ঘটনা ১২ বছর আগের। তবে ফ্র্যাংক রিবেরি আজও যেন ভুলতে পারেন না একটি ব্যক্তিগত খেতাব না জেতার কষ্ট। ২০১৩ সালে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থেকেও সেরার লড়াইয়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির সাথে পেরে ওঠেননি সাবেক ফ্রান্স ও বায়ার্ন মিউনিখ উইঙ্গার। আক্ষেপ নিয়ে এতদিন পর ফের বললেন, সেই বছর তিনিই ছিলেন সবার সেরা।
বিশ্ব ফুটবলের দুই নক্ষত্র মেসি ও রোনালদো একটা লম্বা সময় ধরে দেখিয়েগেছেন একচেটিয়া দাপট। ব্যালন ডি’অর জেতার লড়াইটা তাই বছরের পর বছর সীমাবদ্ধ ছিল কেবল তাদের মধ্যেই। এর মাঝেও আলোচনায় আসতে হলে যেমন পারফরম্যান্স দরকার, ২০১৩ সালে ঠিক তেমনটাই দেখিয়েছিলেন রিবেরি। বায়ার্নের হয়ে জিতেছলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও বুন্দেসলিগা।
আরও পড়ুন
কষ্টার্জিত জয়েও ব্রাজিলের উন্নতির দেখছেন দরিভাল |
![]() |
তবে শেষ পর্যন্ত রোনালদোর কাছে হার মানা রিবেরি মেসির পেছনে থেকে তৃতীয়। লেকিপে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই স্মৃতিচারণ করে আক্ষেপ ঝড়ে পড়েছে রিবেরির কণ্ঠে।
“আমার সেরা একটা মৌসুম ছিল। এর চেয়ে ভালো খেলা সম্ভব ছিল না। ব্যালন ডি’অরের ফলাফলটা নায্য ছিল না। মেসি আর রোনালদো জানত যে আমি তাদের সমমানের ছিলাম। তাদের প্রতি আমার অনেক সম্মান আছে। তবে সেই বছর তারা আমার চেয়ে ভালো ছিল না। ওই ব্যালন ডি’অরটা সবসময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।”
ব্যালন ডি’অরের ওই বছর ফরম্যাটে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিবেচনার যে সময় ছিল, ব্যতিক্রম ঘটিয়ে সেবার যোগ করা হয় বাড়তি দুই সপ্তাহ। আর সেই সময়ের মধ্যেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে পর্তুগালকে বিশ্বকাপে নিয়ে যান রোনালদো। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভোটিংয়ের ছিল এর প্রভাব।
রিবেরির কাছে এই বিষয়টির নেই কোনো ব্যাখা।
“আমি এখনও সেই প্রশ্নের উত্তরটা খুঁজছি। আমি কখনই এটা বুঝতে পারব না যে কেন ভোট দেওয়ার সময়টা দুই সপ্তাহ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।”
চেয়েছিলেন আরও একটা মৌসুম থাকতে। তবে জার্মান কিংবদন্তি টমাস মুলারের সেই ইচ্ছা আর পূরণ হলো না বায়ার্ন মিউনিখে। চুক্তি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এই মৌসুম শেষেই প্রিয় ক্লাব ছাড়বেন অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ড, খবর জার্মানির শীর্ষ গণমাধ্যম বিল্ড-এর।
চলতি মৌসুমে শেষেই চুক্তির শেষ হবে মুলারের। সেটা নবায়ন না হওয়ায় ১৭ বছর বায়ার্নের জার্সিতে খেলার পর আগামী গ্রীষ্মে ফ্রি এজেন্ট হয়ে যাবেন বিশ্বকাপ জয়ী এই ফুটবলার।
বিল্ড-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহ আগে ক্লাবের সাথে বৈঠকের সময় মুলার জানিয়েছিলেন আরও এক মৌসুম থালার ইচ্ছার কথা। তবে তার প্রস্তাব নাকচ করা হয়। এরপর আলোচনা হয় তার বিদায়ী ম্যাচ নিয়ে। কারণ, মুলারের চুক্তিতে তার বিদায়ী ম্যাচ আয়োজনের শর্ত রয়েছে।
