২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪:১৬ পিএম
দুই দেশেই ক্রিকেটের চেয়ে মেয়েদের নেটবল সেখানে বেশি জনপ্রিয়। ক্রিকেটটা তাদের শুধু জেতার জন্য না, টিকে থাকারও একটা লড়াই। একটা বিশ্বকাপ জেতা তাদের জন্য স্রেফ একটা ট্রফি ঘরে তোলা না, ‘ইটস মোর দ্যান দ্যাট’। প্রোটিয়াস নারী দলের পেসার আয়াবোঙ্গা খাকা এ বিষয়ে একটাই লাইন বলেছিলেন, ‘এনিথিং ইউ ওয়ান্ট, ইউ ক্যান ডু ইট’। আর এই অদম্য আত্মবিশ্বাসের বদলেই ২০২৪ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পেতে চলেছে নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা।
ক্রিকেটের ‘বিগ থ্রি’, ছেলেদের মত মেয়েদের ক্রিকেটেও থেকেছে সেই ভারত, অস্ট্রেলিয়া, আর ইংল্যান্ডের আধিপত্য। আপনি যদি উইকিপিডিয়া খুলে মেয়েদের বিশ্বকাপের লিস্টটা দেখেন, তাহলে ২০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে আপনি অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আর কিছুই দেখবেন না। আর এই চিত্র শুধু টি-টোয়েন্টি লড়াইয়েই নয়, ৫০ ওভারেও একই রাজত্ব।
এই আধিপত্যের ভীড়ে এবারের বিশ্বকাপ দিয়েছে আমাদের নতুন বার্তা। ভারত আর ইংল্যান্ড দুই দল উঠতে পারেনি সেমিফাইনালেই। আর ভয়ংকর অজিরা হেরেছে সেমিতে। তবে নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা আর অনেক বাধায় মোড়ানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই তিন দল এবারের সেমি নিশ্চিত করে রং পালটে দিয়েছে এবারের আসরের। আজ রোববার দুবাই প্রস্তুত এবার আমাদের নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দিতে।
চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক, দুই দলের ফাইনাল পর্যন্ত পথচলা। গেল আসরের ফাইনালিস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হারলেও এরপর স্কটল্যান্ড আর বাংলাদেশের সঙ্গে বড় জয় নিয়ে গ্রুপ বি থেকে দ্বিতীয় হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আর নিউজিল্যান্ডও তাদের বিশ্বকাপ মিশনটা শুরু করে অনেকটা চমক দিয়েই। টুর্নামেন্টের অন্যতম হট ফেভারিট ইন্ডিয়াকে তারা হারায় একতরফাভাবে। পরের গল্পটা প্রোটিয়াদের মতই। ৬০ রানের বিশাল হার ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এরপর শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের বিপক্ষে সহজ জয়। আর সেমিফাইনালে ফেভারিট অস্ট্রেলিয়া পাত্তা পায়নি সাউথ আফ্রিকার কাছে। একই বছরে দুইবার হার তাদের কাছে। তবে নিউজিল্যান্ডকে ফাইনালে উঠতে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে লড়তে হয়েছে শেষ বলঅব্দি।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ রাত ৮টায় শুরু হবে ফাইনালের লড়াই, যা কিনা দক্ষিণ টানা দ্বিতীয় ফাইনাল। আর কিউইদের ১৪ বছর পর ৩য়তম। আসরে আধিপত্য বিস্তার করেই এই মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছে দুইদল। আপনি যদি এবারের বিশ্বকাপের টপ রান স্কোরার দেখেন সেখানে আপনি দেখবেন প্রোটিয়াদের দুই ওপেনিং ব্যাটার লরা উলভারড্ট আর টাজমিন ব্রিটসকে। আপনি যদি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকা দেখেন, সেখানে সবার ওপরে নিউজিল্যান্ড স্পিন অলরাউন্ডার অ্যামেলিয়া ক্যার। দুই নম্বরে প্রোটিয়াস স্পিনার এন এমলাবা।
