গোয়ালিয়রের শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সবকিছুই নতুন ঝা চকচকে। নতুন তো হওয়ারই কথা! এই মাঠে এখনো গড়ায়নি একটা বলও। কী করে অপেক্ষায় থাকে একটা স্টেডিয়াম, নিজের প্রথমের জন্য তাই দেখা যাক।
দুনিয়ার সব মাঠই স্বাগত জানাবে বিশালতা দিয়ে। মধ্যপ্রদেশের এই মাঠও তাই। পার্থক্য কেবল এখানে এলে টের পাওয়া যাবে নতুনত্বের।
মাঠের সিটগুলোতেও টের পাওয়া যায়। আসন সংখ্যা ত্রিশ হাজার। বাংলাদেশ-ভারত প্রথম টি-টোয়েন্টির প্রত্যেক টিকিট সোল্ড আউট। ভারতীয়রা এই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইবে মাঠে।
মাটি নয়া নয়নাভিরাম! দূরের পাহাড় অবশ্য আপনাকে স্বাগত জানাবে খানিক সৌন্দর্য দিয়েও।
দিনের ছবিতে উত্তাপ টের পাওয়া গেলো না হয়তো। তবে গুগলের কল্যাণে জানা গেলো, আপনি ঐ দুপুরে অনুভব করছিলেন তাপমাত্রা প্রায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা কিংবা রাতে অবশ্য তা কমে আসে। দেখা মেলে মাঠের খানিক সৌন্দর্যও।
ভারতে সব মিলিয়ে এর আগে ৫৩ ভেন্যুতে হয়েছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ। শুধু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হয়েছে ২৫ ভেন্যুতে। কতখানি ক্রিকেট জনপ্রিয়তার দেশ জানা যায় এতেই।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার সাথে তুলনাতেই ধরা পড়ে তা। সবচেয়ে বনেদী ক্রিকেটীয় জাতির দুই দেশে আন্তর্জাতিক ম্যাচের ভেন্যু রয়েছে ২৩টা করে। দুই দেশের সম্মিলিত মাঠও ভারতের চেয়ে কম। এই না হলে ভারতীয়দের ক্রিকেট প্রেম?
আপাতত কেবলই অপেক্ষা। প্রথম বলটা কখন মাঠে গড়াবে সেই প্রতীক্ষায় গোয়ালিয়ারের মানুষ। অপেক্ষায় ৬ সেপ্টেম্বরের। মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামের হচ্ছে নতুন এক শুরু।
৪ আগস্ট ২০২৫, ৯:১৬ পিএম
অনেকটা সময় ধরেই ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ যোগাচ্ছে ভিন্ন মাত্রার রোমাঞ্চ। সেই ধারায় ব্যত্যয় ঘটেনি এবারও। পঞ্চম টেস্টের পঞ্চম দিনে গিয়ে নিষ্পত্তি হয়েছে সিরিজের, যেখানে নাটকীয় এক জয়ের মধ্য দিয়ে ২-২ সমতা টানতে সমর্থ হয় ভারত। ফলে প্রথম অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে জয় পেল না কোনো দলই। তবে মাঠের ক্রিকেটে দুই দলের ক্রিকেটাররা নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দিয়েছেন। গড়েছেন দারুণ সব রেকর্ড।
ওভালে সিরিজের শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৩৭৪ রানের টার্গেট দিয়েছিল ভারত। এক পর্যায়ে ৪ উইকেটে ৩৩২ থেকে শেষ পর্যন্ত ৩৬৭ রানে গুটিয়ে ৬ রানে হেরে যায় ইংলিশরা। এটি টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়ের নতুন রেকর্ড। এর আগেরটি ছিল ২০০৪ সালে। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেবার ১৩ রানে জিতেছিল ভারত।
ইংল্যান্ডের জন্য এটি হয়ে থাকবে আরেকটি জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচের মঞ্চ। তাদের ইতিহাসের সামগ্রিকভাবে রানের দিক থেকে ভারতের কাছে এই হার তৃতীয় অবস্থানে যৌথভাবে সবচেয়ে কম ব্যবধানে টেস্টে পরাজয়ের রেকর্ড। তালিকায় প্রথম তিনটি অবস্থানে রয়েছে ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ১ রানে হার, ১৯০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩ রানে হার এবং ১৮৮৫ সালে অজিদের কাছেই ৬ রানের হার।
