১৩ অক্টোবর ২০২৫, ৬:৪১ পিএম

গড়পড়তা অন্য অনেকের চেয়ে খানিক দেরিতেই স্বীকৃত ক্রিকেটে পথচলা শুরু মোহাম্মদ রুবেলের। বয়সের কাটা ২৯ পেরোনোর পর এই রহস্য স্পিনার খেললেন এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। চট্টগ্রামের হয়ে নিজের প্রথম সংস্করণেই করলেন বাজিমাত। চট্টগ্রামের বিভাগের হয়ে ৮ ম্যাচে ৫.২১ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১০ উইকেট। নজরকাড়া পারফরম্যান্সে হাতে তুলেছেন ‘মোস্ট প্রমিজিং ক্রিকেটার’ পুরস্কার।
এই পর্যায়ে আসতে রুবেলকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ লম্বা সময়। ঢাকার দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলেছেন প্রায় ৭ মৌসুম। তারপর সাধারণ অফ স্পিনার থেকে নিজেকে ভেঙে, গড়েছেন রহস্য স্পিনার হিসেবে। বদলে যাওয়ার ছাপ রেখেছেন এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টেও। অফ স্পিনের সঙ্গে ক্যারম বল, লেগ স্পিনের মিশেলের ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম ফাইনালে জায়গা করতে না পারলেও নিজেকে নিংড়ে দিয়ে রুবেল পেয়েছেন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের খেতাব। এনসিএলে শেষে ব্যক্তিগত সাফল্য, বোলিংয়ে পরিবর্তন, দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ লিগে সুযোগ তৈরি, সব মিলিয়ে একজন পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে টি স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলছেন রুবেল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ।
টি স্পোর্টস: শেষ থেকেই শুরু করি। প্রথমবার স্বীকৃত ক্রিকেট খেললেন। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের পুরস্কারও জিতলেন। সব মিলিয়ে আপনার এই পথচলাটা কেমন ছিল?
মোহাম্মদ রুবেল: এত বড় জায়গায় প্রথমবার খেলব। খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম। একইসঙ্গে আত্মবিশ্বাসীও ছিলাম, যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই তাহলে ভালো কিছু করতে পারব।
অধিনায়ক থেকে শুরু করে দলের সবাই আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। সিনিয়র ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, সবার থেকে অনেক সাহস পেয়েছি। আমার যেহেতু প্রথমবার ছিল, এমন সমর্থন পাওয়ায় ভালো কিছু করাটা সহজ হয়ে গেছে। এটাই আমার জন্য বড় পাওয়া ছিল, এমন সহায়ক একটা দল।
টি স্পোর্টস: এনসিএলের জন্য প্রস্তুতিটা কীভাবে নিয়েছেন?
রুবেল: এনসিএলের আগে চট্টগ্রামে এক মাসের ক্যাম্প হয়েছে। তখন থেকেই আমাকে অধিনায়ক বা সিনিয়র ক্রিকেটাররা বলেছেন, আমি শুরু থেকে এনসিএল খেলার সুযোগ পাব। তাই সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি।
টি স্পোর্টস: চট্টগ্রাম দলে নাঈম হাসানের মতো অফ স্পিনার আছেন। সচরাচর দুজন অফ স্পিনার একসঙ্গে খেলে না। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দলের পক্ষ থেকে কেমন বার্তা পেয়েছিলেন?
