
টেস্ট ক্রিকেটে চাপের মুখে ব্যাটিং করাটা সবসময়ই কঠিন একটি কাজ। আর সেটা যদি হয় ৩০ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারানোর মত ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর, তাহলে সেখান থেকে খুব ভালো কিছু করা হয়ে ওঠে দুরূহ ব্যাপার। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই কাজটা বারবার করে যাচ্ছেন লিটন দাস। চাপের মুখেই যেন বেশি হাসছে তার ব্যাট। এর রহস্য কী? অভিজ্ঞ এই ব্যাটার জানালেন, কঠিন পরিস্থিতেই রান করার সুযোগ বরং বেশি দেখেন তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ২৬। সেখান থেকে স্কোর শেষ পর্যন্ত যায় ২৬২ পর্যন্ত, যেখানে বড় অবদান রাখেন লিটন। একপ্রান্ত আগলে খেলেন ১৩৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সেখানে ডিফেন্ড যেমন করেছেন, তেমনি পরিস্থিতি অনুযায়ী আগ্রাসী শটও খেলেছেন বেশ। শুধু এই ইনিংসেই নয়, এর আগেও ৬-৭ নম্বরে নেমে প্রচণ্ড চাপের মুখে দারুণ সব ইনিংস খেলার কীর্তি গড়ার রয়েছে লিটনের।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সব পেসারই নাহিদের আদর্শ
মঙ্গলবার টি-স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লিটন তার এসব ইনিংস খেলার শক্তি ও বিশ্বাসের জায়গা তুলে ধরেছেন। “মোটিভ কিছু না, আমার কাছে মনে হয় এটা খুব ভালো একটা সুযোগ। সবসময়ই আমি এটা অনুভব করি, ২৬ রানে ৬ উইকেট, ৫০ রানের আগে ৬ উইকেট, এমন সময়ে বোলিং দল অনেক আক্রমণ করে, এটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে এটাই একটা সুযোগ মনে হয় যে এখানে একটা মারলেই চার হয়ে যাবে। চেষ্টা করি সেখানে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করার। অনেক সময় দেখা যায় আপনি ইতিবাচকভাবে ব্যাটিং করলে ব্যাটের কানায় লেগেও বল গ্যাপ দিয়ে চলে যায়। তাই আমি সেটাই করার চেষ্টা করি। ওই অবস্থা থেকে বের হওয়ার দুইটা উপায়, হয় আপনাকে খুব ভালোভাবে টিকে থাকতে হবে, আর নাহলে আক্রমণ করে খেলতে হব। কারণ রানের চাকা সচল হলে স্পিল সরে যাবে, বোলার রান আটকানোর চেষ্টা করবে। আর তখন ভালো বলের সংখ্যা কমে আসবে। আমার কাছে এটাই মনে হয়।”
গত পাঁচ বছরে টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালিষ্ট উইকেটরক্ষক-ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন লিটন। চাপের মুখে জ্বলে ওঠার পাশাপাশি তাতে ফুটে ওঠে এই ফরম্যাটে তার ধারাবাহিকতার দিকটিও। তিন ফরম্যাট বিবেচনা করলেও দেখা যায়, টেস্টেই লিটন সবচেয়ে ভালো করছেন এবং এখানে তার ধারাবাহিকতাও অনেক বেশি।

লিটনও বললেন, টেস্ট ক্রিকেটটা বিশেষভাবে উপভোগও করছেন তিনি। “আমি আসলে এগুলো (রেকর্ড) দেখিনি। আমি টেস্ট ক্রিকেটটা খুব উপভোগ করছি। অনেক আগে থেকেই করতাম। খেলতে চাই অনেকদিন, কারণ আমার কাছে মনে হয় এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি এটা খুব উপযোগ করি। আসলে এভাবে কখনও চিন্তা করিনি যে আমার তিন-চার বছরে আমার গড় এত হচ্ছে। আমি শুধু এটাই চিন্তা করি যে ব্যাটিংয়ে আমার দলকে আরও বেশি কিছু দেওয়া যায়। সবসময় ১০০-১৫০ রান হয়ত হবে না, তবে ৫০ রান করলেও যেন এটার একটা প্রভাব থাকে, এটা নিয়েই আমি কাজ করছি।”