টেস্ট ইতিহাসে এটাই প্রথমবার কোনো দল ৩০০ বা তার বেশি রান তাড়া করতে গিয়ে ১০ রানের কম ব্যবধানে হেরেছে। এর আগে সর্বনিম্ন ব্যবধান ছিল ১১ রানের। ম্যাচটি ছিল ১৯২৫ সালে, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে।
জয়ের জন্য এক সময়ে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৬ উইকেটে মাত্র ৪২ রান। টেস্টে এমন অবস্থান থেকে ৩০০ বা তার বেশি রান তাড়া করতে গিয়ে হারের নজির আর নেই।
এই সিরিজে একমাত্র ভারতীয় পেসার হিসেবে পাঁচ ম্যাচেই খেলা মোহাম্মদ সিরাজ বল করেছেন ১৮৫.৩ ওভার, যা ২০০২ সালের পর এক সিরিজে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওভার বোলিংয়ের রেকর্ড।
শেষ টেস্টে ভারতকে জেতাতে ফাইফার নেওয়া সিরাজ নিয়েছেন ২৩ উইকেট, যা ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতীয় পেসারের যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। ২০২১-২২ মৌসুমে জাসপ্রিত বুমরাহও নিয়েছিলেন ২৩ উইকেট।
এই সিরিজে ব্যাট হাতে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা পারফর্মার ছিলেন জো রুট। শেষ তিন টেস্টে করেন টানা তিন সেঞ্চুরি। এর মধ্য দিয়ে ভারতের বিপক্ষে তার সব ফরম্যাট মিলিয়ে তার সেঞ্চুরি হয়েছে ১৬টি।
এর মধ্যে রুট কেবল টেস্টেই ভারতের বিপক্ষে করেছেন ১৩টি সেঞ্চুরি, যা একটি নির্দিষ্ট দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ড। শীর্ষে থাকা স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ১৯টি সেঞ্চুরি রয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
ইংল্যান্ডের হয়ে এই সিরিজে সেরা খেলোয়াড় হওয়া হ্যারি ব্রুক মাত্র ৫০ ইনিংসে করেছেন ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি, যা গত ৮০ বছরে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ১০টি টেস্ট শতকের রেকর্ড।
এই সিরিজের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, প্রতিটি ম্যাচই গড়িয়েছে শেষ দিন পর্যন্ত। এই শতাব্দীতে মাত্র চতুর্থবার এটা ঘটেছে। অন্য তিনটি ছিল ২০০১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০৪-২৫ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড এবং ২০১৭-১৮ অ্যাশেজ।
অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে চলতি মাসে হতে যাওয়া টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নেবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল, নিশ্চিত ছিল আগেই। এই সফরকে সামনে রেখে সোমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) স্কোয়াড ঘোষণা করেছে, যেখানে অধিনায়ক করা হয়েছে কিপার-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানকে।
টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে ‘এ’ দল প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে বিগ ব্যাশ লিগের দুই দল মেলবোর্ন স্টার্স, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স ছাড়াও পাকিস্তান ‘এ’, নেপাল, পার্থ স্কোর্চার্স, নর্দার্ন টেরিটরি স্ট্রাইককে। এছাড়া এই সফরে একটি চারদিনের ম্যাচেও অংশ নেবেন সোহানরা।