মূলত বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়াতেই মুলারকে ছেড়ে দিচ্ছে বায়ার্ন। তিনি এখন ক্লাবের তো বটেই, বুন্দেসলিগারও সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়। কেবল বেতন কমালেই চুক্তি নবায়ন সম্ভব হতে পারত।
বায়ার্ন ছাড়ার পর মুলারের জার্মানির কোনো ক্লাবের যোগ দেওয়ার ইচ্ছা নেই বলেই জানিয়েছে বায়ার্ন। সৌদি আরবেও যাওয়ার সম্ভাবনা নাকি কম। ভালো সম্ভাবনা রয়েছে মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) কোনো ক্লাবে নাম লেখানোর।
তবে বায়ার্ন তাকে খেলোয়াড় হিসেবে ছেড়ে দিলেও অন্য ভূমিকায় কাজে লাগাতে চায়। তাই দেখার বিষয়, ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা ফরোয়ার্ড অবসর নিয়ে ক্লাবেই থেকে যান, নাকি অন্য ঠিকানায় খেলা চালিয়ে যান।
বায়ার্নের হয়ে লম্বা এক ক্যারিয়ারে ক্লাব ফূটবলের সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেন মুলার। ৭৪২ ম্যাচে গোল করেছেন ২৪৭টি। আর নামের পাশে অ্যাসিস্ট রয়েছে ২৭৩টি।
চলতি মৌসুম শেষেই সিটির সাথে ব্রুইনার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। চুক্তি নবায়ন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই জানায়নি কিছু। অভিজ্ঞ এই ফুটবলারকে গত মৌসুম থেকেই আগ্রহী সৌদি প্রো লিগের কয়েকটি ক্লাব। চলতি মৌসুমে চোট ও ফর্ম মিলিয়ে দলে অনিয়মিত হয়ে পড়ার ক্রমেই জোড়াল হচ্ছে তার ক্লাব ছাড়ার সম্ভাবনা।
সিটিতে ডি ব্রুইনের ভবিষ্যত অনিশ্চিত কারণ মিডফিল্ডার মরসুমের শেষে চুক্তির বাইরে রয়েছেন এবং এখনও কোনও সম্প্রসারণে সম্মত হন না। 33 বছর বয়সী বেলজিয়াম ইন্টারন্যাশনালকে তার বুট ঝুলানোর আগে মেজর লীগ সকারে খেলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পদক্ষেপের সাথে সংযুক্ত করার জল্পনাও রয়েছে।
তবে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে গার্দিওলা এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে এগিয়ে রাখেন দলীয় স্বার্থকেই। “এটা ক্লাব, কেভিন এবং তার এজেন্টের ব্যাপার। আরও স্পষ্ট করে বললে, এটা ক্লাব ও কেভিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরা যে অবস্থানে আছি, সেখানে আমরা কেবল দল নিয়েই চিন্তিত। মৌসুমে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থেকে শেষ করাটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের এফএ কাপ, প্রিমিয়ার লিগ এবং ক্লাব বিশ্বকাপের জন্ত সেরা কাজগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।”
চোটের কারণে বেশ কিছু ম্যাচ মিস করা ৩৩ বছর বয়সী ডে ব্রুইনা এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ম্যাচ খেলেছেন ৩০টি। ৪ গোল করার পাশাপাশি করিয়েছেন ৭টি। মিনিট খেলেছেন মোট ১ হাজার ৬০৮।
ডে ব্রুইনার ছন্দহীন গত চার মৌসুমে টানা প্রিমিয়ার লিগ জেতা সিটি আগেই ছিটকে গেছে শিরোপার লড়াই থেকে। শীর্ষ চারে থেকে শেষ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। চ্যাম্পিয়ন লিগ অভিযানও শেষ। তাই এই মৌসুমে টিকে আছে কেবল এফএ কাপ ও মৌসুম শেষের ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ের আশাই।
প্রতিপক্ষ দুর্বল লেগানেস বলেই রিয়াল মাদ্রিদের সহজ জয়ের আশাই করেছিলেন সবাই। তবে মাঠের খেলায় প্রতিপক্ষকে চমকে দিয়ে দলটি এক পর্যায়ে পাচ্ছিল জয়ের সুবাসও। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রিয়াল। চাপের মুখে দল যেভাবে লড়ে গেছে, তাতে খুব খুশি কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
লা লিগায় শনিবার রাতের ম্যাচে শুরুতে রিয়ালকে এগিয়ে দিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপে৷ তবে ৮ মিনিটে দুই গোল দিয়ে চমক দেখায় লেগানেস। বিরতির পর জুড বেলিংহাম সমতা টানার পর এমবাপের দ্বিতীয় গোলে দলটি জয় পায় ৩-২ স্কোরলাইনে।
“আমার মনে হয় বা আমরা খারাপ খেলেছি। ম্যাচে আমাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল, তবে আমাদের যা অভাব ছিল তা ভারসাম্য ধরে রাখা। এ কারণেই আমরা দুটি গোল হজম করেছি।। তারা আমাদের কাউন্টার এটাকে ধরাশায়ী করেছে। লিড পেয়ে আমরা আরও ভালো খেলতে পারতাম। ৩-২ গোলে এগিয়ে থেকেও আমরা লড়াই করেছি। তবে আন্তর্জাতিক বিরতির পরে এটাই হয়। আমাদের ছন্দ খুঁজে পেতে সময় লেগেছে।”
রিয়ালের এই জয়ে বড় অবদান রাখা এমবাপে এরই মধ্যে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই মৌসুমে করে ফেলেছেন ৩৩ গোল। রিয়ালের জার্সিতে নিজের প্রথম মৌসুমে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোও করেছিলেন সমান ৩৩ গোল। হাতে আরও ম্যাচ থাকায় অনায়াসেই তাকে ছাড়িয়ে যাবেন ফরাসি তারকা।
এমবাপের এই ফর্ম বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে আনচেলত্তিকে।
“সে আসলেই ভালো করছেন। আগের চেয়ে আরও অনেক সক্রিয় থাকছে, ম্যাচে আরও বেশি বেশি অবদান রাখছে। তিনি ভালোভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছেন এবং পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন। আমরা তার কাছ থেকে ঠিক এটাই আশা করি।”
চোটের কারণে মাঠে নামা হয়নি আন্তর্জাতিক বিরতিতে। তবে ইন্টার মায়ামির হয়ে ফেরার ম্যাচে চেনা ছন্দেই হাজির হয়েছেন লিওনেল মেসি। পেয়েছেন গোলের দেখা। কিছুটা ঝুঁকি নিয়েও আর্জেন্টাইন তারকাকে খেলালেও, মেসি যেভাবে খেলেছেন তা মনে ধরেছে কোচ হাভিয়ের মাসচেরানোর।
লিওনেল মেসি মেজর লিগ সকার (এমএলএস) রোববার সকালের ম্যাচে ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়নের বিপক্ষে ম্যাচে বদলি হিসেবে ৫৫তম মিনিটে মাঠে নামেন মেসি। এর দুই মিনিটের মধ্যেই পেয়ে যান গোলের দেখা। পেনাল্টি বাক্সের ডান দিকে লুইস সুরেজের কাছ থেকে পাস পেয়ে ডান পায়ের শটে বল পাঠান জালে।
ম্যাচের পর মাসচেরানোর স্বস্তি প্রকাশ করেন মেসি পারফরম্যান্স নিয়ে।
“পরিকল্পনা ছিল তাকে আরও বেশি সময় খেলানোর। তবে তিনি শুধু ৩০-৩৫ মিনিটের জন্যই খেলতে পারতেন, তবে এই সময়েও তিনি ভালো বোধ করেছেন। আমরা তাকে শুরুর একাদশে রেখে ঝুঁকি নিতে চাইনি। ভাগ্য ভালো যে তিনি ভালোভাবেই ম্যাচটা শেষ করেছেন। আর এটা আমাদের জন্যও আনন্দময়।”
চলতি মাসের আন্তর্জাতিক বিরতির সময় মেসি তার বাম উরুর অ্যাডাক্টর চোট থেকে সেরা ওঠার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। ফলে মিস করেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুটি ম্যাচ, একটি ছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে। তবে অধিনায়ককে ছাড়াই দুই ম্যাচেই জিতে বিশ্বকাপে খেলোর যোগ্যতা অর্জন করে আর্জেন্টিনা।
এক দল লড়ছে শিরোপার জন্য, আর অন্য দল রেলিগেশন এড়াতে। তবে রিয়াল মাদ্রিদ ও লেগানেসের ম্যাচে প্রতিফলন ঘটেনি দুই দলের এই অবস্থানের। দুর্বল প্রতিপক্ষকে হারাতে রীতিমতো ঘাম ছুটে কার্লো আনচেলত্তির দলের। জোড়া গোলে জয়ের নায়ক কিলিয়ান এমবাপের কাছে সব ছাপিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ঠেকছে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়তে পারাটাই।
লা লিগার শনিবারের ম্যাচে লেগানেসকে কোনোমতে ৩-২ গোলে হারিয়েছে রিয়াল। মলিন ফুটবল খেলা রিয়াল বিরতির আগে পিছিয়ে গিয়েছিল ২-১ গোলে। তবে এমবাপের দুই গোলের সাথে মিডফিল্ডার জুড বেলিংহামের গোলে ঘুরে দাঁড়িয়ে বেশ লড়াই করেই জয়ের দেখা পায় রিয়াল। এই জয়ে ২৯ ম্যাচে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সমান ৬৩ পয়েন্ট এখন স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের।
ম্যাচের পর এমবাপে আরএমটিভিকে বলেন, এই ম্যাচে সহজ জয়ের আশা করেননি তারাও।
“এটা কঠিন একটা ম্যাচ ছিল। আন্তর্জাতিক বিরতির পরে এটা সবসময়ই কঠিন হয়। আমরা প্রতিপক্ষের সীমানায় ভাল শুরু করেছি, এবং আমরা একটি গোল করেছি। এরপরে আমরা ২০ মিনিটের জন্য ভালো খেলিনি আর দুটি গোল হজম করে ফেলি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমরা দুটি গোল করেছি। আমরা ম্যাচটা জিতেছি, এটা নিয়ে আমরা খুব খুশি।”
৩২তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে রিয়ালকে লিড এনে দিয়েছিলেন এমবাপে। তবে ৮ মিনিটের মধ্যে দুই গোল দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলে লেগানেস। বিরতির পর বেলিংহাম সমতা টানার পর রিয়ালের জয় নিশ্চিত করা গোলটি করেন ফরাসি তারকা। আর সেটা আসে দর্শনীয় এক ফ্রি-কিক থেকে।
এই গোলের পেছনের গল্পটা বলেছেন এমবাপে।
“আমরা কয়েক সপ্তাহ আগে কোচদের সাথে সেট পিস নিয়ে কাজ করেছি। আমি জানতাম যে আমি এইভাবে শট নিয়ে পারি। আমি আগে জায়গাটা দেখেছি। আমি অন্যদের বলেছি আমাকে শট নিতে দিতে। শেষ পর্যন্ত এটা কাজে দিয়েছে।”