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজে ব্যাট হাতে দারুণ খেলার কারণে আসছে ভারত সিরিজেও লিটনকে নিয়ে সবার আশা অনেকটাই বেড়ে গেছে। আগে-পরে এই দলটির বিপক্ষে তার রয়েছে উল্লেখযোগ্য কিছু ইনিংসও। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে করা সেঞ্চুরি, যা অনেকের চোখেই লিটনের অন্যতম সেরা ইনিংস।
তিনি নিজেও শোনালেন ভারত সিরিজ নিয়ে বড় স্বপ্নের কথা। “মানুষ তো আশা নিয়েই বুক বাঁধে। আমি তো আশা করব যেন আমি দুইটা টেস্টের দুইটাতেই ভালো খেলতে পারি। কারণ কঠিন হবে। তাদের দলে কোয়ালিটি বোলিং লাইনআপ আছে। কন্ডিশন তাদের পক্ষে, একটু কঠিন থাকবেই সবকিছুতে। তবে চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না। এখানে অনুশীলন আছে, ভারতেও আছে। চেষ্টা করব যতদূর সম্ভব খাপ খাইয়ে নিতে।”
No posts available.
৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:০৩ পিএম

সামনের বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজেদের সাপোর্ট স্টাফে বড় নাম যুক্ত করল নামিবিয়া।ভারতের ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ গ্যারি কারস্টেনকে জাতীয় দলের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিল তারা।
নামিবিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে প্রধান কোচ ক্রেইগ উইলিয়ামসের সঙ্গে মিলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় হতে যাওয়া বিশ্বকাপের আগে থেকেই কাজ শুরু করে দেবেন কারস্টেন।
ক্রিকেট নামিবিয়ার দেওয়া বিবৃতিতে নতুন দায়িত্বে কাজ শুরুর রোমাঞ্চ জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এই ক্রিকেটার।
“ক্রিকেট নামিবিয়ার সঙ্গে কাজ করা নিঃসন্দেহে একটি বিশেষ সুযোগ। তাদের নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা আমাকে পুরোপুরি মুগ্ধ করেছে। তাদের নতুন অত্যাধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামই প্রমাণ যে দলগুলোকে বিশ্বের সেরা ক্রিকেট দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তুলতে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
“তাদের সিনিয়র পুরুষ দল ভালো পারফর্ম করছে। আর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে বাড়তি কিছু যোগ করার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।”
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরেই উন্নতির পথে আছে নামিবিয়া। গত তিনটি বিশ্বকাপেই খেলেছে তারা। সামনের বছরের টুর্নামেন্টেও দেখা যাবে দলটিকে। এছাড়া ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সহ-স্বাগতিকও নামিবিয়া।
এগিয়ে যাওয়ার গতি আরও বৃদ্ধি করতেই কারস্টেনকে নিয়োগ দিয়েছে নামিবিয়া। ২০০৪ সালে ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর পর তিন বছর নিজ দেশেই ঘরোয়া ক্রিকেটে নানান দলে কোচিং করান কারস্টেন।
২০০৭ সালে ভারতের জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন সাবেক প্রোটিয়া ব্যাটার। তার কোচিংয়ে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলেরও কোচিং করান তিনি। এছাড়া বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও কোচের ভূমিকায় দেখে গেছে কারস্টেনকে।

সিরিজ জিতেছে ভারত। সিরিজে রান পেয়েছেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই তারকা ব্যাটার রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলি। সিরিজ সেরা হয়েছেন কোহলি। ভারতের ক্রিকেটভক্তদের জন্য বেশ আনন্দের মূর্হুতই বটে।