এই তালিকাগুলোতে দুই দলের সমান প্রভাব দেখলেও ইতিহাস অবশ্য একটু অন্য কথা বলে। ২০০৭ থেকে গেল বছর পর্যন্ত দুই দল টি টুয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছে ১৬ বার। যার ১১টাই জিতেছে নিউজিল্যান্ডের মেয়েরা। আর মাত্র ৪টিতে পেরে উঠেছিল সাউথ আফ্রিকা। শুধু টি টুয়েন্টিই নয়, ওয়ানডেতেও কিউই মেয়েরাও এগিয়ে। সেখানে ব্যবধানটা ১২ আর ৮ এর। এসব পরিসংখ্যান দেখে তাই ফাইনালে আপনারা এগিয়ে রাখতে পারেন নিউজিল্যান্ডকে। তবে ওই যে শুরুতে বলা প্রোটিয়াস পেসারের ওই কথাটা ভুললে চলবে না। ‘এনিথিং ইউ ওয়ান্ট, ইউ ক্যান ডু ইট’।
সেই সামর্থ্য দুই দলেরই আছে। চলুন দেখা যাক এই ম্যাচে দুই দলের কী প্লেয়ার কিংবা গেমচেঞ্জার হতে পারেন কারা। প্রোটিয়াস এ আসরে দেখিয়েছে তাদের স্ট্রং ব্যাটিং। স্পেশালি দ্য নেম ইজ লরা উলভার্ট। একমাত্র বাংলাদেশের ম্যাচ ছাড়া সব ম্যাচেই তিনি খেলেছেন চল্লিশোর্ধ ইনিংস। এই প্রোটিয়াস ওপেনার নিঃসন্দেহে হতে পারে কিউইদের ভয়ের কারণ।
আর অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের শক্তির জায়গা তাদের বোলিং লাইন আপ। আসরে প্রতি ম্যাচেই তাদের জয়ের মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছে বোলাররা। একমাত্র অজিরা গ্রুপ পর্বে তাদের সঙ্গে ১৪৮ করতে সক্ষম হয়েছিল। বাকি কোন ম্যাচে কোন প্রতিপক্ষরাই পেরোতে পারেনি ১২০-এর কোটা। পাকিস্তান তো গুটিয়েছিল মাত্র ৫৬ রানে। পেসার রোজামেরি মেইর, লিয়া তাহুহু আর স্পিন অররাউন্ডার অ্যামেলিয়া ক্যার। কিউই বোলিং লাইনআপে খাবি খেয়েছে সব দল। সঙ্গে থাকছে সোফি ডিভাইন, প্লিমারদের মত ব্যাটাররা।
এবারের আসরে আইসিসি বাড়িয়েছে প্রাইজমানির পরিমাণও। ফাইনাল জেতা দলকে আইসিসি থেকে প্রাইজমানি দেয়া হবে বাংলাদেশি টাকায় ২৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এই ফাইনাল নিশ্চয়ই কোন কমতি রাখছে না রোমাঞ্চ ছড়াতে। তবে সব ছাপিয়ে আমাদের একটা কথা মনে রাখা উচিত ফ্যাসিনেশন না ক্রিকেটটা এই মেয়েগুলোর জন্য প্রয়োজন। তাই তো একটা শিরোপা, একটা টাইটেল ওদের জন্য অনেক বাড়তি কিছু। শোকেসে রাখা ট্রফি না, বিশ্বকাপটা ওদের উঠে দাঁনোর একটা পাথেয়।
দিন যত যাচ্ছে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসর নিয়ে উন্মাদনা বেড়েই চলেছে। নানা আয়োজনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চেষ্টা করছে এবারের আসরকে সবচেয়ে স্মরণীয় করে রাখতে। সেই ধারায় এবারের বিপিএলের মাসকটও বেছে নেওয়া হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ডানা ৩৬। শান্তির প্রতীক হিসেবে সেখানে দেখা যাবে একটি সুসজ্জিত পায়রাকে।
