২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করতে বাংলাদেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে। ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে ১০-এ নেমে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জটা ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে। র্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ উপরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে র্যাঙ্কিং বাড়িয়ে নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্য পূরণের কক্ষপথে থাকতে পুরোনো কৌশলে ফিরে যেতে হয়েছে বিসিবিকে। ৪ বছর আগে মিরপুরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে র্যাঙ্কিং বাড়িয়ে নেয়ার অতীতটা অনুসরণ করেছেন অস্ট্রেলিয়ান কিউরেটর টনি হেমিং। টার্নিং উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পর্যুদস্ত করার কৌশলে তার প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন লেগ স্পিনার রিশাদ। এই লেগির ভয়ংকর বোলিংয়ে (৯-০-৩৫-৬) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পর্যুদস্ত করেছে বাংলাদেশ। ২০৮ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়ে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ ৭৪ রানে।
তবে প্রত্যাশিত জয়ে সিরিজ শুরু করেও আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলার উপায় নেই। সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সফরকারী দলের ব্যাটারদের জন্য তৈরি করা ফাঁদ পাতা কালোমাটির উইকেট! এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাটারদের ব্যাটিংও মিরাজের দলকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ছিল ডট বলের ছড়াছড়ি। আবুধাবিতে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জার নেপথ্যে ছিল ব্যাটারদের সীমাহীন ব্যর্থতা। বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেটের চেনা পরিবেশেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিবর্ণ ব্যাটিং!
আরও পড়ুন
রিশাদের ৬ উইকেটে বাংলাদেশের বড় জয় |
![]() |
আইসিসির সহযোগী সদস্য নেপালের কাছে ১-২ এ হেরে ঢাকায় আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিজেদের চেনা কন্ডিশনে উড়িয়ে দেয়ার হুংকারের প্রতিফলন ছিল না বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে। কালো মাটির উইকেট মিরপুরে নতুন নয়। এমন উইকেটে খেলাটা সফরকারী দলের কাছে যতোটা প্রতিকূল হওয়ার কথা, তার বিপরীতে অনুকূল বাংলাদেশ দলের। অথচ, ওযেস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের স্থায়ীত্ব পাওয়া ২৯৮ বলের ইনিংসে ১৮৩টি ডট!
১১৫টি স্কোরিং শটে ২০৭/১০ স্কোরের ইনিংসে ৭৩টি সিঙ্গল, ২৩ টি ডাবল, ৩টি ট্রিপল, ১৩টি বাউন্ডারির পাশে ৩টি ছক্কা! এই হচ্ছে বাংলাদেশের ইনিংসের চিত্র।
বাঁ হাতি স্পিনার খেরি পেরিকে খেলতে কী কষ্টটাই না হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। ১০-২-১৯-১, এমন বোলিংয়ে ৬০টি ডেলিভারির মধ্যে ৪৭টি দিয়েছেন এই উইন্ডিজ বোলার ডট! আর এক বাঁ হাতি স্পিনার গুদাকেশ মোতির ৩০টি বল ডট করেছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা। অফ স্পিনার রোষ্টন চেজ ১০-০-৩০-২ বোলিংয়ে দিয়েছেন ৩৭টি ডট! পেসার রোমেরো শেফার্ড (৭.৪-১-৩১-১) দিয়েছেন ৩১টি ডট। শেষ স্পেলে আতঙ্ক (১-০-৮-২) ছড়ানো সফল বোলার সিলস (৭-০-৪৮-৩) সেখানে দিয়েছেন ২৩টি ডট। পেসার জাস্টিন গ্রেভসকে (৫-০-৩২-২) অবশ্য তেমন একটা পাত্তা দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাটাররা। হৃদয় এবং সোহানের শিকারী এই বোলারকে ১৩টির বেশি ডট দিতে দেয়নি ব্যাটাররা।
হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসটি বাহাবার চেয়ে বেশি ছিল বিরক্তিকর। জাস্টিন গ্রেভসকে কাট করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৫১ রানে। ৯০ বলের এই ইনিংসে স্কোরিং শট ৩৪টি! ৩টি মাত্র বাউন্ডারি।
বাঁ হাতি স্পিনার খেরি পেরির লো বাউন্সি বলে সুইপ করতে যেয়ে শান্ত এলবিডাব্লুউ। আম্পায়ার গাজী সোহেলের নট আউট কলকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ আপীলে শান্তকে ফিরিয়েছেন খেরি পেরি। ৬৩ বলে ৩২ রানের ইনিংসে ডট তার ৪৩টি।
অথচ, ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শেফার্ডের লো বাউন্সি ডেলিভারি ক্রস খেলতে যেয়ে সাইফ(৬ বলে ৩) এলবিডাব্লুউতে ফিরে যাওয়ায় কালো উইকেটের রহস্য ভেদ হতে থাকে। ওপেনিংয়ে অভিজ্ঞ কাউকে সুযোগ দিতে ৮ মাস পর সৌম্যকে ফিরিয়ে তার উপর আস্থা রাখতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে সিলস -কে খেলতে যেয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সৌম্য'র ক্যাচ ( ৮ বলে ৪) বাংলাদেশকে বড় ব্যাটিং বিপর্যয়ের আলামত দিয়েছে।
প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়েছে তৃতীয় জুটিতে শান্ত-হৃদয়ের ৭১ রানের পার্টনারশিপ। তবে এই পার্টনারশিপের বিপরীতে ১২১ বল খরচকে একটু বেশিই মনে হতে পারে। জানেন কী, এই জুটি টানা ৬৮ বল বাউন্ডারিহীন ছিল!
২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে মাহিদুল অঙ্কনকে এই প্রথম ওডিআই ম্যাচে পরথ করে দেখতে পেরেছে নির্বাচকরা। অভিষেকে এই মিডল অর্ডার শুরুতে রানের জন্য ধুঁকেছেন। প্রথম ১০ রানে লেগেছে তার ৩০টি বল। ডাবল ফিগারে পৌছে যাওয়ার পর খেলেছেন স্বাভাবিক ছন্দে (৭৬ বলে ৩ চার-এ ৪৬)। রোস্টন চেজ-এর আউটসাইড অফ ডেলিভারি সুইপ করতে চেয়েছিলেন অঙ্কন। তবে পিচিংয়ের পর দারুণ টার্নিংয়ে অফ স্ট্যাম্পের বেলস ফেলে দিয়ে হাফ সেঞ্চুরি থেকে অঙ্কনকে করেছে বঞ্চিত।
আরও পড়ুন
মিরপুরের স্পিন মঞ্চে ব্যাটারদের লড়াই |
![]() |
আবুধাবি থেকে শুরু, টানা ৪র্থ ম্যাচে হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়েছে বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার এবং টেল এন্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের শেষ ৬ উইকেট পড়েছে মাত্র ৪৯ রানে! তারপরও বাংলাদেশ দুইশ পার করেছে রিশাদের ২০০% স্ট্রাইক রেটের ব্যাটিংয়ে ( ১৩ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ২৬)। গ্রিভসকে লং অনের উপর দিয়ে এবং সিলসকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা বাংলাদেশের স্কোর দুইশ টেনে নিতে সহায়ক হয়েছে।
২০৭/১০ স্কোর পর্যন্ত টেনে নিয়েও দুর্ভাবনা নিয়েছিল বাংলাদেশের। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে উইকেটহীন ৪৫, প্রথম উইকেট জুটির ৫১। সেখানে থেকে লেগ স্পিনার রিশাদের ব্রেক থ্রু, ক্রস খেলতে যেয়ে আথানজে (২৬ বলে ২৭) এলবিডাব্লু। রিশাদের ৬ষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে সেট ব্যাটার ব্রান্ডন কিংকে (৬০ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৪৪) চতুর্থ চেষ্টায় সোহান ক্যাচে ফিরিয়ে দেয়ার পর মিরপুরে জয়ের আবহ।
রিশাদের ৭ ওভারের ভয়ংকর স্পেলে(৭-০-২৫-৫) কোমর ভেঙ্গে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পুরোনো বলে মোস্তাফিজের ২ ওভারের একটা স্পেল (২-০-৬-২) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বড় ব্যবধানে হার মানতে বাধ্য করেছে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম ৫ উইকেটের (৬/৩৫) ইনিংসের রাতে রিশাদ ফিরিয়ে এনেছেন মাশরাফি-রুবেলের অতীত স্মৃতিকে। ২০০৬ সালে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে মাশরাফির আগুন বোলিং (১০-০-২৬-৬) এবং ২০১৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে রুবেলের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের (৫-০-২৬-৬) পরেই যে শোভা পাচ্ছে এখন রিশাদের ইনিংস (৯-০-৩৫-৬)।