আজ বিশাখাপত্তনমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে ৯ উইকেটে জিতেছে ভারত। রোহিত-কোহলির ফিফটি আর যশস্বী জয়সওয়ালের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়াদের বলে-কয়ে হারাল স্বাগতিকরা।
শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৪৭.৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান করে। জবাবে ৬১ বল ও ৯ উইকেট বাকি রেখেই জয়ে নোঙর করে স্বাগতিকরা। ১২১ বলে ১১৬ করা যশস্বী হন ম্যাচসেরা। আর তিন ম্যাচের সিরিজে মোট দুই সেঞ্চুরি ও এক ফিফটিতে মোট ৩০২ রান করা কোহলি হন সিরিজসেরা।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বর্তমানে সাড়ে তিনশো রানও নিরাপদ নয়। আগের ম্যাচেই সেটি দেখিয়ে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে আজ নিজেরা তিনশো রানের কাছেও যেতে পারেনি। ২৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের উদ্বোধনী জুটিই বেশিরভাগ কাজ করে দিয়ে যায়। ১৫৫ বলে ১৫৫ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন রোহিত-জয়সওয়াল।
৭৩ বলে ৭৫ করা রোহিত থামেন কেশব মহারাজের বলে ম্যাথু ব্রিৎজকের তালুবন্দি হয়ে। ৭ চার ও ৩ ছয়ে ইনিংসটি সাজান ৩৮ বছর বয়সী ডানহাতি এই ওপেনার। এদিন দারুণ এক মাইফলকও স্পর্শ করেন রোহিত। ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে ২০ হাজার রানের ক্লাবে যোগ দিলেন তিনি। এ তালিকায় বাকিরা হলেন শচিন টেন্ডুলকার (৩৪৩৫৭), বিরাট কোহলি (২৭৯১০), রাহুল দ্রাবিড় (২৪২০৮)।
রোহিত ফেরার পর দ্বিতীয় উইকেটে কোহলি-জয়সওয়ালের ১২৬ রানের জুটিতে হেসেখেলে জয় পায় ভারত। চার ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পান জয়সওয়াল। ১২১ বলে ১১৬ রানের ইনিংসটি খেলতে ১২টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটার।
কোহলি ভক্তরা হয়তো খানিকটা আফসোসই করেছেন। ইশ, যদি দক্ষিণ আফ্রিকার রান আরও বেশি হতো, তবে টানা তিন ম্যাচে হয়তো সেঞ্চুরি দেখা যেত ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরার ব্যাটে। টানা দুই চারে ভারতকে জেতানো কোহলি করেছেন ৪৫ বলে ৬৫ রান। মেরেছেন ৬টি চার ও দু’টি ছক্কা।
এর আগে দীর্ঘ সময় পর টস ভাগ্য খুলে ভারতের। দীর্ঘ ২৫ মাস ও ২০ ম্যাচ পর অবশেষে ওয়ানডে টস জিতে ভারত। সবশেষ ২০২৩ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল ম্যাচের পর ওয়ানডেতে টস জিততেই যেন ভুলে গিয়েছিল ভারত। অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ২০ ম্যাচের অপেক্ষা ঘোচালেন রাহুল।
টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান রাহুল। প্রথম ওভারেই রায়ান রিকেল্টনকে ফিরিয়ে ভারতকে দারুণ সূচনা এনে দেন আর্শদ্বিপ সিং। ১ রানে এক উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ও কুইন্টন ডি-কক। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকেই ছুটছিল প্রোটিয়ারা। তবে বাভুমাকে কোহলির ক্যাচ বানিয়ে ১১৩ রানের জুটি ভেঙে ভারতকে ম্যাচে ফেরান রবীন্দ্র জাদেজা।
মিডল অর্ডারে ব্রিটজকে এবং ব্রেভিস ভাল শুরু করেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন দু’জনই। ব্রিটজকেকে(২৪) ফেরান প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা আর ব্রেভিসকে(২৯) কুলদীপ যাদব। এডেন মার্করামও ফেরেন ১ রানে।
