টেস্ট ক্রিকেটে চাপের মুখে ব্যাটিং করাটা সবসময়ই কঠিন একটি কাজ। আর সেটা যদি হয় ৩০ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারানোর মত ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর, তাহলে সেখান থেকে খুব ভালো কিছু করা হয়ে ওঠে দুরূহ ব্যাপার। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই কাজটা বারবার করে যাচ্ছেন লিটন দাস। চাপের মুখেই যেন বেশি হাসছে তার ব্যাট। এর রহস্য কী? অভিজ্ঞ এই ব্যাটার জানালেন, কঠিন পরিস্থিতেই রান করার সুযোগ বরং বেশি দেখেন তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ২৬। সেখান থেকে স্কোর শেষ পর্যন্ত যায় ২৬২ পর্যন্ত, যেখানে বড় অবদান রাখেন লিটন। একপ্রান্ত আগলে খেলেন ১৩৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সেখানে ডিফেন্ড যেমন করেছেন, তেমনি পরিস্থিতি অনুযায়ী আগ্রাসী শটও খেলেছেন বেশ। শুধু এই ইনিংসেই নয়, এর আগেও ৬-৭ নম্বরে নেমে প্রচণ্ড চাপের মুখে দারুণ সব ইনিংস খেলার কীর্তি গড়ার রয়েছে লিটনের।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সব পেসারই নাহিদের আদর্শ
মঙ্গলবার টি-স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লিটন তার এসব ইনিংস খেলার শক্তি ও বিশ্বাসের জায়গা তুলে ধরেছেন। “মোটিভ কিছু না, আমার কাছে মনে হয় এটা খুব ভালো একটা সুযোগ। সবসময়ই আমি এটা অনুভব করি, ২৬ রানে ৬ উইকেট, ৫০ রানের আগে ৬ উইকেট, এমন সময়ে বোলিং দল অনেক আক্রমণ করে, এটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে এটাই একটা সুযোগ মনে হয় যে এখানে একটা মারলেই চার হয়ে যাবে। চেষ্টা করি সেখানে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করার। অনেক সময় দেখা যায় আপনি ইতিবাচকভাবে ব্যাটিং করলে ব্যাটের কানায় লেগেও বল গ্যাপ দিয়ে চলে যায়। তাই আমি সেটাই করার চেষ্টা করি। ওই অবস্থা থেকে বের হওয়ার দুইটা উপায়, হয় আপনাকে খুব ভালোভাবে টিকে থাকতে হবে, আর নাহলে আক্রমণ করে খেলতে হব। কারণ রানের চাকা সচল হলে স্পিল সরে যাবে, বোলার রান আটকানোর চেষ্টা করবে। আর তখন ভালো বলের সংখ্যা কমে আসবে। আমার কাছে এটাই মনে হয়।”
গত পাঁচ বছরে টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালিষ্ট উইকেটরক্ষক-ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন লিটন। চাপের মুখে জ্বলে ওঠার পাশাপাশি তাতে ফুটে ওঠে এই ফরম্যাটে তার ধারাবাহিকতার দিকটিও। তিন ফরম্যাট বিবেচনা করলেও দেখা যায়, টেস্টেই লিটন সবচেয়ে ভালো করছেন এবং এখানে তার ধারাবাহিকতাও অনেক বেশি।
লিটনও বললেন, টেস্ট ক্রিকেটটা বিশেষভাবে উপভোগও করছেন তিনি। “আমি আসলে এগুলো (রেকর্ড) দেখিনি। আমি টেস্ট ক্রিকেটটা খুব উপভোগ করছি। অনেক আগে থেকেই করতাম। খেলতে চাই অনেকদিন, কারণ আমার কাছে মনে হয় এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি এটা খুব উপযোগ করি। আসলে এভাবে কখনও চিন্তা করিনি যে আমার তিন-চার বছরে আমার গড় এত হচ্ছে। আমি শুধু এটাই চিন্তা করি যে ব্যাটিংয়ে আমার দলকে আরও বেশি কিছু দেওয়া যায়। সবসময় ১০০-১৫০ রান হয়ত হবে না, তবে ৫০ রান করলেও যেন এটার একটা প্রভাব থাকে, এটা নিয়েই আমি কাজ করছি।”
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজে ব্যাট হাতে দারুণ খেলার কারণে আসছে ভারত সিরিজেও লিটনকে নিয়ে সবার আশা অনেকটাই বেড়ে গেছে। আগে-পরে এই দলটির বিপক্ষে তার রয়েছে উল্লেখযোগ্য কিছু ইনিংসও। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে করা সেঞ্চুরি, যা অনেকের চোখেই লিটনের অন্যতম সেরা ইনিংস।
