
চার-ছক্কার চেয়েও ম্যাচ জয়ে অত্যাবশ্যক ‘স্মার্ট ক্রিকেট’। আধুনিক ক্রিকেট বলতে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস বুঝিয়েছেন ‘বুঝে-শুনে পথচলা’। একই সঙ্গে রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেট , প্রতিপক্ষের পালস বিশ্লেষণ, আদোপ্রান্ত যাচাই-বাছাই ও বাউন্ডারি লাইনের পরিমাপ নখদর্পণে রাখা- ছোটখাট বিষয়গুলো কাজ সহজ করে দেয়, পৌঁছে দেয় কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। পরিকল্পনা যেমন কাজের অংশ, অ্যাথলেটিক্সে স্মার্ট এপ্রোচ ঠিক ততটাই। এশিয়া কাপ মিশন কিংবা তারও আগে থেকেই লিটন দাসের সরব বার্তা - ‘টু বি স্মার্ট ক্রিকেট’। অধিনায়কের তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা সতীর্থদের কেউ আমলে নিয়েছেন, কেউবা এড়িয়ে গেছেন। যা এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে কিছুটা হলেও দৃশ্যমান।
লিটন দাসের ছিল স্মার্ট ক্রিকেটের প্রতিশ্রুতি। তার দলকেও বিশেষ দুটি পরামর্শ দিয়ে রেখেছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ অধিনায়ক ও তার সতীর্থরা নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতটা রাখতে পেরেছেন এবং আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন কীনা তা-ই আলোচ্য। সরল দৃষ্টিতে হংকংয়ের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয়ে এশিয়া কাপে শুভসূচনা হয়েছে বাংলাদেশের। এই ম্যাচে পারফরম্যান্স করেছেন লিটন ও তাওহীদ হৃদয়। বল হাতে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব। এরপর...
ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের শুরুতে দেশের দুই ওপেনারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেতে পারে। গত কয়েকটি টি-টোয়েন্টি সিরিজের মতো হংকংয়ের বিপক্ষে ওপেনিং ভরসা রাখা হয় তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেনের ওপর। ভরসা না করেও যে উপায় নেই। কারণ দেশীয় ক্রিকেটের হেলে পড়া ওপেনিং সিংহাসন টিকিয়ে রেখেছেন এই দুই তরুণ ব্যাটার। তাছাড়া দুই ব্যাটার প্রায় প্রতি ম্যাচে প্রতিযোগিতা করে হাঁকিয়েছেন চার-ছক্কা। উদ্বোধনে তাদের ওপরই আস্থা নির্বাচকদের।
আরও পড়ুন
| তানজিদ শোনালেন আশার বানী |
|
হংকং ম্যাচে তানজিদ-পারভেজ ছিলেন ফ্রন্টলাইনার সোলজার। বৃহস্পতিবার শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে নামার আগে চলতি বছরে চলতি বছরে ৪৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন দুই ব্যাটার। অথচ গতকাল এই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে কেবল ৪৬। দুজনের মাঝে ভয়হীন ও ছক্কা মারার যে প্রতিযোগিতা, তা এশিয়া কাপ মঞ্চে দেখা যায়নি। ভালো শুরুর পরও লাল-সবুজ দলকে প্রথমে বিপদে ফেলেন ইমন। সবশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত অর্ধশতক হাঁকানো ইমন এদিন করতে পারেন ১৯ রান (১৪ বল)।
চলতি বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে নিজের ২৩তম ছক্কাটি মারার ২ বল পরেই আরেকটি ছক্কা মারার চেষ্টা করেন পারভেজ। হিতে বিপরীত হয়ে ছাড়েন মাঠ। অর্থাৎ হংকংয়ের লড়াকু পুঁজির বিপরীতে অল্পতে উইকেট বিলিয়ে দেন তিনি। তারই সঙ্গী তানজিদ থেমেছেন আরও অল্পতে। দুই অঙ্কের রান স্পর্শ করেছেন ঠিকই, সেটাকে পারেনি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করতে। ঘরের মাঠ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিজের সবশেষ ম্যাচে চোখজুড়ানো ইনিংস খেলেছিলেন তানজিদ। চায়ের শহরে তার অপরাজিত ৫৪ রানের ওপর ভর করে স্বাগতিকরা সহজ জয় পায়। অথচ হংকংয়ের বিপক্ষে ২৪ বর্ষী ব্যাটারের না ছিল ধার-ভার। ১৮ বলে করতে পেরেছেন কেবল ১৪। ছিল না ছক্কা। সান্ত্বনা কেবল ১ বাউন্ডারি।
দুই ওপেনারের পতনে দায়িত্ব বর্তায় টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের ওপর। অবশ্য বহুদিন ধরে দুর্বল এই জায়গায় বাহবা পাওয়ার মতো কাজ করে দেখিয়েছে ব্যাটাররা। এই সেক্টরের মূল ব্যাটন ছিল লিটনের হাতে। এশিয়া কাপ শুরুর আগে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রকাশিত প্রোমো ভিডিওতে বাংলাদেশ দলপতি যেভাবে বলেছেন, “মাঠে আমাদের আগ্রাসন”, ঠিক তারই প্রতিচ্ছবি ছিল আশার বাইশ গজে।
