“সবাই শুধু তোমার রেকর্ড আর মাইলফলকগুলো নিয়েই কথা বলবে - কিন্তু আমি মনে রাখব সেই অশ্রুগুলোর কথা, যা তুমি কখনও কাউকে দেখাওনি; আমি মনে রাখব সেই যুদ্ধগুলো, যা কেউ দেখেনি; আর তোমার সেই নিঃশর্ত ভালোবাসা, যা তুমি এই ফরম্যাটটাকে দিয়েছ। প্রতিটি টেস্ট সিরিজের পর তুমি ফিরে এসেছো আরও একটু বেশি জ্ঞানী হয়ে, একটু বেশি স্থির হয়ে। তোমার এই পুরো যাত্রাটা দেখা ছিল আমার জন্য অনন্য এক সৌভাগ্য। কোনো এক অজানা কারণে আমি সবসময় ভেবেছি তুমি সাদা পোশাকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবে। কিন্তু সবসময়ের মত নিজের হৃদয়ের কথাই শুনেছো।”
- কথাগুলো বিরাট কোহলিকে নিয়ে বলেছেন তার সহধর্মিণী ও বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা। ক্রিকেটের প্রতি বিরাট কোহলির নিবেদন সবচেয়ে কাছ থেকে যিনি দেখেছেন, তার বলা কথাগুলোই বুঝিয়ে দেয় লাল বলের ক্রিকেটকে কীভাবে ধারণ করতেন ভারতীয় এই ব্যাটিং গ্রেট।
এই করতেন বলার কারণ, গত কয়েকদিনের গুঞ্জনকে সত্যি করে অনেকটা নীরবেই ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন কোহলি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে নাকি জোর চেষ্টাই ছিল অত্যন্ত ইংল্যান্ড সফরে তাকে খেলানোর। মাস দুয়েক আগেও ব্যাপারটি নিয়ে যে আলোচনা হতে পারে, সেটাই তো ছিল বিস্ময়কর। কারণ, টেস্টকেই তো সবচেয়ে বেশি লালন করলেন। তবে আনুশকা শর্মা যেমনটা বলেছেন, মনের কথা শুনেছেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার।
আরও পড়ুন
নাহিদ-তাসকিনদের নতুন বোলিং কোচ টেইট |
![]() |
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসেও কোহলি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বর্ণিল এক চরিত্র হিসেবে। শচীন টেন্ডুলকার ভারতের ক্রিকেট ‘ঈশ্বর’, যিনি ছিলেন ব্যক্তি হিসেবে ধীরস্থির, শান্ত আর নিখুঁত ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। আর কোহলি তার ঠিক বিপরীত। তিনি বুনো চরিত্রের ভীষণ আগ্রাসী একজন ক্রিকেটার, যিনি ব্যাটসম্যানশিপের চূড়ান্ত স্তরে থাকার পাশাপাশি মাঠে প্রতিপক্ষকে একচুল ছাড় দিতে নারাজ। অধিনায়ক ও খেলোয়াড় হিসেবে ভারতকে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে হয়। আর এই বিষয়গুলো অনেক সময়ই আড়াল হয়ে যায় হাজার হাজার রান বা সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরির স্তুতিগাথায়।
কোহলির অধিনায়কত্বে ভারত প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতে ২০১৮-১৯ মৌসুমে। তার সময়েই ভারত একটা লম্বা সময় ধরে থাকে টেস্টের র্যাংকিংয়ে শীর্ষে।