এমন একটি ম্যাচে গেম চেঞ্জার রিশাদকে নয়, ২২তম ওভারে এক ক্রেজি দর্শক ফেন্সিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়ে জড়িয়ে ধরেছেন বাঁ হাতি স্পিনার তানভিরকে। রিশাদ কিছুটা দূরে ছিলেন বলেই হয়তবা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে তানভিরের স্পর্শ পেয়েই মহাখুশি ওই দর্শক।
No posts available.
১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম
পাকিস্তানের বিমান হামলায় পাকতিকা প্রদেশে তিন তরুণ ক্রিকেটারের মৃত্যুর পর ক্ষোভে ফুঁসছে আফগানিস্তানের ক্রিকেট অঙ্গন। প্রথমে পাকিস্তান সফরে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ায় তারা।
এবার জাতীয় দলের অধিনায়ক রশিদ খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন—আর তাঁর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ যেন ইঙ্গিত দিচ্ছে, তিনি এবার পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলতে চান না!
রশিদ নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) প্রোফাইল থেকে পিএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লাহোর কালান্দার্সের নাম মুছে ফেলেছেন। তিন আফগান ক্রিকেটার- কবির, সিবঘাতুল্লাহ ও হারুনের মৃত্যুতে নীরব প্রতিবাদ জানালেন এই লেগ স্পিনার।
রশিদ লিখেছেন,
‘সাম্প্রতিক পাকিস্তানি বিমান হামলায় আফগানিস্তানে নারী, শিশু ও তরুণ ক্রিকেটারসহ বহু মানুষের প্রাণহানি গভীরভাবে দুঃখজনক। যারা একদিন দেশের হয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখত, তাদের জীবন এভাবে শেষ হয়ে গেল— এ এক অপূরণীয় ক্ষতি।’
এর আগে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) ঘোষণা দিয়েছে, পাকিস্তানে হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে তারা সরিয়ে নিচ্ছে নিজেদের নাম। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানকে নিয়ে এই সিরিজ হওয়ার কথা ছিল, আফগানিস্তানের জায়গায় এখন অংশ নেবে জিম্বাবুয়ে।
সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ও অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইবও রশিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। নাইব লিখেছেন,
‘পাকিস্তানি সেনাদের এই বর্বরতা আমাদের জাতির মর্যাদা ও স্বাধীনতার ওপর আঘাত, কিন্তু এটি আমাদের ভাঙতে পারবে না।’
নবীর ভাষায়,
‘উরগুনে তরুণ ক্রিকেটারদের শাহাদত হৃদয়বিদারক। এই নৃশংস হামলা আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ করবে।’
রশিদ খান এখন পর্যন্ত লাহোর কালান্দার্সের হয়ে তিন মৌসুমে খেলেছেন। ৪৪ উইকেট নিয়েছেন ১৫.৪৭ গড় ও ৬.১৩ ইকোনমি রেটে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার পর তাঁর সামনের পিএসএলে অংশগ্রহণ এখন বড় প্রশ্নের মুখে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজে দলে ফিরলেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
৩০ বছর বয়সী নাসুম শেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এখন পর্যন্ত ১৮ ম্যাচে ৪.৪৮ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। মিরপুর শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
একই ভেন্যুতে আগামী ২১ ও ২৩ অক্টোবর হবে সিরিজের বাকি দুটি ওয়ানডে। তবে প্রথম ওয়ানডেতে দেখে গেছে উইকেটে ঘূর্ণির নাচন। উইন্ডিজের ৮টি উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। ৬ উইকেট নিয়েছেন রিশাদ হোসেন। একটি করে উইকেটে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানভীর ইসলাম।