রান করতে পারেননি কভিন বসচ এবং মার্কো জানসেনও। দক্ষিণ আফ্রিকার রান যখন ১৯৯, এক প্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরি করা ডি-কক আউট হন কৃষ্ণার বলে বোল্ড হয়ে। ৮৯ বলে ১০৬ রানের ইনিংস খেলার পথে দারুণ কয়েকটি রেকর্ডেও নাম লেখান তিনি। অবসর থেকে ফেরা এই বাঁহাতি ব্যাটার ২৩তম শতকে বিদেশের মাটিতে সর্বাধিক ওয়ানডে সেঞ্চুরির যৌথ রেকর্ড গড়েছেন। দেশের বাইরে তাঁর মোট সেঞ্চুরি এখন সাতটি। ডি ককের আগে চার ব্যাটার এই সংখ্যা ছুঁয়েছেন।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি সনাৎ জয়সুরিয়ার সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে সর্বাধিক ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাগাভাগি করলেন ডি ককের। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ২৩ ইনিংসে ৭টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে সমান সংখ্যাক শতক পাওয়া জয়সুরিয়াকে খেলতে হয়েছে ৮৫ ইনিংস। উইকেটকিপার হিসেবেও সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড স্পর্শ করলেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটার। কুমার সাঙ্গাকারার সমান ২৩টি সেঞ্চুরি তাঁর।
ডি কক ফেরার পর ৭১ রানে পাঁচ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিকে মহারাজের ২৯ বলে ২০ রানের ইনিংসে কোনমতে ২৭০ করে তাঁরা। কুলদীপ এবং প্রসিদ্ধ ৪টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন অর্শদীপ এবং জাদেজা।

আজ গ্যাবায় একটি দৃশ্যকে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের করুণ দশার প্রতীকি বলতে পারেন কেউ। প্রায়ই মাঠে অদ্ভুত কিছু দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন ক্যামেরাপার্সনরা। অ্যাশেজে এমন অনেক চমকপ্রদ ছবি আলোচনায় এসেছে আগেও। এই যেমন ব্রেট লি’কে অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফফের সান্ত্বনা, শেন ওয়ার্নের বেলকনি নাচ সহ এমন অনেক মূহূর্ত স্বরণীয় হয়ে আছে। চলতি অ্যাশেজে এবার আরেকটি মজার দৃশ্য দেখা গেল। আর এই দৃশ্যের সঙ্গে চাইলে অনেকে এবারের অ্যাশেজে বিপর্যস্ত ইংল্যান্ডের মিল খুঁজে পেতে পারেন।
দিবারাত্রির ব্রিসবেন টেস্টে আজ ৬ উইকেটে ৩৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। এরপর বড় লিড নিয়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের ছয়টি উইকেটও তুলে নিয়েছে স্টিভেন স্মিথের দল। তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডের ইনিংস হার এড়াতে এখনো প্রয়োজন ৪৩ রান। এরমধ্যে ইংলিশ পেসার জফরা আর্চার অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়ে আলোচনায় এলেন। গ্যাবায় আজ একটি বালিশ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যায় ইংলিশ গতি তারকাকে।
দিনের শুরুতে ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার আর্চার হয়তো ভেবেছিলেন যে অজিদের লোয়ার অর্ডারের ব্যাটারদের দ্রুতই ফিরিয়ে দলকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে যাবেন। তাতে হয়তো নির্ভার মনে হচ্ছিল ইংলিশ গতি তারকাকে। তবে তাকে ভুল প্রমাণ করে অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডারের ব্যাটারা দলকে এনে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ লিড।
