
ওয়ানডে রান তাড়ায় বিরাট কোহলি জ্বলে উঠবেন না, এটা যেন কোনোভাবেই হওয়ার নয়। দুবাইয়ের স্লো উইকেটে ভারতের এই ব্যাটিং তারকা আরও একবার জানান দিলেন, কেন তাকে ‘চেজ মাস্টার’ বলা হয়। স্টিভেন স্মিথ ও অ্যালেক্স কেরির ফিফটিতে অবশ্য লড়াকু পুঁজিই পেয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শুরুতে দুই ওপেনার হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়া ভারতের ইনিংস একাই টানলেন সেই কোহলিই। সেঞ্চুরি মিস করলেও তার ইনিংস ভর করে টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে জায়গা করে নিল ভারত।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। অজিরা গুটিয়ে গিয়েছিল ২৬৪ রানে, শেষের দিকে কিছুটা লড়াই ছাপিয়ে রোহিত শর্মার দল সেই টার্গেট পাড়ি দিয়েছে ১১ বল হাতে রেখে।
আইসিসি ইভেন্টের নকআউট পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটি এখন সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। আগেরটিও ছিল ভারতেরই।
আরও পড়ুন
| সেমিফাইনালে মার্করামের খেলা নিয়ে সংশয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা |
|
রান তাড়ায় বেন ডুয়ারসুইসের করা ইনিংসে দ্বিতীয় বলেই চার হাঁকান রোহিত। এরপর ন্যাথান এলিসকে মারেন ছক্কা। তবে ওই ওভারেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে তার দেওয়া সহজ ক্যাচ ফেলে দেন কুপার কনোলি। এরপর ডুয়ারসুইসের বলে আরও একবার উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক, তবে এবার ক্যাচ ফেলে দেন মার্নাস লাবুশেন।
অন্যপ্রান্তে অস্বস্তিতে থাকা শুবমান গিল ইনসাইড-এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান ডুয়ারসুইসের বলে। দারুণ ছন্দে ব্যাট করা রোহিতকে এরপর আক্রমণে এসেই ফিরিয়ে দেন কনোলি। তার বাঁহাতি স্পিনে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে আউট হন ২৮ রানে।
এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে জাগে জয়ের আশা। তবে শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ক্রমেই ম্যাচে ফিরে আসে ভারত। দুজন মিলে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনারদের সামাল দেন দারুণ দক্ষতায়। এরই মধ্যে ফিফটি হয়ে যায় কোহলি। এরপর একটা সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি একটা, তবে কনোলির বলে মিড-অফে ডাইভ দিয়েও ক্যাচ নিতে পারেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটির ইতি টানেন শেষ পর্যন্ত অ্যাডাম জাম্পা। অভিজ্ঞ এই লেগ স্পিনার আইয়ারকে ৪৫ রানে বোল্ড করে ভাঙেন ৯১ রানের জুটি। পাঁচে নামা আকসার প্যাটেল খেলেন কার্যকর এক ক্যামিও ইনিংস। তবে সেট হওয়ার পর তাকে বোল্ড করে ম্যাচে রোমাঞ্চ ফিরিয়ে আনেন এলিস।
শেষ ১২ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৭২ রান। কোহলি ও লোকেশ রাহুল ভালোভাবেই সেট হওয়ায় ম্যাচ ক্রমেই হেলে যাচ্ছিল ভারতের দিকে। আরও একবার আক্রমণে এসে দারুণ এক গুগলিতে কোহলিকে বিভ্রান্ত করে ক্যাচ বানান জাম্পা। তবে এর আগে মাত্র ৫ চারে ৯৮ বলে ৮৪ রানের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেওয়া ইনিংস উপহার দেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার।
আরও পড়ুন
| অধিনায়কত্ব হারিয়ে টি-টোয়েন্টি দল থেকেই বাদ রিজওয়ান, নেই বাবরও |
|
ওই উইকেটের পর ম্যাচে ফের রোমাঞ্চের সম্ভাবনা জাগলেও, রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়া মিলে ভারতকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। জাম্পার করা শেষ ওভারে টানা দুই ছক্কায় হার্দিক দ্রুত ম্যাচ শেষের কাজ সেরে ফেলেন। শেষ মুহূর্তে ২৮ রানে তিনি আউট হলেও ভারতের জয়ে এর প্রভাব আর পড়েনি। রাহুল অপরাজিত থাকেন ৪২ রানে।
এর আগে দিনের শুরুতে আগে ব্যাট করা অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের বড় হাইলাইট ছিলেন ট্রাভিস হেড। ভারতের বিপক্ষে বারবার সেরা সব ইনিংস খেলা এই মারকুটে ওপেনার এদিনও উড়ন্ত ছন্দেই ব্যাট করছিলেন। চার-ছক্কার মারে আভাস দিচ্ছিলেন বড় কিছুর। তবে এবার তিনি আর পারেননি। আক্রমণে এসেই তাকে ৩৯ রানে ফিরিয়ে দেন ভারুন চক্রবর্তী।
অন্য ওপেনার কনোলি রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন। এরপর ভারতের চার স্পিনার দিয়ে সাজানো আক্রমণ সামলে ইনিংস এগিয়ে নেন স্পিনের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সেরা দুই ব্যাটার স্মিথ ও লাবুশেন। জমে ওঠা এই জুটির ভাঙন ধরান রবীন্দ্র জাদেজা। তার শিকার হন লাবুশেন (২৯)।
স্মিথ একপ্রান্ত আগলে খেলেন দুর্দান্ত এক ইনিংস, যেখানে সম্ভাবনা ছিল তার সেঞ্চুরির। তবে ফিরতি স্পেলে এসে মোহাম্মদ শামি তাকে বোল্ড করে দেন ৭৩ রানে। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ইনিংস সাজান মাত্র ৪টি চার ও এক ছক্কায়।
২০৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে একটা ফাইটিং স্কোরের দিকে একাই টেনে নেন কেরি। অষ্টম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৬১ রানের লড়িয়ে এক ইনিংস। ৪৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভারতের সেরা বোলার ছিলেন পেসার শামি।
No posts available.