তবে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ছিলেন কিছুটা খরচে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩৩ রানে গুটিয়ে গেছে প্রথম ওয়ানডেতে। ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়েছেন তানভীর। পরের ওয়ানডেতে আরেকজন বাঁহাতি হিসেবে নাসুমকে যুক্ত করল বিসিবি।
সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ ও এনসিএলে ছন্দে ছিলেন নাসুম। সরাসরি ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করতে এই সিরিজ গুরুত্বপূর্ণ মিরাজদের জন্য।
বাংলাদেশ ওয়ানডে দল:
মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, জাকার আলী অনিক, শামিম হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান সাকিব, হাসান মাহমুদ ও নাসুম আহমেদ।
টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা হারানোর পর এবার প্রশ্নের মুখে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের জন্য এখনও অধিনায়ক চূড়ান্ত করেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি রিজওয়ানকে আর নেতৃত্বে রাখা হবে না? নতুন অধিনায়ক ঘোষণার জন্যই দল ঘোষণায় দেরি? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে সোমবার।
সাদা বলের কোচ মাইক হেসনকে নিয়ে আলোচনায় বসবে পিসিবি। সেখানেই নির্ধারণ হবে রিজওয়ানের ভাগ্য।
অনিশ্চয়তার জন্মটা দিয়েছে পিসিবিই। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের অধিনায়ক এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অথচ ওয়ানডেতে গত কয়েক সিরিজ ধরে রিজওয়ানই দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এমনকি অধিনায়ক হিসেবে খুব একটা খারাপও করছেন না অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটার। গত বছরে দায়িত্ব পাওয়ার পর তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান।
তবে চলতি বছর নিম্নমুখী। ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরেছে তারা। পরে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও মেলেনি সাফল্য। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েও মিলেছে হতাশা।
রিজওয়ানের পারফরম্যান্স নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলার সুযোগ কম। চলতি বছর ৩৬-র বেশি গড়ে ৩৬১ রান করে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ রান সংগ্রাহক তিনি। এছাড়া প্রোটিয়াদের বিপক্ষে চলতি টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ৭৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন।
তবু ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে রিজওয়ানকে সরিয়ে দেওয়া হবে কিনা, সেটি জানা যাবে খুব শিগগিরই। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। এরপর ৪ নভেম্বর শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ।
এর আগে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শাহিন শাহ আফ্রিদিরও একই ভাগ্যবরণ করতে হয়। পিসিবি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আফ্রিদিকে রহস্যজনকভাবে সরিয়ে দেন মহসিন নাকভি। তখন মাত্র এক সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছিলেন আফ্রিদি।
পার্থের গরম সকালে যেন আগুন ছুড়লেন মিচেল স্টার্ক। ভারতের টপ অর্ডারের সামনে ছুড়ে দিলেন গতি, আগ্রাসন আর নিখুঁত সুইংয়ের মিশেলে তৈরি এক জাদু মন্ত্র। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে তাঁর উইকেট নয়, বরং একটি ডেলিভারি—যার গতি দেখিয়ে স্পিড গান যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারেনি!
ইনিংসের প্রথম বল। রোহিত শর্মার উদ্দেশে ছোড়া বলটি স্পিড গান দেখায় ১৭৬.৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতি। ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম বলই হয়ে যেত! সেই ডেলিভারি নিয়ে রীতিমতো নেটিজেনরা হইচই শুরু করেছেন।
তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন, মেশিনের ভুলে বলের স্পিড এত বেশি দেখিয়েছে। বাস্তবে স্টার্কের বলটির গতি ছিল ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটার। আর তাঁর সবচেয়ে দ্রুত বৈধ ডেলিভারিটিও রোহিতের বিপক্ষেই আসে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে।
প্রথম স্পেলে স্টার্ক ছিলেন বেশ ভয়ংকর। প্রথম পাঁচ ওভারেই ১ মেডেনসহ মাত্র ২০ রান দিয়ে তুলে নেন ১ উইকেট। তাঁর আগুনঝরা স্পেলের শিকার হন বিরাট কোহলি। ৮ বলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।
এর আগেই রোহিত শর্মাকে ভুগিয়েছেন স্টার্ক। পার্থের বাউন্সি উইকেটে বলের গতি আর উচ্চতা মিলিয়ে একের পর এক ব্যাটারকে নাচিয়ে ছাড়েন তিনি। রোহিত শুরুতেই চাপে পড়ে যান, ১৪ বলে করেন মাত্র ৮ রান। শেষ পর্যন্ত জশ হ্যাজলউডের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে ফিরে যান ভারতের সাবেক অধিনায়ক।
ভারতের ইনিংসের চিত্রটা বলছিল সবকিছু—পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৭ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। ২০২৩ সালের পর ওয়ানডেতে ভারতের সবচেয়ে বাজে শুরুর একটি এটি।
যদিও ১৭৬.৫ কিমি/ঘণ্টা গতির সেই বল বাস্তবে মানবসম্ভব নয়। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এর চেয়েও স্টার্কের স্পেলটি ছিল বেশি রোমাঞ্চকর।
আফগানিস্তানের আরগুন জেলায় হামলায় তিন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হওয়ায় আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান। রশিদ খানের দল সিরিজ বয়কট করায় তাদের জায়গা নিচ্ছে জিম্বাবুয়ে। পাকিস্তানে হতে যাওয়া তিন জাতির সিরিজে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তৃতীয় দল হিসেবে যোগ দিবে জিম্বাবুয়ে।
আজ আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) এক সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে। কারণ হিসেবে তারা দাবি করে, দেশটির উরগুন জেলায় একটি সীমান্ত-পারাপারের হামলায় তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন।
এক্স ( টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে এসিবি জানায়, ‘এই হামলায় একাধিক প্রাণহানি হয়েছে, যাদের মধ্যে ছিলেন তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার, যারা পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শারানায় একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাড়ি ফিরছিলেন।’
এসিবি আরও জানায়, ‘এই ঘটনা আফগান ক্রীড়া সমাজ, ক্রীড়াবিদ এবং ক্রিকেট পরিবারের জন্য এক বড় ক্ষতি।’
আফগানিস্তানের বিবৃতির পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে জানিয়েছে, সিরিজটি নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে, এবং আফগানিস্তানের পরিবর্তে অন্য একটি দল অংশ নেবে। জিম্বাবুয়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দেওয়া বিবৃতিতে পিসিবি জানিয়েছে, তারা আগেই আফগানিস্তানের ‘অংশগ্রহণে অক্ষমতা’ সম্পর্কে অবহিত ছিল।
আগামী ১৭ নভেম্বর শুরু হয়ে ২৯ নভেম্বর শেষ হবে ত্রিদেশীয় সিরিজ। পাকিস্তানের লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতে হবে সিরিজটি। রাওয়ালপিন্ডিতে স্বাগতিক পাকিস্তান মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ের। দুই দিন পর একই মাঠে জিম্বাবুয়ে খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সিরিজের বাকি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে।