যিনি সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন দুহাতে।
বাংলাদেশের ইনিংসকে দুই ভাগে ভাগ করাটাই শ্রেয়। কারণ, প্রথম দশ ওভারের ব্যাটিং দেখলে মনে হতেই পারে, এই উইকেটে ব্যাটিং করা বুঝি ভীষণ কঠিন কাজ। প্রথম ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে সাজঘরের পথ ধরেন অধিনায়ক শান্ত।
একপ্রান্তে তানজিদ হাসান তামিম চমৎকার কিছু শটে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করলেও বেশিদূর যেতে পারেননি। ২৫ বলে ৪ চারে করেন ২৫ রান। তবে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসানের ব্যর্থতায় স্রেফ ৩৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
পরপর দুই বলে দুই উইকেট নেওয়া আকসার প্যাটেলের হ্যাটট্রিকও প্রায় হয়েই যাচ্ছিক। তবে জাকেরের দেওয়া সহজ ক্যাচ স্লিপে নিতে ব্যর্থ হন রোহিত। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে মাত্র ৩৯ রান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে প্রথম দশ ওভারে সবচেয়ে বেশি উইকেট হারানোর তালিকায় এটি এখন যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে। এই তালিকায় যৌথভাবে প্রথম অবস্থানও বাংলাদেশেরই।
এই জুটির শুরুর দিকে এরপর জীবন পান তাওহীদও। কুলদীপের বলে মিড অফে ক্যাচ ফেলে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। কয়েক ওভার বাদে তার বলেই স্ট্যাম্পিং হতে হতে গিয়েও বেঁচে যান জাকের।
আরও পড়ুন
আক্সারের হ্যাটট্রিক মিস, জাকেরের ক্যাচ ফেলে রোহিতের মাতম |
![]() |
এরপরই শুরু হয় তাদের লড়াই। আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বোলারদের ওপর চড়াও হন দুই ব্যাটার। তাদের হাত ধরে একে একে আসে দলীয় ৫০ থেকে শুরু করে ১৫০ রানও। দুজনই তুলে নেন ফিফটি।
যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে দুজনের সেঞ্চুরিই মনে হচ্ছিল অনিবার্য। তবে সেটা আর হয়নি। ৪৩তম ওভারে মোহাম্মদ শামির বলে লং-অনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় জাকেরের ৬৮ রানের ইনিংস।
তবে এর আগেই তার ও তাওহীদের জুটি গড়েছে কয়েকটি রেকর্ড। তাদের দুজনের ১৫৪ রান এখন ষষ্ঠ উইকেটে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ। আগেরটি ছিল এতদিন দক্ষিণ আফ্রিকার জাস্টিন কেম্প ও মার্ক বাউচার। ২০০৬ আসরে ভারতের বিপক্ষে তারা করেছিলেন ১৩১ রান।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিও এখন তাওহীদ-জাকেরের। মজার ব্যাপার হল, ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের আগের জুটিতেও ছিল জাকেরের নাম। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি ও মাহমুদউল্লাহ মিলে যোগ করেছিলেন ১৫০ রান।
জাকেরের বিদায়ের পর ছোট তবে কার্যকর ক্যামিও উপহার দেন রিশাদ হোসেন। বাঁহাতি স্পিনার কুলদীপকে হাঁকান টানা দুই ছক্কা। তার ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান।
এরপর ঝড় তুলতে পারেননি তাওহীদ, কারণ হ্যামস্ট্রিংয়ে আঘাতের কারণে বারবার মাঠেই লুটিয়ে পড়েছেন তিনি। দৌড়ে সেভাবে রানও করতে পারেননি। তবে লড়িয়ে মানসিকতার পরিচয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করেছেন, পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখাও।
আরও পড়ুন
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিব্রতকর রেকর্ডে আবারও বাংলাদেশের নাম |
![]() |
শেষ ব্যাটার হিসেবে তাওহীদ আউট হয়েছেন ঠিক ১০০ রানেই। ১১৮ বলের ইনিংস সাজান ৬টি চার ও ২ ছক্কায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে নবম ব্যাটার হিসেবে তাওহীদ টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচেই করেছেন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে তার আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি ছিল কেবল সাবেক ওপেনার তামিম ইকবালের।
৫৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের সেরা বোলার শামি।
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ৬:৫৯ পিএম