দলপতি লিটন এমনিতেই চাপে ছিলেন। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা সিরিজে ছিলেন ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী। সেখান থেকে ফেরার একটা তাড়না ছিল। বের হয়েছেন সুনিপুণ দক্ষতায়। হাত খুলে খেলেছেন সবশেষ নেদারল্যান্ডস সিরিজে। ফিফটির দেখা পাওয়া ছাড়াও সিরিজসেরা হয়েছেন। স্মার্ট ক্রিকেট খেলে হংকংয়ের বিপক্ষেও বাজিমাত করেছেন। ক্রিজে যতক্ষণই ছিলেন ব্যাটিং সৌন্দর্য বিলিয়েছেন। স্টেডিয়ামে আশা হাজার খানেক দর্শকরাও তার মনোমুগ্ধকর ব্যাটিং উপভোগ করেছেন। এশিয়ার কাপের দোরগোড়ায় নিজের প্রথম ম্যাচে ৩৯ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেছেন লিটন। গড়েছেন ছক্কার রেকর্ড। দেশের ছক্কার রাজা এখন তিনিই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের ১১১তম কুড়ি কুড়ি ম্যাচ অংশ নেওয়া লিটন হংকংয়ের বিপক্ষে নেমেছিলেন নামের পাশে ৭৭ ছক্কা নিয়ে। গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলা মাহমুদউল্লাহর ছক্কাও ৭৭টি। যৌথ নামের রেকর্ডটাকে গতকাল হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচে নিজের একার করে নিয়েছেন লিটন। আর সেটা মাহমুদউল্লাহর চেয়ে ২১ ইনিংস কম খেলেই। মোদ্দাকথা আশার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
আট জাতির টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম জয়ে লিটনের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৭০ বলে ৯৫ রানের জুটি গড়েন তাওহীদ হৃদয়। অনেক সমালোচনা মাড়িয়ে একাদশে টিকে যাওয়া এই হার্ডহিটার ব্যাটারের কাছ থেকে দেখা মেলেনি পাওয়ার হিটিং। ব্যাটিংয়ে ছিল না ঝাঁজ। ক্রিকেটীয় ভাষায় ‘আগলি ইনিংস’ যেটাকে বলে সে কাজটিই করেছেন ডানহাতি ব্যাটার। শেষ দিকে তামিম সাজঘর মুখো হলেও হৃদয় ৩৬ বলে ৩৫ রান নিয়ে খেলা শেষ করেছেন। লিটনের স্ট্রাইকরেট ১৫১.২৮ থাকলেও হৃদয়ের স্ট্রাইকরেট ছিল ১০০-এর চেয়ে কম। সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নাবানে জর্জরিত হতে হয়েছে তাকে। আধুনিক ক্রিকেট, পাওয়ার হিটিং, রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেটে দুর্বলতা নিয়ে হৃদয়ের উত্তর ছিল, দলের প্রয়োজনটাই আগে।
লিটন-হৃদয়ের বদৌলতে পরীক্ষার হটসিটে বসতে হয়নি জাকের আলী, শামীম পাটোয়ারী ও রিশাদ হোসেনদের। তবে বোলিং সেক্টর নিয়ে একটু হতাশা থেকেই গেল। বোলাররা সুযোগের সুবিচার কতখানি করতে পেরেছেন সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, ভারতের বিপক্ষে শতকের নিচে গুটিয়ে যাওয়া হংকং ১৪৩ রানের লড়াকু স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশের বিপক্ষে। যা টাইগার শিবিরে অস্বস্তি জন্ম দিয়েছে। ফলে ইচ্ছা সত্ত্বেও ম্যাচপরবর্তী তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারেননি লিটন।
আরও পড়ুন
| রানরেট নিয়ে বিচলিত নন হৃদয় |
|
এদিন ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান করা হংকং শেষ পর্যন্ত স্কোর বোর্ডে জমা করে ১৪৩ রান। যা বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জে ফেলে। কারণ, আবু ধাবির এই মাঠে এর আগে কখনও জয়ের স্বাদ পায়নি টাইগাররা। ‘জুজু’ নিয়েই খেলতে নামে তারা। তারমধ্যে চিরচেনা পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ ছিলেন মেহেদী হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টার বরাবরের মতো ডেথ ওভারে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের চেপে রেখেছেন। তবে ছিলেন উইকেটশূন্য। তাসকিন আহমেদ কোটার সবগুলো ওভার হাত ঘুরিয়ে দুই উইকেট তুলেছেন। তবে সাড়ে নয় ইকোনমি রেটে রান দিয়েছেন।
টাইগার বোলারদের মধ্যে সফল তানজিম হাসান ও রিশাদ। তানজিম একদম অচেনা কন্ডিশনে খেলতে নেমেছিলেন। এর আগে শেখ আবু জায়েদের মাঠে বিচরণ হয়নি তার। তারপরও উইকেট বুঝে-পড়ে পেয়েছেন সাফল্যের দেখা। চার ওভারে ২ উইকেট তুলেছেন। দলের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম রান (২১) খরচ করেছেন তিনি। লেগ স্পিনার রিশাদও প্রতিপক্ষকে খুব একটা সুবিধা করতে দেননি। রান খরচ করেছেন একটু বেশিই।
এশিয়া কাপের দোরগোড়া পেরোনো বাংলাদেশের পরবর্তী লক্ষ্য শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের মুখোমুখির আগে নিশ্চয়ই আপন কাঠগড়ায় নিজেদের দাঁড় করাবেন ক্রিকেটাররা। ভুল-শুদ্ধির এই মিশনে এক্সর্টা রান কমিয়ে আনা, ভালো ফিল্ডিং এবং পাওয়ার হিটিংয়ে পূর্ণ মনোযোগ-তবেই তিনবার এশিয়া কাপের শিরোপার মঞ্চে ওঠার কষ্ট চারবারে গিয়ে মোচন বাংলাদেশের।
No posts available.