সূচি অনুযায়ী, আগামী ৯ আগস্ট ডারউইনে পা রাখবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে তারা মাঠে নামবে ১৪ আগস্ট, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে। এরপর যথাক্রমে খেলবে নেপাল, পার্থ স্কোর্চার্স, নর্দার্ন টেরিটরি স্ট্রাইক, মেলবোর্ন স্টার্স এবং অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে। ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে এই সিরিজের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ।
এই সিরিজ শেষে আগামী ২৮ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচে খেলবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। তবে এই ম্যাচটির ভেন্যু এখনও নির্ধারিত হয়নি।
বাংলাদেশ ‘এ’ স্কোয়াড: নুরুল হাসান সোহান (অধিনায়ক), সাইফ হাসান, মোহাম্মদ নাঈম, জিসান আলম, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, ইয়াসির আলী চৌধুরী, আফিফ হোসেন, তোফায়েল আহমেদ, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, রাকিবুল হাসান, মাহফুজুর রহমান রাব্বি, নাঈম হাসান, মুসফিক হাসান, রিপন মন্ডল, হাসান মাহমুদ।
চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৮ এবং ৩৭১ তাড়া করে জয়ের অতীত আছে ইংল্যান্ডের। দুবারের প্রতিপক্ষ ভারত। সে কারণে ওভাল টেস্টে ৪র্থ ইনিংসে ৩৭৪ রানের টার্গেটকে কঠিন মনে করেনি ইংল্যান্ড। লক্ষ্যটা যখন ৩৫ রান, হাতে ৪ উইকেট- ওভাল টেস্টের ৫ম দিনে এমন একটা পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে যখন ইংল্যান্ড, তখন ইংল্যান্ডের পক্ষে বাজি ধরার পক্ষেই থাকবে যে কেউ। তবে ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা, মাত্র ৪টি ভাল বল ঘুরিয়ে দিতে পারে খেলার ফলাফল, সে বিশ্বাসে বদ্ধমূল ছিলেন ভারতের দুই পেসার সিরাজ, প্রসিধ কৃঞ্চা।
২০১৮ সালের পর ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারের রেকর্ড নেই ভারতের। সেই থেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ টেস্টের ২টিতে জয়, ১ টি ড্র করতে পেরেছে ভারত। ২০২০-২১ মৌসুমে ইংল্যান্ডের মাটি থেকে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-২-এ ড্র'র সুখস্মৃতি আছে ভারতের। সেই অতীত থেকে প্রেরণা নিয়ে ওভালে সিরিজের শেষ টেস্ট ৬ রানে জিতে ২-২এ এবার সিরিজ ড্র করেছে ভারত।
বৃষ্টিতে ৪র্থ দিন আগেভাগে খেলা থেমে যাওয়ায় ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন হয়েছে। ৫ম দিনের দ্বিতীয় ওভারে সিরাজের ওয়াইড সুইংয়ে জেমি স্মিথ (২) স্লিপে লো ক্যাচে থেমে গেলে ম্যাচ জয়ের আবহ পায় ভারত। সিরাজ পরের ওভারে অ্যাঙ্গেল ডেলিভারিতে ওভারটনকে এলবিডাব্লুউতে দিয়েছেন ফিরিয়ে (৯)। দারুণ ইয়র্কারে জস টং (০)-কে প্রসিধ কৃঞ্চা বোল্ড করলে জয়ের সুবাস পায় ভারত। এক হাতের ইনজুরি নিয়ে অনোন্যপায় হয়ে অ্যাটকিনসনকে সাপোর্ট দিতে নেমেছিলেন ওকস। তবে অ্যাটকিনসন বিফল হয়েছেন। সিরাজকে সুইপ করতে যেয়ে বোল্ড আউটে (২৭ বলে ১৭) থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওভাল টেস্ট জিতে সমতায় সিরিজ শেষ করেছে ভারত।
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ২৩ রানের বেশি লিড নিতে দেননি ভারতের দুই পেসার সিরাজ (৪/৮৬) এবং প্রসিধ কৃঞ্চা (৪/৬২)। দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতের হিরো এই দুই পেসার। ৪১তম টেস্টে ইনিংসে ৫ম বারের মতো ৫ উইকেটের মুখ দেখেছেন সিরাজ (৫/১০৪)। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন তিনি।