পদচ্যুত সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পরিষদ গত এক যুগ ধরে সীমাহীন আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়ম এতোদিন আড়ালে ছিল। আওয়ামী লীগ শাসনামলের সর্বশেষ টানা তিন মেয়াদে পাপন-মল্লিকদের দুর্ণীতি-অনিয়ম নিয়ে 'টু' শব্দ করেনি কেউ। বিসিবির পরিচালনা পরিষদের নির্দেশে অর্থ বিভাগও অতি গোপনীয় রেখেছিল আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব।
গত বছরের ৮ অক্টেবর দুদকের বিসিবির বিভিন্ন খাতে আর্থিক অনিয়ম এবং দুর্নীতি নিয়ে ২৮ পৃষ্ঠার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক)। সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১১ মার্চ অভিযোগ গৃহিত করে উপপরিচালক সাইদুজ্জামানকে দলনেতা করে এসব অভিযোগ উচ্চতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দুদক। গত ১৫ এপ্রিল দুদকের দুই সহকারী পরিচালক মাহামুদুল হাসানও আল আমিনের নেতৃত্বে গঠিত দুদকের টিম বিসিবির হিসাব বিভাগ থেকে বিপিএলের টিকিট বিক্রি এবং মুজিব শতবর্ষের কনসার্টে আর্থিক দুর্ণীতির প্রমান পেয়েছে। তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের ৯টি আসরকে প্রহসনে পরিণত করার কারণও উদঘাটন করেছে ওই টিম।
গতকাল উপ-পরিচালক সাইদুজ্জামান সাক্ষরিত চিঠিতে দুদক বিসিবিকে আরও একটি নোটিশ পাঠিয়েছে। বিসিবির সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজনকে দেয়া নোটিশে ২৭টি খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম চিহ্নিত করেছে দুদক। যার মধ্যে পূর্বাচলে স্টেডিয়ামে নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ এবং ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছে দুদক।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসিকে সম্পৃক্ত না করে পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পপুলাসকে ৬.৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ করে দুদকের আতশি কাঁচে এখন বিসিবি। বিপিএলে নীট মুনাফা থেকে ১১৬ কোটি টাকা উধাও হওয়া এবং বিদেশী কোচদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং তাদের পেছনে খরচের অসঙ্গতি নিয়েও দুদক অনুসন্ধানে নেমেছে।
পাপন আমলে আয়-ব্যয়ের সকল অডিট রিপোর্ট, আইসিসি-এসিসি থেকে প্রাপ্ত অনুদান, লজিস্টিকস খরচ, বিপিএলের আয়-ব্যয়ের সকল রেকর্ড, বিপিএল পরিচালনার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সকল তথ্য, ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০-এ আয়-ব্যয়ের হিসাব, এ আর রহমানের কনসার্টের সকল পেপার্স, লোক দেখানো তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট, বিসিবিতে পাপন আমলে যে সমস্ত অডিট ফার্মকে দিয়ে নীরিক্ষা রিপোর্ট করানো হয়েছে তাদের যাবতীয় তথ্য, এজিএম-এর খরচ, বিসিবি পরিচালকদের বিদেশ সফরের খরচ, হেলিকপ্টারের খরচ, স্টেডিয়াম শোভাবর্ধন এবং সংস্কার খরচ, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিপিএলের খরচ, আয়ারল্যান্ড সফরে সিকিউরিটি প্রোভাইডারের পেছনে খরচ, কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের মতো ঘটনার বিস্তারিত জানতে চেয়েছে দুদক।
প্রথম টেস্টে হারের পেছনে ব্যাটারদের বড় দায় থাকলেও বোলাররা সীমিত পুঁজি নিয়েও লড়ে গিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দুই সেশনে তাদের কঠিন সময় উপহার দিল জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। তাতে একটা সময়ে বেশ শক্ত অবস্থানেই থাকল তারা। তবে ২ উইকেটে ১৭৭ রান থেকে পথ হারাল সফরকারীরা। শেষ বিকেলে বাংলাদেশ করল ফাইটব্যাক, যেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন অভিজ্ঞ স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার ফাইফারে ভালোভাবেই প্রথম দিনে ঘুরে দাঁড়াল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে এক পর্যায়ে শক্ত অবস্থানে থাকা জিম্বাবুয়ে ৯০ ওভারে করেছে ৯ উইকেটে ২২৮ রান। পাঁচ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাইজুল।
আরও পড়ুন