রুবেল: আমার ট্যাগটা অফ স্পিনার ঠিক আছে, তবে আমি ভ্যারিয়েশন একটু বেশি ব্যবহার করি। গতানুগতিক অফ স্পিনের মতো করি না। এ কারণে হয়তো সুযোগটা একটু বেশি ছিল। নাঈম অফ স্পিনার হিসেবে খেলবে আর আমি অনেকটা মিস্ট্রি স্পিনারের মতো। সেরকমভাবেই আমাকে বলে রেখেছিল। আমিও সেভাবে প্রস্তুত হয়েছি। সেই হিসেব করেই খেললাম।
প্রথম ম্যাচে উইকেট ১টা পেয়েছি, তবে মাত্র ১৬ রান দিয়েছি। সেই ম্যাচের পরই আসলে আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গেছে। সেখান থেকে চেষ্টা করেছি যত ভালো করা যায়। রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলাম। অধিনায়কও আমার ওপর খুব আস্থা রেখেছেন, যখন প্রয়োজন আমি বল করতে পারব। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। প্রথম বছর খেলতে এসেই এই ভরসাটা দিতে পেরেছি, ভালো কিছু করেছি।
টি স্পোর্টস: একটু পেছনে ফিরি। বছরের শুরুতে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ১৫ ম্যাচে ৪৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন। তারপর চট্টগ্রামের রিজিওনাল টি-টোয়েন্টিতে ১৫ উইকেট নিয়ে আবার টপ হলেন। এবার এনসিএলেও ভালো করলেন। বছরটা কী নিজের মনে হচ্ছে?
রুবেল: ২০২৫ সালটা অবশ্যই সব দিক দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। শুধু এই বছর বলব না, ২০২৩-২৪ মৌসুমের সেকেন্ড ডিভিশন থেকেই সামনের দিকে আছি। সেবার ১৬ ম্যাচে ৩৭ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে ছিলাম। তারপর ২০২৪-২৫ মৌসুমে ফার্স্ট ডিভিশনেও সর্বোচ্চ উইকেট। চট্টগ্রামের রিজিওনাল টি-টোয়েন্টিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো গেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার এনসিএলও খেললাম।
টি স্পোর্টস: যেটা বলছিলেন, আপনি অনেক বৈচিত্র্য ব্যবহার করেন বোলিংয়ে। এনসিএলেও আমরা দেখলাম ক্যারম বল করছেন, একই অ্যাকশনে লেগ স্পিন করছেন। এসব রপ্ত করলেন কীভাবে?
রুবেল: আমি আগে নরমাল অফ স্পিনই করতাম। কিন্তু ২০২৩-২৪ মৌসুমের সেকেন্ড ডিভিশন শুরুর ২ মাস আগে আমার মনে হলো, যদি নরমাল অফ স্পিনই করি, তাহলে বেশি ওপরে খেলতে পারব না। একটা জায়গায়ই আটকে থাকতে হবে। তাই একটু ভিন্ন চিন্তা করলাম, ভ্যারিয়েশন আনার কথা ভাবলাম।
তো ওই মোটামুটি ২ মাসের মধ্যেই আমি সব রপ্ত করি। ক্যারম বল, লেগ স্পিন, ব্যাক স্পিন- যা কিছুই পারি, ২ মাসের মধ্যেই সব কিছু আয়ত্তে এনেছি। তারপর সেকেন্ড ডিভিশনে গিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হলাম। আর ফার্স্ট ডিভিশনে খেললাম। তারপর থেকে আল্লাহর রহমতে চলছে।
টি স্পোর্টস: রহস্য স্পিনার হওয়াটা তো সবসময়ই ঝুঁকির ব্যাপার...
রুবেল: আমি টানা ৭ বছর সেকেন্ড ডিভিশন লিগ খেলেছি। তেমন খারাপ করতাম না। ভালো ইকোনমি রেটে প্রতি বছর ২০-২১ উইকেট হয়তো নিতাম। তবে কখনও টপে থাকতে পারতাম না। এখন ভালো জায়গায় খেলতে তো ঝুঁকি নিতে হবে।
তাই ভাবলাম, ঝুঁকি নিয়েই দেখি। সফল হলে তো ভালো। নইলে আগের জায়গায়ই ফিরে যাব। এই চিন্তা থেকেই ২ মাসে সব ট্রাই করলাম। এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রণে আছে।
টি স্পোর্টস: রহস্য স্পিনারদের ক্ষেত্রে প্রায়ই একটা জিনিস দেখা যায় যে, অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। বাংলাদেশের সঞ্জিত সাহা দ্বীপ, আলিস আল ইসলাম বা বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার সুনিল নারাইনকেও অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। আপনি কখনও এসবের সম্মুখীন হয়েছেন?
রুবেল: এখন পর্যন্ত বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সেভাবে কারো থেকে কিছু শুনতে হয়নি। রহস্য স্পিনার হওয়ায় এই ঝুঁকিটা আছে আমি জানি। সামনে আরো যত বড় জায়গায় খেলব, আরো বেশি খুঁটিয়ে দেখা হবে হয়তো। এ ছাড়া অনেকে আবার ঈর্ষাবশতও অনেক কথা বলে।
তবে আমি সব কিছুর জন্যই আমি প্রস্তুত আছি। কখনো যদি প্রশ্নের মুখে পড়ি, তাহলে পরীক্ষা দিয়ে আবার আসব। যতক্ষণ পর্যন্ত জানি যে, আমার বোলিং অ্যাকশন ঠিক আছে, ততক্ষণ আমার কোনো ভয় বা চিন্তা নেই। সামনে যা আসুক, ওভারকাম করতে পারব।
টি স্পোর্টস: আপনার বয়স এরই মধ্যে ২৯ পেরিয়ে গেছে। তুলনামূলক বেশ দেরিতে স্বীকৃত ক্রিকেটে পথচলা শুরু করলেন। এর আগের পথটা কেমন ছিল?
রুবেল: চট্টগ্রামে শতাব্দী ক্রিকেট একাডেমিতে আবু বকর সিদ্দিক ভাইয়ের কোচিংয়ে আমার শুরু। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সভিত্তিক ট্রায়ালে গিয়েছিলাম। তখন বয়সের কারণে বাদ পড়ে যাই। তারপর বকর ভাইয়ের কাছে যাই। তখনও চট্টগ্রামে ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন কিছুই খেলিনি। একদম নতুন ছিলাম। টেপ টেনিস খেলতাম। ক্রিকেট বলে সেভাবে খেলিনি।
শতাব্দী একাডেমিতে যাওয়ার পর বকর ভাই আমার প্রতিভা দেখেই হয়তো সরাসরি চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে নিয়ে নেন। তখন থেকেই মূলত আমার শুরু। চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার লিগে বড় বড় প্লেয়াররা খেলতেন। তাদের সঙ্গে খেলে সিরিয়াস ক্রিকেটটা শুরু।
টি স্পোর্টস: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার ক্রিকেটে কবে এলেন?
রুবেল: শুরুতে আমি আসলে ব্যাটার ছিলাম। ২০১৪-১৫ মৌসুমের চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে আমি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছিলাম। আমার এক বড় ভাই আছেন, তিনি বললেন, ‘তুই তো প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলছিস, তোকে আমি ঢাকায় নিয়ে যাব।’ ২০১৫-১৬ মৌসুমে আমি সেকেন্ড ডিভিশনের ক্লাব মিরপুর বয়েজ ক্রিকেট ক্লাবে যাই। প্রথমে ট্রায়াল নেয়। কিন্তু সেখানে তাদের পছন্দ হয়নি। বেশি বল খেলার সুযোগও পাইনি নেটে।
আমাকে অন্য আরেকটা দল থেকেও বলছিল। তবে মিরপুর বয়েজে চট্টগ্রামের আরো ৫-৬ জন থাকায় সেখানেই যাই। ট্রায়ালে বাদ দেওয়ার পর বড় ভাইরা ক্লাবের কর্মকর্তাদের বললেন, ‘ভাই ওরে বাদ দিয়েন না। প্রয়োজনে একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলান। ভালো খেললে রাখবেন। খারাপ খেললে তো নেই।’ ওনারা সিনিয়র প্লেয়ার ছিলেন সেই দলের, তাই ওনাদের কথা রাখলেন।
তারপর ফতুল্লার আউটার মাঠে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলি। সেদিন ৬ ওভারে ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিই। আবার ব্যাটিংয়ে সাত নম্বরে নেমে ১৭ বলে করি ৪৫ রান। সেখান থেকেই ঢাকা লিগে শুরু। এখন সম্পর্কটা এমন হয়ে গেছে, মিরপুর বয়েজ দলটা সাজাতে আমার অনেক ইনপুট থাকে। ক্লাবের কর্তারা অনেক ভরসা করে আমার ওপর।
২০২৩-২৪ মৌসুমে যখন সর্বোচ্চ উইকেট নিলাম, তখন ক্লাবের কর্তারাই আমাকে বললেন, তুই যেহেতু সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিস, সেকেন্ড ডিভিশন আর খেলিস না। এবার ফার্স্ট ডিভিশন খেল। সর্বোচ্চ উইকেট পাইছিস, এখন ফার্স্ট ডিভিশন দলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবি।
টি স্পোর্টস: প্রথম বিভাগে তো শুধু ম্যাচই খেললেন না, আবারও সবার ওপরে ছিলেন...