লাল বলের ক্রিকেটে কোহলির অবসরের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শচীন বলেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের পরের প্রজন্মকে এই ফরম্যাটের প্রতি আগ্রহী করে তোলায় তার উত্তরসূরি রেখেছেন বিশাল এক অবদান। খুব একটা ভুল বলেননি তিনি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে যে নিবেদন, আগ্রাসন দেখাতেন কোহলি, তা পুরো বিশ্ব ক্রিকেটেই ছিল উপভোগ্য এক বিষয়।
আর সেই কাজটা করতে গিয়ে অধিনায়ক হিসেবে বড় একটা পরিবর্তন আনেন ভারতীয় ক্রিকেট সংস্কৃতিতে। ফিটনেস ও পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব এসেছে তার হাত ধরেই। কীভাবে টেস্টের প্রতিটি বলেই সমান একাগ্রতা নিয়ে লড়তে হয়, খাদের কিনারায় থেকেও আশার প্রদীপ জ্বালাতে হয়, সেটা সামনে থেকে দেখিয়েছেন ম্যাচের পর ম্যাচ ধরে।
সবসময়ই স্পিনে শক্তিশালী হওয়ায় ভারতের জন্য দেশের মাটিতে জেতাটা সহজ হলেও বিদেশের মাটিতে টেস্টে বড় সাফল্য পাওয়া ছিল ভীষণ অনিয়মিত ঘটনা। সেটা বুঝতে পেরে কোহলি সবার আগে জোর দেন গতিময়, আগ্রাসী পেসারদের দলে নেওয়ার। সেটার ফলও ভারত পায় হাতেনাতে। ‘সেনা’ দেশগুলোতে তার অধিনায়কত্বেই দলটি পায় নিজেদের ইতিহাসের সেরা সব সাফল্য। এই ফরম্যাটকে বিদায় জানানোর সময় কোহলি যখন দেখছেন দলে পেসারদের আধিপত্য এমনকি ঘরের মাটিতেও, তখন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই পারেন তিনি।
এক নজরে কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ার :
• ১২৩টি টেস্ট
• ৯ হাজার ২৮৩ রান
• গড় : ৪৬.৮৫
• শতক : ৩০
• ডাবল সেঞ্চুরি : ৭ (ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ)
• ফিফটি ৩১
• সর্বোচ্চ : ২৫৪*
• অধিনায়ক হিসেবে ৬৮ ম্যাচে, ৪০টি জয় - ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
তবে টেস্টের কোহলিকে স্রেফ রান-সেঞ্চুরি দিয়ে মাপতে গেলে ভুলই করবেন আপনি। যে সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জোয়ারে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পাঁচদিনের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ, সেই সময়েই কোহলি এই ফরম্যাটকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব। ব্যাটিংয়ে প্রতিটি রানের জন্য তার লড়াই, ফিল্ডিংয়ে প্রতিটি বলেই আগ্রাসন দেখানো, উইকেট পতনে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠা, এই জিনিসগুলোর কারণেই তিনি সবার চেয়ে আলাদা হয়ে থাকবেন। এভাবেই এই যুগে এসেও ভারতের তরুণ প্রজন্ম কোহলিকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়, হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট খেলার, রেকর্ড গড়ার, ইতিহাসের অংশ হওয়ার।
আরও পড়ুন
রোহিতের পর টেস্ট অবসরের পথে কোহলিও? |
![]() |
এই প্রসঙ্গে স্টিভেন স্মিথ একবার বলেছিলেন,
“সে শুধু একজন গ্রেট খেলোয়াড়ই নয়, একজন দুর্দান্ত প্রতিপক্ষও। খেলার মাঠে বিরাট শুধুমাত্র নিজের প্রাণশক্তিই নিয়ে আসে না, পুরো দলের মাঝেও সেটা ছড়িয়ে দেয়।”
খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দর্শকদের কাছেও কোহলি ছিলেন এমন একজন, যিনি টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি তৈরি করতে পেরেছিলেন অন্যরকম এক আবেদন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তেমনই একজন যেমনটা বলেছেন,
“আমরা শুধু তাকে খেলতেই দেখতাম না, আমরা তার করা প্রতিটি রান, প্রতিটি চিৎকার, শূন্যে মারা প্রতিটি ঘুষিকেও অনুভব করতাম। সে কেবল ক্রিকেট খেলতই না, সে এটিকে কেন্দ্র করেই চলত।”
একজন স্পোর্টসম্যানের জন্য এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! কোহলি সেটা করতে পেরেছেন, কারণ টেস্ট ক্রিকেটকে তিনি সত্যিকারের ভালোবাসাই দিয়ে গেছেন শেষ দিন পর্যন্ত। এই কারণেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের বিদায়ী টেস্ট সিরিজে তিনি সংগ্রাম করে একটা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, ছন্দে না থেকেও ছিলেন সিরিজের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। এতোটাই ছিল টেস্ট ক্রিকেটার কোহলির প্রভাব।
হার না মানা মানসিকতার কারণেই কোহলি ২০২০ সালের পর থেকে এই ফরম্যাটে সেরা ছন্দে না থেকেও লড়াই চালিয়ে যেতে পেরেছেন। আসলে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের সময়টা বাদ দিলে কোহলির টেস্ট গড়টা থাকতে পারত আরও ইর্ষনীয়। এই মাপের একজন ব্যাটার কেন আর কীভাবে এত লম্বা সময় অফ ফর্মে আটকে থাকলেন, সেটা বড় এক রহস্যই থেকে যাবে। তবে ওয়ানডে গ্রেট কোহলিকে এরপরও আপনাকের টেস্টের সেরাদের কাতারের বিবেচনা করতেই হবে।
সেটা কেন, তা নিয়ে চলতে পারে নানা তর্ক। তবে ২০১৪ সালে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চতুর্থ ইনিংস রান তাড়ায় যে ইনিংসটি খেলেছিলেন, সেটা ক্রিকেটের প্রিয় একজন ছাত্র সহজে ভুলতে পারবেন না। একটা হেরে যাওয়া ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি কীভাবে দাগ কেটে যেতে পারে, সেটা অনুভব করতে হলে আপনাকে সেই ম্যাচটি দেখতে হবে বারবার।
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর ৩৬৪ রানের টার্গেটে নেমে ড্রয়ের আশা বাদ দিয়ে ব্যাট চালান জয়ের লক্ষ্যে, প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যা ছিল অবিশ্বাস্য এক চেষ্টাই। এই দফায়ও সেঞ্চুরি করে ছুটছিলেন জয়ের লক্ষ্যেই। তবে নাথান লায়নের বলে ক্যাচ দিয়ে তার ফেরার পরই পথ হারিয়ে ভারত ম্যাচও হেরে যায়। আউট হওয়ার পর চোখেমুখে যে অবিশ্বাস আর হতাশা ছিল কোহলির, ঠিক সেই কারণেই তিনি টেস্ট গ্রেট হয়ে উঠেছেন। জয়ের জন্য শেষ বিন্দু নিংড়ে দেওয়া কোহলি তাই লাল বলের ক্রিকেটের একজন বড় বিজ্ঞাপন হয়েই প্রাণবন্ত থাকবেন ইতিহাসের পাতায়।
No posts available.