টেস্ট ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটাও তার ওভালে (৯/১৯০)। যশওয়াল (১১৮), রুট (১০৫), হ্যারি ব্রুকের (১১১) সেঞ্চুরি ওভাল টেস্টের লড়াইয়ে দিয়েছে উত্তাপ। তবে ইংল্যান্ডের দম্ভ চূর্ণ করেছেন ভারত পেসার সিরাজ চতুর্থ ইনিংসে বিধ্বংসী স্পেলে (১২.১-৩-৩৬-৩)।
মেঘলা আবহাওয়া হওয়ায় ভারতের পেসাররা বাড়তি আশার আলো নিয়েই নামলেন মাঠে। তবে দিনের প্রথম দুই বলেই তাদের বড় ধাক্কা দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকালেন জেমি ওভারটন। তবে দুই ওভারে দুই উইকেটে ম্যাচ জমালেন মোহাম্মদ সিরাজ। এরপর আরেকটি উইকেটের পতনে এক হাতে ব্যাট করতে নেমে গেলেন ক্রিস ওকস। তবে শেষ রক্ষা আর হলো না। সিরাজের ফাইফারে জয় থেকে মাত্র ৭ রান দূরে থাকতে থেমে যেতে হল তাদের। আর ভারত পেল স্মরণীয় এক জয়।
ওভালে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে ভারত জিতেছে মাত্র ৬ রানে। ৩৬৭ রানে থেমেছে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস। ফলে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শেষ হল ২-২ সমতায়।
আবহাওয়া মেঘলা থাকায় পঞ্চম দিনের সকালে ছিল বেশ ঠান্ডা। চারদিন খেলার পর ক্লান্ত উইকেটে ব্যাটিং কিছুটা কঠিন হওয়ার কথা। তবে ইংল্যান্ডের সামনে ছিল উইকেটে ভারী রোলার নেওয়ার সুযোগ, যা তারা কাজে লাগায়। ফলে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা ছিল তাদের সামনে।
অন্যদিকে প্রথম দিন ম্যাচ থেকেই ছিটকে যাওয়া ক্রিস ওকস ব্যস্ত সময় কাটান ইনডোরে। সেখানে তিনি ব্যাট করেন এক হাতেই। বাঁ কাঁধে চোট পাওয়ায় তার সামনে এটা ছাড়া আর উপায়ও নেই। ইংল্যান্ডের দরকার পড়লে তিনি বাঁহাতি ব্যাটার হিসেবে নামবেন বলেই আসে খবর।
অন্যদিকে ভারতের সামনে নতুন বল নেওয়ার সুযোগ মাত্র ৩.৪ ওভার পরই। এমন রোমাঞ্চকর পরিস্থিতিতে দিনের প্রথম বলেই প্রাসিধ কৃষ্ণকে চার মেরে ইংলিশ শিবিরে ইতিবাচক আবহ তৈরি করেন ওভারটন। পরের বলে মারেন আরেকটি চার। চার বলে ৮ রান নিয়ে ম্যাচ দ্রুত শেষ করার আভাস দেয় ইংল্যান্ড।
তবে উজ্জীবিত মোহাম্মদ সিরাজ আরও একবার ভারতকে ম্যাচে ফেরান। নিজের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শিকার বানান ২ রান করা কিপার-ব্যাটার জেমি স্মিথকে। ওই ওভারেই যেতে পারত আরেকটি উইকেট। তবে তিন বল বাদে গাস আটকিনসন তুলে দিয়েছিলেন ক্যাচ, তবে কভার পয়েন্টে কেউ না থাকায় সুযোগ হারায় ভারত।
প্রাসিধের করা দিনের তৃতীয় ওভারে চার রান আদায় করেন আটকিনসন ও ওভারটন মিলে। তবে দ্রুতই তাদের প্রতিরোধও আটকে দেন সেই সিরাজ। কয়েকবার বিট করার পর শেষ পর্যন্ত সাজঘরের পথ দেখান ওভারটনকে। ইনসুইঙ্গারে পরাস্ত হয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। আরও উজ্জ্বল হয় ভারতের জয়ের আশা।
এই উইকেট পতনের সময় ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে দেখা যায় ওকসকে। তিনি ডান হাতে পড়েন আর্ম গার্ড, যা নিশ্চিত করে দেয়, তিনি ব্যাট করবেন বাঁ হাতেই। এরই মাঝে জস টাংকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে দিয়েছিলেন প্রাসিধ। তবে রিভিউ নিয়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে সমর্থ হন তিনি।
তবে খানিক বাদেই দারুণ এই ইয়র্কারে তাকে ক্লিন বোল্ড করে দেন প্রাসিধ। এক হাতেই ব্যাট করতে নেমে যান ওকশ। তবে তাতে সুরক্ষা দিতে বড় শট নেওয়ার চেষ্টায় প্রতিটি বল মোকাবেলা করেন আটকিনসন। একবার লং অফে ক্যাচ দিয়েছিলেন, তবে আকাশ দ্বিপ ক্যাচ ফেলে ছক্কা বানিয়ে দেন।
এরপর টানা দুই ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল আসে ইংল্যান্ডের। তবে রান হয় মাত্র তিন। ফলে বাড়ে চাপ। একের পর এক বড় শট মারতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া আটকিনসন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই হন। সিরিজে এক হাজারের বেশি ডেলিভারি করা সিরাজের ইয়র্কারে বোল্ড হতে হয়। উল্লাসে মেতে ওঠে ভারত, আর হতাশাই সঙ্গী হয় ইংল্যান্ডের। ১০৪ রানে ৫ উইকেট নেন সিরাজ।
ফিল্ডিং করার সময় বাঁ কাঁধে আঘাত পেয়ে ছিটকে গিয়েছিলেন গোটা ম্যাচ থেকেই। ক্রিস ওকস তাই বোলিং তো নয়ই, এমনকি ব্যাটিংও করতে পারবেন না বলেই জানানো হয়েছিল। তবে ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটার জো রুট জানিয়েছেন, ভারতের বিপক্ষে চলমান টেস্টে দলের প্রয়োজন হলে এক হাতেও ব্যাট করতে প্রস্তুত অভিজ্ঞ এই পেসার।
ওকসের চোটের ব্যাপারে বিস্তারিত এখনো জানায়নি ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। ধারণা করা হচ্ছে, তার বাঁ কাঁধ ডিসলোকেট হয়েছে। ফলে এ গ্রীষ্মে তো বটেই, ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া পার্থ অ্যাশেজ টেস্টেও অনিশ্চিত তার খেলার বিষয়টি। চতুর্থ দিন ওকসকে ড্রেসিংরুমে দেখা গেছে এক হাত প্লাস্টার করা অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে তার ব্যাটিং করাটা প্রায় অবিশ্বাস্যই।
তবে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট হাতে রেখে ৩৫ রান প্রয়োজন বলেই আসছে ওকসের ব্যাট করার সম্ভাবনার কথা। রুটও দিয়েছেন সেই পালে হাওয়া।
“ওকসের মতো পুরো দলের সবাই জেতার জন্য নিজেদের শরীরের সর্বোচ্চটা নিংড়ে দিয়ে লড়ছে। এটা এমন একটা সিরিজ, যেখানে আমরা সবার কাছ থেকেই সেরা নিবেদনটাই দেখতে পেয়েছি। আশা করি তাকে ব্যাট করতে হবে না, কিন্তু সে প্রস্তুত আছে। আর এখান থেকেই এই ম্যাচটা তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যাচ্ছে।”
ওকস চোট পান প্রথম দিনের শেষ পর্যায়ে একটি বাউন্ডারি আটকাতে গিয়ে। ম্যাচ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটকে যাওয়ার ঘোষণা এলেও, চতুর্থ দিন শেষ বেলায় সাদা পোশাক পরে প্রস্তুত হয়ে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন শেষ ব্যাটার হিসেবে নামার জন্য। এর আগে ইনডোরে একহাতে ব্যাটিং অনুশীলনও করেছেন তিনি। ডানহাতি ব্যাটার যদি শেষ পর্যন্ত নেমেও যান, তাহলে তিনি কোন হাতে ব্যাট করবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা রুট মনে করেন, দলের জন্য ওকস শেষ বিন্দু দিয়েই লড়বেন।
“আমি এখনো তাকে অনুশীলনে দেখিনি। কাল (সোমবার) সকালে কিছু থ্রোডাউন দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। তবে ব্যথা যে বেশ তীব্র, তা দেখেই বোঝাই যাচ্ছে। তবুও সে মাঠে নামতে চায়, ব্যাট করতে চায়। ঠিক যেমনটা এই সিরিজে অন্যদের কাছ থেকেও আমরা দেখেছি, যেমন রিশাভ পান্তভাঙা পা নিয়েই ব্যাট করেছে। এই সিরিজটা তাই দুই দলের খেলোয়াড়দের জন্য হৃদয় দিয়ে লড়াই করার মঞ্চ হয়ে গেছে।”