রুবেল: সেকেন্ড ডিভিশন শেষ হওয়ার পর আমাকে ৫-৬টা দল থেকে কল করেছে। তুলনামূলক দ্বিগুণ টাকাও দেবে বলেছে। তবে দলের পরিবেশ ও বাকি সব কিছু মিলিয়ে অর্ধেক টাকায় গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমিতে খেলতে রাজি হয়ে যাই। দলের পরিবেশই মূল। সেটা ভালো পাওয়ায় পারফরম্যান্সও ভালো হলো। সেখান থেকেই এখন আলহামদুলিল্লাহ চলছে।
টি স্পোর্টস: স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম টুর্নামেন্টে ভালো করলেন। সামনের সময় নিয়ে কী ভাবছেন?
রুবেল: সামনে তো এখন এনসিএলের চার দিনের টুর্নামেন্ট আছে। দলে সুযোগ পেলে অবশ্যই ভালো করার চেষ্টা করব। আর বিপিএল খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে। যদি প্লেয়ার্স ড্রাফটে নাম থাকে, কোনো দলে সুযোগ পাই, তাহলে আত্মবিশ্বাস আছে ভালো করার। নিজের সবটা দিয়েই চেষ্টা করব।
No posts available.
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:৩৩ পিএম

দীর্ঘ ছয় বছরের প্রতীক্ষা শেষে গত নভেম্বরে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ফিরেছিল টেস্ট। সেই ম্যাচে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল পিচের অসম বাউন্স। তবে কলকাতা টেস্টের পিচকে ‘সন্তোষজনক’ রেটিং দিয়েছেন আইসিসি ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসন।
এই রেটিংয়ের ফলে শাস্তি বা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়েছে ইডেন গার্ডেন্স। আইসিসির চার ধাপের পিচ রেটিং ব্যবস্থায় ‘সন্তোষজনক’ দ্বিতীয় স্তরের মান। এর উপরে রয়েছে ‘ভালো’ ও ‘খুব ভালো’ আর নিচের দুই ধাপ হলো ‘অসন্তোষজনক’ ও সর্বনিম্ন ‘অনুপযুক্ত’।
কলকাতার টেস্টে প্রথম ওভার থেকেই পিচে অসম বাউন্স চোখে পড়ে। ম্যাচ যত এগিয়েছে, ততই বেড়েছে টার্নের মাত্রা। পেসার ও স্পিনার-উভয়ের জন্যই সহায়ক হয়ে ওঠে উইকেটটি। পুরো ম্যাচে কোনো দলই এক ইনিংসে ২০০ রান করতে পারেনি। চতুর্থ ইনিংসে ১২৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৯৩ রানে।
ম্যাচ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় ইডেন গার্ডেন্সের পিচ। ম্যাচ শেষে ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর বলেন, ‘আমরা যা চেয়েছিলাম পিচ ঠিক তেমনই ছিল।’
যদিও গোয়াহাটিতে দ্বিতীয় টেস্টের আগে ব্যাটিং কোচ সিতাংশু কোটাক ভিন্ন বক্তব্য দেন। কোটাক জানান, ইডেন গার্ডেন্সের কিউরেটর সুজন মুখার্জিকে রক্ষা করতেই এমন মন্তব্য করেছিলেন গম্ভীর। তাঁর মতে, অসম বাউন্সে ভারতীয় দল বিস্মিত হয়েছিল এবং এমন পিচ তাঁরা আদৌ চায়নি।
গোয়াহাটিতে দ্বিতীয় টেস্ট তুলনামূলক ব্যাটিং-বান্ধব পিচ ছিল। সেখানেও বড় জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নেয় প্রোটিয়ারা।
সম্প্রতি পিচের রেটিং নিয়ে আলোচনা চলছে জোরেশোরেই। অ্যাশেজের বক্সিং ডে টেস্ট শেষে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) পিচকে ‘অসন্তোষজনক’ ঘোষণা করেছে আইসিসি। এর সঙ্গে মাঠটি পেয়েছে ১ ডিমেরিট পয়েন্টও। আলোচনা হলেও বলা যায় এই যাত্রায় বেঁচে গেল ইডেন গার্ডেন্স।

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
আজ এক শোকবার্তায় বিসিবি সভাপতি বলেন,
‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য এক গভীর ক্ষতি। পাশাপাশি যাঁরা তাঁর নেতৃত্ব ও জনসেবার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন- সবার জন্যই এটি এক বেদনাদায়ক মুহূর্ত।’
শোকবার্তায় ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করে আমিনুল ইসলাম বলেন,
‘তিনি ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি যে উৎসাহ ও সমর্থন যুগিয়েছিলেন সে জন্য তাঁকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর আগ্রহ এবং দেশকে একসূত্রে গাঁথার ক্ষেত্রে এই খেলাটির গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি ছিল আন্তরিক ও দীর্ঘস্থায়ী।’
তিনি বলেন,
‘বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশের ক্রিকেট অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়, যা দেশের ক্রিকেটের শক্ত ভিত গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।’
বিসিবি সভাপতি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের আধুনিকায়নের পথে খালেদা জিয়ার প্রয়াত পুত্র আরাফাত রহমানের অবদানও অবিচ্ছেদ্য। তাঁর দূরদর্শী চিন্তা ও উদ্যোগ দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
শোকবার্তায় বিসিবির পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার, স্বজন এবং দেশ-বিদেশে অবস্থানরত শোকাহত মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আমিনুল ইসলাম বলেন,
‘আল্লাহ যেন বেগম খালেদা জিয়াকে জান্নাত নসিব করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের এই শোক সহ্য করার শক্তি ও ধৈর্য দান করেন।’
উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার ভোর ৬ টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন খালেদা জিয়া। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন। এর মধ্যে ছিল লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস ও ইনফেকশনজনিত সমস্যা।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের আবহে আজ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দুটি ম্যাচ স্থগিত রাখা হয়েছে। শোক ও সম্মান জানিয়ে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়।
ম্যাচ স্থগিত থাকলেও বিকেলে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ও দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
বুলবুল বলেন,
‘১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের পর আমাদের বিভিন্ন জায়গায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল তৎকালীন বিএনপির পক্ষ থেকে মিন্টু রোডে আয়োজিত সংবর্ধনা। আমি তখন দলের ভাইস ক্যাপ্টেন ছিলাম। বক্তৃতার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি ভুল বলায় পুরো মঞ্চ কিছুক্ষণ নীরব হয়ে যায়। পরে সঙ্গে সঙ্গে ভুল সংশোধন করি। ঘটনাটি আজও আমার মনে গভীরভাবে দাগ কেটে আছে।’
তিনি আরও বলেন,
‘আমরা যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতাম, তখন তিনি আমাদের দাওয়াত দিতেন। আমার জীবনের অন্যতম গর্বের মুহূর্ত ছিল রাষ্ট্রীয় পুরস্কার গ্রহণ—যে পুরস্কারটি তিনি নিজ হাতে আমার গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন,
‘বিসিবির পক্ষ থেকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রকাশ করেছি। আগামীকাল শোক দিবস উপলক্ষে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এখানে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই—আমরা সবাই দেশের নাগরিক এবং আমরা সবাই শোকাহত।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় সহায়তার কথা স্মরণ করে বুলবুল বলেন,
‘২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন এবং মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন ভেন্যু নির্মাণে যে সহযোগিতা পাওয়া গেছে, তা দেশের ক্রিকেট এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটে মঙ্গলবার স্থগিত করা দুই ম্যাচের নতুন সূচি জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সিলেটে আগামী ৪ জানুয়ারি (রোববার) হবে এই ম্যাচ দুইটি।