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:০৮ এম
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১৪ এম
আফগানিস্তানকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কার দারুণ জয়ের আনন্দ হয়তো বেশিক্ষণ করতে পারলেন না দুনিথ ভেল্লালাগে। কারণ ম্যাচ শেষ না হতেই তিনি পেয়েছেন বাবার মৃত্যুর খবর। কলম্বোতে সম্ভাব্য হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বাঁহাতি স্পিনারের বাবা সুরঙ্গা ভেল্লালাগে।
শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম নিউজওয়্যার এক প্রতিবেদনে ও শ্রীলঙ্কার প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক রেক্স ক্লেমেন্ত এক টুইটার জানিয়েছেন এই খবর। জানা গেছে, ম্যাচ শেষ হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজার ভেল্লালাগেকে তার বাবার মৃত্যুর করুণ সংবাদটি দিয়েছেন।
প্রয়াত সুরঙ্গা নিজেও একজন ক্রিকেটার ছিলেন। কখনও স্বীকৃত ক্রিকেটে না খেললেও, স্থানীয় পর্যায়ের ক্রিকেট খেলেছেন দুনিথ ভেল্লালাগের বাবা।
আরও পড়ুন
দেখে নিন সুপার ফোরে বাংলাদেশের সূচি |
![]() |
ব্যক্তিগতভাবে দিনটি সব দিকেই খুব খারাপ কাটালেন দুনিথ ভেল্লালাগে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ১৭ রান দেন তিনি। কিন্তু শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে মোহাম্মদ নবির কাছে ৫টি ছক্কা হজম করেন ২২ বছর বয়সী স্পিনার।
এর আগে দুশমন্থ চামিরার বলে নবির ক্যাচও ছাড়েন দুনিথ ভেল্লালাগে। তখন মাত্র ৫ রানে ছিলেন নবি। ওই সময় জীবন পেয়েই শুরু হয় তাণ্ডব। শেষ পর্যন্ত মাত্র ২২ বলে খেলেন ৬০ রানের রেকর্ড গড়া এক বিধ্বংসী ইনিংস।
বল হাতে বাজে পারফরম্যান্সের পর কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিসের সৌজন্যে ম্যাচ জেতার আনন্দ পান দুনিথ ভেল্লালাগে। কিন্তু এরপরই যেন জীবনের সবচেয়ে খারাপ সংবাদটি পৌঁছায় তার কানে।
পয়সা উসুল ম্যাচ যাকে বলে- আজ আবু ধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচ ছিল তার চেয়েও বিশেষ। এই ম্যাচে দুই দেশের দর্শকদের সঙ্গে ধুকপুকানি ছিল বাংলাদেশেরও। কারণ, দুই দলের জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভর করেছিল লিটন দাসদের সুপার ফোরে ওঠার ভাগ্য। শেষ পর্যন্ত আফগানদের ৬ উইকেটের পরাজয়ে আখের লাভ বাংলাদেশের।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে নিয়ে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা |
![]() |
সুপার ফোরের ম্যাচ গুলো শুরু হবে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে। শেষ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। আর ফাইনাল ২৮ সেপ্টেম্বর।
জেনে নেওয়া যাক। কবে কখন বাংলাদেশের ম্যাচগুলো।
দেশ | প্রতিপক্ষ | তারিখ | সময় | ভেন্যু |
বাংলাদেশ | শ্রীলঙ্কা | ২০ সেপ্টেম্বর | রাত ৮.৩০ | শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়াম, আবু ধাবি |
বাংলাদেশ | ভারত | ২৪ সেপ্টেম্বর রাত | ৮.৩০ মিনিট | দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম |
বাংলাদেশ | পাকিস্তান | ২৫ সেপ্টেম্বর রাত | ৮.৩০ মিনিট | দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম |
অনেক সমীকরণ। যদি-কিন্তু আর হিসাব নিকেশ। অথচ ক্রিকেট বোদ্ধাদের চায়ের টেবিলের সব আড্ডা আর নোটবুকের আঁকিবুকি উবে গেল এক শ্রীলঙ্কার কারণে। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চারিথ আসালাঙ্কাদের ৭ উইকেটের জয়ে সুপার ফোরের টিকিট নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
আজ আবু ধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করা আফগানিস্তানকে ১৬৯ রানের পুঁজি এনে দিতে সাহায্য করেন মোহাম্মদ নবি। পরে ৮ বল হাতে রেখে তা টপকে যায় শ্রীলঙ্কা।
আরও পড়ুন
এডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর প্রেরণে ক্রীড়া সচিবকে বিসিবি সভাপতির নির্দেশ |