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:২৩ পিএম
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:২৫ পিএম

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ সংস্করণ শুরু হয়েছে ২৬ ডিসেম্বর। সময়ের হিসাবে খুব বড় প্রস্তুতির সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মাত্র তিন মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে টুর্নামেন্টের ঘোষণা আসার পর থেকেই বিপিএলকে ঘিরে আলোচনা, সমালোচনা আর শঙ্কা—সবই একসঙ্গে চলেছে। একই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য বড় ফ্রাঞ্চাইজি লিগ শুরু হওয়ায় তারকাসংকট আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিপিএলের সময়সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিকভাবে চলছে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগ, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টি–টোয়েন্টি এবং পাকিস্তান–শ্রীলঙ্কার দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। ফলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার যেসব ক্রিকেটার প্রতিবছর বিপিএলের নিয়মিত মুখ হয়ে ওঠেন, এবার তাদের অনেককেই পাওয়া যাচ্ছে না। এতে টুর্নামেন্টের জৌলুস কিছুটা হলেও কমেছে—এমন ধারণা ক্রিকেটপ্রেমীদের বড় একটি অংশের।
বাস্তবতা হলো, বিপিএল একেবারেই তারকাহীন নয়। দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যেই এমন কয়েকজন আছেন, যারা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ও অভিজ্ঞতার কারণে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। পাশাপাশি কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটারও আছেন, যারা বড় লিগে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। এবারের বিপিএলে যাদের পারফরম্যান্সের দিকে বিশেষ নজর থাকবে, সেই সাত ক্রিকেটারকে নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন—‘বিপিএলের সাত তারা’।
মোস্তাফিজুর রহমান, কাটার ও স্লোয়ারের রাজা:
বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান আজ আর শুধু দেশীয় ক্রিকেটের তারকা নন, তিনি আন্তর্জাতিক ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটেরও পরিচিত মুখ। আইপিএল, আইএলটি–টোয়েন্টি, এলপিএল—প্রায় সব জায়গাতেই তার পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে। কাটার আর স্লোয়ারে ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করা এই পেসার বিপিএলের ১২তম আসরে খেলছেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে।
বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৮২ ম্যাচ খেলে মোস্তাফিজের উইকেট সংখ্যা ১০৫। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে তিনি চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। সামনে সুযোগ রয়েছে রুবেল হোসেনের (১১০) এবং তাসকিন আহমেদের (১২৭) উইকেটসংখ্যা ছাড়িয়ে যাওয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে আইপিএলে একদিনে রেকর্ড ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে দল পাওয়া কিংবা আইএলটি–টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে ২০২৫–২৬ বিপিএলে মোস্তাফিজকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ বেশ উঁচুতেই।
তাসকিন আহমেদ, ইতিহাস ছোঁয়ার পথে:
২০২৪–২৫ মৌসুমে দুর্বার রাজশাহী দল হিসেবে খুব একটা সফল না হলেও তাসকিন আহমেদ ছিলেন উজ্জ্বল। জাতীয় দলের এই ডানহাতি পেসার ২৫ উইকেট নিয়ে মৌসুমসেরা হন। ধারাবাহিক গতি, আগ্রাসন আর উন্নত লাইন–লেংথ তাকে এবারের বিপিএলের অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে বিবেচনায় রাখছে।
তাসকিন এবার খেলবেন রাজধানীর দল ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি এলপিএল ও আইএলটি–টোয়েন্টিতে খেলার অভিজ্ঞতা তাকে আরও পরিণত করেছে। বিপিএলে সাত মৌসুমে অংশ নিয়ে তাসকিনের মোট উইকেট ১২৭টি। আর মাত্র ২৩টি উইকেট পেলেই তিনি ছাড়িয়ে যাবেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সাকিব আল হাসানকে এবং হয়ে উঠবেন বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী।
রেকর্ডের হাতছানি নিঃসন্দেহে তাসকিনকে বাড়তি অনুপ্রেরণা দেবে। দলীয় সাফল্যের পাশাপাশি ব্যক্তিগত এই মাইলফলকও তাকে নজরকাড়া পারফরম্যান্সে উজ্জীবিত করতে পারে।
নাইম শেখ, রান দিয়েই জবাব :
নাইম শেখের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব বেশি সমৃদ্ধ নয়—এ কথা বাস্তব সত্য। বাংলাদেশ দলের জার্সিতে ৩৮টি টি–টোয়েন্টিতে তার গড় মাত্র ২৩.৮৮। কিন্তু বিপিএল এবং ঘরোয়া লিগে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক নাইমকে দেখে ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিশেষ করে ২০২৪–২৫ মৌসুমে তিনি যেন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন।
গত আসরে ১১ ম্যাচে ৫১১ রান করে ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি অর্ধশতক তার ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতার প্রমাণ। আগের সেরা ৩৫৯ রানকে অনেক পেছনে ফেলে দেওয়া এই পারফরম্যান্সই তাকে নিলামে একমাত্র কোটি টাকার বেশি দামের খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
বন্দর নগরীর দল নাইমকে দলে ভিড়িয়েছে বড় প্রত্যাশা নিয়ে। বিপিএলে নাইমের গড় ২৭.৯৪—যা টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোটেও খারাপ নয়। এবারের আসরেও তার ব্যাট থেকে বড় ইনিংস প্রত্যাশা করাই স্বাভাবিক।
ডেভিড মালান, নির্ভরতার প্রতীক :
ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান বিশ্বের প্রায় সব বড় ঘরোয়া লিগেই পরিচিত নাম। বিপিএলেও তার আলাদা অবস্থান রয়েছে। পাঁচ মৌসুমে পাঁচটি ভিন্ন দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। এবারের আসরে ষষ্ঠবারের মতো রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে দেখা যাবে এই বাঁহাতি ওপেনারকে।
বিপিএলে মালানের পরিসংখ্যানই তার গুরুত্ব বোঝাতে যথেষ্ট। ৩৭ ইনিংসে ১১৮৬ রান, গড় প্রায় ৪০। একটি সেঞ্চুরি ও আটটি অর্ধশতক তার মারমুখী কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের প্রমাণ। বড় মঞ্চে চাপ সামলানোর অভিজ্ঞতা তাকে রংপুরের জন্য নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত করেছে।
হাবিবুর রহমান সোহান, সম্ভাবনার গল্প :
রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপে ৩৫ বলে অপরাজিত সেঞ্চুরি ছুঁয়ে হাবিবুর রহমান সোহান নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। পাঁচ ইনিংসে ৫৭ গড়ে ২২৮ রান করে ছিলেন আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার। তার সাহসী ও আগ্রাসী ব্যাটিং চোখে পড়েছে অনেকের।
২০২২–২৩ বিপিএল থেকে নিয়মিত হলেও এখনও নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারেননি সোহান। ১২ ইনিংসে করেছেন মাত্র ১২৮ রান, সবশেষ আসরে ব্যাটিংয়ের সুযোগও পাননি। তবে নোয়াখালী এক্সপ্রেস মিনি নিলামে তাকে দলে নিয়েছে বড় প্রত্যাশা নিয়ে। সাম্প্রতিক ফর্ম যদি বিপিএলে ফলাতে পারেন, সোহান হয়ে উঠতে পারেন আসরের ‘এক্স–ফ্যাক্টর’।
তানজিদ তামিম, ছক্কার রাজা :
ছক্কা আর তানজিদ তামিম—এই দুই যেন এখন সমার্থক। ২০২৫ সালে ৩৮ ম্যাচে ৭৫টি ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি বৈশ্বিক তালিকায় দশম, আর বাংলাদেশিদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছেন। আগ্রাসী ব্যাটিংই তার প্রধান শক্তি।
২০২৪–২৫ মৌসুমে তানজিদ ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ১৪ ইনিংসে ৪২.৫৮ গড়ে ৪৮৫ রান, একটি সেঞ্চুরি ও চারটি অর্ধশতক তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকে পরিণত করে। গত মৌসুমে ঢাকার হয়ে খেলা এই বাঁহাতি ওপেনারকে দলে নিয়ে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স যে ঝুঁকি নেয়নি, তা আগের পারফরম্যান্সেই প্রমাণিত।
আজমতউল্লাহ ওমরজাই, অলরাউন্ড সমাধান :
আফগানিস্তানের আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২০২১–২২ আসর থেকে বিপিএলের নিয়মিত মুখ। পেস অলরাউন্ডার হওয়ায় তার চাহিদা সব লিগেই বেশি। সেই কারণেই আইপিএলের ১৯তম আসরের জন্য তাকে রিটেইন করেছে পাঞ্জাব কিংস।
আইপিএলের পাশাপাশি আইএলটি–টোয়েন্টি, এসএ টি–টোয়েন্টি ও এলপিএলেও নিয়মিত খেলছেন তিনি। বিপিএলে এবার আজমত খেলবেন সিলেট টাইটানসের হয়ে। এর আগে রংপুর ও ঢাকার জার্সিতে তাকে দেখা গেছে। বিপিএলে তার সংগ্রহ ২৬০ রান ও ২২ উইকেট—যা স্পষ্ট করে দেয়, ব্যাট কিংবা বল—দু’দিক থেকেই তিনি ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারেন।
তারকাসংকট, আন্তর্জাতিক সূচির চাপ ও দীর্ঘদিনের নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এই সাত ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সই অনেকটা নির্ধারণ করবে বিপিএলের দ্বাদশ আসরের রং, উত্তাপ, প্রতিযোগিতার মান ও দর্শক গ্রহণযোগ্যতার ভবিষ্যৎ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ঝাঁক ঘটনার সাক্ষী হয়ে শেষ হলো ২০২৫ সাল। ক্রিকেটের জন্য বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে ব্যক্তিগত ও দলীয় কীর্তি আর নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আবির্ভাবে। বিপরীতে ভারত–পাকিস্তানের দ্বৈরথ ও বিতর্কিত কিছু ঘটনা হয়ে থাকবে নেতিবাচক স্মৃতি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি দুই দেশের রাজনীতির উত্তাপ মাঠে ছড়িয়ে পড়া থেকে ট্রফি নিয়ে নজীরবিহীন ঘটনা, হাসির খোরকের সঙ্গে বিরক্তির কারণ হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা একপাশে রাখলে বেশ দারুণ একটি বছরই দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। প্রথমবারের মতো বিশ্বসেরার তকমা জুটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। আইসিসির দুটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে দেশটির পুরুষ দল আর প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ভারতের নারী দল।
ব্যাক্তিগত পারফরম্যান্সে দূত্যি ছড়িয়েছেন জো রুট, শুবমান গিল, জ্যাকব ডাফি ও শাই হোপের মতো অনেকেই। কোনো রথী-মহারথী সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন, কেউবা নির্দিষ্ট কোনো সংস্করণ থেকে অবসর নিয়েছেন। বছরের একেবারে শেষ দিকে অ্যাশেজের লড়াইকে আরও একবার একপেশে বানিয়ে ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ১১ দিনেই ইংলিশদের তুলোধুনো করে অ্যাশেজের ছাইদানি নিজেদের কাছে রেখে দেওয়া নিশ্চিত করে স্বাগতিক অজি।
ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার চূড়ান্ত রূপ: ক্রিকেটে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি দুই দেশের রেষারেষি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখে আসছে সমর্থকরা। তবে ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পরই মাত্রাটা বেড়ে যায়। এশিয়া কাপে তিনবার মুখোমুখি হয়ে প্রতিবারই হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানায় ভারতীয় খেলোয়াড়রা। ফাইনালে এসিসি চেয়ারম্যান পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভির হাত থেকে ট্রফি না নিয়ে অদৃশ্য ট্রফির অদ্ভুত উদযাপন করে সূর্যকুমার যাদবের দল। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত এই ট্রফির ঠিকানা হয় এসিসির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে।
সাফল্যের শীর্ষে ভারত : ভারতের পুরুষ দল জিতে দুটি বড় শিরোপা। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের অধরা স্বাদ পায় ভারতের নারী দল। মার্চে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতা ভারত সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানকে হারিয়ে জেতে টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ। এরপর নভেম্বরে ঘরের মাঠে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসে হারমানপ্রিত কৌরের ভারত।
অবশেষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা: তীরে এসে তরি ডোবাতে সিদ্ধহস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা অবশেষে নিজেদের নামের পাশ থেকে ‘চোকার’ তকমা সরায়। জুনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বসেরা হয় প্রোটিয়ারা। এইডেন মার্করামের ১৩৬ রানের অসাধারণ ইনিংসের নৈপুণ্যে চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রান তাড়া করে টেম্বা বাভুমার দল।
ইতালির ইতিহাস, নেপালের প্রথম: ফুটবলের চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা চমক দেখায় ক্রিকেটে। গত জুলাইয়ে ইউরোপের দেশটি প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ভারত-শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০ দলের কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে দেখা যাবে আইসিসির সহযোগী সদস্য দল ইতালিকে।
টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনেবারই জিতেছে নেপাল। তবে এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হওয়ার আগে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে এ অর্জন ছিল না দক্ষিণ এশিযার দেশটির। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নেমেই বাজিমাত করে নেপাল। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে তারা। গত সেপ্টেম্বরে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবিয়ানদের স্রেফ ৮৩ রানে ধসিয়ে দেয় নেপাল। ৯০ রানের ঐতিহাসিক এক জয়ে সিরিজ নিশ্চিতের বাঁধনহারা উদযাপনে মাতে তারা।