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিসিবি জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকারের ঘোষিত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের অংশ হিসেবে বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর কোনো বিপিএল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে না। এদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১ ও ২ জানুয়ারি) নির্ধারিত ম্যাচগুলো পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার দিনের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল সিলেট টাইটান্স ও চট্টগ্রাম রয়্যালসের। পরে সন্ধ্যার ম্যাচে খেলার কথা রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ক্যাপিটালসের। এখন আগামী রোববার খেলবে তারা।
এর আগে বিকেলে বিপিএলের ফেইসবুক পেজে প্রকাশিত এক বার্তায় জানানো হয়েছিল, মঙ্গলবারের ম্যাচগুলো হবে বুধবার। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বিসিবি।
এদিকে আগামী সোমবার থেকে বিপিএলের খেলা হওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রামে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৫ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে পরবর্তী ম্যাচগুলোর সংশোধিত সূচি শিগগিরই প্রকাশ করবে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ জনের দল ঘোষণা করেছে ওমান। ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলটির নেতৃত্ব দেবেন ওপেনার জতিন্দর সিং। তবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার আমির কালিমকে দলে না রাখা। এশিয়া কাপে ভালো পারফরম্যান্সের পরও ৪৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার জায়গা পাননি চূড়ান্ত স্কোয়াডে।
ঘোষিত দলে সহ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন উইকেটকিপার–ব্যাটার ভিনায়ক শুক্লা। বছরের শুরুতে এশিয়া কাপে যে দল খেলেছিল, সেখান থেকে পাঁচটি পরিবর্তন এনেছে ওমান ক্রিকেট বোর্ড।
নতুন করে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন অলরাউন্ডার ওয়াসিম আলি, করণ সোনাভালে ও জে ওডেড্রা। পাশাপাশি পেস আক্রমণ শক্তিশালী করতে দলে যুক্ত করা হয়েছে শফিক জান ও জিতেন রামানন্দিকে। রামানন্দি, ওডেড্রা ও ওয়াসিম আলি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলেছিলেন। শফিক জান ওমানের হয়ে অভিষেক করেন এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস টুর্নামেন্টে, যেখানে খেলেছিলেন সোনাভালেও।
এশিয়া কাপের দলে থাকা কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে এবার বাদ পড়েছেন আমির কালিম। সেই টুর্নামেন্টে তিনি ওমানের হয়ে দুটি ফিফটি করেছিলেন এবং পরবর্তীতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও খেলেন। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে চূড়ান্ত বিশ্বকাপ দলে রাখেনি টিম ম্যানেজমেন্ট।
অধিনায়ক জতিন্দর সিং ওমানের টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এবং সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আগের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি দলে জায়গা পাননি, তবে এবার নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন তিনি।
২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘বি’ গ্রুপে খেলবে ওমান। গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে ওমান।
ওমানের বিশ্বকাপ দল:
জতিন্দর সিং (অধিনায়ক), ভিনায়ক শুক্লা (সহ-অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাদিম, শাকিল আহমদ, হাম্মাদ মির্জা, ওয়াসিম আলি, করণ সোনাভালে, ফয়সাল শাহ, নাদিম খান, সুফিয়ান মেহমুদ, জে ওডেড্রা, শফিক জান, আশিস ওডেডারা, জিতেন রামানন্দি, হাসনাইন আলি শাহ।