২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি সময়েই হয়ে গেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। কিন্তু এরপরও মুমিনুলকে হককে দেশের ইতিহাসে লাল বলের ক্রিকেটের সেরা ব্যাটার হিসেবে বিবেচনা করাটা বেশ কঠিনই হয়ে দাঁড়ায়। এর পেছনে মূলত দায়ী তার দেশের মাটিতে অধিক সাফল্য এবং বিদেশের মাটিতে টেস্টে ভীষণ অধারাবাহিকতা। ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও সেই ধারা বজায় থেকেছে।
নবম ওভারে মুমিনুল যখন ক্রিজে যান, ২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের দিকে তাই ভালো একটি ইনিংসের আশায় ছিল স্বাগতিকরা। তবে দলকে হতাশা নিমজ্জিত করে আকাশ দীপের প্রথম বলেই ফরওয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন মুমিনুল। তাতে গোল্ডেন ডাকেই শেষ হয় সাবেক টেস্ট অধিনায়কের যাত্রা।
পাকিস্তানের সাথে সবশেষ সিরিজে তিন ইনিংস ব্যাটিং করে একটি ফিফটি করেছিলেন মুমিনুল। তবে বিদেশের মাটিতে শেষ ১০ ইনিংসে সামগ্রিক ব্যাটিং পারফরম্যান্স দলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
টেস্টে আজকের ইনিংস সহ মুমিনুলের শেষ ১০টি ইনিংসে মাত্র একবার ফিফটি করেছেন। পাকিস্তানের সাথে ৫০ রানের সেই ইনিংস বাদে এই সময়ে বাঁহাতি এই ব্যাটার আর মাত্র দুই ডিজিটে যেতে পেরেছেন (৩৪)। বাকি আটটি ইনিংসে তার স্কোর ছিল যথাক্রমে ০, ২, ৬,৫, ০, ৪, ১ ও ০ (চেন্নাই টেস্ট প্রথম ইনিংস সহ)
টেস্টে ১২টি সেঞ্চুরিতে চার হাজারের বেশি রান করা মুমিনুলের মানের একজন ব্যাটারের জন্য এই পরিসংখ্যান বিব্রতকরই। ক্যারিয়ার গড় প্রায় ৩৯ হলেও দেশের বাইরে সেটা ২৫ এর কিছু বেশি। এটাই বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশের মাটিতে ধারাবাহিক হলেও দেশের বাইরে সেটার প্রতিফলন লম্বা সময় ধরেই ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশ দল চাইবে যাতে ভারতের বিপক্ষে এই সিরিজের বাকি তিন ইনিংসে ব্যাট হাতে চেনা রুপে হাজির হতে পারেন মুমিনুল।
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ এম
লাল মাটির উইকেটে টস জিতে নাজমুল হোসেন শান্ত দিলেন সাহসীকতার পরিচয়। সকালের মুভমেন্ট কাজে লাগাতে প্রতিপক্ষকে পাঠালেন আগে ব্যাটিংয়ে। ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ডের পর ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে কোন দল আগে নিলো ফিল্ডিং। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত কাজে লাগিয়ে প্রথম সেশনে ভারত শিবিরে কাঁপন ধরালেন হাসান মাহমুদ। এক পর্যায়ে ১৪৪ রানে ছয় উইকেট তুলে ভারতকে ব্যাকফুটেও ঠেলে দিল বাংলাদেশ বোলাররা। তবে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা রেকর্ড গড়া এক জুটি ভারতকে নিয়ে গেল চালকের আসনে। এই দুজন অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করলেন ভারতকে শক্ত অবস্থানে রেখে।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ভারতের স্কোর দাঁড়িয়েছে ৮০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩৯। জন্মদিনে শতক হাঁকানো অশ্বিন অপরাজিত আছেন ১০২ রানে, আর জাদেজার নামের পাশে রয়েছে ৮৬ রান।
অথচ দিনের শুরুটা দেখে কে ভেবেছিল, এভাবে বাংলাদেশ দল ছন্দ হারিয়ে ফেলবে? প্রথম ঘণ্টায় নিখুঁত লাইন-লেন্থ বজায় রেখে বোলিং করা হাসান শুরুতেই রোহিত শর্মাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে প্রায় ফেলেই দিয়েছিলেন। সেযাত্রায়ায় ভারত অধিনায়ক বেঁচে যান আম্পায়ারস কলে। তবে এই লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসেন হাসানই।
দিনের ষষ্ঠ ওভারে হাসানের অফস্ট্যাম্পের একটু বাইরে পিচ করা ডেলিভারিতে ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন রোহিত। নিচু হয়ে আসা ক্যাচ নিতে ভুল করেননি শান্ত। পরের ওভারেই ফের হাসানের আঘাত।
এবার তার শিকার শুবমান গিল। লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে। চাপে থাকা ভারতকে নিজের করা পরবর্তী ওভারে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেন হাসান।
সকালের উইকেটে মুভমেন্ট ছিল। সেটা কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত সেই স্পেলে নতুন বলটাকে কথা বলাচ্ছিলেন হাসান। সাজিয়ে বসেছিলেন ইনসুইং আউটসুইংয়ের পসরা। বিরাট কোহলিকে শিকার বানান ফাঁদে ফেলে। অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়া করায় দুর্বলতা রয়েছে ভারতের এই তারকা ব্যাটারের। তার আরেকটি নজির দেখিয়ে কোহলি সাজঘরে ফেরেন মাত্র ছয় রানে। এর মধ্য দিয়ে নিজের সবশেষ ২৯ ইনিংসে মাত্র তিন বার এক অঙ্কের ঘরে আউট হলেন তিনি, আর প্রতিবারই প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ।
৩৪ রানে তিন উইকেট হারানো ভারতকে একপ্রান্ত আগলে আশা দেখান ইয়াশাশভি জয়সওয়াল। সাথে পান এই টেস্ট দিয়ে প্রায় দুই বছর পর লাল বলের ক্রিকেটে ফেরা কিপার-ব্যাটার রিশাভ পান্তকে।
আর দলের হাল ধরতে দুজনই পাল্টা আক্রমণের সূচনা করেন। ফলে ভালো বোলিং করলেও রান আটকাতে পারছিলেন না বোলাররা। সেই প্রক্রিয়ায় কিছু সুযোগও এসেছিল। লাঞ্চ বিরতির তাসকিন আহমেদের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান জয়সওয়াল। তবে সেটা তালুবন্দী করতে পারেননি শাদমান ইসলাম।
বিরতির পরই কাঙ্ক্ষিত ব্রেকথ্রু এনে দেন সেই হাসানই। অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৬ বাউন্ডারিতে ৩৯ রান করে।
দুপুরের খাবার শেষে ফিরেই আউট পান্ত। অ্যাটাকিং হতে গিয়েই ডেকে আনলেন বিপদ। স্ল্যাশ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন লিটনকে। চার উইকেটের চারটাই হাসানের। এরপর লোকেশ রাহুলকে নিয়ে এগিয়ে যান জয়সওয়াল। অন্যপ্রান্তে রাহুল কিছুটা দেখেশুনে খেললেও রানের চাকা সচল রাখেন তরুণ এই বাঁহাতি ওপেনার। তুলে নেন ফিফটি। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্টের সবগুলোতেই অন্তত এক ইনিংসে ফিফটি বা তার চেয়ে বেশি রানের কীর্তি গড়েছেন ভারত ওপেনার।