অ্যাশেজের রাজত্ব অস্ট্রেলিয়ারই: অপেক্ষা বাড়ল ইংল্যান্ডের। ঐতিহ্যের অ্যাশেজে আবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার মানতে হয়েছে ইংলিশদের। ২০১৫ সালের পর ছাইদানি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইংল্যান্ড এবার অজিদের পরাস্থ করার ঘোষণা দিয়েই আসে। তবে মাঠের খেলায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বেন স্টোকসের দল। প্রথম তিন ম্যাচেই রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে অ্যাশেজ খোয়ানোর পর চতুর্থ টেস্টে জয়ের দেখা পায় সফরকারীরা।
কোহলির দেড় যুগের অপেক্ষার সমাপ্তি: ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএলের) ট্রফির সঙ্গে যেন শত্রুতা ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। প্রতিবারই দুর্দান্ত দল নিয়েও খালি হাতে টুর্নামেন্ট শেষ করতে হতো বিরাট কোহলিদের। অনেক প্রথমের বছরে ক্রিকেট বিধাতা মুখ তুলে তাকায় এই ফ্রাঞ্চাইজিটির দিকেও। জুনে আহমেদাবাদে পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে আইপিএল-২০২৫ জেতে আরসিবি। আইপিএলের ১৮ বছরের মধ্যে এটি আরসিবির প্রথম শিরোপা। তবে উদযাপনের মধ্যেই ঘটে হৃদয়বিদারক ঘটনা। পরদিন কোহলির দল বেঙ্গালুরু পৌঁছালে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদদলিত হয়ে ১১ জন প্রাণ হারান, আহত হন অনেকে।
বিস্ময়বালক বৈভব সূর্যবংশীর উত্থান: ক্রিকেটবিশ্বে হঠাৎ হইচই ফেলে দেন ভারতের ১৪ বছর বয়সী এক ক্রিকেটার। এই বছরই বৈভবের আইপিএলে অভিষেক হয় বৈভব সূর্যবংশীর। ২৮ এপ্রিল রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে একটি ঐতিহাসিক ইনিংস খেলে আলোচনায় আসেন তিনি। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে বৈভব ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে, যা আইপিএলের ইতিহাসে ভারতীয় কোনো ব্যাটারদের মধ্যে দ্রুততম শতকের রেকর্ড। টি-টোয়েন্টিতে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়া বৈভব পুরো বছরজুড়েই তাণ্ডব চালিয়ে আলোচনায় ছিলেন।
উইয়ান মুল্ডার ৩৬৭*: বুলাওয়েতে উইয়ান মুল্ডারের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। বিশ্বরেকর্ডের স্বাক্ষী হওয়ার অপেক্ষায় ছিরেন সবাই। ২০০৪ সালের এপ্রিলে অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৪০০ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলা ব্রায়ান লারাও অধির অপেক্ষায় ছিরেন। তবে মুল্ডারের মনে ছিল অন্য পরিকল্পনা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে মধ্যাহ্নবিরতিতে গিয়েছিলেন মুল্ডার। অবিশ্বাস্যভাবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্যাটিংয়ে নামেনি! ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন অধিনায়ক মুল্ডার! ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তির রেকর্ড থাকল অক্ষত। পরে বলেছিলেন, কিংবদন্তির সম্মানেই নাকি রেকর্ড ভাঙেননি ২৭ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটার। ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এই স্মৃতি অম্লান থাকবে অনেকদিন।
ছক্কার সেঞ্চুরি, বোলিং ম্যাজিক : অস্ট্রিয়ার হয়ে খেলা ভারতীয় বংশোদ্ভূত করণবীর সিং ছক্কার বৃষ্টি নামিয়ে এনে রেকর্ড গড়েন। টি-টোয়েন্টিতে অবিশ্বাস্য ১২২টি ছক্কা হাঁকান, যা এক পঞ্জিকাবর্ষে বিশ্বরেকর্ড। এ বছর খেলা ৩২টি টি-টোয়েন্টিতে ১২২টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম এক পঞ্জিকাবর্ষে ছক্কার সেঞ্চুরি পেলেন কেউ। আগের রেকর্ডটা ছিল ২০২২ সালে সূর্যকুমার যাদবের।
৭ রানে ৮ উইকেট: ভুটানের এক তরুণ গড়েন ইতিহাস। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো এক ম্যাচে ৮ উইকেট শিকার করে বিশ্বরেকর্ডে নাম লেখান ভুটানের বাঁহাতি স্পিনার সোনাম ইয়েশে। ৬ ডিসেম্বর মায়ানমারের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ইয়েশে ৪ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে নেন ৮ উইকেট।
সবচেয়ে উজ্জ্বল গিল: বছরের শেষ দিকে চোটের কারণে জাতীয় দলের কয়েকটি ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ার মতো কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে শুভমন গিলকে। তবে ব্যাট হাতে পুরো বছর সবার থেকে উজ্জ্বল ছিলেন ভারতীয় ব্যাটারই। ২০২৫ সালে ৩৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৪২ ইনিংসে ১৭৬৪ রান করেছেন গিল। সর্বোচ্চ সাতটি সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে তিনটি ফিফটি। টেস্টে সর্বোচ্চ ৯৮৩ রান করেছেন ২৬ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটার।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন শাই হোপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা এই ব্যাটার সব সংস্করণ মিলিয়ে ৫০ ইনিংসে ১৭৬০ রান করেছেন। সেঞ্চুরি পাঁচটি, ফিফটি ৯। ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকের তালিকায় তিনে থাকা জো রুটের মোট রান ১৬৩১। ইংলিশ তারকা ব্যাটার গিলের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সাতটি সেঞ্চুরি করেছেন, সঙ্গে পাঁচটি অর্ধশতক। এ বছরই দুই কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিস ও রিকি পন্টিংকে ছাপিয়ে টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক হন রুট। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে ১৩৭৭৭ রান করা রুটের সামনে এখন শুধুই ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকার।
স্টার স্টার্ক: টেস্টে এ বছরের সফলতম বোলার অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক। সাদা পোশাকে তিনি নিয়েছেন সবচেয়ে বেশি উইকেট। এক পঞ্জিকা বর্ষে ন্যূনতম ৫০ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে এই ফাস্ট বোলার সর্বনিম্ন স্ট্রাইকরেটের বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ২০২৫ সালে ১১টি টেস্ট খেলা অজি পেসার ২৯.৫ স্ট্রাইকরেটে ৫৫ উইকেট নিয়েছেন স্টার্ক। ৫০ ওভারের ফরম্যাটে এই বছরের সেরা বোলার নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি। ২০২৫ সালে তিনি পেয়েছেন ৩১ উইকেট। টি-টোয়েন্টি’তে ৬৩ উইকেট নিয়ে এই সংস্করণের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বাহরাইনের আলি দাউদ।
২২ গজকে বিদায় বলেছেন যাঁরা: ২০২৫ সালে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছে বেশকয়েকজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। অবসর নেওয়ার এ তালিকায় আছেন ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের তারকারা। এক একজনের বিদায়ের সঙ্গে অবসান ঘটে সফল যুগের।
হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায়ের ইতি টানেন তামিম ইকবাল। ১০ জানুয়ারি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে পেশাদার ক্রিকেট জীবনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বাংলাদেশি ক্রিকেটার। বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের-এর বেশি রান করেছেন এই ব্যাটার। ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০২১ সালে টেস্ট ছাড়ার পর সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেও বিদায় বলেন তিনি।
ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা দুই ক্রিকেটার রোহিত শর্মা ও বিরাটে কোহলি টেস্ট থেকে অবসরের জন্য বছরটিকে বেছে নেন। ২০২৫ সালের মে’তে আইপিএলের মাঝপথে এবং ইংল্যান্ড সফরের ঠিক আগে টেস্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ারে দাঁড়ি টানেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার ভারতের হয়ে ১২৩টি টেস্টে ৯,২৩০ রান করেন। গড় ৪৬.৮৫, সেঞ্চুরি ৩০টি ও অর্ধশতক ৩১টি। ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণে ৬৮ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে ভারতকে ৪০টি জয় এনে দিয়েছেন কোহলি। টি-টোয়েন্টিকেও বিদায় বলে দেওয়া ৩৭ বছর বয়সী এখন শুধু ওয়ানডে খেলছেন।
কোহলির মতো একই সময়ে টেস্ট ছেড়েছেন রোহিতও। তিনি ৬৭ টেস্টে ৪,৩০১ রান করেন, গড় ৪০.৫৭, শতক ১২টি, অর্ধশতক ১৮টি। কোহলির মতো এই অভিজ্ঞ ব্যাটারও কেবল ওযানডে খেলছেন। এছাড়া ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ২০২৫ সালে অবসরের ঘোষণা দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, চেতেশ্বর পূজারা, ঋদ্ধিমান সাহা ও মোহিত শর্মা।
২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মার্টিন গাপটিল। নিউজিল্যান্ডের হয়ে এই ব্যাটার ১৯৮টি ওয়ানডে ও ১২২টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি রান আছে কিউই ব্যাটারের। নিজের ১০০তম টেস্ট খেলার পর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়েন শ্রীলঙ্কার ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে।

দুই দিনের জন্য স্থগিত হওয়ার পর এবার কমে গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটের দ্বাদস সংস্করণের ভেন্যু। চট্টগ্রামের মাঠে গওয়ার অপেক্ষায় থাকা সবগুলো ম্যাচ এখন সিলেটের মাঠেই হবে।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিপিএলের পরিবর্তিত সূচি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নতুন সূচি অনুযায়ী, সিলেটের মাঠে ১২টির বদলে হবে ২৪টি ম্যাচ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিপিএলের মঙ্গলবারের দুই ম্যাচ স্থগিত করে নেওয়া হয়েছে ৪ জানুয়ারিতে। পূর্ব নির্ধারিত সূচিতে ৫ তারিখ থেকে চট্টগ্রামে হওয়ার কথা ছিল বিপিএল।
কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটি আর সম্ভব হবে না। তাই ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিপিএলের সব ম্যাচ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই হবে।
এরপর ১৫ জানুয়ারি থেকে শেষ পর্বের জন্য ঢাকায় ফিরবে বিপিএল। লিগ পর্বের শেষ ৬টি ম্যাচ হবে শের-ই বাংংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। পরে প্লে-অফের ৪ ম্যাচও হোম অব ক্রিকেটেই অনুষ্ঠিত হবে।
পূর্ব ঘোষিত সূচি ঠিক রেখে ২৩ জানুয়ারিই হবে বিপিএলের ফাইনাল।

চলতি অ্যাশেজ সিরিজের মেলবোর্ন টেস্টে ছিল পেসারদের দাপট। মাত্র দুই দিনে শেষ হওয়া বক্সিং ডে টেস্টের পর আইসিসির হালনাগাদকৃত র্যাঙ্কিংয়েও বড় উন্নতি করেছেন বেশ পেসাররা।
মেলবোর্নে টেস্টে দুই দলের ৩৬টি উইকেটের সবকটিই নিয়েছেন পেস বোলাররা। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন ইংলিশ পেসার জশ টাং। এই পারফরম্যান্সের সুবাদে বোলিং র্যাঙ্কিংয়ে ১৩ ধাপ এগিয়ে তিনি উঠে এসেছেন ৩০ নম্বরে (৫৭৩ রেটিং পয়েন্ট)।
র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করেছেন টাংয়ের সতীর্থরাও। চোট কাটিয়ে মেলবোর্ন টেস্টে ফেরা গাস অ্যাটকিনসন তিন উইকেট নিয়ে চার ধাপ এগিয়ে যৌথভাবে ১৩ নম্বরে উঠেছেন (৬৯৮)। পাঁচ উইকেট নিয়ে ছয় ধাপ উন্নতি করে ২৩ নম্বরে উঠে এসেছেন ব্রাইডন কার্স (৬৩৮)।
অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক গত সপ্তাহের তুলনায় রেটিং পয়েন্ট কমলেও এক ধাপ এগিয়ে নোমান আলির সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন (৮৪৩)। স্কট বোল্যান্ড দুই ধাপ এগিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ৮১০ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে উঠেছেন।
মেলবোর্নে ব্যাট হাতে ২৮ রান করা অ্যাটকিনসন অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছেন (২৩৮)। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ধরে রেখেছেন তৃতীয় স্থান (৩১৬)।
মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪১ ও রান তাড়ায় অপরাজিত ১৮ রানের সুবাদে হ্যারি ব্রুক তিন ধাপ এগিয়ে টেস্ট ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠেছেন (৮৪৬)। শীর্ষে রয়েছেন জো রুট।
দুই ধাপ পিছিয়ে পাঁচ নম্বরে নেমেছেন স্টিভ স্মিথ, আর এক ধাপ নেমে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ট্রাভিস হেড।

তারকা পেসার ফজলহক ফারুকি ও অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার গুলবদিন নাইবকে ফিরিয়ে সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। দলের নেতৃত্বে আছেন রশিদ খান।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে আফগানিস্তান। ওই সিরিজেও এই একই দল নিয়ে নামবে তারা।
বাঁহাতি পেসার ফারুকি, পেস অলরাউন্ডার নাইব ছাড়াও আফগানিস্তানের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন রহস্য স্পিনার মুজিব উর রহমান ও ডানহাতি পেসার নবীন উল হক। গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরের দলের ছিলেন না ফারুকি ও নাইব।
বিশ্বকাপের দলে মুজিব জায়গা পাওয়ায় আরেক রহস্য স্পিনার আল্লাহ্ মোহাম্মদ গজনফারের জায়গা হয়নি। তবে রিজার্ভে আছেন তরুণ স্পিনার। যেখানে তার সঙ্গী ইজাজ আহমেদজাই ও জিয়াউর রহমান শরিফি।
২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবশেষ সংস্করণে সেমি-ফাইনাল খেলেছিল আফগানিস্তান। যে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে এটিই তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য।
আগামী ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রথম প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড। ডি গ্রুপে তাদের অন্য তিন সঙ্গী দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কানাডা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ ও বিশ্বকাপের জন্য আফগানিস্তান স্কোয়াড
রশিদ খান (অধিনায়ক), ইব্রাহিম জাদরান (সহ-অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ ইশহাক (উইকেটরক্ষক), সেদিকউল্লাহ অতল, দারউইশ রসুলি, শহিদউল্লাহ কামাল, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, গুলবদিন নাইব, মোহাম্মদ নবী, নুর আহমেদ, মুজিব উর রহমান, নবীন উল হক, ফজলহক ফারুকি, আব্দুল্লাহ ওমরজাই।
রিজার্ভ: আল্লাহ্ মোহাম্মদ গজনফার, ইজাজ আহমেদজাই ও জিয়াউর রহমান শরিফি