২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ পিএম
একটা টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে সবচেয়ে বেশি কোন প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেতে পারে? যেখানটায় ম্যাচটা মাঠে গড়াবে, সেই মাঠটা কেমন? উইকেট কেমন হতে পারে? বা আবহাওয়াটাইবা কেমন ঐ অঞ্চলের? দলে কোনো পরিবর্তন আসবে কি?
কানপুরে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় টেস্টের আগে সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর বেশ কঠিন ও যথেষ্ট জটিলও বটে। এক-দুই কথায় সেসবের সমাধান করা আসলে সম্ভব নয় তাই একে একে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।
সবচেয়ে আগে আসা যাক মাঠের ব্যাপারটায়। কানপুরের বিখ্যাত গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম। ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরের এই স্টেডিয়ামটার আছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। বাংলাদেশে যখন মহান ভাষা আন্দোলনের দামামায় উত্তাল জনতা, ঠিক সেই সময়টায় অর্থাৎ ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে সর্বপ্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালে স্থাপিত এই স্টেডিয়ামটিতে। মজার ব্যাপার হল, ৭২ বছরে মোটে ২৩টা টেস্ট ম্যাচই হয়েছে কানপুরের এই মাঠে।
তুলনা করতে যদি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট টানা হয়, তাহলে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে বিগত প্রায় দেড় যুগ ধরে। ২০০৬ সাল থেকে এরই মধ্যে মিরপুরে ২৭টা আর সাগরিকায় ২৪টা টেস্ট ম্যাচ আয়োজন হয়ে গেছে।
আসলে ভারতে এতো এতো মাঠে খেলা হয় যে, ঘুরেফিরে একটা মাঠে টেস্ট ম্যাচ আসতেই দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছর লেগে যায়। ভারতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হওয়া ইডেন গার্ডেন্সেই ৯০ বছরের ইতিহাসে ম্যাচ হয়েছে মাত্র ৪২টি! এমনকি গেল ৫ বছরে কোনো টেস্ট ম্যাচই সেখানে হয়নি। সবশেষ সেখানে টেস্ট খেলেছিলো বাংলাদেশই। সে হিসেবে অবশ্য একেবারেও কম খেলা হয়নি কানপুরে।
নাম গ্রিন পার্ক। মাঠের চারপাশে প্রচুর সবুজের সমারোহ আছে বটে, কিন্তু যদি উইকেটের দিকে আলোকপাত করা হয়, তাহলে তিল পরিমাণ সবুজও সেখানে খুঁজে পাবেন না আপনি। সবুজ সিগনাল না থাকলেও থাকছে না চেন্নাইয়ের মতো রেড সিগনাল অর্থাৎ লাল মাটির উইকেটও। বাংলাদেশের ঘরের মাঠের মতো কালচে উইকেটই থাকার কথা কানপুরে। তবে তাতেই অবশ্য এতোটা আশাবাদী হবার সুযোগও নেই। কারণ, কালো পিচ হলেও, মিরপুরের মতো এতো টার্ন অবশ্য মিলছে না কানপুর থেকে।
ঐতিহ্যগতভাবে কানপুর ফ্ল্যাট উইকেটই উপহার দেয়। কালো মাটির উইকেট দেখেই যদি কেউ ভাবেন যে মিরপুরের মতো একেবারে একপেশে স্পিন সহায়ক উইকেট হবে, তো সে জায়গাটায় হয়তো তিনি ভুলই করবেন। স্পিনারদের জন্য দরকারি র্যাম্প টার্ন কিংবা অতিরিক্ত কোনো টার্নই যে মিলছে না এই উইকেট থেকে।
বাংলাদেশের স্পিন ইউনিটের বড় ভরসার জায়গা সাকিব আল হাসান তো এই ব্যাপারে বলেই দিয়েছেন যে, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের মতো দলের বিপক্ষে খেলার সময়ে আসলে উইকেটের খুব একটা ভূমিকা থাকে না। বাংলাদেশকে যেভাবেই হোক, চেন্নাইয়ের চেয়ে ভালো খেলাটা মাঠে খেলতে হবে।
শুরুর একটা বা দু’টা সেশনে পেসারদের বেশ সুবিধা মিলবে যদিও চেন্নাইয়ের মতো এতো বাউন্স মিলবে না কানপুরের উইকেট থেকে। দ্রুতই স্পিনারদের পক্ষে কথা বলবে কানপুর। এমনকি শেষ দুটো দিনে উইকেট ভেঙে প্রায় পুরো সুবিধাটাই মিলতে পারে স্পিনারদের।
তবে শেষ দুটো দিন। এখানে ব্যাপারটা একটু জটিলই হয়ে গেছে। শেষ দুটো দিনের হিসেবেটা বদলে যেতে পারে শুরুর দুটো দিনেই। বাংলাদেশে যেমন এই মুহূর্তে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে, একই চিত্র কানপুরেও। তীব্র দাবদাহের ধারা ভেঙে আজ থেকেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেখানে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে বেরসিক এই বৃষ্টি ভেস্তে দিতে পারে টেস্টের শুরুর দুই দিন। সেটা ঘটলে কিন্তু ঐ শেষ দুই দিনে স্পিনারদের আধিপত্য মিলবে না দুই দলের কারোরই। তিন দিনের খেলায় ফলও আসবে কিনা সেটাও হয়তো প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। যদিও উপমহাদেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস আর বাস্তবতা কতোখানি মেলে, তা নিশ্চয়ই আমাদের জানা আছে ভালোমতোই।