তবে এরপর বেশিক্ষন টিকতে পারেননি জয়সওয়াল। গতিময় পেসার নাহিদ রানার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ইনিংস। ক্যাচ নেন শাদমান। এর পরের ওভারেই আবারও উইকেট। এবার ১৬ রান করা রাহুলকে শর্ট লেগে ক্যাচ বানান মিরাজ।
দেড়শোর আগেই ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন বিপদে। চা বিরতির আগে জুটি বাঁধা অশ্বিন ও জাদেজার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু সেখান থেকেই। শুরুর দিকে দুজনই খোলসবন্দী থাকলেও ক্রমেই রানের চাকা সচল করেন দুজনই।
বাংলাদেশ বোলারদের চাপে ফেলে কিছুটা ফ্ল্যাট হয়ে আসা পিচ, পুরনো বল সাথে বোলারদের ক্লান্তি কাজটা করেছে সহজ। ঘরের মাঠে অশ্বিন ব্যাট করেছেন যেন ওয়ানডে মেজাজে। ৫৩ ওভারে প্রথম বোলিংয়ে আসা সাকিবকে দুজনই টার্গেট করেছেন শুরু থেকে। প্রথম দুই ওভারেই সাকিব দেন ২১ রান। যার মধ্যে জাদেজা একাই মারেন তিনটি চার ও একটি ছক্কা।
উইকেটে দুই সেট ব্যাটসম্যান। পিচে মুভমেন্ট নেই বললেই চলে। পেসাররা হয়ে পড়েছেন ক্লান্ত, স্পিনাররা সুবিধা করতে পারছেন না মোটেও। এসবের ফলে দিনের শেষের দিকে অনায়াসে রান বাড়ান দুই ব্যাটার। শেষ সেশনে ৩২ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে ভারত তুলেছে ১৬৩। অন্তিম সময়ে সেঞ্চুরির দেখা পান অশ্বিন।
১৮ ওভারে চার মেডেনে ৫৮ রানে চার উইকেট নিয়ে হাসানই বাংলাদেশের সেরা বোলার।
খেলাটা যেখানেই হোক, সেটা ঢাকা, চেন্নাই, দুবাই, মেলবোর্ন - বিরাট কোহলি সবসময় সবজায়গায় থাকেন একই। নিজের নামের মতো। নামটা 'কিং কোহলি...' আমি বলছি না। বিশ্ব ক্রিকেটের সব অনুরাগীরাই তাকে এই নামেই চেনেন, ডাকেন। দিল্লির ‘চিকু’ যেনো পুরো ভারতীয় ক্রিকেটের অথবা তারচেয়েও বড় কিছু।
এই বছরই কোহলি ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন বিশ্বকাপ ট্রফিটা উঁচিয়ে। এখন বাড়তি নজর তাই টেস্ট ক্রিকেটে। অবশ্য সেটা সবসময় ছিল তার। এই ফরম্যাটকেই মেনেছেন, বলেছেন সেরা বলে। চেন্নাই টেস্টের আগেও কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাবনার কারণ এক কোহলি।
তবে বাংলাদেশের বোলাররা কোহলিকে থামাতে পারেন। সাত বাংলাদেশি বোলার কোহলিকে আউট করেছেন। এরমধ্যে তাইজুল ইসলাম সর্বোচ্চ দুবার। চিপকে কী খেলা হবে এই স্পিনারের, তার জন্যও করতে হচ্ছে অপেক্ষা। তাইজুল ছাড়াও মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান, এবাদত হোসেন, আবু জায়েদ রাহি, তাসকিন আহমেদ, জুবায়ের লিখনরাও আছেন সেই তালিকায়। চিপকে অবশ্য জোড়া ইনিংস পাচ্ছে, সুযোগ থাকবে কানপুরেও।
এরই মধ্যে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে কোহলিকে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬ বার আউট করেছেন সাকিব। একবার বোল্ডের সাথে এক স্টাম্পিং, ফিল্ডাররা সাহায্য করেছে চারবার। টেস্টে একবার হলেও ওয়ানডে পাঁচ আর বাংলাদেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টিতে আরেকবার।
এমনিতে কোহলি মানেই যেকোনো মানদণ্ডে ৫০ এর বেশি গড়। বাংলাদেশের সাথেও তাই। ৯ ইনিংসের কোহলি রান করেছেন ৪৩৭। গড় ৫৪ এর বেশি। দুই সেঞ্চুরির কোহলির ব্যাটে রয়েছে ডাবল সেঞ্চুরিও।
চেন্নাইয়ে বুধবারে সাকিব ব্যাট হাতেই ব্যস্ত ছিলেন, বল হাতে না। কাউন্টিতে সারের হয়ে ম্যাচে ৯ উইকেট তোলা সাকিব অবশ্য বল হাতেও ফিরতে চাইবেন, ফেরাতে চাইবেন কোহলিকে।
একটা তথ্য বলে রাখা ভালো, এশিয়ান স্পিনারদের মধ্যে তিন ফরম্যাটে সাকিবকে বেশিবার আউট করা বোলার সাকিব। সাকিবরা ব্যাটিংয়ে ব্যস্ত থাকলেও কোহলির জন্য বুধবারের চিপক ব্যস্ত থাকেনি। ৪৪ টেস্ট গড়ের চিপকে যা ম্যাচে না থাকলেও হলো, বাংলাদেশিরা তো তাই চাইবে! আর চাইবে সাকিব বা অন্য যেকেউ ফেরাক কোহলিকে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাভাষ্যকার হিসেবে তামিম ইকবালের অভিষেক হয়ে গেছে বেশ আগেই। তবে সেটা ছিল খন্ড পরিসরে এবং গন্ডি সীমাবদ্ধ ছিল কেবল দেশের মাটিতেই। বাংলাদেশের ভারত সফরে তামিম ক্যারিয়ারে প্রথমবার ধারাভাষ্য দিতে যাচ্ছেন পূর্ণ সফরের জন্য। ফলে এই প্রথম দেশের বাইরে ধারাভাষ্যকার হিসেবে অভিষেক হতে যাচ্ছে জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই ওপেনারের জন্য।
গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগে সবশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তামিম। মাঝে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) খেললেও এখনও আছেন বাংলাদেশ দলের বাইরে। টেস্ট দলে কয়েকবার তাকে ফেরানোর চেষ্টা করা হলেও ফিটনেস সমস্যার কারণে তামিম আপাতত নিজেকে লাল বলের ক্রিকেট থেকেও নিজেকে দূরে রেখেছেন। এই মুহূর্তে ঘরোয়া বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট না থাকায় বাংলাদেশ ও ভারত সিরিজের সময় তাই ফাঁকাই ছিলেন।
আর সেটা কাজে লাগাতেই তামিমকে ভারত ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় এই সিরিজের ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করার। ব্যাটে-বলে মিলে যাওয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা এই ওপেনার তাতে সাড়াও দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে চেন্নাই পৌঁছেও গেছেন তামিম।
এর আগে তামিমকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তামিককে দেখা গেছে বিপিএল ও ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজে। উভয় ক্ষেত্রেই তামিম নির্দিষ্ট একটি ম্যাচের নির্দিষ্ট সময়ে বা একটি সেশনে ধারাভাষ্য দিয়েছেন। এবারই প্রথম চুক্তিবদ্ধ হয়েছে পুরো একটি সিরিজের জন্য।
এই সিরিজের তামিম ধারাভাষ্য দেবেন বিশ্ব ক্রিকেটের জনপ্রিয় ও কিংবদন্তি কয়েকজন ধারাভাষ্যকারদের সাথে। যেখানে থাকবেন হার্শা ভোগলে, রবী শাস্ত্রী, সুনীল গাভাস্কার, দীনেশ কার্তিক ও মুরালি কার্তিকরা। আর বাংলাদশ থেকে তামিম পাবেন দেশের ইতিহাসের সেরা ধারাভাষ্যকার আতাহার আলী খানকে।