![]() |
বাংলাদেশকে সুপার ফোরে তুলতে ১৭০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পাড়ি দিতে হতো শ্রীলঙ্কাকে। হেরে গিয়েও লিটন দাসদের শেষ চারে উঠিয়ে দিতে পারত লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কা ১০০ বা এর কম রানে আটকে গেলেই আসালাঙ্কার দলকে নেট রান রেটে পেছনে ফেলত বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে নিয়ে উঠে যেত সুপার ফোরে। তবে রশিদ খানদের ব্যর্থতায় লঙ্কানদের সঙ্গে সুপার ফোরে পৌঁছালো বাংলাদেশ।
এদিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ২০ বলে অর্ধশতক তুলেছেন নবি। তা না হলে ১৫ রানের বেশি তোলাই হতো না আফগানদের। ইনিংসের শেষ দুই ভারে মূলত বানের পানির মতো রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে। ওভারে দুনিথ ভেল্লালাগকে ৫ ছক্কা মারেন নবি। শেষ ওভারে দলের স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয় ৩২ রান। এর আগের ওভারে দুশমন্থ চামিরাকে টানা তিন চার মারেন নবি। অথচ ইনিংসের ১৮ ওভার কালীন মনে হচ্ছিল সাদামাটা পুঁজি গড়তে যাচ্ছে আফগানরা। এক নবিই সব হিসেব বদলে দিলেন। ১৭তম ওভারের সময় আফগানদের রানরেট ছিল ৬.৬৬। পূর্ণাঙ্গ ইনিংস শেষে সেটি দাঁড়ায় ওভারপ্রতি ৮.৪৫ রান।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে সুপার ফোরে ওঠাতে শ্রীলঙ্কার সমীকরণ |
![]() |
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কার উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। দলের ২২ রানের মাথাতে ৫ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এক প্রান্ত আগলে ধরে খেলেছেন কুশল মেন্ডিস। তিনে নেমে কামিল মিশারা ফেরেন ১০ বলে ৪ রান করে।
চারে নামা কুশল পেরেরা ভালোই শুরু পান। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৫৩ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। পাওয়ারপ্লের শেষেও ছুটেছে লঙ্কানরা। দুই কুশলের উইলোবাজিতে কক্ষপথেই ছিল লঙ্কানরা। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে ইতি টেনে দেন কুশন ও কামিন্দু।
বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে আগামী ৪ বছরের জন্য বিসিবির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দেখতে চান বলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহামুদ সজীব ভূঁইয়ার ইচ্ছের কথা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কীভাবে বুলবুল সভাপতি পদে নির্বাচিত হবেন, তার ছকঁও একেঁছে ক্রীড়া প্রশাসন। ক্যাটাগরি-২ তে ক্লাব কোটার ১২ পরিচালকের সব কটিতে তামিম সমর্থিত প্যানেলের জয়ের আভাস পেয়ে বিকল্প উপায় হিসেবে ক্যাটাগরি-১ এ জেলাও বিভাগীয় কোটার ১০, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ২ পরিচালক, ক্যাটাগরি-৩ এ সাবেক ৫ অধিনায়ক, ১০ সাবেক জাতীয় ক্রিকেটারও প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটার, বিভিন্ন সার্ভিসেস, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ডসমূহ, এনএসসি এবং সংশ্লিস্টদের ভোটে নির্বাচিত ১ পরিচালক কোটার পূর্ণ সমর্থন পেতে চাইছে বুলবুল। সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে হলে দরকার ২৫ পরিচালকের মধ্যে ১৩টি ভোট। সে কা্রণেই ছঁক এঁকে বুলবুলের সমর্থনে ১৩টি পরিচালক পদ নিশ্চিত করতে এখন মাঠ প্রশাসনকে কাজে লাগাচ্ছে ক্রীড়া প্রশাসন এবং বিসিবি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে সুপার ফোরে ওঠাতে শ্রীলঙ্কার সমীকরণ |
![]() |