বিপিএলের মাসকটটিকে স্বাধীনতা এবং ক্রীড়া চেতনার স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ডানা বিস্তৃত, আত্মবিশ্বাসী, আনন্দদায়ক হাসিতে পায়রাটি গ্রাফিতি শিল্পে সজ্জিত একটি ক্রিকেট ব্যাট ধরে আছে। এর পালকের রঙিন গ্রাফিতি প্যাটার্ন এবং ব্যাট আমাদের স্বাধীনতা, ইতিবাচক শক্তি এবং সাংস্কৃতিক গর্বের থিম উপস্থাপন করে। এই প্রাণবন্ত মাসকটটি একটি উজ্জীবিত চেতনা বহন করে, যা ক্রিকেট নিয়ে রোমাঞ্চ এবং উদযাপনকে ফুটিয়ে তোলে।
আরও পড়ুন
বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর ডাচ-বাংলা ব্যাংক |
এই পায়রার মাসকটটিকে স্বাধীনতার চেতনার সাথে মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা খেলাধুলার একটি অপরিহার্য অংশ এবং ক্রিকেট সংস্কৃতিরও একটি মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। পায়রাকে শান্তি এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, যা একটি জাতির শক্তি এবং ঐক্যকে প্রতিফলিত করে। মাসকটের গ্রাফিতিটি আধুনিক, তারুণ্যের স্পর্শময়, যা সমসাময়িক ক্রিকেট ভক্তদের প্রগতিশীল, প্রাণবন্ত প্রাণশক্তির সাথে আমাদের স্বাধীনতার ঐতিহ্যগত মূল্যবোধকে একসুতোয় গেঁথেছে।
এবারের বিপিএল শুরু হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। টুর্নামেন্টের পর্দা উঠবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে সাতটি দল -
রংপুর রাইডার্স, ঢাকা ক্যাপিটালস, চিটাগং কিংস, দুর্বার রাজশাহী, ফরচুন বরিশাল, খুলনা টাইগার্স ও সিলেট স্ট্রাইকার্স।
দীর্ঘদিন ধরে আছেন জাতীয় দলের বাইরে। খেলে যাচ্ছিলেন কেবল ঘরোয়া ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস ঘোষণা দিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের। বুধবার নিজেই নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।
নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা জানিয়েছেন ইমরুল। সাদা বলের ক্রিকেটে অনেকটা সময় ধরেই বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকলেও এই দুটিতে খেলার দুয়ার খোলা রেখেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
আরও পড়ুন
‘অভাগা যেদিকে চায়, সাগর (ইমরুল) শুকিয়ে যায়’ |
২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে এই ফরম্যাটে পথচলা শুরু হয় ইমরুলের। শেষবার খেলেছেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে। মাঝের এই সময়ে খেলেছেন ৩৯টি ম্যাচ। ৭৬ ইনিংসে ২৬.২৮ গড়ে রান করেছেন ১ হাজার ৭৯৭। সেঞ্চুরি তিনটি আর ফিফটি চারটি।
টেস্টে ইমরুলের সর্বোচ্চ ইনিংসটি এসেছিল ২০১৫ সালে। খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র হওয়া ম্যাচে খেলেছিলেন ১৫০ রানের দারুণ এক ইনিংস। ওই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের সাথে ওপেনিং জুটিতে ইমরুল যোগ করেছিলেন রেকর্ড ৩১২ রান।
আরও পড়ুন
ছয়ের রেকর্ডে তামিমের সঙ্গী ইমরুল |
চলতি এনসিএলে খেলছেন ইমরুল। শেষ ম্যাচে সিলেটের বিপক্ষে দুই ইনিংসে করেছেন যথাক্রমে শূন্য ও ৭১ রান।