তিনি নিজেও শোনালেন ভারত সিরিজ নিয়ে বড় স্বপ্নের কথা। “মানুষ তো আশা নিয়েই বুক বাঁধে। আমি তো আশা করব যেন আমি দুইটা টেস্টের দুইটাতেই ভালো খেলতে পারি। কারণ কঠিন হবে। তাদের দলে কোয়ালিটি বোলিং লাইনআপ আছে। কন্ডিশন তাদের পক্ষে, একটু কঠিন থাকবেই সবকিছুতে। তবে চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না। এখানে অনুশীলন আছে, ভারতেও আছে। চেষ্টা করব যতদূর সম্ভব খাপ খাইয়ে নিতে।”
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩:৫৪ পিএম
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগেও জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। তবে প্রতিবারই লিটন দাস দায়িত্ব সামলেছেন অস্থায়ীভাবে। আর সেখানে ভালো করার কেউ কেউ এই ফরম্যাটে তার মাঝে দেখতে পান ভবিষ্যৎ অধিনায়কের ছায়া। তিনি নিজে কী ভাবছেন? লিটন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বোর্ডের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে তিনি সেটা লুফে নিতে প্রস্তুত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবারের সিরিজটি সবদিক থেকেই কঠিন ছিল লিটনের জন্য। ওয়ানডে সিরিজ গেছে ভীষণ বাজে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাননি দলের সেরা কিছু ক্রিকেটারকে। তার ওপর প্রতিপক্ষ দল আবার এই ফরম্যাটেই খেলে নিজেদের সেরা ক্রিকেট। ব্যাট হাতে এই সিরিজেও লিটন নিস্প্রভ থাকলেও বাজিমাত করেছে তার দল। প্রথমবারের মত ক্যারিবিয়ানদের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে।
ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতায় পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়কত্ব করা নিয়ে ইতিবাচক উত্তরই দিয়েছেন লিটন। “বিসিবি যদি দায়িত্ব দেয়, আমি সেটা নিতে রাজি আছি। এখানে দ্বিমত থাকার কোনো কথা না। আমি এই কাজটা উপভোগ করছি। এতদিন খেলার অভিজ্ঞতা থেকে আমি অনেক সিদ্ধান্ত নেই, বোলাররাও স্কিল দেখাচ্ছে, তাতে মাঠে আমার কাজ সহজ হয়ে যায়।”
তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। চোটের কারণে পুরো ক্যারিবিয়ান সফরই তিনি মিস করেছেন। মাঝে গুঞ্জন ছিল, টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চান তিনি। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। তবে তিনি যদি সামনে সরে দাঁড়ান, অন্তত এই ফরম্যাটে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার যোগ্য দাবিদার থাকবেন লিটনই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে বোলিং পরিবর্তন থেকে শুরু করে ফিল্ডিং সাজানো, সব জায়গাতেই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি।
লিটন নিজে অবশ্য কৃতিত্ব ভাগ করে দিতে চান দলের সবার মাঝেই।
“ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের মাঠে খুব ভালো দল। বলবো না খুব বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপ, তবে আমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যালেন্সড ব্যাটিং অর্ডার। আমরা যদি বোর্ডে প্রতিদিন কিছু রান দিতে পারি, তাহলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। আমাদের বোলারদের স্কিল বাড়ছে, প্রতি ম্যাচেই নিজে থেকে তারা দায়িত্ব নিচ্ছে, ফিল্ডিং নিজে থেকে সাজাচ্ছে, অনেক কিছু শিখছে। এটা ভালো দিক। আমার কাজ সহজ হয়ে যায়।”
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে আগেও কাজ করেছেন, সফলতাও পেয়েছেন। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে লিটন দাসের জন্য দায়িত্বটা ছিল কঠিনই। ওয়ানডে সিরিজে নিজে ছিলেন ব্যর্থ, দলও যে হেরেছিল সব ম্যাচেই। সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ২০ ওভারের সিরিজে শক্তিশালী ক্যারিবিয়ানদের ধবলধোলাই করেছেন। লিটন মনে করছেন, চাপ না নিয়ে খেলার সুফল পেয়েছে দল।
চাপে অবশ্য বাংলাদেশ দল ছিল ওয়ানডে সিরিজের পারফরম্যান্সের কারণেই। নিজেদের পছন্দের এবং সেরা ফরম্যাটে তিনটি ম্যাচের দুটিতে হারতে হয়ে বড় স্কোর নিয়েই। অথচ র্যাংকিংয়ে চারে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তুলনামূলক কম শক্তিশালী দল নিয়েও বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছে দাপট দেখিয়েই। তাতে ইতিহাস গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবার এই ফরম্যাটে ৩-০ তে সিরিজ জয়ও ধরা দিয়েছে।
ম্যাচের পর অধিনায়ক লিটন বলেছেন, ভারমুক্ত থেকে খেলার মন্ত্রটাই সাহায্য করেছে তাদের।
“আপনি যদি দেখেন, আমরা টেস্ট এবং ওয়ানডেতেও ভালো খেলেছি। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা সব ম্যাচ জিততে পারিনি। তবে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তাই আমাদের সাথে সব সিরিজ খুব ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি সবসময় ছেলেদের বলি চাপ না নিতে, আর স্রেফ খেলাটা উপভোগ করতে। কারণ, আমরা জানি আমাদের খুব ভালো একটা বোলিং আক্রমণ আছে এবং আমরা যে কোনও স্কোরই ডিফেন্ড করতে পারি।”
তিনটি ম্যাচই হয়েছেন কিংসটাউনে এবং তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেছে। প্রথম দুই ম্যাচে বোর্ডে বড় স্কোর না থাকলেও বোলাররা কাজের কাজটা করে দেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে থাকা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব বড় নাম থাকার পরও টানা তিন ম্যাচে তাদের আটকে দেওয়া বড় এক অর্জনই। সিরিজের শেষ ম্যাচে ১৮৯ রান করা বাংলাদেশ ক্যারিবিয়ানদের গুটিয়ে দেয় মাত্র ১০৯ রানেই।
অধিনায়কের কাছ থেকে বোলাররা তাই বাহবাই পেলেন।
“আমরা দিন দিন উন্নতি করছি। আপনি যদি প্রথম এবং দ্বিতীয় ম্যাচ দেখেন, এই উইকেটটি ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো ছিল। আমাদের বোলাররা যেভাবে বল করেছে, সেটা দুর্দান্ত ছিল। কারণ, এই মুহূর্তে তাদের শ্রেয়তর ব্যাটিং অর্ডার রয়েছে। তাদের দলে পাওয়ার হিটার আছে এবং আমরা ১৮০ রান (১৮৯) ডিফেন্ড করে তাদের ১০৯ রানে আটকে দিয়ে জিতেছি। বোলিং ইউনিটের জন্য এটা একটা বড় অর্জন।”
বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স দায়িত্ব নিয়েছেন, খুব বেশিদিন হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই কোচ অল্প সময়েই পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। সাথে বাংলাদেশের স্থানীয় কোচদের মধ্য অন্যতম সফল মোহাম্মাদ সালাহউদ্দিন এই সফরে কাজ করেন ব্যাটিং কোচ হিসেবেও।
নিজেদের সাফল্যের কৃতিত্ব কোচদের সাথেও তাই ভাগাভাগি করে নিলেন লিটন।
“সে (ফিল সিমন্স) আমাদের ওপর কখনো কোনো চাপ দেননি। আমরা শুধু নির্দ্বিধায় ক্রিকেট খেলেছি। আমি শুধু তার কাছে আমাদের সিদ্ধান্ত এবং সবকিছু ব্যাখ্যা করেছি। শুধু তিনিই নন, পুরো কোচিং স্টাফ এবং ম্যানেজমেন্টের লোকরাও ভালো কাজ করেছে। তারা আমাদের জন্য খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেই এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষ ব্যাটারদেরই একজন নিকোলাস পুরান। পেসের পাশাপাশি স্পিনেও রয়েছে দারুণ দক্ষতা। তবে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে পুরো টি-টোয়েন্টি সিরিজেই তাকে নিস্ক্রিয় রেখেছেন একজন - শেখ মাহেদি হাসান। টানা তিন ম্যাচে এই বাঁহাতি ব্যাটারকে আউট করে দলকে এগিয়ে রেখেছেন অনেকটাই। পুরানের বিপক্ষে এমন সফলতার রহস্য কী? মাহেদি শুনিয়েছেন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আনন্দ।
প্রথম ম্যাচে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন পুরান। দ্বিতীয় ম্যাচে তাকে আর্ম ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত করেন মাহেদি, স্লিপে সহজ ক্যাচ দেন এই মারমুখী ব্যাটার। আর সিরিজের শেষ ম্যাচে ব্যাকফুটে গিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে হয়ে যান বোল্ড। এমন মাপের একজন ব্যাটারকে হ্যাটট্রিক শিকার বানানো চাট্টিখানি কথা নয়।
৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হওয়া মাহেদি বলেছেন, পুরানকে নিয়ে তাদের ভিন্ন কৌশল ছিল, যা কাজে লেগেছে।
“(রংপুর রাইডার্সের হয়ে) গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে খেলার ভালো অভিজ্ঞতা ছিল, আর সেটা এখানে সাহায্য করেছে। আমি এই ধরণের উইকেটে বোলিং করাটা উপভোগ করেছি। আমরা সিরিজ শুরুর আগে উইকেট টু উইকেটে বল করার পরিকল্পনা করেছি। আমি পুরানকে চিনি, তার সাথে বিপিএল এবং অন্যান্য লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ডানহাতি অফ স্পিনারের বিপক্ষে সে খুব কঠিন একজন ব্যাটার। কিন্তু তাকে সামলানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনা ছিল।”
মাহেদি বাংলাদেশ দলের সাথে এই সফরের স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার ঠিক আগে অংশ নেন গায়ানায় হওয়া গ্লোবাল সুপার লিগে। রংপুর রাইডার্সের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে খেলেন প্রতিটি ম্যাচেই। এই সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে টুর্নামেন্টটি তাকে তাই বেশ সাহায্য করেছে, যা প্রতীয়মান হয় গোটা সিরিজ জুড়ে মাহেদির বোলিংয়েই।
প্রথম ম্যাচে চার ওভারে মাত্র ১৩ রানে নেন ৪ উইকেট, যা এই ফরম্যাটে তার সেরা বোলিং ফিগার। পরের দুই ম্যাচে নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। পাওয়ার প্লেতে নিয়মিতই উইকেট শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের পাওয়ার প্লেতে চাপে ফেলার কাজটা সবগুলো ম্যাচেই করেছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
একবার যখন রান আউট হয়েও নাটকীয়ভাবে ফিরে এসেছিলেন, তখন বোর্ডে ছিল না তেমন রান। জাকের আলি অনিক নিজেও ছিলেন না সেরা ছন্দে। তবে ইনিংসের শেষের দিকে সাম্প্রতিক সময়ে ঝড় তোলা এই ব্যাটার আরও একবার ঠিক সেটাই করেন, যে কাজটা তিনি রপ্ত করে ফেলেছেন দারুণভাবেই। ম্যাচ জেতানো ফিফটি করে জাকের বললেন, শেষের ঝড় তোলার বিশ্বাসটা তার ছিলই।
১৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল মাত্র ৬ উইকেটে ১১৪। জাকের তখন ব্যাট করছিলেন প্রায় ১০০ স্ট্রাইক রেটে। ব্যাটে ছিল না ধার। তবে চার-ছক্কার পসরা সাজিয়ে শেষ চার ওভারে এলোমেলো করে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ফিফটি করা ছাড়াও আলজারি জোসেফের করা ২০তম ওভারে তুলে নেন ২৫ রান, যা বাংলাদেশকে এনে দেয় ১৮৯ রানের বিশাল স্কোর।
ম্যাচ সেরার খেতাব জিতে জাকের বললেন, ডেথ ওভারে রান করার ব্যাপারে শতভাগ বিশ্বাস ছিল তার মাঝে।