আর্চারের বালিশ নিয়ে হেঁটে যাওয়া এই ছবি নিয়ে ইতিমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন এই ছবি তাঁর উদাসীন মনোভাবেরই পরিচয় দিচ্ছে। বল হাতেও ভালো করতে পারেননি এই গতি তারকা। ২৫ ওভারে ৮৭ রান দিয়েন মাত্র একটি উইকেট নিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন এই বালিশ কাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেন। এ তালিকায় আছে ম্যাথু হেডেনও। তাঁর দৃষ্টিতে একজন খেলোয়াড়কে বালিশ নিয়ে মাঠে আসা দেখাটা চরম আশ্চর্যের বিষয়, এবং ব্যাটারদের উচিত এমন উদাসীন মনোভাবকে কাজে লাগানো।
আর মাইকেল ভন বলছেন, দুঃখিত, এটা সত্যিই অদ্ভুত দেখাচ্ছে। যদি আমি ব্যাটার হতাম, আমি বলছি কী করব—এটার সুযোগ নিয়ে সরাসরি মন দিয়ে খেলা শুরু করব। সারাজীবন ধরে।’
তিনি আরও যোগ করেন,
‘একজন ব্যাটার হিসেবে ঠিক এমন মনোভাবই দরকার। আপনি তখন ভাববেন, “তুমি কখনও ওই বালিশে ঘুমাতে পারবে না”—এটাই হবে ব্যাটারদের জন্য সুযোগ।’
পুরো ইংল্যান্ড দলের মাঠের শরীরি ভাষারও সমালোচনা করেন ভন। তাঁর মতে স্টোকদের ক্লান্ত-বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল,
‘আমি পুরোপুরি ভিন্নভাবে কাজ করতাম। আজ এমন এক দলকে দেখছি, যাদের দেখে ক্লান্ত ও উদাসীন মনে হচ্ছিল। সুযোগ নেওয়ার কৌশল হল মনোযোগ। আপনি যদি নিয়মিত বাইরে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীল না করেন, তবে যখন সুযোগ আসে, আপনাকে পুরো মনোযোগ দিয়ে তা নিতে হবে। তার জন্য একমাত্র উপায় হলো মস্তিষ্কের যথাযথ অনুশীলন।’

গ্যাবায় অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে বল হাতে দাপট দেখানোর পর ব্যাট হাতেও ইতিহাস গড়লেন মিচেল স্টার্ক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে টেস্ট ইতিহাসে ৯ নম্বর পজিশনে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড এখন অস্ট্রেলিয়ান পেসারের দখলে।
ব্রিসবেন টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুতেই ৩৮৩ রানে ৭ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। মাইকেল নেসার আউট হওয়ার পর উইকেটে আসেন স্টার্ক। ইংল্যান্ডের চেয়ে ৪৯ রানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও লিড বাড়ানোর চাপ ছিল অস্ট্রেলিয়ার জন্য।
অ্যালেক্স ক্যারির সঙ্গে ৩৩ রানের জুটি গড়ে ইনিংস গুছিয়ে নেন স্টার্ক। ক্যারি আউট হওয়ার পর মূলত একাই দলের রান বাড়াতে থাকেন তিনি। অন্য প্রান্তে স্কট বোল্যান্ড ধরে রাখেন উইকেট।
চা বিরতির আগে চার রান দূরে ছিলেন ফিফটির। বিরতির পর উইল জ্যাকসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের ১১তম টেস্ট ফিফটি পূর্ণ করেন স্টার্ক।
দিনের শুরুতে বল হাতে ছয় উইকেট নেওয়া কীর্তি গড়েন স্টার্ক। ব্যাটিংয়েও ইংল্যান্ডকে ভোগাতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ৭৭ রানে কার্সের বলে মিড-অফে ক্যাচ তুলে দিয়ে ইনিংস শেষ করেন তিনি। তবে নামার আগে টেস্ট ক্রিকেটে নম্বার-৯ ব্যাটার হিসেবে সর্বোচ্চ রান করার কীর্তি গড়ে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার।
ব্রিসবেনে প্রথম ইনিংস শেষে ৯ নম্বর পজিশনে স্টার্কের রান হলো ১৪০৮। ১৯ রানে পেছনে ফেলেছেন সাবেক ইংলিশ তারকা স্টুয়ার্ট ব্রডকে। শুধু তা-ই নয়, এই পজিশনে সবচেয়ে বেশি ফিফটির মালিকও এখন স্টার্ক (৮), যা পরের তিনজন—গ্রায়েম সোয়ান, ড্যানিয়েল ভেট্টরি ও কিরণ মোরের (৫) চেয়ে অনেক এগিয়ে।
গাবায় অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে করে ৫১১ রান। জবাবে ইংল্যান্ড ৩৩৪ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় দিন শেষে ১৩৪/৬। দ্বিতীয় ইনিংসেও ২ উইকেট এরই মধ্যে নিয়েছেন স্টার্ক।

২০২৫ সালের শেষটা দারুণ করেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ের পর এখন দলটির সামনে বড় লক্ষ্য ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
এর আগে ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। এই বিরতিতে অলস বসে নেই জাতীয় দলের ব্যাটাররা। শনিবার থেকে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি মাঠে শুরু হয়েছে বিশেষ ব্যাটিং ক্যাম্প, যা চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রথম দিন প্রায় চার ঘণ্টার সেশনে অংশ নেন তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, সাইফ হাসান ও নুরুল হাসান সোহান। পুরো সেশন পরিচালনা করেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন ও ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল।
সেশন শেষে গণমাধ্যমে সালাহউদ্দীন জানান, ব্যাটারদের সুনির্দিষ্ট স্কিল উন্নতিই ক্যাম্পের মূল উদ্দেশ্য।
“উন্নতির আসলে শেষ নেই। আপনারা প্রায়ই বলেন আমাদের স্কিলে ঘাটতি আছে- সেটা আমরাও জানি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ব্যস্ততার কারণে কাজ করার সময় পাওয়া যায় না। এই ক্যাম্পটা খেলোয়াড়দের ঘষা-মাজার জন্য। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে ভালো শটও অনেক সময় ফিল্ডারের কাছে চলে যায়- এগুলো সামলানোর দক্ষতা বাড়ানোই লক্ষ্য।”
তিনি জানান, গ্যাপ খুঁজে ব্যাট চালানো, বোলারের গতি ব্যবহার করা, কম ঝুঁকিতে বাউন্ডারি নেওয়ার কৌশল ও সিঙ্গেলের হার বাড়ানোর দিকেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
সেশনে ব্যাটারদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে দেখা গেছে, যা কোচিং স্টাফ ইচ্ছাকৃতভাবেই উৎসাহ দেন।
“টিম মিটিংয়ে কথা বলা, আলোচনায় অংশ নেওয়া, এমনকি নিজেরাই মিটিং লিড করা- এসব করতে বলা হয়। কারণ সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে, খেলেন তো তারাই। খেলোয়াড়রা যত নেতৃত্ব নেবে, তত পরিপক্ব হবে; গেম সেন্সও তত বাড়বে।”
তিনি আরও বলেন, মাঠে তো কোচ সবসময় থাকতে পারেন না। তাই খেলোয়াড়রা যদি নিজেদের ‘নিজস্ব কোচ’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, তা হলে মাঠের পারফরম্যান্স আরও সমৃদ্ধ হবে।
টি-টোয়েন্টিতে ২০২৫ সালটি ছিল বাংলাদেশের সেরা বছর। ৩০ ম্যাচে রেকর্ড ১৫ জয়ের পাশাপাশি দলের ব্যাটাররা করেছে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২৩৯ রান। এসেছে ২৩টি অর্ধশতক, রেকর্ড ২০৬ ছক্কা, বোলাররা তুলে নিয়েছেন ১৮৮টি উইকেট।
বছরজুড়ে দলের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন জানান সালাহউদ্দীন।
“টি-টোয়েন্টিতে আমরা এখন সেই জায়গার কাছাকাছি, যেখানে যেতে চাই। বড় কোনও সাফল্য এখনো পাইনি ঠিকই। কিন্তু নিয়মিত সিরিজ খেলছি, পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছি। ব্যাটাররা তাদের ভূমিকা বুঝতে শুরু করেছে। সামনে দুই মাস যদি এভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে বিশ্বকাপের আগে দল খুব ভালো জায়গায় পৌঁছে যাবে।”