১০ জানুয়ারি ২০২৫, ৮:৪২ পিএম
পাকিস্তান ক্রিকেটে অবদানের দারুণ স্বীকৃতি পেলেন দেশটির ইতিহাসের অন্যতম সেরা চার জন ক্রিকেটার। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ইনজামাম-উল-হক, মিসবাহ-উল-হক, সাঈদ আনোয়ার ও মুশতাক মোহাম্মদ এবং সাঈদ আনোয়ার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
এই চার জন্য যুক্ত হবেন এখন পর্যন্ত এই সম্মান পাওয়া আরও দশজনের সাথে। পিসিবি হল অব ফেম চালু করেছে ২০২১ সাল থেকে।
পাকিস্তানের ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদ্যস ছিলেন ইনজামাম। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১২০টি টেস্ট, ৩৭৮টি ওয়ানডে এবং একটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। টেস্টে প্রায় ৯ হাজার রানের পাশাপাশি ওয়ানডেতে করেছেন ১১ হাজারের বেশি রান। পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে দেশটির ইতিহাসের টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর (৩২৯ রান)।
আরও পড়ুন
নাহিদের গতিতে মুগ্ধ ইফতিখার, প্রশংসায় পঞ্চমুখ সোহানের |
পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়কদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় মিসবাহকে। ২০১০ সালে পাকিস্তান ক্রিকেটের কুখ্যাত স্পট-ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর তিনি অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন। তার হাত ধরে ২০১৬ সালে পাকিস্তান টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে চলে গিয়েছিল।
হল অব ফেমের অন্যজন, সাঈদ আনোয়ার পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার। ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে তার করা ১৯৪ রান একটা লম্বা সময় ধরে ছিল ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। ৫৫ টেস্টে ৪ হাজারের বেশি রানের পাশাপাশি ২৪৭টি ওয়ানডেতে তার নামের পাশে রয়েছে ৮ হাজার ৮২৪ রান।
আর মুশতাকের ১৯৫৯ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার টেস্ট অভিষেক হয়। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ অভিষিক্ত ক্রিকেটার। তিনি ১৭ বছর বয়সে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। সব মিলিয়ে খেলেছেন ৫৭টি টেস্ট এবং ১০টি ওয়ানডে। তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে।
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩:৩৮ পিএম
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০১ পিএম
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮:২১ পিএম
টুর্নামেন্টের মাঝপথেও দুই দলের প্লে-অফের সম্ভাবনা ছিল নড়বড়ে। তবে সেখান থেকে খুলনা টাইগার্স ও চিটাগং কিংসের শেষ চারে আসার পেছনে বড় অবদান রেখেছে দুই দলের দুটি বিভাগ। মেহেদি হাসান মিরাজের দলের বোলাররা অবদান রাখলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বারবার জ্বলে উঠেছেন ব্যাটাররাই। আর চিটাগংকে শীর্ষ দুইয়ের ভেতর রাখার ক্ষেত্রে মুখ্য অবদান রাখেন বোলাররা। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে তাই মূল লড়াইটা হতে যাচ্ছে দুই দলের ব্যাটার ও বোলারদের মধ্যেই।
চিটাগংয়ের জন্য এবারের বিপিএলে এমনিতেই একটু বিশেষ কিছুই। ১১ বছর পর এবার ফ্র্যাঞ্চাইজিটি ফিরেছে এই টুর্নামেন্টে। সেবার হয়েছিল রানার্সআপ। খুলনার বিপক্ষে হার দিয়ে অবশ্য শুরু হয়েছিল পথচলা। তবে আসর যত এগিয়ে গেছে, ক্রমেই নিজেদের সেরা ছন্দ খুঁজে পায় দলটি। টানা চারটি জয়ে সুগম হয় প্লে-অফের পথ।
মাঝে কিছুটা ছন্দ হারালেও নিজেদের শেষ তিন ম্যাচে জয় পেয়ে রংপুর রাইডার্সকে নেট রান-রেটে পেছনে ফেলে শীর্ষ দুই নিশ্চিত করে চিটাগং। প্রথম কোয়ালিফায়ারে অবশ্য ফরচুন বরিশালের কাছে পাত্তাই পায়নি দলটি। হেরে যায় ৯ উইকেটে। বোর্ডে রান কম হলেও, অমন বিশাল হারের বড় কারণ ছিল তাদের বোলারদের ভীষণ মলিন একটি দিন।
সব ঠিক থাকলে বিপিএলে অলরাউন্ডার নিয়ে সঙ্কটে পড়ার কথা ছিল না চিটাগংয়ের। তবে সাকিব-মঈন আলিরা না খেলায় পাঁচ স্পেশালিষ্ট বোলার নিয়ে খেলার ঝুঁকি নিতে হয়েছে দলটিকে। আর এখন পর্যন্ত সেই কাজটা দারুণভাবে সামলে যাচ্ছেন তাদের প্রতিটি বোলার।
টুর্নামেন্টের মাঝপথে মায়ের না ফেরার দেশে পাড়ি দেওয়ার খবর পান খালেদ আহমেদ। তাতে মিস করেন একটি ম্যাচ। তবে ওই ধাক্কা সামাল দিয়ে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই দারুণ ছন্দে বোলিং করে যাচ্ছেন জাতীয় দলের এই পেসার। ১২ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়েছেন খালেদ। শুরু ও শেষের দিকে রাখছেন সমান অবদান। আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও নিজেকে ফিরে পাচ্ছেন বেশ। তার নামের পাশে রয়েছে ১২ উইকেট।
অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি, মোহাম্মদ ওয়াসিমরাও বেশ ভালো করেছেন। তবে বিশেষভাবে আলো ছড়াচ্ছেন আলিস আল ইসলাম। অনেকটা সময় নিজেকে হারিয়ে খোঁজা এই রহস্য স্পিনার এই বিপিএলে সেরা সময়কেই মনে করাচ্ছেন। এরই মধ্যে শিকার করেছেন ১৪ উইকেট। তবে মূল চমক রান আটকে দেওয়ার ক্ষেত্রে। ওভারপ্রতি দিয়েছেন মাত্র ৬.৫৬ রান!
ছয় ব্যাটার নিয়ে খেলায় বড় দায়িত্ব ছিল শামিম হোসেনের কাঁধে। এই বিপিএলে নিজেকে নতুন করে চেনানো তরুণ এই ব্যাটার খেলেছেন কয়েকটি দুর্দান্ত ইনিংস। দ্রুত রান তোলার কাজটা বেশ নিয়মিতই করছেন তিনি। বরিশালের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে চাপের মুখে নেমে করেন ফিফটি। প্রায় ১৬৩ স্ট্রাইক রেটে তার রান ৩৪৫। এছাড়া মোহাম্মদ মিঠুন, হায়দার আলি, পারভেজ হোসেন ইমনরাও আছেন মোটামুটি ছন্দে।
তবে সেদিক থেকে দেখলে, খুলনার ব্যাটারদের সবাই আছেন ফর্মে। টানা দুই জয়ে আসর শুরু করার পর টানা চার ম্যাচ হেরে গিয়েছিল দলটি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শীর্ষ চারের মধ্যে থাকায় তারাই রেখেছেন বড় ভূমিকা। প্লে-অফের টিকেট পেতে শেষ দুই ম্যাচে জিততেই হত খুলনাকে। সেই দুই ম্যাচেই সেরা ছন্দে হাজির হন তাদের ব্যাটাররা।
রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচে বিস্ফোরক এক সেঞ্চুরি করা নাঈম শেখ শুরুর দিকে সমালোচনায় পড়েন ধীরগতির ব্যাটিংয়ের জন্য। তবে ক্রমেই নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। দলের সেরা ব্যাটার হওয়ার পাশাপাশি আছেন টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটার হওয়ার তালিকাতও। প্লে-অফে রংপুরকে ৯ উইকেটে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচেও প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে করেন ৪৮ রান। তিন ফিফটিতে প্রায় ১৪৯ স্ট্রাইক রেটে ৪৯২ রান করা নাঈম টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান স্কোরার।
এবারের বিপিএলে প্রায় নিয়মিতই বোলিং ও ব্যাটিংয়ে ওপেন করা মিরাজও আছেন রানের মধ্যে। ১৩ ম্যাচে দুই ফিফটিতে তার রান ৩৫৩। ব্যাট হাতে কয়েকটি বড় ইনিংস খেলার পাশাপাশি শুরুতে দ্রুত রান তোলার কাজটা বেশ ভালোভাবেই করছেন তিনি। ঠিক এর বিপরীত কাজটাই অবিশ্বাস্য দক্ষতায় করছেন তরুণ ব্যাটার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ধীরলয়ে ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত হলেও এই বিপিএলে চমকে দিচ্ছেন তিনি।
শেষের দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে এক-দুটি ম্যাচ বাদে সবগুলোতেই ছড়ি ঘুরিয়েছেন বোলারদের ওপর। প্রায় ১৭০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা অঙ্কন বড় ইনিং না খেললেও, মারমুখী ব্যাটিংয়ে প্রায় গড়ে দিচ্ছেন ব্যবধান। দুই বিদেশী উইলিয়াম বোসিস্টো ও অ্যালেক্স রস রাখছেন যথাসাধ্য অবদান। তাদের সাথে প্লে-অফ থেকে যুক্ত হয়েছেন সময়ের অন্যতম মারকুটে ব্যাটার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিমরন হেটমায়ার। অলরাউন্ডার হলেও জেসন হোল্ডার ব্যাট হাতেও কম যান যান না। আর মোহাম্মদ নাওয়াজ তো আছেনই।
ব্যাটিং বিভাগে বেশ শক্তিশালী খুলনার বোলিংয়ে বড় ভরসা স্পিনাররাই। এলিমিনেটরে রংপুর ধসিয়ে দেন দুই স্পিনার নাসুম ও মিরাজ মিলে ছয় উইকেট নিয়ে। ওই ম্যাচে ১৪ রানে ৩ উইকেট নেওয়া নাসুম দশ ম্যাচে শিকার করেছেন ১৭ উইকেট।
আর বল হাতেও সমান উজ্জ্বল মিরাজ নিয়েছেন ১৩ উইকেট। রংপুরের বিপক্ষে ওই ম্যাচে স্রেফ ১০ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। হিসেবী বোলিং করে ধারাবাহিকতভাবে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিচ্ছেন তিনি। সাথে নাওয়াজও আছেন বাঁহাতি স্পিনে। তবে দিন শেষে, ফাইনালে যেতে হলে চিটাগংয়ের বিপক্ষে সেরা ছন্দে হাজির হতে হবে খুলনার ব্যাটারদেরই।
তারা সেটা পারবেন তো? নাকি প্রায় এক যুগ পর ফিরেই ফাইনালে ফরচুন বরিশালের সঙ্গী হবে চিটাগং? জানতে হলে চোখ রাখুন টি স্পোর্টসের পর্দায়। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার শুরু সন্ধায় সাড়ে ৬টায়।
মিচেল মার্শ আগেই ছিটকে গেছেন। প্রবল শঙ্কায় ছিল অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের অংশগ্রহণও। চোট নিয়ে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার ধকলের পর বিশ্রামে থাকলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তার খেলার প্রায় শেষই হয়ে গেছে। অন্তত অস্ট্রেলিয়ার কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড জানিয়েছেন তেমনটাই। আরেক অভিজ্ঞ পেসার জশ হ্যাজলউডকে নিয়ে এখন রয়ে গেছে অনিশ্চয়তা।
গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের সব ম্যাচেই খেলেন কামিন্স। পরে জানা যায়, চোট সামলেই খেলা চালিয়ে গেছেন। গোড়ালির আঘাত থেকে সেরে ওঠার জন্য ডানহাতি এই পেসারকে বিশ্রাম দেওয়া শ্রীলঙ্কা সফরের টেস্ট সিরিজে। ওয়ানডে সিরিজ খেলতে সাদা বলের ক্রিকেটাররা দেশ ছাড়লেও এখনও অস্ট্রেলিয়াতেও রয়ে গেছেন কামিন্স। কারণটা স্পষ্ট, এখনও শতভাগ সুস্থ হতে পারেননি তিনি।
ফলে অস্ট্রেলিয়াকে সন্ধান করতে হবে এখন নতুন অধিনায়কের। কামিন্সের চোট ও অধিনায়ক কে হবেন, সেই ব্যাপারে একটা ধারণা এসইএন রেডিওকে দিয়েছেন প্রধান কোচ ম্যাকডোনাল্ড।
“প্যাট কামিন্স এখনও কোনো ধরনের বোলিংই শুরু করতে পারেনি। তার খেলার সম্ভাবনা তাই নেই বললেই চলে। এর মানে হল, আমাদের নতুন অধিনায়ক প্রয়োজন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে দেশে প্যাট কামিন্সের সাথে আমাদের যে আলোচনা হয়েছে, সেখানে বিবেচনায় এসেছে স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেডের নামই। নেতৃত্বের জন্য এই দুজনের দিকেই নজর রাখব আমরা।”
কামিন্স যখনই বিশ্রাম নিয়েছেন না চোট ছিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব করেছেন স্মিথ। শ্রীলঙ্কা সফরেও তার কাঁধেই রয়েছে নেতৃত্বের ভার। স্থায়ীভাবে এর আগে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কও ছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। স্বাভাবিকভাবেই তাই তাকেই কিছুটা এগিয়ে রাখা হচ্ছে।
তবে হেডকেও ভালোভাবেই বিবেচনায় রাখছেন ম্যাকডোনাল্ড।
“অধিনায়ক হিসেবে তাদের দুজনের নামই নিশ্চিতভাবে আসার কথা। স্টিভ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে দারুণভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ওয়ানডেতে অতীতে দারুণ কাজ করেছে সে। তাদের দুজনের মধ্য থেকেই তাই একজনকে বেছে নেওয়া হবে।”
ভারতের বিপক্ষে ওই টেস্ট সিরিজেই চোট পেয়ে ছিটকে যান হ্যাজলউড। এরপর থেকেই আছেন মাঠের বাইরে। কামিন্সের পাশাপাশি তাকে পাওয়া নিয়েও চিন্তায় আছেন অস্ট্রেলিয়া কোচ।
“প্যাটির খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আমাদের জন্য এটা খুবই হতাশাজনক। জশ হ্যাজলউড ফিট হওয়ার জন্য লড়াই করছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তার মেডিকেল রিপোর্ট আসবে আমাদের হাতে। তখন আমরা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব, আর সবাইকে জানতে পারব যে কী সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে তার ব্যাপারে।”
ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে আগেই জেমস নিশাম জানান দিয়েছিলেন, আসছেন বাংলাদেশে। তবে সেটা কোন দলে, তা জানা গেল ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংসের প্রথম কোয়ালিফায়ারের পর। ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া বরিশালে হয়ে শিরোপার লড়াইয়ে অংশ নেবেন এই কিউই অলরাউন্ডার।
এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় বার বিপিএল খেলতে আসছেন নিশাম। গতবার ছিলেন রংপুর রাইডার্স দলে। ব্যাটে ও বলে উপহার দিয়েছিলেন স্মরণীয় কিছু পারফরম্যান্স। ৭ ম্যাচে প্রায় ১৬৮ স্ট্রাইক রেটে করেন ২৯১ রান। আর উইকেট নেন চারটি। এবার তিনি মাতাবেন বরিশালের জার্সি।
মঙ্গলবার বরিশাল স্কোয়াডে যোগ দেবেন নিশাম। তার আগমনে আগে থেকেই শক্তিশালী বরিশালের শক্তিমত্তা বেড়ে গেল আরও। প্রথম কোয়ালিফায়ারে চার বিদেশী হিসেবে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে কাইল মায়ার্স ও মোহাম্মদ আলি বল হাতে উজ্জ্বল। দাভিদ মালান আছেন দারুণ ছন্দে। জেমস ফুলারকে বেঞ্চে রেখে এই ম্যাচ খেলানো হয় আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবিকে।
ফলে ফাইনালে বরিশালের চার বিদেশী কে কে হবেন, তা নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে দলটিকে। তবে ফাইনালের জন্যই আসায় নিশামের খেলাটা একরকম নিশ্চিতই বলা যায়।
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ফাইনালে বরিশালের প্রতিপক্ষ হবে চিটাগং কিংস ও খুলনা টাইগার্সের মধ্যকার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের জয়ী দল।
দুই দলের শেষ দেখায় শেষ হাসিটা ছিল চিটাগং কিংসের। তবে এবার আগে ব্যাটিং করলেও দলটি পারল না দেড়শ করতেও। মোহাম্মাদ আলির ফাইফার সামলে একাই লড়লেন শামিম হোসেন। তাতে একটা ফাইটিং স্কোর তার দল পেল বটে, তবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালকে তা পারল না সামান্য চ্যালেঞ্জ জানাতে। ম্যাচ জেতানো ফিফটিতে তাওহীদ হৃদয় দলকে এনে দিলেন দাপুটে জয়।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম কোয়ালিফায়ারে ফরচুন বরিশাল জিতেছে ৯ উইকেটে। কুড়ি ওভারে চিটাগংয়ের স্কোর ছিল ৯ উইকেটে ১৪৯। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বরিশাল এই রান পাড়ি দিয়েছে ১৬ বল হাতে রেখেই।
ফাইনালে যাওয়ার জন্য আরেকটা সুযোগ পাবে চিটাগং। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে আগামী বুধবার তাদের প্রতিপক্ষ খুলনা টাইগার্স। সোমবার প্রথম এলিমিনেটর ম্যাচে দলটি ৯ উইকেটে হারায় রংপুর রাইডার্সকে।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা চিটাগংয়ের ইনিংসকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতেই পারে। যেখানে এক অংশে থাকবেন শামিম হোসেন, আর অন্য অংশে দলটির বাকি ব্যাটাররা। ইনিংসের প্রথম বলে চার মেরে শুরু করে খাওয়াজা নাফায়কে পরের বলে রীতিমতো স্তব্ধ করে দেন কাইল মায়ার্স। অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরে পিচ করা ডেলিভারিটি ইনসুইং করে শেষ পর্যন্ত বোল্ড করে দেয় নাফায়কে। ব্যাটারের বিস্ময় বলে দিচ্ছিল, কতোটা ‘আনপ্লেয়বল’ ছিল ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের সেই ডেলিভারিটি।
গ্রাহাম ক্লার্কও রানের খাতা খোলেন চার মেরে। তবে তাকেও ফেরান সেই মায়ার্সই। দ্রুত আরও দুই উইকেট হারিয়ে ৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপেই পড়ে যায় চিটাগং। একপ্রান্ত আগলে পারভেজ হোসেন ইমন ব্যাট করলেও ব্যাটে ছিল না আগ্রাসনের সুর। ক্রিজে গিয়ে ঠিক সেই কাজটাই করেন শামিম, ইবাদত হোসেনকে মারেন দুটি চার।
তিনি ছন্দময় ব্যাটিং চালিয়ে গেলেও সেভাবে তাল মেলাতে সংগ্রাম করতে হচ্ছিল ইমনকে। ২৬ বলে ২০ রানে থাকা অবস্থায় মোহাম্মদ নবিকে দুই ছক্কা মেরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন কিছুটা। অতি আগ্রাসী হয়ে রিশাদ হোসেনের বলে তাকে ক্যাচ দিয়ে ইমনের ১০০ স্ট্রাইক রেটে করা ৩৬ রানেদ ইনিংসের।
তবে আপন ছন্দে ব্যাট করা শামিম মাত্র ২৯ বলে পা রাখেন পঞ্চাশে। রিশাদের পর ইবাদতের ওভারেও তার ব্যাট থেকে আসে একটি করে চার ও ছয়ের মার। ১৯তম ওভারে আউট হওয়ার আগে দলের প্রায় অর্ধেক রানই করেন শামিম। ৪৭ বলে ৭৯ রানের ইনিংস সাজান ৯ চার ও ৪ ছক্কায়।
ইনিংসের শেষ ওভারের শেষ দুই বলে উইকেট সহ ওভারে চার উইকেট নেন আলি। উপহার দেন ২৪ রানে ৫ উইকেটের দুর্দান্ত এক বোলি ফিগার।
রান তাড়ায় বরিশাল শুরু থেকেই ছিল লক্ষ্যের পথে স্থির। পাওয়ার প্লেতে কেবল বাজে বল পেলেই আগ্রাসী শটের চেষ্টা করেছেন তামিম ইকবাল ও তাওহীদ হৃদয়। আলিস আল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামের করা দুটি ওভারে আসে দুটি করে বাউন্ডারি। তাতে ছয় ওভারে হয়ে যায় ৪০ রান।
৫৫ রানের ওপেনিং জুটির অবসান ঘটান খালেদ আহমেদ। আসরে বেশ ভালো বোলিং করা এই ডানহাতি এই পেসার তামিমকে থামান ২৯ রানে। তবে বল ও রানের ব্যবধান চেপে বসার আগেই ক্রিজে গিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন দাভিদ মালান।
মালান তার স্বভাবসুলভ আগ্রাসী ব্যাটিং করলেও অন্যপ্রান্তে তাওহীদকে অনেকটা সময় স্বাচ্ছন্দ্যে দেখা যায়নি। এক পর্যায়ে ৩৫ বলে মাত্র ৩৫ একই সময়ে মাত্র ১১ বলেই ২২ রান করে ফেলেন মালান, ফলে তাওহীদের ওপর চাপটা সেভাবে বাড়েনি।
আর সেটাই তিনি কাজে লাগান বাকি ইনিংস জুড়ে। ৪৫ বলে পঞ্চাশ করার পর তাওহীদ ম্যাচ দ্রুত শেষ করার দিকেই মনোযোগী হন। মালানকে দর্শক বানিয়ে একাই দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। শামিমকে চার মেরে জয়সূচক রানটা আসে জাতীয় দলেই এই ব্যাটারের কাছ থেকেই।
তাওহীদ অপরাজিত থাকেন ৮২ রানে। ৫৬ বলের ইনিংস সাজান ৯টি চার ও দুই ছক্কায়। আর আগের ম্যাচে ফিফটি করা মালানের অবদান ২২ বলে ৩৪।
জাতীয় দলের বাইরে থাকায় রংপুর রাইডার্সের সাথে চুক্তি ছিল পুরো বিপিএলের জন্যই। সেই মঞ্চে ব্যাটে বা বলে খুশদিল শাহ এতোটাই দ্যুতি ছড়ান যে, তাতে পাকিস্তান জাতীয় দলে পেয়ে যান ডাক। তাতে রংপুরকে বিপাকে ফেলে দেশে ফিরে যান টুর্নামেন্টের মাজপথে। এত গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়ের শূন্যস্থান কেউই আর পূরণ করতে পারেননি। পাঁচ ম্যাচ হেরে আসর থেকে বিদায়ের পর রংপুরের ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুলের আক্ষেপ, খুশদিলের জায়গাটা কেউই নিতে পারেননি আর।
খুশদিল রংপুর দলের সাথে ছিলেন গ্লোবাল সুপার লিগ থেকেই। সেখানে দলটির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে তার ছিল বড় অবদান। এরপর বিপিএলেও বজায় রাখেন সেই ধারা ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে ২৯৮ রানের পাশাপাশি ওভার প্রতি মাত্র ৬.০৩ রান দিয়ে নেন ১৭ উইকেট। তবে প্লে-অফের আগে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ায় রংপুর ছেড়ে যেতে হয় তাকে। এলিমিনেটর ম্যাচে তিন নতুন বিদেশী তারকা এনেও হেরে যাওয়ায় রংপুর আরও বেশি অনুভব করছে খুশদিলের অভাব।
সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুলও স্বীকার করলেন, খুশদিলের চলে যাওয়াটা তাদের ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে। “আমার কাছে মনে হয় খুশদিল শাহর চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য বড় একটা ধাক্কা হয়ে এসেছে। গায়ানা (জিএসএল) থেকে ও এখানেও যেভাবে খেলেছে, সে চলে যাওয়ার পর ওই জায়গাটা কেউই নিতে পারেনি। আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়রা যেভাবে আশা করেছিলাম, সেভাবে খেলতে পারেননি। শুরুর দিকে তারা যেভাবে পারফর্ম করেছেন, শেষ পাঁচটা ম্যাচে আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়দের কেউই কিন্তু সেভাবে ভালো করতে পারেননি।”
জিএসএল সহ টানা ১১ ম্যাচ জিতেছিল রংপুর। এরপর মাঝে ছয়দিনের একটা বিরতির সময় দলটি প্রথম ম্যাচে হেরে বসে দুর্বার রাজশাহীর কাছে। সেই থেকে ক্রমেই নিম্নমুখী হতে থাকে দলটির পারফরম্যান্স। এক পর্যায়ে অপরাজেয় হয়ে যাওয়া দলটি কোনোভাবেই আর নিজেদের ফিরে পায়নি। এলিমিনেটর ম্যাচে খুলনার কাছে মাত্র ৮৫ রানে গুটিয়ে হারতে হয়েছে ৯ উইকেটে।
এভাবে বিদায় নেওয়াটা আশরাফুলের কাছেও একরাশ হতাশার। “অবশ্যই এটা হতাশার। আমরা যেভাবে খেলছিলাম, গ্লোবাল সুপার লিগে টানা তিন ম্যাচে জিতে চ্যাম্পিয়ন হলাম, এরপর এখানে মিলিয়ে টানা ১১ ম্যাচ জিতলাম আমরা। ২৩ তারিখের পর রাজশাহীর সাথে যেভাবে হারলাম, এরপর টানা পাঁচ (চার) ম্যাচ হেরে গেলাম। এটা আসলে সবার জন্যই হতাশাজনক, আমাদের, রংপুর সমর্থক সবার জন্যই। এটা কেউ আশা করেনি। কিন্তু এটাই আসলে ক্রিকেট। একবার যখন মোমেন্টাম হারাবেন, এরপর সেটা ফিরে পাওয়া খুব কঠিন। ১২০ বলের খেলায় একবার মোমেন্টাম হারালে ফেরাটা কঠিন। যদি দেখেন, ২৩ তারিখের পর থেকে আমরা ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করতে পারিনি। ওই ম্যাচেও আমরা পাওয়ার প্লেতে ভালো করতে পারিনি, শেষে আজকেও আমরা পাওয়ার প্লেতে ভালো করিনি। এটা সবার জন্যই তাই হতাশার।”
খুলনার বিপক্ষে ম্যাচের দিন সকালে রংপুর দলে যোগ দেন তিন তারকা ক্রিকেটার টিম ডেভিড, আন্দ্রে রাসেল ও জেমস ভিন্স। সময় স্বল্পতার কারণে দলের সাথে টিম হোটেল থেকে মাঠেও আসতে পারেননি তারা। আগের দিন রাতে দুবাইয়ে আইএলটি২০ এর ম্যাচ খেলার ক্লান্তি ঝেরে মাঠে নামলেও, কেউই পারেননি আলো ছড়াতে। করতে পারেন মাত্র ১২ রান।
আশরাফুল অবশ্য মনে করেন, ভ্রমণ ক্লান্তির জন্য তাদের পারফরম্যান্স ভালো হয়নি,ম এমনটা নয়। “দেখেন, রংপুর রাইডার্স ম্যানেজমেন্ট চেষ্টা করেছেন বড় নাম আনার জন্য। আমার মনে হয় না, যেহেতু আমিও খেলেছি, তাই তাদের জন্য এটা সমস্যা হওয়ার কথা না। তাছাড়া আবহাওয়ায় প্রায় একই, দুবাই আর এখানে। হয়ত তাড়া গতকাল রাতে খেলে এসেছেন এখানে, এটা একটা সমস্যা হতে পারে। তবে যেহেতু তারা পেশাদার ক্রিকেটার, তাই আমার মনে হয় না এই জায়গায় একটা সমস্যা হতে পারে। আমাদের আসলে শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম ওভারে ওই রান আউটের পর যেভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, আমরা সেই শুরুটা আর পাইনি।”