“এটা আমার জন্য এটা বেশ চমৎকার একটি সফর ছিল। আজকে আমি সময় নিতে চেয়েছিলাম এবং আমি জানতাম, আমি যদি শেষ পর্যন্ত টিকতে পারি, তাহলে রান করতে পারব। রান আউটে (শামীম হোসেনের সাথে) ভয়ঙ্কর ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, আর এরপর তৃতীয় আম্পায়ার আমাকে ফিরে ডাকেন। ভাগ্য ভালো, আমি এর পর রান করেছি এবং আমি এটা নিয়ে খুশি। এটা পুরোটাই মানসিকতার ব্যাপার। আমি এখানে বিশ্বকাপ খেলেছি এবং তখন ভালো না করলেও এই ফরম্যাটে আমার জন্য সময়টা ভালোই যাচ্ছে।”
জাকের এই ইনিংস সম্ভবই হতো না, যদি তিনি রান আউটই হয়ে যেতেন শেষ পর্যন্ত। তবে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পর আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বদলে তার বদলে রান আউট দেন শামীম হোসেনকে। এরপরই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে ৬টি ছক্কা ও ৩ চারের মারে খেলেন মাত্র ৪২ বলে ৭১ রানের ইনিংস, যা এই ফরম্যাটে এখন জাকেরের সেরা ইনিংস।
জাকেরের ওই ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ বিশাল স্কোর পাওয়ার পর বোলারদের হাত ধরে পেয়েছে ৮০ রানের বড় জয়, যা নিশ্চিত করে ৩-০ তে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।
রান আউট হয়ে চলে গিয়েছিলেন ড্রেসিংরুমে, সেখান থেকে যখন জাকের আলি অনিক ফিরলেন, দল তখন চাপের মুখেই। প্রথম দুই ম্যাচের ‘হিরো’ শামীম হোসেনের অনাকাঙ্ক্ষিত রান আউটের কারণেই কিনা, জাকের যেন এরপর তেতে উঠলেন নতুন উদ্দীপনায়। ব্যাট হাতে রীতিমত কচুকাটা করলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের। তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে বাংলাদেশ পেল সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোর। বোলারদের আরেকটি পেশাদার পারফরম্যান্সে লড়াইও জমাতে পারল না ক্যারিবিয়ানরা।
কিংসটাউনে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতেছে ৮০ রানে। জাকেরের ফিফটিতে সফরকারীরা চড়েছিল ৭ উইকেটে ১৮৯ রানের পাহাড়ে। মাত্র ১০৯ রানেই গুটিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ সিরিজ জিতল ৩-০ ব্যবধানে। তিন ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই কীর্তি এবারই প্রথম। এর আগের সেরা ছিল ২০১৮ সালের ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়।
এর মধ্য দিয়ে শেষ হল বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরও। টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্র করার পর ওয়ানডেতে ৩-০ ব্যবধানে হেরে গিয়েছিল সফরকারীরা।
আরও পড়ুন
ব্যাটে-বলে মাহেদির ঝলক, বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর জয় |
টেস্টের মত টি-টোয়েন্টিতেও সিরিজের শেষ ম্যাচে জাকের আলির ব্যাট হেসেছে দলের সবচেয়ে দরকারের মুহূর্তেই। চাপের মুখেই যেন সেরাটা দেওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠছে তরুণ এই ব্যাটারের। এক সফরে তিন ফরম্যাটেই ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস বলে দেয়, অল্প সময়েই ব্যাটসম্যানশিপে চোখে পড়ার মত উন্নতি করেছেন জাকের।
শামীমের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে সেই রান আউট যদি শেষ পর্যন্ত জাকেরই হতেন, তাহলে অবশ্য গল্পটা ভিন্ন হতেও পারত। আউট হয়ে ফেরার পথে ছিলেন প্রচন্ড ক্ষিপ্ত। প্রথম ১৩ বলে মাত্র ১০ রান করা সেই একই ব্যাটার নাটকীয়ভাবে আউট হয়েও ফিরে এসে সব রাগ যেন ঝাড়লেন বোলারদের ওপর।