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৫৫ পিএম
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪:২২ পিএম
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৮ পিএম

অন্তঃকোন্দল ও মতবিরোধের জেরে আগামী মাসে পদ ছাড়ছেন নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডসি) প্রধান নির্বাহী স্কট উইনিঙ্ক। দেশটির ক্রিকেটের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এনজেডসির এক বিবৃতিতে উইনিঙ্ক বলেন,
‘ভেবেচিন্তে বুঝতে পেরেছি, নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অগ্রাধিকার, দীর্ঘমেয়াদি দিকনির্দেশনা এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভূমিকা নিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি কয়েকটি সদস্য সংস্থা ও অংশীজনদের থেকে আলাদা।’
উইনিঙ্ক বলেন, 'এই মতপার্থক্যের কারণে মনে করি, সংস্থার স্বার্থেই এখান থেকে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া সবচেয়ে ভালো।’
২০২৩ সালের আগস্টে এনজেডসির দায়িত্ব নেন স্কট উইনিঙ্ক। তবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মধ্যেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়েই মূলত এই সংকটের সূত্রপাত। উইনিঙ্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ব্যক্তিমালিকানাধীন নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ চালুর প্রস্তাব তিনি বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন।
এনজেড-টোয়েন্টি নামে ছয় দলের নতুন টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ২০২৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। নিউ জিল্যান্ডে বর্তমানে একমাত্র ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা সুপার স্ম্যাশের জায়াগা নেবে এই লিগ।
ছয়টি বড় সদস্য সংস্থা এবং নিউজিল্যান্ডের পেশাদার ক্রিকেটারদের স্বাধীন প্রতিনিধি সংগঠন নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (এনজেডসিপিএ) নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চালুর পক্ষে ছিল। তবে উইনিঙ্কের প্রস্তাব ছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে কিউই দল পাঠানোর। এই ভিন্নমতের কারণেই শেষ পর্যন্ত পদ ছাড়লেন তিনি।

নিজের ডেরায় ব্যাটে করতে নামলে একটি বেশিই জ্বলে উঠেন ট্র্যাভিস হেড। অ্যাশেজ সিরিজে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটার পার্থে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পর আজ অ্যাডিলেডে তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন।
অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে জন্মস্থানে সেঞ্চুরি করে হেড জায়গা করে নিয়েছেন এলিট এক ক্লাবে। একই ভেন্যুতে টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরি করা অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ ব্যাটার এখন হেড। বাঁহাতি ব্যাটারদের মধ্যে এই রেকর্ড একমাত্র তাঁরই।
এই কীর্তি গড়তে অবশ্য ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন হেড। আজ তৃতীয় দিনের খেলায় ৯৯ রানে আউট হওয়ার দুর্ভাগ্য হতে পারত তাঁর। ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক হেডের ক্যাচ ফেলেন। পরের ওভারেই শতক পূর্ণ করেন ৩১ বছর বয়সী অজি ব্যাটার।
অ্যাডিলেড ওভালে টানা চার ম্যাচে হেডের সেঞ্চুরির প্রথমটি আসে ২০২২ সালে- ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৭৫ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ২০২৪ সালে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে করেন আরেকটি সেঞ্চুরি। ভারতের বিপক্ষে গত বছরের ডিসেম্বরে ১৪০ রানের ইনিংস খেলেন হেড। অ্যাশেজে আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ হাঁকালেন আরেকটি সেঞ্চুরি।
এর আগে একই মাঠে টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছিলেন- ডন ব্র্যাডম্যান, মাইকেল ক্লার্ক ও স্টিভ স্মিথ। ব্র্যাডম্যান এই রেকর্ড গড়েন মেলবোর্ন ও হেডিংলিতে, ক্লার্ক অ্যাডিলেডে আর স্মিথ মেলবোর্নে। চলতি দশকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই কীর্তি কেবল হেডেরই।
এখনো পর্যন্ত কোনো অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার টেস্ট ক্রিকেটে একই ভেন্যুতে টানা পাঁচ ম্যাচে সেঞ্চুরি করতে পারেননি। হেডের সামনে অনন্য এই কীর্তি গড়ার সুযোগ রয়েছে।
হেডের ব্যাটে ভর করে দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেটে ২৭১ রান তুলে দিন শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় দিনশেষে ১৪২ রানে অপরাজিত রয়েছেন হেড। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্বাগতিকদের লিড এখন ৩৫৬ রানের। আরেকটি অ্যাশেজ জয়ের দ্বারপ্রান্তে অজিরা।

জফরা আর্চারকে সঙ্গে নিয়ে ১০৬ রানের জুটি বেন স্টোকসের। অ্যাডিলেড টেস্টে এইটুকু সময় কিছুটা আধিপত্য দেখা গিয়েছে সফরকারী ইংল্যান্ডের। মিচেল স্টার্কের বলে ক্যারিয়ারের ১২তম বারের মতো আউট হওয়ায় স্টোকসের লড়াইয়ের সমাধি সেখানেই। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া পায় ৮৫ রানের লিড। এরপর ট্রাভিস হেডের দারুণ শতকে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে তৃতীয় দিন শেষ করেছে অজিরা।
অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে মোকাবিলা করছে ইংল্যান্ড। আগের দুই টেস্ট হারায় এই টেস্ট ছিল ইংলিশদের জন্য সিরিজে ফেরার চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সিরিজ বাঁচাতে এখন আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে স্টোকসের দল। তৃতীয় দিনেই অস্ট্রেলিয়ার লিড ৩৫৬ রানের। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে আগামীকাল মাঠে নামবে তারা। ১৪২ রানে অপরাজিত থাকা হেডের সঙ্গে চতুর্থ দিন শুরু করবেন ৫২ রানে অপরাজিত আরেক ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি। দুজনের তুলেছেন ১২২ রান।
এর আগে ৮ উইকেটে ২১৩ রান নিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংসে শুক্রবার ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। দলীয় আরও ৬১ রান যোগ করার পর স্টোকসকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন স্টার্ক। ইংলিশ অধিনায়ক ফেরেন ব্যক্তিগত ৮৩ রান করে। দলীয় আর ১২ রান যোগ করার পর গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। আর্চারের লড়াই থামে ব্যক্তিগত ৫১ রানের মাথায়। প্রথম ইনিংসের অস্ট্রেলিয়ার ৩৭১ রানের জবাবে ইংল্যান্ড থামে ২৮৬ রানে।
৮৫ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে অজিরা। শুরুতে স্বাগতিকদের দুই উইকেট তুলে নিয়ে দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দেয় ইংলিশ বোলাররা। সেটি খানিক পরেই মিলিয়ে যায় উসমান খাজা আর হেডের প্রতিরোধের সামনে। খাজা ৪০ রানে ফেরার পর ক্যামেরুন গ্রিনও ক্রিজে টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ; জস টাংয়ের বলে আউট হয়েছেন ৭ রান করে।
এরপর আর হেড-ক্যারির জুটি ভাঙতে পারেনি ইংল্যান্ড। ৬ উইকেট হাতে থাকতেই অস্ট্রেলিয়া পায় লড়াইয়ের পুজি। এই টেস্টের এখনও বাকি দুই দিন। ইতোমধ্যে পাওয়া ৩৫৬ রানের লিডটাকে বাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া কোথায় নিয়ে যায় সেটি থাকবে দেখার অপেক্ষা। তবে এই টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে অতিমানবীয় কিছুই করে দেখাতে হতে হবে ইংল্যান্ডকে।
আগের দুই টেস্টের মতো অ্যাডিলেড টেস্টেও পরাজয় বরণ করলে শত বছরের অ্যাশেজ সিরিজের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে সিরিজ হারানোর লজ্জায় ডুববে ইংল্যান্ড।

মাউন্ট মঙ্গানুইতে চলছে রান উৎসব। প্রথম দিন রেকর্ডের পসরা সাজিয়ে সেই উৎসব শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। আজ দ্বিতীয় দিনেও কিউইদের রান বন্যার জবাব দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজও।
এক উইকেটে ৩৩৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা নিউ জিল্যান্ড আজ ইনিংস ঘোষণা করেছে আরো ২৪১ রান যোগ করে। ১৫৫ ওভার ব্যাট করে ৮ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৫৭৫ রান তুলে ক্ষান্ত হয় স্বাগতিকরা। ১৭৮ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা ডেভন কনওয়ে করেন ডাবল সেঞ্চুরি।
এরপর প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত দৃঢ়তায় কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৩ ওভারে ১১০ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশ্য এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে সফরকারীদের। ক্যারিবিয়রা পিছিয়ে এখনো ৪৬৫ রানে। ফিফটি করেছেন ব্র্যান্ডন কিং (৫৫), জন ক্যাম্পেবেলের রান ৪৫।
প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনটা বেশ ভালোয় শেষ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাটিং সহায়ক পিচ আর কন্ডিশনের সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি দুই ক্যারিবিয় ওপেনার। এর আগে দিনের শুরুতে বোলাররাও নিউ জিল্যান্ডের রান তোলার গতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
নিউ জিল্যান্ডের বড় ইনিংসের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনারই। প্রথম দিনে টম লেথামের শতক আর দ্বিতীয় দিনে কনওয়ের দ্বি-শতক। ৩১ চারে ৩৬৭ বলে ২২৭ করা কনওয়ের এটি টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। এর আগেও অবশ্য একবার ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছিলেন ৩৪ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটার।
বাকি ব্যাটারদের মধ্যে ফিফটি করেন রাচিন রবীন্দ্র। ১০৬ বলে ৭২ রানে অপরাজিত ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। এছাড়া কেইন উইলিয়ামসনের ৩১ গ্লেন ফিলিপসের ২৯ আর এজাজা প্যাটেল করেন ৩০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন জায়ডিন সিলস, অ্যাডারসন ফিলিপ ও জাস্টিন গ্রিভস। কেমার রোচ ও রোস্টন চেজের শিকার একটি।

অ্যাশেজে চলছে স্নিকো বিতর্ক। অ্যাডিলেড টেস্টে স্নিকোর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং এই প্রযুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক।
তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনের ঘটনা— গতকাল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি ৭২ রানে ব্যাট করছিলেন। জশ টাংয়ের বলে তাঁর ব্যাটে হালকা ছোঁয়া লেগে বল উইকেটরক্ষকের হাতে ধরা পড়ে। আউটের জোরাল আবেদন উঠলেও মাঠের আম্পায়ার নট আউট দেন।
ইংল্যান্ড রিভিউ নিলে তৃতীয় আম্পায়ার স্নিকোমিটারে একটি শব্দের স্পাইক লক্ষ্য করেন। তবে সেটি বল ব্যাটের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ের সঙ্গে মেলেনি। শব্দটি কয়েক ফ্রেম আগেই এসেছিল। অডিও-ভিডিওর এই অসামঞ্জস্যতার কারণে নট আউটের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।
আজ স্নিকোমিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিবিজি স্পোর্টস পুরো দায়ভার স্বীকার করে জানায়, অপারেটরের ভুলে বোলারের প্রান্তের মাইক্রোফোন নির্বাচন করা হয়েছিল। এর ফলেই অডিও ও ভিডিওর মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। এই ত্রুটি স্বীকারের পর আইসিসি ইংল্যান্ডকে তাদের হারানো একটি রিভিউ ফেরত দেয়।
স্নিকো নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা। প্যাট কামিন্সের বলে উসমান খাজা প্রথম স্লিপে সম্ভাব্য ক্যাচ ধরেছেন কি না সিদ্ধান্তে জেমি স্মিথকে নট আউট দেওয়া হয়। তৃতীয় আম্পায়ার স্নিকো দেখে জানান, বলটি স্মিথের হেলমেটে লেগেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের দাবি বলটি গ্লাভসে লেগেছিল।
স্টাম্প মাইক্রোফোনের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে স্টার্ক বলেন,
‘স্নিকোকে বাদ দেওয়া উচিত। এটাই সবচেয়ে খারাপ প্রযুক্তি। ওরা আগের দিন ভুল করেছে, আজও আরেকটা ভুল করল।’
দুই ওভার পরে কামিন্সের বলে স্মিথ ক্যাচ আউট হন, যা নিয়ে মাঠে হতাশা প্রকাশ করেন স্মিথ ও বেন স্টোকস। স্নিকোতে দেখা যায়, বল ব্যাট পেরোনোর এক ফ্রেম পর স্পাইক এসেছে।
স্নিকো নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিংও। চ্যানেল সেভেনকে তিনি বলেন,
‘এখানে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অন্য দেশগুলোর প্রযুক্তির মতো ভালো নয়। আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বললে তারাও একই কথা বলবেন। তাঁরা এটা বিশ্বাস করতে পারেন না।’
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ মার্কাস ট্রেস্কোথিক স্নিকো নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের আহ্বান জানান,
‘গতকাল আমরা একটি খারাপ সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছি, আর আজও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিষয়টি ঠিক করতে হবে।’