গত ৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট মোহাম্মদ হোসেনকে প্রধান নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিসিবি। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিসিবির সভায় আগামী ৪ অক্টোবর নির্বাচনের দিনক্ষণ ধার্য করে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্ব স্ব ক্লাব, সংস্থা এবং জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাছে মনোনীত কাউন্সিলর নাম প্রেরনের নির্দেশ দিয়েছিল বিসিবি। বিসিবির নির্দেশনা মেনে কাউন্সিলরের নাম প্রেরন করেছে সংশ্লিষ্ট ক্লাব, সংস্থা, শিক্ষা বোর্ড, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সার্ভিসেস সংস্থা এবং জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহ।
তবে এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি বিসিবি। কাউন্সিলর মনোনয়নের তারিখ দু'দফায় পরিবর্তন করা হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৭ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাউন্সিলর প্রেরণের সময়সীমা বর্ধিত করে সমালোচনার পর দ্বিতীয় দফায় কাউন্সিলর মনোনয়নের সর্বশেষ সময়সীমা ৩ দিন পিছিয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিসিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাউন্সিলরের নাম প্রেরণের সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করেছে।
আরও পড়ুন
শেষ ওভারে হিসাব নিকাশ বদলে দিলেন নবি |
![]() |
বিসিবির নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপে ক্যাটাগরি-১ এ থাকা জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা কোটার ১০ পরিচালক পদে নির্বাচনে শতভাগ পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে গত ১১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ পরিপত্র জারি করে দেশের সব ক'টি জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের যে নির্দেশনা দিয়েছিল। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন অধিশাখার উপসচিব মাহমুদউল্লাহ মারুফ স্বাক্ষরিত সেই নির্দেশনা অধিকাংশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা অনুসরণ করেনি। ইতোমধ্যে ডাকযোগে বিসিবি প্রেরিত কাউন্সিলর ফরম পূরণ করে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারদের স্বাক্ষর নিয়ে যে সব কাউন্সিলরের নাম জমা পড়েছে, তা মনোপুত হয়নি ক্রীড়া প্রশাসনের। আশ্চর্য হলেও সত্য, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্যাটাগরি-১ থেকে ৫৩জন কাউন্সিলরের নাম জমা পড়েছে বিসিবিতে, তাদের অধিকাংশই বিএনপি ঘরানার ক্রীড়া সংগঠক। ক্যাটাগরি- ১ থেকে জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সুপারিশকৃতদের নাম জমা না পড়ায় বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার সমর্থকদের নির্বাচনের সমীকরণ জটিল হয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতির মুখে ঢাকা বিভাগের কোটা থেকে বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি নাজমুল আবেদিন ফাহিমের নির্বাচনে ভরাডুবির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সে কারণেই এখন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং বিসিবি। অন্তবর্তীকালীন আমলে দেশের সব ক'টি জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে গঠিত হয়েছে এডহক কমিটি। সেই সব এডহক কমিটি থেকে নতুন করে কাউন্সিলর প্রেরণের নির্দেশনা দিয়ে ক্রীড়া প্রশাসন জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহকে চিঠি ইস্যু করেছে বিসিবি! আশ্চর্য হলেও সত্য।
বিসিবি পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের অনুমোদন না নিয়েই কাউন্সিলর প্রেরণের সর্বশেষ সময়সীমা ৩ দিন বর্ধিত করেছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। রাখ-ঢাক না রেখে তা জানিয়েছেন বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু-
' আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টার আগে কাউন্সিলর ফরম জমা দেয়ার তারিখ পিছিয়ে দেয়ার ব্যাপারে পরিচালকদের কাছে মতামত চেয়েছেন সভাপতি। পরবর্তীতে তার একক সিদ্ধান্তে, কাউন্সিলর মনোনয়ন তিনদিন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।'