এবার বড় নিষেধাজ্ঞায় তাওহীদ |
![]() |
এই টেস্ট দিয়ে লাল বলের ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া পেসার তানজিম হাসান সাকিব ওপেনিং স্পেলে করেন বেশ ভালো। সেটা সামলে প্রথম ঘণ্টা পার করে দেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার। ইনিংসের ১১তম ওভারে গিয়ে ৪১ রানের জুটিতে ভাঙন ধরান তানজিমই। অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্রায়ান বেন্নেট।
অন্যপ্রান্তে সেট হয়ে যাওয়া আরেক ওপেনার বেন কুরানকে ২১ রানে ক্লিন বোল্ড করে কিছুটা চাপ তৈরি করেন তাইজুল। তবে দুর্দান্তভাবে সেটা সামাল দেন নিক ওয়েলচ ও অধিনায়ক সিন উইলিয়ামস। স্পিন সহায়ক উইকেট হলেও সেই সময়ে ব্যাটিংয়ের জন্য কন্ডিশন ছিল বেশ ভালো। সেটা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ত্রিমুখী স্পিন আক্রমণ সামলে দলকে শক্ত ভিত এনে দেওয়ার কাজটা করেন এই দুজন মিলে।
লাঞ্চের পর থেকে চা বিরতি পর্যন্ত বাংলাদেশের বোলারদের হতাশায় ভাসিয়ে দুই ব্যাটারই তুলে নেন ফিফটি। এই জুটি যখন ক্রমেই বিপজ্জনক হচ্ছিল, তখনই ওয়েলচ আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়ায় সেটা ছন্দ কেটে দেয় জিম্বাবুয়ের।
আর সেই সময়ে চাপের মুখে ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হন এই ম্যাচ দিয়েই একাদশে আসা তরুণ অফ স্পিনার নাঈম হাসান। শুরু থেকেই রানের জন্য সংগ্রাম করা ক্রেইগ এরভিনকে জাকের আলি অনিকের ক্যাচ বানান তিনি। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের হানেন আঘাত।
টার্ন করে লেগ সাইডে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে করেন সুইপ, তবে হয়নি টাইমিং। স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ নেন তানজিম। তবে তার আগে খেলেন ৬৭ রানের লড়িয়ে এক ইনিংস। এরপরই দৃশ্যপটে হাজির তাইজুল।
আরও পড়ুন
ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে সুদিন ফেরানোর আশায় জাকের |
![]() |
জিম্বাবুয়ের মিডল অর্ডারে ধস নামিয়ে একে একে তুলে নেন আরও চার উইকেট। অল্পের জন্য মিস করেন হ্যাটট্রিলক। সাথে একটি রান আউটে ২১৭ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে অল আউটের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তবে সেটা আর হয়নি।
৬০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল, টেস্ট ক্রিকেটে এটি তার ১৬তম ফাইফার।
এক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জলঘোলার মধ্যে নতুন করে শাস্তি পেলেন তাওহীদ হৃদয়। খেলোয়াড় এবং খেলোয়াড় সাপোর্ট স্টাফদের জন্য বিসিবি আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে মোহামেডানের এই ব্যাটারকে। ফলে বসুন্ধরা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট ক্রিকেট লিগে (ডিপিডিসিএল) তাকে চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত ২৬ এপ্রিল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ম্যাচে মোহামেডান অধিনায়ক তাওহীদের বিরুদ্ধে অন-ফিল্ড আম্পায়ার মনিরুজ্জামান টিঙ্কু এবং আলি আরমান রাজন, তৃতীয় আম্পায়ার মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং চতুর্থ অফিসিয়াল এটিএম ইকরাম আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে মতবিরোধ দেখানোর অভিযোগ আনেন।
আরও পড়ুন
জিম্বাবুয়ে দলকে আতিথ্য দিয়ে লাভ কী? |
![]() |
রোববার বিসিবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাওহীদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং শুনানিতে নিজের পক্ষ সমর্থনের কথা বলেন। তবে আগে জানানো হলেও তিনি আম্পায়ারদের ড্রেসিংরুমে নির্ধারিত শুনানিতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হন।
ফলে ডিপিডিসিএল ২০২-২৫ এর আচরণবিধির ধারা ৫.২.৬ অনুসারে ম্যাচ রেফারি আখতার আহমদ তাওহীদে দোষী সাব্যস্ত করে দশ হাজার টাকা জরিমানা এবং একটি ডিমেরিট পয়েন্ট দেন।
এই ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ হওয়ার ফলে সব মিলিয়ে তাওহীদের ডিমেরিট পয়েন্ট হয়েছে ৮। এর ফলে তাকে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিসিবি, যা কার্যকর হবে এই আসর থেকেই। ফলে জাতীয় দলের এই ব্যাটার মিস করবেন ২৯ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচ।
উল্লেখ্য, চলতি মাসেই একবার আম্পায়ারের সাথে তর্কে জড়িয়ে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তাওহীদ। পরে সেটা নেমে আসে এক ম্যাচে। খেলেন দুই ম্যাচ। এরপর ফের এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হলে ক্রিকেটারদের প্রতিবাদের পর বিসিবি বাকি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে এক বছরের জন্য।
নানা কারণেই গত কয়েক মাসে ক্রমেই পথ হারাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। মাঠের বাইরের একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার সাথে মাঠের চিত্রটাও আশা জাগানিয়া নয়। দর্শকরাও যেন ক্রমেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এসবের মধ্যে যোগ হয়েছে জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্টে বিব্রতকর হার। সময়টা কী আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটের জন্য? জাকের আলি অনিকও সেটা মেনে নিচ্ছেন। তবে এটাও মনে করিয়ে দিলেন, ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে খারাপ সময় পেছনে ফেলা সম্ভব।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বাংলাদেশ জাতীয় দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ নিয়ে। বেসরকারি কোনো চ্যানেল সিরিজটি দেখাতে আগ্রহ না দেখানোয় বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দারস্থ হয়েছে সরকারি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনের। সিলেটে প্রথম টেস্ট দেখতে চারদিনের একদিনেও চোখে মেলেনি দর্শকদের তেমন সাড়া। সেই ম্যাচেই আবার তিন উইকেটে হেরে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের ওপর চাপ যেন বেড়ে গেছে আরও। আর ক্রিকেটের জোয়ারেও যেন বইছে ভাঁটা।
দ্বিতীয় টেস্টের আগের সংবাদ সম্মেলনে শনিবার জাকের অবশ্য শোনালেন ইতিবাচক কথাই।
“আমাদের ভালো পারফরম্যান্স করা উচিত। ভালো পারফরম্যান্সের ওপর তো আর কিছু নেই। আমাদের সবারই তাই লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলা। যেহেতু সিনিয়র ক্রিকেটাররা চলে যাবেন, তাই তরুণদের মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগতেই পারে। আমি মনে করি এটা ঠিক হতে কিছুদিন সময় লাগবে। এটা সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন
তামিমদের আপত্তির পর স্থগিত হল তাওহীদের শাস্তি |
![]() |
৯৫ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মুশফিকুর রহিম বাদে বেশ তরুণ একটা দল নিয়েই এই সিরিজে খেলছে বাংলাদেশ। কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বিদায়ের ফলে ক্রমেই দলে বাড়ছে তারুণ্যের ভিড়। আর তাদের মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনাময় ও ধারাবাহিক পারফর্মারদের একজন জাকের। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই খেলেছেন লড়িয়ে ইনিংস। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে বোলার হাসান মাহমুদকে অতিরিক্ত বল (৫৮) খেলানোর কারণে কিছুটা সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাকে।
তবে কাজটা কেন করেছেন, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে এই কিপার-ব্যাটারের।
“(দ্বিতীয় ইনিংসে) ৭ উইকেটে চলে যাওয়া মানে আমাদের হাতে আরও তিনটা উইকেট আছে। আমরা যেহেতু টার্গেট দিচ্ছিলাম, তাই প্রতিটি রানই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেখেন, হাসান কিন্তু ৫৮ বল খেলেছে। আমাদের মধ্যে ৩৭ রানের একটা জুটি হয়েছে। এই রান যদি হাসান একাই করত, তাহলে আমার সমস্যা নেই। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ম্যাচটা বড় করার, যতদূর সম্ভব টেনে নেওয়ার। চেষ্টা করেছি, হয়নি আসলে।”
টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছয় থেকে আট নম্বর পজিশনে খেলতে হচ্ছে জাকেরকে। ফলে প্রায় নিয়মিতভাবেই তাকে ইনিংস টেনে নিতে হচ্ছে স্বীকৃত ব্যাটারদের ছাড়াই আর বোলারদের সঙ্গী করে। ফলে কয়েকবারই হারাতে হয়েছে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ।
আরও পড়ুন
প্রায় ৩ বছর পর টেস্ট দলে বিজয় |
![]() |
তবে ব্যক্তিগত এসব অর্জন নিয়ে আক্ষেপ নেই জাকেরের।
“ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আমি এভাবে ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত। ঘরোয়াতেও আমি ৬-৭ নম্বরে ব্যাট করেছি। তাই টেল এন্ডারদের নিয়ে খেলার অভ্যাস আমার আগেও ছিল। এই কারণেই কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমার সেঞ্চুরি করতে পাঁচ বছর লেগে গেছে। তাই এসব হবেই। এই কঠিন দিকগুলো সামলেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন মোড়। বসুন্ধরা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য প্রথমে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন তরুণ এই ব্যাটার। পরে সেটা কমে আসে এক ম্যাচে। এরপর আবার সেটা জারি করার সিদ্ধান্ত নিলে আপত্তি জানান তামিম ইকবাল সহ ক্রিকেটাররার। সেটার জেরে শেষ পর্যন্ত তাওহীদের শাস্তি আপাতত স্থগিত করেছে বিসিবি। ফলে এই মৌসুমে আর নিষেধাজ্ঞা থাকছে না মোহামেডানের এই ব্যাটারের।
এর পরিবর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে তাওহীদে শাস্তি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। অর্থাৎ, আগামী বছরের ডিপিএলের প্রথম ম্যাচে বাকি এক ম্যাচের শাস্তি ভোগ করবেন তিনি।
আরও পড়ুন
প্রায় ৩ বছর পর টেস্ট দলে বিজয় |
![]() |
গত ১২ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকতের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তাওহীদ। সেখানেই থেমে না থেকে এরপর সংবাদ সম্মেলনেও আম্পায়ারকে আক্রমণ করে বসেন। সেই কারণে তাকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করে বিসিবি।
তবে এরপর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আপিল করে মোহামেডান। এরপর নাটকীয়ভাবে এক ম্যাচে নামিয়ে আনা হয় শাস্তির মেয়াদ। এরপর বিসিবির চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিসিবিকে জানান বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র এলিট আম্পায়ার।
সেটার প্রেক্ষাপটে শাস্তি কাটিয়ে দুই ম্যাচ খেলে ফেলা তাওহীদের নিষেধাজ্ঞা ফের দুই ম্যাচে নিয়ে যায় বিসিবি, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল মোহামেডানের পরবর্তী ম্যাচেই। তবে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে শুক্রবার বিসিবি কার্যালয়ে মিটিংয়ে বসেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার তামিম ইকবাল সহ ডিপিএলের অন্য দলের অনেক খেলোয়াড়রা।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা সেই মিটিংয়ের পর তামিম সরাসরি তাওহীদের ওপর আরোপিত দ্বিতীয় মেয়াদে শাস্তি নিয়ে আপত্তি তোলেন। তার মতে, যেহেতু বিসিবি একবার শাস্তি কমিয়েছে, ফলে দুই ম্যাচ খেলার পর আবার শাস্তি দেওয়াটা হাস্যকর ঘটনা। পাশাপাশি এও বলেন, এটা কোনো প্রক্রিয়া মেনে দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ, নিজেদের দোষে বাদ পড়ার হতাশায় ক্যারিবিয়ানরা |
![]() |
এর খানিক বাদে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিসিবি জানায় তাওহীদের শাস্তি স্থগিতের খবর।
“গত ১৯ এপ্রিল আম্পায়ার্স কমিটির ইস্যুকৃত শাস্তি বাতিলের সেই সিদ্ধান্তের পরবর্তী আদেশ অকার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির পর সভা হয়েছে, যেখানে বিষয়টি আবারও বিবেচনায় নিয়ে ম্যাচ নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি। যা কার্যকর হবে ১২ মাস পর।”
৭ ঘণ্টা আগে
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
৯ দিন আগে
৯ দিন আগে
৯ দিন আগে
১১ দিন আগে
১১ দিন আগে
২১ দিন আগে
২১ দিন আগে
২২ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৬ দিন আগে
২৬ দিন আগে