শামীমের পর একই ওভারে শেখ মাহেদি হাসানের রান আউটে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছিল ১৫ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৪। ১৫০ রানও তখন মনে হচ্ছিল অনেক। তবে দুটি আউটের দায় যেন নিজের কাঁধেই নেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে নেন জাকের। শুরুটা করেন আলজারি জোসেফের এক ওভারে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে।
আরও পড়ুন
আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে শামীম |
ক্যামিও ইনিংসে তাকে ভালো সঙ্গ দেন তানজিম হাসান সাকিব। দুজন মিলে ওবেদ ম্যাকবয়ের এক ওভারে তুলে নেন ২০ রান। তবে জাকের ঝড়টা বইয়ে দেন মূলত শেষ ওভারে। গতিময় পেসার আলজারিকে পাড়ার বোলার বানিয়ে চার বলের মধ্যে মারেন তিনটি ছক্কা। সব মিলিয়ে ২০তম ওভারে ২৫ রান, যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ।
এই ঝড়ের মধ্যেই মাত্র ৩৬ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন জাকের। অপরাজিত থাকেন মাত্র ৪১ বলে ৭২ রানের রোমাঞ্চময় এক ইনিংস খেলে। ৬টি ছক্কার সাথে হাঁকান ৩টি চার। জাকেরের এই ইনিংসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল তার ‘গেম সেন্স’ এবং বোলার ও ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে শট খেলা। আর এই কারণেই শুরুটা ধীরগতির হলেও তিনি শেষটা করতে পেরেছেন দুর্দান্তভাবেই।
তার ওই ইনিংসে আগে একমাত্র ইতিবাচক দিক ছিল এই ম্যাচ দিয়েই একাদশে আসা পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাটিং। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে দারুণ কিছু শটে উপহার দেন এই ফরম্যাটে তার সেরা ইনিংসটি। ৪টি চার ও ২ ছক্কায় সাজান ২১ বলে ৩৯ রানের ইনিংস। সাথে মেহেদি হাসান মিরাজের ২৩ বলে ২৯ রানের ইনিংসে পরও সুবিধাজনক অবস্থান ছিল না বাংলাদেশের। এরপরই হাজির জাকের, আরও একবার ত্রাতার ভূমিকায়...
জাকেরের হাত ধরে প্রায় ১৯০ ছুঁইছুঁই স্কোর পেয়ে বোলারদেরও বাড়তি অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা। কারণ, প্রথম দুই ম্যাচে তারা ডিফেন্ড করেছেন ১৩০ রানেরও কম স্কোর। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ব্র্যান্ডন কিংকে ইনসুইঙ্গারে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাসকিন আহমেদ। আরও একবার আক্রমণে এসেই আঘাত হানেন মাহেদি।
তানজিমের এক ওভারে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আগ্রাসনের সুর ছিল জনসন চার্লসের ব্যাটে। অন্যপ্রান্তে নিকোলাস পুরান ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগে তাকে সিরিজে তৃতীয়বারের মত শিকার বানান মাহেদি। ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ১৫ রানে।
আরও পড়ুন
সিরিজের শেষ ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ইমন |
এরপর হাসান মাহমুদের এক ওভারেই একেবারেই বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। রোস্টন চেজের পর সাজঘরের পথ ধরেন ১৮ বলে ২৩ করা চার্লসও। ৪৭ রানে ৫ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ম্যাচ জেতার আশা কার্যত সেখানেই শেষ হয়ে যায়। দলকে আরও চেপে ফেলে অল্পে ফেরেন প্রথম ম্যাচে লড়াকু ফিফটি করা রোভমান পাওয়েলও।
এরপর কিছু বড় শটে রোমারিও শেফার্ড কেবল কমাতে পারেন পরাজয়ের ব্যবধান। ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। দুটি করে তাসকিন ও মাহেদির।