এবারে আসা যাক, দলের প্রশ্নে। দুই দলে কী কী পরিবর্তনের দেখা মিলতে পারে? আদৌ কি কোনো পরিবর্তনের দেখা মিলবে? চেন্নাইয়ে দুই দলই তিন পেসার আর দুই স্পিনার নিয়ে খেলেছে। যেহেতু চেন্নাইয়ের লাল মাটির উইকেটের মতো অতো পেসবান্ধব উইকেট নয় কানপুর, সেহেতু এটা বলাই যায় যে একজন অতিরিক্ত স্পিনারের দেখা দুই দলেই মিলতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলাম।
টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তাইজুল পাকিস্তানে রাওয়ালপিন্ডির দুই টেস্টে আনফরচুনেইটলি জায়গা পাননি, তাঁর জায়গা মেলেনি চেন্নাইয়েও। কন্ডিশন বিবেচনায় যৌক্তিত হলেও খানিকটা দূর্ভাগা তো তাইজুল বটেই। তবে এবারে কানপুরের পরিস্থিতি বিবেচনায় একটা সুযোগ তাঁর মিলতেই পারে। সেক্ষেত্রে হয়তোবা বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট পেসার নাহিদ রানাকে একটা বিশ্রাম দিতে পারে।
একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসছে চেন্নাই টেস্টে ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিটে একাদশের শুরুর ছয়জনের পাঁচজনই বাঁহাতি। ওপেনিংয়ে শাদমান-জাকির, ওয়ান ডাউনে ক্যাপ্টেন শান্ত, মিডল অর্ডারে মোমিনুল আর সাকিব। অর্থাৎ পাঁচে মুশফিকুর রহিম নামার আগে পর্যন্ত চারজনই বাঁহাতি।
যদিও বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্বাচক হান্নান সরকার ভারত সফরের আগে বলেছিলেন, এই লেফট হ্যান্ড, রাইট হ্যান্ড কম্বিনেশনের চেয়ে তাঁরা আসলে স্কিলটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তবে মাঠের খেলায় আসলে ফলটা বলেছে ভিন্ন কথাই। সেটা বুমরাহ-সিরাজ কিংবা অশ্বিন-জাদেজাদের পরিকল্পনা সাজাতে হেল্প করছে কিনা সেটা এখন ভাববার বিষয় সেই জায়গাটায় হয়তোবা দুই ওপেনারের একজনকে বিশ্রাম দিয়ে মাহমুদুল হাসান জয় একটা সুযোগ পেতে পারেন।
ভারত দলে অবশ্য চিত্রটা ভিন্ন। স্পিন-পেস দুই বিভাগেই সমানভাবে অবদান রেখেছেন বুমরাহ-অশ্বিনরা। ব্যাট হাতেও অধিনায়ক রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলি ছাড়া আর সবাই রান করেছেন। কাজেই একটা মধুর বিড়ম্বনাতেই হয়তো ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টে পড়তে হচ্ছে।
আকসার প্যাটেল শুরুর ম্যাচে খেলেননি। তবে দলে জাদেজার মতো কার্যকর স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স বোলার থাকায় তাঁর মতো একই ধরণের বোলার আকসারের চেয়ে বরং কানপুরের লোকাল বয় কুলদীপ ইয়াদাভ দলে আনতে পারেন ভ্যারিয়েশন। আকাশ দীপের জায়গায় একটা জায়গায়ই হয়তো বদল দেখা যেতে পারে ভারত দলে।
উইকেট, আবহাওয়া কিংবা দল যেমনই হোক না কেন, মাঠের খেলায় বাংলাদেশকে ভালো খেলার ধারায় ফিরতে হবে। পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে বড় কৃতিত্বের সুখ স্মৃতি নিয়েই ভারতে খেলতে গিয়েছিলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল। চেন্নাইয়ে শুরুর টেস্টের সে ব্যর্থতার গল্প ভুলে তাই কানপুরে শান্ত-মুশফিকদের নজরটা সরাসরি তাই জয়ের দিকেই থাকা চাই।
চ্যালেঞ্জ অনেক, লড়াইটাও বেশ শক্ত। আর সে লড়াইটা উপভোগ করতে হলে শুক্রবার ছুটির দিনে দেরি করে ঘুম থেকে উঠলেও, সেটা কোনোক্রমেই সকাল ১০টার বেশি দেরি করা চলবে না। আড়মোড়া ভেঙেই আপনাকে চোখ রাখতে হবে দেশের প্রথম ও একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি স্পোর্টসের পর্দায়।
১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৪:২২ পিএম
১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৪:০৬ পিএম
পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হবে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। এর পেছনের কারণ ভারতের সেখানে যেতে অনীহা। আর তাতে বেশ বেকায়দায় পড়েছে আইসিসি। ১১ নভেম্বর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা করতে পারেনি সংস্থাটি। তবে এর মধ্যেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একটি প্রোমো প্রকাশ করেছে আইসিসি। সেখানে আয়োজক দেশ হিসাবে পাকিস্তানের নামই দেখা যায়। এতে করে ভারত না গেলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তানেই হবে- এমন ধারনা পাওয়া যাচ্ছে।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রোমোতে পুরুষ ও নারীদের প্রতিযোগিতার কথা বলা হয়েছে। পুরুষ বিভাগে আটটি দল ও নারীদের বিভাগে খেলবে ছ’টি দল। পুরুষদের লড়াই ৫০ ওভারের, আর নারীদের প্রতিযোগিতা হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এখন ভারত যদি না যায় তাহলে কি অন্য কোন দেশকে সুযোগ দেবে আইসিসি? পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও তো ভারতকে ছাড়ায় টুর্নামেন্ট আয়োজনের হুমকিও দিয়েছে।
মূলত আইসিসি পাকিস্তানকে জানিয়েছে যে ভারত সে দেশে খেলতে যেতে চাইছে না। পাকিস্তান বলছে খেলতে না যাওয়ার কারণ লিখিত আকারে জানাতে হবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। পাকিস্তানের সরকারের কাছেও পরামর্শ চেয়েছিল বোর্ড। নিজেদের কঠোর অবস্থান পরিস্কার করেছেন শাহবাজ শরিফ, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন একটি ম্যাচও পাকিস্তানের বাইরে যেন না হয়!
ভারতের আবদারে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান। এবার আর গত এশিয়া কাপের মতো হাইব্রিড মডেলে প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে না পাকিস্তান। এই বিষয়ে আইসিসিকে পাল্টা চাপ দেওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছেন পাক ক্রিকেট কর্তারা। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে যাওয়ার পথও খোলা রাখছেন তাঁরা।
যদিও আইসিসি কর্তারা ভারতের ম্যাচগুলির জন্য বিকল্প ব্যবস্থার পরিকল্পনা শুরু করেছেন। সেক্ষেত্রে আরব আমিরাতের ভেন্যুগুলোকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। যদিও পাকিস্তান নাছোড়বান্দা! কোনরকমেই তারা পাকিস্তানের বাইরে কোন ম্যাচ আয়োজন করতে চায় না! আর এর মধ্যেই প্রতিযোগিতার প্রোমো প্রকাশ করে দিয়েছে আইসিসি। যাতে সঙ্কট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে অনুশীলন শুরু করেছে রংপুর। মোহাম্মদ আশরাফুলের অধীনে গ্লোবাল সুপার লিগের আগে প্রথম দিনের অনুশীলনে দলটা। ক্রিকেটার আশরাফুলের পরিচয় এখন বদলে গেছে, ক্রিকেটার থেকে কোচ বনেছেন এই ৪০ বছর বয়সী।
টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে পাঁচ দেশের পাঁচটি ভিন্ন দল। কঠিন মনে হলেও গ্লোবাল সুপার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যের কথাই জানিয়েছেন আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সহজ হবে না। কঠিন হবে। তারপরও আমি মনে করি যে এটা আমাদের স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য বড় একটা সুযোগ। গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি, এটা পুরো বিশ্বে সবাই ফোকাস করবেন যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে থাকেন। আমাদের দেশ থেকে খেলোয়ড়রা এতটা সুযোগ পায় না গ্লোবালে যে টুর্নামেন্টগুলো হয়। ’
এই সহকারী কোচ আরো যোগ করেন, ‘এটা একটা সুযোগ আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য। কঠিন হবে। তবুও আমার মনে হয় আমাদের সবার দলগত পারফরম্যান্স যদি ভালো থাকে, ব্যক্তিগত পারফরমান্সও যদি ভালো করে তাহলে অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল খেলা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য তো সবার থাকে। তবে প্রথম লক্ষ্য ফাইনাল খেলা।’
দলের প্রথম দিনের অনুশীলনে দেখা গেছে ভিন্ন এক জার্সি। জুলাইয়ে নিহত ছাত্র জনতার জন্য রংপুরের ছিল বিশেষ পরিকল্পনা। দলটার টিম ডিরেক্টর শানিয়ান তানিম বলেন, ‘সবমিলিয়ে আমি মনে করি আমরা এই পুরো জার্সিটাকে পুরো বাংলাদেশকে ডেডিকেট করতে চাই। বাংলাদেশের প্রতিটা কোণায় যদি এই জার্সিটা দেখে একটু হলেও রংপুরের জন্য সমর্থন আসে, সেটাই আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে।