১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬:০০ পিএম
এশিয়া কাপের প্রায় চার দশকের ইতিহাসে একবারও হয়নি ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে এবারে আশা জেগেছিলো, এশিয়াসেরার লড়াইয়ের ফাইনালটায় এবারে অবশেষে দেখা যাবে এই দুইয়ের মহারণ। তবে সে স্বপ্নকে ধূলিস্যাৎ করে উত্তেজনার চূড়ান্ত শেষে ফাইনালের টিকেট মিললো শ্রীলঙ্কারই।
বৃষ্টির বাগড়ায় ৪৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে টস জিতে ক্যাপ্টেন বাবর আজমের সোজাসাপ্টা ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত। প্রেমাদাসায় রান তাড়া করে ম্যাচ জেতাটা একটু কঠিন বলেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত। তবে শুরুটা অবশ্য বলে ভিন্ন কথাই। ধীরলয়ের ব্যাটিং-এও রক্ষা হলো না। প্রামোদ মাদুশানের বলে উদ্বোধনী জুটি ভাঙলো ৯ রানেই। ফখর জামান আউট মাত্র চারে।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপের সুপার ফোরে গেল এশিয়ার টপ ফোরই
শুরুর ধকল অবশ্য সামাল দিয়েছে আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শাফিক আর বাবর আজম। ৬৪ রানের জুটি ভাঙেন আগের ম্যাচে ফাইফার নিয়ে বাজিমাত করা ওয়েলালাগে। সেট হয়ে ২৯-এই কাটা পড়েন বাবর।
৩ চার আর ২ ছয়ে ভালোই এগুচ্ছিলেন এশিয়া কাপে এ ম্যাচেই প্রথম সুযোগ পাওয়া আব্দুল্লাহ শফিক। তবে হাফ সেঞ্চুরির কোটা পূরণ করতে না করতেই ফেরেন পাথিরানার বলে প্রমোদ মাদুশানকে ক্যাচ দিয়ে। নিজের পরের ওভারেই মোহাম্মদ হ্যারিসের উইকেটটাও তড়িঘড়ি করে তুলে নেন পাথিরানা।
আশা জাগানিয়া শুরুর পর ১২ বলে ১২ করেই আউট মোহাম্মদ নাওয়াজ। ২৭ ওভার ৪ বল শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিদের সংগ্রহ তখন ১৩০। বড় সংগ্রহ না পাবার শঙ্কাকেও অবশ্য ছাড়িয়ে গেলো বৃষ্টির আগমণ। পৌনে এক ঘণ্টার বৃষ্টি গিলে নিলো তিনটা ওভার।
ফিরে এসে অবশ্য অন্য রূপে পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইফতিখার আহমেদের একশো পেরোনো জুটিতে একটা ভালো সংগ্রহই খুঁজে পায় পাকিস্তান। ১০৮ রানের জুটিটা ভাঙেন পাথিরানাই। ৪৭ বলে ৪০ করে ইফতিখার ফিরলেও, ৭৩ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেন রিজওয়ান। ৪২ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৫২।
ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন মেথডের মারপ্যাঁচে শ্রীলঙ্কার টার্গেটটা দাঁড়ালো সমান ২৫২তেই। ইনজুরি ছোবলে হারিস রউফ-নাসিম শাহরা নেই, তবু শুরুর জুটি ভাঙতে সময় লাগেনি পাকিস্তানের। কোভিড ধকল কাটিয়ে ফিরে আসা কুশাল পেরেরা শুরুতে খেললেন বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায়। তবে দম ফুরালো ৮ বলে ১৭ করেই ।
অন্য ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে একট শক্ত জুটির খোঁজে কুশাল মেন্ডিস। তবে সে আশায় গুড়েবালি ২৯ রানে শাদাব খানের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড নিসাঙ্কা। তবে তাতে অবশ্য থামেনি লঙ্কানদের রানের গতি। সামারাউইকরামাকে নিয়ে কুশাল মেন্ডিস গড়ে তুলেন শতরানের জুটি। এশিয়া কাপের এবারের আসরে মেন্ডিস তুলে নেন নিজের তৃতীয় অর্ধশতক।
১০০ রানের জুটি ভেঙে সাদিরা সামারাউইক্রামা ফেরেন ৪৮-এ। সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে পুড়ে কুশাল মেন্ডিসও আউট ৮৭ বলে ৯১ রানের চমৎকার নকে। ক্যাপ্টেন শানাকাও আউট দুই রান যোগ করেই। তিনজনই ধারাশায়ী ইফতিখার আহমেদের স্পিনে।
পুরো ইনিংসে মলিন শাহীন শাহ আফ্রিদির ঝুলিতে শেষমেশ মিললো ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আর দুনিথ ওয়েল্লালাগের উইকেট। শেষ ওভারে দরকার ৮টা রান। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল ওভারে শেষমেশ নায়কটা বনে গেলেন চারিথ আসালাঙ্কাই! তার ৪৭ বলে ৪৯-এ ভর করে দুই উইকেটের জয় লঙ্কানদের। ১৭ তারিখ ফাইনালের ভারতের প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাই!
১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এম
ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো উইকেটে বাংলাদেশের মূল ক্ষতিটা হয়ে গিয়েছিল প্রথম ১৫ ওভারেই। সেখান থেকে চাপের মুখে মাহমুদউল্লাহ দারুণ এক ইনিংস খেললেও তাই বোর্ডে রান কিছু কমই জমল বাংলাদেশের। বল হাতে দুই দফায় কিছুটা আশা জাগালেও তাই রহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরিতে ম্লান হয়ে গেল সব প্রচেষ্টা। সাথে আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের অপরাজিত ফিফটি আফগানিস্তানকে এনে দিল জয়।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গেছে ৫ উইকেটে। সফরকারীদের করা ৮ উইকেটে ২৪৪ রান ১০ বল হাতে রেখেই পাড়ি দিয়েছে আফগানরা।
তিন ম্যাচের সিরিজ আফগানিস্তান জিতল ২-১ ব্যবধানে।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাটিং করা দল ২৩৫ ও ২৫২ রান নিয়েই পেয়েছে বিশাল জয়। সেই কারণেই ২৪৪ রান করার পরও জয়ের পাল্লা একটু বেশি হেলে ছিল বাংলাদেশের দিকেই। তবে প্রথম দুই ম্যাচে অল্পে ফেরা ‘ডেঞ্জারম্যান’ রহমানউল্লাহ গুরবাজ এদিক ছন্দ ফিরে পান। প্রথম ওভারেই শরিফুলকে চার মেরে হয় শুরু।
আরও পড়ুন
নাহিদ রানায় মুগ্ধ ইয়ান বিশপ, বললেন বাড়তি যত্ন নিতে |
শরিফুলের পরের ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে ছক্কার মার। অন্যপ্রান্তে অভিষিক্ত নাহিদ রানা শুরুটা করেন ভালো, নেন মেডেন ওভারও। তবে শরিফুল গুরবাজের কাছে আরেকটি ছক্কা হজমের পর তাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন মিরাজ। গতির ঝড়ে ব্যাটারদের বারবার বিভ্রান্ত করা নাহিদই শেষ পর্যন্ত এনে দেন উইকেট। ঘন্টায় ১৫১ কি.মি. গতিতে করা এক ডেলিভারিতে ফেরান সেদিকুল্লাহ আটালকে।
মুস্তাফিজুর রহমানকে চাপে ফেলে ছক্কা মেরে আক্রমণে স্বাগত জানান গুরবাজ। তিনি ছন্দে থাকলেও রানের জন্য সংগ্রাম করা রহমত শাহ বেশিদূর যেতে পারেননি। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে তাকে থামান মুস্তাফিজুর। এরপর টানা কয়েকটি ওভারে বোলাররা রানের গতি অনেকটাই কমিয়ে আনেন। এর মাঝেই ফিফটি তুলে নেন গুরবাজ।
শুরু থেকেই অস্বস্তিতে থাকা হাশমতউল্লাহ শহিদি সাজঘরে ফেরেন মুস্তাফিজুরের শিকার হয়ে, তার আগে ২১ বলে করেন মাত্র ৬ রান। তবে এরপর খুব দ্রুতই বদলে যেতে থাকে ম্যাচের চিত্র। প্রায় প্রতি ওভারেই চার বা ছক্কা মেরে বাংলাদেশ বোলারদের চাপে ফেলে দেন গুরবাজ ও ওমারজাই।
আরও পড়ুন
আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, নাহিদ রানার অভিষেক |
৮২ রানে থাকা অবস্থায় রান আউট প্রায় হয়েই যাচ্ছিলেন গুরবাজ, তবে সরাসরি থ্রোতে স্ট্যাম্প ভাঙতে পারেননি বদলি ফিল্ডার রিশাদ হোসেন। এরপর আগ্রাসী ব্যাটিং বজায় রেখে পা রাখেন শতকের ঘরে। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি ওয়ানডেতে।
অন্যপ্রান্তে ওমারজাইও সমান তালে ব্যাটিং করায় দ্রুতই জুটিতেও হয়ে যায় সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার আশা যখন প্রায় শেষ, তখনই হাজির মিরাজ। বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় গুরবাজের ৭ ছক্কা ও ৫ চারে সাজানো ১০১ রানের ইনিংস।
এক ওভার বাদে আঘাত হানেন নাহিদ। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল টাইমিং করতে ব্যর্থ হয়ে আকাশে তুলে দেন গুলবাদাইন নাইব। ক্যাচ নিতে ভুল হয়নি জাকেরের। তবে এরপরও পথ হারায়নি আফগানিস্তান।
চমৎকার এক ফিফটি করা ওমারজাইয়ের সাথে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি মিলে গড়ে তোলেন কার্যকরী এক জুটি, যা দ্রুতই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত তারাই মাঠ ছাড়েন দলকে জিতিয়ে। ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করা ওমারজাই অপরাজিত থাকেন ৭০ রানে। আর নবি করেন ২৭ বলে ৩৪।
এর আগে দিনের শুরুতে টস জিতে ব্যাটিং নেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মিরাজ। আগের দুই ম্যাচে তিনে নেমে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত খেলেছিলেন দারুণ দুটি ইনিংস। তার অনুপস্থিতিতে টপ অর্ডার ব্যর্থ হয় দলকে শক্ত ভিত দিতে, যদি শুরুটা দুই ওপেনার এনে দিয়েছিলেন ভালো।
প্রথম দুই ম্যাচে ত্রিশের ঘরে গিয়ে আউট হওয়া সৌম্য সরকার এই ম্যাচেও দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন। ওপেনিং জুটিতে আসে ৫৮। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের প্রথম শিকার হওয়া আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান। খুব দ্রুতই ফেরেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও৷
প্রথম দুই ম্যাচে রানে না থাকা তাওহীদ হৃদয় আরও একবার ব্যর্থ হন। শুরু থেকেই জড়তা ছিল স্পষ্ট। রশিদ খানের বলে আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে করেন মাত্র ৭ রান। এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে রান আউট হন এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে আসা জাকির হাসান।
আরও পড়ুন
মাহমুদউল্লাহ ৯৮, মিরাজ ৬৬, বাংলাদেশ ২৪৪ |
৭২ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশের জন্য তখন দুইশ রানও মনে হচ্ছিল দীর্ঘ পথ। উইকেটের যে আচরণ প্রথম দুই ম্যাচে, তাতে জেতার জন্য আড়াইশর আশেপাশে থাকা স্কোর গড়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফর্মে থাজা মিরাজ ক্রিজে থাকলেও মাহমুদউল্লাহ সাম্প্রতিক সময়ে রানের মধ্যে ছিলেন না। তবে চাপের মুখেই তো অভিজ্ঞরা নিজেদের মেলে ধরেন।
আর ঠিক সেটাই করে দেখান মাহমুদউল্লাহ। অন্যপ্রান্তে মিরাজ অনেকটাই টেস্ট মেজাজে খেললেও তিনি শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী। চাপ কাটিয়ে তাতে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। মিরাজ ৫০ থেকে ৬০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করলেও মাহমুদউল্লাহ বজায় রাখেন ৯০ এমনকি ১০০ স্ট্রাইক রেটও।
দুজনেই পেয়ে যান ফিফটির দেখা। জুটিতেও হয়ে যায় শতক। দুই সেট ব্যাটার থাকায় বাংলাদেশের চোখ ছিল ২৬০-২৭০ রানের দিকে। তবে আজমতউল্লাহর বলে মিরাজ ৬৬ রানে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর সেই লক্ষ্যটা ক্রমেই নেমে যায়। এর মূল কারণ পরবর্তী ব্যাটারদের অবদান না রাখতে পারা।
বাংলাদেশের বাকি ইনিংস একাই টেনে নেন মাহমুদউল্লাহ। চার-ছক্কার মারে ধরে রাখেন লড়াকু স্কোরের সম্ভাবনা। সেঞ্চুরির ভালো সুযোগও তৈরি হয়েছিল। তবে ইনিংসের শেষ ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে শেষ হয় ৯৮ রানের মহামূল্যবান ইনিংস। ৯৮ বলের দারুণ এই ইনিংস ডানহাতি ব্যাটার সাজান ৭ চার ও ৩ ছক্কায়।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াবে ১১ ডিসেম্বরে। ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২৩ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রস্তুতি হিসেবে এই টুর্নামেন্টে দেখা যাবে দেশের ক্রিকেটের অনেক বড় তারাকাকে। এবার জানা গেলো, এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে তামিম ইকবাল খেলবেন পাঁচ ম্যাচ।
এই বছরের মে মাসের পর থেকে আর মাঠেই দেখা যায়নি তামিমকে। তবে এই সপ্তহে মিরপুরে অনুশীলন করেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক বিপিএলে ফেরার প্রস্তুতি হিসেবে এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে খেলবেন পাঁচ ম্যাচ। টি-স্পোর্টসকে নিশ্চিত করেছেন, ৩৫ বছর বয়সী তামিম নিজেই।
আরও পড়ুন
এক ঘণ্টার বেশি ব্যাটিং অনুশীলনে তামিমের বিপিএল প্রস্তুতি শুরু |
বিপিএলে ঠিক আগের আসরেই তামিমের নেতৃত্ব বরিশাল হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। নিজেও হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা। বিপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এই ব্যাটার এবারও খেলবেন বরিশালের হয়ে। বিপিএলে সবমিলিয়ে ১০৪ ম্যাচে ব্যাটার তামিম ৩৭.৬০ গড়ে ৩৪২২ রান করেছেন। ২৮ ফিফটির তামিমের রয়েছে দুই বিপিএল সেঞ্চুরিও।