এদিকে জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহ থেকে কাউন্সিলর মনোনয়ন যথাযথ হয়নি, এই অভিযোগ এনে প্রেরিত কাউন্সিলরদের মনোনয়ন বাতিল করে জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহের বিদ্যমান এডহক কমিটিসমূহ থেকে কাউন্সিলর মনোনয়নের জন্য যুবও ক্রীড়া সচিবকে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিসিবি সভাপতির এমন চিঠি দিয়ে বিসিবির আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন বলে মনে করছেন তৃণমূল পর্যায়ের ক্রীড়া সংগঠকরা।
আরও পড়ুন
ফ্রাইলিংকের রেকর্ডময় দিনে জয় নামিবিয়ার |
![]() |
বিসিবির প্রেরিত কাউন্সিলর ফরমে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশার একবার স্বাক্ষর করলে সেই কাউন্সিলর শুধু নির্বাচনে ভোটাধিকারই পাবেন না, আগামী ৪ বছরের জন্য বিসিবির স্থায়ী কমিটির সদস্য তিনি। তাহলে কেনো জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশারের স্বাক্ষরের পরও ওইসব জেলা এবং বিভাগ থেকে নতুন করে কাউন্সিলরের নাম চাওয়া হচ্ছে ? বিসিবির ২০০৮ এবং ২০১২ সালের গঠণতন্ত্র সংশোধন কমিটির সদস্য ও বিসিবির সাবেক পরিচালক আবদুল্লাহ আল ফূয়াদ রেদোয়ান এ প্রশ্নই তুলেছেন-
' ২০১৩ সালে জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা রেজুলেশন করে আমাকে এই জেলা থেকে কাউন্সিলর মনোনীত করে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর নিয়ে অন্য একজন কাউন্সিলরশিপ পায়। বিসিবির গঠণতন্ত্রে এ ব্যাপারে পরিষ্কার ব্যাখ্যা আছে। জেলা প্রশাসক কাউন্সিলর ফরমে একবার স্বাক্ষর করলে তা পরিবর্তনের কোনো বিধান নেই। বিসিবি এখন যা করতে চাইছে, এটা নোংরামি। এখন যদি বিসিবি সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী পুনরায় কাউন্সিলর চেয়ে জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারবৃন্দকে চিঠি দেয়া হয়, তাহলে তা হবে গঠণতন্ত্র পরিপন্থি। এমন নির্দেশনা দেয়ার এখতিয়ার তার নেই। প্রয়োজনে এই চিঠির বিরুদ্ধে মামলা হবে।'
আবু ধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে লড়ছে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচে ঘুরে ফিরে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। এর যথেষ্ট কারণও আছে বৈকি। ‘বি’ গ্রুপ থেকে সুপার ফোরে ওঠবে দুটি দল। আজ যে দল জিতবে তারা সরাসরি পা রাখবে সুপার ফোরে। হারলে যদি-কিন্তু আর সমীকরণের মারপ্যাঁচ।
আজ আবু ধাবিতে শেষ দুই ওভারে মোহাম্মদ নবির ভেলকিতে শ্রীলঙ্কাকে ১৭০ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশকে সুপার ফোরে তুলতে এই চ্যালেঞ্জিং রান টপকাতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। হেরে গিয়েও অবশ্য লিটনদের শেষ চারে উঠিয়ে দিতে পারে লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কা ১০০ বা এর কম রানে আটকে গেলেই আসালাঙ্কার দলকে নেট রান রেটে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে নিয়ে উঠে যাবে সুপার ফোরে।
আরও পড়ুন
শেষ ওভারে হিসাব নিকাশ বদলে দিলেন নবি |
![]() |
এদিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ২০ বলে অর্ধশতক তুলেছেন নবি। তা না হলে ১৫ রানের বেশি তোলাই হতো না আফগানদের। ইনিংসের শেষ দুই ভারে মূলত বানের পানির মতো রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে। ওভারে দুনিথ ভেল্লালাগকে ৫ ছক্কা মারেন নবি। শেষ ওভারে দলের স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয় ৩২ রান। এর আগের ওভারে দুশমন্থ চামিরাকে টানা তিন চার মারেন নবি। অথচ ইনিংসের ১৮ ওভারকালীন মনে হচ্ছিল সাদামাটা পুঁজি গড়তে যাচ্ছে আফগানরা। এক নবিই সব হিসেব বদলে দিলেন। ১৭তম ওভারের সময় আফগানদের রানরেট ছিল ৬.৬৬। পূর্ণাঙ্গ ইনিংস শেষে সেটি দাঁড়ায় ওভারপ্রতি ৮.৪৫ রান।